#মায়ার_জীবনী
#Nadia_Afrin
পর্ব:১৪
রাত ৯টা বেজে ২৫ মিনিট।
মাথার ওপরের ফ্যান একনাগাড়ে ঘুরছে।এর যেন কোনো থামাথামি নেই।
অন্যের খেয়াল খুশি মতো চলে।
ওপরের দিকে দৃষ্টি আমার নিবদ্ধ।তাকিয়ে রইলাম বেশ কিছুক্ষণ।চোখ ধাধিয়ে উঠলো আমার।চোখ বুজলাম আমি।স্মৃতিময় কিছু দৃশ্য ভেসে উঠলো আমার চোখের পাতায়।
আজ কেনো যেনো রায়ানের কথা খুব মনে পরছে।
ওর সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল বিয়ের এক বছর পর।
আগের থেকে অগোছালো হয়ে গেছে ছেলেটা।
পড়াশোনা করলেও ভবঘুরে অবস্থা।
পরিবারের চাপে পড়তে হয় তার।নাহলে কবেই নাকি সব ছেড়ে ছুড়ে পারি জমাতো নিঃস্ব জীবনে।
আমি বলেছিলাম নিজের জীবন গুছিয়ে নিতে।
আমার কথা শুনে সামান্য হেসেছিল রায়ান।তারপর পথের দিশায় হারিয়ে গিয়েছিল।
রায়ানের কষ্টেভরা হাসিটি আমার বুকে এসে বিধেছিলো সেদিন।
রাস্তার মাঝখানে কতোক্ষন দাড়িয়ে ছিলাম খেয়াল নেই।
পরবর্তীতে মিরার ডাকে হুশ ফেরে আমার।
এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলাম।
রাত ১২টায় ঘরে ফিরলো সারহান।
আমার পাশে শুয়ে পরলো।তার উপস্থিতি টের পেয়েছি আমি।ঘুমের তাড়নায় কথা বলতে পারছি না।ইদানিং ঘুমালেই যেন মরা আমি।
কোনো তালই থাকে না।
সারহান আমার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে কী যেনো বললো।বুঝতে পারলাম না আমি।চোখ বন্ধ করেই রইলাম।
ঘুমের মানুষ আমি,টেনে তুললো সে।
চোখ ছোট ছোট করে কোনো মতে তাকালাম। বললাম,”কী হয়েছে?এই মাঝরাতে তুললে কেন আমায়?শরীরটা আমার এমনিতেই ভালো নেই”।
শোনো মায়া, একজন গাইনি ডাক্তারের কাছে গিয়েছিল মা।
তোমার তো দেড় থেকে দু-মাস হয়েছে মাত্র।এখনো চাইলে বাচ্চা ফেলে দেওয়া যাবে।
যদিও একটু রিস্ক হবে।আমরা বড়ো ডাক্তারের কাছে নেবো।তোমার কিচ্ছু হবে না।
কান আমার জ্বলে উঠলো সারহানের কথা শুনে।উঠে দাড়িয়ে সপাট করে এক থাপ্পড় মারলাম সারহানের গালে।চোখ আমার রক্তবর্ণ ধারন করেছে।
সারহান আতকে উঠলো আমার এমন ব্যবহারে।
রেগে গিয়ে এগিয়ে এলো আমার নিকট।
আমি হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে সারহানের কলার খামচে ধরলাম।
ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দিলাম।
জোড়ে শব্দ করে দরজা বন্ধ করলাম।
তীব্র শব্দে ভাড়াটিয়া সহ সবার ঘুম ভেঙে আমাদের ঘরের দিকে তাকিয়ে রইলো।
শাশুড়ি মা এসে সারহানের পিঠে হাত রাখতেই গর্জে উঠলো সে।
বেড়িয়ে গেলো বাড়ি থেকে।
আমার মাথা ঘুরতে শুরু হলো।এই সময় এতো রাগে ভালো না।ইচ্ছে হচ্ছে গলা টিপে মেরে ফেলি এই সাইকো টাইপ সারহানকে।
বাথরুমে গেলাম।পানির কল ছেড়ে দিয়ে নিচে দাড়ালাম।ধীরে ধীরে ঠান্ডা হলো আমার মাথা সহ শরীর।সারহানের কথা যেন আমার গায়ে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল।
চোখ থেকে নোনা জল গড়িয়ে পরতে লাগলো আমার।চিৎকার করে উঠলাম আমি।
এরপর বসে পরলাম।নিজের পেটে হাত দিয়ে বললাম,তোমার আমি কিচ্ছু হতে দেবো না আমার ছোট্ট সোনা।মা আছে তো তোমার।
আমার ছোট্ট ছানাটির অস্তিত্ব অনূভব করলাম।
সব মায়েরই হয়ত এমন অনুভূতি হয়।
শাওয়ার নিয়ে ভেজা কাপরে বের হলাম।
শাশুড়ি মা দরজা ধাক্কাচ্ছে ইতিমধ্যেই।
মহিলাটির মনমানসিকতা এতোটা নোংরা।ভাবতেই ঘৃণা লাগে আমার।
আমার বাচ্চাকে নষ্ট করতে ডাক্তারের কাছে গিয়েছে।অথচ আমার চেকআপের সময় তার কতো বাহানা।
দরজা খুললাম না ইচ্ছে করেই।কারো সঙ্গে কথা বলার মানসিকতা নেই আমার মধ্যে।
এরপর কেটে গেলো দুদিন।সারহানের সঙ্গে আমার কথা হয় না।একই ঘরে থাকি ঠিকই কিন্তু কোনো যোগাযোগ নেই।
সারহান নাকি সেদিন তার মাকে বলেছিল আমায় ছেড়ে দেবে।কিন্তু কাবিনের ১০ লক্ষ্য টাকার কথা শুনে এ বিষয়ে এগোয় নি সে।
একদিন বিকেলে আমি শাশুড়িমার ঘরের দিকে যাচ্ছিলাম।বাহির থেকে শুনতে পেলাম সারহান ও তার মায়ের আলোচনা।
সারহান বলছে,”মায়াতো রাজী হলো না বাচ্চা ফেলতে।
সৌভাগ্য বসত বাচ্চাটির যদি কিছু হয়ে যেতো খুব খুশি হতাম আমি।বেচে যেতাম অন্তত “।
উত্তরে শাশুড়িমা বললেন,”আমি তো অনেক প্রার্থনা করছি যেন খারাপ কিছু হয়ে যায় বাচ্চাটার সঙ্গে।সবকিছুরই তো একটি সময় আছে।
ননদ দুটোর বিয়ে হওয়ার পর নিলে কী মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যেত?
আসলে বাবা,তোমার বউ আমার সংসারের ধ্বংস চায়।”
আর শুনতে পারলাম না আমি।চোখে জল পরিপূর্ণ হয়েছে।
ঘরে এলাম আমি।
এ কেমন পুরুষ?নিজের সন্তানকে যে মেরে ফেলতে চায়।
চোখ থেকে দুফোটা জল গড়িয়ে পরলো আমার।
বুক ভার হয়ে এলো।
হে আল্লাহ্,এ কেমন জীবন আমার।
আমার অনাগত সন্তানকে নিয়েও এদের এতো হিংসা।
বিচার হবে এদের।এই মানুষ নামক নরক গুলোর শাস্তি আল্লাহ্ নিজে দেবেন।
মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম,এখন থেকে খুব সাবধানে থাকবো আমি।
সেদিন সায়মা আমার জন্য একটি খাবার নিয়ে এসে জোর করছিল খেতে।আমি যেই না খাবারটি মুখে দেবো এমন সময় একটি বিড়াল এসে পায়ের সঙ্গে ধাক্কা খায়।খাবারটি হাত থেকে ছিটকে পড়ে যায়।অর্থাৎ বাধা পড়ে।
পড়ে আমার মনে হলো খাবারে হয়ত কিছু মেশানো ছিলো।কেননা সায়মা সাইরা কোনোদিন আমায় কিছু দিয়ে খায় নি।বরং বাইরে থেকে খাবার নিয়ে এসে দুবোন লুকিয়ে খেতো।
সেদিন কীনা এতো জোর করছিল ওদের আনা খাবার খেতে।
সতর্ক হই আমি।নিজের হাতে রান্না করে খাবার ঘরে নিয়ে আসি।এতেও অবশ্য শাশুড়ি মার সমস্যা।
তবে আমি পাত্তা দেই না।
এক সপ্তাহ পর আমার বাড়ি থেকে মানুষ এসে আমায় নিয়ে যাবেন।ছোটখাটো একটা অনুষ্ঠান হবে।তাই তো যেতে পারছি না বাড়িতে।
সারহানের নোংরা মন আমায় খুব কষ্ট দেয়।
ইদানিং ইচ্ছে হয় সব ছেড়ে চলে যেতে।কিন্তু বাধা পড়ে গেছি আমি।
রাতে কিছু না খেয়েই ঘুমাতে গেলাম।
মাঝরাতে পেটে তীব্র ব্যাথা অনুভব করলাম।
সারহানকে ডেকে তুললাম ঘুম থেকে।বিছানা রক্তে ভিজে গেছে।
ভয়ে গলা শুকিয়ে এলো আমার।
সারহান ছুটে এলো।আমার ফর্সা মুখশ্রী ব্যাথায় লাল হয়ে গেছে।
সে ছুটে গেলো শাশুড়ি মার ঘরে।শাশুড়ি মা দুজন বয়স্ক ভাড়াটিয়া চাচি সহ এলেন ঘরে।
চাচি দুজন আমায় পানি পান করালো।
একজন আরেক জনের কানে ফিসফিসিয়ে বললো,”বাচ্চাটা মারা গেছে মনে হয়”।
এ কথা কানে এলো আমার।তীব্র চিৎকার করে জ্ঞান হারালাম আমি।
চলবে,,,,,,,,,
(দুই বা তিন পর্বে শেষ করে দেবো গল্পটি।
আজকের পর্ব নিয়ে দু-লাইন মন্তব্য চাই।আপনাদের কথায় বড়ো করে দিয়েছি কিন্তু।
কমেন্টে নেক্সট ব্যাতিত অন্য কিছু বলবেন প্লিজ।এই শুকনো নেক্সট আমার পছন্দ নয়।)