#হারিয়ে_খুঁজে_ফিরি
#পর্ব_৩
#Saji_Afroz
কমিউনিটি সেন্টারে প্রবেশ করে একপাশে এসে দাঁড়িয়ে রয়েছে মায়া। এখনো ওর হাত-পা কাঁপছে। ভেবেছিল হামজা সবার সামনে ওকে কিছু বলবে। কিন্তু এমন কিছু ও করেনি। ইশারায় ফোন করতে বলল হামজাকে। মায়া লম্বা একটা নি:শ্বাস ফেলে মোবাইল চালু করে ফোন দিলো হামজাকে।
ও রিসিভ করেই ওপাশ থেকে অকথ্য ভাষায় বকাবকি করতে শুরু করে মায়াকে। ফোন কেন বন্ধ করেছে এই নিয়ে বারবার প্রশ্ন করতে থাকে। মায়া মিনমিনে স্বরে বলল, আমার রাগ হয়েছিল।
-দোষ তুই করে তোর আবার কীসের রাগ!
একটু থেমে হামজাকে দু:খিত জানালো মায়া। হামজা বলল, চুল কেন খোলা রেখেছ? এসব দেখার অধিকার কেবল আমার। চুল বাঁধো।
-তুমি চলে যাও আগে।
-যাব। তোমাদের বিয়েতে এসে খাব না।
-খাওয়া বড়ো বিষয় নয়। যাও তুমি। কেউ কিছু বুঝলে আমার অসুবিধা হবে।
-আগে চুল বেঁধে বারান্দায় এসে দেখা দাও আমায়।
হামজার কথা মতন করলো মায়া। ওকে দেখে চলে গেল হামজা। ও যেতেই যেন মায়া শান্তি ফিরে পেল। খানিকক্ষণ বারান্দায় দাঁড়িয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিলো ও। এরপর ভেতরে ফিরে আসতেই ফারদিনের মুখোমুখি হলো।
-আপনাকেই খুঁজছিলাম।
মায়া ভ্রু কুচকে বলল, কেন?
-এমনেই! দেখছিলাম না আশেপাশে তাই।
-ওহ!
-এ কী! খোলা চুলেই তো ভালো লাগছিল।
-আসলে লম্বা চুল সামলানো মুশকিল। এইজন্য বেঁধে রাখলাম।
এই বলে মায়া অন্য দিকে চলে গেল। ফারদিনের চোখ গিয়ে পড়ে মায়ার মা এর দিকে। তাকে বেশ দূর্বল মনে হচ্ছে। ফারদিন তার কাছে এসে বলল, কোনো সমস্যা আন্টি?
-মাথাটা ঘুরপাক খাচ্ছে মতন মনে হচ্ছে।
-আপনাকে বসতে সাহায্য করি আমি?
তার সম্মতি পেয়ে ফারদিন বসতে সাহায্য করলো। এরপর এক গ্লাস পানি এনে তাকে দিলো। ফারদিন তাকে চিনলেও তিনি ওকে চিনলেন না। তাই পরিচয় জানতে চায়।
ওর পরিচয় শুনে মীনারা জান্নাত বললেন, তোমার কথা অনেক শুনেছিলাম। কিন্তু দেখা হয়নি কখনো। অবশ্য তুমি নাকি সেভাবে কোথাও যেতে না।
-পড়ালেখার প্রতিই বেশি ঝোঁক ছিল আন্টি।
-দেখা হয়ে ভালো লাগলো।
-আপনার জন্য কী জুস এনে দেব?
-তার প্রয়োজন নেই। একটু বসলেই ভালো লাগবে।
-আচ্ছা।
দেখতে দেখতে বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ পর্যায়ে চলে আসে। পুরো অনুষ্ঠানেই মায়ার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিল ফারদিন। এখন বিদায় নিতে হবে এটা ভেবেই যেন কষ্ট পাচ্ছে ও। তবে এটা ভেবে ভালো লাগছে যে, মায়ার ফোন নাম্বারটা ওর কাছে আছে।
পশ্চিমের আকাশে সিঁদুর মাখিয়ে সন্ধ্যা নেমে এসেছে। মনে হচ্ছে কোনাে নিপুণ চিত্রকর তার রঙের ভাণ্ডার উজাড় করে পরম যত্নে অঙ্কন করেছেন মনােলােভা এই আল্পনা। প্রকৃতির রঙ বদলানো দেখতে দেখতে বাড়ির পেছনের পাড়ার বন্ধু সোহেলের টঙের দোকানে আসে হামজা। বেঞ্চে বসে সিগারেটের ধোঁয়া উড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে ও৷ একটা সিগারেট শেষ করে আরেকটা খুঁজলে সোহেল বলল, মায়ার মতো কারো প্রেমিক তুই ভাই। কী দরকার এসব বাজে অভ্যাসের? এসব ছাড়লেই পারিস। ও জানতে পারলে কী হবে? কত ছেলেই ওর জন্যে পাগল।
-কত ছেলে পাগল মানে?
-ও কিছু না!
সিগারেটটা পায়ে পিষে হামজা বলল, বল? অন্যখান থেকে জানলে সমস্যা হবে বললাম।
-নতুন কী আর! আফতাব মায়াকে পছন্দ করে জানিসই। আজ দোকানে এসেছিল বন্ধুদের নিয়ে। ওদের বলল, মায়ার ঘরে প্রস্তাব পাঠাবে। ওর পরিবারকে তোদের কথা জানিয়ে দেবে। পরে সম্মান রক্ষা করতে মেয়ে বিয়ে দিতে চায়বে ওরা। তুই বেকার। সুযোগটা আফতাবই পাবে।
-এসব বলেছে আফতাব?
-হু। তবে আফতাব এটা তো জানে না, তোর আরও একটা সত্যি আছে যেটা মায়াও জানে না। এটা জানলে মায়া তোকে নিজেই ছেড়ে দেবে।
হামজা গম্ভীরমুখে বলল, তোর এসব নিয়ে ভাবতে হবে না।
এই বলে হামজা উঠতে যায় তখনি অন্য এক বন্ধুকে দেখে আবারও বসে। রানা বসতে বসতে বলল, তোদের কথা সবই শুনলাম। এইবার আমি একটা বুদ্ধি দিই তোকে?
হামজা বলল, কী?
-পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে মায়া তোকে বিয়ে করবে না। কিন্তু ইমোশনাল হয়ে একটা ভুল করতেই পারে। আমি আগেও তোকে এই কথা বলেছিলাম। ওদিকে আফতাবও বেশ সিরিয়াস মায়াকে নিয়ে। কিছু ঘটার আগে মায়াকে খেয়ে দে।
দোকানে থাকা সোহেল বলে উঠলো, কীসব কথাবার্তা বলছিস রানা?
-মেয়েদের সারা জীবনের জন্যে কাবুতে রাখার এটাই তো উপায়।
হামজা বলল, চেয়েছিলাম। কিন্তু ও রাজি হয় না এসবে।
-তবে ঘুরতে নেওয়ার নাম করে একদিন বের হও। সেদিন বাইরে না নিয়ে কারো রুমে নিয়ে যা। আমিই ব্যবস্থা করে দেব।
সোহেল আবারও কথা বলে উঠলে ওকে ধমক দেয় রানা। ও বলল, এসব সুন্দরীদের আমার জানা আছে। ক’দিন বাদে ভালো পেলে হামজাকে যদি না ছাড়ে আমাকে বলিস! তার আগেই ওকে কাবু করতে হবে। কী বলিস হামজা?
ক’দিন বিয়ে বাড়িতে ধকল যাওয়াই অনেকটা ক্লান্ত মায়া।তাই অবেলায় ঘুমিয়ে পড়েছে। হামজার ফোনে ঘুম ভাঙে ওর। ও রিসিভ করতেই হামজা বলল, কী করছ?
-ঘুমোচ্ছিলাম। উঠে কথা বলি?
-রঙ তামাশা করতে ক্লান্ত লাগে না, আমার সাথে কথা বললেই ক্লান্তি বেড়ে যায় তোর?
-আবার কী হলো?
-কালই আমার সঙ্গে দেখা করবি তুই।
-কিন্তু কাল তো শুক্রবার।
-তবে শনিবার করবি।
-আমার ক্লাস আছে। সামনে এক্সাম। এভাবে ঘনঘন ফাঁকি দিলে সমস্যা।
-আমি কিছু জানি না। দেখা হবে এটাই ফাইনাল। কীভাবে করবি তুই জানিস।
এই বলে ফোনের লাইন কেটে দেয় হামজা। মায়া পড়ে যায় চিন্তায়। আবারও কেন দেখা করতে বলল হামজা! ও কী বোঝে না! ওভাবে বের হলে মায়া খুবই চিন্তিত থাকে। বাসার কেউ যদি একবার জানে তখন কী হবে!
এদিকে ওর এমন আচরণে রানা বাহবা দিলেও সোহেল অখুশি হয়। ও আপনমনে বলল, মাঝেমধ্যে মনেহয় মায়াকে সবটা জানিয়ে দিই! ও যাকে ভালোবাসে, বিশ্বাস করে সে তো ওর ভালোবাসার যোগ্যই না!
সোহেলকে নীরব দেখে হামজা বলল, কী ভাবছিস?
-ভাবছি মায়া তোর সবচেয়ে বড়ো সত্যিটা জানলে কী করবে?
-কে জানাবে? তুই চুপ থাকলেই হলো। একমাত্র তোরই ওর জন্যে যত মায়া!
ক’দিন বাদেই চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে বেরুতে হবে ফারদিনকে। কিন্তু ওর মনটা পড়ে আছে এখানে। এতদিন নতুন জীবন নিয়ে কত ভাবনা ছিল ওর! কিন্তু এখন ওর সব ভাবনা জুড়ে রয়েছে কেবল মায়া!
মায়া, মায়া আর মায়া!
সবসময় যেন এই নামটা ওর কানে বেজে চলেছে। কোনো কিছুই ওর ভালো লাগছে না। একটাবার মায়াকে দেখতে ভীষণ ইচ্ছে হলো। সেই ইচ্ছেকে দমিয়ে রাখলো ফারদিন। কিন্তু ওর কণ্ঠ শোনার ইচ্ছেকে দমাতে পারলো না ও। তাই নিজের থাকা অন্য একটি নাম্বার থেকে মায়াকে ফোন করে ও।
ঘুম ঘুম কণ্ঠে মায়া ফোন রিসিভ করলো। এদিক থেকে কোনো কথা ফারদিন বলল না। ওপাশ থেকে মায়ার কণ্ঠ শুনেই যেন মনে শান্তি অনুভব করলো ও। মায়া কয়েকবার “হ্যালো হ্যালো” বলে ফোনের লাইন কেটে দেয়। ফারদিন আপনমনে বলল, এভাবেই তোমার হ্যালো শুনেই মন শান্ত রাখতে হবে আমায় আপাতত। কিন্তু বেশিদিন না! আমার মায়াতেও যে তোমায় আঁটকে নেব!
.
চলবে