জীবনের_চোরাবালি part 2
#লেখিকাঃসীমা
তিশা ওর নানাভাইকে ফোন করে সব বলে,ওর নানাভাই লিয়াকে নিয়ে হাসপাতালে যেতে বলে।তিশা লিয়াকে নিয়ে হাসপাতালে গেলে ওর নানাভাই আসে।ডক্টর কিছু পরীক্ষা করে রিপোর্ট দেখে বলল তাতে তিশা আর ওর নানাভাইয়ের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল।
ডক্টরঃলিয়ার মাথায় রক্ত চলাচল ভালভাবে করতে পারছে না শিরাগুলো অনেক সরু হয়ে গেছে তাছাড়া মাথার অপারেশন না করলে হয়তো লিয়া আর বাচবে না।
তিশা কাঁদতে শুরু করে।
তিশাঃনানাভাই আমরা কার কি ক্ষতি করেছি যে এত বড় শাস্তি আমাদের দিচ্ছে ভাগ্য।
নানাঃতিশা চিন্তা করো না ও ঠিক হয়ে যাবে।ডক্টর অপারেশন কবে করাতে হবে?
ডক্টরঃও ছোট এখন তাই অপারেশন এখন না ওর যখন বিশ বছর মানে পাঁচ বছর পর করতে হবে তবে সে অপারেশনটা সিঙ্গাপুরে করতে হবে অনেক ব্যয়বহুল।
নানাঃআমার নাতনির জন্য দরকার পরলে সবকিছু বিক্রি করে দিবো। এখন আমরা কি করবো?
ডক্টরঃআমি ঔষধ দিচ্ছি ঠিকমত খাওয়াবেন আর ডিপ্রেশনের মধ্যে কখনো রাখবেন না সবসময় হাসি খুশিতে রাখবেন।
তিশাঃনানাভাই লিয়া তো ঐ বাড়িতে থাকতে চায় না কিভাবে তিন বছর ওকে নিয়ে থাকবো?(কাঁদতে কাঁদতে)
নানাঃধৈর্য ধরো সব ঠিক হয়ে যাবে। (মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়)লিয়াকে এসব কিছু বলবে না এখন।আমি আনিসের সাথে কথা বলি যদি তোমাদের আমাদের কাছে থাকতে দেয়।
তিশাঃ না নানাভাই তুমি ওদের কাছে ছোট হবে না আমি থাকতে আমার বোনের কিছু হবে না।
,
,
তিশা ওর নানাভাইয়ের সাথে লিয়ার কেবিনে আসে।লিয়া কাঁদছে আর একটা নার্সকে ধরে মারছে।তিশা গিয়ে লিয়ার হাত থেকে নার্সটাকে ছাড়িয়ে নেয়।
লিয়াঃআপুনি এই বজ্জাত নার্স আমাকে ইনজেকশন দিয়েছে আর বলেছে আরো দেবে।(কাঁদতে কাঁদতে বলে)
তিশাঃলিয়া ইনজেকশন দিলে তুমি ঠিক হয়ে যাবে।
লিয়াঃনাআআআআ আমি ইনজেকশনটা দিলে আমার মাথার চুল পড়ে যাবে।আমি চুল পড়তে দিবো না।
নার্সঃলিয়া তুমি খুব ভালো মেয়ে তোমার চুল পরবে না। কে বলেছে ইনজেকশন দিলে চুল পরে?
লিয়া গোল গোল চোখ করে নার্সের দিকে তাকায়।নার্স ভয়ে ঢোক গিলতে থাকে।
নানাঃলিয়া তুমি নার্স আপুকে সরি বলো।
লিয়াঃসরি।
নার্সঃইটস ওকে বাট তোমার চুল অনেক সুন্দর।
লিয়াঃখাচ্চুনি তুই আবার আমার চুলের দিকে নজর দিছিস দাড়া শুধু।
নার্স পালিয়ে যায়।
তিশাঃতোকে এসব কথা কে বলে নজর দিলে চুল পরে যায়,ইনজেকশন দিলে পরে?
লিয়াঃআমার বান্ধবীরা বলে আপুনি তুমি তো জানো আমি আমার চুলকে কত ভালবাসি?
তিশাঃসেটাতো বেশি ভয় অপারেশন করলে তো মাথার চুল থাকবে না তখন কি করবে?(মনে মনে)
লিয়াঃআপুনি আমি স্কুলে যাবো।
তিশাঃআজ যেতে হবে না আজ আমরা ঘুরবো মজা করবো।
লিয়াঃনানাভাই শপিং মলে একটা বড় টেডি বিয়ার নতুন আসছে আমাকে কিনে দিবে?
নানাঃওকে দিবো নানাভাই।চলো সব ফরমালিটি পূরন করে দিয়ে আমরা যাই।
,
লিয়া,তিশা ওর নানাভাই মিলে সারাদিন ঘুড়ে বেড়ায় সারাদিন। লিয়াকে বড় টেডিবিয়ার কিনে দেয় লিয়া সেটা নিয়ে বাড়িতে আসে তিশার সাথে।বাড়িতে ঢুকতে আনিস রহমান কড়া গলায় দুজনকে দাড়াতে বলে।দুজনে দাড়িয়ে যায়।
আনিস রহমানঃকোথায় গিয়েছিলে?
তিশাঃলিয়াকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম। (মাথা নিচু করে)
সালেহা বেগমঃলিয়া মামনি ঠিক আছে তো?
লিয়াঃকেনো আমাকে ঠিক দেখে কি খুশি হতে পারছেন না?
আনিস রহমানঃহাতে ওটা কি?এত দামি টেডিবিয়ার কে কিনে দিলো?
তিশা কিছু বলার আগে লিয়াই উত্তর দেয়।
লিয়াঃনানাভাই কিনে দিয়েছে তুমি তো দিবে না আমি তোমার কাছে টেডিবিয়ার কিনে চেয়েছিলাম তুমি কি বলেছিলে তোমার টাকা নেই।কিন্তু ঐদিনে এই ডাইনিটাকে স্বর্ণের চেইন কিনে এনে দাও।শুধু আর তিন বছর তারপর আমরা তোমাদের সাথে থাকব না।
লিয়া রুমে চলে যায়।
তিশাঃবাবা ডক্টর বলেছে ওকে হাসিখুশি রাখতে সবসময় নাহলে ওকে বাচানো যাবে না।তাই ওর যাই খুশি তাই করুক তুমি কিছু বলো না আমি হাতজোড় করছি আর আপনি সালেহা বেগম বারবার মায়ের অধিকার নিয়ে লিয়ার সামনে যাবেন না।
তিশা চলে গেলে সালেহা বেগম চোখের পানি মুছে।আনিস রহমান তার কাধে হাত রাখে।
আনিস রহমানঃকষ্ট পেয়োনা ওরা তো এমনি জীবনের এই চোরাবালিতে আমাদের সুখ নেই।
সালেহা বেগমঃআমি কষ্ট পাইনি আমার জন্য আজ আমার মেয়েটা অসুস্থ হল।সকালে ওদের নাস্তা করার কথা বা বললে এমন হতো না।
আনিস রহমানঃওরা একদিন ঠিক তোমাকে মেনে নিবে তোমার ভালবাসা বুজতে পারবে।
সালেহা বেগমঃসে আশায় বসে আছি।
আনিস রহমানের দুইবোন রাতে আসে লিয়াদের বাড়িতে।সালেহা বেগমকে দেখে নাক সিটকায়।
বোনদের দেখে আনিস রহমান এগিয়ে আসে।
আনিস রহমানঃভালো আছিস তোরা আপা?(হাসিমুখে)
বড় ফুপিঃআছি তিশা আর লিয়া কই?
সালেহা বেগমঃওদের রুমে আছে বই পড়ছে?
ছোট ফুপিঃতোমাকে কে জিজ্ঞেস করেছে আমরা আমাদের ভাইকে জিজ্ঞেস করেছি।(মুখ ভেংচি দিয়ে)
তুলিঃমা আমি নদী, নূপুর যাই?
বড় ফুপিঃযাহ
তুলি নদী বড় ফুপির মেয়ে আর নূপুর ছোট ফুপির। সবগুলো মায়ের মত হয়েছে বদমাশের হাড্ডি।
ওরা রুমে গিয়ে দেখে লিয়া বড় টেডিবিয়ারকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে গেছে আর তিশা ওর চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে।ওরা লিয়ার টেডিবিয়ার দেখে সেটা লিয়ার কাছ থেকে কেড়ে নিতে লিয়া জোরে চিৎকার করে কেঁদে ঘুম থেকে উঠে।
তিশাঃতুলি এইটা কি করলি ওর কাঁচা ঘুম ভাঙ্গালি?ওর টেডিবিয়ার ওকে দিয়ে দে।
তুলিঃএটা অনেক সুন্দর এটা আমি নিবো।
লিয়ার চিৎকার শুনে সবাই রুমে আসে।
লিয়াঃআমার টেডিবিয়ার আমাকে দাও।
নদীঃনা আজ থেকে এটা আমাদের কতো দামী টেডিবিয়ার!
বড় ফুপি এসে তুলি নদীকে একটা করে থাপ্পর মারে।
বড় ফুপি টেডিবিয়ার নিয়ে লিয়াকে দেয়।
বড় ফুপিঃমামনি ওদের মাফ করে দাও।ওরা ছোটো বুজেনি।
লিয়াঃবুড়িকে বলে কিনা ছোট এরা তো সবাই আপুনির বড়।(ভেংচি দিয়ে)
তিশাঃফুপি কেমন আছো?
বড় ফুপিঃভালো আছি আমরা তবে লিয়ার কি হয়েছে আজ এভাবে কথা বলছে যে?
তিশাঃফুপি ও অসুস্থ তাই।
ছোট ফুপিঃতোমার নানাভাই এটা কিনে দিয়েছে কি?
তিশাঃহুম আজকে দিয়েছে।
বড় ফুপিঃতোমরা ঘুমাও কালকে কথা হবে।
তুলি আর নদী বাংলা পাঁচের মতো মুখ করে।ওদের টেডিবিয়ারটা খুব পছন্দ হয়েছে।
,
,
পরদিন সকালে তিশা আর লিয়া ঘুম থেকে উঠে তাড়াতাড়ি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।আজ লিয়ার ক্লাসে টেষ্ট পরীক্ষা আছে।দুজনে রিক্সায় চড়ে যাওয়ার পথে পিছন থেকে একটা বড় গাড়ি এসে ধাক্কা মারে। তিশা আর লিয়া রিক্সা থেকে পড়ে গিয়ে হাতে অনেক ব্যথা পায়।
গাড়ি থেকে দুজন সুন্দর ছেলে বের হয়ে আসে।
১ম ছেলেঃআপনাদের লাগেনি তো?
তিশা হাতে কম আঘাত পেয়েছে লিয়ার হাতের অনেকটা কেটে গেছে।
তিশাঃলিয়া তোর হাত থেকে রক্ত ঝরছে অনেক।দাড়া ওরনা দিয়ে বেধে দিচ্ছি।
তিশা ওর ওরনা দিয়ে লিয়ার হাত বেধে দিতে গেলে লিয়ার বারণ করে।
লিয়াঃআপুনি ওরনা দিয়ে আমার হাত বেধে দিলে বখাটে ছেলেরা তোমাকে বাজে কথা বলবে।
১ম ছেলেঃহ্যালো আপনার কোথাও লাগেনিতো?
তিশা উঠে ছেলেটাকে থাপ্পর মারে।
তিশাঃদেখতে পারছেন আপনার জন্য আমার বোনের কি হয়েছে?
২য় ছেলেঃসরি আপু টাকা দিচ্ছি চিকিৎসা করে নিবেন।
তিশা ঐ ছেলেটাকেও থাপ্পর মারে।
তিশাঃওর আজ পরীক্ষা আছে কিভাবে এখন পরীক্ষা দিবে বলতে পারেন?টাকার গরম দেখাবেন না সবাইকে।লিয়া চল।
লিয়া উঠতে গিয়ে ওর চুল খুলে যায়।ওরা অবাক হয়ে দেখে একটা পিচ্চি মেয়ের এতো বড় চুল হয় কিভাবে?
তিশা লিয়াকে নিয়ে বাড়িতে আসে ওরনার একপাশ দিয়ে লিয়ার হাত চেপে ধরেছে।সালেহা বেগম দৌড়ে আসে।
তিশাঃজরি স্যাভলন আর তুলো নিয়ে আয়তো।
সালেহা বেগম দৌড়ে গিয়ে নিয়ে আসে সেটা দেখে বড় ফুপি বলে,
বড় ফুপিঃএবার কি হবে লিয়াকে মারতে মরিচের গুড়ো হয়তো স্যাভলনের সাথে মিশিয়ে এনেছে।
ছোট ফুপিঃসৎ মাতো নিশা কতো ভালো ছিলো কত ভালবাসতো মেয়েদের আর এখন এ কিনা ওদের এভাবে জ্বালায়(ন্যাকা সুরে কাঁদতে কাঁদতে)
তিশা অন্য একটা স্যাভলন নিয়ে আসে।
বড় ফুপিঃসবে তো শুরু সালেহা বলেছিলাম না তোকে সুখে সংসার করতে দিবো না দেখ এবার কি করি?খুব ভালবাসিস না ওদের এবার দেখ এরা কিভাবে তোকে অপমান করে।
চলবে