মায়ার_জীবনী #Nadia_Afrin পর্ব:৪

0
625

#মায়ার_জীবনী
#Nadia_Afrin

পর্ব:৪

নিজের ঘরে এসে মন খারাপ করে বসে ছিলাম আমি।এ কোন জীবনে এসে পড়লাম?এ কেমন মানুষ এরা?
এটাই কী আমার প্রাপ্য ছিল?

একটানা নিজেকে নিজেই এতো গুলো প্রশ্ন করলাম।উত্তর মিললো একটিই,জানি না আমি।

কিছুসময় পর রেগেমেগে ঘরে প্রবেশ করলো সারহান।
আমার সামনে এসে আমার মুখের দিকে আঙুল তুলে বললো,”কী ভেবেছোটা কী তুমি?নতুন এসেই আমার বড়ো বোনকে অসম্মান শুরু করছো?
এই তোমার পড়াশোনা এই তোমার শিক্ষাদিক্ষা।

আমি কী করলাম?আমি তো তার বোনকে অসম্মান,অপমান কোনোটিই করি নি।
নিজের আপন মনে কথাগুলো আওড়ালাম।
সারহানের রাগ তখনও কমে নি।হটাৎ এমন একটি কথা বললো যা আর সইতে পারলাম না আমি।

সারহান বললো,”বুঝেছি এই জন্যেই তোমাকে বিয়ে করতে চায় নি তোমার বিয়ের আগের প্রেমিক।তোমার এমন নোংরা মনমানসিকতার জন্য তোমায় ব‍্যবহার করে ছেড়ে দিয়েছে।বিয়ে অবদি গড়ায় নি সম্পর্ক।

এবার তেতিয়ে উঠে আমি বললাম,”আমার প্রেমিক কে আমিই বিয়ে করিনি।তাকে ফিরিয়ে আমিই দিয়েছিলাম।তাকে বিয়ে করলে অন্তত মানসিক ভাবে সুখে হয়ত থাকতাম”।

:,,,,,,,”তো যাও না যাও।দেখো তোমাকে কেউ নেয় কীনা।অবশ‍্য তোমার মতো মেয়ের থেকে এক চেয়ে বেশি আর কী বা আশা করা যায়।
দুশ্চরিত্র কোথাতার”।

সারহানের বলা শেষ কথাটি তীরের ন‍্যায় বিধলো আমার বুকে।

বললাম,”বিয়ের আগে কী করছি না করছি সেসব দেখা তোমার কাজ নয়।তুমি আমার বর্তমান এবং ভবিষ্যত দেখবে।
আর যদি চরিত্রের কথাই বলো,তাহলে তোমার থেকে ঢের ভালো আমার চরিত্র।তোমার মতো বিয়ের পরও অন‍্য পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক আমি রাখিনি।কাল রাতেও তো তুমি একটি মেয়ের সঙ্গে উশৃঙ্খল ভাবে টেক্সটে কথা বলছিলে।
আমি সবই দেখেছি।

এবার সারহান এগিয়ে এসে আমার গালে সপাট করে একটা থাপ্পড় দিল।
বিশ্রি ভাষায় গালি দিয়ে বললো,”বেয়াদব মেয়ে,স্বামীর মুখে মুখে কথা বলে।
আমি শুধু অশ্রুসিক্ত নয়নে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
ঘর থেকে চলে গেল সে।

মুখে হাত চেপে কাদতে কাদতে মেঝেতে বসে পরলাম।
ভালো করেই বুঝে গিয়েছি,বেয়াদবির জন্য মারে নি সারহান।সে মেরেছে সত্যি কথা বলার জন্য।
সত্যি সবসময় তিতাই হয়।

আমার কাছে একটি বার শুনতে পারতো তো সে।বোনের মিথ্যা কথা শুনে এসে এভাবে নিজের নতুন বউকে আঘাত করলো।
শুনেছি নতুন বিয়ে হলে নাকি স্বামীরা বউয়ের দিকেই মশগুল থাকে বেশি,বউকে ইমপ্রেস করার চেষ্টা করে,বউয়ের মন জুগিয়ে চলে।
আর সারহান,সে কীনা আমায় বিয়ের দুদিন না পেড়োতেই গায়ে হাত তুললো।

শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশ তৈরি হলো।ইচ্ছে করছিল চিৎকার করে কাদি।কিন্তু সে কাজটি ও করা যাবে না আমার।বাড়ির বউযে আমি।

আজও মধ্য রাতে বাড়ি ফিরলো সারহান।নতুন বউ ঘরে থাকলে নাকি ছেলেরা ঘর থেকে বেরই হতে চায়না।সেদিক দিয়ে সারহান একদমই ভিন্ন।
আমার কাছে ক্ষমা চাইলো সারহান।ভাবলাম,যাক নিজের ভুলটা অন্ততপক্ষে বুঝতে পেরেছে সে।
আমায় কাছে টেনে নিল সে।
পরক্ষণেই মনে হলো সবই হয়ত আমাকে কাছে পাওয়ার বাহানা।এসব ক্ষমা-টমা কোনোটাই সত্যি না হয়ত।
তবুও আমি আর মাথা ঘামালাম না ব‍্যাপারটি নিয়ে।স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া-ঝামেলা হয়েই থাকে।

পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে মনে পরলো,আজ আমাদের ঐ বাড়িতে যাওয়ার দিন।অর্থাৎ আমার বাবার বাড়ি।
নিয়মমাফিক কাল যাওয়ার কথা থাকলেও শাশুড়ি মায়ের নির্দেশে যাওয়া হয়নি কাল।ফলস্বরুপ আজকে যাবো আমরা।
তাই সকাল থেকে ভীষণই খুশি আমি।মাত্র দুদিন বাড়ির বাইরে অথচ মনে হচ্ছে কতো জনম বাবার বাড়ি যাই না আমি।নতুন বিয়ের পর হয়ত সব মেয়েরই এমন ফিল হয়।
সকালে রেধে বেড়ে খাবার খেয়ে তৈরী হতে লাগলাম।
খেয়াল করলাম বাড়ির প্রত‍্যেকে এড়িয়ে চলছে আমায়।
ননদরা আর বউভাতের শাড়িটি ফেরত দিল না আমায়। সেটির আশাও ছেড়ে দিয়েছি আমি।

সুন্দর করে সাজলাম।ভালো শাড়ি পরলাম।তৈরী হয়ে নিলাম।এদিকে সারহান তৈরী হয়ে মায়ের ঘরে গেলেন।
দুদিন থাকবো ঐ বাড়িতে।তাই তিন-চারটি শাড়ি নিলাম।নতুন বউ আমি,শাড়ি তো পরতেই হবে।

সায়মা সাইরা আমার ঘরে এলো।চারপাশে উকি ঝুকি মারছিল।খাটের এক কোণে আমার কাপড় রাখার ব‍্যাগটি।
সেদিকে গেলো তারা।ব‍্যাগের চেইন খুলে হাতাতে লাগলো সবকিছু।গোছানো কাপড় অগোছালো করছে বলে কিছুটা বিরক্ত হলাম।
জিজ্ঞেস করলাম,”কিছু খুজছো তোমরা”?

:,,,,,,,”নাহ,দেখতে এলাম কী কী নিচ্ছো তুমি”।

বুঝলাম না,আমি কী নেবো না নেবো সেটা ওরা কেন দেখতে আসলো।আমার প্রয়োজনীয় জিনিসই তো আমি নেবো।

এরপর সবাইকে বলে রওনা হলাম।
সারহানদের প্রাইভেট কার ছিল।সেটিতে বসলাম আমরা।
গাড়ি চলতে শুরু করলো।গাড়ি যতো এগোচ্ছে আমার মন তত খুশিতে ভরে উঠছে।
আমাদের বাড়ি যেতে দুটো বাজার পেরোতে হয়।
প্রথম বাজার ক্রস করলাম সারহান কিছু বললো না।ভেবেছিলাম মিষ্টি, ফল ও পান-সুপারি কেনার জন্য দাড়াবে হয়ত।পরক্ষণে মনে হলো দ্বিতীয় বাজার থেকে কিনবে হয়ত।

নতুন জামাই প্রথমবার শশুর বাড়ি যেতে হলে মিষ্টি,ফল ও পান-সুপারি নিয়ে যেতে হয়।এটা বরাবরই হয়ে আসে।যদিও অনেকে যতো বারই শশুর বাড়ি আসে কিছু না কিছু নিয়ে আসে।

এরপর দ্বিতীয় বাজার টাও পেরিয়ে যাচ্ছিলো তবুও সারহান গাড়ি থামাতে বললো না।আগের ন‍্যায় চুপচাপ সে।
আমার যা বোঝার বুঝে গেলাম আমি।
ড্রাইভার কাকাকে বললাম গাড়ি থামাতে।সারহার আমার দিকে প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকালো।
সে দিকে পাত্তা না দিয়ে গাড়ি থেকে নামলাম।আবারো উল্টো পথে হেঁটে একটি মিষ্টির দোকানে গেলাম।ব‍্যাগে কালকের সেই দুইশো টাকা আছে।
টাকাটির দিকে একনজর তাকিয়ে ব‍্যাগটি বন্ধ করলাম।সিদ্ধান্ত নিলাম যার বাড়ির টাকা, তাকেই ফেরত দেবো।
আমার বিকাশে হাজার খানিক টাকা ছিল।তা দিয়ে পাঁচকেজি মিষ্টি কিনলাম।সে সময় মিষ্টির দাম বেশ কমই ছিল।
ফলমূল বা পান-সুপারি কেনা হলো না টাকার অভাবে।

মিষ্টি নিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলাম।সারহান প্রশ্ন করলো,”তোমার কাছে টাকা আছে আগে বলো নি তো”?নিশ্চয় আত্মীয়স্বজনরা যে টাকা দিয়েছে সেখান থেকে লুকিয়ে রেখেছিলে।

আমি ছোট্ট কথায় জবাব দিলাম,”এই টাকা আমার বিয়ের আগের,বিকাশে ছিল”।

সারহার আর জবাব দিলো না।
খেয়াল করলাম কেমন উশখুশ করছে সে।এতোক্ষণ তো ঠিকই ছিল।

:,,,,,,,,,”শুধু শুধু টাকা নষ্ট করে কী লাভটা পেলে তুমি?
নিজের বাড়িতে যেতে আবার মিষ্টি-টিষ্টি লাগে নাকি?
তোমার বাড়ি মানে আমার বাড়ি,আমার বাড়ি মানে তোমার বাড়ি।তো নিজেরই বাড়ি যাবো যখন মিষ্টি কেন নেব?
এর থেকে এই টাকাটা আমার দিলে ভালো হতো না?বিয়েতে কতো খরচ হলো,টাকাটা দিলে কোনো কাজে লাগিয়ে দিতে পারতাম”।

সারহানের দিকে অবাক নয়নে তাকালাম আমি।এতক্ষণে বুঝলাম তার এমন উশখুশ করার কারণ।
মনে পরলো,কাল যখন আমার বাড়ির লোকেরা এসেছিল তারা দশকেজি মিষ্টি,আটকেজি ফল,বারোকেজি ওজনের মাছ সহ তিন মোড়া পান-সুপানি এনেছিল।

বাড়িতে গিয়ে পৌছালাম।
ছোট বোনের হাতে মিষ্টির প‍্যাকেট দিলাম।বোনটা কেমন যেন চুপসে গেল।হয়ত ভেবেছিল বড়োলোক বোনের জামাই অনেক কিছুই আনবে তাদের জন্য।এটি লোভ নয়,এটি হলো প্রত‍্যাশা।

বাবা-মা হরেক রকম আয়োজন করেছেন সারহানের জন্য।
আমাকে আমার কিছু প্রতিবেশি ভাবি টেনে নিয়ে গেল।নানার ধরনের মজা করতে লাগলো।এক ভাবি মজার ছলে বললো,”কীরে নতুন জামাই নিয়ে এলি শুধু মিষ্টি হাতে কেন?ফলমূল,বড়ো মাছ,পান-সুপারি কই”?

আরেক ভাবী মজার ছলে বললো,”দেখো হয়ত গাড়ির মধ্যে খিদে পেয়েছিল,তাই বাকি সব খেয়ে মিষ্টিটুকু আমাদের জন্য এনেছে”।

আমি শুধু শুকনো হাসি দিলাম তাদের কথায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here