এমনই_শ্রাবণ_ছিল_সেদিন #ইসরাত_জাহান_দ্যুতি ২.

0
607

#এমনই_শ্রাবণ_ছিল_সেদিন
#ইসরাত_জাহান_দ্যুতি
২.

বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যার ক্ষণ।
মরচে পড়া লোহার জানালার গরদ ধরে দাঁড়িয়ে আছে খেয়াম। বিষণ্ন দৃষ্টিজোড়া তার বাহিরের পানে। আজ সকালেই তাদের মেহফুজের সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল। কিন্তু হোটেলে আসার পর হঠাৎ করে গতরাত থেকে বাবার গায়ে সাংঘাতিক জ্বর। তাই আর যাওয়া হয়নি। সারাটা রাত বাবা ঘুমাতে পারেননি। ঘুমায়নি সেও। তার শুধু মনে হচ্ছে ভাইটা তাদের এক অকুল গরল পাথারে ফেলে দিয়ে গেছে। জমানো পেনশনের টাকাগুলো নিয়ে যাওয়ার পর থেকে বাবার শরীরটা দিনকে দিন খারাপের দিকেই যাচ্ছে। এই শরীরে আজ কত দুশ্চিন্তার আবাসস্থল বইতে হচ্ছে বাবাকে! খেয়াম জানে, আজ বাবার জ্বরাক্রান্ত হওয়ার প্রধান কারণ। ছোটো পরিবারটাতে সে যে বাবা আর মায়ের রাজকন্যা ছিল। ভাইটার কাছেও বড়ো আদরের ছিল সে। আজ সেই রাজকন্যাটিকে এক অচেনা শহরে ফেলে যেতে হবে। কারণ, শুধুই অর্থ রোজগার। অথচ, এই রাজকন্যার আরামে বসে থাকার কথা ছিল তাদের ঘরে, এক ময়‚রপঙ্খী শয্যায়। বাবা যে বড়োই চিন্তিত তাকে নিয়ে। সেই রাজকন্যাটাকে এই শহরে একা ফেলে যেতে মন একেবারেই টানছে না তার। খেয়াম নিজেও বড্ড শঙ্কিত আর চিন্তিত। কোথায় আর কেমন করে থাকবে সে? এই শহরে কত অঘটন ঘটার খবর দেখেছে টিভিতে। সেই শহরে একা সে চলতে পারবে তো? আর তার পড়াশোনার স্বপ্ন! এই স্বপ্নের ক্ষীণ আলোও যে তার মনের এক কোণে এখনো জ্বলজ্বল করে। তা-ই বা কি কখনো পূরণ হবে?

-‘আরদ্রা, দরজাটা ভেতর থেকে লাগিয়ে দে মা। আমি না আসা অবধি দরজায় নক পড়লেও খুলবি না।’

বাবার কথা শুনে ফিরে দাঁড়াল খেয়াম। শার্ট গায়ে জড়িয়ে বোতাম লাগাচ্ছেন বাবা, বাহিরে যাওয়ার জন্য।
-‘কোথায় যাচ্ছ বাবা?’

-‘বৃষ্টি থামছে না একটু? খাবার-দাবার কিছু কিনে আনি।’

-‘গায়ে এত জ্বর নিয়ে তুমি এই বৃষ্টির মধ্যে বের হবে?’

-‘ছাতা আছে তো। আর খিদেও পাইছে খুব। তুই থাক, আমি এখনি আসতেছি।’

বাবা বেরিয়ে যেতেই দরজাটা লাগিয়ে খেয়াম বিছানাতে বসল। হাতে নতুন ফোনটা নিয়ে নতুন ফেসবুক অ্যাকাউন্টটা লগ ইন করল। ঢাকায় থাকতে হবে এই সুবাদে কিছুদিন আগেই বাবা একটা ফোন কিনে দিয়েছেন তাকে। ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুললেও সেখানে নিজের কোনো ছবি রাখেনি সে। ফেসবুকের পার্শ্বচিত্রের জায়গাটুকুতে সন্ধ্যা মুহূর্তে মেঘলা আকাশে ঝুম বৃষ্টির একটি সুন্দর প্রতিকৃতি দেওয়া। আর তার ফেসবুকের সারা ওয়াল ভর্তিও এমন আরও অনেক মনে প্রশান্তির ছুঁয়ে দেওয়া সন্ধ্যা মুহূর্তের বৃষ্টির ছবি। পাঁচ দশ মিনিট ফোনটা হাতে নিয়ে এভাবেই ফেসবুকে সময় পার করল। এর মাঝে তার অবচেতন মন থেকে সারা পেয়ে এক দিনের পরিচয়ের একটি মানুষের নামও সন্ধান করে বেড়ালো কতক্ষণ।
***

মেয়ের জোড়াজুড়িতে আরিফ এসেছেন নীহারের বাসায়। মন তার একদম সায় দিচ্ছে না মেয়েকে এমন জায়গায় কাজে দিতে। বন্ধু আশহাব আর তার স্ত্রী নীহারকে তিনি খুব ভালো করে চেনেন। অসম্ভব ভালো মানুষ তারা। কিন্তু তাদের ছেলেটাকে যেমন দেখলেন, তাতে একটু কম ভরসাই হচ্ছে তার প্রতি। খেয়ামের ঝামেলা একেবারেই এড়িয়ে যেতে চেয়েছিল সে। মায়ের জোড়াজুড়িতেই শুধু আগ্রহ দেখাল। সে কি তার এই ছোট্ট মেয়েটাকে খেয়াল রাখতে পারবে? এত দুশ্চিন্তা নিয়ে তিনি ফিরে যেতে চেয়েছিলেন মেয়েকে নিয়ে ফরিদপুর। কিন্তু মেয়েটার তার এত সাহসী মনোভাব! সেই মনোভাবের কাছে তিনি পেরে ওঠেননি। খেয়াম ফিরে যেতে রাজি হয়নি একদম। সকাল দশটার সময় এসেছেন তারা দুজন। নীহার হালকা নাশতার ব্যবস্থা করে তাদের সামনে এসে বসলেন। চায়ের কাপটা আরিফের হাতে তুলে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করলেন, ‘শরীর এখন ঠিক আছে ভাই?’

-‘হ্যাঁ, গতকাল রাতেই জ্বর ছেড়ে দিয়েছে।’

নীহার আফসোসের সুরে বললেন, ‘আমি যে কী ভুল করেছি! নম্বরটা নিয়ে নেবো তারও খেয়াল ছিল না।’

-‘আমিও তো আর ফোন করিনি, ভাবি। ও নিশ্চয়ই জিজ্ঞেস করেছিল আমাদের কথা?’

-‘না ভাই, ব্যস্ত মানুষ তো। কিছুই জিজ্ঞেস করেনি। আর গতকাল রাতে বাসায় ফেরেনি তো। শ্যুটিঙের কাজে ঢাকার বাইরে গেছে কাল।’

-‘ওহ, তাহলে ফিরছে কবে ও?’

-‘আজই ফিরবে। আপনারা থাকছেন কই ভাই? মানে কোনো আত্মীয়ের বাড়িতে আছেন?’

-‘এমন আত্মীয় এখানে নেই ভাবি। একটা হোটেলে উঠেছি।’

-‘ইস! আমার এত খারাপ লাগছে। কেন যে খেয়াল করলাম না নম্বরটা নেওয়ার কথা! আর আমি ভেবেছিলাম কোনো আত্মীয়ার কাছেই থাকছেন বোধ হয়। তাহলে আজ আর যেতে হবে না আপনাদের। আজ আমার এখানেই থাকুন।’

-‘না না ভাবি, কোনো সমস্যা নেই আমাদের। আর হোটেল তো আজ এমনিতেও ফিরতে হবে।’

-‘খেয়াম এখানে তাহলে থাকবে কোথায়?’

-‘ওর এক বান্ধবীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। সে হোস্টেল থাকে। ওখানে সিট নাকি খালি আছে। আজ সেখানে কথাবার্তা বলতে যাব।’

-‘এতটুকু মেয়ে! থাকতে পারবে তো একা একা?’

আরিফ এমনিতেই এই বিষয়ে মহাচিন্তিত। নীহারের প্রশ্নটা শুনে মনের মাঝে চিন্তাগুলো যেন আরও শক্তপোক্ত হলো। খেয়াম তা বুঝতে পেরেই নীহারকে বললেন, ‘আমার অনেক বন্ধু-বান্ধবই তো এখানে আরও অনেক আগে অ্যাডমিশনের জন্য কোচিং করতে এসেছে, আন্টি। ওরা হোস্টেল আর মেসেই থাকে। আমিও ইন শা আল্লাহ ঠিক মানিয়ে নেবো। সমস্যা হবে না। শুধু দোয়া করবেন আমার জন্য।’

আজ খেয়াম হিজাবটা খুলেছে নাস্তা খাওয়ার সময়। উজ্জ্বল শ্যামবর্ণের গোলাকৃতির মুখটা ভারি মিষ্টি দেখতে লাগল নীহারের কাছে। আর সব থেকে বেশি ভালো লাগল তার খেয়ামের মিষ্টি হাসিটা। চেহারাতে কোনো কৃত্রিম সাজসজ্জা তো নেই-ই। যেন নৈসর্গিক সৌন্দর্য মেয়েটির মুখে। দেখলেই ভালো লেগে যায়।
নীহার হেসে বললেন, ‘দোয়া সব সময়ই আছে মা। এত ছোটো বয়সে পরিশ্রম করতে নেমেছ। আল্লাহ পাক অনেক ভালো কিছু করবেন তোমার জন্য।’

আরিফ বলল, ‘তাহলে ভাবি আমরা আজ বরং উঠি। আপনার নম্বরটা দিন। ও কখন ফ্রি থাকে আপনার কাছে ফোন করে জেনে নেবো।’
***

রাত বাজতে চলল বারোটা। চট্রগ্রাম থেকে ফিরে মাত্রই ঢাকাতে ঢুকেছে মেহফুজের গাড়ি। শ্রাবণের বর্ষণ মুখরিত রাত, চারপাশ নিস্তব্ধ। বৃষ্টির ফোঁটায় সিক্ত কাচের জানালটা ভেদ করে রাতের বর্ষণমুখর শহরটা উদাস চোখে দেখছে মেহফুজ। সিটে হেলে বসে আছে সে। হঠাৎ তার আদেশে জানালার কাচ তুলে দিলো সফি। বসন্ত ঋতুশ্রেষ্ঠ হলেও মেহফুজের কাছে অতি প্রিয় ভরা বর্ষা। যেন ঋতুরাজ বর্ষাকালই। নিরবচ্ছিন্ন ঝুম বৃষ্টির ক্ষণে একলা মুহূর্তগুলো সানন্দচিত্তে কাটায় সে, মনের মাঝে যেন এক কোমল প্রশান্তির সুখ স্পর্শ করে তার ক্ষণে ক্ষণে, অতন্দ্র রাত্রিও কেটে যায় তার বিনা অবসাদে। বর্ষণমুখর কোনো একটি রাতে পিয়ানোবাদকও হয়ে পড়ে সে। পিয়ানোর রিড চেপে বাজিয়ে চলে প্রিয় কিছু গানের সুর। সে মুহূর্তে এই ধরণির সকল নির্মম যন্ত্রণাও ভুলে যায় সে। তার চরিত্রের পরিচয় কখনো সেনা কর্মকর্তা বা কখনো নাট্য, চলচ্চিত্র নির্মাতা হলেও প্রকৃতগতভাবে সে একজন ভাবগ্রাহী। আর বৈরাগীর এক রূপও বিদ্যমান তার মাঝে। এই জগৎ সংসারে দায়িত্বের বেড়াজালে তার এই রূপটি সর্বদা অন্তরালেই অবরুদ্ধ থাকে। কিন্তু সময় সুযোগে মাঝে মাঝে এই মানুষটি অবচেতনেই ভাবগ্রাহী হয়ে পড়ে। যেমন এই মুহূর্তটি। তার ইচ্ছা করছে, তার সকল দায়-দায়িত্বের স্কুলের দরজায় অনির্দিষ্টকালের জন্য তালা ঝুলিয়ে দিতে। তারপর কাজের জায়গাগুলো থেকে বর্ষাকালীন ছুটি মঞ্জুর করে মর্তধামের চির স্বাধীন জীবের মতো গা ভাসিয়ে বেড়াতে।

ঘরে ফেরার পর বাবাকে একবার দেখে নিজের ঘরে পৌঁছল মেহফুজ। আজ বিশ্রামের প্রয়োজন খুব তার। কালও শ্যুটিং রয়েছে। তাই ফোনটাকে আপাতত সাইলেন্ট করে চার্জে বসিয়ে অতি দ্রুতই শয্যা গ্রহণ করল।

রাতে বৃষ্টির শীতল আমেজে খুব শান্তিপ‚র্ণ একটি ঘুম হলো তার। তবে বেলা অবধি ঘুমানোর অভ্যাস তার একেবারেই নেই। সকাল ছটায় ঘুম ভেঙে ধূসর আকাশের পুঞ্জিভূত মেঘ আর ইলশেগুঁড়ি দেখে ভেতরটা তার স্নিগ্ধতায় ছেয়ে গেল যেন। সে ভাবে, কোনো মানুষই হয়তো এই সারা বর্ষা ঋতুকে তার মতো করে অভিবাদন জানায় না। বাদলধারার ঝুমঝুম ধ্বনিতে তার মতো করে কেউ নিজ ছন্দ বেঁধে বর্ষাকে অভ্যর্থনা জানিয়ে আবৃত্তি করে না,
’বাদল কন্যা!
নীলাম্বর পরনে এসেছ তুমি?
এই নিখিল ভূখণ্ডে তোমাকে জানাই স্বাগত সম্ভাষণ। আমার অন্তঃস্থলে তোমার স্নিগ্ধতায় সিক্ত করেছ তুমি।
তাই তো ঝুম বৃষ্টির সুরের ম‚র্ছনায় গাইছে আমার মন,
আনন্দম! আনন্দম!
তোমাকে জানাই স্বাগত সম্ভাষণ।’

নীহার জানেন, ছেলে তার রোজ খুব সকালেই জেগে যায়। কফির মগটা হাতে নিয়ে তার ঘরে ঢুকে দেখলেন, সে দাঁড়িয়ে আছে কাচ জানালার সামনে। বিমুগ্ধ দৃষ্টি তার ঘন কালো মেঘে ছেয়ে যাওয়া আকাশ পানে। নীহার মাঝেমাঝে ছেলেকে এমনভাবে বৃষ্টি দেখতে দেখেন। আর ছেলের দিকে তিনি জিজ্ঞাসু চাউনিতে চেয়ে ভাবেন, ছেলেটা এত কেন ভালোবাসে এই বৃষ্টিকে? তারপরই উত্তর খুঁজে পান তিনি। ছেলেটা হয়েছেই তার আর দুটো সন্তানের থেকে একেবারে ভিন্ন। আর এটি তার এই ছেলেটির ভিন্নতারই বৈশিষ্ট্য।

-‘মেঘলা আকাশ আর বৃষ্টি দেখা হলো?’ কফির মগটা বেড সাইড সেন্টারটেবিলে রাখতে রাখতে জিজ্ঞেস করলেন নীহার।

মেহফুজ এক চিলতে হেসে ফিরে এসে মগটা তুলে নিলো। জিজ্ঞেস করল, ‘বাবা উঠেছে?’

-‘না, এত সকালে কি আর রোজই ওঠে তোর মতো? আজ কী করছিস?’

-‘কাজ আছে তো আজও। কোনো দরকার?’

-‘নাহ, এমনিতেই জিজ্ঞেস করলাম।’

কফিতে চুমুক দিচ্ছিল মেহফুজ। হঠাৎ নীহারের মনে পড়ল খেয়ামের কথা। তাকে বলল, ‘কাল সকালে আরিফ ভাই এসেছিলেন ওনার মেয়েকে নিয়ে।’

মায়ের কথায় ভ্রুকুটি করে তাকাল মেহফুজ। সে ঠিক চিনতে পারল না আরিফকে। জিজ্ঞেস করল, ‘আরিফ ভাই কে?’

-‘ওই যে সেদিন ওনার মেয়েকে নিয়ে এল মেয়ের জন্য একটা কাজের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য। মনে নেই? তুই তোর শ্যুটিঙের জায়গায় কাজ দিতে চাইলি মেয়েটাকে।’

এবার মনে পড়ল মেহফুজের। তাই নির্বিকার ভঙ্গিতে এসে কফিতে আবার চুমুক দিতে আরম্ভ করল।
-‘হুঁ, মনে পড়ল। আসার তো কথা ছিল আরও দুদিন আগে।’

-‘অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন উনি। বলে গেলেন যখন ফ্রি থাকিস তখন তাকে যেন জানাই। তো তুই কি দেখা করতে পারবি?’

-‘মা, তুমি জানো এসব সুপারিশে কাজ, চাকরি আমার ভালো লাগে না। আমার কাজের জায়গায় এসব সুপারিশ চলে, না কেউ সুপারিশে ঢোকে? তাও আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিলে। তোমার এই পরোপকারী স্বভাবের জন্য ঝামেলা ঘাড়ে নিতে হচ্ছে। মুনের জন্য একটু অপেক্ষা করতে?’

-‘আসলে ওনার পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। না হলে এইটুকু মেয়ে এইচএসসি পাস করে পড়াশোনা বাদ দিয়ে চাকরির জন্য ঘোরে বল? শুনে খুব খারাপ লাগছিল রে!’

-‘বুঝলাম। আমার আজ কাজ আছে বিকালে। শেষ হতে হতে রাত হবে। আমি আর ওনাদের সাথে কথা বলে কী করব? নয়নকে সব বলে রাখব। নয়নের নম্বরটা দিয়ে দিয়ো ওনাদের কাছে। ওর সাথে যোগাযোগ করে যেন আজ বিকালে চলে আসে।’
***

সকালেই নীহার ফোন করে আরিফকে সব জানিয়ে দিয়েছেন। এদিকে খেয়ামেরও হোস্টেলে সিট হয়ে গেছে। বাবা যাওয়ার পরই খেয়াম সেখানে উঠে যাবে। হোস্টেল সুপারের সঙ্গে আরিফ অনেকক্ষণ যাবৎ কথা বলে মেয়ের কাজ সম্পর্কেও তাকে ধারণা দিয়ে একটু খেয়াল রাখতে বলেছেন। এরপর বিকাল হতেই আরিফ নয়নকে ফোন করেন। তিনবার রিং হওয়ার পর নয়ন ফোন রিসিভ করে তারপর কথা বলে তার সঙ্গে। মেহফুজ আগে থেকে নয়নকে খেয়ামের ব্যাপারে সব জানিয়ে রেখেছিল। স্টুডিয়োর ঠিকানা জানিয়ে আরিফকে চলে আসতে বলল নয়ন। তারপরই আরিফ রওনা হলেন মেয়েকে নিয়ে। বাবার কান্নাভেজা চোখ দুটো দেখে সারা পথ খেয়াম তাকে বুঝিয়ে এসেছে, ‘বাবা আমাকে তো পড়াশোনা করার জন্য হলেও এখানে একা চলতে হতো। তখনো কি তুমি কান্না করতে? আমাকে তো একা চলতে শিখতে হবে, আত্মনির্ভরশীল হতে হবে তো আমাকে। না হয় এখন পড়াশোনার সঙ্গে বাড়তি একটা কাজই করতে হবে, এ-ই তো। তুমি খ্বু বেশিই ভাবছ কিন্তু। তোমার খুব ভালো বন্ধুর ছেলে তো উনি, তাই না? একেবারেই হেলাফেলা করবেন না দেখো! শুধু সব সময় আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবে আমার জন্য। তোমাদের দোয়া থাকলে আমার আর ভয় নেই। আল্লাহ পাক আমার সহায় থাকবেন নিশ্চয়ই।’

স্টুডিয়োতে পৌঁছে নয়নকে আবারও ফোন করলেন আরিফ। এবার সে একটু দ্রুতই রিসিভ করল। তারপর ওদের সাথে দেখা করে ওদের শ্যুটিঙের জায়গাতে নিয়ে এল। আপাতত স্টুডিয়োর বসার ঘরটাতে বসতে দিলো ওদের দুজনকে। নয়ন কিছু সময় ধরে ওদের সঙ্গে কথা বলে বোঝাল এই জায়গাতে খেয়ামের কাজগুলো কী। যেগুলো শুনে আরিফ আর খেয়াম দুজনেরই একটু ভয় কমল। এখানে আরও কিছু মেয়ে আছে। যাদেরকেও শ্যুটিঙের বিভিন্নরকম কাজে সহায়তা করতে হয়। খেয়ামেরও ঠিক তেমন কিছু কাজই করতে হবে। শুধু একটাই সমস্যা। শ্যুটিং যখন, যেদিন, যেখানে আর যত সময় চলবে খেয়ামকেও ঠিক সেদিন, সেখানে, ততক্ষণ থাকতে হবে। এতে নয়ন ওদের জানাল, ‘এটুকু অসুবিধা নিতেই হবে। তবে শ্যুটিং চলাকালীন ওর কোনো সমস্যাই হবে না।’ এমন আরও নির্ভয় দিয়ে দু’চারটা কথা বলল নয়ন। আজ আর খেয়ামকে কোনো কাজ করতে হলো না। কতক্ষণ কথা বলে, সব কিছু দেখেশুনে, এরপর শ্যুটিঙের ডেট জেনে আপাতত চলে এল ওরা। সেদিন রাতটাও খেয়াম বাবার সঙ্গে হোটেলে থাকল। পরের দিন সকাল দশটার সময়ই আরিফ মেয়েকে টুকিটাকি প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র কিনে দিয়ে তাকে হোস্টেলে পৌঁছে দিলেন। তারপর তিনি রওনা হয়ে গেলেন ফরিদপুরের উদ্দেশ্যে।
***

২০ শে শ্রাবণ,
খেয়ামের নতুন পথযাত্রা শুরু। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে মেহফুজের শ্যুটিং স্টুডিয়োতে পৌঁছল সে, খুব সকালে। আসার পর নয়নকে খুঁজল। কিন্তু তাকে পাওয়া গেল না। সে স্টুডিয়োতে ঢুকে চুপচাপ একটা কোণে দাঁড়িয়ে সব শুধু লক্ষ করছে। এর মাঝে মেহফুজের দেখাও সে পায়নি। হঠাৎ একটা ছেলেকে দেখা গেল হাতে দুকাপ চা নিয়ে দোতলার সিঁড়িতে উঠতে। খেয়াম তাকে পেছন থেকে ডাকল, ‘এই যে ভাই, একটু শুনবেন?’ ছেলেটি দাঁড়াতেই খেয়াম তার কাছে এগিয়ে এল। ছেলেটি লক্ষ করল খেয়ামকে। অনেক ঘের দেওয়া একটি কালো বোরখা পরনে। আর সাদা হিজাব ওড়নায় মুখটা ঢাকা খেয়ামের। সে জিজ্ঞেস করল, ‘কে আপনে?’

-‘আমাকে নয়ন ভাইয়া আজ আসতে বলেছিল। মানে এখানে নতুন কাজে ঢুকেছি।’

-‘ও আইচ্ছা, তো এইখানে আর না দাঁড়াইয়া ওপরে চইলা আসেন। ওইখানে বহুত কাজ। আধা ঘণ্টার মধ্যেই শ্যুটিঙের কাজ শুরু হইব।’ বলেই সে হাঁটা শুরু করল। খেয়ামও তার পিছু পিছু উঠে এল দোতলায়। এই প্রথম সে আজ শ্যুটিং দেখবে, নায়ক-নায়িকা দেখবে। বেশ উত্তেজনাও কাজ করছে তার মাঝে।

দোতলায় ওঠার পর ছেলেটার পিছু এসে একটা ঘরের সামনে দাঁড়াল খেয়াম। আর ছেলেটা ভেতরে ঢুকে পড়ল। খেয়াম বাইরে থেকে ঘরের ভেতরটা একটু উঁকি দিয়ে দেখল। একদম সত্যিকারের বেডরুমের মতোই সাজানো ঘরটা। কিন্তু সে কিছুটা ভীতিবোধ করছে। কোথায় কী কাজ করবে কিছুই বুঝে পাচ্ছে না। পেছনে ঘুরে দেখল নয়ন ফোনে কথা বলতে বলতে সিঁড়ি বেঁয়ে উপরেই আসছে। কিন্তু তাকে দেখেও তার পাশ কাটিয়ে কথা বলতে বলতে সে ঘরের মধ্যে ঢুকে গেল। ঘরে ঢুকে তাকে বলতে শোনা গেল, ‘স্যার চলে আসছে। প্রায় কাছাকাছিই।’ নয়নের কথা শুনে হঠাৎ একটি পুরুষ কণ্ঠ বলল, ‘আচ্ছা, আমিও তো বৃষ্টি মাথায় করেই এসেছি। আমি কি দূর থেকে আসিনি? ও সব সময় এমন দেরি করে কেন?’ এ কথার পরই ভারী সেই কণ্ঠস্বর ভেসে এল খেয়ামের কানে। যে কণ্ঠস্বরের ঝংকার তোলা ধ্বনি সেদিন তার বক্ষস্পন্দন আচমকায় বাড়িয়ে দিয়েছিল। আজও তার ব্যতিক্রম হলো না। আরও বেশি যেন তার স্নায়ুর দুর্বলতা দেখা দিলো সেই কণ্ঠের ধ্বনিতে। মেহফুজ বলছে, ‘রাস্তার অবস্থা তো ভালো নয়। আমি অপেক্ষা করছি, তোমার অপেক্ষা করতে সমস্যা কী? অন্তত মহা ব্যান্ড সিঙ্গার থেকে তো ফাস্ট আছে তারিন।’ এ কথায় ঘরের মাঝ থেকে কয়েকটা কণ্ঠে হাসির রোল পড়ে গেল।

চায়ের কাপে চুমুক দেওয়ার ফাঁকে হঠাৎ মেহফুজের দৃষ্টি পড়ল দরজার মুখে দাঁড়ানো মানুষটির দিকে। পর্দার ফাঁক থেকে একটুখানি দেখা যাচ্ছে মানুষটিকে। সেদিকে তাকিয়ে নয়নকে সে জিজ্ঞেস করল, ‘মেয়েটি কি এসেছে আজ, নয়ন?’ নয়নের তখন ফোনের দিকে মনোযোগ ছিল। মেহফুজের কথা শুনে তার দৃষ্টি লক্ষ করে সেও দরজার দিকে তাকাল। তারপর অতি দ্রুত বলল, ‘ও, হ্যাঁ। মেয়েটা তো এসেছে। আসার সময় দেখে এলাম। আমি কথা বলে আসি।’ বলেই নয়ন বেরিয়ে এল।

-‘তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছ কেন? ভেতরে অনেক কাজ আছে। তারিন ম্যাডামের কস্টিউম রেডি করে রাখবে আগে। তারপর ঘরের মধ্যে প্রচুর কাজ আছে। এসো এসো।’

খেয়াম ঘরে ঢুকতে প্রথমেই তার নজরে পড়ল ব্যালকনিতে বসা মেহফুজের দিকে। গাঢ় নীল রঙের টি শার্টের ওপর সাদা শার্টটা পরে বোতাম ছেড়ে রেখেছে সে। কয়েকটা চুল সোজা হয়ে ফর্সা কপালটার ওপর ঝুঁকে আছে তার। শার্টের হাতা কনুই অবধি সে গুটিয়ে রেখেছে দেখে খেয়াম বিরক্তিকর মুখভঙ্গি করে মনে মনে বলল, ‘এত বেশি বেশি লোমগুলো না দেখালে কী হয়?’ কিন্তু আগের দিনের মতোই মেহফুজ আজও যেন তাকে তার দৃষ্টিসীমার বাইরে রেখেছে।

মেহফুজের সামনে বসে থাকা মানুষটা নিশ্চয়ই হিরো হবে? সেও নতুন একটা মানুষকে দেখে দুবার নজর তুলে তাকিয়েছে খেয়ামের দিকে। কিন্তু মেহফুজ সাহেব মানুষটা এমন নকড়া-ছকড়া, ক্রোধী কেন? না কি সে মানুষটাই এমন রাশভারী? তবে তাকে তো দেখতে কখনোই দাম্ভিক মনে হয় না। খুবই শান্তিপ্রিয় আর নির্ভেজালপূর্ণ লাগে চেহারা, যেন অমায়িকপূর্ণ। যার দিক থেকে নজর সরিয়ে নিতেও অলসতা কাজ করে, দৃষ্টিজোড়া অক্লান্ত হয় না।

নয়ন খেয়ামকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হঠাৎ বলল, ‘জানালার পর্দাগুলো সোফার ওপর দেখছ না? ওগুলো জানালাতে টাঙিয়ে ফেলো জলদি। দেখে দেখে কাজগুলো করে ফেলো দ্রুত।’
***

‘আজ শ্রাবণের আমন্ত্রণে
দুয়ার কাঁপে ক্ষণে ক্ষণে,
ঘরের বাঁধন যায় বুঝি আজ টুটে।
ধরিত্রী তাঁর অঙ্গনেতে
নাচের তালে ওঠেন মেতে,
চঞ্চল তাঁর অঞ্চল যায় লুটে।’

গানের মাঝেই তারিন হঠাৎ হাঁচি দিয়ে উঠল। এই নিয়ে সে তিনবার এভাবে শটের মাঝে হাঁচি দিয়ে উঠেছে। আর তিনবারই মেহফুজকে শট কাট করতে হয়েছে। ভিডিয়ো প্রডাকশনে ক্যামেরাম্যান মেহফুজ নিজেই। মহাবিরক্তি নিয়ে সে তারিনের দিকে তাকাতেই তারিন একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা খেয়ামকে বলল, ‘এই, বাতাসের গতিটা একটু কমাও তো। আমার প্রচণ্ড ঠান্ডা লাগছে।’ খেয়াম তা শুনে বিভ্রান্তে পড়ে দাঁড়িয়ে গেল তার দিকে চেয়ে। মেহফুজ সেদিকে তাকাল। একটু হাঁক দিয়েই বলল তারিনকে, ‘আরে বাতাসটুকু তো রাখতে হবে, তারিন। না হলে শাড়ির আঁচলটা উড়বে কী করে?’

-‘ভাইয়া, একটু কমালে সমস্যা হবে না। আমার আবার ঠান্ডার সমস্যা আছে তো।’

মেহফুজ সেই বিরক্তির সুরেই খেয়ামকে বলল, ‘এই বাতাস কমাও তো একটু।’ বলেই সে জিজ্ঞেস করল তারিনকে, ‘তাহলে রেডি?’

-‘হ্যাঁ ভাইয়া রেডি।’

মেহফুজ আবার শট নিতে আরম্ভ করল। ব্যালকনির গ্রিল ধরে তারিন দাঁড়িয়ে শ্রাবণধারা দেখছে উদাস চোখে। ঠোঁটের কোণে তার মৃদু হাসি। তরতর গতিতে সেই সাথে তার শাড়ির আঁচল উড়ে আছড়ে পড়ছে রোহানের গায়ে। তারিনের পেছনে দাঁড়িয়ে সে বিমুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকে দেখছে। আর ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক হিসাবে বাজছে তখন রবীন্দ্র সংগীত। দশ মিনিটের শট নেওয়া শেষে কিছুক্ষণের বিরতি নেওয়া হলো। খেয়াম ইব্রাহীম নামের একটি ছেলের সঙ্গে সেটের কলাকারদের নাশতার ব্যবস্থা করে নিচে চলে এল তারিনের নতুন আরেকটি কস্টিউম রেডি করতে। এরপরের শট শুরু হবে খাবার টেবিলে।
.

খাবার টেবিলে তারিন শটের মাঝে রোহানের প্লেটে খাবার তুলে দেওয়ার সময় অসাবধানবশত বাটারের পটে বাঁ হাত ফেলে হাত মাখিয়ে নিলো। মেহফুজ শট কাট করে তারিনকে কিছু বলতে যাবে তখনই তারিন চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘খাবার টেবিল সাজিয়েছে কে? বাটার পট টেবিলের মাঝে না রেখে হাতের কাছে রাখে কেউ?’ এবারও মেহফুজ কিছু বলার পূর্বেই তার সহকারী আমিন রাগান্বিত স্বরে বলল, ‘এমন আহাম্মক কাজ কে করেছিস?’ খেয়ামকেই খাবার টেবিলের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সে এগিয়ে এসে বলল, ‘আমি ওটা টেবিলের মাঝেই রেখেছিলাম। ম্যাম খাবার সার্ভ করার মাঝে হয়তো…’

তারিন খেয়ামের কথার মাঝে ধমকে বলল, ‘এই, কী বলো তুমি? আমি এটা কখন তুললাম?’

মেহফুজ চূড়ান্ত পর্যায়ের বিরক্ত। সে বলল, ‘তুমি হাতটা পরিষ্কার করো, তারিন। শট রেডি করতে হবে দ্রুত।’

খেয়াম টেবিলটা আবার সাজিয়ে দিয়ে সাইডে এসে দাঁড়াল। শট শুরু হলো আবার। মিনিট দুই পর তারিন রোহানের ব্রেডে বাটার জড়িয়ে দেওয়ার জন্য টেবিলে বাটার পট খুঁজতে শুরু করল। যেটা অভিনয়ের অন্তর্ভুক্ত নয়। মেহফুজ আবার শট কাট করে তারিনকে বলল, ‘এটা কী করছ, তারিন? বারবার এক বাটার পটেই সমস্যা বাঁধাচ্ছ!’

-‘ভাইয়া, আমি কখন সমস্যা করছি? মেয়েটা পটটা কোথায় রেখে গেছে এতগুলো খাবার ডিশের মাঝে চোখেই তো পড়েনি সহজে।’

মেহফুজ এবার খেয়ামকে ধমকে বলল, ‘একটা পট ঠিকঠাকমতো সাজিয়ে রাখতে পারছ না? একবার হাতের কাছে রাখছ তো আবার অন্য কোথায় রাখছ যে সহজে চোখে পড়ে না! যাও, ওটা রাইট পজিশনে রাখো।’

খেয়াম ছোট্ট একটা নিশ্বাস ফেলে পুনরায় খাবার টেবিল সাজাল। তবে এবারে তারিনের কোনো ভুল হলে আর সেই ভুলের দায় তার ঘাড়ে এলে তখন তার ধমক হজম করা বেশ কষ্টদায়ক হয়ে পড়বে।

মেহফুজ তৃতীয়বার শট নিতে শুরু করল। আর এবার শুরুতেই তারিন মস্তবড় ভুল করে বসল। চায়ের কাপে চিনির পটের বদলে নুনের পট থেকে দুচামচ নুন দিয়ে ফেলল সে। এই ভুলটা খুব সহজেই দর্শকের চোখে পড়বে। কারণ, চিনির পট আর চায়ের কেটলির ডিজাইন একইরকম। তাই ভুলবশত নুনের পট থেকে নুন তুললে সেটা দর্শক খুব সহজেই বুঝতে পারবে। তারিন আজ অনেক বেশিই উদাসীন। মেহফুজ খেপে গিয়ে শট থামিয়ে দিলো।
,-‘সমস্যা কী তারিন? এত সাধারণ বিষয়ে ভুল করলে কাজ শেষ করব কী করে? আর তোমার মনোযোগ কোথায় আজ?’

তারিন নিজেও খানিকটা বিব্রত হয়ে পড়ল। তবে ভুলটা সে নিজের ঘাড়ে নিতে চাইল না। চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে টেবিলে সাজানো খাবারের পাত্রগুলো দেখিয়ে বলল, ‘ভাইয়া, আমার কনসেনট্রেটিং এ সমস্যা নয়। চায়ের ট্রেতে নুনের পট কেন রাখা হয়েছে? নুন আর চিনির পটটা তো প্রায় একইরকম দেখতে।’

মেহফুজ উঠে দাঁড়িয়ে টেবিলটা দেখে খেয়ামকে আকস্মিক এক ধমক দিয়ে উঠল আগের থেকেও ভীষণ জোরে, ‘চায়ের ট্রে দেখোনি কখনো? আর এসব নতুনদের দিয়ে কাজ করায় কে? বাকি সব কই? পুরো শটটাই নষ্ট করে দিচ্ছে বারবার।’ বলেই সে সেটের আরেকজন সহকারীকে ধমকে উঠল, ‘সবুজ, রফিক, তারা, ওরা সব কই? এরা কি কাজ করতে এসেছে না তামাশা দেখতে এসেছে?’

এটুকু বলেও মেহফুজ থামল না। রাগ কণ্ঠে খেয়ামকে বলল, ‘এই, তোমাকে কোনো কাজ করতে হবে না। সেট থেকে বের হও।’

এ কথায় খেয়াম একবার তারিনের দিকে তাকাল। তারপর মেহফুজের দিকে আরেকবার তাকিয়ে সে শ্যুটিং রুম থেকে বেরিয়ে এল। প্রায় ঘণ্টাখানিক পর শ্যুটিং শেষ হলে খেয়াম সবকিছু গুছিয়ে রাখার কাজ শেষ করে স্টুডিয়ো থেকে বেরিয়ে পড়ল। দুপুর গড়িয়ে পড়েছে সবে। সে বের হতে মাত্রই বৃষ্টি খানিকটা কমল। মনটা খারাপ করে বাইপাস ধরে হেঁটে বাসস্টপে এসে থামল। বাসের জন্য অপেক্ষা করতে করতে ভাবতে থাকল, এমন বহু রাগ, ধমক, অপমান সহ্য করেই তাকে এখানে কাজ করতে হবে। মন চাইলেও সঠিক, ভুল কখনো বলতে পারবে না।

রকমারি.কম, স্বপ্নবাড়ি বুকশপ সহ অনলাইন আরও বিভিন্ন বুকশপে বইটি পাবেন। বুকশপ লিংক কমেন্টবক্সে। আমি অভিশাপ পৃথ্বীর আপাতত এক মাস লিখতে পারব না। সেই একটি মাস যাবৎ এই বইটির এবং কয়লা বইটির একটা নির্দিষ্ট অংশ পর্যন্ত প্রতিদিন আপলোড করা হবে।
***

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here