Mr_Calculus (পর্ব – ৪)

0
599

#Mr_Calculus (পর্ব – ৪)

রাত বাজে দেড়টা। পিতা-পুত্র মিলে ব্রাজিল আর্জেন্টিনার ফুটবল খেলা দেখছে। পিতা ব্রাজিল আর পুত্র আর্জেন্টিনার সাপোর্টার। এরা এক সাথে খেলা দেখে আর পুরো সময় জুড়ে ঝগড়া করে। মাঝে মাঝেই ঝগড়া থামাতে রিফাতের মাকে রেফারি হতে হয়। আজও ঝগড়া লেগে গেছে। মেসি গোল করা মাত্রই রিফাত আনন্দে চিৎকার করতে থাকে আর তখনই ঝগড়া শুরু। রিফাতের মা ঘুমিয়ে গিয়েছিলেন কিন্তু এদের ঝগড়ায় তার ঘুম ভেঙে গেল। তিনি ভয়ানক বিরক্ত হয়ে এসে টিভির রিমোটটা নিয়ে দুম করে টিভি বন্ধ করে দিলেন। পিতা-পুত্র দুজনই অবাক হয়ে বলল-

-এটা কী হল?

-টিভি বন্ধ হল। তারপর রিফাতের দিকে তাকিয়ে বলল- এই তোর না সকালে অফিস? কয়টা বাজে এখন?

রিফাত বলল- কয়টা বাজে সেটা বাদ দাও। আর্জেন্টিনা জিতে যাচ্ছে খেলাটা দেখতে দাও না?

আমানত উল্লাহ তখন বললেন- এহ, “জিতে যাচ্ছে!” টিভি বন্ধ করে বেশ করেছ। চলো ঘুমাতে যাই।

-হেরে যাচ্ছ তো তাই এখন আর দেখতে চাচ্ছ না। যাও যাও। বলে রিফাত নিজেও উঠে গেল।

রিফাত উঠে যেতেই তার মা বললেন- ঘরে গিয়ে সোজা ঘুমিয়ে পড়বে। আমি যেন তোমাকে অনলাইনে না দেখি।

রিফাত তার ঘরে এসে মোবাইলে খেলা অন করল আর সাথে সাথেই তার মা ম্যাসেজ পাঠালেন “ফোনটা রাখো। আর্জেন্টিনা জিতলে সকালে ভালো নাশতা হবে এখন আরামে ঘুমাও।” রিফাত মুচকি হেসে ফোন বন্ধ করে ঘুমিয়ে যায়। রিফাতের মা রেহানা ইসলাম ছেলে-মেয়েদের খুব ভালোবাসেন। তবে রিফাতের প্রতি তার ভালোবাসাটা যেন একটু বেশিই। তার বড় ছেলে রাইয়ান অবশ্য ফুটবল দেখে না। তার পছন্দ ক্রিকেট। বিয়ের আগে সে কোন খেলা দেখা মিস করত না। কিন্তু বিয়ের পর থেকে তার খেলা দেখা প্রায় শূন্যের কোঠায় চলে গেছে। ৯ মাস হয়েছে রাইয়ানের বিয়ে হয়েছে। বিয়ের পর থেকেই সে তার বউ তানিয়া ছাড়া কিছু বোঝে না। রেহানা চেষ্টা করেন তানিয়াকে সব কিছু সহজভাবে শিখিয়ে পড়িয়ে নিতে। তার একমাত্র মেয়ে রিয়ানা সবার ছোট, সে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে রেজাল্টের অপেক্ষা করছে। পরীক্ষা খুব ভালো হয়েছে আশা করছে ফলাফলও ভালো হবে। ফ্যামিলি, পড়াশোনা আর সাজগোজ ছাড়া যার জীবনে আর কোন সাবজেক্ট নেই। এই হল রিফাতের পরিবার।

রিফাত সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে রাতে দেরি করে শোবার কারণে ঘুম ভাংতে দেরি হয়ে গেছে! সে দ্রুত অফিসের জন্য তৈরি হয়ে ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসল। গিয়ে দেখে টেবিলে এক বাটি ময়দা, ৩টা কাঁচা পেঁয়াজ আর এক প্লেট শুকনা মরিচ ভাজা রাখা। অন্য আর কিছুই নেই! সে চিৎকার করে বলল-

-মা, তুমি না বলেছিলে সকালে ভালো নাশতা হবে? এগুলা কী?

পাশ থেকে তার বাবা বলে উঠলেন- কী করবে বাবা… বাড়িতে সরকারি দলের চেয়ে বিরোধী দলের ক্ষমতা বেশি হলে যা হয় আর কি…

-মানে?

-মানে, রাতে তোমার মা লাস্ট মোমেন্টে একসাথে দুইটা গোল খেয়ে ফেলেছে যেটাতে তার বদ হজম হয়ে গেছে। তাই আজকের সকালে সরকারি দলকে শায়েস্তা করতে এই নাশতা।

-কাল আর্জেন্টিনা হেরে গেছে!

-কেন তুমি জানো না? আমি তো ভাবলাম গোল খেয়ে মনের দু:খে ঘুম দিয়েছ বলে আজ ঘুমই ভাংছিল না!

রিফাত বুঝে গেল নাশতার এই হাল কেন? তার মনটাই খারাপ হয়ে গেল।

তার বাবা বললেন- মন খারাপ করে লাভ নেই আমি তো দারোয়ানকে দিয়ে নাশতা আনিয়েছিলাম কিন্তু তোমার মা তাকে ৩টা রাম ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছে। তারপর দাঁড়িয়ে থেকে গতদিনের দুইটা বাসি শক্ত রুটি শুকনা মরিচ ভাজা দিয়ে আমাকে খাইয়েছে! খাওয়ার পর তাকে একটু খুশি খুশি দেখলাম তাই তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে বললাম, “আমার দল জয় লাভের জন্য তুমি যে স্পেশাল নাশতা বানিয়েছ মনে করে সেজন্য I love you.” এটা শুনে ভেবেছিলাম তার রাগ চলে যাবে কিন্তু কেন যেন সে চিড়বিড়িয়ে আরও রেগে গেল!

-মা তোমাকে এই নাশতা খাইয়ে একদম ঠিক করেছে। তোমার মজা লেগেছে তো? খাও, আরও বেশি করে খাও। বলে রিফাত উঠে গেল। আজ অফিসে বসে নাশতা করে নিতে হবে।

আমানত উল্লাহ খান ছেলের রাগ দেখে হাসলেন। তারপর ভাবলেন, সমস্যা নেই তোমাদের দল হারায় তোমরা ট্রিট দিলে। আমার দল জিতেছে আমাকেও তো কিছু না কিছু দিতে হবে… এখন প্রশ্ন হল, কী দেয়া যায়??? এদের মা ছেলের তো মাছ ভীষণ পছন্দ। পাঙ্গাশ মাছের বিরিয়ানি হলে কেমন হয়? কিংবা কাচকি মাছের তেহারি? কেকা আপার রেস্টুরেন্ট থেকে কিছু অর্ডার করতে পারলে ভালো হত। ওখানে নিশ্চই এসব আইটেমের চেয়ে আরও ভালো কিছু আছে? লেট মি চেক…

রিফাত লাঞ্চ করতে যাবে এমন সময় অফিসের পিয়ন এসে একটা প্যাকেট ওর ডেস্কে রেখে বলল-

-স্যার আপনার জন্য খাবার পাঠাইছে।

-কে পাঠিয়েছে?

-আপনের বাবা নাকি পাঠাইছে।

-বাবা পাঠিয়েছে? কই আমাকে তো কিছু বলেনি? দাঁড়াও আগে জিজ্ঞেস করে নেই? রিফাত তার বাবাকে ফোন দিল। আমানত উল্লাহ খান ফোন ধরে বললেন-

-তোমার জন্য লাঞ্চ পাঠিয়েছি, পেয়েছ?

-হ্যাঁ। হঠাৎ খাবার পাঠালে? কী ব্যাপার বলো তো?

-তেমন কিছু না, ওই আমার প্রিয় দল গতকাল এক দলের সাথে খেলে তাদের উড়িয়ে দিল সেই খুশিতে ট্রিট আর কী…

-খোঁচাটা রিফাতের বেশ ভালোভাবেই লাগল। সে “সাথে 7up পাঠাতে তাহলে আরও জমত?” বলে বাবাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন রেখে দিল। আমানত উল্লাহ খানের হাসতে হাসতে চোখে পানি এসে গেল।

রিফাত চোখ মুখ শক্ত করে বসে আছে। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা পিয়ন বলল-

-স্যার খাবার কী রেডি করে দিব?

-এই তুমি কী ব্রাজিল সাপোর্ট করো?

-জি স্যার।

-যাও, এক্ষুণি ১বোতল 7up নিয়ে আসবে। তারপর এই খাবারের সাথে সেটা ভালো করে মিশিয়ে ঘুটা মেরে খাবে। যাও ভাগো এখন।

-পিয়ন কিছুই বুঝল না কী হলো এটা? রিফাতের মেজাজ দেখে এখানে আর দাঁড়িয়ে থাকার সাহসও পেল না, খাবারগুলো নিয়ে চলে গেল।

পরদিন ছুটির দিন, সবাই একসাথে নাশতা করতে বসেছে। আমানত উল্লাহ খান তখন ঘোষণা করলেন, অনেক দিন হল সবাই একসাথে কোথাও বেড়াতে যাই না, তাই আজ বিকেলে সবাই একসাথে বের হচ্ছি।

রিয়ানা বলল, তার পড়া আছে সে যেতে পারবে না। তানিয়া রাইয়ানকে কী যেন ইশারা দিল আর রাইয়ান তখন বলতে শুরু করল, বাবা আমি আর তানিয়া একটু বাইরে যাব তাই আমরা যেতে পারছি না।

আমানত উল্লাহ খান বললেন- আমি এখানে কারো মতামত চাইনি। আমি বলেছি, “সবাই একসাথে বের হচ্ছি” তার মানে সবাই যাচ্ছি। কারো কোন অজুহাত মানা হবে না।

রেহানা বলল- কী ব্যাপার বলো তো? সবাইকে ধরে বেঁধে কোথায় নিয়ে যেতে চাচ্ছ?

যেখানেই যাই গেলে তোমাদের ভালো লাগবে।

রিফাত বলল- আমার একটা কাজ আছে কখন ফ্রি হব বলতে পারছি না। তবে চেষ্টা করব থাকার জন্য। “আমার খাওয়া শেষ, উঠছি” বলে রিফাত উঠে চলে গেল।

রিফাত উঠে যেতেই আমানত উল্লাহ খান বললেন- আমরা কারো বাসায় যাচ্ছি। কী উদ্দেশ্যে যাচ্ছি সেটা অবশ্যই তোমাদের জানা থাকা দরকার। রিফাতের জন্য আমি একটা মেয়ে পছন্দ করেছি। তাকে দেখতে যাচ্ছি। আসলে দেখাদেখি বলতে যে প্রথামিক পর্ব বোঝায় সেটা না। আমরা মোটামুটি সব কিছু কনফার্ম করতে যাচ্ছি।

রেহানাকে আগে থেকে সব কিছু জানিয়ে রেখেছিলেন তাই তিনি শুধু বললেন, রিফাতকে না জানিয়েই নিয়ে যাবে?

-ওকে আর জানাবার প্রয়োজন নেই। একটু সারপ্রাইজ থাকুক।

রাইয়ান আর তানিয়া কিছুই বুঝতে পারছে না। রেহানা তখন তাদের বুঝিয়ে বলল। সব শুনে তানিয়া এক্সাইটেড হয়ে গেল। কারণ সে কখনো এভাবে পাত্রী দেখতে যায়নি। সে তাড়াতাড়ি ভাবতে লাগল কোন শাড়িটা পরবে? রিয়ানাও রাজি হয়ে গেল কারণ ছোট ভাইয়ার বউ দেখা বলে কথা।

বিকেলে সবাই রেডি হচ্ছে যাবার জন্য। রিফাতকে ধরে আনা হয়েছে তার কাজ শেষ হবার আগেই। সে তার ঘরে তৈরি হচ্ছে তখন রাইয়ান এসে বলল- কিরে রেডি?

-এইত হচ্ছি।

-শার্ট না পরে আজ একটা পাঞ্জাবি পর না? আমি তো পাঞ্জাবি পরেছি তুইও পর। ডার্ক ব্লু পাঞ্জাবিতে তোকে বেশ মানায়। ওইটা পর?

-রিফাত তার ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে কিছু বোঝার চেষ্টা করল। বলল- হঠাৎ পাঞ্জাবির পেছনে লাগলে কেন?

-আরে আজ ছুটির দিন তার উপর বাবার পরিচিত কারো বাসায় যাচ্ছি একটা ব্যাপার আছে না?

-রিফাত কিছু বলল না আর। এই বাসার সবার মধ্যে একটা বিষয় খুব চমৎকার সেটা হলো, সবাই সবার মতামত, রুচি, পছন্দকে সম্মান করে। রিফাত পাঞ্জাবি বের করে পরে নিল। এবার ঠিক আছে?

-এদিকে আয়? তারপর রিফাতের চুল আঁচড়ে দিয়ে দুই ভাই একসাথে আয়নায় দাঁড়িয়ে একটা সেল্ফি নিল। “তুই আয় আমি দেখি ওদিকে সবার হয়েছে কিনা?” বলে রাইয়ান ঘর থেকে বের হয়ে গেল।

ছোটবেলা থেকেই রাইয়ানের কিছু বিষয় রিফাতের খুব ভালোলাগে। এই যেমন বিশেষ কোথাও গেলেই রাইয়ান বাসায় থাকলে রিফাতকে কী পরলে ভালো লাগবে সেটা ঠিক করে দিবে, চুল আঁচড়ে দিবে তারপর পকেট থেকে কিছু টাকা বের করে বলবে “এটা রাখ, খরচ করিস।” রিফাত মানা করে না কারণ সে বোঝে, ভাইয়া জানে তার কাছে টাকা আছে তবু দিয়ে দেয় যাতে হুট করে কোন ইমার্জেন্সি হলে সে যেন বিপদে পড়ে না যায়। কিছু দেখে পছন্দ হলে যেন কিনে ফেলতে পারে। সে কারণেই হয়ত কোথাও গেলে সেখান থেকে সবার জন্য কিছু না কিছু নিয়ে আসতে কখনো ভুল করে না রিফাত। এই যে সে এত বড় হয়েছে, চাকরি করছে তবু ভাইয়া এই কাজগুলো করে। ভাইয়া হয়ত রিফাতের বড় হয়ে যাওয়াটা মেনে নিতে পারে না, নয়ত এত বড় ছেলের চুল আঁচড়ে দেয় কোন ভাই? এত ভালো স্যালারি পায়, সিঙ্গেল ছেলে তবু টাকা দেয়? আর রিয়ানা তো দুই ভাইয়ের কলিজার টুকরা। রিয়ানা সারাক্ষণ পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকে, তার মাথা ঠান্ডা রাখার জন্য রাতে নিয়মিত মাথায় তেল দিয়ে চুল বেঁধে দেয় রাইয়ান। তখন দুজনে গুটুর গুটুর অনেক গল্পও করে। ভাইয়ার সব কিছুই রিফাতের ভালো লাগে। তার নিজেরও ইচ্ছে করে এটা করতে কিন্তু ভাইয়ার ভাললাগায় ভাগ বসাতে চায় না বলে করে না। তবে ছোটবেলায় এসব নিয়ে খুব লাগত। ভাইয়ার আদরে ভাগ বসানোয় রিয়ানাকে সে পছন্দ করতে পারত না। কাছে এলেই রিয়ানাকে ধুরুম ধারুম মেরে বসত! যখন থেকে বুঝতে শিখেছে তখন থেকে মারামারিটা বন্ধ হয়েছে তবে সে নিজেকে এখন ব্যস্ত রাখে কী করে রিয়ানার পেছনে লাগা যায় সেই ধান্দায়। দুই ভাই মিলে রিয়ানাকে হাত খরচের টাকা দেয় আর দিন শেষে রিয়ানা সব টাকা জমিয়ে তার প্রিয় দুই ভাইয়ার জন্যই কিছু না কিছু নিয়ে আসে! রিয়ানার কাছে তার ভাই মানেই আল্লাহর দেয়া পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পদ। এদের এমন ভালোবাসা দেখে আল্লাহর কাছে চির কৃতজ্ঞতা জানায় তাদের বাবা মা।

***
কিচ্ছুক্ষণ হল সবাই রওয়ানা দিয়েছে। সবার সাথে রিফাতের বড় চাচা-চাচী আর তাদের বড় ছেলেও এসেছেন। অনেকদিন পর সবাই একসাথে কোথাও যাচ্ছে তাই গাড়িতে বসে সবাই খুব গল্প করছে কিন্তু রিফাতের ভালো লাগছে না কিছুই। কারণ একটু আগেই তাকে জানানো হয়েছে যে, তার জন্য পাত্রী দেখতে যাচ্ছে সবাই! সেটা শুনে রিফাত আকাশ থেকে পড়েছে। তখনই তার পুষ্পর কথা মনে পড়ে। অফিস আর কাজের চক্করে ওর কথা ভুলেই বসেছিল। কিন্তু বাবা তো সব জানে তাহলে কেন এখন এভাবে যাচ্ছে? সে বাবার ফোনে ম্যাসেজ পাঠায় “এসব কী হচ্ছে? তার কী পুষ্পর কথা মনে নেই?” উত্তরে তার বাবা লিখেন-

-“পুষ্পর চিন্তা বাদ দাও। এ বিষয়ে এখন কথা বলবার সময় নয়, পরে সব জানানো হবে তোমাকে।”

রিফাত ম্যাসেজটা পড়েই ড্রাইভারকে বলল- মমিন গাড়ি থামাও, আমি নামব এখানে।

তার বাবা অবাক গলায় বললেন- এখানে নামবে কেন?

-একটা কাজ আছে। তুমিও এসো আমার সাথে।

রাইয়ান বলল- কি হয়েছে? আমি আসব?

“না” বাবা আসো তো, বলে রিফাত নেমে গেল। আমানত উল্লাহ খান তার ভাই বরকত উল্লাহ খানের দিকে তাকালে তিনি বললেন-

-যা, দেখ ছেলে কী বলে? প্রয়োজন হলে ডাকিস।

আমানত উল্লাহ সাহেব মাথা নাড়িয়ে সায় জানিয়ে রিফাতের পেছন পেছন গিয়ে রাস্তার সাথে একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকে পড়ল। ভেতরে গিয়ে নিরিবিলি একটা টেবিলে গিয়ে বসল রিফাত। তার বাবা বিরক্ত গলায় বলল-

-কী হচ্ছে রিফাত? এখানে এসে বসলে কেন? আমরা কোথাও যাচ্ছি, সেখানে আমাদের জন্য অনেকেই অপেক্ষা করছে। রিফাত ঠান্ডা গলায় বলল-

-সব জেনেও কেন তুমি এসব করছ?

-তোমার ভালোর জন্য।

-আর আমার ভালো কোথায় সেটা তুমি জানো।

-জানি। জানি বলেই তোমাকে এভাবে নিয়ে যাচ্ছি। তুমি তোমার অফিসের কাজে এত ব্যস্ত হয়ে গেছ যে, পুষ্পর কথা ভুলে বসে আছ। কাউকে ভুলে যাওয়া মানে এটা তার প্রতি চরম উদাসীনতা। উদাসীনতা সেখানেই জায়গা পায় যেখানে ভালোবাসা নেই। এটা বিশ্বাস করো?

-রিফাত চুপ রইল। বাবা তো ঠিকই বলেছে। গত ২ মাসে পুষ্পের সাথে তার কোন রকম কথা বা যোগাযোগ হয়নি। কিন্তু এটাও তো ঠিক সে পুষ্পকে ভুলে যায়নি!

-তুমি তোমার মনে কী রেখেছ সেটা বাইরে থেকে কে বুঝবে? আর সবচেয়ে বড় কথা…

রিফাত চোখ সরু করে বলল- সবচেয়ে বড় কথা?

-গত সপ্তাহেই জানতে পেরেছি সে এনগেজড হয়ে গেছে! আর সে কারণেই আমি তোমার জন্য এসবের ব্যবস্থা করেছি।

রিফাতের ভেতরে এই মুহূর্তে কী হচ্ছে সেটা রিফাত নিজেও অনুমান করতে পারছে না। সে শুধু বলল, “তুমি কী করে জানলে পুষ্প এনগেজড?”

-তোমার কী মনেহয় এসব খবর চাপা থাকে?

রিফাত প্রচন্ড রকম হতাশ অনুভব করছে… এই মুহূর্তে কোনভাবেই তার পাত্রী দেখতে যাওয়া সম্ভব নয়। সে আস্তে করে বলল- “আমি যাব না তোমাদের সাথে।”

রিফাতের চেহারা দেখে আমানত সাহেবের মায়া লাগল… কিন্তু কিছু করার নেই। রিফাত তার বড় আদরের ছেলে… সে রিফাতকে বলল- তুমি মন খারাপ করছ কেন? মন খারাপের কোন কারণ নেই। যেখানে যাচ্ছি আমি নিশ্চিত তোমার ভালো লাগবে। বাবার উপর তোমার আস্থার মূল্য বরাবরের মতই পাবে তুমি। তাছাড়া একবার ভেবে দেখ, পুষ্পর ভাগ্যটাই আসলে খারাপ…

রিফাতের কোন কিছুই ভালো লাগছে না। বাবার কোন কথাও শুনতে ইচ্ছে হচ্ছে না। কী হয়ে গেল এসব? কিন্তু বাবা এটা কেন বলল যে, “পুষ্পর ভাগ্যটাই খারাপ?”

রিফাতের জিজ্ঞাসু দৃষ্টি দেখে তার বাবা বলল- যার সাথে সে এনগেজড হয়েছে সেও নাকি এক ব্যাংকার তাই বললাম। আচ্ছা ওসব বাদ দাও। ওঠো যেতে হবে। তোমার কোন চিন্তা নেই তোমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কিছুই হবে না। আর আমি তাদের কথা দিয়েছি তাই না গেলে খারাপ দেখাবে। বড় ভাইজান আছেন তার সম্মান রক্ষা করাও তোমার কর্তব্য। চলো তো?

রিফাত তীব্র মন খারাপ আর অনিচ্ছা নিয়ে উঠল। বাবা কথা দিয়েছে, সবাই আনন্দ নিয়ে যাচ্ছে এখানে তার ব্যাগরা বাঁধানোটা অন্যায় হবে।

***
আমানত উল্লাহ খান সবাইকে নিয়ে চলে এসেছেন যথাস্থানে। সুন্দর গোছানো ছিমছাম ড্রইংরুমে বসে আছে সবাই। এবাড়ির আংকেল আন্টি এসে সবার সাথে খুব গল্প করছে। কিন্তু রিফাত এসবের মধ্যে নেই। সে উদাস মুখে বসে আছে। গল্পগুজবের এক পর্যায়ে পাত্রীকে আনা হল। রিফাত সেদিকে তাকিয়েও দেখল না। কিন্তু “স্যার আপনি?” কথাটা শুনে চমকে উঠে সামনে তাকাল। যেটা দেখল সেটাতে তার হার্ট এ্যাটাক হবার পালা… পুষ্প!!! সে ঝট করে বাবার দিকে তাকাল। দেখল সে মুচকি হাসছে তারপর পুষ্পকে বলল-

-কেমন আছ পুষ্প? আমাদের দেখে নিশ্চই খুশি হয়েছ?

-পুষ্প তখন রিফাতের দিকে তাকাল, রিফাতের চেহারায় একই সাথে বিস্ময় আর পুষ্পর সৌন্দর্যে ঘোরলাগা খেলা করছে! ওদিকে পুষ্প কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে গেছে। আর ওদের দুজনকে দেখে বাকি সবাই মুখ টিপে হাসতে লাগল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here