শেষ বিকেলের রোদ -২২ তম পর্ব

0
1233

শেষ বিকেলের রোদ -২২ তম পর্ব
©শাহরিয়ার

— দোকানের ভিতর ঢুকতেই ফুপা বলতে শুরু করলো তোরা দেখতো কোন শাড়িটা ভালো লাগে? দোকানি কয়েক রকম শাড়ি বের করে দিলো সকলে মিলে একটা হলুদ রঙ এর শাড়িই পছন্দ করলাম। সকলের জন্য এক রকম শাড়ি বেশ লাগছে ভাবতে। এর মাঝেই ফুপা বললো তোদেরতো হলো এখন ছেলেদের জন্য পাঞ্জাবী পছন্দ করতে হবে এক রঙের। সে দোকান থেকে শাড়ি গুলো নিয়ে অন্য আরেকটা দোকানের ভিতর ঢুকলাম। সেখান থেকে হলুদ রঙের কিছু পাঞ্জাবী কিনে দোকান থেকে বের হয়ে আসলাম।

ফুপা:- তোমাদের কারো আর কিছু কেনার থাকলে কিনে নিতে পারো।

— সকলেই টুকটাক কেনাকাটা করে গাড়িতে যেয়ে বসলো। সোহান আমার দিকে তাকিয়ে ফুপাকে বললো আপনারা সকলে চলে যান আমি আমরা দু’জন কিছুক্ষণ পর আসছি।

ফুপা:- কেন তোরা আবার কি করবি?

সোহান:- আমরা আরও কিছু কেনাকাটা করবো।

ফুপা:- আচ্ছা তাড়াতাড়ি ফিরে আসিস।

— গাড়ি চলে যেতেই সোহানের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলাম কি হলো সবার সাথে গেলে না কেন?

সোহান:- দু’জন মিলে ঘুরবো বলে।

— তোমার সাথে আমার ঘুরতে বয়ে গেছে।

সোহান:- আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে আর কি আমি একাই ঘুরি বলেই হাঁটা শুরু।

— এই দাঁড়াও কোথায় যাচ্ছো? আমাকে সঙ্গে নিয়ে যাও।

সোহান:- কেন আমার সাথে বলে যাবি না?

— তুমিতো অভিমানও বুঝ না, রাগ ভাঙাবে কি করে?

সোহান:- আমার ঐসব বুঝার সময় নেই, সুন্দর মেঘলা দিন, খোলা আকাশের নিচে বসে ফুটপাতের ঝাল ফুচকা খাবার মজাই আলাদা।

— তুমিতো ভালো করেই জানো ফুচকা আমার কতটা প্রিয়।

সোহান:- হুম জানি বলেইতো সবাইকে পাঠিয়ে দিলাম দু’জন মিলে ফুচকা খাবো বলে।

— হয়েছে ঢং করো না, যদি বৃষ্টি আছে?

সোহান:- ভিজবো দু’জন।

— কথা বলতে বলতে একটা ফুচকার দোকানের সামনে এসে দাঁড়ালাম। দু’প্লেট ফুচকার অর্ডার করে দু’জন চেয়ার টেনে বসলাম। অল্প সময়ের ভিতর ফুচকা চলে আসলো। ফুচকা খাচ্ছি সোহান তাকিয়ে আছে দেখে কিছুটা লজ্জা লাগছে। মুখ ফুসকে বলে ফেললাম এমন করে কেন তাকিয়ে আছো?

সোহান:- চোখে চোখ রেখেই তোর ফুচকা খাবার দৃশ্যটা অসাধারণ। তাই মুগ্ধ হয়ে চেয়ে আছি।

— হাসতে হাসতে কি যে বলো না সবাই এভাবেই ফুচকা খায়।

সোহান:- কি জানি কখনো এতো কাছে থেকে কাউকে খেতেতো দেখিনি।

— ওহ তাই না? বলতে বলতে সোহানের মুখের দিকে একটা ফুচকা তুলে ধরলাম।

সোহান:- আমি খাচ্ছিতো তুই খা।

— আমার হাতেরটায় বেশী টেস্ট আছে খেয়ে দেখো।

সোহান:- তাইনা?

— হুম তাইতো বলেই মুখে ঢুকিয়ে দিলাম ফুচকাটা।

সোহান:- হয়েছে এখন তুই খা আমি মুগ্ধ হয়ে তোর খাওয়া দেখি।

— এই মানুষজন হাসবে বুঝলে তোমার এসব কথা শুনলে।

সোহান:- তাতে আমার কি? আমিতো আমার প্রিয়সীকে দেখবো, অন্য কোন মানুষকেতো আর দেখবো না?

— আহা কত সখ, মুখে তুই তুই বলো সব সময় আর এখন প্রিয়সী।

সোহান:- তো তুই আমার ছোট তোকে তো তুই বলেই বলবো।

— তুমি আসলেই একটা পাগল, প্রমিকাকে কি কেউ তুই বলে নাকি? আমার জায়গায় অন্য মেয়ে হলে কি তুমি তুই করে বলতে?

সোহান:- এই তোর জায়গায় অন্য মেয়ে আসবে কেন? অন্য মেয়েকে কি আমি ভালোবাসি নাকি?

— উফ চুপ করে খাওতো।

সোহান:- আচ্ছা চুপ।

— আমি ফুচকা খেয়ে চলছি আর সোহান সেই একই রকম তাকিয়ে আছে। আচ্ছা এতো ভালোবাসে আমাকে কই কখনোতো বুঝতে দেয়নি আগে। ওর চোখে এতো মায়া আমি আগে কেন বুঝিনি। যতই দেখছি ততই ঐ চোখের মায়ায় পরে যাচ্ছি। খাওয়া শেষ করে দু’জন হাঁটতে শুরু করলাম। বাহিরে বাতাস হচ্ছে বাতাসে চুল গুলো এলেমেলো ভাবে উড়ছে। সোহান মাঝে মাঝে হাত দিয়ে স্পর্শ করে দিচ্ছে। আমার ভীষণ রকম ভালো লাগছে অদ্ভুত এক ঘোর কাজ করছে ওর প্রতিটা স্পর্শে। হঠাৎ করেই হাঁটতে হাঁটতে সোহান আমার হাতটা চেপে ধরলো। এই প্রথম সোহান এভাবে আমার হাত ধরে হাঁটছে। আমি মনে মনে বলছি আরও আগে কেন তুমি আমাকে ভালোবাসো বলোনি। আরও আগে কেন তুমি আমার হাতে হাত রাখোনি? কেন এতোটা কাছে এসে এক সাথে পাশে থেকে পথ চলোনি?

সোহান:- এই তুই কি কিছু বলছিস নাকি?

— আমি কিছু বললে তুমি বুঝ নাকি?

সোহান:- আমি বুঝতে চাইনা কোন কিছু, তবে তোর প্রতিটা অনুভবে মিশে থাকতে চাই। আমি বুঝতে পারি না হয়তো অনেক কিছুই, তবে তোকে সারা জীবন এমনি করে ভালোবেসে যেতে চাই।

— ওহ তাই না? ভালোবাসি কথাটা বলানোর জন্য আমাকে কত কি করতে হলো আর সে বলে এমনি করে সারা জীবন ভালোবাসবে।

সোহান:- হুম তা ঠিক বলেছিস আচ্ছা তুই ও তো বলতে পারতি ভালোবাসার কথাটা?

— আমি কি করে বলবো? মেয়েরা কি ভালোবাসার কথা আগে বলে নাকি? আর তাছাড়া তোমার মনের ভিতর যদি অন্যকারো বসবাস থাকতো তখন আমি কি করতাম?

সোহান:- আর তোর মনে যদি অন্য কেউ থাকতো তাহলে কেমন হতো?

— নেই তো তাই না? হাঁটতে হাঁটতে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি শুরু হলো। আশে পাশে কোন রিক্সাও দেখতে পাচ্ছি না। আমি সোহানের দিকে তাকালাম।

সোহান:- এদিক সেদিক তাকিয়ে, চল কোথাও যেয়ে দাঁড়াই, না হলে পুরো ভিজে যাবো।

— ভিজলে ভিজবো কি হবে একদিন না হয় দু’জন এক সাথে ভিজলাম।

সোহান:- কিন্তু যদি জ্বর চলে আসলো?

— কিছু হবে না, হাঁটোতো তুমি বলতেই ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো। দু’জন বৃষ্টিতে ভিজেই হাঁটছি জীবনের এতো গুলো বসন্তে আমি বহুবার বৃষ্টিতে ভিজেছি কিন্তু আজকের মত এতো আনন্দ আমি কোন দিনই পাইনি। হঠাৎ বেল বাজাতে বাজাতে একটা খালি রিক্সা পাশ কেটে যাবার সময় সোহান তাকে ডাক দিয়ে থামালো। দু’জন রিক্সায় উঠো বসলাম।
বৃষ্টিতে সমস্ত শরীর ভিজে গেছে দু’জনের। টপটপ করে চুল বেয়ে পানি গালে পরছে। চোখের কাজল পানিতে লেপ্টে গেছে, শরীরের সাথে জামা গুলো ভিজে লেগে আছে। হঠাৎ সোহানের দিকে তাকাতেই লক্ষ করলাম সোহান অপলক আমার দিকে চেয়ে আছে। হঠাৎ মেঘের গর্জনে সোহানকে জড়িয়ে ধরলাম।

সোহান:- কানের কাছে মুখ এনে আস্তে আস্তে এই কি করছিস? কেউ দেখলে কি ভাববে?

— জানি না কিছু কেউ দেখার মত আছে নাকি এখানে?

সোহান:- যে মেয়ে মেঘের একটা গর্জনে ভয় পায় সে মেয়ে আবার আমার সাথে ঝগড়া করতে আসে কি করে এটাই ভেবে পাইনা।

— সোহানকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। কেন জানি তোমার সাথে ঝগড়া না করলে আমার ভালো লাগে না। আবার তোমার সাথে ঝগড়া করেও ভালো থাকতে পারি না। ভালোবাসা হয়তো এমনি।

সোহান:- কি জানি ভালোবাসার উপরতো আর আমি ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ করিনি। যে বলবো ভালোবাসা কেমন হয়।

— সোহানের বুক থেকে মাথা তুলে, আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলতো তুমি।

সোহান:- চোখে চোখ রেখে কি বলবো?

— ভালোবাসা কেমন হয়?

সোহান:- ভালোবাসা এক অদ্ভুত মায়া, যে মায়া সারা জীবনেও শেষ হয়না। রাগ অভিমান সব কিছুর পরেও প্রিয় মানুষটি কখনো অপ্রিয় হতে পারে না এই মায়ার কারণে। শত আবদার জুড়ে থাকে এই ভালোবাসার মানুষটি। অদ্ভুত ভালো লাগায় জড়িয়ে থাকে দু’জন মানুষ, এক জনের কষ্টে অন্য জনের কষ্ট হবার নামই হয়তো ভালোবাসা।

— এক দৃষ্টিতে চেয়ে রয়েছি সোহানের দিকে, মুগ্ধ হয়ে ওর কথা শুনছি, একটা মানুষ কত সুন্দর গুছিয়ে ভালোবাসার কথা বলে। মনে মনে আমিতো তোমার প্রেমে মরেই যাবো। এতো সুন্দর করে ভালোবাসার কথা কেমনে বলো তুমি। সোহানকে প্রশ্ন করলাম তুমি নাকি জানো না ভালোবাসা কি তাহলে কি করে বললে এসব?

সোহান:- বের হয়ে আসলো ভিতর থেকে একা একা।

— একা একা আবার বের হয়ে আসে কি করে।

সোহান:- এই যে যেমন করে তুই দেখলি সুনলি জানলি তেমন করেই।

— ওহ তাই বুঝি?

সোহান:- হ্যাঁ তাইতো।

— আচ্ছা তাড়াতাড়ি আই লাভিউ বলো।

সোহান:- মানে কি? এখন তোকে ভালোবাসার কথা বলতে হবে কেন?

— সোহানের কাধে একটা হাত রেখে ঝুম বৃষ্টি তুমি আমি পাশাপাশি একই রিক্সায় বসে আছি , দু’জনের বসার মাঝে দূরত্ব থাকলেও যাতে মনের মাঝে কোন রকম দূরত্ব না থাকে তাই বলবে।

সোহান:- তো আমাকে বলতে হবে কেন তুই বললেও তো পারিস।

— চোখ দু’টো বড় বড় করে সেহানের দিকে তাকিয়ে বলবা কিনা বলো?

সোহান:- চোখের উপর চোখ রেখে এতো বড় বড় চোখ করছিস কেন? তোকে পেত্নীর মত লাগে চোখ বড় বড় করে তাকালে। বলেই হাসতে শুরু করলো।

— কি বললা তুমি আমাকে পেত্নীর মত লাগে? বলেই সাহস করে আজ প্রথম বারের মত সোহানের ঠোঁটে কিস করে দিলাম। মেঘের গর্জন বেড়েই চলছে। সোহান আমার দিকে চেয়ে রয়েছে, এদিকে ঠাণ্ডায় পুরো শরীর কাঁপতে শুরু হয়ে গিয়েছে। হঠাৎ করেই সোহান বুকের সাথে চেঁপে ধরে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলতে শুরু করলো। তোকে খুব ভালোবাসি, সব অবস্থায় তোকে অনেক সুন্দর দেখায়। সোহানের বুকে মুখটা চেপে ধরে বললাম তবে যে বলো আমাকে পেত্নীর মত লাগে।

সোহান:- ভেজা চুলে বিলি কাটতে কাটতে, তোকে রাগানোর জন্য বলি, রাগলে তোকে আরও বেশী সুন্দর লাগে।

— ওহ তাই না? বলেই সোহানের বুকের উপর উপর্যুপরি কিল ঘুষি মারতে শুরু করলাম। আর বলতে শুরু করলাম আমাকে রাগাতে খুব মজা লাগে তাই না?

সোহান:- এই ব্যথা পাবো থাম।

— উহু থামবো না, তুমি এমন কেন বলতো বলেই সোহানের দিকে তাকালাম, তাকাতেই দেখতে পেলাম সোহানের বুকে কাজলের কালো দাগ লেগে গেছে। তা দেখে হাসতে শুরু করলাম।

সোহান:- পাগলের মত হাসছিস কেন?

— তোমার শার্টের দিকে তাকিয়ে দেখ কি অবস্থা বলেই হাসতে শুরু করলাম।

সোহান:- এই যা শার্টটা নষ্ট হয়ে গেলো।

— রিক্সার হুটটা উঠিয়ে দিয়ে ভিজতে ভিজতে বললাম সমস্যা নেই বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে যাবে, আর যতটুকু থাকবে আমি ধুয়ে দিবো।

সোহান:- চল হারিয়ে যাই দু’জন।

— কোথায় হারাবে?

সোহান:- দূর অজানায় নতুন কোন শহরে যে শহরে শুধু তুই আর আমি থাকবো। নতুন জীবন শুরু করবো। চারিদিকে সবুজ অরণ্য থাকবে। থাকবে ছোট ছোট দীঘি দীঘির চারপাশে থাকবে অসংখ্য নানান রকম ফুলের গাছ। সেখানে শুধুই থাকবে ভালোবাসা, হারাবি আমার সাথে?

— হুম আমিতো তোমার সাথে হারাতেই চাই। তোমার বুকে মাথা রেখে অনন্তকাল কাটিয়ে দিতে চাই। নিবে তুমি আমাকে তোমার সাথে?বলেই সোহানের দিকে তাকালাম, সোহান আমার দিকে চেয়ে আছে, কিছু বলতে যাবে তখনি রিক্সা চলে আসলো বাড়ির সামনে। সোহান রিক্সা থামাতে বললো। দু’জন রিক্সা থেকে নেমে বাড়ির ভিতর দিকে হাঁটা শুরু করলাম।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here