পতিতা পল্লী ১২তম পর্ব

0
1907

পতিতা পল্লী
১২তম পর্ব

ডালিয়া দেখল…..

একজন মধ্য বায়স্ক লোক রাস্তায় ভিক্ষা করছে তার একটা পা ভাঙ্গা।ডালিয়ার লোকটাকে বেশ চেনা চেনা লাগছে।ডালিয়াকে দেখে লোকটা মুখটা লুকাতে চাইল।ডালিয়া লোকটাকে ভালো করে খেয়াল করে দেখল এ আর কেউ না এ যে তার বাবা।কিন্তু তার বাবার এ হাল হল কিভাবে?ডালিয়া জটপট বাবার হাত টা ধরে বলল

—বাবা তুমি এখানে কেন?তোমার এ হাল কেন?এভাবে এখানে বসে আছ কেন।তোমার কি হয়েছে বাবা? তুমি এভাবে ভিক্ষা করছ কেন।তোমার পা ভাঙ্গছে কিভাবে?বাবা কথা বলছ না কেন?কথা বল।

—কে তুমি আমাকে বাবা বলে ডাকছ।আমি কারও বাবা না।আমি তোমাকে চিনি না।

—বাবা ভালো করে দেখ আমি তোমার ডালিয়া।কতদিন পর তোমাকে দেখলাম।

—আমার ডালিয়া নামে কোন মেয়ে নাই।আমি তোমাকে চিনি না। তুমি এখান থেকে যাও তো মা।

—বাবা এমন করে বল না।আমার সাথে চল তুমি।তোমাকে রেখে যাব না আমি।

—বললাম তো আমি কারও বাবা না।এই যে সাহেব আপনার কে হয় ওনি?

—চাচা আমার বউ হয়।

—আপনি আপনার বউকে নিয়ে যান হয়ত ওনি ওনার বাবার চেহারা গুলিয়ে ফেলছে।আমার কোন মেয়ে নাই।

—আচ্ছা চাচা আপনি অস্থির হবেন না।আমি দেখছি।

অরণ্য বুঝতে পারল না ডালিয়া হঠাৎ ওনাকে দেখে এমন কেন করছে।তাই ডালিয়াকে বলল

—দেখ ডালু ওনি তো বলল তোমাকে চিনে না হয়ত তোমার ভুল হচ্ছে।চল এবার বাসায় চল।

—-নাহ অরু আমার ভুল হচ্ছে না।ওনিই আমার বাবা।

—আচ্ছা ডালু এবার চল বাসায় যায়।ওনি তো যেতে চাচ্ছে না।আমরা পরে একদিন আসব নে।

এই বলে অরণ্য ডালিয়াকে চেপে ধরে রিকশায় তুলল।আর ডালিয়া বাবা,বাবা বলে চিল্লাতে লাগল।রিকশায় উঠে ডালিয়া বেশ কাঁদতে লাগল।অরণ্য ডালিয়ার কান্না দেখে বলল

—সত্যিই কি ওনি তোমার বাবা?তোমার কি কোথাও ভুল হয়েছে কি না দেখ।

—দেখেন আমি মেয়ে হয়ে বাবাকে চিনব না।ওনিই আমার বাবা।কিন্তু আমার বাবার এ হাল কিভাবে হল।কিভাবে ওনি এখানে আসল।আমাকেই বা কেন না চিনার ভান ধরল।আমি তো ওনার কাছে টাকা পয়সা চাইব না বুঝতেই পেরেছে তবু কেন এমন করল।

—তা তো জানি না।তবে যে বাবা তোমার এত বড় ক্ষতি করেছে।এত কষ্ট দিয়েছে।সে বাবার জন্য তুমি চোখের পানি ফেলছ ডালিয়া।ওনার এ অবস্থা হয়েছে ভালোই হয়েছে।

—দেখেন আমি জানি ওনি আমার সাথে যা করেছে অন্যায় করেছে এটা করা ওনার ঠিক হয় নি।কিন্তু যতই হোক ওনি আমার বাবা।ওনার জন্য আমি এ দুনিয়া দেখতে পারছি।যত নিকৃষ্টই হোক ওনার মেয়ে তো আমি আর ওনি তো আমার বাবা।হয়ত বাবা বুঝতে না পেরে সময় আর পরিস্থিতি এর প্রেক্ষিতে একটা ভুল কাজ করেছে তাই বলে মেয়ে হয়ে বাবাকে অস্বীকার করব।বাবার এমন দুর্দিন দেখে চুপ করে থাকব।সেটা তো হয় না।

অরণ্য ডালিয়ার কথা শোনে বেশ অবাক হল।এত ছোট মেয়ে তার কত বড় বুঝ।সে ঠিকেই কতটা গভীর ভাবে চিন্তা করে কথাগুলো বলেছে।সত্যিই ডালিয়াটা একটা অসাধারণ মেয়ে।ডালিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখল ডালিয়ার চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে।অরণ্য ডালিয়ার চোখ দুটো মুছে দিয়ে বলল

—সব ঠিক হয়ে যাবে, চিন্তা কর না।

হঠাৎ রিকশা ওয়ালা বলে উঠল

—মামা চইলা আইছি।নামবেন না?

—হ্যা মামা নামতেছি।

—মামা মামীর মনে হয় মনডা খারাপ।

—তা একটু খারাপ।

—এত সুন্দর মামীডারে কষ্ট দিয়েন না।

—আচ্ছা দিব না মামা।আপনাকে কত দিব।

—আপনার যা ইচ্ছা দেন।

অরণ্য পকেট থেকে ৫০০ টাকা নোট বের করে দিল।রিকশাওয়ালা ৫০০ টাকা নিয়ে বলল

—এত বড় নোটের তো ভাংতি হবে না।ছোট নোট দিন মামা।

—আরে ভাংতি লাগবে না।পুরাটাই তোমাকে দিয়ে দিছি।তুমি তোমার মামীর জন্য দোআ কর।

রিকশা ওয়ালা খুশি হয়ে বলতে লাগল

—মামা আল্লাহ আপনাদের ভালো রাখুক।মামীর কোলে ফুটফুটে একটা সন্তান দিক।আল্লাহ আপনাদের মনের ইচ্ছা পূরণ করুক।

ডালিয়া রিকশা ওয়ালার কথা শোনে বেশ লজ্জা পেল।তারপর দুজন বাসায় গেল।বাসায় গিয়েও যেন ডালিয়ার মন পড়ে রইল তার বাবার দিকে।অনেক টা চুপচাপ হয়ে রইল।অরণ্য বেশ বুঝতে পারল ডালিয়া কষ্ট পাচ্ছে।আর এদিকে ডালিয়া শুধু ভাবতে লাগল,তার বাবা কেন তার সাথে এমন করল।কেন তার বাবা তাকে না চিনার ভান করল।এ হাল কিভাবে হল তার বাবার।তার সৎ মা কোথায়।এসব ভাবতে ভাবতে ক্লান্তিতে ডালিয়া চোখ বুজে আসল আর ডালিয়া ঘুমিয়ে গেল।সকালে উঠে খেয়াল করল ৮ টা বেজে গেছে।ডালিয়ার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল।এত সকাল হয়ে গেছে এখনও কিছু রান্না হয় নি অরণ্য কি খেয়ে যাবে একথা ভেবে।ডালিয়া তাড়াতাড়ি রান্না ঘরে গিয়ে যা দেখল অবাক না হয়ে পারল না।দেখল অরণ্য রান্না করতেছে।ডালিয়া অরণ্য দেখে কিছুটা বিস্মিত হয়ে বলল

—আপনি রান্না করতে কেন এসেছেন।আমাকে ডাক দিলেই তো পারতেন।

—তুমি এত সুন্দর করে ঘুমিয়েছ।তোমাকে ঘুমানো অবস্থায় দেখে বেশ নিষ্পাপ লাগছিল।কেন জানি মন চাচ্ছিল না তোমাকে ডাকতে তাই ডাকে নি।

—আচ্ছা সরুন এবার বাকিটা আমি করছি।

—আর কিছু করতে হবে না।তুমি চুপ করে গিয়ে বস।আজকে আমিই রান্না করব।এখানে পাকামো করতে আসবা না একদম।

—হুহ রান্না করে একদম আমাকে উদ্ধার করে দিচ্ছে।মনে হচ্ছে ওনি একাই রান্না বিশারদ।হুহ।

ডালিয়ার বাচ্চাসুলভ উত্তর শোনে অরণ্য মনে মনে হাসতে লাগল।এর মধ্যে রান্নাও শেষ করল।তারপর টেবিলে গুছাতে যাবে ঠিক এ মুহুর্তে ডালিয়া বলল

—এবার টেবিলটা গুছাতে আমাকে দিন।

—আমি রান্না করতে পারছি টেবিল ও গুছাতে পারব। তুমি চুপচাপ বসে দেখ শুধু।

ডালিয়া আর কি করবে।বুঝতে পারল অরণ্য বেশ ঘাড় তেরামো শুরু করছে।তাই সে বসে বসে অরণ্যের কান্ড দেখতে থাকল।হঠাৎ টুংটাং কলিংবেলের আওয়াজ পেল।রান্না ঘর থেকে অরণ্য বলে উঠল

—ডালু দেখতো কে এসেছে।

হ্যাঁ আমি দেখতেছি এ বলে ডালিয়া দরজা খুলে দেখল একটা মেয়ে দাঁড়ানো।মেয়েটা বেশ সুন্দরী।ডালিয়া মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করল

—আপনি কে?

—আমি কে সেটা তোমাকে কেন বলব? অরণ্য কোথায়?

—অরু তো রান্না ঘরে।কিন্তু আপনি কে?পরিচয় না দিয়ে ঢুকে পড়ছেন কেন?

—আমার বাড়িতে আমি ঢুকব তোমার কাছে কেন পরিচয় দিয়ে ঢুকতে হবে।এখান থেকে ওদিকে যাও আমাকে ডুকতে দাও।

—আগে তো বলবেন আপনি কে?

অরণ্য রান্না ঘর থেকে বলতে লাগল

—কি হল ডালু কে এসেছে?এত কথা কিসের?

—জানি না আপনি এসে দেখেন তো কে এসেছে।চিনি না। একটা মেয়ে এসেছে।

—দাঁড়াও আমি আসতেছি।ওনাকে বসতে বল।

অরণ্য রান্না ঘর থেকে এসে চমকে গেল কারন অরণ্য খেয়াল করল মাবিহা এসেছে।মাবিহাকে দেখে অরণ্য বেশ চটেও গেল।মাবিহাকে বলল

—তুমি এখানে কি করতে এসেছ মাবিহা?

—অরণ্য আমি তোমার কাছে এসেছি তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিও না।

—মাবিহা প্লিজ তুমি চলে যাও এখন। তোমাকে মেনে নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না।প্লিজ যাও।

—অরণ্য আমার কথাটা শোন।

—কোন কথা শোনবা না যাও তো এখান থেকে।

পাশ থেকে ডালিয়া বলে উঠল

—ওনি কি বলতে চায় একবার শোনেন।

মাবিহা ডালিয়ার কথা শোনে আরও চটে গেল আর বলল

—এই মেয়ে আমাদের মধ্যে কথা বলার তুমি কে?তোমাকে এত বড় সাহস কে দিয়েছে এভাবে কথা বলার।তুমি সেই মেয়েটা যে অরণ্যের মাথা খেয়েছে।

ডালিয়াকে এভাবে অপমান করতে দেখে অরণ্য আরও রেগে গেল আর বলল

—ও ডালিয়া।ডালিয়ার সাথে ভদ্র ভাষায় কথা বল। তোমাকে এত বড় সাহস কে দিয়েছে ওকে অপমান করার।আর শোন ও আমার স্ত্রী।

পাশ থেকে ডালিয়া কি জানি বলতে চাইছিল।তখন অরণ্য ডালিয়ার গালে একটা কষিয়ে চড় বসিয়ে বলল

—আমাদের কথার মাঝখানে এখন তুমি কোন কথা বলবা না।আর মাবিহা দেখছ তো তোমার জন্য ডালুর সাথে আমার জামেলা হচ্ছে।আমাদের সুখের সংসারটা নষ্ট করে দিও না।প্লিজ আমাকে মুক্তি দাও।আমি তোমাকে আর ভালোবাসি না।ভালোবাসা কি জোর করে হয় বল?তুমি যেদিন আাকশের সাথে চলে গিয়েছিলে সেদিন তো আমি তোমাকে কোন বাধা দেয় নি।জোর করে তোমাকে পেতে চায় নি।তবে আজকে কেন তুমি আমাকে জোর করতেছে।আমার আর ডালিয়ার জীবনে জটিলতা সৃষ্টি করতেছ।তোমার জন্য ডালিয়ার গায়ে হাত তুললাম।প্লিজ মাবিহা আমাকে ক্ষমা করে দাও।আমাদের দাম্পত্য জীবনটা নষ্ট কর না।তুমি চলে যাও।

অরণ্যের কথা শোনে মাবিহার চোখের জল ছল ছল করতে লাগল। বুঝতে পারল তার অরণ্য এখন ডালিয়ার হয়ে গেছে তার অরণ্য এখন আর তার নেই।কিছুটা লজ্জিত আর অণুতপ্ত হল।আর বলল

—অরণ্য আমি সরি।আমি বুঝতে পারে নি যে তুমি আমাকে এভাবে পর করে দিয়েছ।বুঝতে পারে নি তুমি আর আমার অরণ্য নেই।তুমি এখন ডালিয়ার হয়ে গেছ এটা ভাবতেও পারি নি।আর তোমার জীবনে কাটা হয়ে দাঁড়াব না।যে ভুল আমি করেছি তার শাস্তি তো আমাকে পেতেই হবে।তোমরা দুজন ভালো থাকো।আর ডালিয়া মনে কষ্ট নিও না।তোমাদের মাঝে এভাবে আসা আমার ঠিক হয় নি।

এই বলে মাবিহা কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল।আর ডালিয়াও চরটা খেয়ে বেশ অভিমান নিয়া রুমে গেল আর কাঁদতে লাগল।কিছুক্ষণ পর ডালিয়া খেয়াল করল অরণ্য এসেছে।অরণ্যকে দেখে যেন ডালিয়ার অভিমানের পাল্লাটা আরও ভারী হল।ডালিয়া তার মুখটা অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিল।অরণ্য ডালিয়াকে এদিকে টেনে নিজের দিকে মুখ ফিরিয়ে বলল

—ডালু সরি এভাবে চড় দেওয়াটা ঠিক হয় নি।এভাবে চড় না দিলে তো তুমি বলেই ফেলতে যে তুমি আমার স্ত্রী না।

ডালিয়া অভিমানী কন্ঠে জিজ্ঞেস করল

—আপনি জানলেন কিভাবে যে আমি এটাই বলব।

—আমি তোমার মনের কথা বুঝি।কিন্তু তুমি মাবিহার পক্ষ টানতেছিলে কেন?

—কারন আপনি মাবিহাকে ভালোবাসেন আমি চেয়েছিলাম মাবিহার সাথে যেন আপনার সব ঠিক হয়ে যায়।

—কে বলেছে আমি মাবিহাকে ভালোবাসি?

—আমার মনে হল।

—তুমি ভুল জান।আমি মাবিহাকে ভালোবাসি না।কিন্তু সরি তোমাকে এভাবে চড় দেওয়াটা ঠিক হয় নি।রাগ কর না।

অরণ্যের আদর পেয়ে ডালিয়ার অভিমান টা যেন আরও বেড়ে গেল।ডালিয়া এবার কেঁদেই দিল।অরণ্য ডালিয়াকে বুকে টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরে বলল

—আমার পাগলিটাকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলছি।আমার পাগলিটা কান্না কর না।আর এমন ভুল হবে না।আমার পাগলিটা যা বলবে তাই করব।কান্নাটাও থামাও প্লিজ।তুমি কাঁদলে যে আমার ভালো লাগে না।প্লিজ কেঁদো না।

—এখন আর আদর করে কথা বলতে হবে চড় দেওয়ার সময় হুশ ছিল না।

অরণ্য এবার ডালিয়ার গালটা টেনে একটা চুমু দিল।আর বলল সরি। ডালিয়ার অভিমানটাও বেশ কমে গেল অরণ্যের ঠোঁটের কোমল স্পর্শ পেয়ে।অরণ্য ডালিয়ার লজ্জা মাখা মুখটা দেখে বলল

—আর লজ্জা পেতে হবে না।চল এবার খেতে চল।অফিস যেতে আজকেও লেট হবে।

—যেভাবে বলছ লেট মনে হয় আমি করতেছি।হুহ।এখন সব দোষ আমার ঘাড়ে চাপানো হচ্ছে তাই না।

অরণ্য হাসতে হাসতে উত্তর দিল

—আমার ডালুর ঘাড়ে দোষ চাপানোর সাহস আমার আছে নাকি।

—হুহ এখন আর ঢঙ ধরতে হবে না খেতে চলেন।না হয় আর আজকে অফিসে যাওয়া লাগবে না।

তারপর দুজন মিলে খেতে গেল।খাওয়া শেষে অরণ্য হাসপাতালে গেল।আর ডালিয়া ঘরের কাজ করতে লাগল।ডালিয়া কাজ করতে করতে খেয়াল করল সন্ধ্যা হয়ে গেছে।কিন্তু অরণ্যের আসার কথা ছিল ৫ টায় এখনও আসে নি।৭ টা বেজে গেছে এখনও কেন আসছে না ডালিয়া বুঝতে পারছিল না।ডালিয়া অরণ্যকে কল দিল দেখল অরণ্যের নাম্বারটা বন্ধ।বারবার কল দিল দেখল নাম্বার টা বন্ধ।ডালিয়া বেশ চিন্তায় পড়ে গেল।অরণ্যের ফোন বন্ধ কেন বুঝতে পারছিল না।ডালিয়া ডালিয়ার রুমে গিয়ে অপেক্ষা করতে লাগল কখন অরণ্য আসবে।দেখতে দেখতে ৯ টা বেজে গেল।ডালিয়ার চিন্তা যেন আরও বেড়ে গেল।ডালিয়া বুঝতে পারছিল না কি করবে।হঠাৎ রহমত চাচা এসে বলল ডালিয়া মা তোর সাথে জানি কে জানি দেখা করতে এসেছে।ডালিয়া জিজ্ঞেস করল

—কে এসেছে চাচা।

—তা তো জানি না।তুই গিয়ে দেখ মা।

—অরণ্য কেন আসছে না চাচা।

—তা জানি না।তুই নীচে গিয়ে দেখতো লোকটাকে চিনিস কি না।

ডালিয়া নীচে গিয়ে দেখল ডালিয়ার বাবা বসে আছে আর পাশে অরণ্য।ডালিয়া তার বাবাকে দেখে জড়িয়ে ধরে বলল

—বাবা তুমি এখানে কিভাবে আসলে?আর কালকে আমার সাথে কেন এমন করলে?তোমার এহাল কিভাবে হল?

ডালিয়ার বাবা হুহু করে কেঁদে আর বলল

—সব পাপের শাস্তিরে মা।তোর সাথে যে অন্যায় করেছি আমি তারেই শাস্তি পেয়েছি।তোকে না চিনার ভান এজন্য ধরেছি যে সুদিনে তোকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলাম আর এ দুর্দিনে তোকে বুকে জড়িয়ে নিলে যে তুই আমাকে লোভী ভাবতি মা।আল্লাহ আমাকে আমার পপের শাস্তি দিয়েছে।তোকে বের করে দেওয়ার কয়দিন পরেই আমার এক্সিডেন্ট হয়। আর তোর সৎ মা সব লিখে নিয়ে আমাকে বের করে দিয়েছে। এরপর থেকে আমি ভিক্ষা করে খাই মা।তোকে ফিরিয়ে দেওয়ার পর অরণ্য বাবা আজকে সন্ধ্যায় আমার কাছে যায় আমাকে বুঝিয়ে এখানে নিয়ে আসে।আমাকে ক্ষমা করে দিস মা।আমি যে বড়ই অন্যায় করে ফেলেছি।

বাবার কথাটা শোনে ডালিয়া অরণ্যের দিকে তাকাল।অরণ্য একরাশ হাসি দিয়ে চোখে সম্মতিসূচক ইশারা দিল।আর ডালিয়া বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলল

—আমি জানি বাবা তুমি যা করেছ না বুঝে করেছ।যত যাই হোক তুমি আমার বাবা।তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারব না।আজকে থেকে তুমি এখানেই থাকবে।

ডালিয়ার বাবা ভিতরে ভিতরে বেশ অনুতপ্ত হল।আর মেয়ের এমন আচরণ দেখে তার অণুতপ্তটা যেন আরও বেড়ে গেল।তার ভুল বুঝতে পেরে ভিতের কষ্টের ভারটা যেন আরও বেড়ে গেল।আর মা,বাবা মিলে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল।

অতঃপর ডালিয়ার বাবা এখানে রয়ে গেল।রহমত চাচা ডালিয়ার বাবাকে রুমে দেখিয়ে দিল আর খাবার খেতে দিল।আর ডালিয়া অরণ্যকে বলল

—আগে রুমে চল তোমার খবর আছে।

অরণ্য হসতে হাসতে রুমে গেল আর ডালিয়াকে জড়িয়ে ধরে বলল

—তা মহারাণী বলেন কি করবেন আমাকে,?

ডালিয়ার অরণ্যের হাতটা ছুটাইয়া বলল

—আপনার ফোন বন্ধ ছিল কেন?আপনি জানেন না আমার আপনাকে নিয়ে চিন্তা হয়।আর কখন এমন করবেন।

—ইচ্ছা করেই বন্ধ করেছি।

—ইচ্ছা করে বন্ধ করেছেন মানে?

—যাতে তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে পারি।

—-আমার আর কোন সারপ্রাইজ লাগবে না।আর এমন করবেন না।

—আচ্ছা বাবা আর করব না।এবার রাগ দেখানো অফ করে খবার রেডি কর অনেক ক্ষুদা লাগছে।সারাদিন তো খালি রাগ দেখাও।

—কি আমি রাগ দেখায় তাই না।আর আপনি যে কুকাম গুলো করেন সেটার বেলায় কিছু না।

—থাক আর বিস্ফোরণ ঘটাতে হবে না।আমারেই দোষ।এবার খুশি।খেতে দাও তাড়াতাড়ি

—আচ্ছা আপনি ফ্রেশ হয়ে নীচে আসুন।আমি খবার রেডি করছি।

এভাবে অরণ্য আর ডালিয়ার সম্পর্ক টা আস্তে আস্তে ভালোবাসায় রূপ নিল।মাবিহাও আর এর মধ্যে জামেলা করে নি।কারন মাবিহাও তার কাজের জন্য লজ্জিত।আর এদিকে অরণ্য আর ডালিয়ার সম্পর্টা বেশ জমে গেল।অরণ্য ও চিন্তা করল ডালিয়াকে বিয়ে করবে।

কিন্তু হঠাৎ একদিন

লেখিকা-#শারমিন আঁচল নিপা

(সবার জন্য আজকের পর্বটা বড় করে দিলাম।আর সবার কেমন বোধ হচ্ছে অরণ্য আর ডালিয়ার ভালোবাসা দেখে?)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here