#অব্যক্ত প্রমাসুখ❤️🔥
#আদ্রিতা নিশি
৩০.
[কপি করা নিষিদ্ধ ]
ফাবিহা নিঃশব্দে মাথা নিচু করে বসে আছে। তার চেহারার মলিনতা আরও গভীর হয়ে উঠেছে। চোখ দুটো টলমল করছে, কিন্তু সে কান্না চেপে রেখেছে। কোনো শব্দ নেই, কোনো অভিযোগ নেই—শুধু নিস্তব্ধতা। যেন কোনো অদৃশ্য ভার তার বুকের ওপর চেপে বসেছে, আর সেটি তার সমস্ত শক্তি শুষে নিয়েছে।জেহফিল তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কয়েক মুহূর্ত আগেও মুখে থাকা হালকা হাসিটি কোথাও মিলিয়ে গেল। তার চোখে স্পষ্ট ফুটে উঠল চিন্তার ছাপ। ভ্রু কুঁচকে ফাবিহার দিকে তাকিয়ে রইল, কিন্তু কিছুই বুঝতে পারল না। তবে কোথাও তার তীক্ষ্ণতা বলছে কোনো বড়সর কাহিনী লুকায়িত আছে অশ্রুসিক্ত নয়ন জোড়ায়। এ মেয়ে কী ভাবছে, মনে কী চলছে—এটা বোঝা অসম্ভব হয়ে উঠল তার জন্য।ঠিক তখনই জেহফিলের ফোন বেজে উঠে।এসব ভাবনা বাদ দিয়ে পকেট হতে ফোন বের করল।ফোন স্ক্রিনে নাম দেখে সে বুঝল আহিয়াদ কল করেছে। ফাবিহার দিকে শেষবারের মতো তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ফোনটি রিসিভ করল। পা বাড়াল সেথায় থেকে। কথা বলতে বলতে অন্যত্র চলে গেল।
এ সময় আরিশা এসে হাজির। কথা বলা শেষ করে চারপাশটা একবার দেখে সে সোজা ফাবিহার কাছে চলে এলো। ফাবিহার এমন মনমরা বসে থাকা তার নজর এড়াল না।আরিশা সরল ভঙ্গিতে উদ্বিগ্ন স্বরে জানতে চাইল;
“কী হয়েছে তোর? এমন চুপচাপ বসে আছিস কেন?”
ফাবিহা একটুও সাড়া দিল না। মাথা নিচু করেই বসে রইল, যেন আরিশার প্রশ্ন শুনতেই পায়নি। আরিশা কিছুটা উদ্বিগ্ন হয়ে ফাবিহার পাশে বসে তার কাঁধে হাত রাখল।
আরিশা এবার নরম স্বরে জিজ্ঞেস করল;
“কী হয়েছে বল তো? ভাইয়ার ফ্রেন্ডের সঙ্গে আবার ঝগড়া করেছিস নাকি?”
ফাবিহা ধীরগতিতে মাথা তুলল। তার চোখে জমানো জল আর মুখের বিষণ্ণতা স্পষ্ট হয়ে উঠল।মৃদু স্বরে বলল,
“ তেমন কিছু না।”
“কিছু না মানে? মনে হচ্ছে কিছু একটা হয়েছে। জেহফিল ভাইয়া কিছু বলেছে?”
ফাবিহা কিছু বলতে গিয়ে থেমে গেল। আবারও মাথা নিচু করল।আরিশা গভীরভাবে ফাবিহার মুখের দিকে তাকাল। কয়েক মুহূর্ত চুপ থেকে সে হঠাৎ বলল,
“আচ্ছা, তুই নিজেকে এইভাবে কষ্ট দিচ্ছিস কেন? আমাকে তো বলতে পারিস। কী হয়েছে, বললে হয়তো কিছু সাহায্য করতে পারব।”
ফাবিহার চোখেমুখে দ্বিধার ছাপ দেখা দিল। কয়েক সেকেন্ড নীরব থেকে সে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল ;
“জীবনটা এতো জটিল কেন, আরু আপু?”
আরিশা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,
“কী নিয়ে বলছিস?”
ফাবিহা মলিন মুখে বসে রইল, তার চোখজোড়া ভিজে উঠেছে। কিছু বলতে চায় না, এমনকি কারও সামনে নিজেকে প্রকাশ করার শক্তিটুকুও নেই এই মুহুর্তে।
আরিশা কাছে এসে ধীর কন্ঠে বলল,
“কী হয়েছে তোর? এমন নিস্তব্ধ হয়ে বসে আছিস কেন?”
ফাবিহা ধীরে গলায় উত্তর দিল,
“তেমন কিছু না। ভালো লাগছে না।”
কথাটা শুনেই আরিশার ভ্রু কুঁচকে গেল। সে ফাবিহার মুখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে। অবিশ্বাসী স্বরে বলল,
“কিছু তো একটা হয়েছে। বল না, কী হয়েছে?”
এ কথায় ফাবিহা আর নিজেকে ধরে রাখতে পারল না। হঠাৎ করেই আরিশাকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল। কান্নার ভারে ভারী হয়ে আসা কণ্ঠে বলল,
“আপু, এটা কী হচ্ছে আমার সঙ্গে? হঠাৎ করেই কাউকে ভালো লাগা, লুকিয়ে দেখা, কোনো অজুহাতে একটু কথা বলা, আর তার একটু রুড কথায় বাচ্চার মতো কেঁদে ফেলা! উনি যদি চলে যাওয়ার কথা বলে, তখন কেন চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করে? আগে তো এমন ছিলাম না আমি। মা-বাবা কত বকা দিয়েছে, ভাইয়ের কড়া শাসন শুনেছি, কিন্তু কখনো এমন করে ভেঙে পড়িনি। অথচ কাল তিনি একটু রুড বিহেভ করতেই বুকের মধ্যে কেমন যেন কষ্ট হচ্ছিল। এটা কী, আপু? একদিনের পরিচয়ে কি ভালোবাসা সম্ভব?”
আরিশা হতবাক হয়ে গেল। কিছুক্ষণ তার চেহারায় বিস্ময়ের ছাপ ফুটে রইল। গভীর সতর্কতার সহিত বলল,
“হঠাৎ করে কারও প্রতি ভালো লাগা স্বাভাবিক। কিন্তু ভালোবাসা? সেটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য সময় লাগে। তুই কার কথা বলছিস?”
ফাবিহা মিইয়ে যাওয়া কন্ঠে বলল,
“জেহফিল।”
আরিশার চোখ বিস্ফারিত হলো। কণ্ঠে তীব্র অবিশ্বাস ঢেলে বলল;
“জেহফিল?তুই কি পাগল হয়েছিস? মাত্র একদিনের পরিচয়ে এতটা সিরিয়াস হয়ে গেলি?”
ফাবিহা ধীরে মাথা নেড়ে বলল,
“জানি না, আপু। কিন্তু এমনটাই হয়ে গেল। কাল থেকে আমি তাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছি। নিজের মধ্যেও অদ্ভুত পরিবর্তন টের পাচ্ছি। সারারাত তার কথা ভেবেছি। সকাল থেকে কতবার তাকে দেখেছি, অথচ কিছু বলার সাহস পাইনি। এটা ভালো লাগা হতে পারে কিন্তু জেহফিল তো দুইদিন পর সিঙ্গাপুর চলে যাবে। এরপর হয়তো আর কখনো দেখা হবে না। এসব ভেবে কেন জানি বুকটা ভার হয়ে আসছে।”
আরিশা ফাবিহার কাঁধে হাত রেখে বলল,
“দেখ, শান্ত হ। উনি চলে গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে। তুই এখন যে অনুভূতিগুলো নিয়ে এত দিশেহারা, সেগুলো ক্ষণিকের। কিছুদিন পর ঠিক হয়ে যাবে।”
ফাবিহা কান্না থামালেও তার মুখে গভীর বিষাদের ছাপ রয়ে গেল। মলিন স্বরে বলল,
“তোমার কথা যেন সত্যি হয়, আপু। আমি জানি একতরফা ভালোবাসা কতটা যন্ত্রণার। জেহফিলের চোখে আমি সেই কষ্ট দেখেছি। আমি কখনো সেই দহনে পুড়তে চাই না। আমি কষ্ট পেতে চাই না।”
আরিশা চুপ করে রইল। কী বলবে বুঝে উঠতে পারল না। শুধু ফাবিহার পিঠে হাত বুলিয়ে তাকে শান্ত করার চেষ্টা করতে লাগল।
জেহফিল কথা শেষ করে ডাইনিং রুমে ঢুকে তাদের কথোপকথনের শুনে ফেলল। সে অবিশ্বাসের চোখে ফাবিহার দিকে তাকিয়ে রইল।তার মনে ভারী দীর্ঘশ্বাস নেমে এলো। নিজের মাঝে অস্বস্তিভাব অনুভব করল। তবে কি সে এই ভয়টাই পাচ্ছিলো। হয়তো! নিজেকে স্থির করে আপন মনে হতাশামিশ্রিত কন্ঠে আওড়ালো; “একতরফা ভালোবাসার জালে নিজেকে বেঁধো না, মেয়ে। এতে কেবল তুমি নিজেই পুড়বে। কিছুই পাবে না—না পাবে ভালোবাসা, না পাবে শান্তি।”
তার ঠোঁটে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটল। আবারও বিরবিরিয়ে বলল,
“অদ্ভুত নিয়তি তোমার, ফাবিহা। যে একতরফা ভালোবাসায় নিজেকে জড়াতে চাইছিলে না, তাতেই আজ ডুবে যাচ্ছ। আর আমি, যাকে তুমি ভালোবাসার যোগ্য মনে করছ, সে কখনোই সেই সম্পর্কে জড়াবে না। আমি প্রার্থনা করি, আমি যেন শুধু তোমার মোহ হয়ে থাকি। কারণ মোহ সময়ের সঙ্গে মিলিয়ে যায়। কিন্তু ভালোবাসা? সেটা ছায়ার মতো চিরদিন পিছু নেয়।”
এ কথাগুলো বলতে বলতে জেহফিল নিঃশব্দে ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে গেল। ফ্ল্যাট থেকে বের হওয়ার সময় তার মনে এলোমেলো চিন্তার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। দুইদিনের পরিচয়ে এমন গভীর অনুভূতি কীভাবে জন্মাল ওই মেয়ের মনে? ফাবিহা তো টিনেজ মেয়ে নয় তবে?
★★
বিকেলের গোধূলি লগ্ন পেরিয়ে সন্ধ্যা হয়েছে। ধীরে ধীরে রাতের আভা ছড়িয়ে পড়েছে ধরণীতে। পাখিরা তাদের দিনের শেষ গান গেয়ে আকাশকে বিদায় জানিয়ে ফিরে যাচ্ছে তাদের নীড়ে। কুয়াশায় ঢেকে আসছে চারপাশ।শহরের দোকানগুলোতে জ্বালিয়ে দিচ্ছে তাদের সাদা লাইটগুলো। ব্যস্ত শহুরে রাস্তায় ল্যাম্পপোস্টের হলদেটে আলো আলাদা পরিবেশ তৈরি করছে, আর হলদেটে ল্যাম্পপোস্টের চারপাশে পোকারা আনাগোনা করছে। শহরের মাঝখানে আহিয়াদের গাড়ি সাই সাই শব্দে চলছে। গন্তব্য তাদের বাড়ির দিকে।
আজ আহিয়াদের মন বেশ ফুরফুরে। তার হাত দক্ষতার সঙ্গে গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে স্থির, কিন্তু তার দৃষ্টি এক ফাঁকে ফাঁকে চলে যাচ্ছে পাশের রমণীর দিকে। মীরাতের মুখে ফুটে উঠেছে মিষ্টি হাসি, আর তার হাতে মুঠোবন্দী একগুচ্ছ লাল গোলাপ—যেগুলোর দিকে সে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
“তোমার হাতে মুঠোবন্দী লাল গোলাপগুলো কি জানে, তুমি তোমার হ্যান্ডসাম বরকে ভুলে গেছো?”
মীরাতের মুখে একটুখানি লাজুক আভা স্পষ্ট হয়ে উঠল । গোলাপের দিকে চেয়ে থাকা কাজল কালো আঁখিদ্বয় ধীরে ধীরে উঠে এসে স্থির হলো আহিয়াদের মুখে। লাজুক হেসে প্রতিত্তোর করল;
“হ্যান্ডসাম বরের কথা কি কেউ ভুলতে পারে?”
আহিয়াদ হাসল। দুষ্টুমির করে বলল;
“তাহলে গোলাপের প্রতি এত মনোযোগ কেন? আমার দিকে তো তাকাচ্ছোই না।”
মীরাত এবার একটু ঠোঁট উল্টে বলল,
“গোলাপগুলো যে আপনার দেয়া। প্রতিটা গোলাপে আপনার ভালোবাসা মিশে আছে। তাই এতটা মনোযোগ। আর আপনি তো আমার চোখে, মনে, সবখানেই আছেন। আপনার দিকে আলাদা করে তাকানোর প্রয়োজন পড়ে?”
আহিয়াদ এক মুহূর্তের জন্য চুপ করে রইল। তারপর মুচকি হেসে বলল,
“বাহ, এই কথাগুলো শুনে তো আমি আবার প্রেমে পড়ে যাচ্ছি!”
মীরাত ভ্রু বাঁকিয়ে বলল;
“আবার প্রেমে পড়েছেন?”
আহিয়াদ ঠোঁট বাকিয়ে হেসে বলল,
” আজকাল মনে হয় তুমি নামক রমণী শুধু আমার জন্যই পৃথিবীতে এসেছে।”
মীরাত হেসে বলল,
“আপনি বেশ রোমান্টিক। একদম সাহিত্যিকের মতো কথা বলছেন।এইসব কথা বাদ দিয়ে গাড়ি চালানোর মনোযোগ দিন।”
আহিয়াদ ঠোঁটের কোণে হাসি রেখে বলল,
“মনোযোগ তো তোমার দিকে। তোমার থেকে তো চোখ সরাতে পারছি না। গাড়ি চালানো শুধু অভ্যাসের কারণে হয়ে যাচ্ছে। আর তোমাকে পাশে বসে দেখে মনেই হচ্ছে না কোনো কিছু ভুল হতে পারে।”
মীরাত লাজুক হাসি চেপে মুখ ফিরিয়ে নিল, আবারও গোলাপের দিকে তার চোখ গেল। দৃষ্টি সেখানে থাকলেও গোলাপের সৌন্দর্য ছাপিয়ে আহিয়াদের কথাগুলো তার মনকে মুগ্ধ করল। আজকের দিনটা তার জন্য স্মরণীয় থাকবে। দুজনে আজ অনেক সুন্দর সময় কাটিয়েছে। দুজন দু্জনের হাত ধরে ঘুরে বেড়িয়েছে অনেকটা পথ। মীরাত বায়না ধরেছিল ফুচকা খাবে কিন্তু আহিয়াদ এক কথায় “না” বলে দেয়। এতে সে মন খারাপ করলে আহিয়াদ মন ভালো করার জন্য ফুচকা কিনে নিজ হাতে খাইয়ে দেয় মীরাতকে। মীরাত ও আহিয়াদকে ফুচকা খাইয়ে দিতে গেলে খায় না। অনেক জোড়াজুড়ি করে আহিয়াদকে ফুচকা খাইয়ে দিয়েছিল। হালকা আলোর মধ্যে মীরাতের দৃষ্টি অজান্তে গেল তার বাম হাতে, যেখানে কয়েকটি সোনালী কাঁচের রেশমী চুড়ি স্তূপাকার হয়ে শোভা পাচ্ছিল। একে একে প্রতিটি চুড়ি আলতোভাবে হাত রাখে সে। আজ আহিয়াদই তো এগুলো তাকে উপহার দিয়েছিল।
আহিয়াদের ফোন ভাইব্রেড হয়। আহিয়াদ এক হাতে স্টিয়ারিং ধরে অন্য হাতে প্যান্টের পকেট হতে ফোন বের করে। তার ফোনে ম্যাসেজ এসেছে। অনাকাঙ্ক্ষিত ম্যাসেজটি দেখে আহিয়াদের ভ্রু যূগল কুঁচকে গেল। সে ফোনের লক খুলে টাচ করলো সেই ম্যাসেজে। তখনই ফোনে ভেসে উঠলো উক্ত ম্যাসেজের বিস্তারিত অংশ। যা দেখে আহিয়াদ বিস্মিত হয়ে গেল।
University of Dhaka
Department of Physics
[Date: 15 December, 2024]
To:
Ahiyad Simanto
Dear Ahiyad,
We are pleased to inform you that you have successfully been selected for the position of Lecturer in the Department of Physics at the University of Dhaka. The authorities of the University request you to join the department on 20 December, 2024.
We wish you all the best in your new role and look forward to your contributions to the academic and research activities of the university.
Sincerely,
The Authorities
University of Dhaka
আহিয়াদ হঠাৎ ব্রেক কষে। রাস্তার পাশে গাড়িটি রাখে। আহিয়াদ গভীর মনোযোগ দিয়ে ভালোভাবে ফোনের ম্যাসেজটি পড়তে থাকে। মীরাত ব্রেক করতেই হচকচিয়ে যায়। ভয়ার্ত ভঙ্গিতে আহিয়াদের তাকায়। আহিয়াদকে এমন ফোনের দিকে সিরিয়াস ভঙ্গিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভয় পেয়ে যায়। অজানা আতংককে কেঁপে ওঠে তার মন।
মীরাত বিচলিত হয়ে জিজ্ঞেস করল;
“ আহিয়াদ কি হয়েছে? আপনাকে এমন লাগছে কেন আর ফোনে কি দেখছেন?”
আহিয়াদ কোনো উত্তেজনা প্রকাশ না করে, শান্তভাবে মীরাতের দিকে তাকাল। মুখে গম্ভীরতা, চোখে কঠোরতা। সে ফোনটি মীরাতের দিকে বাড়িয়ে দিল।গাম্ভীর্যের সাথে বলল,
“নিজেই দেখে নাও।”
মীরাত দ্রুত ফোনটা নিয়ে নেয়। সে সরাসরি চোখ রাখে ফোন স্ক্রিনে। কয়েক লাইন পড়তেই মীরাতের চোখ বিস্ময়ে বড় বড় হয়ে যায়। মুখে ফুটে উঠে উচ্ছসিত ভাব। আনন্দে,ভালো লাগায় তার মন ভরে যায়।
মীরাত অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে আহিয়াদের দিকে তাকাল।উত্তেজনা আর আনন্দে যেন ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,
“আহিয়াদ, আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে…”
আহিয়াদ সিটে শরীর এলিয়ে দেয়। চোখ বন্ধ করে প্রশান্তির গভীরে ডুব দেয়। দীর্ঘ শ্বাস টেনে মুচকি হাসল। হাসি বজায় রেখে বলল;
“Finally, I have reached my goal.”
মীরাত তার সিট বেল্ট খুলে ফেলে তখনই। আহ্লাদী হয়ে জড়িয়ে ধরে আহিয়াদকে। ওষ্ঠ ছুঁইয়ে দেয় মানবটির গালে। আহিয়াদ ভীষণ শান্ত আর আনন্দিত।সে আদুরে ভঙ্গিতে মীরাতকে দুহাতে জড়িয়ে নেয়। সযত্নে মিশিয়ে নেয় নিজের মাঝে। তারপর প্রফুল্লচিত্তে মীরাতের কানে ফিসফিসিয়ে বলে উঠল ;
“ চাকরীটা আমি পেয়ে গেছি, বেলা শুনছো?”
মীরাত খিলখিলিয়ে হেসে উঠল। আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আহিয়াদের সুঠাম দেহী পুরুষালি শরীর। সুমিষ্ট রিনরিনে কন্ঠে বলে উঠল ;
“ শুনছি মিস্টার। আমি আপনার সাফল্যে ভীষণ খুশি। অভিনন্দন আপনাকে। ”
আহিয়াদ গাড়ির সাদা কাঁচের আস্তরণ ভেদ করে অন্ধকার শহুরে রাস্তার বক্ষে তাকিয়ে তৃপ্ত শ্বাস টেনে বলে ;
“যতটুকু দূরত্ব ভালোবাসার মাঝে থাকে, তার চেয়ে বেশি দূরত্ব জীবনের লক্ষ্য অর্জনের পথে—তবে, যখন দুইটি এক হয়ে যায়, তখন জীবন হয়ে ওঠে একটি নিখুঁত কাব্য।”
[আশা করছি সকলে গল্প শেষ পর্যন্ত পড়বেন। আজকে একটা পোস্টে জানিয়েছি সবার জীবনে হ্যাপি এন্ডিং হয় না। সেটা কেন বললাম অন্তিম পর্বে জানবেন। তবে ভরসা রাখতে পারেন আপনাদের মন মতো এন্ডিং হবে। ]
চলবে….