#মায়ার_জীবনী
#Nadia_Afrin
পর্ব:৫
মা-বাবার সঙ্গে এক টেবিলে খেতে বসলাম।সারহানের খাওয়া শেষ।ঘরে বিশ্রাম নিচ্ছে সে।
মা বেছে বেছে দুটি মাছের মাথা আমার পাতে দিলেন।বরাবরই মাছের মাথা খেতে খুবই পছন্দ করি আমি।
মায়ের এতো আদর দেখে,ও বাড়িতে আমাকে ঘিরে শত অবহেলা গুলো মনে পরলো।চোখ থেকে দু-ফোটা জল গড়িয়ে পরলো।
মা নিজের হাতে খাইয়ে দিলেন আমায়।কতো মধুর সে খাওয়ানো।পেট ভরে খেলাম আমি।
খাওয়া শেষে নিজের ঘরে গেলাম।সারহান ঘুরে ঘুরে আমার রুম দেখছে।
আমি যেতেই প্রশ্ন করলো,”বিয়ের আগে এ ঘরে থাকতে তুমি”?
:,,,,,,,,”জ্বী,হ্যা”।
এরপর কিছুক্ষণ রেস্ট নিলাম।
হটাৎ সারহান বললো,”শুধু শুধু এতো মিষ্টি কিনে টাকাটা অপচয় করলে।
শশুর বাবা তো আমাদের জন্য মিষ্টি-মিঠাইয়ের ব্যবস্থা আগেই করে রেখেছিল।এখন আমাদের আনা এতো মিষ্টি খাবে কে”?
মেজাজ বিগড়ে গেলো আমার।চেচিয়ে উঠে বললাম,”সে চিন্তা তোমার করতে হবে না।আমার আত্মীয়স্বজন আছে,পাড়া প্রতিবেশি সহ বাড়ির মানুষ, সবাইকে বিয়ের মিষ্টি বিলিয়ে দিতে হবে।তোমাদের মতো ফ্রিজ ভর্তি করে রাখলে চলবে না।
আর মিষ্টি টা তো তোমার টাকা দিয়ে কিনি নি সারহান।
এক মিষ্টি নিয়ে আর কতো কথা বলবে”?
সারহান আমার দিকে বড়ো বড়ো চোখ করে তাকিয়ে রইলো।হয়ত এমন ব্যবহার আশা করে নি আমার থেকে।
নিজের ব্যাগ বের করে তা থেকে সেই দুইশ টাকা নিয়ে সারহানের হাতে দিয়ে বললাম,”এই নাও তোমার শেষ সম্বল “।
সারহানের চোখ যেন চকচকিয়ে উঠলো।সুন্দর করে টাকাটা নিজের পকেটে গুজে বললো,”ভালোই হলো টাকাটা দিলে,শশুড় বাড়ি এসেছি অনেক খরচ হবে”।
মুখের আর ভাষা খুজে পেলাম না আমি।
যার মাসের ইনকাম প্রায় ৪০/৫০ হাজার টাকা,তার মন এতো ছোট কেন।
আমার ছোট বোন মিরা ও চাচাতো বোনরা এলো ঘরে।এসেই বায়না ধরলো তাদের ঘুরতে নিয়ে যেতে।
ভাবলাম আর যাই হোক,এবার আর সারহান ফিরিয়ে দেবে না তাদের।নিজের মান-সম্মানের কথা ভেবে হয়ত রাজি হবে।
কিন্তু আমার ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে সারহান এমনই একটা কথা বললো যা শুনে নিরাশ হলাম আমি।
সারহান বললো,”তোমার বোনকে বলো টাকা দিতে,তাহলে আমি তোমাদের ঘুরতে নিয়ে যাবো”।
মিরা সহ সকলেই কপাল কুচকে তাকালো আমার দিকে।আমি বেচারা লজ্জায় মরিমরি অবস্থা ।শেষ-মেষ নতুন জামাই কীনা এ ধরনের কথা বললো?
আমার বোন মিরা হয়ত কিছু আন্দাজ করতে পারলো।সকলের উদ্দেশ্যে বললো,
“আরে ভাইয়ার টাকা তো সব আপুর কাছেই থাকে,তাই বললো আপুকে টাকা দিতে”।
সারহান হয়ত কিছুটা লজ্জা অনুভব করলো।থমথমে মুখ করে দাড়িয়ে রইলো সে।
মিরা সকলকে উল্টাপাল্টা বুঝিয়ে ঘর থেকে নিয়ে বেড়িয়ে গেলো।
ভাগ্যিস মিরা সবটা ম্যানেজ দিলো।নাহলে ছোট বোনদের সামনে কতটা নিচু হতাম আমি।
একেই হয়ত বলে রক্তের টান।বোনের সমস্যা মুখ দেখেই বুঝে নিয়েছে মিরা।
সারহান এসে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো আমায়।
ঝটকা দিয়ে সরিয়ে দিলাম তার হাত।ভীষণই বিরক্ত লাগছিল আমার।হয়ত এ কাজ পাপের সামিল।কিন্তু কী করবো আমি?মানুষ তো আমি।ভালো লাগা,মন্দ লাগা তো থাকবেই।
ঘর থেকে বের হতেই বোন আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে নিজের ঘরে গেল।
:,,,,,,,,”আপু তুমি সত্যিই হ্যাপি তো সারহান ভাইয়ার
সঙ্গে”?
মিরার এমন প্রশ্নে কিছুটা হতচকিয়ে গেলাম।পরক্ষণে বললাম,”হ্যা খুশি থাকবোনা কেন?তোর এমন মনে হচ্ছে যে”?
:,,,,,,,”না মানে,এসেছো থেকে দেখছি কেমন মন মরা তুমি।ভেতরে কোন আনন্দ- উচ্ছাস নেই।সব সময় কী যেন ভাবো”।
বোনের গাল টেনে বললাম,”ভালোই আছি।বড়োলোক শশুরবাড়ি আমার,ভালো না থেকে উপায় আছে?
মিরা আর কোনো উত্তর দিলো না।ওর ঘর থেকে বেড়িয়ে এলাম আমি।একতলা বাড়ি আমাদের।
বাড়ির মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় জায়গা হলো ছাদ।
হালকা ঝিরিঝিরি হাতাস বইছে।
ছাদের কর্নারে গিয়ে দাড়ালাম আমি।চোখ বুজে লম্বা শ্বাস নিলাম।
কিছুসময় ছাদেই কাটালাম।
নিচ থেকে মায়ের ডাক ভেসে আসলো।
ডাকে সারা দিয়ে নিচে চলে এলাম।সবার ডাকে সারা দেওয়াই যে আমার কাজ।
মা আমাকে তার ঘরে ডাকলেন।বললেন,”সারহানের জন্য আর তোর জন্য জামা কাপড় কিনে এনেছি।ঘরে নিয়ে সারহানকে দেখা পছন্দ হয় কীনা”?
কাপড় নিয়ে ঘরে এসে দেখি,সারহান বাথরুমে গোসল করছে।তার ফোন বাজছে অনবরত।
পানির শব্দে হয়ত ফোনের রিংটোন কানে যাচ্ছে না।
ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও ফোনটি হাতে নিলাম।শাশুড়িমা কল করেছে।
দরকারি কথা বলবে হয়ত ভেবে কলটা রিসিভ করলাম।
প্রথমে চেচিয়ে বললেন,”এতো সময় লাগে কল রিসিভ করতে”?
আমি জবাব দেওয়ার আগেই তিনি বললেন,
“শোন বাবা,শশুড় বাড়ি গিয়েছিস ভালো কথা।তাই বলে বেশি টাকা খরচ করিস না।শুনেছি তোর নাকি অনেকগুলো শালী-শালা আছে।ওরা বেশি মাতামাতি করলে মায়াকে নিয়ে টানতে টানতে বাড়ি চলে আসবি।ফকিন্নিদের আবার অন্যের টাকার ওপর লোভ বেশি থাকে”।
এ কথা বলে কল কেটে দিলেন তিনি।
রাগে,দুঃখে পাশে থাকা টেবিলটি শক্ত করে চেপে ধরলাম।চোখ থেকে জল গড়া শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই।বেহায়া চোখটাও হয়েছে এক,সামান্য কিছু হলেই জল গড়িয়ে পড়ে।
হাতে থাকা জামা কাপড়গুলো বিছানায় ছুড়ে মারলাম।
ইতিমধ্যে বাথরুম থেকে বেরিয়েছে সারহান।
আমার চোখে জল দেখে প্রশ্ন করলো সে।
কিছু না বলে হটহটিয়ে বাথরুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলাম।
পানির নিচে দাড়িয়ে চোখের অশ্রু বিসর্জন দিতে লাগলাম।পানির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে আমার চোখের জল।অনেকক্ষণ যাবত কেদে ও ভিজে মাথা ব্যাথা অনুভব করলাম।
ভেজা কাপড়ে বের হলাম।
সারহান বিছানায় বসে জামা কাপড়গুলো নেড়েচেড়ে দেখছে।
ঘর থেকে শাড়ি নিয়ে আবারো বাথরুমে গেলাম।
কাপড় বদলে বিছানায় বসে হাত দিয়ে চুল নেড়ে দিচ্ছিলাম।সারহান আমার গলা জড়িয়ে ধরে কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললো,”তোমায় খুবই ভালোবাসি মায়া”।
সারহানের বলা ভালোবাসার কথা কেন যেন ভিত্তি হীন মনে হলো আমার কাছে।
বললাম,”কাপড়গুলো দেখে বলো,ভালো হয়েছে কীনা”?
:,,,,,,,,”ভালোই হয়েছে।তা সব মিলিয়ে কতো টাকা পরলো”?
:,,,,,,,,”সে কথা তুমি যেনে কী করবে?পছন্দ না হলে বলতে পারো।আমার বাবা তার সাধ্য মতো দেওয়ার চেষ্টা করেছে”।
সারহান মুচকি হেসে বললো,”এমনিই জিজ্ঞেস করছি,বলো না”।
বললাম কতো আর হবে,হাজার দশেক হবে হয়ত।
এবার যেন অবাকের চরম পর্যায়ে পৌছালো সারহান।হাবভাব দেখে তাই ই মনে হলো।
:,,,,,,,,,”এতোগুলো টাকা দিয়ে কাপড় না কিনে টাকাগুলো আমায় দিতে পারতেন তিনি।বিয়েতে তো অনেক রিণ হয়েছে।রিণদানা গুলো শোধ করতে কাজে লাগতো টাকা গুলো”।
:,,,,,,,এ আবার কী ধরনের কথা সারহান?নতুন জামাই হিসেবে তোমাকে পোশাক কিনে দেওয়া দায়িত্ব আমার পরিবারের।
শুনেছে শশুরেরা টাকা দিতে চাইলে জামাইরা রাগ করে।আর তুমি কীনা যেচে টাকা চাচ্ছো?
আমার কথায় মুখ কালো করলো সারহান।
কাপড়গুলো টেবিলে রেখে ওপাশ ফিরে শুয়ে পরলো সে।
রাতে খাবার টেবিলে আমার পরিবার সহ সারহান বসলো।
আমি ও মা খাবার বেড়ে দিচ্ছিলাম।
সবাই করে ওপরের সঙ্গে কথা বলছিল আর খাচ্ছিলো।এক কথায় দু-কথায় বাবা বলে ফেললেন,”মায়ার নামে যে একটি বিমা বা ডিপিএস টাইপ করেছিলাম সেখানে ষাটহাজার টাকা হয়েছে।সময় সীমাও শেষ প্রায়।টাকাটা উঠিয়ে আনতে হবে।
তখনই হুট করে সারহান বললো,”টাকাটা উঠিয়ে আমায় দিয়েন,ব্যবসায় লাগিয়ে দেবো আমি “।
নতুন জামাইয়ের মুখে এ কথা শুনে অবাক হলেন বাবা।
(1k লাইক ওঠা চাই আজকের পর্বে)