পতিতা পল্লী
৪র্থ পর্ব
পরদিন সকালে ডালিয়া অরণ্যকে দেখে চমকে গেল কারণ ডালিয়া ঘুম থেকে উঠে খেয়াল করল অরণ্য ডালিয়ার পাশে বসে আছে।আচমকা ডালিয়া অরণ্যকে দেখে যেন তার ঘুমের ঘোর কেটে গেল।ডালিয়া বেশ চমকে গেল অরণ্যকে এভাবে দেখে।বুঝতে পারল না অরণ্যবাবু এভাবে বসে আছে কেন?কিছুটা বিস্মিত আর কাঁপা কাঁপা সুরে ডালিয়া অরণ্যকে বলল
—অরণ্যবাবু আপনি এখানে?কিছু লাগবে?আমি কি কোন ভুল করেছি?
অরণ্য এবার একরাশ হাসি দিয়ে বলল
—নাহ ডেইজি তুৃমি কোন ভুল কর নি।আমি তো এসেছি তোমার জন্য নাস্তা নিয়ে।কালকে রাতে কিছু খাও নি।এভাবে না খেয়ে থাকলে যে তোমার শরীর খারাপ করবে।এই নাও ব্রাশ, পেস্ট লাগানো আছে তাড়াতাড়ি দাঁত ব্রাশ করে আস।আর এসে খাও।খেয়ে রেডি হও আমরা একটু বাইরে ঘুরতে যাব।
অরণ্যের এরকম ব্যাবহার দেখে ডালিয়া কিছুটা আশ্চর্য হল।কাঁপা কাঁপা হাতে ব্রাশটা নিয়ে বাথরুমে গেল।আশে পাশে খেয়াল করল কোথাও সবানের পানি ফেলে রেখেছে কিনা।কিন্তু কোথাও কোন পানি নেই সব কিছু ঠিক আছে।দাঁত ব্রাশ করে রুমে আসল।খেয়াল করল অরণ্য রুটিতে জেলি মাখছে।ডালিয়াকে দেখেই অরণ্য বলে উঠল
—আরে ডেইজি তাড়াতাড়ি আস।চা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে যে। তাড়াতাড়ি রুটি জেলি, চা খাও আর সাথে এক গ্লাস দুধ ও খেয়ে নিবা।তা না হলে তো ভালোভাবে সুস্থ হবা না তুমি।তাড়াতাড়ি এসে খেয়ে নাও।
ডালিয়া অরণ্যকে যতই দেখছে মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছে অরণ্যের এমন ব্যাবহার ডালিয়াকে আশ্চর্য না করে পারল না।ডালিয়া কিছুটা ভীত হয়ে অরণ্যের পাশে গিয়ে বসল।অরণ্য ডালিয়াকে খাবার খেতে দিল।কিছুটা ভয় ভয় নিয়ে ডালিয়া খেতে লাগল।পাশ থেকে অরণ্য বলে উঠল
—চা টা কেমন হয়েছে?আমি বানিয়েছিঅ কিন্তু।
—হুম অনেক ভালো হয়েছে অরণ্য বাবু।আপনি সত্যিই অনেক ভালো চা করেন।আমার জন্য এতটা কষ্ট না করলেও পারতেন।
—আরে এতে আর কি কষ্ট।আমার একটু শান্তির জন্য এটুকু কষ্ট তো করতেই পারি।আর শোন আমাকে আজ থেকে শুধু অরণ্য বলে ডাকবে।বাবু বলার দরকার নেই।
ডালিয়া এ কথাটা শোনার পর চমকে গেল।বুঝতে পারল না সে কি স্বপ্ন দেখছে নাকি সত্যি।আর বলল
—আচ্ছা আপনি যা বলবেন তাই হবে।
—আচ্ছা তোমার নাম কি ডেইজি নাকি আরও কোন নাম আছে?
—আমার নাম ডালিয়া ছিল সেখান থেকে ডেইজি হয়েছে।
—ওহ তাই বল।তোমাকে আমি ডালিয়া বলেই ডাকব কারন তোমার ডালিয়া নামটা অনেক সুন্দর।ঠিক আছে।
—আপনার যা ইচ্ছা ডাকেন।আমার কোন আপত্তি নেই।
—ডালিয়া তোমার চুল গুলো অনেক সুন্দর।তোমার চুল গুলোকে তুমি অনেক ভালোবাস তাই না?
—ভালোবাসা বলতে পৃথিবীতে কিছু আছে কিনা জানি না।তবে চুলগুলো আমার অনেক পছন্দের।শত কষ্টের মধ্যেও চুল গুলোকে আগলে রেখেছি।খুব বেশি যত্ন নিতে পারি না তবুুও যে চুলগুলা হাঁটু পার হয়েছে এটাই অনেক।
অরণ্য কিছুটা মুচকি হেসে বলল
—সত্যিই তোমার চুলগুলা অনেক লম্বা আর সুন্দর।তুৃমি রেডি হয়ে নাও।তোমাকে নিয়ে পার্লারে যাব।তোমার চুলে স্পা করাব।দেখবা চুল গুলো আরও সুন্দর হয়ে যাবে।আমি রেডি হচ্ছি তুমি রেডি হয়ে বের হও।
ডালিয়া অরণ্যের কথা যতই শোনছে ততই বিস্মিত হচ্ছে।সত্যিই কি এমন কিছু হচ্ছে নাকি সব স্বপ্ন।নিজের শরীরে নিজে একটা চিমটি কেটে আহঃ করে উঠল।সত্যিই তো এটা বাস্তব।ডালিয়া ভাবনার সাগর থেকে বের হয়ে তাড়াতাড়ি রেডি হল।অরণ্য ডালিয়া দেখে বলল
—আরে তুৃমি চুল বাধলে কেন?চুল গুলা খোলা রাখ সুন্দর লাগবে।
অরণ্যের কথা শোনে ডালিয়া চুল গুলো খলল।আর খোলা চুলে অরণ্য ডালিয়াকে দেখে বলল
—বাহ বেশ সুন্দর লাগছে।এ বলে একটা টিপ কপালে পড়িয়ে দিয়ে বলল এখন আরও বেশি সুন্দর লাগছে।
ডালিয়া অরণ্যকে যতই দেখছে ততই অবাক হচ্ছে।হঠাৎ করে অরণ্যের এমন ব্যাবহার ডালিয়াকে যেন রূপকথার রাজ্যে নিয়ে গেল।তারপর দুজন মিলে একসাথে বের হল।ডালিয়ার কাছে সবকিছু যেন স্বপ্ন স্বপ্ন লাগতে লাগল।গাড়ির কাচ দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আকাশটা দেখতে লাগল।কতদিন ডালিয়া এ খোলা আকাশের নীচে হাঁটে না।ছোটবেলার কথা গুলো মনে করতে লাগল।তার মা তাকে খাওয়ানোর জন্য কিভাবে দৌঁড়াত, কিভাবে সে পুতুল খেলত এসব ভাবতে লাগল।নিমিষেই যেন একটা সুখের রাজ্যে হারিয়ে গেল ডালিয়া।হঠাৎ অরণ্যের গাড়ির ব্রেকে ডালিয়ার স্বপ্নের ঘোর কাটল।খেয়াল করল অরণ্য গাড়ি থেকে নামল আর ডালিয়াকে নামার জন্য বলল।ডালিয়াও নামল।ডালিয়া দেখল অরণ্য তাকে মস্ত বড় একটা পার্লারে নিয়ে আসছে আর পার্লারের দিকে ঈশারা করে বলছে
—ডালিয়া এই যে পার্লারটা দেখছ এটাতে নিয়ে গিয়ে আজকে তোমার চুলগুলার ব্যাবস্থা করব।
অরণ্যের কথা যতই শোনতে লাগল ততই যেন অবাক হতে লাগল।অরণ্য ডালিয়াকে নিয়ে গেল পার্লারে।পর্লারে নিয়ে গিয়ে মহিলাকে বলল এর চুল গুলে কেটে ঘাড় সমান করে দিন।ডালিয়া অরণ্যের মুখে এমন কথা শোনে আৎকে গেল।আর বলে উঠল
—চুল কেটে ঘাড় সমান করবে মানে?আমি চুল কাটব না। এগুলা আমার অনেক শখের চুল।জীবনে অনেক কষ্ট করেছি কিন্তু চুল গুলাকে কখন অযত্ন করি নি।
—এজন্যই তো তোমার চুল কাটব।তুমি কি ভেবেছিলে আমি তোমাকে আদর করছি।হাহাহা।এত বোকা মেয়ে আমি আমার জীবনে দেখি নি।আরে তোকে আদর করেছিলাম যাতে তোকে কষ্টটা বেশি দিতে পারি।চুপচাপ চুল কাট।
—আমি চুল কাটব না।আপনি আমাকে যা ইচ্ছা করুন আমি চুল কাটব না।
পাশ থেকে পার্লারের মহিলা বলে উঠল
—উনি কাটতে না চাইলে আমরা জোর করে কাটতে পারব না চুল।আপনি অন্য কোথাও যান।
অরণ্য একটা হাসি দিয়ে বলল
—এ চুলগুলা কাটলে ৫০ হাজার টাকা দিব।এবার আপনার ইচ্ছা কাটবেন নাকি অন্য কোথাও যাব।
মহিলাটা ৫০ হাজার টাকার কথা শোনে লোভে পড়ে গেল আর বলল
—এ আর তেমন কি কাজ আমি এখনি কেটে দিচ্ছি।
তারপর আরও দুজন ডালিয়াকে ধরে জোর করে চুল কাটা শুরু করল।ডালিয়া চিল্লায়ে চিল্লায়ে বলে উঠল
—আল্লাহর দোহাই লাগে এত বড় কষ্ট আর ক্ষতি আপনারা করবে না। আমাকে ছেড়ে দিন।
মহিলাগুলো টাকার লোভে অন্ধ হয়ে গিয়েছিল।ডালিয়ার চিৎকার যেন তাদের কান পর্যন্ত আর পৌঁছাল না।মুঠি ধরে চুল গুলা কেটে দিল।আর অরণ্য পাশ থেকে খিল খিল করে হাসতে লাগল।চুল কাটা শেষ হলে অরণ্য মহিলাগুলাকে টাকা দিয়ে ডালিয়াকে নিয়ে বাসায় চলে আসল।ডালিয়া যতবারেই আয়না দেখছিল ততবারেই চিৎকার করে কাঁদছিল।ডায়নাকে কল করে সব বলল ডায়না বলল
—তোর জন্য ঐ লোকটা আমাকে অনেক টাকা দিয়েছে।ওনি যা করতে বলে কর।না হয় দুঃখ আছে।আর এসব প্যান প্যান করতে ফোন করবি না।আমি তোর জন্য তো নিজের ব্যাবস্যার ক্ষতি করতে পারি না।ফোন রাখ।
এ বলে ডায়না ফোনটা কেটে দিল।ডালিয়া ভিতরে ভিতরে পুরতে লাগল।চুল গুলায় হাত দিয়ে সে চিৎকার করে বলতে লাগল “দুনিয়ায় টাকা ছাড়া দাম নেই।টকার কাছে সব বিক্রি হয়ে যায়।মানুষের মন ও টাকার কাছে কিছু না।”আর পাশ থেকে ডালিয়ার চিৎকার দেখে অরণ্য হাসতে লাগল।তখন ডালিয়া অরণ্য কে বলল
—আমি আপনার কি ক্ষতি করেছি?কেন এমন করেছেন আমার সাথে।আমাকে আর কত কষ্ট দিবেন আপনি?
—বলেছি তো মেয়ে মানুষ আমার সহ্য হয় না।তোরে কষ্ট দিতে পারলে আমার শান্তি লাগে।কোন মেয়ে কষ্ট পেতে দেখলে আমার শান্তি লাগে।এই যে কষ্ট পাচ্ছিস খুব শান্তি লাগছে।তোকে কিনে এনেছিই এভাবে কষ্ট দিতে হাহাহাহা।
ডালিয়ার বুঝতে বাকি রইল না অরণ্য মানসিক ভাবে অসুস্থ।আর কত কষ্ট যে ডালিয়াকে পেতে হবে সেটা ভাবতে ভাবতেই সারাদিন পার করল।রাতে হঠাৎ ডালিয়া একটা চিৎকারের শব্দ পেল খেয়াল করল শব্দটা অরণ্যের রুম থেকে আসছে।ডালিয়া অরণ্যের রুমের দিকে এগুতে লাগল আর গিয়ে দেখল……
লেখিকা-#শারমিন আঁচল নিপা
(বুঝতে পারছি আমার গল্প পড়ে অরণ্যের প্রমে অনেকেই পড়ে গেছ তাই এ নামের সাথে এ চরিত্রটা মানতে পারছ না।চিন্তা কর না গল্পের মোর ঘোরবে।