— ❝বউ সেজে সুই’সাইড করতে এসেছো? এখনো দাঁড়িয়ে আছো কেনো? দ্রুত সুই’সাইড করে ফেলো। এই প্রথম নিজ চোখে দেখবো। সুই’সাইড করা দেখার জন্য আমি খুব এক্সাইটেড। হারি আপ।❞
মীরাত গ্রামের একটা শুনশান স্থানে ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে অঝোরে কেঁদে যাচ্ছে।দৃষ্টি তার ব্রিজের নিচ দিয়ে প্রবাহমান নদীর পানির দিকে। আজ নিজেকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে আত্ন হ ত্যার পথ বেছে নিয়েছে সে। এই নিষ্ঠু র পৃথিবী তার জন্য নয়।হতভাগার জন্য এই নিষ্ঠু র মানুষ নয়। জীবনটা এতো কঠিন কেনো?একটু সহজ হলে কি পারতো না! এটা ভেবে চলেছে মীরাত অনেকটা সময় ধরে। হঠাৎ পুরুষালী গুরু গম্ভীর কণ্ঠে মীরাত ভাবনার মাঝেই চমকে উঠলো।ভড়কে গেলো সে।তার কান্না তৎক্ষনাৎ থেমে গেলো । কন্দনরত চক্ষুযুগল মুছে কৌতুহলবশত সে পেছনের দিকে তাকালো। সরু চোখে তাকালো গম্ভীর আওয়াজের অধিকারী মানবটির দিকে ।ল্যাম্পপোস্টের আবছা আলোয় কয়েক কদম পরেই পুরুষালী অবয়ব দেখলো সে। বুকে দুহাত গুজে তার দিকেই দৃষ্টি ফেলে তাকিয়ে আছে। অপরিচিত মানুষটির পেছনে একটা গাড়ি রাখা। কালো রঙের গাড়িটির হেডলাইট গুলো জ্বলছে এখনো। ভাবনায় এতোটাই বিভোর ছিলো যে গাড়ির আওয়াজও শুনে পায়নি। গভীর রাত চারিপাশ শুনশান। জনমানব শূন্য স্থানটি। ঝোপঝাড় থেকে ভেসে আসছে ঝিঁঝি পোকার ডাক। গ্রামের এই রাস্তায় রাতে মানুষের আনাগোনা থাকে না।
— “এই যে মিস অর মিসেস এতো রাতে গ্রামের এই শুনশান ব্রিজে দাঁড়িয়ে কি করছো? মনে তো হচ্ছে সুই সাইড করার ইনটেশন আছে। ”
আবারও পুরুষালী কন্ঠস্বর মীরাতের কর্ণে পৌঁছালো।কথাগুলো কানে ধাক্কার ন্যায় মনে হলো। সামনে দন্ডায়মান মানবটি যে তাকে শক্ত গলায় কথাটি বলেছে তা বুঝতে অসুবিধে হলো না মীরাতের।আশেপাশে সে একবার তাকিয়ে সে চারপাশ পর্যবেক্ষণ করলো। কেউ আছে কিনা দেখার জন্য। নাহ কেউ নেই।মীরাতের এখন ভ য় লাগছে।একটা অপরিচিত মানুষ তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। যদি খারাপ কিছু করে। ভাবতেই গলা শুকিয়ে এলো তার।শুকনো ঢোক গিলে পেছনের দিকে পেছাতে লাগলো সে। পেছাতে পেছাতে ব্রিজের রেলিঙের সাথে ধাক্কা খেলো। ভ য়ে চোখ খিচে বন্ধ করে নিলো সে।
মানবটি কপাল কুঁচকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে অবলোকন করলো বধূ বেশে মানবীকে। বয়স বিশ – বাইশ বছর হবে হয়তো।লাল টকটকে শাড়ি পরনে, হালকা গহনা,সাদামাটা সাজ। কান্নার ফলে সাজগুলো ন ষ্ট হয়ে গেছে।ল্যামপোস্টের হালকা সাদাটে আলোয় আর কিছু চোখে পরলো না। মেয়েটার আচরণ অদ্ভুত লাগলো তার কাছে।এতো রাতে একা একটা মেয়ে নির্জন স্থানে ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে আছে কেনো? এটাই ঘুরপাক খাচ্ছে মাথায়। মেয়েটি কি বি পদে পরেছে নাকি সুই সাইড করতে চাইছে তার বুঝে এলো না।মানবটি ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো মীরাতের দিকে।কিছুটা দুরত্ব নিয়ে দাঁড়ালো ব্রিজের কিনারায়।
— “ক্যান আই হেল্প ইউ? কোনো সমস্যা হলে বলতে পারো। আমি হেল্প করবো।”
মীরাত অপরিচিত মানবটির কন্ঠস্বর শুনে তাকালো তখনি। কিছুটা দুরত্বে দাঁড়ানো সুদর্শন, সুঠামদেহী মানবটিকে দেখে থমকালো সে।স্তব্ধ নয়নে মানবটির মুখ পাণে তাকালো সে। বুকের মাঝে ভ য় বিচরণ করছে। সামনের মানুষটিকে দেখে খা রাপ মনে হলে না।যথেষ্ট ভদ্র ঘরের ছেলে বলে মনে হচ্ছে। তবুও অনেকটা ভ য় মনের মাঝে জেঁকে ধরেছে । বুকের মাঝে কম্পন বয়ে যাচ্ছে। ছেলেদের চেহারা দেখে বিশ্বাস করতে নেই। তাদের মনে কি আছে বোঝা মুশকিল। মীরাত শ্বাস টেনে নিলো।নিজেকে স্বাভাবিক করার প্রয়াস চালালো।তবুও শান্ত করতে পারলো না নিজেকে।
মীরাত শুকনো ঢোক গিলে কম্পনরত কন্ঠে শুধালো-“ কে আপনি?”
মেয়েলী সুমিষ্ট রিনরিনে কন্ঠস্বর কর্ণকুহরে পৌঁছালো মানবটির।কথা বলেছে এটা ভেবে হাঁপ ছাড়লো।সে বুঝলো অপরিচিত মানুষ দেখে হয়তো ভ য় পাচ্ছে। ভ য় পাওয়াটাই স্বাভাবিক।
মানবটি প্রতিত্তোরে বললো – “আমার নাম আহিয়াদ সীমান্ত। ”
মীরাত চোখ পিটপিটিয়ে তাকিয়ে অস্ফুটস্বরে আওড়ালো-“ আহিয়াদ সীমান্ত।”
আহিয়াদের কানে পৌঁছালো কথাটি।সে গম্ভীর কণ্ঠে বললো- “তুমি এতো রাতে এখানে কি করছো? তোমার জন্য এই স্থানটি মোটেও নিরাপদ নয়। একটা মেয়ে হয়ে নিজের সেফটির কথা ভাবলেনা?হাউ ষ্টুপিড ইউ আর?
”
মীরাত স্বল্প সময়ের সাক্ষাতে তুমি করে সম্বোধন করায় আশ্চর্য হলো বটে। অবাক নয়নে আহিয়াদের দিকে তাকালো। বিস্ময়ের মাত্রা বেড়েই চলেছে। সামনের মানুষটা নির্দ্বিধায় তুমি তুমি বলে সম্বোধন করছে। এতেই জড়তা এসে জেঁকে ধরলো তাকে। অপরিচিত মানুষটির কথা শুনে মনে হচ্ছে কতো চেনা।কিন্তু এই প্রথম মানুষটিকে দেখলো সে। কিন্তু ষ্টুপিড বলায় কিছুটা রে’গে গেলো মীরাত।সে বাহিরে তা প্রকাশ করলো না।
আহিয়াদ কিছুটা বিরক্ত হয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বললে উঠলো–“ কথা বলছো না কেনো? ওকে ফাইন কথা বলা লাগবে না।এখানে দাঁড়িয়ে থাকো বা সুই সাইড করো সেটা তোমার ইচ্ছা। যদি বি পদে পরো বলতে পারো তাহলে আমি মানুষ হিসেবে হেল্প করবো। আর যদি সুই সাইড করতে চাও একবার পরিবারের কথা ভাবো । আমি চললাম।”
আহিয়াদ বিরক্ত হয়ে দ্রুত পায়ে নিজ গাড়ির কাছে এসে দাঁড়ালো। পকেট হতে ফোন বের করে সময় দেখে নিলো।সময়টা প্রায় রাত দুইটার কাছাকাছি। সে ফোন পকেটে রেখে দিয়ে একবার লাল শাড়ি পরিহিত মেয়েটির দিকে তাকালো।এখনো সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটি।চলে যাবে কি যাবেনা এই নিয়ে ভাবতে লাগলো।দোটানায় পরে গেলো সে।একা একটা মেয়েকে এতো রাতে একা রেখে যেতে মন মোটেও সায় দিচ্ছে না। যদি কোনো বিপ দ হয়।
আহিয়াদ কিছুটা জোড়ালো আওয়াজে বলে উঠলো–“এই যে মিসেস! তোমার বাসার ফোন নাম্বার দাও। কল দিয়ে বলি তাদের বাড়ির বউ ব্রিজে দাঁড়িয়ে সুই সাইড করার ডিসিশন নিচ্ছে।তারাও এসে উপভোগ করুক দৃশ্যটা।”
মীরাতের চোখে অশ্রু ভীড় জমেছে। কান্না উগ্রে আসছে ভেতর থেকে। আহিয়াদের ❝ তাদের বাড়ির বউ❞ শব্দটা বক্ষস্থলে আবারো র ক্তক্ষরণ ধরিয়েছে।বক্ষে অসম্ভব ব্য থা অনুভূত হচ্ছে।তী রের ন্যায় বক্ষে বিঁ ধছে কথাটা। সে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করলো। দুহাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিজেকে শান্ত করলো । দুহাতে চোখের অশ্রু মুছে নিলো।এতো রাতে এখানে থাকা তার কাছে নিরাপদ মনে হলো না। আবেগের বশে ভুল সিদ্ধান্ত নিতে বসেছিলো সে। এতোটা আবেগী হওয়া উচিত হয়নি তার। সে এতোটা স্বার্থ পর কিভাবে হলো। শুধু নিজের মুক্তির কথা ভাবলো। একবারও তার মায়ের কথা ভাবলো না। সে ছাড়া যে তার মায়ের আপন বলতে কেউ নেই। নিশ্চয়ই এতোক্ষণে তার মা কেঁদে পা গল প্রায় অবস্থা। অপরিচিত মানুষটি যদি না আসতো তাহলে সবচেয়ে ঘৃণিত কাজ সে করতো। এটা ভেবে অনুশোচনা হচ্ছে তার। মীরাত ভাবলো এখান থেকে বাড়িতে যেতে প্রায় পনেরো মিনিট লাগবে।নির্জন রাস্তায় একা যেতে ভ য় লাগবে তার। রাত হলেই গ্রামের মোড়ের দিকে বখাটেরা আড্ডা দেয়। একা গেলে তাদের খপ্পরে পরবে সে তাতে সন্দেহ নেই। এখন সে কি করবে?
আহিয়াদ মেয়েটির মাঝে কোনো হেলদোল না দেখে বিরক্তি নিয়েই গাড়ির দরজা খুলে ড্রাইভিং সিটে বসলো। মেয়েটি হয়তো এখানেই থাকবে। অনেকবার বলেও যখন চুপ আছে তার কিছু করার নেই। হয়তো মেয়েটি তাকে ভরসা করতে পারছে না।গাড়ির দরজা আটকাতে যাবে এমন সময় ভেসে এলো মেয়েটির কন্ঠস্বর।
–“এই যে শুনছেন? দাঁড়ান প্লিজ। ”
আহিয়াদ ভ্রু কুঁচকে সামনের দিকে তাকালো। মীরাত বেনারসি শাড়ি দুহাতে উঁচিয়ে দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসেছে আহিয়াদের গাড়ির সামনে।সংকোচে আড়ষ্ট হয়ে আছে সে । অপরিচিত মানুষটিকে কিভাবে হেল্প করার কথা বলবে সে?
আহিয়াদ শান্ত স্বরে শুধালো–“ দ্রুত বলো কি বলবে?”
মীরাত আহিয়াদের দিকে তাকিয়ে থেমে থেমে বললো–“ আমাকে বাড়ি অব্দি পৌঁছে দিবেন?আসলে একা যেতে ভ য় করছে।”
আহিয়াদ বিরবির করে বললো“ এতোক্ষণ ভ’য় লাগেনি অথচ এখন লাগছে। মেয়েদের মনে কি চলে বোঝা কঠিন। মেয়েদের মন পড়তে আলাদা করে কোর্স করতে হবে তার।” মেয়েটির বলা কথা শুনে সংকোচ আর ভ য়ের আভাস পেলো। সে স্বাভাবিক ভাবে জানতে চাইলো–“ বাড়ির ঠিকানা?”
–“ চেয়ারম্যান বাড়ি।”
আহিয়াদ অবাক হলো। এই অচেনা মেয়ে চেয়ারম্যান বাড়িতে যাবে? তার নিজের গন্তব্য তো সেখানেই। গোলমেলে লাগছে সবকিছু।মেয়েটি কি চেয়ারম্যান বাড়ির পূর্ব পরিচিত? কিন্তু আগে তো কখনো দেখেনি সে ।
–“গাড়িতে উঠে বসো।”
আহিয়াদ গাড়ির দরজা আঁটকে ওপর পাশের দরজা খুলে দিলো।মীরাত ওপর পাশে গিয়ে দোটানায় পরে গেলো। কোথায় বসবে সে?
–“দরজা খুলে দিয়েছি।ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটে বসো।”
মীরাত চুপচাপ বসে পরলো গাড়িতে। দরজা আঁটকে দিয়ে গাড়ির ভেতরটা দেখতে লাগলো সে। দামী গাড়ি দেখেই বোঝা যাচ্ছে। অপরিচিত মানুষটিকে দেখেই বুঝেছিলো বড় ঘরের ছেলে। পেছনের সিটের দিকে চোখ পরতেই গাড়ির ভেতরে জ্বালানো হালকা আলোয় মেয়েলী অবয়ব দেখলো। ঘুমিয়ে আছে বোধহয়।পাশেই একটা গিটারের ব্যাগ দেখলো।মীরাত নিশ্চিন্ত হলো একটু। ভ য় কিছুটা কমলো তার। তারমানে ছেলেটি বিবাহিত। আহিয়াদ আর দেরী না করে গাড়ি স্টার্ট দিলো।মীরাত চুপচাপ বসে বাহিরের দিকে তাকিয়ে রইলো। আশেপাশে অন্ধকারাচ্ছন্ন, মাঝে মাঝে শেয়ালের হাঁক ভেসে আসছে গা ছমছমে পরিবেশ। বাড়ির রাস্তার দুরত্ব কম হলেও একা এতো রাতে হেঁটে যাওয়া তার ভীতু মনে কুলাতো না।
–“ এতো রাতে ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে কি করছিলে?”
–“সুই সাইড করতে এসেছিলাম।”
সোজাসাপটা উত্তরে আবারও অবাক না হয়ে পারলো না আহিয়াদ। কিছুটা রা গ হলো তার। সুই সাইড নির্বোধেরা করে।এই মেয়েও সেই দলেই। ভেবেছিলো হয়তো কোনো বিপদে পরেছে তাই ওখানে দাঁড়িয়েছিলো।কিন্তু সুইসা ইড করতে এসেছিলো এটা শুনে অবাকতার রেষ আকাশচুম্বী ধারণ করেছে।
–“ হাসবেন্ডের সাথে রাগারা গি করে এমন ডিসিশন নেওয়া উচিত হয়নি।আমি যদি না আসতাম এতোকক্ষণে ওপরে চলে যেতে।”
আহিয়াদের গমগমে স্বর শুনেও প্রতিক্রিয়া দেখালোনা মীরাত।সে শুধু তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো।কিছু বললো না প্রতিত্তোরে । ❝হাসবেন্ড❞ নামক শব্দ সুঁচের মতো বিধঁছে শরীরে। এখন কিছু বলতেও ইচ্ছে করছেনা। সবকিছু কেমন বিষাদ লাগছে।নিজেকে ভঙ্গুর লাগছে। দম আঁটকে আসছে। আহিয়াদ একপলক বধূ বেশে বিধ্ব স্ত মেয়েটার দিকে তাকিয়ে মেয়েটির মনোভাব পরখ করে মনোযোগী হলো গাড়ি চালাতে। সে বুঝলো মেয়েটি উত্তর দিতে ইচ্ছুক নয়। হয়তো বড়সড় কাহিনী নিজের মাঝে লুকিয়ে রাখতে চাইছে।
★★★
আহিয়াদের গাড়িটি দোতালা বিশিষ্ট পুরনো বাড়ির সামনে এসে থামলো। বাড়িটি পুরনো হলেও রাজকীয় ভাব আছে। সুসজ্জিত মনোরম পরিবেশ বিদ্যমান। বাড়ির সামনের রাস্তায় গুটি কয়েক ল্যাম্পপোস্ট বসানো।মেইন গেইটে গেইটম্যান দাড়িয়ে আছে। মূলত বাড়ি পাহারা দিচ্ছে।গ্রামেও এখন শহরের ন্যায় উন্নত হচ্ছে ধীরে ধীরে।
আহিয়াদ সিটবেল্ট খুলতে খুলতে মীরাতকে উদ্দেশ্য করে বললো–“ চেয়ারম্যান বাড়ি চলে এসেছি।”
মীরাত গভীর ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো।সে নড়েচড়ে বসলো।এতোটাই ভাবনায় বিভোর ছিলো যে খেয়ালই করেনি । বাহিরের দিকে তাকিয়ে দেখলো সে চেয়ারম্যান বাড়ির সামনে এখন। আর দেরী না করে হন্তদন্ত হয়ে গাড়ি থেকে নেমে পরলো।আহিয়াদ ও গাড়ি থেকে নামলো।
–“ চেয়ারম্যান বাড়ির সাথে তোমার সম্পর্ক কি?”
আহিয়াদের কৌতুহলী ভাব বুঝে পেছনে ফিরলো মীরাত।লাল বেনারশীর আচঁল দুহাতে পেচাতে লাগলো।অস্বস্তি লাগছে তার।পেছনে তাকাতেই দেখলো আহিয়াদ পকেটে দুহাত গুজে দাঁড়িয়ে আছে। চোখে মুখে ভেসে উঠেছে উত্তর শোনার আগ্রহী ভাব। অপরিচিত মানুষটির কৌতুহলী মনোভাব দেখে বিস্মিত হলো সে। মানুষটিকে তার কাছে বিচক্ষণ মনে হচ্ছে।
মীরাত দৃষ্টি নিচ নিবদ্ধ করে ধীরে বললো–“আমার পরিচিত বাড়ির মানুষগুলো।”
আহিয়াদের কেনো জানি মেয়েটিকে সন্দেহজনক মনে হলো। সে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে মীরাতের মুখ অবলোকন করলো।মলিন মুখশ্রী, চিন্তিতভাব স্পষ্ট। কেমন বিধ্বস্ত অবস্থা। তা দেখে সন্দেহ কিছুটা কমলো আহিয়াদের।তার মনে হচ্ছে মেয়েটি হয়তো গভীর আ ঘাত পেয়েছে।হয়তো সেই ধাক্কা এখনো কুলিয়ে উঠতে পারে নি।সে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো আবার। অল্প সময়ে এতোগুলো প্রশ্ন করা ঠিক নয়।আহিয়াদ গিয়ে গাড়ির পেছনের সিটে ঘুমন্তরত মেয়েটিকে ডাকতে লাগলো।
–“ জেনি আমরা পৌঁছে গেছি। এবার ওঠো।”
বেশ কয়েকবার ডাকার পরে জেনি গাড়ি থেকে নামলো।এখনো ঘুমে তার চোখ বন্ধ হয়ে আছে।আহিয়াদ তার গিটারের ব্যাগটি হাতে নিলো।জেনি ঘুমুঘুমু চোখে ঢলতে ঢলতে মেইন গেইটের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। আহিয়াদ পেছনের দিকে তাকাতেই অবাক হলো। মেয়েটি তো সেখানে নেই। কোথায় গেলো?এই অল্প সময়ের মধ্যে কোথায় গায়েব হয়ে গেলো। সে আশে পাশে তাকিয়ে খুঁজতে লাগলো।
জেনি আহিয়াদকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললো–“আহিদ কাকে খুজছো?”
আহিয়াদ এদিক ওদিক দেখে স্বাভাবিক ভাব এঁটে গেইটের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বললো–“ কাউকে না।”
ইতোমধ্যে মেইন গেইট গেইটম্যান খুলে দিয়েছে।জেনি দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেলো ভেতরের দিকে। তার প্রচন্ড ঘুম পেয়েছে। আহিয়াদ গেইটম্যানকে সালাম দিয়ে চাবিটা দিয়ে গাড়ির পার্কিং করার কথা বলে বাড়ির ভেতরে চলে গেলো।
চেয়ারম্যান বাড়িতে প্রবেশ করতেই আহিয়াদের কপাল কুঁচকে গেলো। বাড়ির কয়েকজন সদস্য এখনো জেগে আছে।ডাইনিং রুমে সোফায় বসে আছে তারা।সকলকে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ দেখাচ্ছে। তাদের মধ্যে বয়স্ক ব্যক্তিটি একটু বেশীই চিন্তিত বলে মনে হলো।
আহিয়াদ এগিয়ে গিয়ে সকলের উদ্দেশ্যে বললো–“সবাই এতো টেনসড হয়ে আছো কেনো? এ্যানি প্রবলেম?”
মুন্সি সাহেব আহিয়াদকে দেখে চিন্তিত ভাব গোপন করে চমৎকার হেসে জড়িয়ে ধরে বললো–“নানু ভাই কেমন আছো? কতোদিন পর তোমায় দেখলাম। মন টা জুড়িয়ে গেলো একদম।”
আহিয়াদ মুন্সি সাহেবের কথা শুনে মৃদু হেসে বললো–“আমি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন নানাজান?”
মুন্সি সাহেব নাতীকে ছেড়ে দিয়ে বললেন–“আমি ও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।”
আহিয়াদের দুই মামা আবসার আর আসাদ।আবসার আহিয়াদের সাথে কুশল বিনিময় করলো। আবসারের স্ত্রী লিমা বেগম আহিয়াদের সাথে কথা বলে খাবার গরম করতে গেলেন।
–“ সবাইকে এতো চিন্তিত দেখাচ্ছে কেনো? ”
মুন্সি সাহেব বললেন–“তুমি বসো আগে তারপর বলছি।”
আহিয়াদ গিটারের ব্যাগটা একপাশে রেখে সোফায় গা এলিয়ে বসলো। কিছুটা ক্লান্ত লাগছে তার।
মুন্সি সাহেব চিন্তিত হয়ে বললেন–“ আযহাকে নিয়ে ভীষণ চিন্তা হচ্ছে। মেয়েটা যে হঠাৎ করে কোথায় চলে গেলো।”
আহিয়াদ ভ্রু যুগল কুঁচকে বললো–“ আযহা কে নানাজান? এই প্রথম নামটা শুনলাম।”
–“ আযহা তোমার মায়ের বান্ধবীর মেয়ে।আফিয়ার কথা শুনেছো নিশ্চয়ই।”
–“হুমম। মায়ের মুখে অনেকবার শুনেছি।কিন্তু ওনার মেয়ের কি হয়েছে?”
–“ আফিয়া এসেছিলো এক ঘন্টা আগে। তার থেকে খবর পেলাম আযহাকে নাকি কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।বাড়ির আশে পাশে খুঁজেও হদিস মেলেনি। কোথায় যে গেলো? একা একটা যুবতী মেয়ে এতো রাতে বাহিরে যদি কোনো অঘটন ঘটে তখন কি হবে ভেবেছো? তোমার ছোট মামা কয়েকজনকে সাথে নিয়ে আযহাকে খুঁজতে গিয়েছে।”
আহিয়াদ মনোযোগ সহকারে শুনলো পুরোটা।ঘটনা শুনে তখনি তার চক্ষু পটে ভেসে উঠলো বধু বেশে মেয়েটার কথা।মেয়েটা আযহা নয়তো? মেয়েটার নামটাও জিজ্ঞেস করেনি সে।অচেনা মেয়েটার নাম জিজ্ঞেস করা উচিত ছিলো।
–“দাদাজান দাদাজান আযহাকে পাওয়া গেছে।”
আরিশা দৌড়ে এসে মুন্সী সাহেবকে বললো।সে আফিয়া বেগমের বাড়ি থেকে খবর পেয়েই ছুটে এসেছে সকলকে জানাতে। দৌড়ে আসতে গিয়ে খানিকটা হাঁপিয়ে গেছে সে। আরিশা আহিয়াদের বড় মামার মেয়ে। আযহা আর আরিশা সমবয়সী একই কলেজে পড়াশোনা করে।
মুন্সি সাহেব উঠে দাড়াল। গম্ভীরমুখে বললেন–“ কোথায় সেই মেয়ে?”
–“ ছোট চাচার সাথে আসছে।”
–“এতো রাতে কোথায় গিয়েছিলো আযহা? ”
আরিশা কাচুমাচু ভঙ্গিতে বললো–“জানিনা দাদাজান।আযহা আসলে জেনে নিয়েন।”
আসাদ এর মাঝেই বাড়িতে প্রবেশ করলো।মুখ গম্ভীর দেখে বোঝা যাচ্ছে অনেক বেশী রে গে আছে ।তার পেছন পেছন প্রবেশ করলো মধ্যবয়সী এক নারী আর তার মেয়ে।মুখশ্রী দুজনেরই থমথমে।দুজনের মুখেই অপ রাধবোধ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। আহিয়াদ পদধ্বনি শুনে উঠে দাঁড়ালো। পিছু ফিরে তাকাতেই আসাদের দিকে নজর গেলো।
আফিয়া বেগম আর আযহা মুন্সি সাহেবের সামনে এসে দাঁড়ালো।
মুন্সি সাহেব আযহার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বললেন–“ এতো রাতে কোথায় গিয়েছিলে?”
আযহা ভ য়ে তটস্থ হয়ে রইলো।এই মানুষটিকে সে বড্ড ভ য় পায় মাঝে মাঝে। ভয়া র্ত চোখে তাকাতেই মুন্সি সাহেবের পাশে শুভ্র শার্ট পরিহিত সুদর্শন যুবকের দিকে চোখ আঁটকে গেলো আযহার। বিস্মিত হলো সে। আহিয়াদ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আযহার পাণে। এই মেয়ে এখানে কেনো?
আযহা বিস্মিত নয়নে তাকিয়ে আওড়ালো–“ আহিয়াদ!”
[ভুল ত্রুটি মার্জনীয় দৃষ্টিতে দেখবেন।আশানুরূপ রেসপন্স পেলে পরবর্তী পর্ব দেওয়া হবে। সূচনা পর্ব কেমন লেগেছে সবাই মতামত জানাবেন।শব্দ সংখ্যা ২১০০+]
#অব্যক্ত_প্রেমাসুখ
#আদ্রিতা_নিশি
।১।(সূচনা পর্ব)
[কপি করা নিষিদ্ধ। ]