মায়ার_জীবনী #Nadia_Afrin পর্ব:৩

0
632

#মায়ার_জীবনী
#Nadia_Afrin

পর্ব:৩

অনুষ্ঠান শেষ হলো সন্ধ্যায়।
সারাদিনের ক্লান্তিতে চোখ ভারি হয়ে আসছে।
ঘরে গিয়ে শাড়ি গহনা খুলে হ‍্যান্ড ব‍্যাগটি হাতে নিলাম।আত্মীয়স্বজনরা নতুন বউয়ের মুখ দেখে টাকা দিয়েছে।
টাকাগুলো গুণে দেখলাম মোট তিনহাজার দুইশো টাকা।
‘যাক টাকা গুলো দিয়েছে ভালোই হলো।এ টাকাগুলো জমিয়ে রাখবো প্রয়োজনে কাজে লাগবে আমার।

হন্তদন্ত হয়ে ঘরে প্রবেশ করলো সারহান।

:,,,,,,,,”মায়া তোমাকে দেখে সবাই যে টাকাটা দিয়েছে সেই টাকাগুলো দাওতো ক‍্যামেরাম‍্যান ভাড়া করা হয়েছিল তাকে টাকা দিতে হবে”।

সারহানের কথা শুনে আমি চুপচাপ দাড়িয়ে রইলাম।
আমার হাত থেকে ব‍্যাগ কেড়ে নিয়ে দুইশো টাকা রেখে বাকি তিনহাজার টাকা নিয়ে চলে গেল সে।

আমি শূন্য শূন্যই থেকে গেলাম।

এদিকে চেইনটি পড়েছি থেকে গলায় অসম্ভব চুলকানি অনুভব করছি।সোনা পড়লে কখনো এমন হয় না আমার।
চেইনটির সঙ্গে একটি ছোট্ট লকেট ছিল যাতে S অক্ষর লেখা।আমার জন্য যদি স্পেশাল ভাবে এটি বানানো হতো তাহলে নিশ্চয় আমার নামের অক্ষর থাকতো।তাহলে কী এটি অন‍্যের ছিল?

পরক্ষণে ভাবলাম,না না পুরোনো জিনিস কেউ নতুন বউকে দেবে না নিশ্চয়।হয়ত সারহানের নামের অক্ষর।

চাচাতো সেই জায়ের নাম ছিল রাহিমা।আমাদের বাড়ির পরের বাড়ি তার।
রাহিমা ভাবি তার শাড়ি ও কসমেটিকস নিতে এলো আমার ঘরে।

আমার গলার চেইনটি লক্ষ্য করলো তিনি।
কাছ থেকে দেখে বললো,”এ চেইন তুমি কোথায় পেলে বউ। এ তো একই ডিজাইন,একই সব”।

আমি বললাম,”মা দিয়েছে ভাবী,কিন্তু এসব বলছেন কেন “?

:,,,,,,,,”এটাতো তোমার বড়ো ননদ সায়লার চেইন।এতোকাল ওর গলাতেই ছিল।আর তোমার গলার আশেপাশে দিয়েও তো দেখছি র‍্যাশ টাইপ বের হচ্ছে।সকালে তো ঠিকই ছিলে”।

:,,,,,,,”হ‍্যা ভাবি,বুঝতে পারছি না কেন এমন হচ্ছে।র‍্যাশ বা এলার্জি হবে এ জাতীয় কোনো কাজ বা খাবার কোনোটাই খাই নি ও করিনি আমি।

:,,,,,,,”এ চেইন তুমি গলায় দিয়েছোই বা কেন।
সায়লা আপার শরীরে বিশেষ করে গলা দিয়ে কিছুদিন আগে ঘা এর মতো কী যেন হয়েছিল।চেইন পড়ে থাকলে চুলকাতো বেশি।তাই খুলে রেখেছিল।
শুনেছি তার থেকে তার ছেলে মেয়ের ও হয়েছিল।
ঘা এর জীবাণু হয়ত লেগেছিল,আর চেইনটি ও তো ধোয়া হয়নি মেইবি”।

তোমার ত্বক হয়ত একটু বেশিই সেনসিটিভ তাই জীবাণুর জন্য র‍্যাশ বের হচ্ছে।

ভাবীর কথা শুনে আমি যেন আকাশ থেকে পরলাম।শেষ পর্যন্ত কীনা অন‍্যের চেইন দিল আমায়।অথচ আমার বাবা আমার স্বামীকে দশ আনার চেইন বানিয়ে এনে দিয়েছে।

ভাবী আমার গলা থেকে জোর করেই চেইনটি খুলে নিয়ে শাশুড়ীমাকে ডাকতে লাগলেন।
শাশুড়ি মা এলে তিনি বললেন,”চাচিমা নতুন বউকে তো সায়লা আপার চেইন দিয়েছেন আপনি।জানেন না,পুরোনো জিনিস দিতে নেই নতুন বউকে।দেখুন চেইন পড়ে মেয়েটার গলায় র‍্যাশ বেড়িয়ে গেছে”।

:,,,,,,,”সোনা আবার নতুন পুরোনো হয় নাকি।সায়লার টা ঘরে পড়ে ছিল তাই দিয়ে দিলাম।এমনিতেও পড়ে এটা নিয়েই নিতাম আমি।সায়লা চেয়েছে তার চেইন।
আর র‍্যাশ ফ‍্যাশ কি বলছো তুমি।বিদেশি সোনার চেইন দামী চেইন তাই গায়ে সইছে না,ফোসকা পরছে”।

চেইনটি নিয়ে চলে গেলেন তিনি।ভাবী হয়ত আর আমার সামনে দাড়ানোর মুখ পেলেন না।সে ও বিদায় নিল।

আমি ধপ করে বিছানায় বসে পরলাম।নিজের হাতেতে থাকা আংটিটির দিকে তাকালাম।যেটি আমার মামা বিদেশ থেকে এনে দিয়েছিল আমায়।

এরপর রাত হলো।
ঘর থেকে শুনতে পেলাম সবাই খাবার টেবিলে বসা নিয়ে কথা বলছে।
খেতে চলে গেলাম আমি।টেবিলের চারপাশে গোল করে বসেছে সকলে।সারহানের পাশের চেয়ারটি ফাকা।
আমি চুপচাপ দাড়িয়ে রইলাম।ভাবলাম আমায় খাবার টেবিলে বসতে বলবে কেউ।কিন্তু সে ভাবনা ভুল প্রমাণ করে দিয়ে যে যার মতো খেতে শুরু করলো।সারহান একনজর তাকালো আমার দিকে।তারপর খাওয়ায় মনোনিবেশ করলো।

আমি সারহানের পাশের চেয়ারে বসা মাত্র সবাই আমার দিকে ভুত দেখার মতো করে তাকালো।
কিছুটা বিব্রত বোধ করলাম।

প্লেটে অল্প একটু খাবার নিয়ে খেতে লাগলাম।

ননদ সায়মা তার মায়ের কানের কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,”এ কেমন খাদক মা?নতুন বউ হয়ে সবার সঙ্গে খেতে বসে পড়েছে?তাকে তো বলাও হয় নি খেতে বসতে।একটুও লাজ-লজ্জা নেই দেখছি।

সায়মার বলা প্রতিটি কথাই কানে গেল আমার।গলা দিয়ে আর খাবার নামতে চাইলো না।
খুব কষ্ট করে খাবার টুকু খেয়ে নিজের ঘরে চলে এলাম।

মায়ের কথা খুবই মনে পরছিল।খাবার টেবিলে মাঝে মাঝেই নিজের হাতে খাবার খাইয়ে দিতেন আমার মা।সবার আগে আমাকে খাবার টেবিলে বসাতো বাবা।

বিছানায় শুয়ে পরলাম আমি।
রাত ১টার দিকে সারহান ঘরে এলো।
আমায় ঘুম থেকে ডেকে তুলে ১পাতা ইমারজেন্সি পিল দিল।

সেরাতেও আমার কাছে এলো সে।তার প্রতিটি ছোঁয়া যেন আমার কাছে বিষাক্ত লাগছিল।যে ছোঁয়ায় নেই কোনো ভালোবাসা,নেই কোনো সম্মান।সেই ছোঁয়া কতোই বা মধুর হবে।

_____

সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে কাজে লেগে পরলাম।
বিয়ের একদিন পার হতে না হতেই সব আত্মীয়স্বজনরা চলে গেছে দেখে অবাক হলাম ।
কিছু আত্মীয় তো থাকারই কথা।

একা হাতে রুটি বানালাম।এ বাড়ির সকলে প্রতিদিন সকালে রুটি খায়।ভাজি কুটে দিলেন শাশুড়িমা।

রান্না শেষে সবাইকে খেতে দিলাম।আমিও খেয়ে নিলাম।
সারহার ফ্রিজের ঠান্ডা পানি চাইলো।
আমি ফ্রিজ খুলে দেখি অবাক কান্ড।আমার বাবার বাড়ি থেকে আনা মিষ্টি সহ ফলমূল সব প‍্যাকেট করাই আছে।অর্থাৎ কাউকেই সেগুলো খেতে দেয় নি তারা।
শুনেছি বিয়ের মিষ্টি পাড়া প্রতিবেশি সহ সবাইকে বিলিয়ে দিতে হয়।বরাবরই তাই দেখে এসেছি আমি।কিন্তু এ বাড়িতে এমন কেন?

দুপুরে কাজ সেরে খাবার খেয়ে নিজের ঘরে শুয়ে ছিলাম।বড়ো ননদ সায়লা তার এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে এলো আমার ঘরে।বাচ্চাদুটোকে এই প্রথম কাছ থেকে দেখলাম আমি।
বাড়ি ভর্তি লোকের জন্য চিনতে পারি নি কাউকে।

সায়লা আপুর দুবছরের ছেলেটি আমার কোলে বসলো।ছয় বছরের মেয়েটি পাশে বসলো।
আর সায়লা আপু আমার ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে তেল সাবান গুলো দেখছিলেন।

প্রথমবার বাচ্চা দুটোকে দেখে দুজনের হাতে পাচঁশত,পাচঁশত করে দুজনকে এক হাজার টাকা দিলাম।ছোট ছেলেটি তো টাকা পেয়ে বেজায় খুশি।কিছু বাচ্চারা হাতে টাকা পেলেই খুশি।হোক না সে পাঁচশত বা পাঁচ টাকা।গালে একটি চুমু খেলাম তার।

সায়লা আপু বাচ্চাগুলোর হাত থেকে টাকাগুলো কেড়ে নিয়ে তাদের নিয়ে চলে গেলেন।
ভালো মনেই আবারো বিছানায় শুইলাম আমি।
কিছুক্ষণ পর চেল্লাচেল্লির শব্দে ধড়ফড়িয়ে উঠলাম।

শাড়ি ঠিক করে শাশুড়ি মায়ের ঘরের দিকে গেলাম।তার ঘর থেকেই বড়ো ননদের চেচানোর আওয়াজ আসছে।

ঘরের বাইরে দাড়াতেই অপ্রত্যাশিত কিছু কথা আমার কানে ভেসে এলো।
সায়লা আপু বলছে তার বাচ্চাদের নাকি ভিক্কা হিসেবে টাকাটা দিয়েছি আমি।কেদে কেটে একশা হচ্ছেন তিনি।

তখন তো ভালোই ছিল,এখন আবার এসব বলছে কেন তিনি?মনে মনে ভাবলাম আমি।

আর সত্যি বলতে বাচ্চাদের টাকাগুলো আমি ভালোবেসে দিয়েছিলাম।

আমাকে দরজার বাইরে দাড়িয়ে থাকতে দেখলো সাইরা।হাত ধরে টেনে নিয়ে এলো ঘরে।
মাকে উদ্দেশ্য করে বললো,”দেখছো মা’,অন‍্যায় করে আবার চোরের মতো আমাদের ঘরের সামনে কান পাতছে।

সাইরার কথা শুনে অপমানে রিনরিনিয়ে উঠলো আমার গা।সেখানে আর এক মূহুর্ত দাড়ানোর শক্তি পেলাম না।দৌড়ে ঘরে চলে আসি।

পেছন থেকে শাশুড়ি বলে উঠলো,”এ কী অসভ্য মেয়ে?কথা শেষ হওয়ার আগেই দৌড়ে ঘরে চলে গেল”।

চলবে,,,,,,,,

(যারা আমার লেখা গল্প বিষয়ে আপডেট চান বা বিভিন্ন মত প্রকাশ করতে চান তারা আমার গ্রুপে জয়েন হতে পারেন।আমার গল্প বিষয়ক সব ধরনের আপডেট গ্রুপে দেওয়া থাকে।
এছাড়াও #মায়ার_জীবনী সম্পর্কে যে কোনো মতামত প্রকাশ করতে পারেন। আমার লেখা গল্প সহ সব নিত্যনতুন ও আকর্ষণীয় গল্প পাবেন এ গ্রুপে)

গ্রুপ লিংক’,,,,,,https://facebook.com/groups/463381605028401/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here