হারিয়ে_খুঁজে_ফিরি #পর্ব_৪ #Saji_Afroz

0
1285

#হারিয়ে_খুঁজে_ফিরি
#পর্ব_৪
#Saji_Afroz

মায়ার মন ভীষণ খারাপ! শনিবারের ক্লাসটা ও করেছে। তাই হামজার সঙ্গে দেখা করতে পারেনি। খুবই গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস ছিল। এটা হামজাকে বোঝানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলো। এদিকে হামজা এই কারণে ওর প্রতি বিরক্ত। বারবার ফোন করে বকাঝকা করছে। দিন দিন হামজার এরূপ আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে মায়া। সামনে ওর পরীক্ষা৷ পড়ায় মন বসাতে পারছে না হামজার কারণে। ওর রাগ ভাঙাতে ভাঙাতেই দিন পার করতে হয় মায়াকে। মাঝেমধ্যে মনেহয় মায়াও রাগ করে কথা বন্ধ করে দেবে। কিন্তু ও এমনটা করতে পারে না। কারণ মায়াও যে হামজাকে অনেক বেশি ভালোবাসে!

মায়ার ফোন বেজে উঠে। হামজার ফোন দেখে রিসিভ করে ও। দেখা করতে না পারায় এখনো রেগে আছে হামজা। মিষ্টি কথাতেও ওর মন না গললে মায়া বলল, কী করলে তোমার রাগ ভাঙবে বলো?
-যা বলি তুমি করবে?
-হু।
-করবে না। তুমি আমাকে ভালোই বাসো না। নাহলে আমার কথা তুমি শুনতে।
-আমি তোমার কোন কথা শুনিনা বলো?
-সবার মতো আমারও কী আমার প্রেমিকা কে কাছে পেতে ইচ্ছে করে না? একটু কাছে! একটু জড়িয়েই তো ধরতে চেয়েছি। এর চেয়ে বেশি কিছু চাইনি তো!
-বিয়ের আগে এসব উচিত না। সেটা তুমিও জানো।
-বিয়ের আগে প্রেমও উচিত না। করেছ কেন? প্রেম যখন করেছ আমার সব কথা তোমার শুনতে হবে। দিতে হবে ভালোবাসার প্রমাণ।
-এভাবে প্রমাণ দিতে হলে সেই ভালোবাসার প্রয়োজন আমার নেই৷
-মানে কী বলতে চাচ্ছ?
-খোকা নও যে তুমি বুঝছ না।
-তুমিও খুকী নও যে এসব ন্যাকামি করবে! আমার সাথে রুমে তোমাকে যেতেই হবে। নাহলে…
-কী? আবারও মরে যাওয়ার হুমকি দেবে? যেভাবে প্রথমবার বেড়াতে নিয়ে গিয়েছিলে?
-নাহ। মেরে ফেলার হুমকি দেব।
-মানে?
-মানে! তোমার আমার যত মেসেজ, ছবি আছে সবই তোমার বাসায় চলে যাবে।

একথা শুনে ঘাবড়ে যায় মায়া। ও উত্তেজিত হয়ে বলল, কীসব বলছ?
-ঠিকই বলছি। কাল আমার বাসায় কেউ থাকবে না। তুমি আসবা নাকি এসব তোমার বাসায় পাঠাব ভেবে দেখো।

এই বলে ফোনের লাইন কেটে দেয় হামজা। মায়া পড়ে যায় ভাবনায়। অস্থির হয়ে উঠে ও ভয়ে।

আগেও এভাবে মায়াকে ভয় দেখিয়ে পার্কে ঘুরতে নিয়ে গিয়েছিল হামজা। তখন নিজের প্রাণ নেওয়ার ভয় দেখিয়েছিল মায়াকে। আর আজ কিনা এমন ভয় ওকে দেখালো! এক প্রকার জোর করেই ঘুরতে যাওয়া, ছবি তোলা হয়েছিল। মায়া তো নিজ ইচ্ছেতে কিছুই করেনি। তবুও কেন হামজা এসব নিয়ে ভয় দেখালো ওকে!

সারারাত এই নিয়ে কান্না করে চোখ দু’টো ফুলিয়ে ফেলেছে ও। সকালে মীনারা জান্নাত ফোলা চোখের কারণ জানতে চাইলে ও ঘুম হয়নি বলে বেরিয়ে পড়ে। বেরুনোর সময় বুক ফেঁটে কান্না পায় ওর। হামজার সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোর পর থেকেই মীনারা জান্নাতকে মিথ্যে বলতে হয় মায়ার। মেয়েকে অনেক বেশি বিশ্বাস তিনি করেন। সেই বিশ্বাসের মর্যাদা ও রাখতে পারছে না। আজ সবচেয়ে জঘন্যতম কাজ ও করতে চলেছে। আর তা হলো, হামজার বাসায় যাচ্ছে মায়া!

হামজার বাসা পুরো ফাঁকা। বাসার সবাই দাওয়াতে গেছে। হামজা শরীর খারাপের বাহানা করে রয়ে গেছে।
এদিকে মায়া আজ ক্লাসে যায়নি। নিজেকে বোরখায় আবৃত করে চলে আসে হামজার এলাকায়। হামজার বাড়ি ও চেনে না। তাই হামজাই ওকে নিতে আসলো। দূরে দাঁড়িয়ে ইশারা দেয় হামজা। মায়া ওর পিছু পিছু বাড়ি চলে আসে৷ বাসায় প্রবেশ করতেই মায়া বলল ওকে এক গ্লাস পানি দিতে। হামজা ওকে পানি দিলে ঢকঢক করে পুরো এক গ্লাসি পানি ও নিমিষেই শেষ করলো। ও কাঁপছে দেখে হামজা ওকে জড়িয়ে ধরে। মায়া নিজেকে শান্ত করে৷ হামজা ওকে বসতে বললে ও বলল, জড়িয়ে ধরেছ হয়েছে। এইবার আমি আসি।

হামজা বলল, এখুনই তো এলে।
-জড়িয়ে তো ধরেছই!

হামজার রাগ হলেও নিজেকে সামলে নেয়। এখন রেগে গিয়ে সময় নষ্ট না করে ও বলল, আচ্ছা তুমি বসো তো একটু!

মায়া বসলো। হামজার কথাতে মুখের কাপড় সরালো৷ মায়ার চোখ, মুখ ফোলা দেখে হামজা বলল, এ কী অবস্থা করেছ চেহারার? কী হয়েছে?

এটা বলতেই মায়া কেঁদে ফেললো৷ ওকে কাঁদতে দেখে হামজা বলল, কী হয়েছে?
-আমি এসব করতে চাই না। আমার পরিবার জানলে কত কষ্ট পাবে জানো?

মায়াকে এভাবে দেখে হামজারও কষ্ট হয়। মায়া অনবরত কেঁদে চলেছে। হামজা ভেবেছিল আজ ছলেবলে মায়াকে নিজের করে নেবে। কিন্তু এমনটি ও করলো না৷ মায়া সেই পরিস্থিতিতে নেই। তাই হামজা ওকে শান্তনা দিয়ে বলল, চলো তোমায় রিকশা ঠিক করে দিই।

একথা শুনে মায়া বলল, আমি বেরুতে পারব?
-হুম।
-তবে আমি চলে যাচ্ছি। তোমার কষ্ট করতে হবে না।

এই বলে মায়া বেরিয়ে পড়ে।

একা একাই কলেজে চলে আসে মায়া। কলেজের ওয়াশরুম থেকে বোরখা পরে বেরিয়েছিল ও। এখানেই বোরখা বদলাতে এসেছে। কলেজে প্রবেশ করতে যাবে ঠিক তখনি কেউ ওর হাত ধরে ফেলে। পেছনে ফিরে মীনারা জান্নাতকে দেখে থমকে যায় মায়া। ও কথা না বলতে চাইলেও তিনি বললেন, আমি জানি তুই কে!
মায়া কান্না জড়িত কণ্ঠে বলল, মা আসলে…
তিনি মায়াকে আর কোনো কথা বলার সুযোগ দিলেন না। ও কে নিয়ে উঠে বসেন গাড়িতে। বাসায় এসে মায়ার মুখের কাপড়টা মেঝেতে ছুড়ে মেরে বললেন, আমার মেয়েও অন্যসব মেয়ের মতো বেহায়াপনা করবে কখনো ভাবিনি! বল কোন ছেলের সাথে কোথায় গিয়েছিস?

মায়া বুঝতে পারলো, ওর মা প্রেমের কথা জানলেও কোথায় গেছে তা জানে না। তাই ও বলল, পার্কে।

তিনি উত্তেজিত হয়ে বললেন, ছি ছি ছি! এসব দেখার জন্যে বেঁচে আছি আমি! তোর সকালে মন খারাপ দেখে কলেজে যাই। ওখানে গিয়ে জানতে পারি তুই ক্লাসে আসিসনি। তোর কলেজেরই একজন আমায় জানায় বোরখা পরে কোন ছেলের সাথে কোথায় যেতে দেখেছে তোকে। বল এসব কতদিন ধরে করছিস?
-আজই প্রথম গেলাম।

মীনারা জান্নাত মায়ার গালে সজোরে একটা থাপ্পড় মেরে বললেন, মিথ্যেও বলা শিখেছিস। ওই ছেলের সঙ্গে আমায় দেখা করাবি। কোন ছেলের জন্যে আমার মেয়ে এমন হয়ে গেছে জানা প্রয়োজন।

মায়া নিজের রুমে ফিরে এসে ফোন করে হামজাকে। হামজা সবটা শুনে খুশি হয়। মায়ার মা জেনেছে মানে ওর জন্যে কাজটা অনেকটা সহজ হয়ে গেছে। মা রাজি হলে ভালো। নাহয় মেয়ের সব প্রমাণ দেখিয়ে মাকেও বশে আনতে হবে। কোন মা তার মেয়ের ক্ষতি চাইবে!
যেভাবেই হোক, মায়াকে নিজের জীবনে খুব করে প্রয়োজন হামজার! কেন ওকে এতটা করে ও চায় নিজেরই জানা নেই।

পরেরদিন মীনারা জান্নাতের সঙ্গে দেখা করতে আসে হামজা। হামজা দেখতে সুদর্শন। বেশ লম্বা ও। মেয়ে কেন ওর প্রেমে পড়েছে তা বুঝতে পারলেন মীনারা জান্নাত।
হামজা সালাম জানালে তিনি সালামের উত্তর দিয়ে বললেন,
কীসে স্ট্যাডি করছ তুমি?
-ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে। ইংলিশ নিয়ে থার্ড সেমিস্টারে আছি।
-বাবা কী করেন?
-মায়ার বাবার মতোই বিদেশে থাকেন। তবে উনি সৌদীতে থাকেন।
-ভাই বোন কতজন?
-দুই বোন আছে আমার।
-দেখো আমার মেয়ে এখনো ছোটো। তুমিও ছোটো। এখনো তোমরা স্টুডেন্ট। বড়োজোর বন্ধুত্বপূর্ণ একটা সম্পর্ক তোমরা রাখতে পারো। এর চেয়ে বেশি কিছু না।
-কিন্তু আমি ওকে পছন্দ করি।

কথাটা মাথা নিচু করে বলল হামজা।
তিনি বললেন-
আমি তোমার ভালো লাগায় হাত দিতে পারব না। কিন্তু এতটুক বলতে পারব, ফিউচারে যদি ভালো কিছু তুমি না করো এই সম্পর্ক আমরা মেনে নেব না। তাই দুজনেই পড়ালেখায় মন দিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করো। আর হ্যাঁ, ঘটনা চাইলে আরও বড়ো আমি করতে পারতাম। কিন্তু করলাম না। মায়াকে নিয়ে বের হওয়া, ফোনে কথা বলা এসব ছেড়ে দাও৷ সবকিছুর একটা সময় থাকে। মায়াকে পেতে চাইলে নিজের পায়ে দাঁড়াও৷ যোগ্য পাত্র হলে আমার কোনো আপত্তি থাকবে না। এখন বন্ধুর মতোই থাকো। আশাকরি আমি কী বলতে চাইছি বুঝতে পেরেছ।

হামজা মাথা নেড়ে ‘জি’ বলল। মীনারা জান্নাত ওর সঙ্গে এত নরম স্বরে কথা বলবে ভাবেনি।
এদিকে মীনারা জান্নাত আপনমনে বললেন-
নরম আমি এমনে এমনেই হইনি! মেয়েদের বাবা দেশের বাইরে। দুই মেয়েকে নিয়ে একা এলাকায় টিকে থাকা কত কষ্টকর আমি জানি। এখন হামজাকে রাগালে পরিস্থিতি আরও বিগড়ে যাবে। তাই এতটা নরম হয়ে আছি। হামজা সম্পর্কে খবরটা আগে নিই! এরপর কী করা যায় দেখছি আমি।

ফারদিন ওর চাচাতো ভাই এর কাছে ফোনে জানতে পারে, ওদের দাওয়াত রয়েছে আগামীকাল মায়াদের বাসায়। ফারদিন দু’দিন বাদে ঢাকায় চলে যাবে। এর আগে মায়াকে আরেকবার দেখার জন্য মন উতলা হয়ে ছিল। এত সহজে কোনো রাস্তা বের হবে ভাবেনি। ও ওর চাচাতো ভাইকে জানালো, ফারদিন আগামীকাল ওদের সঙ্গে দেখা করতে আসতে চেয়েছিল। একথা শুনে ওকে যেতে বললে ফারদিন জানায়, সেও নাহয় মায়ার বাসা থেকে ঘুরে আসবে৷ চাচাতো ভাইও না করলো না। কবে যে আজকের দিনটা পার হবে! প্রতিটা সেকেন্ড গুণতে শুরু করেছে ফারদিন। এই অপেক্ষা যেন শেষই হচ্ছে না!

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here