গল্প: দাওয়াত (তৃতীয় পর্ব)
ইকবাল হোসেন
রাতে ঘুমুতে যাওয়ার সময় স্ত্রী বলল, সবাইকে দাওয়াত দিয়ে আসার পর থেকে দেখছি তোমার মন খারাপ, কেউ কিছু বলছে নাকি?
একবার মনে করলাম স্ত্রীকে সব কিছু খুলে বলি, পরে আবার মনে হলো নিজের পক্ষের আত্বীয় স্বজনের গুনগান পরের বাড়ির মেয়ের কাছে বলে কি লাভ! তাই এটা না বলে তাকে অন্য একটি টেনশনের কথা বললাম, অনুষ্ঠানের জন্য অফিসের প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে টাকা উঠানোর জন্য আবেদন করেছি। টাকা পাই কিনা কে জানে?
স্ত্রী বলল, ঢং! তুমি তো আর মেয়ে বিয়ে দিচ্ছ না, যে অনুষ্ঠান করতেই হবে। টাকা না পেলে অনুষ্ঠান করবে না। সবাইকে ফোনে বলে দিবে তুমি কি জন্য অনুষ্টান করতে পারছো না। বলবে আপনারা এমনেতেই এসে এক সময় বেড়িয়ে যাবেন।
পরদিন অফিসে গিয়ে কাজে মন বসাতে পারলাম না। সামনে ফাইল নিয়ে বসে আছে চুপচাপ, কোন কাজ করতে পারছি না। মনটা অশান্ত হয়ে আছে। কোন কিছু ভালো লাগছে না। এত ঝামেলার মধ্যে কিভাবে অনুষ্ঠান করবো, কোন কুল কিনারা খুঁজে পাচ্ছি না। মনে হচ্ছে, অনুষ্ঠানের আয়োজন করছি না, যেন ঝগড়ার বিবাদের বাজার বসাচ্ছি। দুপুরের দিকে আমাদের অফিসের হেড সার আমার টেবিলের কাছে আসলেন। আমি সালাম দিয়ে দাঁড়াতে তিনি আমাকে হাত নেড়ে বসতে বলে আমার সামনের চেয়ারে বসলেন।
আমার গোমরা মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, মন খারাপ করো না, হেড অফিসের সিদ্বান্ত, মেনে নেয়া ছাড়া উপায় নেই।
আমি কিছু বুঝতে না পেরে বোকার মত তার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
তিনি বলতেই থাকলেন, চাকুরী অবস্থায় প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে নাকি আর কোন টাকা ধার হিসেবে দিবে না। চাকুরি ছেড়ে দিলে বা চাকুরী শেষে একেবারে দিবে।
আমাদের কোম্পানীতে আগে নিয়ম ছিল, কারো জরুরী প্রয়োজন হলে প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে কিছু টাকা ধার হিসেবে নিতে পারতো এবং পরে প্রতি মাসে বেতন থেকে কিছু কিছু করে শোধ করে দিলেই হতো।
প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে টাকা উঠানোর জন্য আমার আবেদন মঞ্জুর না হওয়ার বিষয়টি হেড অফিস থেকে সকালে মেইলে জানিয়ে দিয়েছিল। আজকে আমার প্রচন্ড মন খারাপ থাকায় সকালে এসে যেমন কোন কাজ করিনি তেমন মেইলও চেক করিনি।
আবেদন মঞ্জুর না হওয়ার কথাটা স্যারের কাছে শুনে এত ভালো লাগলো যে, মনে হচ্ছিল ওনাকে জড়িয়ে ধরি। অনুষ্ঠান করতে পারবো না মানে আমাকে কোন ঝামেলাও জড়াতে হবে না।
তিনি বললেন, তুমি বললে আমি হেড অফিসে টেলিফোনে একবার রিকোয়েস্ট করে দেখি।
আমি ওনাকে বাধা দিয়ে বললাম, আপনাকে কোন রিকোয়েস্ট করতে হবে না স্যার। এই অনুষ্ঠান তো জরুরী কিছু নয়, যে করতেই হবে। টাকা পেলে করতাম, না পেলে নাই।
স্যার বললেন, ঠিক আছে, তুমি যেটা ভালো মনে করো। এই বলে তিনি তার রুমে চলে গেলেন
স্যার চলে যাওয়ার পর মনটা খুব ভালো লাগছে। যাক বাবা বিপদ থেকে বাঁচা গেল। দুপুরে ফুরফুরে মনে বাহিরে লাঞ্চ করতে চলে গেলাম।
লাঞ্চ করে আসার পর পাশের সহকর্মী জানালেন স্যার নাকি আমাকে ডেকেছিলেন।
আমার বসটি হলেন খুতখুতে স্বভাবের। কোন কিছু মনে হলে সহজে হাল ছাড়েন না। সেটা করেই ছাড়েন। আমি অনুষ্ঠান করতে চাই না, ওনার এত মাথা ব্যাথা কিসের?
চিন্তা করলাম ওনার রুমে গিয়ে স্টেট ফরওয়ার্ড বলবো, স্যার আপনাকে কোন রিকোয়েস্ট করতে হবে না। আমি অনুষ্ঠান করবো না, আমার অন্য সমস্যা আছে।
ওনার রুমে গিয়ে দেখি তিনি কেবলা কান্তের মত হাসি মুখে বসে আছেন। আমাকে বসতে ইশরা করলেন। আমি ওনার সামনে বসলাম।
তিনি বললেন, তুমি হয়তো জানো বা জানোনা, আমি তোমাকে অত্যান্ত স্নেহ করি। তোমাকে স্নেহ করি ব্যাক্তি হিসেবে যতটুকু তার চেয়েও বেশী তোমার কাজের জন্য। আমি ছুটিতে থাকলে বা অফিসের কোন কাজে বাহিরে থাকলে তুমি সব কিছু ভালোভাবে সামলে নাও, কোন ঝামেলা হয় না। আমি নিশ্চিন্তে থাকতে পারি। এটা একজন লোকের কাছে যে কতটা শান্তির তা বলে বোঝাতে পারবো না। তোমার প্রভিডেট ফান্ডের টাকা না পাওয়াতে তোমার যেমন মন খারাপ হয়েছিল আর আমারও তেমনি জিদ চেপে গিয়েছিল।
ওনার এ পর্যন্ত কথা শুনে আমি কিছু বলতে যাচ্ছিলাম। তিনি আমাকে হাত উঁচিয়ে থামিয়ে দিয়ে বলতে থাকলেন, আমি হেড অফিসের বড় স্যার কে ফোন করে বলেছি, স্যার আমাকে প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে কিছু টাকা দিন অথবা আপনার কাছ থেকে কিছু টাকা ধার হিসেবে দিন।
তিনি বলেছিলেন, রহমান সাহেব, হটাৎ করে আপনার টাকার কি এমন প্রয়োজন পড়লো।
আমি বললাম, অফিসের আমার এক কলিগ শখ করেছে বাচ্চার জন্য অনুষ্টান করবে, তাকে টাকা ধার দিব।
তারপর তিনি বললেন, ঠিক আছে আমি দেখছি।
স্যার আমার দিকে হাসিমুখে তাকিয়া বললেন, আমি ফোন রাখার কিছুক্ষন পর তোমার একাউন্টে টাকা দিয়ে দিয়েছে।
আমি তখন হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছিলাম না। এ অবস্থায় আমার ভালোমন্দ যাই হোক প্রথম যে কাজ তা হলো ভদ্রতা করে হলেও স্যারকে ধন্যবাদ জানানো। আমি বললাম, অনেক ধন্যবাদ স্যার।
স্যার রিলাক্স মুডে চেয়ারে হেলান দিয়ে বললেন, এখন তো তোমার চিন্তা দুর হলো। যাও অনুষ্ঠানের আয়োজন কর।
আমি আমার ডেস্কে এসে মাথায় হাত দিয়ে বসে পরলাম। আমি যেন বাঁচতে বাঁচতে মরে গেছি। পরক্ষনেই মনে হলো কি বোকা আমি? টাকা পেলেও অনুষ্টান না করলেইতো হয়। সবাইকে না হয় বাঁচার জন্য মিথ্যা বলব, আমি প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে টাকা পাইনি।
এটা মনে করে আমি খুশি হয়ে গেলাম। কিন্তু সে খুশিটা মাত্র এক মিনিট স্থায়ী হলো, একটা কথা মনে হতেই মূহুর্তের মধ্যেই সে খুশি আর খুশি থাকলো না। বেজার হয়ে গেলাম। আরে আমি তো অনুষ্ঠানে আমার অফিসের স্যারকেও দাওয়াত করেছি। টাকা পাইনি এই কথা সবাইকে বললেও স্যার কে তো আর বলতে পারবোনা।
পরদিন অফিসে গিয়ে মনমরা হয়ে বসে আছি চুপচাপ। স্যার এখনো অফিসে আসেননি। জ্যামে পড়েছেন মনে হয়। কিছুক্ষন পর তিনি অফিসে ঢুকেই আমার টেবিলের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় তার রুমে আসতে বললেন। আমি ওনার পেছনে পেছনে রুমে যেতেই তিনি আমাকে বললেন, বসো।
তার পর কিছুটা স্বস্তির হয়ে বললেন, গত বছর তুমি আমাদের অফিসের নতুন প্রজেক্ট দেখার জন্য দিনাজপুর গিয়েছিলে, মনে আছে?
আমি বললাম, মনে আছে স্যার।
তিনি বললেন, গতকাল রাতে হেড অফিসের বড় স্যার ফোন দিয়েছিলেন। বিদেশ থেকে নাকি ইঞ্জিনিয়ার এসেছেন। আমাকে বলছেন আগামীকাল থেকে কাজ শুরু করতে। তোমাকে আজ রাতেই দিনাজপুর যেতে হবে। তুমি দুপুরে দিকে বাসায় চলে যাও, কিছুক্ষন রেস্ট নিয়ে রাতের ট্রেনে রওয়ানা দিও। এই নাও তোমার জন্য একটি ট্রেনের টিকিট যোগাড় করেছি।
আমি বললাম, স্যার আমার অনুষ্ঠান?
তিনি বললেব, সেটা আমি চিন্তা করেছি। তোমার যায়গায় অন্য কাউকে পাঠাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আগে প্রজেক্ট ভিজিট করেছ তুমি, সবকিছু খুটিনাটি তোমার নখর্দপনে আছে, অন্য কেউ পারবে না, ভজঘট লাগিয়ে ফেলবে।
আমি বললাম, তাহলে স্যার অনুষ্টান করা বাদ দেই।
তিনি মাথা নেরে বললেন, বাদ দিতে হবে না। তোমার তো তিনজন দুলাভাই আছেন, ওনাদেরকে দায়িত্ব দিয়ে যাও, দেখবে ঠিকই সামলে নেবে। তাছাড়া তুমিতো কাজ শেষ করে অনুষ্ঠানের দিন খুব ভোরে চলেই আসবে।
একবার মনে করলাম অনুষ্টান এক সপ্তাহ পিছিয়ে দেই, কিন্তু তারপরই মনে হলো স্যার তো আগামী সপ্তাহে ইন্ডিয়া যাচ্ছেন। তিনি তো অনুষ্টানে থাকতে পারবেন না।
হটাৎ করে একটা কথা মনে হওয়াতে আমার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। মনে হলো স্যার যেন আমার সামনে দেবদুতের মত আভিরভুত হয়েছেন। আমার অনুষ্টানে যাদের জন্য ঝামেলা হতে পারে,, আমি তাদের উপর দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্তে চলে যেতে পারবো। তখন আর অনুষ্ঠানের বিষয়ে কেউ আমাকে দোষারোপ করতে পারবে না।
বাসায় এসে স্ত্রীকে আজকে রাতেই অফিসের কাজে ঢাকার বাহিরে যাওয়ার কথা বলাতে সে খুব মন খারাপ করলো। রেগে বলল, দুনিয়াতে মনে হয় তুমি একাই অফিস কর, আর কেউ করে না, তোমার উপর এত ঝামেলা কেন?
স্ত্রীর এই কথার আমি কোন উত্তর দিলাম না। শুধু তার মেজাজ কিছুটা ঠান্ডা করার জন্য তার জুলফি বেয়ে কিছু চুল এলোমেলো হয়ে নেমে ছিল, তা ঠিক করে দিলাম।
সন্ধার পর স্ত্রীকে বুঝিয়ে শুনিয়ে, ছেলের গালে এবং স্ত্রীর মাথায় চুমু খেয়ে দিনাজপুরের উদ্য্যেশে বাসা থেকে বের হলাম।
চাচার বাসায় গিয়ে দেখলাম, চাচা চাচি বসার রুমে বসে আছেন।
চাচি হেসে বললেন, ছেলের সুন্নতে খাতনায় নাকি বিরাট অনুষ্টানের আয়োজন করছো। তা অনুষ্টানের আয়োজন যেহেতু করছই, একেবারে বিয়ের আয়োজন করে ফেলো। আমাদের বয়স হয়ে যাচ্ছে, কতদিন বাঁচি ঠিক নেই, একেবারে নাতির বিয়েটা খেয়ে যাই।
আমি বললাম, চাচি, আপনারা নাতবউ দেখেন, আমার কোন আপত্তি নেই।
আমার এই চাচিটি হলেন কৌতুক প্রিয়। হাস্যরস করতে পছন্দ করেন। চাচা আবার উনার বিপরীত, গম্ভীর। এজন্য আমরা ভাই বোনেরা ছোট বেলা থেকে চাচাকে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের মত ভয় পেতাম এবং চাচিকে বন্ধুর মত মনে করতাম।
চাচাকে আমার অফিসের বিষয়টি খুলে বললাম।
চাচা একসময় সরকারি উচ্চপদস্থ চাকুরী করতেন। তাই তিনি অফিসের বিষয়টি অত্যান্ত গুরত্ব সহকারে নিলেন।
তিনি বললেন, অফিসের কাজ তো, উপায় নেই, যেতেই হবে। তা তুমি অনুষ্ঠানটি একসপ্তাহ পিছিয়ে দাও।
আমি বললাম, সেটা করা যাবে না। অনুষ্ঠানে অফিসের স্যারকেও দাওয়াত দিয়েছি। তিনি আবার আগামী সপ্তাহে ইন্ডিয়া যাচ্ছেন।
চাচা সমস্যাটা বুঝতে পারলেন। অফিসের স্যারকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত রাখলে যে ভালো হবে সেটা অনুধাবন করতে পারলেন।
তিনি কিছুক্ষন চিন্তিত মুখে বসে রইলেন। যেন সমস্যার কোন কুল কিনারা পাচ্ছেন না।
আমি ব্যাগ থেকে টাকার বান্ডিল বের করে চাচার সামনে রেখে বললাম, অফিসের প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে অনুষ্টানের জন্য টাকা উঠিয়েছি। এই টাকাগুলো রাখেন। আপনি আয়োজন করে দেন।
চাচা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, আমি করবো?
আমি বললাম, আপনাকে কিছু করতে হবে না। আমি আমার সমস্যাটা বলে তিন দুলাভাইকে আগামিকাল বিকেলে আপনাদের বাসায় আসতে বলেছি, উনারা রাজি হয়েছেন। উনারাই আয়োজন করে দিবেন।
এতক্ষন চাচি অবাক হয়ে আমার কথা শুনছিলেন। এক্ষনে তিনি বললেন, তোমার অনুষ্ঠানে তুমি না থাকলে কিভাবে হবে?
আমি বললাম, আমি অনুষ্টানের দিন খুব ভোরে বাসায় চলে আসবো। আমি অনুষ্ঠানের আয়োজনে হয়তো থাকবো না কিন্তু, অনুষ্ঠানের দিন তো উপস্থিত থাকবো।
চাচা বললেন, ঠিক আছে যাও, তোমার দুলাভাইরা কালকে আসলে আমি ওদেরকে দায়ীত্ব বুঝিয়ে দিব।
আমি চাচাকে বললাম, আমার অনুষ্ঠনের খরচ ও এই টাকা প্রায় সমান সমান। এই টাকায় হয় কিনা কে জানে। সবচেয়ে ভালো হয়, আপনি দুলাভাইদেরকে নিয়ে এই টাকার মধ্যে কি কি আইটেম করা যায় সেটা নিয়ে আলোচনা করে ঠিক করলে।
চাচা বললেন, সেটা নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবে না।
আমি বললাম, আর একোটি সমস্যা আছে। ফুফুদের দাওয়াত করেছি। উনারা বলেছেন কয়েকদিন আগে চলে আসবেন, মানে নাইওর আনার কথা বলেছেন।
চাচা বললেন, তুমি ছোট বাসা ভাড়া নিয়ে থাক। ওদেরকে কোথায় রাখবে? তাছাড়া খরচের ব্যাপারোও তো আছে।
চাচি বললেন, তোমার ফুফুরা সারা জীবনই এরকম করে আসছে, আল্লাদি স্বভাবের। নিজেদেরটাই শুধু বোঝে, ভাইদের সামর্থ বুঝতে চায় না।
চাচা বললেন, ওরা তোমার বাসায় থাকবে কোথায়? তার চেয়ে ওদেরকে বলবো কয়েকদিন যদি বেড়াতে মন চায়, তাহলে এই বাসায় যেন বেড়িয়ে যায়। তোমার বাসায় শুধু অনুষ্ঠানের দিন গেলেই হবে।
আমি বললাম, চাচা যাই হোক আপনি এই টাকার মধ্যে যে ভাবে সুন্দর হয়, সবার মন রক্ষা করে ব্যাবস্থা করে দিয়েন। অনুষ্টানে আমার অফিসের স্যার আসবেন, আমার মান যেন থাকে। আর ফুফুদের দেওয়ার জন্য আমি কিছু জামা কাপড়ের ব্যাবস্থা করে রেখেছি।
চাচা বললেন, তুমি নিশ্চিন্ত মনে যাও। চিন্তা করো না।
চাচার বাসা থেকে বের হয়ে রেল ষ্টেশনের উদ্যেশে রিকশায় চড়লাম। মনটা এত হালকা লাগছে যে বলার মত না। এই দুই দিন খুব টেনশনে ছিলাম। কিভাবে ঝামেলা বিহিন অনুষ্টান করবো তা মাথায় আসছিলো না। মনে হচ্ছে বিড়াট বাঁচা বেঁচে গেছি। স্যারের প্রতি খুব কৃতজ্ঞতাবোধ হচ্ছে। তিনিই আমাকে এই বিপদ থেকে বাঁচিয়ে দিলেন।
ষ্টেশনে পৌছে টিকিট হাতে নিয়ে ট্রেনের নির্দিষ্ট বগিতে উঠে আমার সিটটি খুঁজতে লাগলাম। সিটের কাছে গিয়ে ভুত, না জ্বীন দেখার মত চমকে উঠলাম। দেখি আমার অফিসের স্যার মহাশয় আমার সিটে আয়েশ করে বসে আছেন। আমি অবাক হয়ে আকাশ থেকে নয়, যেন মহাশুন্য থেকে পরলাম।
আমি বললাম, স্যার আপনি এখানে?
স্যার বললেন, তোমাকে যেতে হবে না, আমিই যাবো। তুমি বাসায় চলে যাও।
আমি বললাম, কেন স্যার! আমি তো যাওয়ার জন্য প্রস্তুত।
স্যার বললেন, তোমাকে কালকে যাওয়ার কথা বলার পর থেকে মনটা কেমন যেন খারাপ লাগছে। তুমি শখ করেছে অনুষ্টান করবে। এত বাধা বিঘ্নের পরও অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে যাচ্ছ। তোমার অনুষ্টানের আয়োজনে তুমি না থাকলে কেমন হয়! তাই ঠিক করেছি আমিই যাবো।
না গেলে বিপদে পরবো চিন্তা করে স্যারকে অনুরোধ করলাম আমি যাওয়ার জন্য। কিন্তু স্যার মনে করলেন, স্যারের প্রতি আমার ভক্তির জন্য আমি ত্যাগ স্বীকার করেও যেতে চাচ্ছি।
স্যার আমাকে বিদায় জানিয়ে বললেন, তোমার ফোন কিন্তু খোলা রেখ, প্রজেক্টের বিভিন্ন বিষয়ে সময়ে সময়ে তোমার সাথে আমার আলোচনার প্রয়োজন হবে।
ট্রেন হুইসেল দিয়ে ফেলেছে, এখুনি ছেড়ে দিবে। আমি ট্রেন থেকে নামার কথা ভুলে গেলাম। নামছি না দেখে স্যার অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন। আমি স্থবির হয়ে স্যারের সামনে দাড়িয়ে আছি। এই খেয়ালী লোকটাকে নিয়ে আর পারা গেল না। তিনি উপকার করতে গিয়ে মনের অজান্তে আমার ক্ষতি করে যাচ্ছেন।
প্রচন্ড হতাশায় আমার তখন মনে হচ্ছিল স্যার কে খুন করে লাশটাকে জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষন কাঁদি।
(চলবে)
দ্বিতীয় পর্বের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/Anyaprokash/permalink/1708069813041372/?mibextid=Nif5oz