আজ পরির বিয়ে। নিজের ফুফাতো ভাইয়ের সাথে। তাকে অনিচ্ছাকৃত হলে ও বিয়ের পিরিতে বসতে হয়েছে। তবে গু লি র শব্দে থমকে গেছে চারপাশ, নিস্তব্ধ পরিবেশে কোনো পোকামাকড় ও আওয়াজের সাহস পাচ্ছে না বোধহয়!
বিয়ে বাড়িতে এমন বিদঘুটে কান্ড কেউ ই বোধহয় আশা করে না। আশা করার কথা ও নয়। বিয়ে বাড়িতে বরং বাজি ফাটার শব্দ শোনা যেতে পারে। বাচ্চাদের হৈ হুল্লর শোনা যাওয়ার কথা। কিন্তু গু লি র আওয়াজ তো কারো ভাবনাতে ও আসতে পারে না। কিন্তু সবার মাঝে আ ত ঙ্ক থাকলে ও মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকা দুজন তরুন তরুনীর মুখে নেই কোনো আতঙ্কের ছাপ। কেউ কোনো কথা বলছে না , হয়ত হাজারো কথা জমে আছে কিন্তু এই মুহূর্তে কারো মুখ থেকে র ও বের হচ্ছে না। শুধু একে অপরে দৃষ্টি বদল করছে। আশে পাশের কারো দিকে খেয়াল আছে নাকি তা নিয়ে সন্দেহ করা দুঃসাহস নয় বরং সন্দেহ করা টাই হলো আবশ্যক।
এইচ এস সি পরীক্ষার পর পর ই যে বিয়ের পিরিতে বসতে হবে তা কখনোই ভাবতেই পারে নি পরি। ঘুম থেকে জেগে উঠে এখনো ঠিক মতো আড়মোড়া ভাঙেনি। ঠিক তখনি তার মা এসে বললেন, “পরি আজ সন্ধ্যা তে তোর বিয়ে।
দুপুরে বের হব রেডি হয়ে থাকিস।”
এই বলেই চলে গেলেন তিনি। পরি তার মায়ের কথা ঠিক মতো বুঝে উঠতে পারে নি। কি বলে গেল তার মা , বিয়ে! কার বিয়ে, মাথা টা ঝিম মে রে গেল। আড়মোড়া ভেঙে পরি বাথরুমে ফ্রেস হতে চলে গেল। সকাল সকাল ই মাথা টা প্রচন্ড ব্যাথা করছে। চুল গুলো ঠিক ঠাক করে নাস্তা করতে এল। টেবিলে বসা মাত্রই পরির বাবা বললেন, “পরি মা, তোকে কিন্তু শশুর বাড়িতে ভালো হয়ে চলতে হবে। কখনো কোনো কটূক্তি করবি না,ওরা যতই নিজের লোক হোক না কেন শশুর বাড়ি তো শশুর বাড়ি ই হয়।”
পরি এক টুকরো খাবার মুখে দিয়েছে মাত্র। সে তার বাবার কথার মানে ও বুঝে উঠতে পারল না। কি হলো তার? আজ সব কেন ঘোলাটে লাগছে? চেনা সব কিছু কেন মনে হচ্ছে অচেনা। এ কি কোনো দুঃস্বপ্ন নাকি মনের বিরক্তিকর দুশ্চিন্তা। পরি কোনো কথাই মেলাতে পারল না। আর আব্বু কি সব বলছেন! এখনে শশুর বাড়ি নিজের লোক এগুলো ই বা এল কোথায় থেকে? পরি মুখের খাবার টুকু গিলে নিয়ে বলল, “আব্বু তোমার কথা আমি বুঝতে পারলাম না। শশুর বাড়ি নিজের লোক , কি সব বলছো তুমি?”
পরির বাবা মেয়ের মাথায় হাত রেখে ধীর কণ্ঠে বললেন,”মা আজ কে যে তোর বিয়ে। শশুর বাড়ি তো যেতেই হবে।”
পরির মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে। কি সব বলছে তার বাবা? বিয়ে! ওকে তো আগে বলা হয় নি। ও তো জানে বিয়ের আগে ছেলে মেয়েদের দেখা সাক্ষাৎ করানো হয়।তাছাড়া মতামত নেওয়া হয় , আর যাই হোক একটি বার তো চোখের দেখা বা নাম তো বলা হয়? কিন্তু এ কি বলছেন ওর বাবা। নিশ্চয়ই মজা করছেন!
পরি নিজেকে সামলে বলল,”বাবা তুমি মজা করছো তাই না? এই ভাবে কারো বিয়ে হয় নাকি? আর তাছাড়া সেই ছোট থেকে আমার স্বপ্ন ডাক্তার হওয়া। তোমরা তো সবসময় ই বলতে মা তুই ডাক্তার না হওয়া অবধি তোকে বিয়ে দিব না। তাহলে? আব্বু প্লিজ মজা কোরো না , এই সব আমার ভালো লাগে না।”
এই মুহূর্তে পরির বড্ড বাজে অনুভূতি হচ্ছে। এইসব কি ধরনের মজা , তাই সে খাবার না খেয়েই উঠে গেল। মাথা টা ব্যাথা করছে তাই একটা মাথা ব্যাথার টেবলেট খেয়ে নিল।ফোনে ঢুকে ফেসবুক লগ ইন করল। আজ বহুদিন পরে ফেসবুক এ একটিভ হলো। কত দিন হয়ে গেছে ফেসবুকে ঢোকা হয় না তার। ভার্চুয়াল জগৎ তার কাছে বি ষা ক্ত মনে হয়। কিন্তু এক সময় এই ভার্চুয়াল জগতে একটিভ থাকার জন্য পাগল হতো সে। লগ ইন করতেই ফোনের স্ক্রিনে ভেসে উঠল হাজারো ম্যাসেজ। বিন্দু মাত্র ইচ্ছে নেই এই ম্যাসেজ দেখার। কার ম্যাসেজ দেখবে সে , কেউ কি আছে তার?
সার্চ বক্স এ একটা নাম টাইপ করল মেয়েটি। কারো প্রোফাইল চোখের সামনে আসতেই মুখে এক চিলতে হাসি রাঙিয়ে উঠল। প্রোফাইল পিকটা একটি বার দেখে পরি ফেসবুক থেকে বের হয়ে গেল। আর আইডি লগ আউট করে নিল। কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে রাখল, নিশ্বাস ভারী হয়ে গেছে তার। আজকাল বড্ড সমস্যা হচ্ছে নিশ্বাস নিতে। প্রতি টা মুহূর্ত বি ষা ক্ত তা বিরাজ করে। দরজায় মায়ের নক পেয়ে পরি উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিল। পরির মা হাতে করে নিয়ে এসেছেন এক গাদা জিনিস পত্র। তা দেখে পরির চোখ জোড়া থমকে গেল। বেনারসি শাড়ি , জুয়েলারি, তার মানে কি সত্যি তার বিয়ে? এই সব ভাবতে ভাবতে পরির পাগল প্রায় অবস্থা!
পরির মা বিছানায় জিনিস গুলো রেখে বললেন, “দেখে নে সব কিছু ঠিক ঠাক আছে নাকি।”
পরি ঠায় দাঁড়িয়ে আছে, মায়ের কথা তার কান অবধি পৌছাল না। মেয়ে কে এভাবে থমকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মিসেস রাহেলা পরি কে হালকা করে ধাক্কা দিলেন। পরির ধ্যান ভাঙ্গতেই পরি মায়ের দিকে ছলছল চোখে তাকাল। মেয়ের চোখে পানি দেখে মিসেস রাহেলা ভ্রু কুচকালেন। পরি তার মায়ের দু হাত ধরে বলল, “আম্মু হঠাৎ কেন করছো এমন?”
মিসেস রাহেলা পরির দু হাত ছাড়িয়ে বললেন,” দেখ মা বড়ো হয়েছিস বিয়ে তো দিতেই হবে। আর প্রান্ত দেখতে শুনতে তো খারাপ নয়? তাছাড়া তোর দাদুর নাকি খুব ইচ্ছে ছিল তোর আব্বুর মেয়ে হলে প্রান্তর সাথে বিয়ে দিবেন। বৃদ্ধ মানুষের ইচ্ছে ফেলতে নেই মা, তাহলে অকল্যাণ হয়।”
প্রান্ত নাম টা শুনে পরি চমকে উঠল। প্রান্ত তো তার ফুফাতো ভাইয়ের নাম। ছেলেটা অত্যন্ত বাজে প্রকৃতির, দেখতে বাজে না হলে চরিত্রের ঠিক নেই। ম দ, গা জা, মেয়ে সব কিছুতেই ডুবে থাকে। এটা তার পরিবারের কেও জানে না হয়ত। কিন্তু একদিন পরি সব দেখে ফেলে। পরি রিক্সা দিয়ে কলেজ যাচ্ছিল, হঠাৎ করেই দেখতে পায় তার বান্ধবী সিনান কারো সাথে খুব ঘনিষ্ঠ ভাবে হেঁটে যাচ্ছে। সিনান কে পিছু করতে সে রিক্সা থেকে নেমে যায়। বেশ কিছুক্ষণ পিছু নিয়ে দেখতে পায়, সিনান ছেলেটার সাথে নি ষি দ্ধ পল্লি তে যাচ্ছে। পরির বুকের ভেতর মোচর দিয়ে উঠে। কিন্তু এই ছেলেটা কে?
হঠাৎ করে ছেলেটা আর সিনান থেমে যায় , কারো সাথে কথা বলার জন্য। ছেলেটা পেছন ঘুরে থাকায় পরি দেখতে পায় না সিনানের সাথে কে ছেলেটা। ছেলেটা কিছুক্ষণ ঐ লোকটার সাথে কথা বলে তারপর হেন্ডসেক করে টাকা দেয়। আর লোকটা কাঁধে রাখা ব্যাগ থেকে বের করে দেয় এক বোতল ম দ। পরি সমস্ত টাই আড়াল থেকে দেখে নেয়।হঠাৎ করে ছেলেটা যখন পেছন ফিরে তখন পরির নিশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম কারন এ আর কেউ নয় তার ফুফাতো ভাই প্রান্ত!
**এটি আমার লেখা দ্বিতীয় ধারাবাহিক গল্প ছিল। কিছু কারণে গল্পটা নাম পরিবর্তন করে রিপোস্ট করা হলো।**
#নীলের_পরি (১)
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি