শেষ পার্ট #মুখোশের আড়ালে তুমি #ফারহানা কবীর মানাল

0
14

শেষ পার্ট
#মুখোশের আড়ালে তুমি
#ফারহানা কবীর মানাল

চোখ খুলে নিজের মাকে চোখের সামনে দেখে চমকে উঠলাম আমি। মা তো মারা
গেছিলো তাহলে সে কি করে আমার সামনে বসে থাকতে পারে? আমি নিজের হাতে মায়ের লাশ কবর দিয়েছি। তাহলে কি আমি স্বপ্ন দেখছি? নাহ এটা তো স্বপ্ন হতে পারে না।

— মা তুমি? ( নাজিম)

— কে তোর মা? আমি তোর মায়ের জমজ বোন। তোর খালামনি।

— তাহলে তুমি আমাকে কেন বেঁধে রেখেছো? কি ক্ষতি করেছি আমি তোমার?

— তুই আমার কোনো ক্ষতি করিস নি। যা করার করেছে তোর মা।

— আমার মা তোমার ক্ষতি কেন করবে? তোমরা এতোদিন কোথায় ছিলে? আমি তো তোমাদের চিনতাম না।

— মরার আগে ছেলেটাকে সব সত্যি বলেই দিই। কি বলিস পিয়াস?

— হুম মা বলে দেও। নাহলে যে মরেও ও শান্তি পাবে না। হা হা হা। ( পিয়াস)

— হুম বলো কি সত্যি? আমি সবটা জানতে চাই।

— তাহলে শোন। তোর মা আর আমার এক বাড়ির দুইছেলের সাথে বিয়ে হয়। তারাও জমজ ছিলো৷ বাবা আমাদের কথামতো দুইজন জমজ ছেলেকে খুজে বের করেছিলেন। স্বভাবতই তোর মা ছিলো শান্ত আর উদার মনের অধিকারী। তার সরলতা যে কোনো ছেলেকে ঘায়েল করতে পারতো। অন্যদিকে আমি বদ মেজাজি আর একরোখা ছিলাম।

আমি অবাক হয়ে ওনার কথা শুনছি। ওনার কোনো কথাই আমি বিশ্বাস করতাম না যদি না উনাকে মায়ের মতো দেখতে হতো। কিছুসময় থেমে উনি বলতে লাগলো

— তোর খালুর নজর ছিলো তোর মায়ের উপর। সে তোর মাকে কাছে পেতে চাইতো। কিন্তু তোর মা ছিলো সৎ তাই তেমন সুযোগ পেতো না।

— এতে মায়ের কি দোষ? আর আমাকে কেন মারতে চাইছেন?

— আহ সম্পূর্ণ কথা শেষ করতে দে আমাকে। একদিন বাড়িতে কেউ ছিলো না৷ তোর মা একা ছিলো সেদিন তোর খালু তোর মাকে নিজের করে নিলো। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো তোর মা তাকে কোনো বাঁধা দেয়নি। আমি অবাক হয়ে সেদিন শুধু দেখেছিলাম। আমাকে ঘরে আটকে রেখে তোর মা আর….

— চুপ করুন আপনি। আমার মা এমন নয়। যদি মা এমনই হতো তাহলে বছরের পর বছর আমাকে আগলে নিয়ে বেঁচে থাকতো না।

— আমি জামি তোর মা এমন নয়। সেদিন তোর মাকে উনি নেশার ঔষধ খাইয়েছিলেন যাতে করে তোর মা ওনাকে চিনতে পারে নি। দুই ভাইকে এক রকম দেখাতো কিনা।

— তাহলে আপনি আমাকে মারতে চাইছেন কেন? এতে আমি কি করেছি? মারতে হলে আপনার স্বামীকে গিয়ে মারুন।

— তাকে অনেক আগেই মেরে ফেলেছি আমি। সেদিনের পর থেকে আমি প্রতিশোধ নিতে চাইতাম শুধু। একদিন ঘুমের ঘোরে বালিশ চাপা দিয়ে মেরে ফেললাম জানোয়ারটাকে৷ কিন্তু ওই ঘটনা কিছুদিন পরে জানতে পারি তোর মা অন্তঃসত্ত্বা। তুই পৃথিবীতে আসবি।

তোর মাকে সেদিন বলেছিলাম এই জারজটাকে মেরে ফেল। কিন্তু তোর মায়ের মাতৃত্ব জেগে উঠলো। সে তোকে পৃথিবীতে আনবে। তোর মায়ের স্বামী সকল সম্পত্তি তোর নামে লিখে দিবে বলে ঠিক করলো৷ আমাকে এক কানা কড়িও দিতে চাইলো না। সেদিন থেকে ঠিক করে রেখেছিলাম তোকে আমি আমার হাতে মারবো৷ যেমন করে তোর বাপকে মেরে ছিলাম। একটা অবৈধ সন্তান সব কিছু পাবে আর আমি শুধু কষ্ট পাবো তা কি করে হয়? তোর মা না থাকলে আজ আমার জীবনটা অন্যরকম হতো।

— আমার মায়ের তো কোনো অন্যায় নেই৷ আর আমিই বা তোমার কি ক্ষতি করেছি?

— তুই আমার সবকিছু শেষ করে দিয়েছিস। তুই পৃথিবীতে আসার পর সকলে তোরে নিয়ে মেতে থাকতো৷ তোর মা রানীর মতো থাকতে লাগলো আর আমি দাসী হয়ে গেলাম। আমার সংসারটা শেষ করার পিছনে তো তোর মা’ই ছিলো৷ আমি তোকে মেরে ফেলার অনেক চেষ্টা করলাম কিন্তু লাভ হলো না। তোর মা যখন বুঝতে পারলো আমার কাছে থাকলে তোরে মেরে ফেলবো তাই একদিন তোর মা তোকে আমার হাত থেকে বাঁচাতে পালিয়ে চলে আসলো তোকে নিয়ে। নতুন করে বাঁচতে শিখলো তোকে নিয়ে আর সব হারিয়ে ফেললাম আমি৷

তোদের অনেক জায়গাতে খোঁজার পর যখন পেলো না তখন শোকে তোর মায়ের স্বামী মারা গেলো৷ কিন্তু আমি তোকে মারবো বলে প্রতিজ্ঞা করেছি তাই এতো কষ্ট করা।
অবশেষে একদিন তোর মাকে দেখতে পেলাম। সেদিন ট্রাকের নিচে ফেলে তোর মাকে মেরে ফেলেছিলাম। সবাই মনে করেছিলো এটা একটা দূর্রঘটনা কিন্তু সবটাই আমার পরিকল্পনা। আমি তোকে অনেক আগেই মারতে পারতাম কিন্তু তোকে তিলে তিলে মারতে চেয়েছি। তাই এতোকিছু করা৷ এখন চল অন্তিম কাজটা সেরে ফেলি।

এইকথা বলেই উনি আমার পেটে ছুরি ঢুকিয়ে দিলো৷ ব্যাথায় কুকড়ে উঠলাম আমি৷ চোখ বন্ধ হয়ে আসছে৷ মায়ের উপর সম্মানটা হাজারগুনে বেড়ে গেলো আজ। আমার জন্য মায়ের এই আত্মত্যাগ হয়তো স্বরণীয় হয়ে থাকবে। তোমার ছেলে তোমার কাছে আসছে মা। তোমার হত্যাকারীকে আমি শাস্তি দিতে পারলাম না। আমাকে মাফ করে দিও তুমি। মিতার কথা অনেক মনে পড়ছে। মেয়েটাকে শুধু শুধু সন্দেহ করেছিলাম আমি। এখনও হাজার ধোঁয়াশা আমার চোখের সামনে কিন্তু তাও আঁখি জোড়া চিরকালের জন্য বন্ধ হয়ে আসছে। আমার হত্যার কথা কি কেউ জানতে পারবে? মিতা কি অনেক কষ্ট পাবে? কিছু জানি না। শেষবারের মতো তাঁকতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হলাম আমি৷ ঘুমিয়ে গেলাম চিরতরে।

শেষ পার্ট
#মুখোশের_আড়ালে_তুমি
#ফারহানা কবীর মানাল

(কেমন লিখেছি জানি না। শেষের দিকে গুছিয়ে লিখতে পারিনি। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here