গল্পের নাম : #দি_বাটারফ্লাই_ইফেক্ট
লেখিকা : #আরফিন_জাহান_আনিকা
পর্ব : ১৩ (❌কপি করা নিষেধ❌)
“আমাকে ডেকেছেন স্যার?”
রোদেলার কথায় ওর দিকে ফিরে তাকায় ইয়াসিন। বেচারার মুখটায় পুরো রাতের আধার নেমে আছে। কত সুন্দর প্লান করেছিল, সব শেষ। রোদেলা এখন আর বিরক্ত হয় না। এত দিনে অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। এই ছেলে প্রথমে ডাকবে। তারপর ভাবনায় ডুবে যাবে।
“স্যার ভাবা হলে বলবেন।”
রোদেলার কথায় ইয়াসিন একটু নড়ে বসে। মেয়েটা কি ওকে পাগল ভাবছে? ভাবলে ভাবুক। পৃথিবীর সকল প্রেমিক পুরুষরাই পাগল। সুস্থ হওয়ার মূলত অভিনয় করে। ইয়াসিন কফির দিকে ইশারা করে বলল,
“এক কাপ…”
“কফি বানাতে হবে তো? দিচ্ছি।”
ইয়াসিনের কথার মাঝে কথা থামিয়ে রোদেলা কফি রেডি করতে থাকে। আর ভাবে মাস শেষ স্যালারিটা কাজের জন্য পায় নাকি ডেইলি কফি বানিয়ে দেয়ার জন্য। দ্রুত কফির কাপটা ইয়াসিনের টেবিলে রেখে বেরিয়ে যায়। একবার পিছনেও ফিরে তাকায় না।
ইয়াসিনের মুডটা অফ হয়ে যায়। সেকি দেখতে এত খারাপ? যে তার দিকে একবার ফিরেও তাকায় না। পকেট থেকে ফোন করে সেলফি তুলে কয়েকটা। বারবার স্ক্রল করে দেখতে থাকে। নাহ। ছেলেটাতো দেখতে খারাপ না। কফির কাপে একটু চুমুক দিয়ে সেও অফিসের কাজে লেগে যায়।
…..
দুপুরে খাবার শেষে অন্তরা, বাগানের একটা গাছের নিচে বসে। বৃষ্টির মাস চলছে বিধায় আকাশে সূর্যের দেখা মিলে না দুপুরেও। অন্তরা এক কাপ গরম গরম দুধ চা বানিয়ে এনেছে। চায়ের কাপে একটু চুমুক দিচ্ছে আর ফেইসবুক থেকে “#নীল_ডাকঘর” গল্পটা পড়ছে। শেষ পর্বটা পড়ে মনটা খারাপ হয়ে খেল।
আসলেই সময় থাকতে ভালোবাসার কথা বলে দিতে হয়। নয়ত নিয়তি মানুষকে কখন কোথায় নিয়ে যায় ঐ খোদা ছাড়া কেউ জানে না। আফনানের কথা খুব মনে পড়ছে। নামাজে দাড়ালেই ওর জন্য চিন্তা আরো বেশি হয়। আফনানের কথা ভাবতে ভাবতেই ফোনে তার কল। অন্তরা ওর নাম্বারটা দেখে খুব খুশি হয়।
রিসিভ করে কানের পাশে নিয়ে বলে,
” আসসালামুয়ালাইকুম জামাই।”
” ওয়ালাইকুমাসালাম বৌ। তারপর, কী করছ?”
“আপনার কথাই ভাবছিলাম। আপনারতো আর আমার কথা ভাবার সময় নেই। ব্যস্ত মানুষ।”
আফনান হাসে। ইশশ! কতদিন পর এই হাশিটা শুনছে অন্তরা। ছেলেটে জলন্ত আগুনে পুড়িয়ে মারবে একদিন। কিছুক্ষণ কথা হলো দুজনের মাঝে। তবে আফনানের কাছে কথা বলারও তেমন সময় নেই।
“একটা কাজ করো তো।”
“কী কাজ?”
“ফোনটা রেখে আমাদের রুমে গিয়ে আলমারিটা খুলবে। নিচের যে ড্রয়ারটা আছে ছোট, সেটা খুলে দেখো।”
“কী আছে?”
“গেলেই বুঝতে পারবে।”
আফনান কল কেটে দেয়। অন্তরা এক দৌড়ে রুমে চলে যায়। কথামতো ড্রয়ার খুলতেই দেখে একটা বড় বক্স। বক্সটা নিয়ে অধীর আগ্রহে খাটে গিয়ে বসে অন্তরা। খুলে দেখে ভিতরে প্রায় ষোল রকমের চুড়ি। অন্তরা খুব খুশি হয়। মানুষটা এসব সারপ্রাইজ দেয়ারও সময় পায়?
তবে একটা জিনিস সে বুঝছে না। আফনান বুঝল কি করে তার চুড়ি পছন্দ। তবে বক্সে চুড়ির সাথে একটা সুন্দর গোলাপও ছিল। যদিও ফুলটা অনেকটা শুকিয়ে গিয়েছে। অন্তরা খুব যত্নে সেটাকে নিয়ে তার পড়ার টেবিলের একপাশে সাজিয়ে রাখে। এই ফুলটা দেখলে মনে হবে আফনান তার সাথে আছে।
……
“থ্যাংকস দোস্ত। সেদিন রাতে ম্যানেজ করে নিলি।”
আফনানের কথায় ওর বন্ধু হেসে বলে,
“তুইতো আমার ফ্রেন্ড। এতটুকুতো করতেই পারি। আর তোর কষ্টতো আমি বুঝি।”
আফনান ভ্রু কুচকে জিগ্গেস করে,
“মানে?”
“থাক এখন আর সাধু সাজতে হবে না। ছেলেদের তো এমন কষ্ট হয়ই।”
“কি বলতে চাইছিস মেয়েদের মতো ঢং না করে বলত।”
” ছি ছিহ! বৌয়ের শোকে এখন তুই ছেলেদেরও মেয়ে হিসেবে দেখছিস? সাবধানস আর্মি ক্যাম্পে এসব এলাউ না।”
আফনান বিরক্ত হয়ে নিজের রাইফেল ঠিক করতে লাগল। আর বলে উঠল,
“তুই জীবণে শুধরাবি না।”
“কি করে ভালো হবো বলতো? আমার কী তোর মতো বৌ আছে? বয়স হয়ে যাচ্ছে ঠিকঠিক ছুটিও পাচ্ছি না আর মা বেশি গরজও করছে না বিয়ের। আমার কি বাসর টাসর করতে মন চায় না?”
“আহারে, ভাই আমার। দাড়া। এবার মিশনটা ঠিকঠাক ভাবে শেষ করি। তোর জন্য বৌ খুজে বের করব।”
“আচ্ছা, আমরা বেচে ফিরব তো?”
আফনান এই কথার কোনো উত্তর দিতে পারে না। তবুও মনটা শক্ত করে বলে,
“কেন পারব না? পারতেই হবে। আমার বৌয়ের সাথে বাসর করার জন্য হোক আর তোর বিয়ে করার জন্য হোক। পারতে তো হবেই।”
দুজনেই এই কথায় হেসে উঠে। ট্রেনিং এ যাবে এখন সবাই। সব রেডি করতে করতে আফনানকে উদ্দেশ্য করে তার বন্ধু রোহান বলল,
“তোর কথা শুনে মনে হলো এখন বিয়ে না করেই ভালো করেছি।মানে সামনে খাবার আছে অথচ খেতে পারছি না। স্বাধীন দেশে মুক্তিযোদ্ধারা ডুকতে পারছে না। আহ! কি কষ্ট!”
“থাম ভাই। আর কাটা ঘাঁ তে নুনের সিটা দিস না। প্লিজ।”
“এইভাবে না, বল ঐ মামা না প্লিজ।”
দুজনে আবার হেসে উঠে।
……….
বাসায় এখন সবাই ফেরত এসেছে। বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ যে। অন্তরার মনটা এখন খুব ভালো। বাড়িতে মানুষজন থাকলেই বাড়িটাকে বাড়ি বাড়ি মনে হয়। নয়ত ঘুমন্ত কোনো নরক মনে হয়।
অন্তরা কাজ করছে আর একা একা গান গাইছে আর আফনানের দেয়া ফুলের কথাটা ভাবছে।
“আহা টামাটার বারে মাজেদার,
উফফ টামাটার বারে মাজেদার।”
অন্তরা রান্নাঘরে দাড়িয়ে দাড়িয়ে আলু সিদ্ধ করছিল। আফনানের মায়ের আলুর চপ খেতে ইচ্ছে করছে। তাই বৌকে বলল একটু বানিয়ে দিতে। অন্তরাও তাই করছে। তবে এমন সময় চারু সেখানে আসে।
চারু ঐ বাড়ি থেকে আসার পরই একটু কেমন যেন করছে। মানে অন্তরার দিকে বারবার তাকিয়ে কি যেন ভাবছে। অন্তরাও বিষয়টা বুঝতে পেরে বলে উঠে,
“আপু কিছু বলবেন?”
“না নাহ। কিছুনা।”
চারু তাড়াতাড়ি সেখান থেকে একটা বাটি নিয়ে সড়ে আসে। আর মনে মনে ভাবে, মেয়েটা সন্দেহ করল নাতো? আফনান জানতে পারলে জানে শে ষ করে দিবে।
সে আড়ালে এসে কাউকে কল দিয়ে বলে,
“সাবধান। আফনান কিন্তু আপনাকে ছাড়বে না। সবটা বুঝে ফেললে আমিও শেষ।”
ফোনের ওপাশ থেকে উত্তর এলো,
“ডোন্ট ওয়ারি। এটাই মেজর আফনান সাদিকের জীবণের শেষ মিশন হবে। আই চ্যালেঞ্জ ইউ।”
চারু একটা ডেবিল স্মাইল করে ফোন রেখে দিল। অন্তরার দিকে তাকিয়ে ভাবল,
“আমি যাকে পাইনি। তাকে কাউকে পেতেও দিবো না।”
#চলবে …..
( আসসালামুয়ালাইকুম। গল্প পড়লে রিয়েক্ট দেয়ার অনুরোধ রইল। ধন্যবাদ।)