পতিতা পল্লী
২য় পর্ব
কিন্তু পরদিন সকালে খেয়াল করলাম আমার শরীরটা জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে।সারা শরীরে ক্ষত হয়ে গেছে।তলপেটে প্রচুর ব্যাথা হচ্ছে।উঠতে পারছি না ঠিক করে।কোন রকমে উঠে দেখি বদমাইশ লোকটা আমার জন্য খাবার নিয়ে এসেছে আর আমাকে বলল
—হারামজাদী এই নে খা।খেয়ে রেডি হ।কাস্টমার আসবে দুইটা। খুশি করতে না পারলে খবর আছে।বেশি চিল্লাবি তো মাইরা তোরে ফাটাইয়া দিমু।
—দয়াকরে আপনি আর আমাকে কষ্ট দিবেন না।আমি আপনার পায়ে পড়ি।আমার শরীর ভালো না।আমি অসুস্থ এতটা কষ্ট আমাকে দিবেন না।আপনার মেয়ে হলে কি পারতেন এমন করতে।আপনি আমার বাবার বয়সী। এরকম করবেন না।
—পুরুষ মানুষ, পুরুষ মানুষেই হয় রে।ওরা বাবা,স্বামী কিচ্ছু হয় না।তাড়াতড়ি রেডি হ।
পেটে তখন প্রচন্ড ক্ষুদা ছিল।কোন রকমে খেয়ে নিলাম।তার কিছুক্ষণ পর একের পর এক লোক আসতে থাকল আর আমার ক্ষত শরীরটাকে আরও খুবলে খুবলে খেল।সেদিন মনে হয়েছিল আমি একটা তাজা মংসপিন্ড যেটাকে খাওয়ার জন্য অনেক গুলা হায়েনা প্রতিযোগিতা লেগেছে।সেদিন আমার চিৎকার কেউ শোনে নি।ব্যাথায় যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছিলাম কেউ শাত্ননা দেয় নি।কখন যে অসুস্থ হলাম খেয়াল নেই।কোন রকমে কয়েকটা ব্যাথা কমার ঔষধ এনে দিয়েছিল তা খেয়ে একটু সুস্থ হলাম।
কিন্তু অসহ্য যন্ত্রণা সহ্যের পর লোকটা কয়েকদিন পর আমাকে একটা গলিতে নিয়ে গেল।খেয়াল করলাম সেখানে আমার মত আরও অনেক মেয়ে সেজেগুজে দাড়িঁয়ে আছে।একে একে পুরুষ আসছে যাকে পাচ্ছে তাকে নিয়ে রুমে ডুকছে।বুঝতে আর বাকি রইল না এটা পতিতা পল্লী।আমাকে নিয়ে গেলো একটা মহিলার কাছে মহিলার নাম ডায়না।মহিলাটা আমার দিকে তাকিয়ে দেখে লোকটাকে বলল
—হালা এ মালরে এ হাল করলি কেন।এত চাপ দিছিস কেন এ মাল রে।সারা শরীরে দাগ করে ফেলছিস এর পিছনে এখন আমাকে টাকা ভাঙ্গতে হবে।এ মালের জন্য ৩০ হাজারের উপর এক টাকাও দিতে পারুম না।মালডার কি হাল করছিস দেখছিস?
—ডায়না জি।সবে মাত্র ১৪ বছর বয়স।আর ৫ হাজার বাড়াইয়া দেন।ঠকবেন না নিলে আর ভালো সার্ভিস দেয়।সেই মাল।
অবশেষে দর কষাকষি করে আমাকে ৩২ হাজার টাকায় বিক্রি করা হল।আমি ডায়না আন্টির পায়ে আচরে পড়লাম আমাকে ছেড়ে দিতে, দেয় নি।কেন দিবেন।উনি তো পতিতা পল্লীর সর্দারনী।আমাকে এত টাকা দিয়ে কিনেছেন ব্যাবস্যার জন্য।আমার দায়িত্ব দেওয়া হল সোবাহ কে যাতে আমাকে সব বুঝিয়ে দেওয়া হয়।সোবাহ আমাকে সব বুঝিয়ে দিল।কিভাবে কাস্টমারকে খুশি করতে হয়।সোবাহ এর পায়ে ধরলাম আমাকে যেন ছেড়ে দেওয়া হয়।কিন্তু সে ও তো এক ঘাটের মাঝি।আমারি মত ভুক্তভোগী।সে তো প্রেম করে এক ছেলেকে বিশ্বাস করে এসেছিল।আর সে ছেলে সরলতার সুযোগ নিয়ে তাকে বিক্রি করে চলে গেছে।
এভাবেই অসহনীয় যন্ত্রণাগুলো মেনে নিতে হয়েছিল।দেখতে দেখতে ২ টা বছর পার হয়ে গেল।আমি ডালিয়া থেকে হয়ে গেলাম ডেইজি।কাস্টমারকে কিভাবে খুশি করে টাকা বাড়িয়ে নিতে হয় সব শিখে গেছি।সে সাথে জেনে গিয়েছি পুরুষ মানুষের রূপ গুলা।সত্যিই পুরুষ মানুষ, পুরুষ মানুষেই হয় ওরা বাবা, ভাই কিচ্ছু হয় না।এখানে আসে না এমন কোন স্তরের লোক বাকি নেই।উচু নিচু সব স্তরের লোকেই এখানে আসে।এখানের মেয়ে গুলােকে তারা মংসপিন্ড ভাবে আর খুবলে খুবলে খায়।
এখন আমি এখানের সবচেয়ে ফেমাস।বাবুরা তো আমার জন্য পাগল।কথাগুলো বলে ডালিয়া হসছিল।আর আমি তার মুখ থেকে কথাগুলো শোনে থমকে গিয়েছিলাম।কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম।মানুষের জীবনে এত কষ্ট ও থাকতে পারে জানা ছিলনা।ডালিয়া ওরফে ডেইজি মেয়েটা কথা গুলো বলে খল খল করে হাসলেও তার হাসির পিছনে একটা চাপা কষ্ট ছিল তা ঠিকেই বুঝতে পেরেছিলাম।
কিন্তু এর কিছুদিন পরেই ডালিয়ার জীবনে একটা ঘটনা ঘটে।ডালিয়ার পেটে বাচ্চা আসে।সাধারণত পতিতাদের বাচ্চাগুলোকে মাঝে মাঝে রেখে দেওয়া হয় মেয়ে জন্মানোর আশায়।ডালিয়ার বাচ্চাটাও তার অনুরোধে ডায়না রাখতে দেয়।কিন্তু ডালিয়ার এর মধ্যে কাজ বন্ধ।তাই সবকিছুতেই জামেলা হচ্ছিল।তার উপর তিন মাসের বাচ্চা পেটে।এর মধ্যে ও কয়েকটা কাস্টমারকে তার খুশি করতে হয়েছে।সেদিন খানিকটা অসুস্থ ছিল।তাই ডায়না তাকে কাজ করতে নিষেধ করে।কিন্তু হুট করে ডায়নার কাছে একটা ভদ্রলোক আসে আর ভদ্রলোকের নাম অরণ্য।অরণ্যকে নিয়ে আসে তারেই পরিচিত একজন।অরণ্যকে দেখে ডায়না বলল
—বাবু আসুন আপনি মনে হয় এখানে নতুন।বলুন কোন মাল পছন্দ আপনার।পছন্দ হলে আমাকে জানান।
অরণ্য চারপাশ ঘুরে হঠাৎ রুমের এক কোণে বসা ডালিয়াকে দেখতে পেল।অরণ্য ডালিয়াকে ইঙ্গিত করে বলল
—আমার ঐ মেয়েটাকে চাই।
—ডেইজিকে?কিন্তু বাবু ঐ মেয়েটা তো পোয়াতি আর অসুস্থ।আজকে ওকে ছেড়ে দিন।
—যত টাকা লাগে ততই দিব আমার ঐ মেয়েটাকেই চাই।আর ওকে আমার সাথে নিয়ে যাব।এক লাখ দুই লাখ কত লাগবে বলুন
ডায়না এত টাকার কথা শোনে চমকে গেল।।মনে মনে ভাবল।নিয়ে যা ইচ্ছা করুক। পোয়াতি মেয়ে এমনেই ইনকাম কম।এর থেকে কিছুদিন এর জন্য বেচে দেই এটাই ভালো হবে।
–আচ্ছা বাবু তিন লাখ দিলেই চলবে।তবে এক বছরের বেশি রাখতে পারবেন না।আর জেনে শোনে পোয়াতি নিচ্ছেন সার্ভিস খারাপ দিলে বদনাম করতে পারবেন না।
—সে নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না।এ নিন চেক।আর আমাকে আমার মাল বুঝিয়ে দিন।
ডায়না ডালিয়াকে এনে অরণ্যের হাতে তুলে দিল।আর ডালিয়াকে বলল বাবু তোকে ১ বছরের জন্য কিনেছে।বাবুর বাড়িতেই থাকবি।আর বাবু যা বলে তাই করবি
।তুই পোয়াতি এটা জেনেই বাবু তোকে নিয়েছে।বাবুকে খুশি রাখবি।এ বলে অরণ্যের হাতে ডালিয়াকে তুলে দিল।
অরণ্য ডালিয়াকে নিয়ে বাসায় গেল।ডালিয়া বুঝতে পারল না তার মত পোয়াতিকে কিনে লোকটার কি লাভ।ডালিয়া ঘরে ডোকার পর খেয়াল করল..
লেখিকা-#শারমিন আঁচল নিপা