#তুমি_আমার_মুগ্ধতা
#পার্ট:০৭
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ
৪২.
“আপনি কি আমাজে খুঁজছেন?”
হুট করে অর্ষা কোথা থেকে এসে যেন কথাটা প্রান্তিক’কে বলল। প্রান্তিকের অবস্থা এখন আকাশসম বিরক্ত প্রায়। প্রান্তিক অর্ষাকে কাছে টা’ন’তে না টা’ন’তে’ই অর্ষার গা’লে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। দাম্ভিক কন্ঠে হাঁ’পা’তে হাঁ’পা’তে বলল,
“কোথায় ছিলে তুমি? হ্যাঁ? বল কোথায় ছিলে?”
গা’লে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়ায় অর্ষা। প্রান্তিক চলে যায় রুম থেকে। তার রাগ এখন কিছুতেই কমছেনা। হুট করে রিসেপশন থেকে মেয়েটা কোথায় চলে গিয়েছিল সে তা জানতে নারাজ। কেন গিয়েছিল এইটাই বড় প্রশ্ন। সে মানা করেছিল কোথাও যেতে। এক মুহুর্তের জন্য হলেও তার মনে কড়া নেড়ে ছিল, অর্ষা ওকে ছেড়ে চলে যায়নিতো?
৪৩.
“ইশ এখন এই জায়গা থেকে বের হব কেমন করে?”
আনমনে ভাবছে আফ্রা। অর্ষা তড়িঘড়ি করে তাকে এইখানে রেখেই নিচে চলে গেছে। গেস্ট রুমের খাটের নিচ থেকে বেরিয়ে ভাবতে থাকে কিভাবে সে বের হবে এই বাড়ি থেকে। কারণ চারদিকে সিকিউরিটি গার্ড। তখনি দরজা খু লে প্রবেশ করে বাগানে দেখা সেই ছেলেটি। অর্ণীক চমকে গিয়ে বলল,
“এই মেয়ে এই! তুমি এইখানে কেন! কে এনেছে তোমাকে এইখানে?”
ভ’র’কে যায় আফ্রা। না জানি কোন ঝা’মা’লা’য় পড়তে হয় তাকে। আফ্রা নিজেকে সামলে নিয়ে আমতা আমতা করে বলল,
“আজব! মিস্টার প্রান্তিক চৌধুরীর রিসেপশনে এসে এইভাবে অ’প’মা’নি’ত হতে হবে প’দে প’দে তাতো জানতাম না। জানলে বোধহয় কখনো আসতাম না।”
অর্ণীক জি হ্বা দিয়ে অধর ভি’জি’য়ে বলল,
“আপনি রিসেপশনে এসেছেন ভাল কথা। আপনি এই গেস্ট রুমে ঘুরঘুর করছেন কেন? আর গেস্ট হলেতো সামনের গেইট দিয়ে সুন্দরভাবেই আসতে পারতেন, এইভাবে চো’রে’র মতো গেস্ট রুমে ঘা’প’টি মেরে বসে আছেন কেন মিস…
“আফ্রা, আফ্রা মির্জা।”
৪৪.
“আসসালামু ওয়ালাইকুম ভাবী।”
সদ্য ফোটে উঠা গোলাপের ন্যায় মেয়েটির ত্বক। বয়স কত হবে? ১৯/২০। প্রায় আফ্রার মতোই। মেয়েটিকে দেখে অর্ষা চোখের পা’নি সাথে সাথে মু’ছে ফেলে। চুপচাপ বসেছিল বিছানায় অর্ষা তখনি মেয়েটি রুমে প্রবেশ করে। মেয়েটি অর্ষার পাশে বসে। অর্ষার দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমি পর্ণা চৌধুরী ভাবী। আপনার একমাত্র ননদীনি।”
“কেমন আছ আপু?”
“আলহামদুলিল্লাহ। আমার ভাবীকে দেখে আরও বেশি ভাল আছি।”
জোরপূর্বক হাসে অর্ষা।
“কাঁদবেন না ভাবী। আসলে আমার মনে হয়, ভাইয়া আপনাকে একটু বেশিই ভালোবাসে। তাই এমন বিহেভ করেছে। আপনাকে না দেখতে পেয়ে সারা বাড়ি পা গ লের মতো খুঁজেছে।”
অর্ষা কেবল শুনছে পর্ণার কথা। পর্ণা আবার বলতে লাগল,
“জানেন ভাবী? আমার ভাইয়াটা না? ভালোবাসার কাঙ্গাল। ছোট থেকে বাবা-মায়ের ভালবাসে পায়নি বললেই চলে। বাবা-মা সবসময় নিজেদেরকে কাজে ব্যস্ত রাখত৷ আমরা ২ ভাইবোন এইটা মেনে নিতে পারলেও, ভাইয়া মেনে নিতে পারেনি।”
অর্ষা তাকায় পর্ণার দিকে। পরক্ষণেই বলল,
“কাউকে ভালোবেসে এইভাবে তার গায়ে হাত তোলা যায় পর্ণা?”
“হারানোর ভ য়। হারানোর ভ য় থেকে এমনটা করেছে। বুঝে নিন ভাইয়াকে,তার চোখ দেখে মন পড়ুন। তাহলেই বুঝতে পারবেন ভাইয়া আপনাকে কতটা ভালোবাসে।”
৪৫.
“তুই কোথায় গিয়েছিলি আফ্রা?”
বাড়ির পেছন গেইট দিয়ে নিজের রুমে প্রবেশ করতেই শাফায়াতের কন্ঠস্বর শুনে চমকে উঠে আফ্রা। পেছন ফিরে ভাইকে দেখে বলল,
“তুমি এইখানে যে ভাইয়া?”
“পরী কোথায় তুই যে জানিস সেইটা আমি ভাল করেই জানি।”
“আমি সত্যি জানিনা অর্ষা কোথায় বিল…”
ঠাসস করে গা’লে থা প্প ড় বসিয়ে দেয় শাফায়াত। চোখ থেকে ট’ল’ম’ল করে পা’নি পড়ছে আফ্রার। তার যাই হয়ে যাক না কেন অর্ষা কোথায় সে তা বলবেনা।
“বল পরী কোথায়?”
“বলবনা। জানলেও বলবনা। একটা মেয়েকে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়ে কেন দিতে হবে?”
“ছোট মা জানার আগে বলে দে আফ্রা। আমাকে রাগাসনা।”
“ছোট মা, ছোট মা.. ছোট মা… সারাক্ষণ এই একটা নামের জন্য ভ য়ে কু ক ড়ে থাকে এই বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষ। আর কত?”
“আফ্রা..গ লা নামিয়ে কথা বল। চাচা মা রা যাওয়ার পর আমরা পথে বসতাম। যদি ছোট মা ব্যবসা নিজে না সামলাতো।”
“তার মানে তুমি বলতে চাইছো আমরা ছোট মায়ের করুণায় বেঁচে আছি ভাইয়া?”
“আফ্রা…”
“চি ৎ কার কম করে কর। আজ অব্দি আমার পেছনে, অর্ষার পেছনে অনেক ভাল ছেলেই পড়ে ছিল। ভ য়ে কখনো কারো প্রস্তাবে কেউ রাজি হয়নি। এমনকি..তূর্যকেও অ প মা ন করেছে। পেয়েছেটা কি? আমাদের কি মন নেই?”
“তূর্যের সাথে আমাদের যাইনা বলেই বিয়ে হয়নি। আজ থেকে তোর খাওয়া-দাওয়া সব বন্ধ। এই ঘরে পড়ে থাকবি তুই। যতক্ষণ না অব্দি পরী কোথায় তা বলছিস।”
শাফায়াত আফ্রার ফোনটা কে’ড়ে নেয় তার থেকে। তারপর পেছন থেকে দরজা লাগিয়ে ফেলে। আফ্রা দরজায় কড়া নেড়ে বারংবার বলছে,
“দরজা খুলো, প্লিজ ভাইয়া খুলো দরজা।”
৪৬.
রাতে প্রান্তিক রুমে ঢু’কে দেখে আফ্রা চুপচাপ বসে আছে গোলাপি রংয়ের একটা শাড়ি পড়ে। চোখে কাজল। কপালে টিপ। ঠোঁ/টে আলতো গোলাপি রংয়ের প্রসাধণী। অর্ষা তার দিকেই তাকিয়ে আছে। প্রান্তিক এইসব দেখেও না দেখার ভান ধরে কাবার্ড থেকে ব্লু টিশার্ট আর ট্রাওজার নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে যায়। অর্ষা মনে মনে ভাবে,
“দূর দেখেইতো মনে হচ্ছে ভীষণ রে’গে আছে আমার উপর৷ ইশ এত কষ্ট করে সাজলাম রা’গ ভাঙ্গাব বলে..কিন্তু এতো দেখছি..”
মনটাই বিষন্ন হয়ে যায় অর্ষার। গোসল সেরে প্রান্তিক ওয়াশরুম থেকে বের হয়। কোনোদিকে না তাকিয়ে বেলকনিতে যায়। তোয়ালে দিয়ে মাথার পা’নি ঝাড়ে। বেলকনিতে রাখা বেঁতের সোফায় শুয়ে পড়ে সে। ভাবছে কিছু। অর্ষা মনে মনে ভাবছে, “নাহ, এমনভাবে চলতে দেওয়া যায়না। নিজেকেই কিছু করতে হবে। বিছানা থেকে উঠে বেলকনিতে যায় অর্ষা। কোমল কন্ঠে বলছে,
“এই যে শুনছেন?”
চোখ আবদ্ধ করে আছে প্রান্তিক। আকাশে চাঁদ আছে। কিন্তু তার দৃষ্টি আকাশে নয়। তার দৃষ্টি বদ্ধ।
“এই যে শুনছেন?”
প্রান্তিক ছোট করে উত্তর দেয় ‘হুম।’
“সরি..আসলে আমি বুঝতে পারিনি এমন হবে।”
প্রান্তিকের চোখের কোণে পা’নি ঝড়ছে। অর্ষা চমকে উঠে তড়িঘড়ি করে বলল,
“প্লিজ উঠুন। আমি সরি। আর কখনো এমন হবেনা।”
প্রান্তিকের বু’কে মাথা রাখে অর্ষা। প্রান্তিক থমকালো। মেয়েটার হঠাৎ কি হলো! তার বু’কে মাথা রেখেছে অর্ষা! অবাক হচ্ছে সে। প্রান্তিক সুযোগ হাত ছাড়া করলনা। একবার যেহেতু কাছে এসেছে। আগলে নিবে সে। ঝা’প’টে ধরে অর্ষাকে। অর্ষা ল’জ্জা পেয়ে মাথা উঠায়না আর। ভীষণ শান্তি পাচ্ছে সে। প্রান্তিকের বু’কে যেন একরাশ প্রশান্তির নি’শ্বা’স নিতে পারছে সে।
“বউউ…আ’দ’র লাগবে নাকি?”
অর্ষার ল’জ্জা’য় নু য়ে যেতে ইচ্ছে করছে। আলতো স্বরে বলল,
“আপনিতো ভীষণ দু’ষ্টু।”
“তাহলে চলো..আজ একটু দু’ষ্টু’মি করি তোমার সাথে।”
প্রান্তিক উঠে অর্ষাকে পা’জা কো’লে তুলে নেয়। রুমে গিয়ে বিছানায় শুয়ে দেয় তাকে। অর্ষার ঠোঁ/টে ঠোঁ/ট মিশিয়ে দেয় নিজে। জ’ড়ি’য়ে ধরে অর্ষাকে। অর্ষা আজ আর বাঁধা দিবেনা। ‘স্বামী’ শব্দটার মাঝে অনেক গভীরতা মিশে আছে। তার অধিকার আছে স্ত্রীর উপর। স্ত্রী বাঁধা দেওয়ার ক্ষমতা রাখেনা। কোনো এক পু’রু’ষের’র স্পর্শে সর্বাঙ্গ কেঁ’পে উঠছে অর্ষার।
৪৭.
“তুই এ বাড়ি থেকে চলে যা টয়া। তোর জন্য আমার বাসায় সর্বক্ষণ ঝা’মা’লা চলে। বিবাদ সৃষ্টি হয়।”
কথাটি বেশ দাম্ভিক কন্ঠে বললেন আহানা চৌধুরী। পর্ণা কাঁ’দ’ছে দাঁড়িয়ে। তাকে নীলয় চৌধুরী খুব কথা শুনিয়েছে টয়ার জন্য। আহানা চৌধুরী আর নিজেকে দ’মি’য়ে রাখতে না পেরে মুখ খুলে বললেন টয়াকে কথাটি। নীলয় চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বললো,
‘তুমি বললে আমি আমার ছেলে মেয়ে নিয়ে চলে যাব। তাও টয়া থাকলে আমরা থাকবনা।”
“তোমাকে এই বাড়ি থেকে কোথাও যেতে হবেনা আপা। তোমার বাড়ি ছেড়ে তুমি কোথায় যাবে?”
ঘা’ব’ড়ে গেল টয়া। নিজের মাকে এ সময় দেখবে তা সে ঘুনাক্ষরেও টের পায়নি।
“মা তুমি!”
“তোর ল’জ্জা করেনা? এ বাড়িতে পড়ে থাকতে? তাও ওদের নুন ভাত খেয়ে ওদেরই সর্ব’না’শ করছিস তুই?”
“মা..”
“চুপ একদম চুপ। চল আমার সাথে বাড়িতে। চলল।”
টে’নে নিজের মেয়েকে নিয়ে চলে যায় নাসরিন বেগম। আহানা চৌধুরী নিজেই বোনকে কল করে বলেছে যেন তার মেয়েকে সে নিয়ে যায়। আহানা চৌধুরী পর্ণার দিকে তাকিয়ে বলল,
“চল পর্ণা, আজ এই মুহুর্তে আমরা এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাব।”
নীলয় চৌধুরী কথা বললেন না। মাথা নিচু করে বসে আছে সোফায়।
৪৮.
অর্ণীক একবার এপাশ, তো আরেকবার ওপাশ করছে। ভাল লাগছেনা তার। আজকে মিস বিউটিফুল অনলাইনে আসেনি সারাদিন। মেয়েটার সাথে এই কয়েকদিন কথায় সে বেশ মায়ায় পড়ে গেছে। হুট করে মনে পড়ল বাগানে দেখা মেয়েটির কথা। সেই মেয়েটির মতই কি তার মিস বিউটিফুল?
কি একটা ভেবে যেন চমকে উঠে অর্ণীক বিড়বিড় করে বলল,
“মেয়েটার নাম যেন কি! ইয়সস আফ্রা! আফ্রা মির্জা। তাহলে কি!”
লাফিয়ে শুয়া থেকে উঠে বসে সে। তাহলে সে যা ভাবছে তা’ই কি ঠিক? দুজনের নাম হুবহু এক। মানুষটাও কি এক!
৪৯.
সূর্য উঠেছে। পাখিরা কিচিরমিচির করছে। নির্জন শহর ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। সকালে ঘুম থেকে উঠতেই নিজেকে কোনো পুরুষের বাহুদ্বয়ে আবদ্ধ অনুভব করে অর্ষা। চোখ উচু করে দেখে সে প্রান্তিকের বু’কে আবদ্ধ। প্রা’ন্তি’ক তাকে জ’ড়ি’য়ে ধরে আছে। গতকাল রাতের কথা মনে আসতেই ল’জ্জা পেয়ে যায় অর্ষা। ঠোঁ/টের কোণে ফোটে উঠে ল’জ্জা’ব’তী’র হাসি।
“বউউ..হাসছ কেন?”
“ইশশ..আপনি না ঘুমে ছিলেন?”
“তুমি এতই ভাবনায় বিভোর ছিলে যে আমি কখন জেগেছি তা বুঝতেই পারোনি।”
“ইশ ছাড়ুন.. সকাল হয়ে গেছে। উঠতে হবে।”
“আমার বউকে আমি সারাদিন জ’ড়ি’য়ে ধরে শুয়ে থাকব। তাতে কার কি আসে যায়?”
“ছাড়ুনতো…”
জো’র করে উঠে পড়ে অর্ষা। পে’টে ভীষণ পেইন হচ্ছে তার। প্রান্তিক বুঝতে পারে ব্যপারটা। তারপর বলল,
“হেল্প করব বউ?”
“না লাগবেনা। আমি যাচ্ছি গোসল দিতে। আপনি উঠে পড়ুন।”
প্রান্তিক দুষ্টু হাসি ঠোঁ/টে রেখে বলল,
“বা’স’র রাত’টা বেকার গেল আমার।”
অর্ষা ভ্রু কুঁচকে বলল,
“মানে?”
“বা’স’র রাতে খা’ট ভেঙ্গে ফেলার রেকর্ডটা আর করতে পারলাম না।”
কথাটা বলেই ফিক করে হেসে ফেলে প্রান্তিক। তৃপ্তি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে তার দিকে। ছেলেটার ‘ল জ্জা স’র’ম কি আল্লাহ মালুম দেয়নি তাকে?”
চলবে…….