#কন্যা_সর্বনাশী (পর্ব – ১)
দুপুরে আয়েশ করে ঘুম দিয়েছে আবির। হঠাৎ দূরবার্তাযন্ত্র মানে মোবাইল ফোনটা অতি কর্কশ ভাবে বেজে উঠল… সে ঘুম জড়ানো গলায় হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে এক কন্যার মিষ্টি গলায় “হ্যালো” ভেসে এলো… আবির ঘুম ঘুম গলায় বলল-
-কে বলছেন?
-আপনি কি আবির বলছেন?
-হুম…
-আমায় আপনি চিনবেন না। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে আমি আপনার নাম্বার জোগাড় করেছি।
-ও আচ্ছা…
-আপনার সাথে একটু কথা বলতে চাই…
-চেনাজানা না থাকলে আমার সাথে আপনার কী কথা?
-আমাকে চিনতে হবে না, আপনাকে কিছু বলতে চাই সেটা শুনলেই হবে।
-আবির মনে মনে ভাবল, ঘুম থেকে টেনে তুলে এই অপরিচিতা কী বলতে চায়? ঝেড়ে একটা ধমক দিতে পারলে চলত। কিন্তু মিষ্টি গলার একটা মেয়ে তার উপর এতো কাঠখড় পুড়িয়ে নাম্বার জোগাড় করেছে ধমক দেয়াটা পাপের পর্যায়ে চলে যাবে! তাই ঝেড়ে কিছু বলাও যাচ্ছে না!
-আপনি শুনছেন? হ্যালো???
-শুনছি… বলুন… ঘুমের ঘোরে আছি, ঠিক কতক্ষণ শুনতে পারব জানি না।
-দেখুন আমি আপনার খুব বেশি সময় নেব না। সরাসরি বলছি- “আপনাকে আমার ভালো লাগে।।”
-এক ঝটকায় আবিরের ঘুম সাইবেরিয়া উড়ে চলে গেল! বলে কি এই মেয়ে!!!! বলল- কি বললেন আপনি?
-আমার মনেহয় আপনি শুনেছেন আমি কী বলেছি।
-আপনি কি এমন আৎকা পিলে চমকানো টাইপ কথা বলে বলে লোকের দুপুরের ঘুম ভাঙিয়ে বেড়ান?
-হা হা হা…. না, শুধু আপনার ঘুম ভাঙাবার ইচ্ছে আমার।
-আমার ঘুমের অপরাধটা কী?
-একটু আগে যেটা বললাম?
-আপনি আমায় চেনেন কীভাবে? আমার ফেবুতে এ্যাড নেই তো?
-না।
-তাহলে?
-সে অন্য কোনদিন, অন্য কোন সময়ে বলব।
-হুম… আপনার কথা কী শেষ হয়েছে?
-ফোন রাখতে চাইছেন?
-আপনি কী চাইছেন?
-মধ্যদুপুরে অল্প-স্বল্প গল্প।
-অল্প-সল্প গল্প মধ্যরাতে হয়। মধ্যদুপুর ঘুমের জন্য। দুপুরের ঘুম মানে ভালোবাসা, সেখানে কারো হস্তক্ষেপ এলাউ না।
অপরিচিতা মুচকি হেসে বলল- আচ্ছা, আপনি ঘুম বিলাস করুন আমি যাই, বাই।
-জ্বী, বিদায় হন বলে আবির ফোন রেখে ঘুমে তলিয়ে গেল।
ঘুম ভাঙার পর দুপুরের ফোনালাপ আবির ভুলে গেল। সারা সন্ধ্যা বাইরে কাটিয়ে বাসায় ফিরে রাতে বিছানায় যেতেই অপরিচিতার কথা মনে পড়ে গেল। আশ্চর্য, মেয়েটা তো আর ফোন করল না! ঘুম ভাঙিয়ে গল্প করতে চাইল অথচ তারপর আর ফোন করবে না এমনটা হয় নাকি??? নাহ, এই মেয়েকে দিয়ে তো কিচ্ছু হবে না! আচ্ছা সে কী একটা ফোন করে খোঁজ নেবে? একটা মেয়ে এত কষ্ট করে নাম্বার জোগাড় করে প্রেমালাপ করতে চাইল আর মাঝ রাতে আমি তাকে ফোন করে “বাবু কী করো?” জাতীয় প্রশ্ন করব না এমনটা কী জাতি মেনে নেবে? জাতির কাছে নিজেকে দায়বদ্ধ রাখাটা কি উচিৎ হবে?
এত সব কঠিন প্রশ্নের চাপ নিয়ে তো ঘুমানো যায় না তাই শুধুমাত্র জাতির কাছে দায়বদ্ধতা থেকে এই দুপুর রাতে অপরিচিতাকে ফোন করল আবির…
কন্যা ফোন ধরে গভীর ঘুম ঘুম গলায় বলল- হ্যালো…
-হ্যালো, ধানমন্ডি থানা থেকে অসি কামরুজ্জামান বলছি।
-জি, বলুন? (রীতিমত কনফিউজড, সম্ভবত ঘুমের কারণে নাম্বারটা খেয়াল করেনি)
-আপনার বিরুদ্ধে আজ থানায় এক অভিযোগ দায়ের হয়েছে। আপনি নাকি ইনোসেন্ট সব ছেলেদের ক্রাশ বলে বলে দুপুরের ঘুম ডাকাতি করে বেড়ান? সেই বিষয়ে প্রাথমিক তদন্ত করতে আপনাকে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে ঠিকঠাক উত্তর দেবেন।
-ওহ আপনি… ভয় পাইয়ে দিয়েছেন!
-দেখুন এটা থানা, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবের সাথে গালগল্প করার জায়গা নয়। তাই কাইন্ডলি আমার প্রশ্নের সঠিক জবাব দিন।
-হুম… আমি না হয় আপনার দুপুরের ঘুম ডাকাতি করেছিলাম আপনি এখন কী করছেন?
-তদন্ত করছি।
-তাই? তো বলুন তদন্তের স্বার্থে আমি আপনাকে কী সাহায্য করতে পারি?
-আপনার নাম, ঠিকানা, বয়স, পড়াশোনা, কর্ম, বাবা কী করেন কত ভাইবোন, কোন রঙ পছন্দ, কোন ব্রান্ডের ফুচকা খান এবং এ পর্যন্ত ঠিক কতজনকে দুপুরের ঘুম ভাঙিয়ে “ক্রাশ” বলেছেন একে একে সব বলবেন। আমি নোট নিচ্ছি।
-হা হা হা… তদন্ত করছেন নাকি আমার বায়োডাটা চাইছেন, কোনটা?
-আপনি শান্তিপূর্ণ তদন্তে বাধা দিচ্ছেন। কোন প্রশ্ন হবে না শুধু উত্তর বলুন।
-জ্বী বলুন, কী বলব?
-আপনার নাম দিয়ে শুরু করুন।
-আমার নাম নাকি বাবার নাম আগে বলব?
-আপনারটা আগে বলুন। প্রয়োজনে আপনার বাবার নামও আসবে।
-পুরো নাম বলব?
-হুম।
-ডাকনাম বলব না?
-সেটাও বলবেন।
-ডাকনাম তো অনেক। সবাই আলাদা আলাদা নামে ডাকে। সবগুলাই কী বলব?
-সবাই যেটা বলে সেটা বলুন।
-বন্ধুরা যেগুলা বলে সেগুলাও কী বলব?
-বলুন।
-স্কুলের বন্ধুরা যে নামে ডকত শুধু সেগুলা বলব নাকি কলেজেরটা সহ বলব?
-মেজাজ আর ধরে রাখতে পারল না আবির। বলল- এই মেয়ে তুমি দেখি বিরাট ইরিটেটেড একটা! এইভাবে তুমি প্রেম করবা??? তোমাকে দিয়ে তো এসব জীবনেও হবে না!
-হা হা হা…
-এই মেয়ের হাসি তো পুরাই খুনে! হাসতে হাসতে স্মুদলি আমাকে মেরে ফেলবে! একটা ব্যবস্থা নিতে হবে। বলল- শুনুন, এই মুহূর্তে আপনার বিরুদ্ধে আরও একটা চার্জ গঠন করা হলো।
-আর সেটা কি?
-কিলার মার্কা হাসি দিয়ে সহজ সরল ছেলেদের খুন করে ফেলার অভিযোগে।
-ভাগ্যিস আপনি আমায় দেখেননি! তাহলে তো অভিযোগ নামা লিখতে লিখতে পুরো একটা উপন্যাস লিখে ফেলতেন।
-আপনি কিন্তু আমার মাইন্ড ঘোরাবার চেষ্টা করছেন… তদন্তের কাজে পরোক্ষভাবে বাধা দেয়ায় আপনার বিরুদ্ধে অন্য চার্জ গঠন করা হবে। তাই আজকের মতন তদন্তের কাজ স্থগিত রাখা হল। আপনার বিরুদ্ধে খুব শীঘ্রই গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করছি।
-শুধু গ্রেফতার? রিমান্ড হবে না?
-রিমান্ড কিন্তু একা বন্ধ ঘরে হয়।
-সমস্যা নেই!
-“বিদায়” বলে আবির ফোন রেখে ভাবতে লাগল- মেয়েটা বেশিই স্মার্ট, এর সাথে কিছু করতে গেলে লাইফ হেল হবার সম্ভাবনা পুরোপুরি! তাই এর সাথে টাইম পাস করতে যাওয়াটা বোকামি হবে। ইগনোর করতে হবে, ইগনোর। রোজ এমন কত ফোনই তো আসে, সব ধরলে চলবে নাকি?
ক্যাম্পাসের সবচাইতে ড্যাশিং ছেলে আবির। সানগ্লাস চোখে R15 বাইক নিয়ে যখন রাস্তায় নামে মেয়েরা ২য় বার ঘুরে তাকাতে বাধ্য হয়। তার সুদর্শন চেহারা আর দুষ্টু মিষ্টি কথার জালে যে কোনো মেয়ে খুব সহজেই আটকে যায়। তাই তার জীবনে বেহিসেবি মেয়ের আনাগোনা হয়েছে। সেই সাথে মেয়ে পটাবার কনফিডেন্স লেভেলটাও তার ক্রমাগত বেড়েছে। স্বভাবে তাই সে অনেকটাই উড়নচণ্ডী। এই অপরিচিতাও তেমনই এক ফসল। আবিরের কাছে জীবনের মানেটা খুব ছোট্ট “হেসে খেলে পার করে দেয়া”। রঙিন চশমায় দেখা রঙিন ভুবনের আবির কখনো ভাবেনি জীবন বিষয়ক তার এই থিউরিটা একদিন ভীষণ ভাবে ভুল প্রমাণিত হবে!
ফার্স্ট ইয়ারের একটা মেয়েকে দেখে তার বুকে ধাক্কা লাগে! মেয়েটার কড়া ব্যক্তিত্ব তাকে আকর্ষণ করে। তাদের বিভাগের নবীন বরণ অনুষ্ঠানে যেখানে সব মেয়েরাই ঝলমলে পোশাক আর মেকাপের ভাড়ে মুখের আদল বদলে হাজির হয়েছে মেয়েটা সেখানে শুধুমাত্র চোখে কাজল আর গাঢ় নীল রঙের শাড়ি পরে এসেছে। যেন রঙের মুখোশ পরা শহরে এক মায়াবী কন্যার উপস্থিতি। আবির তার বন্ধু দিপু আর নিরবের সাথেই তাদের ডিপার্টমেন্টের বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল। মেয়েটাকে দেখে তার বন্ধুরাও তার মত ভীমরি খেয়েছে। দিপু বলল-
-দোস্ত… আমার তো বুকে ব্যথা করছেরে… তারপর ঠোঁট গোল করে শিশ বাজিয়ে কুৎসিত একটা মন্তব্য করে গান ধরল- ” রূপ সাগরে ঝলক মারিয়া এ কী রূপ দেখালি মোরে…”
কুৎসিত শব্দটা দুর্ভাগ্যবশত মেয়েটার কানে চলে যায়। তার ভয়ানক রকম বাজে লাগল ব্যাপারটা। সে তখন হাঁটা থামিয়ে তাদের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল- গান, শিশ বাজানো এসব কী আমাকে উদ্দেশ্য করে?
-কেন?
মেয়েটা কঠিন মুখ করে বলল- “হ্যাঁ” অথবা “না” শব্দে জবাব দিন?
-যদি বলি “হ্যাঁ”?
মেয়েটা এক মুহূর্ত দেরি না করে তার গালে সপাটে চড় মেরে দিল!
ঘটনার আকস্মিকতায় দিপু আর অন্যরা হকচকিয়ে গেল। পুরো ৩০ সেকেন্ড পর দিপু চোয়াল শক্ত করে বলল- এটা কী হল?
নিরব বলল- “এই তুমি নিউ ফার্স্ট ইয়ার না? সিনিয়রদের সাথে এমন আচরণ! তোমার সাহস তো কম নয়?
জ্বী ঠিক ধরেছেন। আমার সাহস একটু বেশিই। আর সিনিয়র ভাই যদি জুনিয়র বোনকে দেখে অশোভন আচরণ করেন তখন তো পাল্টা জবাব তেমন করেই পেতে হবে। নীলা নাম আমার। আর “নীলা সবার সয় না”। তারপর সে গটগট করে চলে যায়। দিপু বলল- ” সুন্দরীর তেজ একটু বেশিই মনে হচ্ছে। তেজ দেখাচ্ছি…” বলে দিপু নীলার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল কিন্তু আবির সেটা শুনে বলল-
দিপু দাঁড়া, কাজটা ঠিক করিসনি। সব সময় অভদ্র ভাষা আর ব্যবহার সব জায়গায় চলে না। মেয়েটা আর ১০টা মেয়ের মত নয়। তুই ওকে আর কিছুই বলবি না। কিছুই না মানে কিছুই না।
-তাই নাকি? তোর কিছু হয় নাকি ও? এত গায়ে লাগছে কেন?
-এখন পর্যন্ত নীলা আমার কিছুই না তবে তোরা একে আর বিরক্ত করবি না এটাই ফাইনাল। যা হয়েছে সব ভুলে যা।
-এত বড় অপমান শ্রেফ ভুলে যাব?
-হ্যাঁ যাবি। আমি ভুলতে বলেছি সেটাই যথেষ্ট।
দিপু আর নিরব ওর দিকে প্রশ্নভরা চোখে তাকিয়ে রইল। এ কোন আবিরকে দেখছে ওরা? মেয়েদের সাথে তার সম্পর্ক সব সময় অন্য লেভেলের তাই বলে বন্ধুর অপমান দেখবে না! ওরা আবিরের দিকে তাকিয়ে রইল… চোখের ভাষায় আবিরকে পড়ার চেষ্টা করল। আর আবির ভাবলেশহীন ভাবে অন্য দিকে তাকিয়ে রইল। তার মনে কী অন্য কিছু চলছে?
আবির নীলাকে কিছুদিন ফলো করে। তারপর তাকে কিছু বিশেষণে দাঁড় করায়, “মেয়েটা মিশুক, বন্ধুবাৎসল্য, ব্যক্তিত্ববান তবে ভীষণ ডাকাবুকো টাইপ।” এমন মেয়েই তো আবিরের চাই। নীলাকে যত দেখছে তত ওর সাথে কথা বলার ইচ্ছেটা প্রবল হচ্ছে।
সেদিন ক্যাম্পাসের সামনের মাঠের পাশ দিয়ে নীলা বই হাতে আনমনে দ্রুত হেঁটে যাচ্ছিল। উদ্দেশ্য হয়ত মাঠের পাশে বিশাল মেহগনি গাছের নিচে বসা। আবির সোজা তার দিকে হেঁটে গেল… তারপর ইচ্ছে করে নীলাকে ধাক্কা দেয়। হুট করে আসা ধাক্কাটা নীলা সামলাতে না পেরে পড়ে যাচ্ছিল… আবির ওর হাতটা ধরে ফেলে বলল- সরি…আপনার এত পড়ে যাবার অভ্যাস কেন?
নীলা রেগে বলল- ও হ্যালো, পড়ে যাবার অভ্যেস আমার নেই বরং লোকের ধাক্কা দেয়াটাই অভ্যেস মনে হচ্ছে। কেন করলেন এটা?
-আপনি এখনো আমার হাত ধরে রেখেছেন…যেভাবে আমার হাত ধরে রেখেছেন তাতে একটা গান মনে পড়ে গেল…
“তুমি ইচ্ছে হলেই ধরতে পারো আমার হাতের আঙুল।”
নীলা নিজেকে সামলে নিয়ে হাত ছেড়ে দিয়ে বলল- “আপনার মত মানুষের হাতে করোনা ভাইরাস থাকে। যা ধরা তো দূরে থাক তাকিয়ে দেখারও ইচ্ছে নেই।”
-ভাইরাস তো আমার হাতে আছেই তবে সেটা “করোনা” নয় “ভালোবাসা” নামক কিউট ভাইরাস।
-“কিউট”!!! ওসব মেয়ে পটানো ডায়লগ আমার কাছে ঝাড়বেন না। সব জায়গায় সব খাটে না।
-কী খাটবে আর কী খাটবে না সে আমার উপরই ছেড়ে দিন। ওসব আমি বুঝে নেব।
-আপনার কনফিডেন্স দেখে আমার…
-প্রেম এসে যাচ্ছে???
-আপনার মাথায় কী সমস্যা আছে?
-মাথা তো এই মুহুর্তে আপনি দখলদারি নিয়ে ফেলেছেন, সমস্যা না হয়ে উপায় কী?
-তাহলে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখাটাই আপনার জন্য মঙ্গলজনক হবে।
-আমি কখন আপনার কোলে উঠে বসেছি!!!
-ইচ্ছে তো সেটাই দেখছি।
-আপনার মন চাইছে সেটা। আমি তো অন্য কিছু ভাবছি…
নীলা চোখ সরু করে বলল- কী ভাবছেন?
-বাহ্ আমাকে জানার আগ্রহ তৈরি হচ্ছে… খুবই ভালো কথা।
-পাগল নাকি আপনি?
-আমি অনেক কিছুর জন্যই পাগল…
-তাহলে পাগলা গারদে যান? এখানে কী চাই?
-প্রেম বড়ো অবুঝ…
-দেখুন মি. অবুঝ, আপনার জন্য আমার কিছু করার আছে বলে মনে করছি না। তাই দয়া করে এখান থেকে বিদায় হন।
-বিদায় হতে পারছি না।
-কেন?
-“মন যারে চায় তারে প্রেম শেখাবো, ছল করে বল করে পোষ মানাবো”।।
-আপনি ভাগবেন নাকি আমি…
-আপনি কি শুধু ভাগ অংক-ই শিখেছেন? গুণ আর যোগ নামেও অংক আছে সেটা শেখেননি?
-বিয়োগ বলেও অংক আছে আমি সেটা ভালো পারি।
-যে অংক সুন্দর জীবনের হিসেবে লাগে না আপনি দেখছি সেই সব ভুলভাল নিয়ম গুলোই শিখেছেন!
নীলা চুপ করে আবিরের দিকে তাকিয়ে মেজাজ সংবরনের চেষ্টা করতে লাগল…
-কই কিছু বলুন?
-আপনি অযথা যন্ত্রণা করছেন কেন?
-আপনি তাহলে যন্ত্রণা পাচ্ছেন? যন্ত্রণা থেকেও প্রেম হয় জানেন? আপনি আমায় যন্ত্রণা দিয়ে ফেলেছেন এখন পাল্টা যন্ত্রণা তো আপনাকে পেতেই হবে।
-সেদিন আপনার বন্ধুকেই তো চড় মেরেছিলাম, রাইট?
-এই তো হচ্ছে…
-কি হচ্ছে?
-আমাকে মারার ইচ্ছে হচ্ছে। মারার ইচ্ছে হচ্ছে মানে আমাকে ছোঁয়ার ইচ্ছে হচ্ছে, আর ছোঁয়ার ইচ্ছে হচ্ছে মানে আপনার মনে প্রেম আসি আসি করছে।
-মেয়েদের সাথে এভাবে বলাটা আপনার অভ্যেস না কি মাথার স্ক্রু ঢিলা?
-আপনাকে দেখার পর থেকে কখন কোনটা হচ্ছে বুঝতেই তো পারছি না!
-ওফফ…
-এত কিউট করে “ওফফফ” বলবেন না তো, কলিজায় গিয়ে লাগে!
-আপনার কলিজায় আমি আগুন দিবো।
-সেই আগুনে আমার জীবন আলোকিত হয়ে যাবে।
-পুড়ে ছাই হয়ে যাবেন।
-অলরেডি হচ্ছি।
-পুড়তে বলেছে কে?
-আমার মন বলেছে।
-আপনি এত বেহায়া কেন?
-“বেহায়া” হওয়াটাও প্রেমের একটা অংশ। আপনার জন্য কোন অংশ বাদ থাকবে কেন?
নীলার ফোন বেজে উঠল সেই মুহূর্তে। সে আর কিছু না বলে চলে যেতে চাইল। মেহগনি গাছের দিকে না গিয়ে ক্যাম্পাসের গেটের দিকে পা বাড়াল…
আবির হাত বাড়িয়ে ওকে থামিয়ে বলল- ও হ্যালো… এমন কঠিন পদার্থের মতন বিদায় দিচ্ছেন! পদার্থের আরো দুটো ধরণ আছে পড়েন নাই নাকি?
-না, পড়ি নাই।
-তাহলে আর কি আসুন আমিই শিখিয়ে নিচ্ছি… তরল পদার্থের মতো বিদায় হচ্ছে- জড়িয়ে ধরে কানে কানে “দেখা হবে” বলা। আর বায়বীয় পদার্থের নিয়মে বিদায় হচ্ছে- ফ্লাইং কিস দিয়ে মিষ্টি হাসির সাথে হাত নাড়া। এখন আপনিই ঠিক করুন কোন সূত্রে বিদায় হবেন?
-কিন্তু আমার হাত কঠিন পদার্থের মত আপনার গালের উপর খুব জোরে তালি বাজাতে চাইছে, বাজাব?
-আবার???
-কী আবার?
-আমাকে ছোঁয়ার বাহানা?
-ছোঁয়ার বাহানা তো অবশ্যই নয় তবে আপনি বলে বলে চড় খাওয়ার বাহানা ঠিকই করছেন।
-তার মানে আমি একদিন সফল হব সেই ইশারা দিচ্ছেন?
-স্বপ্ন দেখতে থাকুন।
-জ্বী, আপনিও দেখুন। তবে প্লিজ স্বপ্নে আর হাত উঁচিয়ে তাড়া করবেন না! এতো দৌড়ে আমি রীতিমত টায়ার্ড!
-আপনি আমায় নিয়ে স্বপ্নও দেখেন!
-দেখি না আবার? স্বপ্নে আমরা কী কী সব করি বলব?
-না।
-শুনে দেখুন না?
-অসম্ভব, বলে নীলা পা বাড়াল।
-আচ্ছা আপনাকে দেখতে ইচ্ছে হলে কি করব সেটা তো বলে যান?
-কেন? স্বপ্নে দেখবেন।
-আপনি তাহলে চাইছেন আমার স্বপ্নে আসতে?
নীলা শুধু কটমটে চোখে তাকাল একবার তারপর হাঁটতে লাগল। কোন জবাব দিলেই কথা বাড়বে, সেটা সে আর চাইছে না।
-হা হা হা… আমি কিন্তু ৩য় পদার্থের বিদায় দিলাম…
-নীলা আবিরের দিকে আর না তাকিয়ে চলে গেল।
নীলার চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে আবির ভাবল- কেন যেন এর জন্য মনে অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে… যতই দেখছি ততই অনুভূতিটা জোরালো হচ্ছে! কিন্তু একে মানানো এতটা সহজ হবে না। ভীষণ আলাদা টাইপ… অবশ্য আমার জন্য এমন স্পেশাল কিছুই চাই। নীলা ততক্ষণে ফোনে কথা বলতে বলতে গেটের কাছে চলে যায়। আবির দেখল এক পুলিশ সেখানে দাঁড়িয়ে আছে আর নীলা তার কাছেই গিয়ে দাঁড়ালো। একবার আবিরের দিকে তাকাল তারপর হাত নেড়ে নেড়ে কি যেন বলতে লাগল। একবার এদিকেও হাত তুলে দেখাল। আবিরের ভ্রু কুঁচকে গেল… পুলিশ!!! নীলা ওর নামে নালিশ করছে নাকি??? এত ছোটখাটো বিষয়ে কেউ পুলিশ ডাকে? মেয়েটা তো ডেঞ্জারাস!
চলবে…