#প্রেম_এসেছে_গোপনে
#পর্ব_১১
#অনন্যা_অসমি
শহরে ফিরে আসার পরের দিন আরশিয়া তার ব্যাগ থেকে জিনিসপত্র বের করছিল। তখন কাপড়ের মাঝে এক টুকরো কাগজ দেখতে পেল। তার মনে পড়ল জায়রা এটা আসার সময় তাকে দিয়েছিল, সে তাড়াহুড়ো করে ব্যাগে রেখে দিয়েছিল। কাগজটা বইয়ের ভাঁজে রেখে আরশিয়া দ্রুত হাতে সব গুছিয়ে তৈরি হয়ে বেরিয়ে পড়লো আরহামকে স্কুল থেকে নিয়ে আসার জন্য। কাগজটা না হয় পরে এসে দেখবে।
.
.
” কেমন আছো জায়রা? বাকিরা কেমন আছে?”
” সবাই ভালো আছে। তুমি তো আমাদের ভুলেই গিয়েছ। শহরে গিয়ে তো একবারো ফোন করোনি। রা’গ করেছি আমি।”
আরশিয়া হালকা শব্দে হেসে বলল,
” আরে বাচ্চা রাগ করেছে দেখছি। সরি সরি আমি ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম তাই ফোন করার কথা মনে ছিলনা। কিন্তু তুমিও যে ফোন দাওনি। আমার নম্বর তোকে বলেছিলাম না।”
” আমি তো ছোট। ছোটরা কি ফোন দেয়? তুমি বড়, তুমি না ফোন দেবেন।”
” ইশ…. কি পাকা পাকা কথা। তুমি আমার ফোনে কল দিতে।”
” কেমন করে দেবে দামী নূর আপু। সে তো আপনার নম্বর লিখেছেই ভুল। এখন ফুফি থেকে আন্টির নম্বর দিয়ে ফোন দিয়েছে।”
” আরে ইনান যে। কেমন আছো তুমি?”
” ভালো আর কোথায় থাকতে দিলেন আপনি? আমাকে একা করে চলে গেলেন। আমি আপনার কষ্টে না খেয়ে খেয়ে একদম শুকিয়ে গিয়েছি।”
” আপু একদম বিশ্বাস করবে না ওর কথা। একটু আগেও মিষ্টি দিয়ে বড় বড় সাইজের তিনটে পরোটা খেয়েছে।”
তাদের কথা শুনে আরশিয়া হাসতে লাগল।
” আপু তুমি আবার কবে আসবে?” জুবা জানতে চাইল।
” কোনদিন সময় পেলে আবারো আসব। কিন্তু আমি তোমাদের সাথে রা’গ করেছি। আমি চলে আসার পর তোমরা কত জায়গা ঘুরতে গিয়েছ।” রা’গ করার ভান করে বলল আরশিয়া।
” আপু তোমাকে তো বলেছিলাম আরো কিছুদিন থাকো, কিন্তু তুমি তো থাকলেই না।”
” দামী নূর আপু, তুমি একদম মন খারাপ করোনা। পরেরবার আমি আর তুমি মিলে ওদেরকে ছাড়া সুন্দর সুন্দর সব জায়গায় যাবো। রোমেন্টিক রোমেন্টিক কিউট কিউট ছবিও তুলব। সাথে অন্য একজনকেও নিয়ে যাওয়া যায় তবে ফটোগ্রাফার হিসেবে।”
আরো কিছুক্ষণ কথা বলে আরশিয়া বলল,
” আচ্ছা তাহলে এখন রাখি। পরে আবার কথা হবে। সাবধানে থেকো।”
” আচ্ছা আপু। তোমাকে খুব মিস করবো। শহরে ফিরলে তুমি আমাদের বাসায় আসবে কিন্তু।”
” আচ্ছা আসবো, তোমরাও এসো।”
.
.
বেশ কয়েকমাস কেটে গিয়েছে। আরশিয়া নিজের নিত্য কর্মদিনে ফিরে এসেছে বেশ আগেই। মাঝে তেমন আর কারো সাথেই কথা হয়নি তার।
বেশকিছু সপ্তাহ ধরে আরশিয়া লক্ষ্য করছে তার মা-বাবা কিছু একটা নিয়ে বেশ গম্ভীর। তাদের মাঝে যে টুকটাক কথা কা’টাকা’টিও হয় সেটা আরশিয়ার নজর এড়ালো না। তবে আরশিয়ার সামনে তারা সেরকম কোন কিছুই প্রকাশ করেনা, স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করে। তবে সে বুঝতে পারছে কোথাও একটা স’মস্যা হচ্ছে। আচমকা বাবার এরকম ব্যবহার, মায়ের খিটখিটে মেজাজ আরশিয়া সন্দেহ আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে।
” মা তোমার আর বাবার মধ্যে কি কোন ঝা’মেলা হয়েছে?”
” এরকম কথা বলছ কেন? আমরা কি ঝগড়া করেছি নাকি?”
” না সেরকমটা না। তবে আমার মনে হচ্ছে তোমাদের মধ্যে কিছু নিয়ে বাকবিতণ্ডা চলছে। মা কোন সমস্যা হলে আমাকে বলো প্লিজ।”
” সেরকম কিছু না নূর। তুমি যাও, আরহাম কি করছে দেখ।”
আরশিয়া মায়ের কথা বিশ্বাস না করলেও আর কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস পেলো না। সে রান্নাঘর থেকে চলে আসবে তখন সুমনা আহমেদ তাকে থামিয়ে প্রশ্ন করলেন,
” নূর তোমার কি কোন পছন্দ আছে?”
” মা তুমি তো জানো আমার এসবে আগ্রহ নেই।”
” তুমি তোমার বাবা আর আমার মধ্যে কার কথাকে বেশি গুরুত্ব দেবে?”
” মা এটা কি ধরণের প্রশ্ন!”
” উওর দাও নূর। তুমি কার সিদ্ধান্তকে মেনে নেবে?”
আরশিয়া হতাশাভরা নিঃশ্বাস নিয়ে বলল,
” মা, তোমরা দু’জনেই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তবে তোমাদের মধ্যে সবসময়ই আমি একজনকে সার্পোট করবোনা। তোমাদের কথা শুনে সময় বিবেচনায় যেটা উপযুক্ত মনে হবে আমি সেটাই মেনে নেব। মা, আমাকে নিয়েই কি তোমাদের মধ্যে কোন ঝা’মেলা হয়েছে?”
” না সেরকম কিছু নয়। এখন তুমি যাও।”
হাজারটা চিন্তা করতে করতে আরশিয়া আরহামের কাছে চলে গেল।
.
.
নোট’স করছিলো আরশিয়া, সে সময় অপরিচিত একটা নম্বর থেকে কল এলো। আরশিয়া ধরবে কিনা ভাবতে ভাবতে কেটে গেল। তবে মূহুর্তের মধ্যেই আবার ফিরতি কল এলো।
” কে বলছেন?”
” চিনতে পারছো না?”
” জায়রা?”
” এতো তাড়াতাড়ি চিনে ফেললে।”
” কেমন আছো? এতোদিন পর মনে পড়ল তবে।”
” মনে তো সবসময় পড়ে কিন্তু ফোন কি আর দিতে পারি। তুমি কেমন আছো?”
” এই তো বেশ আছি। কি করছো? পড়াশোনা কেমন চলছে? বাড়ির সবাই কেমন আছে?”
” পড়াশোনা চলছে মোটামুটি। কিন্তু বাড়ির অবস্থা তো তেমন একটা ভালো না।”
” কেন কি হয়েছে?” কিছুটা চিন্তিত স্বরে জিজ্ঞেস করলো সে।
” ও মা আপু তুমি জানোনা! আন্টি কিছু বলেনি?” আরশিয়ার কথায় যে জায়রা অবাক হয়েছে তা তার বুঝতে মোটেও অসুুবিধে হলোনা।
” মায়ের কি কিছু বলার ছিলো? জায়রা প্লিজ আমাকে একটু পরিষ্কার করে বলবে ঘটনা কি? আমি না এখনো ঠিক বুঝতে পারছিনা আসলে সমস্যা কি।”
” তুমি কাউকে বলবে না তো যে আমি বলেছি।”
” সত্যি বলছি কাউকে বলবোনা। এবার বলো কি হচ্ছে।” আরশিয়ার কন্ঠে বেশ তাড়াহুড়ো ভাব, কৌতূহল, ভয় সবমিলিয়ে হৃদপিণ্ড ধক ধক করছে তার।
.
.
চারিদিকে নানা ধরণের মানুষের কোলাহল। সবাই নিজের নিজের কাজে ব্যস্থ। মাথানিচু করে বসে আছে ওয়াসিম, বারবার এদিক ওদিক তাকিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে।
” এগুলো আমি কি শুনছি ওয়াসিম? আপনি যে এধরণের এটা তো আমি জানতাম না।”
আরশিয়ার কথা শুনে ওয়াসিম নড়েচড়ে বসল। আরশিয়া আবারো বলল,
” আমি ভেবেছিলাম আপনি ম্যাচিউর কিন্তু বাস্তুবে তো দেখি পুরোই ভিন্ন। শেষপর্যন্ত কিনা আপনি কান্না করেছেন!”
আরশিয়ার কথাটা শুনে ওয়াসিম বিব্রত হল। গলা খাকড়িয়ে বলল,
” তোমাকে এসব কে বলেছে?”
” বলেছে কেউ একজন কিন্তু সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। আপনি আমাকে আগে বিষয়টা ক্লিয়ার করুণ।”
” আন্দাজ করছি তোমাকে এটা জায়রা বা ইনান বলেছে কিন্তু এটা সত্যি নয়। আমি কান্না করিনি, শুধু একটু মন খারাপ…… হয়েছিল।” বেশ জড়তা নিয়ে বলল ওয়াসিম।
” আপনি আমাকে কতটুকুই বা চেনেন ওয়াসিম? মাত্র কয়েকদিনের দেখা, মোটে দু’ঘন্টাও আমরা কথা বলিনি তাতেই কিনা আপনি এতো বিশাল কান্ড ঘটিয়ে ফেললেন।”
” আমার চেনা পরিচয় লাগবেনা। আমি চাই তুমি যেন সারাজীবন আমার হয়ে থাকো। তোমাকে দেখে প্রেম নামক পাখিটা আমার জীবনে গোপনে বিনা অনুমতিতে পর্দাপণ করেছেন। আমি সহজে কোন কথা কাউকে বলিনা কিন্তু তোমার বিষয়টা আমি বেশিদিন নিজের মধ্যে রাখতে পারিনি। বারবার আমার মন বলছিল নিজের মধ্যে চেপে রাখলে তোমাকে আমি নিশ্চিত হারিয়ে ফেলবো। তাই রি’স্ক নিয়ে আমার ফ্যামিলিতে আমি জানিয়েছি। তারা প্রথমে তোমার ফ্যামিলিতে জানাতে চাইনি কিন্তু ইনান, জায়রা, জুবা এদের কারণে তারা তোমার বাবা-মাকে জানায়। কিন্তু আঙ্কেল রাজি নয়, আন্টি জুড়ে দিয়েছে শর্ত।”
ওয়াসিমের কথা শুনে আরশিয়া একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে প্রশ্ন করল,
” আপনি এতোদূর যাওয়ার আগে আমাকে একবার বলার প্রয়োজন মনে করলেন না। ফ্যামিলিতে ব্যপারটা জানানোর আগে আমাকে কি জানাতে পারতেন না?”
” দেখো আরশিয়া আমি প্রথমে তোমাকে রাজি করিয়ে, প্রেম করে তারপর বিয়ের পর্বে যেতে চাইনা। আমি সোজাপথে তোমাকে নিজের করে নিতে চাই।”
” কিন্তু ওয়াসিম বিষয়টা যে আরো জটিল করে ফেলেছেন আপনি। এখন যদি আমি বা আমার ফ্যামিলি রাজি না হয় তবে আমাদের মাঝে যে সম্পর্কটা আবারো গড়তে শুরু করেছিল সেটা যে আবারো ফিকে হয়ে যাবে, ভেঙে যাবে একেবারে। আপনার সামনে দাঁড়াতেও তখন আমার অস্বস্তি লাগবে।”
আরশিয়ার কথা শুনে ওয়াসিম অসহায়ভাবে তার দিকে তাকালো।
.
.
বাবা-মা দু’জনকে নিয়ে বসল আরশিয়া। সোজাসুজি ওনাদের কাছে জানতে চাইলো,
” ওনারা যে বিয়ের ব্যপারে বলেছে এটা আমাকে বলোনি কেন?”
আরশিয়ার প্রশ্ন শুনে ওনারা একে-অপরের দিকে তাকালেন। যা দেখে আরশিয়া আবারো বলল,
” দেখো এভাবে লুকিয়ে তো লাভ নেই। একসময় আমি এমনিতেই জানতে পারতাম, এই যেমন এখন। এইটা খুবই সিরিয়াস একটা ডিসিশান, এভাবে লুকোচুরি করলে কোন সমাধান হবেনা উল্টো সম্পর্ক খারাপ হবে। এর থেকে আমরা সামনাসামনি বসে ব্যপারটা নিয়ে কথা বললে ভালো।”
” আমরা চাইনি তুমি এখন এটা জানো। এসবের মধ্যে মনোযোগ দিয়ে তুমি পড়াশোনার ক্ষতি করো এটা চাইনি।”
” এই বিষয়টা নিয়েই কি তোমাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হচ্ছে?”
আরশিয়া তাদের হাবভাব দেখে বুঝতে পারলো তার ধারণাই ঠিক। পুনরায় একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল,
” এখন তোমাদের মতামত কি? কেন তোমাদের মতের অমিল?”
সুমনা আহমেদ কিছুটা বিরক্তি নিয়েই বললেন,
” তোমার বাবা চাই না ওয়াসিমের সাথে কোন সম্পর্কে জড়াতে। মূলত সে চায় না আমার বাপের বাড়ির কোন মানুষের সাথে কোনরূপ আত্নীয়তা করতে।”
” বাবা?”
” আত্নীয়দের মধ্যে পুনরায় সম্পর্ক গড়া আমার কাছে যৌক্তিক মনে হচ্ছেনা। এতে আগের সম্পর্কটা ন’ষ্ট হওয়ার সম্ভবনা থাকে বেশি। সমস্যাগুলো মুখ ফুটে বলা যায় না।”
” মা তোমার কি মত?”
” আমার তেমন কোন সমস্যা নেই। ওয়াসিম ভালো ছেলে তবে আমি এখুনি কোন সম্পর্কে জড়াতে চাইছি না। কারণ সে এখনো চাকরি করছেনা। আমি তাকে আগেই বলেছি সে যদি তোমার পড়াশোনা শেষ হওয়ার আগে সেটেল হতে পারে তবে আমার কোন আপত্তি নেই।”
” আরশিয়া এবার বলো তোমার মতামত কি? কারণ সবার আগে তোমার ইচ্ছে, সংসার তুমি করবে।”
” বাবা আমার নিজের কোন পছন্দ নেই। তোমরা যদি মনে করো ওয়াসিম আমার যোগ্য তবে আমি খুশি মনে তাকে বিয়ে করতে রাজি। বাকিটা তোমাদের সিদ্ধান্ত।”
দো’টা মনে কথাটা বলে আরশিয়া চলে তো এলো, তবে তার বুক ধকধক করছে। সে বুঝতে পারছেনা কি সিদ্ধান্ত নেবে, তার কি করা উচিত। তাই বাবা-মার উপর ছেড়ে দিয়েছে বিষয়টা। তাদের সিদ্ধান্তকেই সে ভাগ্য হিসেবে মেনে নেবে।
.
.
চারিদিকে সাজসাজ রব। সবাই অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছে বিশেষ মূহুর্তটার জন্য। অবশেষে সবার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ওয়াসিম আরশিয়ার হাতে আংটি পড়িয়ে দিল। এরপর আরশিয়াও ওয়াসিম হাতে আংটি পড়ি দিতে গিয়েও থেমে গেল। একবার তার বাবা-মায়ের দিকে তাকাল। আরশিয়ার চোখে ভাষা বুঝতে পেরে ওনারা ইশারায় তাকে আশ্বস্ত করলেন। সম্মতি পেয়ে আরশিয়া আংটি পড়িয়ে দিল, তাদের নতুন সম্পর্কের পথে এগিয়ে গেল আরো একধাপ। আংটি বদল হয়ে গেলে সবাই হাত তালি দিয়ে তাদের অভিবাদন জানাল।
আরশিয়াকে ঘিরে ধরেছে সবাই। একে একে সবাই ছবি তুলে যাচ্ছে। ওয়াসিম আপাতত এখানে নেই, সে তার বন্ধুদের খাবারের দিকটা দেখতে গিয়েছে।
” আপু তাহলে তুমি এখন আমার ভাবী হয়েই যাচ্ছো।” জুবা বলল।
” কহিনূর আপু আমি বোঝাতে পারবোনা, কতটা খুশি লাগছে আমার।” খুশি হয়ে বলল জায়রা।
” জায়রা, জুবা তোরা একটু সাইডে যা। আমার দামী নূরের সাথে কিছু কথা আছে।” শান্ত কন্ঠে বলল ইনান।
” কি এমন কথা যেটা আমাদের সামনে বলা যায় না?”
” জুবা প্লিজ জায়রাকে নিয়ে যা। জাস্ট দশ মিনিট এরপর সারাদিন বসে থাকিস।”
জায়রা মুখ ভেঙিয়ে জু্বার সাথে অন্যদিকে চলে গেল। ইনান কয়েক কদম সামনে এসে দাঁড়াল।
” কহিনূর আপু তুমি বিয়েটা নিজের শত পার্সেন্ট সম্মতিতে করছ তো? তোমার মনে কোন দ্বিধা নেই তো?”
” না ইনান, আমি নিজের সম্মতিতেই রাজি হয়েছি। বাবা-মায়ের মতের উপর আমার কোন আপত্তি নেই।”
ইনান দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল,
” জানো আপু ওয়াসিম ভাই নিজেকে যেরকম দেখায় সে আসলে তেমনটা না। সে খু্বই চাপাস্বভাবের, নিজের মনের কথা কাউকে মুখ ফুটে বলতে পারেনা। ওয়াসিম ভাই ঘূণক্ষরেও টের পায়নি তোমার প্রতি তার অনুভূতি সম্পর্কে আমি প্রথম থেকেই বুঝতে পেরেছিলাম।”
ইনানর কথা শুনে আরশিয়া অবাক নয়নে তার দিকে তাকাল। যা দেখে ইনান হেসে আবারো বলতে লাগল,
” ওয়াসিম ভাই যে তোমাকে পছন্দ করত এটা জেনেই আমি তোমার সাথে ওরকম ব্যবহার করতাম যেন সে মুখ ফসকে হোক বা জেলাসির বশে কথাটা যেন বলে। কিন্তু সেটা তার থেকে আশা করাই ছিল বোকামি। তুমি চলে আসার পর তার উদাসীন ভাবটা আমি দেখেছিলাম। তাই জায়রা, জুবা এদেরকে দিয়ে কথাটা বলিয়েছি। আঙ্কেল-আন্টি শর্ত দিয়েছিল তোমার পড়াশোনা শেষ হওয়ার আগে যদি সে ভালো জব পায় তবে তোমাদের বিয়ে ওনারা দেবেন। ভাই নিজেকে প্রমাণ করার জন্য, একটা চাকরির জন্য কি পরিমাণ পরিশ্রম করেছে সেটা আমরা দেখেছি। তোমার উপর আমার ভরসা আছে কিন্তু তাও বলছি নিজের মনে সায় না দিলে সরে এসো, না হলে বিয়ে নামক বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গেলে আর কিছু করতে পারবেনা। তখন আমার ভাইটা ভিতরে ভিতরে ম’রে যাবে।”
কথাগুলো বলে ইনান চলে গেলেও আরশিয়া এখন তার কথাই ভাবছে। বারবার নিজের মনকে প্রশ্ন করছে সে কি আধো বিয়েতে মন থেকে মত দিয়েছে?
” কিরে ঢঙগী এভাবে মুখ ফুলিয়ে বসে আছিস কেন? এনগেজমেন্ট এর মতো অনুষ্ঠানে কই নাচবি তা না।”
” হ্যাঁ আমি ক্রাশের এনগেজমেন্টে মন খারাপ না করে নাচবো। আমার ১৩ নম্বর ক্রাশটাও আধা মিঙ্গেল হয়ে গেল। এখন আমার কি হবে?” কান্না কান্না ভাব করে বলল মাহা।
” উফ…. এই মেয়ে আর তার ক্রাশ। তুমি যে দু’মিনিট পর আবারো কারোর উপর ক্রাশ নামক বাঁশ খাবে তা আমি জানি। তাই এতো ঢং না করে উঠো, নাচবো।”
মাহাকে টেনে নাচার জন্য নিয়ে গেলে জায়রা। মাহাও মূহুর্তেই সব ভুলে দিয়ে খুশি মনে নাচতে লাগল।
একপাশে নীরবে দাঁড়িয়ে সবার হাসিমাখা মুখ দেখছে আরশিয়া। সবাই সবকিছু ভুলে একসাথে মূহুর্তটাকে উপভোগ করছে। যা দেখে আরশিয়ার আনমনে হেসে উঠল।
” আরশিয়া।”
ওয়াসিমের ধীর কন্ঠে বুক কেঁপে উঠল আরশিয়ার। সেই মন মাতানো কন্ঠস্বর। ফাঁকা ঢোক গিলে সে ঘাড় বাঁকিয়ে তাকাল। নীল পাঞ্জাবি , সাদা পায়জামাতে ওয়াসিমকে বেশ সুদর্শন লাগছে। আরশিয়া পিটপিট করে কয়েকবার তাকে পর্যবেক্ষণ করল। যা দেখে ওয়াসিম হেসে বলল,
” এখনই যদি দেখে চোখের তৃষ্ণা মিটিয়ে নাও তাহলে বিয়ের পর তো আর ফিরেও তাকাবেনা। পরে দেখার জন্য কিছু অবশিষ্ট রাখো।”
তার কথা শুনে আরশিয়া লজ্জামাখা হেসে বলল,
” সুন্দর জিনিসকে সারাজীবন দেখলেও দেখার ইচ্ছে মিটেনা।”
” বাহ! আরশিয়া রাণী যে এতো রোমেন্টিক তা তো জানতাম না। তা কোথাও থেকে রোমেন্টিকতার কোচিং নিয়েছ নাকি?”
ওয়াসিমের কথায় আরশিয়া হালকা শব্দে হেসে উঠল। যা দেখে ওয়াসিমের হৃদয়ে প্রশান্তির ঢেউ বয়ে গেল।
” আরশিয়া তুমি এই বিয়েতে খুশি তো?”
আচমকা হাসি থামিয়ে দিলো আরশিয়া। ঘাড় ঘুরিয়ে সবার দিকে একবার তাকিয়ে মুখে হাসি নিয়ে বলল,
” খুশি, মন থেকে আমি এই বিয়েতে খুশি।”
” আমাকে ভালোবাসতে পারবে তো তুমি? ভালোবাসা না থাকলে সংসারটা রংহীন হয়ে যায়, ফিকে থাকে।”
আরশিয়া একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল,
” আমি জানিনা ভবিষ্যতে কি আছে। তবে যাইহোক না কেন আমি আপনাকে আর আপনার সংসার ছেড়ে যাবোনা। আমাকে ভালোবাসতে শেখানোর দায়িত্বটা না হয় আপনাকেই দিলাম। আপনি প্রেমের কবিতা লিখবেন আর সেই কবিতা পড়ে আমি কবির প্রেমে পড়বো। নেবেন তো এই গুরু দায়িত্বটা?”
ওয়াসিম তৃপ্তিমাখা হেসে পরম যত্নে আরশিয়া হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল,
” তোমার দায়িত্বও নিলাম, সাথে তোমাকে প্রেম পাঠ শেখানোর দায়িত্বও নিলাম। তুমি যেমন আমার মনে বিনা অনুমতিতে ঢুকেছ, গোপনে প্রেম নামক অনুভূতিটা জাগিয়েছ। ঠিক তেমনি করে তোমার মনেও প্রেম বড় গোপনে হা’না দেবে। আমার জীবনে যেমন প্রেম এসেছে গোপনে, তেমনি তোমার হৃদয়ে সে বড় গোপনে প্রবেশ করবে। এই প্রেম কবির প্রেমে তুমি গোপনেই পড়বে আরশিয়া, গোপনেই পড়বে।”
__________________সমাপ্ত___________________