গল্পের নাম : #দি_বাটারফ্লাই_ইফেক্ট
লেখিকা : #আরফিন_জাহান_আনিকা
পর্ব : ১০ (Don’t Copy❌)
সন্ধ্যা গড়িয়ে এখন প্রায় রাত। পুরো বাড়িতে অন্তরা একা। সকালে সবাই যাওয়ার সময়ও বারবার জোর করেছিল ওকে। তবে ও যায়নি। এদিকে রোদেলাও সন্ধ্যা হতে বেরিয়ে গিয়েছে। আজকে নাকি নাইট সিফট। দাড়োয়ান কাকাকে বলে গিয়েছে অপরিচিত কেউ আসলে যেন গেট না খুলে।
রোদেলা যথা সময়ে অফিস পৌছে যায়। সাধারণত রাতের শিফটে পুরো অফিসে তেমন হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া কোনো লোক থাকে না। সব ইমপরটেন্ট ফাইল রিচেক দেয়ার দায়িত্বটা পড়েছে রোদেলার উপর। না চাইতেও যখন তখন কাজ করতে হয় তাকে। তবে রাতে একা কাজ করতে ও খুব ভয় পায়। ওর ফোবিয়া আছে। অন্ধকার ভয় পায় খুব।
তবে ফোর্থ ফ্লোরে নিজের ডেক্সে এসে কিছুটা অবাক হয় সে। একটা ফাইলও নেই। ফাইল কোথায়? এক পিওন কাকা নাস্তা নিয়ে স্যারের রুমে দিতে যাচ্ছিল। রোদেলাকে দেখে বলে,
“ম্যাডাম। স্যার কইছিল আপনারে দেখলে হের রুমে যাইতে কইতে। ঐখানেই নাকি বসে কাজ করবেন।”
কিছুটা বিরক্ত হয় রোদেলা তবে প্রকাশ করে না। এই লোকটা গত এক মাস জ্বালাতন করেছে অনেক। প্রায়ই কারণে অকারণে রুভে ডাকবে। টুকিটাকি কাজ যা তার পিএর করা কথা, সেসবের জন্যও ডাকবে রোদেলাকে। অফিসে ইতোমধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়েছে কিছুটা। অনেকে বলছে এদের দুজনের মাঝে কিছু একটা চলছে।
কথাটা অবশ্য ইয়াসিনের পিএ ছড়িয়েছে। হট হট টাইট ফিট ওয়েসটার্ন ড্রেস পড়েও, সুদর্শন বড়লোক ছেলেকে পটাতে না পাড়ার ব্যর্থতার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য হয়ত।
রোদেলা ইয়াসিনের রুমে যায়। এই রুমে যেতে তার অনুমতি লাগে না। ইয়াসিনই বলেছে তার অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন নেই। ইয়াসিন রোদেলাকে দেখে একটা মিষ্টি হাসি তাকায়। যেদিন থেকে রোদেলার অতীতের অভিশপ্ত ঘটনা ও জেনেছে। সেদিন থেকে আট দশটা সাধারণ ছেলেদের মতো ঘৃণা আসার জায়গায় যেন সহানুভূতি আর কিছুটা প্রেম জেগেছে মনে।
কত ক্ষত মেয়েটার ভিতরে। এজন্যই ও খুব কম হাসে। হাসলেও মলিন। যেন চাপা আর্তনাদ ভিতরে রয়ে যায়। ইয়াসিন ভাবে, শুধু সত্যিকারের ভালোবাসাই পারবে মেয়েটাকে এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে।
“স্যার।”
“হুমম।”
“আমাকে ডেকেছেন?”
“ও হ্যাঁ। কাজের কথাই বলা হলো না। আপনি ঐখানে বসে কাজ করুন আজকে।”
“কেন? এটাতো আমার ডেক্স না।”
“জানি আমি। আপনার পুরো ফ্লোরে আপনি একা। ইভেন এই ফ্লোরে আমি একা। ভাবলাভ কিছুটা সঙ্গ পাওয়া যাবে। তাছাড়া আপনি নাকি অন্ধকারে ভয় পান। তা এখানে বসেই কাজটা করুন।”
রোদেলা আর তর্ক করে না। এই এক মাসে সে বুঝে গিয়েছে। খামোখা তর্ক করে লাভও হয়না এর সাথে। রোদেলা সেই ডেক্সে গিয়ে বসে। সাইড ব্যাগটা পাশে তাকায়। ইয়াসিনের চেয়ারে বসে এখানটা খুব ভালো করে দেখা যায়। মাঝখানে শুধু একটা কাচ। তবে এপাশ থেকে ওপাশ না দেখা গেলেও, ঐপাশ থেকে সব পরিষ্কার দেখা যায়।
রোদেলা নিজের কাজ করতে থাকে। ইয়াসিনও ল্যাপটপে কাজ শুরু করে দেয়। শুধু একটু পরপর রোদেলার দিকে তাকিয়ে দেখে।
“সি ইজ বিউটিফুল।”
নিজের ফোনে একটা গান ছেড়ে তালে তালে কাজ করতে থাকে ইয়াসিন।
“তোমার জন্য নীলচে তারার একটু খানি আলো
ভোরের রঙ রাতের মিশকালো।
কাঠগোলাপের সাদার মায়া মিশিয়ে দিয়ে ভাবি
আবছা নীল তোমার লাগে ভালো।”
……..
অন্তরা একা একা খুব বোর হচ্ছে। কেন জানি আজ পড়তে বসতেও ইচ্ছে করছে না। আজ সারাদিনে একবারও আফনানের সাথে কথা হয়নি। ব্যস্ত হয়ত খুব। অন্তরা টিভি অন করে “কাবি হাম কাবি তুম” পাকিস্তানি নাটকটা দেখতে থাকে। কত কিউট কাপলটা। হানিয়া আমির ওর ওয়ান অফ দা ফেবারিট একট্রেস।
হঠাৎ মনে হল দরজায় কিছুর আওয়াজ। প্রথমে মনের ভুল ভেবে ফিরে তাকায় না। তবে একটু পর আবার একটা আওয়াজ আসে। অন্তরা পিছনে শান্ত ভাবে তাকিয়ে এক জটকায় লাফিয়ে উঠে যায়।
“ক..কে আপনারা? বাসায় ঢুকলেন কীভাবে?”
তিন চারজন ছেলে মুখুশ পড়ে দাড়িয়ে আছে। দেখে মোটেও সুবিধার মনে হচ্ছে না। অন্তরা ভয় পেলেও সেটা প্রকাশ না করে চিল্লিয়ে বলে উঠে,
“বললাম না কারা আপনারা? অনুমতি ছাড়া কারো বাড়িতে ঢোকাটা ক্রাইম।”
অন্তরার কথা তোয়াক্কা না করে একজন খুবই দ্রুত অন্তরার কাছে এসে পড়ে। একটা হাত ধরে খুব জোরে টানতে থাকে। অন্তরা বারবার ছাড়ানোর চেষ্টা করে তবে পুরুষ মানুষের গায়ের জোরের সামনে সে ব্যর্থ। সেই অজ্ঞাত ব্যক্তি রাগান্বিত হয়ে ,
“চল ***। নাটক না করে পা চালা। রেদওয়ান স্যার তোরে নিতে কইছে।”
“রেদওয়ান? কে রেদওয়ান? আমি কাউকে চিনি না। যাবো না আমি। প্লিজ ছাড়েন।”
অন্তরাকে খুব জোর করতে থাকে লোকটা। তবে সে কিছুতেই যাবে না। একপর্যায় রাগের বসে লোকটা অন্তরাকে একটা থাপ্পড় মেরে বসে। ছিটকে গিয়ে নিচে পড়ে সোফায় একটা বারি খায় মেয়েটা। ডান চোখের ভ্রু ফেটে র/ক্ত বেরুতে থাকে। মাথা নিচু করেই আল্লাহকে স্মরণ করতে থাকে। এমন সময় বিদ্যুৎ চলে যায়। পুরো বাড়ি অন্ধকার।
হঠাৎ কিছু ভাঙার আওয়াজ আসে। আর একাসাথে কয়েকজনের আ/র্তনাদ। অন্তরা ভয়ে উপরে তাকায় না। ওরা সবাই কাউকে বারবার অনুরোধ করছে ছেড়ে দিতে।
” স্যার প্লিজ ছেড়ে দিন। আর কোনোদিন এমন করব না। আমাদের রেদওয়ান পাঠিয়েছে।”
“জানো* বাচ্চা। তোদের সাহস কি করে হয় আমার বৌয়ের গায়ে হা ত দেয়ার। এই মেজর আফনানের স্ত্রীর হাত ধরছিস তুই? তোর এই হাত আমি শরীর থেকে আলা দা করে ফেলব। জাস্ট ওয়েট এন্ড সি।”
আফনান একটু থামল। কাউকে কল করে বলল, “বাসায় এসে এক্ষুণি সব কটাকে ধরে নিয়ে যা। হাত কে/টে দিবি একদম।”
সবাই ভয়ে বারবার মাফ চাইছে। তবে আফনান তোয়াক্কা না করে অন্তরার কাছে আসে। মেয়েটা এখনো মাথা নিচু করে সজোরে কেদেঁ যাচ্ছে।
“ভয় নেই। আমি আছি না। আমি থাকতে কিচ্ছু হবে না তোমার। তাকাও এদিকে।”
অন্তরা কাপা কাপা চোখে উপরে তাকায়। আফনান! সত্যি এসেছে ও? অন্তরা ওকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। আফনান ওকে কিছুটা শান্ত করে কোলে তুলে নেয়। এদিকে আফনানের লোকেরাও বাড়ি এসে পড়েছে। রেদওয়ানের দলের লোকদের টেনে হিচড়ে নিয়ে যাচ্ছে।
আফনান অন্তরাকে নিয়ে সিড়ি বেয়ে রুমে চলে যায়। বিছানায় শুইয়ে পাশে হেলান দেয়। অন্তরা কাপা কাপা কন্ঠে প্রশ্ন করে?
“আপনি চলে যাবেন?”
আফনান কোনো উত্তর দেয় না। অন্তরাকে শুইয়ে উঠে যেতে নিলে অন্তরা ওকে জড়িয়ে ধরে। কাদতে কাদতে বলে,
“না। যাবেন না আপনি। ”
“আগে ছাড়ো তুমি।”
“না ছাড়ব না। আমি জানি ছাড়লেই চলে যাবেন। আজকে একটা রাত আমার সাথে থাকা যায় নাহ।”
“অন্তরা প্লিজ বাচ্চামো করো না। বিপদ এসেছিল। তাই আমিও এসেছিলাম তোমায় প্রটেক্ট করতে। এখন বিপদ আর আসবে না। আমি এরপর থেকে সুরক্ষা আরো বাড়িয়ে দিবো। এখন যেতে দেও প্লিজ।”
“না দিব না।”
বারবার বাচ্চামো করায় শেষে বিরক্ত হয়ে আফনান একটা ধমক দিয়ে বসে। সাথে সাথে অন্তরা ওকে ছেড়ে দিয়ে একদম চুপ হয়ে বসে। আফনান উঠে দরজায় কাছে গিয়ে একবার পিছু ফিরে তাকায়।
“আর দেড়টা মাস ওয়েট করো। মিশনটা কমপ্লিট হলে লম্বা একটা ছুটি পাবো আমি। পুরোটা সময় তোমাকে দিবো। প্রমিজ। কিন্তু এখন অন্তত আমার কাজটা করতে দেও।”
অন্তরা চুপ করে বসে থাকে। আফনানের কি হলো কে জানে। যেতে নিয়ে আবার অন্তরার কাছে ফিরে এসে দুহাত দিয়ে মুখটা ওর দিকে ঘুরায়। ঠিক দুই ভ্রুর মাঝ থেকে এক আঙ্গুল উপরে কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একে দেয়। সাথে সাথে দ্রুতই স্থান ত্যাগ করে। অন্তরা শুধু এক দৃষ্টিতে ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।
#চলবে …..
( আসসালামুয়ালাইকুম। আমার বিড়ালের তরফ থেকে সবাইকে মেও মেও। রিয়েক্ট দিয়েন। পড়ার জন্য ধন্যবাদ।)