দি_বাটারফ্লাই_ইফেক্ট লেখিকা : #আরফিন_জাহান_আনিকা পর্ব : ১৪

0
25

গল্পের নাম : #দি_বাটারফ্লাই_ইফেক্ট
লেখিকা : #আরফিন_জাহান_আনিকা
পর্ব : ১৪ (❌কপি করা নিষেধ❌)

“ফারিয়া।”

নিজের নাম শুনে পিছনে তাকায় ফারিয়া। সকাল সকাল ভার্সিটি যাচ্ছিল। রিকশা না পাওয়ায় ফুটপাতে হেটেই যাচ্ছিল। খুব একটা দূরে না ভার্সিটি। তবে পরিচিত কন্ঠে নিজের নাম শুনে দাড়িয়ে যায়। পিছন ফির‍ে দেখে পরিচিত মুখ। চেহারায় অটোমেটিক একটা হাসি চলে আসে।

“সায়েম, এখানে হঠাৎ?”

“কেন আসতে পারি না?”

ফারিয়া হাসে। সায়েম কাছে আসতে আসতে বলে,

“হাসবেন না ম্যাডাম। হিন্দিতে একটা কথা আছে, ‘হাছি তো ফাছি”, ঐটা মনে রাখবেন।”

ফারিয়া যেন আরো জোরে হেসে উঠে। সায়েম ওর এক হাত নিয়ে নিজের হাতের মাঝে শক্ত করে ধরে।

“চলো, পাশের রেস্টুরেন্টে যাওয়া যাক।”

ফারিয়া বাধা দেয় না। এতদিনে ওদের মাঝে সম্পর্কের জলটা অনেক দূর গড়িয়ে গিয়েছে। এখন অনেক সময় বসে বসে সায়েম দুনিয়ার আজগুবি সব গল্প বলবে। আর ফারিয়া এক হাত ভাজ করে মাথা রেখে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে ওকে দেখবে আর শুনবে।
…….

রোদেলা আজ দুদিন পর অফিস এসেছে। শরীরটা একটু খারাপ থাকায় দুদিন আসতে পারেনি। ছুটিও নিয়েছিল। লিফটে করে ওঠার সময় ইয়াসিনের সাথে দেখা। শুধু দুজনেই আছে ভিতরে। রোদেলাকে দেখে ইয়াসিন প্রশ্ন করে,

“এখন কেমন আছেন মিস রোদেলা?”

“আলহামদুলিল্লাহ”

” যাক বাচা গেল। আমি যে কত টেনশনে ছিলাম।”

রোদেলা একটু বাকা ভাবে ইয়াসিনের দিকে তাকালো। পরে অন্যদিকে মাথা ঘুরিয়ে নেয়। এতদিনে এই লোকটার নিব্বা মার্কা প্রেমে রোদেলা অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে। ইয়াসিনের ব্যবহারে সে ইদানিং পরিষ্কার বুঝতে পারছে, লোকটা ওর প্রেমে পড়েছে।

একটু হাসে সে আনমনে। ওর পাগলামোর প্রশংসা না করে পারা যাবে না। তবে তার পরপরই মুখের হাসি থেমে যায় রোদেলার। তার সত্যিটা হয়ত ও জানে না। না জানারই কথা। জানলে আর এসব পাগলামি করত না।

ইয়াসিন রোদেলার দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকে, এখনো কত ইনোসেন্ট ওর ফেইসটা। আচ্ছা? ঐ জানো য়ারগুলোর একটুও বাধলো না বিবেকে? ওরা মানুষ নাকি অন্যকিছু।

“একটা কথা বলি?”

“জ্বী স্যার বলুন।”

“আমি যদি আপনার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠাই। আপনি মাইন্ড করবেন?”

রোদেলা হতবম্ভ হয়ে যায়। ওখন এভাবে এখানে ইয়াসিন এমন কিছু বলতে পারে সেটা রোদেলার ভাবনান বাহিরে ছিল। আর বাসা অব্দি যাওয়া মানেই সবটা জেনে যাওয়া। তখন বাকিদের মতো এই লোকটাও নাক ছিটকাবে। তার মানে এই চাকরিটা আর বেশিদিন করা হবে না।

রোদেলাকে এতটা ঘাবড়ে গিয়ে চুপ থাকতে দেখে ইয়াসিন বলে,

“আমি আপনাকে জোর করব না মিস রোদেলা। আপনি কাকে জীবনে জড়াবেন সেটা আপনার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে একটা কথা কি জানেন?”

রোদেলা জিগ্যেস করার ভঙ্গিতে তাকায়। ইয়াসিন বলে উঠে,

“আমি আপনার সব সত্যি মেনে নিয়েই আপনার সাথে সারাটা জীবণ থাকতে রাজি। হয়ত এটাই ভালোবাসা।”

এমন সময় লিফটের দরজাও খুলে যায়। রোদেলা এক মিনিট না দাড়িয়ে জলদি সেখান থেকে বেরিয়ে যায়। ইয়াসিন শুধু এক দৃষ্টিতে ওর যাওয়ার পথে তাকিয়ে থাকে।

“আমিও দেখি কতদিন এই প্রেমিক পুরুষের প্রেমে না পড়ে তুমি থাকো মেয়ে।”
………

“আপনার টিমের সবাই রেডি তো মেজর আফনান?”

“ইয়েস মেজর রোহান। আমরা ফ্রন্ট সাইড দিয়ে যাচ্ছি। আপনারা ব্যাক সাইড দিয়ে এগুতে থাকুন।”

দুটো টিম দুদিকে ভাগ হয়ে যায়। চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় এক পরিত্যক্ত স্থানে ঘাটি বেধেছে রেদওয়ান ও তার দলের সবাই। এই পুরো এলাকাটা ওদের কবজায়। অস্ত্র সহ ছেলেপিলেও কম নেই রেদওয়ানদের। এত দিন যত টিম এসেছে ফেরত গিয়েছে তাদের লাশ।

আজ পুরো সেনাবাহিনীর সবচেয়ে বেস্ট দুটো টিম এসে এই ভয়ানক রণক্ষেত্রে। লড়াইটা এখন শুধু প্রফেশনাল না। পার্সোনালও হয়ে উঠেছে। বোনের সাথে হওয়া অন্যায়, স্ত্রীকে ক্ষতি করতে চাওয়া কিংবা দেশের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা। সব কিছুই করেছে রেদওয়ান। আফনান নিজকে সাহস জোগায়।

“কাম অন আফনান। ইউ ক্যান ডু ইট।”

সবকিছু প্লান মোতাবেক চলতে থাকে। দুটো টিমের মাঝে ওয়াকি টকি দিয়ে তথ্য আদান প্রদান হচ্ছে। দুই বন্ধুই লিড দিচ্ছে টিম দুটো।

“আমার সাহসী সেনারা, কেউ পিছে ফিরবেন না। হয় জিতব না হয় মরব। হার নিয়ে ফেরত গিয়ে দেশকে বিপদের মুখে আমরা ফেলব না। সবাই বুঝতে পেরেছেন?”

“ইয়েস স্যার।”

আফনান ওর টিম নিয়ে সামনে এগুতে থাকে। মেইন দুটো টিমকে আবার ছোট ছোট চারটা করে টিমে ভাগ করা হয়েছে। আফনান নিজে সবচেয়ে রিক্স আছে যেই টিমের, তার মাঝেই আছে। আগে থেকেই পরিকল্পনা করা আছে।

দুজন সেনা সদস্য ইচ্ছে করেই দুটো ভুল নিশানায় অন্য পাশ থেকে গুলি করবে। স্বাভাবিক তখন রেদওয়ানের দলের লোকরা ঐদিকেই টার্গেট করে সামনে আসবে। এই সুযোগে ছোট ছোট তিনটে টিমই সামনে এগিয়ে যাবে। দুটো টিম ফিলডে থেকে লড়াই করবে।

একটি টিম সোজা সামনে থাকা পুরোনো বাড়িটায়ও ঢুকে যাবে। পেছন থেকে মেজর রোহানের একটা টিম ওদের সাথে ভিতরে যাবে। দুটো টিম পেছনের শত্রুতের সাথে লড়বে। আর শেষ টিমটা সবার সেইফটির জন্য সব তথ্য মেইন ক্যাম্পে অফিসারদের কাছে পাঠাবে।

অবস্থা খারাপ দেখলে সেনাদের সেইফটির জন্য ফেরত আসতেও বলা হয়েছে। বাকিটা দেখা যাক।

প্লান মোতাবেক সবকিছু চলছিল। বাড়িটার ভিতরেও আফনান তার টিম নিয়ে পৌছে যায়। তবে রোহানের আসতে কিছুটা দেরি হচ্ছিল। তবে এই একটু দেরি, পুরো ফলাফলটা পাল্টে দিতে পারে। তাই আফনান সোজা দোতলায় চলে যায়। আর ওর টিমকে পাহারায় রাখে যেন ওদের দলের লোক আর ভিতরে না আসতে পার।

দোতলায় রেদওয়ান আছে। ওকে জিম্মি করতে পারলেই সবকিছু থেমে যাবে। তবে দোতলায় এসে রেদওয়ানকে একা দেখে আফনান বেশ অবাক হয়।

“ওয়েলকাম মেজন আফনান সাদিক। আর ইউ ওকে?”

“ব্যাপারটা কি বলতো? নিচে তোর দলের লোকদের অভাব নেই। আর এখানে তুই একা কেন?”

“এইতো এক্ষুনি বুঝতে পারবি।”

আফনান আর এক পা এগানোর আগেই কেউ একজন সজোরে পিছন হতে তার মাথায় আঘাত করে। তার টিম থাকতে ঐ দলের কেউতো ভিতরে আসার কথা না। তবে কি আফনানের নিজের দলের কেউই বিশ্বাসঘাতকতা করল। নিচে লুটিয়ে পরতে পরতে আফনান ঝাপসা ঝাপসা যাকে দেখতে পায়, তাকে দেখে বলে উঠে,

“রোহান, তুই!”

রোহান বিকৃত একটা হাসি দিয়ে বলল,

“এবরিথিং ইজ ফেয়ার ইন লাব এন্ড ওয়্যার দোস্ত। ডোন্ট মাইন্ড। এই দেশের শুধু একজন হিরোই প্রয়োজন। তুই থাকতে সেটা আমি হতে পারতাম না। তাই আলবিদাহ।”

#চলবে…..

{ আসসালামুয়ালাইকুম। আর হয়ত দুটো পর্ব আছে। হ্যাপি রিডিং।}

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here