শেষ বেলার তুমি
পর্ব ২
অনেক কষ্ট রিমিকে ভুলে চার বছর পর দেশে ফিরে যখন ভাবলাম বউ নিয়ে সুখে সংসার করবো।তখন দেখি বউ স্মৃতি শক্তি হারিয়ে ভুলেই গেছে আমি তার স্বামী।কিন্তু তখনও অতটা খারাপ লাগে নাই, স্মৃতি শক্তি হারিয়ে রোজ এত্ত এত্ত জ্বালিয়েছে তখনও অতটা খারাপ লাগে নাই, যতটা খারাপ লাগছে যখন জানতে পারলাম সব কিছুই মিথ্যে অভিনয় ছিল।নীলিমা স্মৃতি শক্তিহীন না।মেজাজ খারাপ করে বেলকুনিতে দাড়িয়ে ছিলাম।
দেখলাম একটু পরে নীলিমা রুমে এসে খাটে শুয়ে পড়ল। মহারানী এখনই জানে না আমি জানতে পারে গেছি তার সব অভিনয়ের কথা ।আমি কিছু না বলে সোফায় গিয়ে শুয়ে পরলাম।
নীলিমা তা দেখে কিছুক্ষন আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। হয়তো কিছুটা অবাক হয়েছে।
যে ছেলেটা রোজ তার সাথে খাটে শোয়ার জন্য বাহানা খুঁজত সে আজ নিজে থেকেই সোফায় শুয়ে আছে। অবাক হওয়ারই কথা।
একটু পরে নীলিমা উঠে আমার মাথার পাশে এসে দাঁড়ালো।
নীলিমা: সোফায় শুয়ে আছ যে।
হৃদয়: তো কোথায় ঘুমাবো।
নীলিমা: কোথায় আবার খাটে।
হৃদয়: না একটা মেয়ের সাথে খাটে ঘুমানো ঠিক হবে না।
নীলিমা: মেয়ের সাথে কথাই ঘুমাচ্ছ? তুমি তোমার বউয়ের সাথে ঘুমাচ্ছ। তুমি তো বললে বউয়ের সাথে ঘুমানো যায়।
হৃদয়: এসব মিথ্যা বলেছি, তোমার সাথে থাকার জন্য।
নীলিমা: ও আচ্ছা।
নীলিমা আর কিছু না বলে চলে গেল। দেখলাম নীলিমার মনটা অনেক খারাপ।
আমি মনে মনে হাসতেছি। আমার সাথে অ্যাক্টিং!☹️
এবার বুঝবে নিলু কত ধানে কত চাল।😌কোন দিক দিয়ে যায় কোন দিকের হাল🤣
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করতে গেলাম।
দেখলাম নিলু এসে আমার পাশের চেয়ারে বসতেছে। তা দেখে আমি উঠে অন্য চেয়ারে চলে গেলাম। নিল কিছু না বলে শুধু তাকিয়ে রইল।
আমারে অনেক জ্বালিয়েছিশ নীলু। ভেবেছিলাম দেশে ফিরে কোথায় বউ নিয়ে শান্তিতে সংসার করবো। আর তুমি কি করলে! অ্যাক্টিং । আমিও কম অ্যাক্টিং পারিনা। দেখো তোমার কি অবস্থা করি।
এরপর থেকে আমি আবার নিলুর সাথে তেমন কথা বলতাম না। রাতে সোফায় ঘুমাতাম, নিলু কথা বলতে আসলে এড়িয়ে যেতাম।
দেখলাম নিলু আবার কষ্ট পেতেছে। কিন্তু আমি কি করবো বুঝতে পারছি না। আমি যদি আবার তাকে আপন করে নিতে যাই তাহলে সে আবার একটিং শুরু করবে।
কিছু ভাবতে না পেরে রিয়াজ কে ফোন করে বিকেলে দেখা করতে বললাম।
রিয়াজ:কি হয়েছে হঠাৎ তলব।
হৃদয়: আরে দোস্ত আর আমি প্যারা নিতে পারছিনা।
রিয়াজ:কি হয়েছে। খুলে বল আমায়।
আমি এরপর রিয়াজকে শুরু থেকে সব খুলে বললাম।
রিয়াজ: আসলেই চিন্তার ব্যাপার। আচ্ছা আমাকে একটু ভাবার সময় দে।
হৃদয়: আচ্ছা।
রাতে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ভাবছি রিয়াজ কি কোন উপায় বের করতে পারবে। এমন সময়ে রিয়াজের ফোন আসলো।
হৃদয় :হ্যালো
রিয়াজ: দোস্ত আইডিয়া পাইছি।
হৃদয়: যাক দোস্ত তুই আমারে বাচালি।
রিয়াজ: কাল আমার বাসায় আসিস সব বলবনি।
হৃদয়:ওকে।
রিয়াজ:গুড নাইট।
হৃদয়:গুড নাইট হ্যাভ এ নাইস ড্রিম।
আমি খুশি মনে যে ঘুমিয়ে পড়লাম। পরদিন রিয়াজের বাসায় চলে গেলাম।
কলিংবেল চাপতেই রিয়াজ এসে দরজা খুলে দিল।
আমি তো ভিতরে ঢুকে অবাক। আমার ছোটবেলার বান্ধবী সামিয়াও আছে এখানে।
হৃদয় কিরে তুই।
সামিয়া: হ্যাঁ আমি। শালা হারামী বিয়েতে তো দাওয়াতও দিসনে।
হৃদয়:সরি রে দোস্ত। সবকিছু হুট করে হয়ে গেছে।
সামিয়া:আচ্ছা ঠিক আছে।
রিয়াজ: ওটাই তোর ভাবি।
হৃদয়: মানে।
রিয়াজ: দুই বছর হলো আমাদের বিয়ে হয়েছে।
হৃদয়: শেষ পর্যন্ত বান্ধবীকে! শালা লুচ্চা তুই সেই লুচ্ছাই থেকে গেলি।
রিয়াজ: বান্ধবীকে পাওয়ার জন্যে একটু লুচ্চা হলে সমস্যা নাই 😅🙊🙈
সামিয়া: চুপ করবা! লুচ্চা কোথাকার।
রিয়াজ: আচ্ছাআচ্ছা।আমি সামিয়াকে তোদের ব্যাপারে সব কথা বলেছি। এবার তুই শোন কি করতে হবে।
এরপর রিয়াজ আমাকে সব কিছু খুলে বলল।
রিয়াজ: শোন তোরা দুজন এমন অভিনয় করবি যাতে মনে হয় তোরা অনেকদিন ধরে প্রেম করিস। আর নীলিমা এটা জানতে পারলে অবশ্যই সে রাগের মাথায় স্বীকার করবে যে তার স্মৃতিশক্তি নষ্ট হয়ে যায় নি।
পরিকল্পনা মোতাবেক পরদিন আমি নীলিমাকে নিয়ে পার্কে গেলাম। পার্কে নিলীমাকে নিয়ে একটা বেঞ্চে বসে আছি।
পরিকল্পনা মোতাবেক সামিয়া পার্ক এল।
হৃদয়: তোমার আসতে এত দেরি হল কেন।
সামিয়া:আরে বলোনা রাস্তায় অনেক জ্যাম ছিল।
হৃদয়: ওকে।
আমি নীলিমা কে উদ্দেশ্য করে বললাম।
হৃদয়:নিলু এই হল সামিয়া। অনেকদিন আগে থেকে আমরা একে অপরকে ভালোবাসি।
আমার কথাটা বলার সাথে সাথেই দেখি নীলুর দুচোখ রক্তের মত লাল হয়ে গেছে।
আমি নীলুকে আর একটু রাগানোর জন্য বললাম।
হৃদয়:তুই এখানে একটু বসে থাক আমরা দুজন একটু ঘুরে আসি।
কথাটা বলে আমি যখন ঐ সামিয়াকে নিয়ে হাটা শুরু করব নিলু আমার সামনে এসে শার্টের কলার চেপে ধরল।
নীলিমা:ওই ওটা তোর কোন জন্মের গার্লফ্রেন্ড। আমাকে মিথ্যা বলিস!
হৃদয়:আরে অনেকদিন আগের।
নীলিমা :আবার মিথ্যা বলিস। ও তোর গার্লফ্রেন্ড না। কেন মিথ্যা বলছিস। বল কে ও?
হৃদয়: আরে তোর স্মৃতিশক্তি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তোর মনে নেই। ও আমার ছোটবেলার গার্লফ্রেন্ড।
নীলিমা প্রচন্ড রাগে ফুলতে ফুলতে মুখ ফসকে বলে ফেলল:
নীলিমা: আমার স্মৃতিশক্তি নষ্ট হয়ে যাইনি যাইনি যাইনি যাইনি যাইনি!🤯
হৃদয় :আরে অ্যাক্সিডেন্টে তোর স্মৃতিশক্তি নষ্ট হয়ে গেছে তাই তুই মনে করতে পারছিস না।😁
নীলিমা: বললাম না আমার স্মৃতিশক্তি নষ্ট হয়ে যায় নি।🤬
চলবে…