নীরব_সূর্যাস্ত #পর্ব_৪ #সারা_মেহেক

0
886

#নীরব_সূর্যাস্ত
#পর্ব_৪
#সারা_মেহেক

পেরিয়ে গেলো প্রায় এক মাস। এর মাঝে নিহা ও জুনায়েদের যোগাযোগ হয়নি বললেই চলে। যদিও মাঝে একদিন জুনায়েদ নিহাকে জিজ্ঞেস করেছিলো, সময় হবে কি না। কিন্তু কাজের চাপে নিহা সময় পাইনি বলে নিষেধ করে দিয়েছিলো।

অনেকদিন পর আজ আবারও জুনায়েদ ফোন করলো। নিহা কল রিসিভ করতেই ওপাশ হতে জুনায়েদ ব্যস্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
” তোর অফিস নয়তলায় না?”

হঠাৎ ওপাশ হতে এমন প্রশ্ন ছুঁড়ে আসায় নিহা খানিক অবাক হলো। জুনায়েদের প্রশ্নের জবাব না দিয়ে উল্টে জিজ্ঞেস করলো,
” কেনো বল তো?”

” আহহা,তুই শুধু এটা বল তোর অফিস নয় তলায় কি না। বাকিটা আমি পরে বলছি।”

” হ্যাঁ, আমার অফিস নয় তলায়। ”

জুনায়েদ আর কথা বাড়ালো না। বরং কল কেটে দিলো। এদিকে নিহা পুরোপুরি কিছু বুঝে উঠার পূর্বেই জুনায়েদ পিছন হতে কাঁধ চাপড়ে বললো,
” সারপ্রাইজ বন্ধু! ”

নিহা চমকে চেয়ারসহ ঘুরে বসলো। আচমকা জুনায়েদকে দেখে তার দৃষ্টিতে অবিশ্বাস্যের ছাপ পড়লো। মুখখানায় দেখা মিললো খুশির ছোঁয়া। বিস্মিত কণ্ঠে বললো,
” তুই জুনায়েদ!”

জুনায়েদ হাস্যোজ্জ্বল কণ্ঠে জবাব দিলো,
” জি আমি, আমাকে এখানে এক্সপেক্ট করিসনি তো তাই না?”

নিহা এবার উঠে দাঁড়ালো। বললো,
” হঠাৎ এভাবে সারপ্রাইজ দিবি কল্পনাও করিনি৷ ঠিকানা পেলি কি করে?”

” আমার এক কলিগের মাধ্যমে। সে জোগাড় করে দিয়েছে। ”

” আচ্ছা। তুই বস। আমি চা নাস্তার ব্যবস্থা করতে বলছি। বাই দা ওয়ে, কফি না চা?”

” কফি। ”

” ওকে, আমি পিয়নকে ব্যবস্থা করতে বলছি। ”
বলেই সে অফিসের পিয়নকে কল দিয়ে নাস্তা পানির আয়োজন করতে বললো। অতঃপর সে চেয়ারে বসে জুনায়েদকে জিজ্ঞেস করলো,
” হঠাৎ এতোদিন পর কল না করেই চলে এলি যে?”

” এমনিই। তোর সময় হয় না। তাই ভাবলাম আমিই চলে আসি।”
বলেই সে পুরো রুমে একবার চোখ বুলিয়ে বললো,
” তুই আর তাশদীদ বসিস এ রুমে?”

” আরে না না। তাশদীদ আমার চেয়ে সিনিয়র। এজন্য উনার রুম আলাদা। এখানে আমি আর আমার আরেক কলিগ বসে। ও আজ ছুটিতে। আর দু এক বছর পর আমার প্রোমোশন হলে তখন সিঙ্গেল একটা রুম পাবো।”

” ওহ বুঝলাম। আচ্ছা, তাশদীদ সাহেব কোথায়? স্পেশালি উনার সাথে দেখা করার জন্যই এসেছি আমি। ”

” দেখা করবি উনার সাথে?”

” হ্যাঁ অবশ্যই। কল দে।”

নিহা কল দিলো তাশদীদকে। দু মিনিটের মাঝেই তাশদীদ নিহার ক্যাবিনে প্রবেশ করলো। জুনায়েদকে দেখেই সে আন্তরিকতার সহিত এগিয়ে গেলো। হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেকের ভঙ্গিতে রেখে বললো,
” আমি তাশদীদ। আপনি জুনায়দে, রাইট?”

তাশদীদকে দেখেই জুনায়েদ চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। হাত বাড়িয়ে মৃদুহাস্যে বললো,
” জি। আমি জুনায়েদ। নাইস টু মিট ইউ মিস্টার তাশদীদ।”

তাশদীদ বেশ আন্তরিকতার সহিত জুনায়েদের সাথে সময় কাটালো। নাস্তা পানি শেষ হঠাৎ জুনায়েদ সামান্য কাশি দিয়ে বললো,
” আসলে আমি এখানে দাওয়াত দিতে এসেছিলাম। ”
এই বলতে বলতে তার চেহারায় গাম্ভীর্যপূর্ণ একটা ভাব ফুটে উঠলো।
নিহা স্বাভাবিক রূপেই জিজ্ঞেস করলো,
” কিসের দাওয়াত?”

” আমার বিয়ের দাওয়াত।”

জুনায়েদের উচ্চারিত তিনটি শব্দ নিহা ক্ষণিক সময়ের জন্য থমকে দিলো। কয়েক সেকেন্ডের জন্য নিঃশ্বাস ফেললো না সে। হঠাৎ তার মনে হলো খুব কাছের কিছু হারিয়ে যাচ্ছে। একদম ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে। কিন্তু এমন তো হওয়ার কথা নয়! এটা কি স্বাভাবিক নয় যে জুনায়েদ বিয়ে করবে? সে নিজেও তো কয়েক মাসে বাদে তাশদীদকে বিয়ে করবে। তাহলে এমন অনুভূতির জন্ম কি পাপ নয়?
ছয় বছর পূর্বে যে অনুভূতি ছিলো তা কালের বিবর্তনে মনের এক কোনে চাপা পড়ে গিয়েছিলো। কিন্তু এক মাস পূর্বে জুনায়েদের দেখা পাওয়া সব উল্টোপাল্টা করে দিলো। নিহা বুঝতে পেলো এ অনুভূতি সকল কারোর জন্যই ভালো কিছু বয়ে আনবে না৷ উপরন্তু সে একজনের সাথে পূর্ব হতেই বাঁধা পড়ে আছে।
নিহা ঢের বুঝতে পারছে সে সঠিক নয়। তবুও অবাধ্য মনটাকে বুঝানো দায় হয়ে পড়ছে। সেদিন ঢাকায় আসার পর বেশ ক’দিন তার মাথায় শুধু জুনায়েদের কথা ঘুরছিলো। তখন বেশ কষ্টেসৃষ্টে নিজেকে সামলেছে সে। কি আজ আবারও জুনায়েদের দেখা মিললো।

কয়েক সেকেন্ড নিহা কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না। তাশদীদ তার হাত হাত রাখতেই সে ঈষৎ চমকে উঠে মুহূর্তেই ঠোঁটের কোনে এক গুচ্ছ হাসিরছটা এনে বললো,
” কংগ্রাচুলেশনস। শেষমেশ তুইও বিয়ের বন্ধনে বাঁধা পড়ছিস! ”

জুনায়েদ হাসার চেষ্টা করলো। বললো,
” একটা বছর মা আঠার মতো আমার পিছে পড়ে ছিলো। প্রায় তিন চার মাস আগে মেয়েকে দেখে পছন্দ হলো তাঁর। এরপর খোঁজখবর নিয়ে দু সপ্তাহ আগে সব কথা পাকাপোক্ত করলো। আগামী সপ্তাহে বিয়ে।”

” তাহলে তুই যে বাসে বিয়ের কথা বলায় ওমন বললি সেটা?”

” আমি ভেবেছিলাম এসব বাদ আপাতত। কেননা কাজের চাপে বিয়ে সংসার এসব নিয়ে ভাবার সময় হয় না। মা বাবা মিলে আমাকে না জানিয়েই এতোদিন এসব খোঁজ নিয়েছে। ”

এবার তাশদীদ কথা আরম্ভ করলো। বললো,
” কংগ্রাচুলেশনস। তাহলে এ বিয়ের দাওয়াত দিতেই এভাবে আসা। ”

” হ্যাঁ অনেকটাই। মেইন কাজ এটাই ছিলো। ”
বলেই সে অফিস ব্যাগ হতে তার বিয়ের কার্ড তাশদীদের হাতে এগিয়ে দিয়ে বললো,
” আগামী শুক্রবার আপনি আর আপনার এই ফিয়ন্সকে নিয়ে চলে আসবেন। আপনাদের অপেক্ষায় থাকবো।”

নিহা এবার জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে মজার ছলে বললো,
” অবশ্যই আসবো। কিন্তু বিনা গিফটে খাবার খেয়ে বউ দেখে চলে আসবো। রাজি তো?”

জুনায়েদ হাসলো। বললো,
” আপনার এই মহামূল্যবান পদের চিহ্ন আমাদের বিয়ের ভেন্যুতে পড়লে আর কিছুর প্রয়োজন নেই।”
বলেই তিনজন একযোগে হেসে উঠলো।
এভাবে টুকটাক কথা বলে জুনায়েদ চলে গেলো।
তাশদীদ এখনও নিহার সামনে বসে আছে। নিহার চেহারায় উদাসীনতার ছোঁয়া। তার দৃষ্টি ও মুখভঙ্গিমা দেখে তাশদীদ চট করে জিজ্ঞেস করলো,
” মন খারাপ তাই না? এমনটা এক্সপেক্ট করোনি তো?”
তাশদীদ নিহা আর জুনায়েদের ব্যাপারে সবটা জানে। সে এ বিষয়টাকে স্বাভাবিক রূপেই নিয়েছে। সে নিহাকে ভীষণ ভালোবাসে বলেই সবসময় তার পাশে থাকে। এবারও তার ব্যতিক্রম হলো না। সে জানে নিহার মনে এ মুহূর্তে কি চলছে।

নিহা ব্যর্থ চেষ্টা করলো সবকিছু লুকানোর। কেননা তাশদীদ যে তাকে খুব ভালো করে জানে! সে তবুও সত্য বললো না। ঠোঁটের কোনে বিস্তৃত হাসি ফুটিয়ে বললো,
” কই না তো। মন খারাপ হবে কেনো। বরং আমি তো জুনায়েদের জন্য অনেক খুশি। আর আমি যেখানে মুভ অন করেছি সেখানে জুনায়েদের বিয়ে করাটা নরমাল।
আচ্ছা,আমি একটু ওয়াশরুম থেকে আসছি।”
বলেই সে চলে গেলো। পিছে তাশদীদ মনে মনে বললো,
” তুমি কিছু না বললেও সবটা বুঝি নিহা!”

—–

দুদিন বাদে পুনরায় জুনায়েদ নিহাকে কল দিলো। বললো দেখা করতে। নিহা প্রথমে এ ব্যাপারে নাকচ করলেও পরে জুনায়েদের জোরাজোরিতে সে রাজি হলো।

রমনা পার্কে দেখা করলো দুজন। নিরিবিলি একটা জায়গা বেছে নিয়ে দুজন বসলো। খানিক সময় সাধারণ কিছু কথাবার্তা হলেও এক পর্যায়ে জুনায়েদ জিজ্ঞেস করলো,
” আচ্ছা নিহা, তুই কি আমাকে কিছু বলবি?”

নিহা ঈষৎ চমকে উঠলো। জিজ্ঞেস করলো,
” কি বলবো?”

” যেকোনো কিছু।”

” যেকোনো কিছু আবার কেমন? এই যে আমরা কথা বলছি তো। ”

” না। এটা নয়। তোর কাছ থেকে অন্যকিছু শুনতে চাচ্ছি। আমাকে নিয়ে কিছু বলবি?”

নিহা ভীত হলো। জুনায়েদ কি কিছু বুঝে ফেললো! নাহ, ওকে কিছু বুঝতে দেওয়া যাবে না। যে অনুভূতি এতোদিনে সে বুঝেনি। আজ ছয় বছর পর এসে বিয়ের আগ মুহূর্তেও এ অনুভূতি বুঝার উচিত নয়।
নিহা হাসলো। বললো,
” তোকে নিয়ে কি বলবো? তোকে নিয়ে কিছু বলার নেই। কিন্তু এটা বলবো যে, ভাবীকে কিন্তু সবসময় সুখে রাখবি।”

জুনায়দে এবার বিরক্ত হলো। বললো,
” ওসব কথা বাদ দে তো। এখন শুধু তোর আর আমার ব্যাপারে কথা হবে।
আচ্ছা, শোন। তুই ইনডিরেক্টলি বুঝছিস না তা বুঝেছি। তাই ডিরেক্টলিই জিজ্ঞেস করছি।
তোর মনে কি আমার জন্য কোনো ফিলিংস আছে?”

ভীষণ মজার একটা কৌতুক শুনেছে এমন ভাব ধরে নিহা বললো,
” হা হা, তুই কি দিন দিন বাচ্চা হয়ে যাচ্ছিস জুনায়েদ? এসব কি বলিস? তোর জন্য আমার ফিলিংস থাকবে কেনো? তোরও বিয়ে হচ্ছে, আমারও বিয়ে হচ্ছে। এক্ষেত্রে এসব ফিলিংসের কোনো কথাইত তো উঠে না। ”

” মিথ্যে বলিস কেনো নিহা? আমি সেদিন স্পষ্ট দেখেছি তুই আমার বিয়ের কথা শুনে খুশি হোসনি। সত্যটা বল আমাকে। ”

” কি সত্য বলবো? তোকে নিয়ে আমার মনে কেনো কোনো ফিলিংস থাকবে?”

” দেখ নিহা, দোহায় লাগে সব সত্য বলে দে। এখনও কিছু হাতের নাগালের বাইরে যায়নি। তুই চাইলে সবটা ঠিক করা সম্ভব। ”

নিহা এবার অকপট রাগ দেখালো। বললো,
” তোর মাথা গিয়েছে জুনায়েদ। তোর বিয়ে আগামূ সপ্তাহে। আমার বিয়ে কয়েক মাস পর। এর মাঝে এসব বলছিস কেনো!”

” নিহা, রাগ করিস না। আমি জানি তোর মনে আমার জন্য ফিলিংস আছে। আমি কখনও এ ব্যাপারে শিওর ছিলাম না। আমার মনেও তোর জন্য ফিলিংস ছিলো। কিন্তু গ’র্দ’ভের মতো কিছুই বুঝিনি আমি। তোর চলে যাওয়ার পর বুঝেছি। কিন্তু তখন দেরি হয়ে গিয়েছিলো। তবে আজ দেরি হয়নি নিহা। তুই চাইলেই সব সম্ভব।
শুধু আমার একটা প্রশ্নের জবাব দে, তুই কি আমাকে ভালোবাসিস?”

জুনায়েদের সম্পূর্ণ কথা শুনে নিহা নির্বাক রইলো। কই, সে তো কখনও টের পায়নি জুনায়েদের মনের খবর! ভাগ্যের এ কি নির্মম পরিহাস!
জুনায়েদ ফের অসহায় কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
” তুই কি আমাকে ভালোবাসিস নিহা?”
®সারা মেহেক
#চলবে

গ্রুপ লিংক : https://facebook.com/groups/259972409591747/

(আপনারা অনেকে হয়তো জানেন না আমার আম্মু হসপিটালাইজড ছিলো। তাই এতোদিন গল্প লিখার সুযোগ পাইনি।
আর একটা পর্ব হলেই গল্প শেষ। আগামী পর্বটা ভালোভাবে গুছিয়ে সব লিখবো। এখন বলুন তো, নিহার জবাব কি হবে? আর এন্ডিংটা কেমন হবে। আর আপনারা কেমন এন্ডিং চান?)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here