অব্যক্ত প্রেমাসুখ❤️‍🔥 #আদ্রিতা নিশি ৩১.[ অন্তিম পর্ব ]

0
149

#অব্যক্ত প্রেমাসুখ❤️‍🔥
#আদ্রিতা নিশি
৩১.[ অন্তিম পর্ব ]

সময় নদীর স্রোতের মতোই অবিরাম। দেখতে দেখতে কেটে গেছে দিন, সপ্তাহ, মাস, বছর। সময় তার নিজস্ব গতিতে ছুটে চলেছে, কোনো ক্ষণ থেমে থাকার অবকাশ পায়নি। সময়ের প্রবাহের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেছে মানুষের জীবনযাত্রার ধারা। মীরাতের সংসার জীবনেও এসেছে নতুন নতুন মোড়।স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির সবার সান্নিধ্যে তার দিন কাটছে হাসি-আনন্দে। নতুন বউয়ের পরিচয়ে শুরু হওয়া মীরাত এখন কিছুটা অভ্যস্ত হয়ে গেছে কাজ কর্মে। এক বছর হয়ে গেছে তবুও শ্বশুরবাড়ির সবার কাছে সে এখনো নতুন বউয়ের মর্যাদায় আবদ্ধ। বছর খানেক আগেও সংসারের খুঁটিনাটি বিষয়ে তার তেমন কোনো ধারণা ছিল না। অথচ আজ, সংসারের প্রতিটি কাজে তার হাতের ছোঁয়া নিখুঁত হয়ে উঠেছে।
একজন গৃহিণীর দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি মীরাত এগিয়ে চলেছে তার পড়াশোনাতেও। কিছু মাস আগেই সে অনার্স তৃতীয় বর্ষে উত্তীর্ণ হয়েছে। সংসার আর পড়াশোনার এই জোড়া দায়িত্ব সে সমান দক্ষতায় সামলে নিচ্ছে।

সন্ধ্যা সাতটা পনেরো। মীরাত নিজের রুমে বিছানায় হেলান দিয়ে বসে আছে। হাতে ধরা বইয়ের পাতায় গভীর মনোযোগ, ভ্রু দুটি কুঁচকে আছে তীক্ষ্ণ মনোযোগের কারণে। বইয়ে ডুবে থাকার কারণে আশেপাশের কোনো কিছুই তার দৃষ্টি কাড়তে পারছে না।আহিয়াদ বিগত পাঁচ দিন ধরে শহরের বাইরে। ভার্সিটির জরুরি কাজ আর ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্টদের সঙ্গে ট্যুরে গেছে। দূরে থাকলেও মীরাত এবং পরিবারের খোঁজ নিতে এক মুহূর্তও ভুল করেনি। নিয়ম করে দিনে তিনবার কল করে। আজও সকালে একবার, দুপুরে একবার কল দিয়েছে। এখন আবার সময় হয়েছে কল দেওয়ার।মীরাত বইয়ে দৃষ্টি রাখতেই বিছানার ওপর রাখা ফোন হাতড়ে নেয়। একবার ফোনের দিকে তাকিয়ে অবহেলায় আবার রেখে দেয়। কিন্তু বইয়ের মধ্যে মনোযোগ থাকলেও মনে মনে অন্য চিন্তা তাকে কুরে কুরে খাচ্ছে— “আহিয়াদ কেন এখনো কল করলো না? কবে ফিরবে? কেন এত দেরি করছে?”সে খুশির খবর দেওয়ার জন্য যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে মীরাত। বিকেল থেকে আনন্দ আর উত্তেজনায় স্থির থাকতে পারছে না। চার দিন ধরে সামান্য অসুস্থতা অনুভব করছিল সে। আজ বিকেলে হসপিটালে গিয়ে ডাক্তারের কাছে দেখিয়েছে। বেশ কয়েকটি টেস্ট করতে হয়েছিল। সন্ধ্যার মধ্যেই রিপোর্ট হাতে এসেছে। গুরুতর কিছু নেই, তবে এসেছে অপ্রত্যাশিত সুখবর।রিপোর্টে স্পষ্ট করে লেখা— প্রেগনেন্সি পজিটিভ। মীরাত দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা। রিপোর্ট হাতে নিয়ে আনন্দে চোখে জল চলে এসেছিল। ঠোঁটের কোণে লেগেছিল আনন্দের হাসি। রিপোর্টটি নিজের ঠোঁটে ছুঁয়ে দিয়েছিল। মনের সমস্ত ভালোবাসা সেটির মাঝে ঢেলে দিয়েছিল।এক হাতে নিজের পেটের ওপর আলতোভাবে হাত রেখে অনুভব করছিল যে তার ভেতরে একটি নতুন জীবন ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছে—তার আর আহিয়াদের ভালোবাসার প্রতীক। মনের মধ্যে একের পর এক ছবি ভেসে উঠছিল। কয়েক মাস পর তার হাতে থাকবে সেই ছোট্ট প্রাণ, ছোট্ট ছোট্ট হাত-পা, মায়াময় মুখ। ভাবতেই মীরাতের সমস্ত অস্তিত্ব অদ্ভুত প্রশান্তিতে ভরে যাচ্ছিল।মা হওয়ার অনুভূতি বুঝি এমনই হয়! আহিয়াদকে এই খবর জানালে সে কী করবে, কী বলবে—এই উত্তেজনায় মীরাতের হৃদয় দুরুদুরু করে কাঁপছে। সুখবরটি জানাতে গিয়ে তার লজ্জা আর আনন্দ মিলে এমন অচেনা অনুভূতির জন্ম দিয়েছে, যা আগে কখনো হয়নি।

“ভাবি তোমার শরীর কেমন আছে?”

মীরাতের ফাবিহার কন্ঠস্বর শুনে ধ্যান ভাঙ্গে। নিজেকে ধাতস্ত করে বিছানায় বইটা রেখে দেয় সে। ফাবিহাকে হেসে বলে;
“ একদম ফিট আছি আমি। বিকেলে কোথায় গিয়েছিলে তোমায় পেলাম না। ”

ফাবিহা এসে বিছানার ওপর ধপ করে বসলো। তারপর ক্লান্ত ভঙ্গিতে বলল;
“ফ্রেন্ডসরা মিলে ঘুরতে গিয়েছিলাম। একটু আগে আসলাম,ফ্রেশ হলাম তারপর তোমার কাছে ফটাফট চলে আসলাম। ভাইয়া কবে আসবে?

“ সঠিক জানি না। আজ কল ও করেনি। ভাবছি আমি নিজেই কল করবো। ”

“ আমি কল দিয়েছিলাম। বললো বিজি আছে। তোমায় রাত দশটার পরে কল দিবে। ”

“ ওহহ আচ্ছা।ফাবিহা একটা কথা বলবো?”

“ কি বলবে বলো। ”

“ আগামী শুক্রবার জুনায়েদের ফ্যামিলি তোমায় দেখতে আসতে চাইছে। তাদের কি আসতে বলবো?”

ফাবিহার মুখ থমথমে হয়ে যায়। মলিন মুখে থাকায় মীরাতের দিকে। জুনায়েদ তার ভার্সিটির স্টুডেন্ট। দুই বছরের সিনিয়র। ফাবিহাকে পছন্দ করে। তাই সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে। এখন ফাবিহার মতামত কি তা জানতে চাইছে।

ফাবিহা মলিন হেসে বলে উঠল ;
“আপাতত বিয়ের কথা ভাবছি না। পড়াশোনা শেষ করে এসব নিয়ে ভাববো।”

মীরাত হতাশ হয়ে ফাবিহার দিকে তাকায়। এই মেয়ের মনে কি চলছে সে বুঝতে পারে না। সুরমা বেগম বলেছিলো তাকে ফাবিহার মতামত জানার জন্য। আজও না সূচক উত্তর দিতে হবে। মীরাত শান্ত কন্ঠে জানতে চাইলো;
“ জেহফিল ভাইয়াকে এখনো ভুলতে পারোনি তাই না?”

ফাবিহা কথাটা শুনে হতচকিত হয়ে যায়। তার চোখের কোণে জল টলমল করে ওঠে। যদিও সে তা লুকানোর বৃথা চেষ্টা করে। দ্রুত দৃষ্টি এদিক-ওদিক ঘুরিয়ে, মিইয়ে যাওয়া কণ্ঠে বলল,
“ওসব আবেগ আমি অনেক আগেই ভুলে গেছি। আরে হ্যাঁ, আমি তো ভুলেই গেছি! মা তোমাকে খেতে ডাকছিলেন। তুমি তাড়াতাড়ি যাও, আমি গিয়ে মাকে একটু হেল্প করি।”

কথা শেষ করে ফাবিহা যেন কোনোমতে নিজেকে পরিস্থিতি থেকে মুক্ত করে পালিয়ে গেল। মীরাত নির্বাক হয়ে শুধু তাকিয়ে রইল। সে জানে, ফাবিহা এখনো জেহফিলকে ভালোবাসে—একতরফা ভালোবাসা, যা এক বছর পেরিয়েও মলিন হয়নি।
এই সময়ের মধ্যে ফাবিহা অনেকটাই বদলে গেছে। আগে যেমন প্রাণোচ্ছল ছিল, এখন তেমন আর নয়। অনেক বেশি শান্ত আর উদাসীন হয়ে উঠেছে সে। মীরাতের মনে প্রশ্ন জাগে, এই একতরফা ভালোবাসার শেষ কোথায়? এই মায়াজালের বাঁধন থেকে ফাবিহা কি কখনো মুক্ত হতে পারবে?

এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে মীরাত ধীরে ধীরে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়াল। তার ভাবনার ভার যেন তার শরীরকেও ভারী করে তুলেছে। নিজেকে সামলে সে ডাইনিং রুমের দিকে পা বাড়ায়, যেন মনের ভার কিছুটা হলেও হালকা করতে পারে।

★★

বৈশাখ মাসের শুরু। শহর জুড়ে তপ্ত আবহাওয়া বিরাজ করছে। মানুষের জীবন গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। সময় রাত বারোটা বেজে পনেরো মিনিট। আহিয়াদের রুমে সাই সাই করে ফ্যান চলছে। এসি ও চালানো এখন।মীরাত বিছানায় গভীর ঘুমে মগ্ন। খাওয়া দাওয়া করে এসে শুয়েছে। তারপর কখন ঘুমিয়ে গেছে হুস নেই।

আহিয়াদ ওয়াশরুম থেকে বেরোলো মাত্র। ভেজা চুলগুলো মুছতে মুছতে এসে আলমারি খুললো। কালো রঙের টিশার্ট বের করে পড়ে নিলো। পা বাড়িয়ে এগিয়ে গেল বেলকনিতে। তোয়ালে নেড়ে দিয়ে পুনরায় ফিরে এলো নিজ রুমে। তারপর এগিয়ে গিয়ে মীরাতের মাথার কাছে বসলো। ঘুমন্ত স্ত্রীর মুখ দেখে প্রশান্তিতে ছেয়ে গেল তার বক্ষ।মৃদু হেসে অপলক চেয়ে রইল মীরাতের দিকে। মুগ্ধতায় ডুবে গেল সে। এক হাত বাড়িয়ে আলতো করে মীরাতের মাথায় আদুরে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। গত কয়েকদিন মীরাতকে ছাড়া যে কীভাবে কেটেছে সেই জানে। সর্বক্ষণ মনে হচ্ছিলো কোথাও তাকে শূন্যতা পোড়াচ্ছে। মীরাতকে সামনাসামনি দেখার জন্য মরিয়া হয়ে উঠিছিল। আজ অশান্ত মন তার শান্ত হয়েছে। বেশ খানিকটা সময় এভাবেই কেটে গেল। আহিয়াদের চোখে ঘুমের আনাগোনা দেখা দিয়েছে।এতোটা পথ জার্নি করে এসেছে, শরীরও ক্লান্ত। এখন ঘুমানো প্রয়োজন।

আহিয়াদ একটু ঝুঁকে মীরাতের কপালে মৃদু চুম্বন করে। মীরাত একটু নড়ে চড়ে উঠে, তার সাড়া দেখে আহিয়াদ হাসলো। আহিয়াদ তখন বিছানা থেকে উঠে দাঁড়াল, বিছানার একপাশে রাখা কম্ফোর্টার মীরাতের শরীরে জড়িয়ে দিল। সে লাইট অফ করে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল, কিন্তু তখনই তার চোখ পড়লো বিছানার মাঝ বরাবর রাখা একটি বইয়ের ওপর।আহিয়াদ কৌতুহল নিয়ে হাত বাড়িয়ে বইটি তুলে নিলো। বইয়ের নাম দেখে তার মনে সন্দেহ জন্ম নিল। বইয়ের উপরিভাগে ইংরেজিতে লেখা ছিল, “What to Expect When You’re Expecting” by Heidi Murkoff। এই ধরনের বই দেখে তার কপালে চিন্তার ভাজ পড়ে গেল। এমন বই তো তার রুমে ছিল না, তাহলে কি মীরাত কিনেছে? হয়তো।আহিয়াদ আগ্রহের সাথে বইটির কিছু পৃষ্ঠা ঘুরিয়ে দেখে। কিছু পৃষ্ঠা পড়তে পড়তে সে বুঝতে পারলো—এটি একটি গর্ভাবস্থার গাইডবুক। বইটি মূলত প্রেগন্যান্সি সম্পর্কিত তথ্য এবং পরামর্শ নিয়ে। সে তা দেকে কিছুটা হতবাক হয়ে গেল। এখন তার মনে একাধিক প্রশ্নের জন্ম নিল—মীরাত কি আসলেই…।

“ আপনি কখন এলেন? আসলে শরীরটা একটু খারাপ তাই গভীর ঘুমে ডুবে গিয়েছিলাম। ”

মীরাতের ঘুমো ঘুমো কন্ঠস্বর। চোখ কচলিয়ে আধশোয়া হয়ে বসলো সে। আহিয়াদের ধ্যান ভাঙে। সে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকায় মীরাতের দিকে। অপ্রত্যাশিত কোনো কিছুর অনুভূতিতে তার বক্ষ কাঁপছে। অজানা সুখে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে। সে যা ভাবছে সত্যি কি তাই। আহিয়াদ এগিয়ে যায় মীরাতের দিকে। সামনাসামনি বসে।

আহিয়াদ হাতের বইটা বিছানার ওপর রাখে। কিছুটা উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করল;
“এখন শরীর কেমন লাগছে? ”

মীরাত মুচকি হেসে বলে উঠল ;
“ একদম সুস্থ আছি এখন। আপনাকে দেখে যে টুকু অসুস্থতা ছিলো তা পালিয়ে গেছে?”

আহিয়াদ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে অবলোকন করে মীরাতকে। তারপর এক হাতের উল্টো পাশ দিয়ে মীরাতের কপালে তাপমাত্রা চেক করে। সে দেখলো তাপমাত্রা স্বাভাবিক। হাত সরিয়ে নিয়ে ভরাট কন্ঠে জিজ্ঞেস করল;
“ কবে থেকে অসুস্থ তুমি? একবার জানানোর প্রয়োজনবোধ করলেনা? রেডি হয়ে নাও এখুনি ডাক্তারের কাছে যাবো তোমায় নিয়ে। ”

মীরাত দুপাশে মাথা নাড়িয়ে দ্রুততার সহিত বলে উঠল ;
“ সরি আপনাকে না জানানোর জন্য। আমি আজ বিকেলে হসপিটালে গিয়েছিলাম। ডাক্তারও দেখিয়েছি। সব রিপোর্ট ভালো ছিল।”

মীরাত একটু থামে। লজ্জামিশ্রিত হেসে আবার বলে;
“ এই সময় একটু আকটু অসুস্থ থাকে। ”

আহিয়াদ নিবিড় দৃষ্টি দিয়ে মীরাতের লাজুক মুখের দিকে তাকাল। তার তীক্ষ্ণ মস্তিষ্ক বুঝতে সময় নেয় না—এটা কি কোনো সুখবর হতে চলেছে? তবে শিউর হওয়া দরকার। সে ধীরে ধীরে মীরাতের দুহাত নিজের হাতে নিল। মীরাত একটু চমকে তাকাল আহিয়াদের দিকে। আহিয়াদ মোলায়েম কণ্ঠে, অদ্ভুত আশ্চর্যতায় জিজ্ঞেস করল,

“মীরাতুল আযহা, তুমি কি প্রেগন্যান্ট? আমাদের কি সন্তান আসতে চলেছে?”

মীরাত লাজুক হাসে। তার মাথা নিচু করে লজ্জা আড়াল করার চেষ্টা করছে। আহিয়াদ তার অস্থির মনকে শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকে, কিন্তু সহ্য করতে না পেরে অধৈর্য হয়ে আবারও জিজ্ঞেস করে,

“মীরাত, বলছো না কেনো? আমরা কি বাবা-মা হতে চলেছি?”

মীরাত লজ্জা লুকাতে আহিয়াদকে আলিঙ্গন করে। মুখ গুঁজে দেয় বুকে। আহ্লাদী কন্ঠে বলে;
“Two months of pregnancy are ongoing.”

আহিয়াদ উচ্ছসিত হয়ে জড়িয়ে নেয় মীরাতকে। আদুরে ভঙ্গিতে বেশ কয়েকটা মাথায় চুম্বন করে। আজ তার বড্ড সুখ সুখ অনুভব হচ্ছে। প্রশান্তিতে ছেয়ে গেছে মন। তার মনে হচ্ছে সৃষ্টিকর্তা তাকে পৃথিবীর বড় সুখ দিয়ে দিয়েছে।

“আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সুখবর দেওয়ার জন্য তোমার প্রতি কৃতজ্ঞ মীরাত। জানো আমাদের সন্তান আসবে ভাবতেই কেমন অদ্ভুত সুখ অনুভূত হচ্ছে। প্রশান্তি আর আনন্দের সাগরে ভাসছি আমি। ভালোবাসি বউজান, ভালোবাসি আমার অনাগত সন্তানকে।”

আহিয়াদ মীরাতকে ছেড়ে দেয়। অশ্রু ভিড় করেছে তার চোখের কোণে। মীরাত তা দেখে উত্তেজিত হয়ে বলল;
“ আপনি কাঁদছেন আহিয়াদ?”

আহিয়াদ অশ্রুসিক্ত চোখে ঠোঁট দ্বয় এলিয়ে হেসে বলল;
“ বোকা মেয়ে! এটা আমার পরম সুখের কান্না। জানো এখুনি আমার বাচ্চাকে ছুঁয়ে দেখার ইচ্ছে হচ্ছে। ছোট্ট ছোট্ট হাত, পা,দেহ কতো সুন্দর! দুহাতে কোলে নিতে ইচ্ছে করছে, একটু আদর করতে ইচ্ছে করছে। ”

মীরাতের চোখও ভিজে আসে। এই প্রথম মানুষটার চোখে পানি দেখছে। ছেলেরাও বুঝি অতি আনন্দে কাঁদে? সে আহিয়াদের মাথায় হাত বুলিয়ে মৃদু হেসে বলে ;
“ আর কয়েকমাসের অপেক্ষা মাত্র। তারপর আমরা আমাদের ছোট্ট বাবুকে ছুঁয়ে দেখতে পারবো, আদর করতে পারবো।”

★★

সকাল থেকেই আহিয়াদের বাড়িতে আনন্দঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। সুখবরটি পরিবারের সকল সদস্যকে জানানো হয়েছে এবং সবাই তা শুনে অত্যন্ত খুশি। তওহীদ সাহেব সুখবর শোনার পর মীরাতকে দোয়া দিয়ে অফিসে বেরিয়ে গেছেন। তার পরিকল্পনা হলো, আজ অফিসের সকল কর্মচারীকে মিষ্টিমুখ করিয়ে নতুন সদস্য আসার খবরটা জানাবেন। আহিয়াদও ভার্সিটিতে গিয়েছে, তার পক্ষ থেকেও কলিগদের মিষ্টিমুখ করানোর আয়োজন।

ফাবিহা আজ ভার্সিটিতে যায়নি, সকাল থেকে মীরাতের পাশে থাকতে চেয়েছে। তার মন প্রাণ প্রানবন্ত । আর সে ভীষণ এক্সাইটেড, কারণ সে এবার ফুপী হতে যাচ্ছে।ফোনে ছোট বাচ্চাদের জামাকাপড়, জুতা দেখছে। মনে হচ্ছে অন্য দুনিয়ায় ডুবে আছে। সুরমা বেগম আজ থেকে মীরাতকে খেয়াল রাখার জন্য পুরো মনোযোগী। খাবার, দুধ, ফল—এগুলো নিয়মিত দিতে ছাড়বেন না। বিশেষভাবে মীরাতকে কড়া শাসনে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি, যেন কোনোরকম অবহেলা না হয়।

দুপুর হয়ে গেছে। মীরাত আর ফাবিহা গোসল করে এসে বসেছে সোফায়। ফাবিহা মীরাতকে ফোনে বাচ্চাদের বিভিন্ন রকম জিনিস দেখাচ্ছে। আর মীরাত আপেল খাচ্ছে আর দেখছে।

“আর কয়েকমাস পর থেকে আমার ফুপীর দায়িত্ব পালন করতে হবে। এই কয়েকমাসে আমার পিচ্চি পাখির জন্য শপিং করবো। ”

ফাবিহার কথা শুনে মীরাত হাসে। হেসে বলে ;
“ এখনো সময় আছে। ”

ফাবিহা আবেগাপ্লুত হয়ে বলল;
“ তাতে কি হয়েছে। পিচ্চির জন্য এখনি প্ল্যানিং করবো। ভাবছি পিচ্চির জন্য একটা রুম ডেকোরেশন করবো। সেখানে সব পিচ্চির খেলনা,দোলনা থাকবে। আইডিয়াটা দারুন না?”

মীরাত হাসি বজায় রেখে বলল;
“ দারুন আইডিয়া।”

সুরমা বেগম উপস্থিত হলেন তখনি। হাতে এক গ্লাস দুধ। সকালে দুধ খায়নি মীরাত তাই এখন খাওয়ানোর জন্য নিয়ে এসেছেন। সুরমা বেগম টি টেবিলে গ্লাস রাখলেন। সোফায় বসে বললেন ;
“ মীরাত মা এই এক গ্লাস দুধ সম্পূর্ণ শেষ করবে। ”

মীরাত গ্লাসটি হাতে নেয়ে। আস্তে ধীরে খেতে থাকে। ফাবিহা বলল;
“ মা আফিয়া আন্টি আর নানু বাড়ির সকলকে জানিয়েছো সুখবর?”

“হুম জানিয়েছি। বুধবারে তোমার নানু, আরিশা আর আফিয়া আসবে। ”

“ওহহ”

ফ্ল্যাটের কলিং বেল বাজতেই সুরমা বেগম খুলে দেন গিয়ে। আহিয়াদ ক্লান্ত ভঙ্গিতে ভেতরে প্রবেশ করলো। হাতে তার বেশ কয়েকটা ব্যাগ। সে সরাসরি রান্নাঘরে ব্যাগগুলো রাখলো। সুরমা বেগম দরজা আঁটকে এসে আবারও বসলেন সোফায়। আহিয়াদও এসে ধপ করে বসে পড়ল মীরাতের পাশে। মীরাত দুধ খেয়ে গ্লাস রাখলো টেবিলে।

সুরমা বেগম হেসে বললেন;
“দেখলে মীরাত আমার ছেলে বাবা হবে তাই একদিনেই নিজেকে পরিবর্তন করে ফেলেছে। যে ছেলে কোনো দিন বাজারে যায় না। আজ সে তোমার জন্য ফল, সবজি কিনে এনেছে।”

মীরাত লাজুক হাসে। আহিয়াদ ভ্রুক্ষেপহীন ভাবে বলে ;
“একজন ভালো স্বামী তার স্ত্রীর জন্য সবকিছু করতে প্রস্তুত থাকে। আর একজন বাবা হিসেবেও দায়িত্ব শুরু হয় সন্তানের আগমনের মুহূর্ত থেকেই। সেই দায়িত্বকে যথাসাধ্য পালন করার চেষ্টা করছি।”

ফাবিহা আহিয়াদের কথায় সায় দিয়ে বলল;
“ একদম ঠিক বলেছো ভাইয়া। তুমি দেখিয়ে দাও হাসবেন্ড হিসেবে যেমন পারফেক্ট, তেমন বাবা হিসেবে তুমি সুপার হিরো।”

সুরমা বেগম উঠে মীরাত আর আহিয়াদের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে;
“ দোয়া করি তোমরা,দুজন সারাজীবন সুখে থাকো। আর আদর্শ বাবা মা হও। ”

একটু থেমে আবারও বললেন;
“ আহিয়াদ ফ্রেশ হয়ে আসো। আমি খাবার রেডি করছি। ”

কথাটা বলে সুরমা বেগম রান্নাঘরে চলে গেলেন। আহিয়াদ আর মীরাত ও নিজ রুমে চলে গেল।

★★

সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়েছে। মীরাত আর আহিয়াদ বেলকনিতে বসে আছে। দৃষ্টি তাদের আকাশের দিকে। আকাশ জুড়ে আজ তারার মেলা। চাঁদ ও দেখা যাচ্ছে। পূর্ণ থালার ন্যায় পরিপূর্ণ চাঁদ আকাশে দৃশ্যমান। জোৎস্না রাতে স্পষ্ট সবকিছু দৃশ্যমান। মীরাত আহিয়াদের কাঁধে মাথা রেখে বসে আছে। আহিয়াদ মীরাতের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।

“আপনাকে পেয়ে আজ আমি পূর্ণতা অনুভব করি। আপনি সেই একান্ত মানুষ, যিনি আমার জীবনের শূন্যতা, দুঃখ আর কষ্টের অন্ধকারে প্রথম থেকে আমার প্রেরণা, আমার সান্ত্বনা, আমার আশ্রয় হয়ে দাঁড়িয়েছেন। আপনি ছিলেন আমার শক্তি, আমার ঢাল, যার কারণে আমি অতীতের যন্ত্রণা ভুলে সামনে এগিয়ে যেতে শিখেছি। আপনার মতো একজন সঙ্গী পেয়ে আমি নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবতী মনে করি।”

আহিয়াদ মীরাতের আবেগ মিশ্রিত কথা শুনে হাসে।হাসি বজায় রেখে বলে;
“আমি তোমায় পেয়ে পরিপূর্ণ মীরাত। তোমাকে জীবনসঙ্গিনী হিসেবে পেয়ে আমি আমার সমস্ত শূন্যতা পূর্ণ করতে পেরেছি। তোমার পাশে থাকলে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে অদ্ভুত শান্তি ও সুখ অনুভব করি, যা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। তুমি আমার জীবনে অমূল্য।তোমার সাথে কাটানো প্রতিটি দিন যেন নতুন করে বেঁচে থাকার জন্য অনুপ্রেরণা।”

“আমাদের জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হতে চলেছে। আমরা কি সুন্দর ভাবে পিতা মাতার দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করতে পারবো?”

“অবশ্যই পারবো। টেনশন করো না। আমাদের সন্তানকে আদর্শ সন্তান হিসেবে লালন পালন করার যথাযথ চেষ্টা করবো।”

“তাই যেন হয়। ”

“তুমি, আমাদের সন্তান আর আমাদের ফ্যামিলি—আমার কাছে এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছু নেই। তোমাদের সকলকে ছাড়া আমি একদম শূন্য। তোমরা সবাই মিলে আমার জীবনের সবকিছু। তোমাদের জন্য বেঁচে থাকতে চাই, আর প্রতিদিন তোমাদের সুখ আর আনন্দের জন্য চেষ্টা করে যেতে চাই। তোমরাই আমার পৃথিবী, আমার সব ভালোবাসার উৎস।”

“ ভালোবাসি আহিয়ার আব্বু। ”

মীরাত গদগদ ভাব নিয়ে বলে। আহিয়াদের ভ্রুযুগল কুঁচকে যায়।সে ভীষণ অবাক হয়। কৌতুহলী ভাব নিয়ে জিজ্ঞেস করে ;
“ আহিয়া কে?”

মীরাত লাজুক হেসে বলে;
“আমাদের মেয়ে।”

“ আমাদের মেয়ে হবে তুমি কিভাবে জানলে?”

“আমার মন বলছে। ”

মীরাত আহিয়াদের গালে চুম্বন করে বলে। আহিয়াদ মীরাতের গাল আদুরে ভঙ্গিতে নেড়ে দেয়। চাদের আলোয় দুজন দুজনের দিকে অপলক তাকিয়ে থাকে।

★★

ফাবিহা উদাসীন ভঙ্গিতে বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসে আছে। দৃষ্টি তার ফোনের দিকে। অপলক চেয়ে আছে জেহফিলের ছবির দিকে। আজ নতুন বেশ কয়েকটা ছবি পোস্ট করেছে জেহফিল। জেহফিলের আইডি পাবলিক করা তাই সব সবসময় সে কখন কি পোস্ট করছে তা নজরে রাখে। সেই ছবি গুলোর দিকে তাকিয়ে ভালোবাসার মানুষকে এক নজর দেখার তৃষ্ণা মেটাচ্ছে। বুকের মাঝে অস্থিরতা বিরাজ করছে। ভালোবাসার মানুষকে না পাওয়ার যন্ত্রণায় ছটফট করে প্রতিটা দিন। একতরফা ভালোবাসার এই যন্ত্রণা কবে ফুরাবে।

“এই জনমে আপনাকে পাওয়া হলো না আমার। ”

ফাবিহার চোখে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে ফোন স্ক্রিনে। তার হৃদয়ে গুমোট ব্যথা জমে আছে।সে আলতো হাতে মুছে দেয় অশ্রুকণাটি। তার মন চায়, একবার মানুষটাকে ছুঁয়ে দিতে, তার অনুভূতিগুলো প্রকাশ করতে। কিন্তু সে জানে, তার ভাগ্য খারাপ। যা সে চায়, তা কখনো তার হবে না। স্মৃতির গহীনে হারিয়ে যায় সেই দিনটি, যখন রিসেপশনের পরের দিন জেহফিল চলে গিয়েছিলো—একবারও ফিরল না। আরিশা বলেছিল, জেহফিল তার সব কথা শুনে সেদিনই চলে যায়। এই কারণেই হয়তো সে দূরে দূরে থাকে, কখনোই কাছাকাছি আসে না।হঠাৎই তার ফোনে আননোন নাম্বার থেকে কল আসে। ফাবিহা চমকে যায়। তার কাজে বাধা প্রদান করায় বেশ বিরক্ত হয়। সে ফোনে জ্বলজ্বল করা নাম্বারটি দেখতে থাকে। ভাবতে থাকে কার নাম্বার হতে পারে? বেশ কয়েকবার কল করায় সে ফোনটি রিসিভ করল।

ফাবিহা বিরক্তির সহিত বলল;
“ আসসালামু আলাইকুম। ”

অপর পাশ হতে কোনো উত্তর এলো না। ফাবিহা বেশ কয়েকবার জিজ্ঞেস করল কে কল করেছে কিন্তু উত্তর এলোনা। তার মেজাজ বিগড়ে গেল। দাঁতে দাঁত চেপে বলল;
“আপনি কথা বলবেন নাকি কল কেটে দিবো?”

উক্ত কথা বলার পরপরই ভেসে এলো পরিচিত শান্ত কন্ঠ;
“ফাবিহা।”

ফাবিহা একমুহূর্তের জন্য থমকে যায়। তার মস্তিষ্ক হ্যাং হয়ে যায়। বুক কাঁপতে থাকে। অজানা উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে বুকে। অশ্রু গড়িয়ে পড়তে থাকে গাল বেয়ে। ভালোবাসার মানুষটির একটা শব্দ তার বুকে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছে। ভালোলাগা আর আনন্দ তার শরীরে শিহরণ বয়ে দিচ্ছে। গলা কাঁপছে তার। মনে হচ্ছে কথা তার গলা হতে বের হচ্ছে না।

“ফাবিহা শুনতে পাচ্ছো?”

আবারও ভেসে আসলো সেই পুরুষালী কন্ঠস্বর। ফাবিহা আবেশে চোখ বন্ধ করে নেয়। অতি কষ্টে কম্পনরত কন্ঠে ছোট্ট করে উত্তর দিল;
“হু।”

জেহফিলের গাঢ় শ্বাস ফেলল। এতোক্ষণে তবে উত্তর পেল। শান্ত কন্ঠে বলল;
“কেমন আছো?”

ফাবিহার ছোট্ট উত্তর ;
“ভালো।”

“একটা কথা বলবো?”

“বলুন। ”

“আমি জানি তুমি আমায় পছন্দ করো। শুনলাম আমার কারণে বিয়ের প্রতি অনিহা তোমার।”

“ভুল শুনেছেন।”

“আজ শুধু একটা কথা বলার জন্য কল দিয়েছিলাম তোমায়। ভালো ছেলে পেলে বিয়ে করে নিও। আমার অপেক্ষায় থেকো না।”

ফাবিহা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। কন্দনরত কাতর কন্ঠে বলল;
“ আপনি তো আমার মনের খবর জানেন। তারপরেও এমন কথা বলছেন কি করে?”

জেহফিল স্বাভাবিক ভাবে বলে;
“ আমার মনে তোমার প্রতি কোনো ফিলিংস নেই। তুমি শুধু আমার কাছে ফ্রেণ্ডের বোন। এর থেকে বেশী কিছু না।

“ আমি আপনাকে ভালোবাসি জেহফিল। ভীষণ ভালোবাসি। গত একবছর ধরে আপনাকে একমুহূর্তের জন্য ভুলতে পারিনি। প্রতিটা ক্ষণ আপনাকে নিয়ে ভেবেছি। ”

“প্লিজ ফাবিহা কান্না বন্ধ করো। আমার পক্ষে তোমায় ভালোবাসা সম্ভব নয়।”

ফাবিহার হাতে থাকা ফোনটি এক ঝটকায় বিছানার ওপর পড়ে যায়। এমন কথা শুনে তার মনোসংযোগ একেবারে ভেঙে পড়েছে। মুহূর্তের মধ্যে তার অশ্রু গড়িয়ে পড়ে স্ক্রীনের ওপর।তার মনে অশান্তির স্রোত বইছে। সে নিঃসীম দুঃখের মাঝেও নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করে, কিন্তু কোনোভাবেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। দু হাতে চুল খামচে, উদ্ভ্রান্ততায় সে কাঁদতে থাকে, মনে হচ্ছে তার হৃদয়টুকু ছিঁড়ে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে।

“জেহফিল, আমি আপনাকে কতটা ভালোবাসি! কেনো আমায় বুঝলেন না? আপনি যখন হঠাৎ আমার জীবনে এলেন, তখন তো জানতাম না যে আপনিই আমার জীবনের সেই অদ্ভুত ভালোবাসা হয়ে উঠবেন, যা আমাকে অগণিত রাত-দিন কাঁদাবে! একতরফা ভালোবাসার তীব্রতা সহ্য করতে পারছি না, বুকের ভেতর যে আগুন জ্বলছে, তা আমি আর সহ্য করতে পারছি না।”

ফাবিহা তার কণ্ঠে হাহাকার নিয়ে চিৎকার করে। তার চোখে যে অশ্রু, তা যেন বর্ণনাতীত। প্রতিটি শব্দ তার গলায় এমনভাবে আটকে যাচ্ছে। সে নিজের অনুভূতিগুলোর মাঝে ডুবে যাচ্ছে এখন।
ফাবিহার হৃদয় অতীব যন্ত্রনায় ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে। চোখে জল, বুকের ভেতরে হাহাকার, মনে মহা শূন্যতা। সে চিৎকার করে কাঁদছে।চিৎকারের মাঝেই তার সমস্ত অনুভূতি নির্মম ভাবে প্রকাশ পাচ্ছে। কিন্তু কেউ নেই তার হাহাকার শোনার।ফাবিহা চিৎকার করে পাগলের মতো কাঁদতে থাকে। জেহফিল ফোনের ওপর পাশ হতে শুনতে থাকে সেই চিৎকার। তবে সে নিশ্চুপ। তার কিছু করার নেই। ফাবিহা এলোমেলো ভঙ্গিতে বিছানায় শুয়ে পড়ে। চিৎকার দিয়ে কাঁদছে সে। তার ভালোবাসার মানুষকে আর পাওয়া হলো না। এখানেই সব শেষ। কিন্তু সে কি আসলে ভুলতে পারবে?হয়তো পারবে না। ইচ্ছে করছে এই নশ্বর পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে। আর বাঁচতে ইচ্ছে করছে না। ফাবিহার চিৎকার শুনে সুরমা বেগম, আহিয়াদ আর মীরাত ফাবিহার রুমের সামনে আসে। তারা সবাই মিলে দরজা ধাক্কাচ্ছে। উচ্চস্বরে উৎকন্ঠিত ভঙ্গিতে সবাই বলছে দরজা খুলতে। সেই কথা যেন ফাবিহার কানে যাচ্ছে না। সে তো তার ভগ্ন হৃদয়ের আহাজারি শুনতে ব্যস্ত।

*একতরফা ভালোবাসা কখনো কাউকে ভালো রাখে না, কারণ এটি এক ধরনের আত্মঘাতী অনুভূতি যা কেবল ব্যথা ও হতাশা তৈরি করে। যখন কেউ নিজের সমস্ত ভালোবাসা, সময় এবং মনোযোগ একজনের প্রতি একপেশে সমর্পণ করে, তখন সে নিজেকে অবজ্ঞার মধ্যে ফেলে দেয়। অন্য পক্ষ থেকে তা কখনোই সমানভাবে প্রতিফলিত হয় না, ফলে ভেতরে গভীর শূন্যতা এবং যন্ত্রণা সৃষ্টি হয়।এমন একতরফা ভালোবাসায়, আশা এবং বিশ্বাসের একটি অসম্পূর্ণ সমীকরণ থাকে, যার কোনো প্রত্যুত্তর বা সাড়া পাওয়া যায় না। এই ধরনের ভালোবাসা ব্যক্তির আত্মবিশ্বাসকে চূর্ণ করে দেয়, মানসিকভাবে তাকে দুর্বল এবং একাকী করে তোলে। এর ফলে কেবল কষ্ট এবং হতাশা নেমে আসে, এবং সেই ভালোবাসা কখনোই পূর্ণতা বা শান্তি এনে দেয় না।প্রকৃত ভালোবাসা হলো যে ভালোবাসা পারস্পরিক, যেখানে দুইজনের অনুভূতি একে অপরের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। একতরফা ভালোবাসা যেখানে শুধুই আশা এবং প্রচেষ্টা থাকে, সেখানে প্রশ্রয়ের কোনো জায়গা থাকে না, যা মানুষের মন ও হৃদয়কে কখনোই শান্তি বা সুখ দিতে পারে না।*( কালেক্টেড)

[ #অব্যক্ত_প্রেমাসুখ গল্পের ইতি টানলাম। আহিয়াদ আর মীরাতের ভালোবাসাময় সুন্দর ইতি টানা হয়েছে। তারা তাদের জীবনে সুখী দম্পতি। তাদের জীবনের নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে। তবে, ফাবিহার জীবনের সুন্দর ইতি টানতে পারলাম না। তার জীবনে পরবর্তীতে কি হবে তা সে নিজে জানে৷ ফাবিহার জীবনের এন্ডিং পাঠক মহলের কাছে ওপেন এন্ডিং রাখলাম। সবার ভালোবাসা পূর্ণতা পায় না তা ফাবিহাকে দিয়ে বুঝিয়েছি। ৩২০০+ শব্দ লিখেছি শেষ পর্বে সকলে রেসপন্স করবেন। ]

সমাপ্ত….♠️

লেখিকার পেজ লিংক :

https://www.facebook.com/profile.php?id=61553997711833&mibextid=kFxxJD

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here