দি বাটারফ্লাই ইফেক্ট লেখিকা : #আরফিন জাহান আনিকা পর্ব : ১

0
31

(❌কপি করা নিষেধ ❌)
“মেজর আফনান সাদিক গুনে গুনে আমার থেকে ১২ বছরের বড়। তোমরা ঐ বয়স্ক লোকটার সাথে আমার বিয়ে দেও কি করে?”

মেয়ের মুখে এমন কথা শুনে রান্নাঘর হতে দৌড়ে আসে অর্পিতা বেগম। সাথে সাথে বলে উঠে, ” অন্তরা! তুই কি পাগল হয়েছিস? আস্তে কথা বল।”

“কেন? আস্তে বলার কি আছে?”

” ওনারা পাশের রুমে আছে। তাড়াতাড়ি শাড়িটা পড়ে ফেল। আর একটা কথাও বলবি না তুই।”

অন্তরা এবার বেশ বিরক্ত হয়। মাত্র কোচিং থেকে এসেছে। এখন এসব। তার মা এই ছেলের কথা অনেকদিন যাবৎই বলেছে তাকে। তবে সে তোয়াক্কা করেনি। তবে সত্যি সত্যিই যে বাড়ি অব্দি নিয়ে আসবে কে জানত?

“মা! আর দু মাস পর এডমিশন। আর এখন বিয়ের কথা তুলো কিভাবে তুমি?”

“কেন সমস্যা কোথায়? আমাদের সাত কপালের ভাগ্য এত বড় একজন অফিসারের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে তোর কাকি।”

অন্তরা ভ্রু কুচকে মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। যেই কাকি একটা ভালো থ্রি পিছ পেলে আগে নিজের মেয়েকে পড়িয়ে তার পর অন্তরাকে দেখতে দেয়, সে কিভাবে এত ভালো ছেলে পেয়ে নিজের ভার্সিটি পড়ুয়া মেয়ের জায়গায় তাকে বিয়ে দিতে চাচ্ছে? অন্তরার ছোট মাথায় তার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় তাকে নাড়া দিচ্ছে। বারবার বলছে, “অন্তরা বেবি, কুচতো গারবার হে।”

“শোন। ছেলের বাবা বলেছে মেয়ে পছন্দ হলে এক সপ্তাহের মধ্যে বৌ করে নিয়ে যাবে। ছেলের হাতে বেশি ছুটিও নেই।”

“কিহহ!”

“তবে সোনা গয়না কোনো কিছুর কমতি হবে না। রাজি হয়ে যা মা আমার। তোর কাকার উপর পড়ে পড়েই তো খাচ্ছি। এবার যদি একটু দায় সাড়তে পারি। ছেলেটা খুব ভালো।”

অন্তরার বেশ খারাপ লাগে কথাটা শুনে। সত্য কথা হয়ত এজন্যই এতো তিতে হয়। তার বাবার চাকুরি নেই আজ তিন বছর যাবৎ। তাই পড়ে পড়ে খেতে হচ্ছে চাচার উপর। যৌথ পরিবার। চাচা অন্তরাকে নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসলেও কাকি কখনো তা মানতে পারেনি। হয়ত তার মন একটু জয় করতেই বিয়ে নিয়ে মায়ের এত তাড়াহুড়ো। বাবাও হয়ত ভিতরে তাদের সাথে বসে গল্প করছে। অন্তরা বুঝে এখন আর তর্ক করে লাভ নেই। সেও শাড়ি পড়ে মায়ের সাথে ভিতরে চলে যায়।

“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।”

এত জোড়ে বলল যে সবাই হা করে তাকিয়ে আছে। বোকাবনে চলে গেল অন্তরা। এটা কি করল ও? সারাজীবন ফেইসবুকে এমন মজার ঘটনা শুনে কত হাসত সবার উপর। আজ নিজেই এই ভুল করে বসল? অতি আবেগে সালামের জায়গায় বিসমিল্লাহ। আজ মায়ের খুনতির বারি একটাও নিচে পড়বে না।

“না মানে। আসসালামুয়ালাইকুম।”

উপস্থিত সবাই অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে। লজ্জায় নাক কেটে যাচ্ছে অন্তরার। অন্তরার বাবা মাও বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে গিয়েছে। অন্তরার মা বলে উঠে, “আসলে প্রথমবার তো। একটু ঘাবড়ে গেছে।”

“না নাহ। সমস্যা নেই। ছোট মানুষ। ওকে এদিকে এনে বসান।”

পাত্রের বাবা আরিফুল ইসলাম কথাটি বলে উঠেন। তিনি রিটায়ার্ড আর্মি অফিসার। ছেলের জন্য অন্তরাকে আগে থেকেই পছন্দ ছিল তার। একদিন মার্কেটের সামনে দাড়িয়ে নিজের গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিল সে। তখনই অন্তরাকে দেখে রাস্তার কিছু পথশিশুকে খাবার কিনে দিতে। তখনই ঠিক করে ফেলেন এই মিষ্টি মেয়েটাকে বাড়ির বৌ করবেন। অবশ্য ঠিকানা বের করে এই অব্দি আসতে খুব জামেলাও হয়েছে। সে আরেক ব্যাপার।

“ওকে দাড় করিয়ে রেখেছেন কেন আন্টি? বসতে বলুন।” আফনানের পাশে বসা সুন্দর মেয়েটা বলে উঠল। পড়ে নানান জিগ্গাসাবাদে বোঝা গেল, মেয়েটির নাম রোদেলা । আফনানের বড় বোন।

দু পরিবারই নানান বিষয়ে কথা বলতে থাকল। এই পুরো সময়ে অন্তরা একবারও চোখ তুলে তাকিয়ে দেখেনি পাত্রের দিকে। শেষে সবার সব কিছু পছন্দ হলে আফনানের বাবা বলে উঠেন, “তো এবার ছেলে মেয়েকে আলাদা কথা বলতে দেয়া উচিত একটু।”

অন্তরার মা না করতে যাবে তখনই অন্তরার বাবা ইশারায় তা করতে মানা করেন। তার বিশ্বাস, রাগের মাথায় মেয়ে এমন কিছু করবে না যাতে তার সম্মানহানী হয়। অন্তরাকে তার মা বলল, “যা। আফনান বাবাকে নিয়ে ছাদ থেকে ঘুরে আয়।”

অন্তরা উঠে তাই করল। অন্তরাদের বাড়ির ছাদে তেমন রোদ পড়ে না। বাড়ির ছাদে বড় বড় ফলের গাছ লাগিয়েছে তার মা। অন্তরাও শখ করে ছোট ছোট ফুলগাছ দিয়ে ভরে ফেলেছে ছাদটাকে। দূর থেকেও সবার তাদের বাড়ির ছাদটা চোখে পড়বে।

নিরবতা ভেঙে আফনানই বলে উঠল,

“বিয়েটা আমার পক্ষে করা সম্ভব নয়। আপনি বিয়েটা ভেঙে দিন।”

এই প্রথম পাত্রের কন্ঠ শুনে তার চেহারার দিকে তাকাল অন্তরা। সাথে সাথে থমকে যায়। লম্বা চওয়া সুঠাম দেহের এই পুরুষটির সাথে তার বিয়ে? পুরুষ মানুষও এত সুন্দর হয় নাকি? সে নিজে শ্যামল বর্ণের। না ফর্সা না কালো। তবে এই ছেলে একদম ফর্সা, সাথে মুখের চাপদাড়ি আর ওই উচু নাকটা যেন তার সৌন্দর্য কয়েক গুণে বাড়িয়ে দিয়েছে।

“এই হ্যান্ডসাম ছেলের সাথে আমার বিয়ে? এর বয়স ৩০?”

নিজেকে নিজে প্রশ্ন করে অন্তরা। তবে কোথায় যেন দেখেছে দেখেছে মনে হয়। হঠাৎ মনে পড়ে সেই আর্মি ক্যাম্পের পাশে ঘটনা। সাথে সাথে চিল্লিয়ে বলে উঠে,

“এই আপনি সেই আর্মিটা নাহ? ঐযে আমাকে বাচিয়ে ছিলেন।”

আফনান অন্তরার দিকে তাকায়। মেয়েটার স্মরণ শক্তি ভালো। এতদিন মনে রেখেছে। তবে আফনানের চেহারা দেখে অন্তরা কিছু বুঝতে পারছে না। অন্তরার সেই দিনের কথা তার মনে আছে কিনা বাহ তার অন্তরাকে এখন দেখে পছন্দ হয়েছে কিনা ইত্যাদি। কিছুই বোঝা যায় না ওকে দেখে। চোখ, মুখ বেশ শক্ত করে রাখে।

অন্তরা মনে মনে ভাবে, “মানলাম বড় কোন অফিসার। তবে তার ব্যক্তিত্ব থাকবে তার কাজের ক্ষেত্রে। এখানে কেন?”

তারপর মনে পড়ল, একটু আগে না সে বলল বিয়ে ভাঙতে। অন্তরা জিহ্বায় কামড় দিয়ে ভাবল, না না। এই ছেলে লাখে না কোটিতে এক। একে ছাড়া যাবে না। তবে এমন নিমগাছ মার্কা লোকের সাথে সারাজীবন থাকবে কীভাবে? পড়ে ভাবল, সব দিক দিয়েতো একশতে একশ পাওয়া যাবে নাহ। একেই লাগবে অন্তরার।

অন্তরা হঠাৎ আফনানের শার্টের কাধের অংশটা একটু টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসল। আফনান ভ্রু কুচকে তাকাতেই অন্তরা ফিসফিসিয়ে বলে উঠে,

“আমি বিয়ে ভাঙব না। আপনার সমস্যা হলে আপনি না করেন। আমি এখন নিচে গিয়ে মাকে বলব ছেলে একশতে একশ। আমি একেই বিয়ে করব। হুমম।”

আফনান এবার বেশ বিরক্ত হয়। মেয়েটা নিজেও জানে না সে কত বড় হিংস্র জন্তুদের গুহায় পা বাড়াচ্ছে। তবে এই মেয়েকে বুঝিয়েও লাভ হবে বলে আফনানের মনে হচ্ছে না। এদিকে অন্তরা খুশি মনে নাচতে নাচতে নিচে যেতে থাকে। কেউ নিজের বিয়েতে এত খুশি হয় এই মেয়েকে না দেখলে আফনান বুঝত না।

একটা হালকা গোলাপী শাড়ির কুচিগুলো ধরে লাফিয়ে লাফিয়ে সিড়ি বেয়ে নামছে অন্তরা। লম্বা সিল্কি চুলগুলো বাতাসে উড়ছে। আফনান চোখ সড়িয়ে নেয়। পিছন পিছন নামতে নামতে নিজেকে বলে, “মায়ায় পড়া যাবে না আফনান। নো ওয়ে।”

পাশের ফুলগাছ হতে দুটো লাল প্রজাপতি পরস্পর খেলা করতে করতে উড়ে গেল।
….

#চলবে ….

( আসসালামুয়ালাইকুম। গল্প পড়লে অবশ্যই রিয়েক্ট দিয়ে কমেন্ট করবেন অনুরোধ রইল। পেজটা ফলো করবেন। ধন্যবাদ পড়ার জন্য। )

গল্পের নাম : #দি বাটারফ্লাই ইফেক্ট
লেখিকা : #আরফিন জাহান আনিকা
পর্ব : ১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here