মায়ার_জীবনী #Nadia_Afrin পর্ব:২

0
818

#মায়ার_জীবনী
#Nadia_Afrin

পর্ব:২

ফজরের আজানের শব্দে ঘুম ভাঙলো আমার।এলোমেলো আমি নিজেকে ঘুছিয়ে স্বামীর মুখশ্রিতে তাকালাম।

কী সহজ-সরল তার মুখখানা।যেন নিষ্পাপ একটি প্রাণ।
সত্যিই হয়ত মানুষকে ঘুমন্ত অবস্থাতেই সবচেয়ে ভালো লাগে।এ সময়ে তার বিকৃতমস্তিষ্কের কথা জানান দেয় না।কুৎসিত মনমানসিকতা প্রকাশ পায় না।

‘নিজের স্বামীর ব‍্যাপারে এসব কী ভাবছি আমি,ছিহ।মনে মনে নিজেকে শ্বাসিয়ে নিলাম।
আজ আমার জীবনে নতুন সকালের সূচনা হবে।নেগেটিভ মাইন্ড ত‍্যাগ করে মানিয়ে নেওয়া শিখতে হবে।
ভালো মন্দ মিলেই তো সংসার।

নিজের বিয়ের ডালা থেকে একটি শ‍্যাম্পোর বোতল বের করে বাথরুমে ঢুকলাম।
সময় নিয়ে গোসল করলাম।কিছুক্ষণ পর আমার ঘরে দুই ননদের কথার আওয়াজ পেলাম।এতো সকালে ননদেরা ঘরে এলো বিষয়টি কেমন যেন।ভাবলাম কোনো দরকারে এসেছে হয়ত।
ওজু করে বের হলাম ফজরের নামাজ পড়বো বলে।

বের হয়ে দেখি দুই ননদ আমার ব‍্যাগ পত্র সহ সব কসমেটিকস নিজেদের মধ্যে ভাগ করছে।
আমি ওদের সামনে গিয়ে দাড়াতেই সায়মা বললো,”আজ তো তোমার বউভাত ভাবী,তোমার বাবার বাড়ি থেকে লোকজন আসবে।তাই তোমার কসমেটিকস গুলো নিয়ে যাচ্ছি।এতো দামী দামী কসমেটিকস দেখে যদি লোভ না সামলাতে পারে তোমার বাড়ির লোকেরা?
সেজন্য এগুলো নিয়ে যাচ্ছি।তোমার প্রয়োজন পরলে আমাদের থেকে চেয়ে নিও”।

সায়মার কথায় ধক করে উঠলো আমার বুকপিঞ্জর।আমার বাড়ির লোকের সম্মান শেষ পর্যন্ত এতো নিচে নামালো।চোখে পানি জমলো।

সায়মা ও সাইরা চলে গেল ঘর থেকে।এতোক্ষণে খেয়াল করলাম সারহান ঘরে নেই।

ধীরে ধীরে সূর্য উঠতে লাগলো।সেই সঙ্গে আমার জিবনের গতি যেন নিচে নামতে লাগলো।
মনের ভেতর চাপা দুঃখ অনুভব করলাম।ক্ষিদের কথা বেমালুম ভুলেই গেছি।

বেলা দশটায় সারহানকে এক নজর ঘরে দেখলাম।
আমার শুকনো মুখ দেখে সুধালো,”খেয়েছো তুমি “?

মাথা এপাশ ওপাশ করে উত্তর দিলাম খাইনি এখানো।
নিচে চলে গেল সে।মনে মনে খুশি হলাম এই ভেবে,যাক স্বামী আমার এতো কিছুর মধ্যেও আমার খাওয়ার কথা মনে রেখেছে।এটাকেই কী কেয়ারিং হাসবেন্ড বলে?
জানি না আমি।

ফিরে এলো দুটি পাউরুটি আর এক হালি কলা নিয়ে।
বললো,”সকালে যা রান্না হয়েছিল সব শেষ।আমরা সহ আত্মীয়স্বজন খেয়ে নিয়েছে।তুমি যে খাও নি এ কথা বলবে না মাকে?
তাহলেই তো খাবার দিয়ে যেতো মা।তোমার তো নিজেরই বাড়ি এটি।চাইতে অসুবিধা কী”।

এ কেমন মানুষ এরা’?বাড়ির নতুন বউ খেয়েছে কীনা একবারো খোঁজ নিলো না।যে যার মতো খেয়ে উঠলো।নতুন আমি চিনি না যানি না কার কাছে চাইতাম খাবার।আর সারহান ও কেমন স্বামী?
সদ‍্য বিবাহিত স্ত্রীকে রেখে একাএকা খেয়ে নিলো।অন্তত পক্ষে খাওয়ার আগে আমার একবার খোঁজ তো নিতে পারতো।
সিদ্ধান্ত নিলাম এখন থেকে চেয়েই খাবো বরং।নিজের বাড়ি মনে করেই চলবো।

দুটি কলা ও একটি পাউরুটি খেয়ে কোনো মতে ক্ষুদা নিবারণ করলাম।
সারহান আবারো তার কাজে ব‍্যাস্ত হয়ে পরলো।

বিছানা পরিষ্কার করছিলাম এমন সময় সাইরা এসে বললো,”এক হাজার টাকা দাও তো ভাবী।পার্লারে সাজতে যাবো এক হাজার টাকার কমতি আছে।মা কাজে ব‍্যাস্ত।ভাইয়ার কাছে চাইলাম ভাইয়া বললো তার কাছে নেই টাকা।তোমার থেকে যেন নিয়ে নেই”।

প্রথমে সাইরার কথার মানে বুঝলাম না।
অবুঝের ন‍্যায় বললাম,”তোমার ভাইয়ার টাকা তো আমার কাছে নেই”।

:,,,,,,,”ভাইয়ার টাকা কেন হবে।তোমার কাছে নাকি হাজার দুয়েক টাকা আছে,তোমার বাবা দিয়েছে সেখান থেকে দাও”।

একান্ত অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ব‍্যাগ থেকে একহাজার টাকার নোট ধরিয়ে দিলাম তাকে।চাইলো যখন কী আর করার।
এই টাকাটা বাবা আমায় দিয়েছিল কাজে লাগবে ভেবে।
নতুর স্বামী সারহানকে নিজের সব প্রয়োজনের কথা বলতে ইতস্ত বোধ করতাম আমি।
তাই টাকাটি থাকলে কিছুর দরকার হলে কাউকে দিয়ে নিজেই আনিয়ে নিতে পারতাম।
একদিনেই স্বামীর সঙ্গে নিজের সবকিছু মিলিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়।সম্পর্কটি স্বাভাবিক হতেও সময়ের প্রয়োজন।

ব‍্যাগ রেখে বিছানায় বসলাম।
ইতিমধ্যে অতিথিরা আসতে শুরূ করেছে।বিয়ে বাড়ি বলে কথা।নতুন বউ দেখা সবার কাছেই আকর্ষণীয়।

এদিকে আমার পরণে পাতলা একটি ফিলফিলে শাড়ি।
সাইরা ও সায়মা কসমেটিকস থেকে শুরু করে বউভাতে পড়ার শাড়ি পর্যন্ত নিয়ে গেছে।যেটা আমার বাবার বাড়ি থেকে দেওয়া।

মামাতো বোনের বিয়েতে দেখেছিলাম পার্লার থেকে সাজানো হয়েছিল তাকে।আস্ত যেন মোমের পুতুল লাগছিল দেখতে।
তখনই মনে সাধ জাগে আমার,নিজের বিয়েতে পার্লার থেকে সাজবো আমি।
সে সাধ আর পূরণ হলো না।

দু-একজন আত্মীয়স্বজন নতুন বউ দেখতে ঘরে এলো।আমাকে দেখে কানাঘুষা করতে লাগলো।
নিজের এমন অবস্থায় এবং পরিচিত কাউকে না পেয়ে বড্ড অসহায় মনে হলো, কান্না পেল আমার।
নিজেকে নিজেই বোঝালাম,স্ট্রং হও মায়া।সামান‍্য বিষয়ে কাদা শ্রেয় নয়।

শাশুড়ি এলো আমার ঘরে।আলমারি থেকে কী যেন বের করতে লাগলো।
তাকে দেখে মুখে কিঞ্চিত হাসি ফুটলো।
কাছে গিয়ে বললাম,”সাইরা সায়মাদের কাছে আমার বউভাতে পড়ার জিনিস পত্র রয়েছে।ওগুলো খুব দরকার আমার,মা”।

শাশুড়ি মা চোখমুখ কুচকে বললো,”সামান‍্য দুটৌ কসমেটিকস নিয়েছে তাই তুমি ঘরভর্তি মানুষের সামনে চাইছো”।

অথচ ঘরে তখন মাত্র তিনজন মানুষ।

সে আরো বললো,”সায়মারা পার্লারে গেছে।সব কিছু আলমারিতে তালা মেরে চাবি সঙ্গে করে নিয়ে গেছে।ওরা ফিরলে বলে দেবো,তোমার কোনো জিনিস যেন আর না ছোয়”।

হনহনিয়ে চলে গেলেন শাশুড়ি মা।তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেললাম।
যাকে ঘিরে এতো উৎসব তাকেই কীনা এতো অবজ্ঞা-অবহেলা।

মন খারাপ করে বসে রইলাম।
কালকের সেই চাচাতো জা অর্থাৎ ভাবী এলেন আমার ঘরে।এসে বললেন,”এমা নতুন বউ,এভাবে বসে আছো কেন তুমি।আজ তোমার বউভাত,রেডিও হও নি এখনো।নতুন বউ তুমি একটু সেজেগুজে থাকবে তা না করে খালি খালি বসে আছো যে”?

আমি কোনো উত্তর দিলাম না।ভাবি চারপাশে তাকিয়ে কিছু যেন আন্দাজ করতে পারলো।
নিজের ঘর থেকে একটি শাড়ি সহ কিছু কসমেটিকস নিয়ে এসে আমাকে সাজিয়ে দিল।
মনটা এবার ভালো হলো কিছুটা।

আমাকে বসানো হলো চেয়ারে।
স্টেজের কাজ এখনো সম্পন্ন হয়নি।

আত্মীয়স্বজনরা সবাই ঘিরে ধরলো আমাকে।
নানান প্রসঙ্গে আলোচলা করছিল।আমি চুপচাপ ছিলাম।এর মাঝে বয়স্ক করে একজন বললো,”তা ব‍ৌমা’ শাশুড়ি উপহার হিসেবে নতুন বউকে কী দিলো”?
কতো বড়োলোক বাড়ির বউ তুমি।নিশ্চয় দামী কিছু দিয়েছে।

আমি কোনো জবাব দিলাম না।জবাব দেওয়ার মতো কথাও খুজে পেলাম না।

এমন সময় শাশুড়ি উপস্থিত হলেন সেখানে।হাতে কিছু গহনার বাক্স।
এসেই বললো,”এই ধরো তোমার বাবার বাড়ি থেকে দেওয়া গহনাগুলো।আমি আবার টিভি সিরিয়ালের শাশুড়িদের মতো নই।যে বউয়ের গহনা নিয়ে নিজে আত্মসাত করবো।আর এটি হলো তোমার উপহার।সবসময় পড়ে থেকো”।

চিকন সুতার মতো একটি চেইন ধরিয়ে দিল আমার হাতে।তাও কেমন যেন মাদা মাদা।মনে হচ্ছে ইউসড চেইন।
শাশুড়ির দেওয়া উপহার সম্মানের সহিত গ্রহণ করলাম।
উপহার দেখে কজন নাক ছিটকিয়ে বললো,”এ আবার কেমন উপহার।এতো চিকন চেইন তো বাপের জন্মে দেখি নি।

শাশুড়ির হয়ত কানে গেল কথাটি।
আমার সামনে মহিলা গুলোকে কিছু বললো না।শুধু চোখ রাঙালো।আমায় নিয়ে চলে গেল নিজের ঘরে।

কিছুসময় পর স্বামী সারহান সহ আমাকে বসানো হলো স্টেজে।

ননদ সাইরার পরণে আমার বউভাতের শাড়িটি দেখে খারাপ লাগলো মনে।আমার পরণে তখন অন‍্য একজনের পড়া শাড়ি।
বউভাতের শাড়িটি মার সঙ্গে গিয়ে নিজে থেকে পছন্দ করে কিনেছিলাম।মা বলেছিলে,শাড়িটি আমার গায়ে মানাবে বেশ।

সাইরাকে তার বান্ধবীরা জিজ্ঞেস করলো,এতো সুন্দর শাড়ি কোথায় পেলে তুমি?

সাইরা উত্তর দিল মার্কেট থেকে কিনেছি আমি।

এরপর আমার মা-বাবা এলো।
মা জিজ্ঞেস করলো,কেমন আছি আমি?

মিথ্যে হাসি দিয়ে বললাম,ভালোই আছি।

চলবে,,,,,,,,

( পর্ব ৩ পেতে পেইজে ফলো দিয়ে রাখবেন সবাই।আর বেশি বেশি রেসপন্স করুন প্লিজ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here