বাঁধন হারা তীরে #রাহমুমা রাহা #পর্বঃ০৭

0
112

#বাঁধন হারা তীরে
#রাহমুমা রাহা
#পর্বঃ০৭

সাদা কালো গাড়ির বহর পেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে একটা গোলাপি রঙা স্কুটি। যাতে আরোহন করছে দুটো প্রাণ। একজনের চোখে সুবিশাল জনস্রোত। অপরজনের চোখে সতর্ক দৃষ্টি। স্বপ্নবাজ দু’জোড়া নয়নের মালিক ক্রমশ এগোচ্ছে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। মূল ফটক পেরোতেই সজল দৌড়ে এসে ঝাপটে জড়িয়ে ধরল প্রাণপ্রিয় ভাইয়ের বক্ষ। পলক মুচকি হেসে পিঠ চাপড়ে স্নেহাসিক্ত গলায় বলল,
“আমি ঠিক আছি; মেয়েদের মত কাঁদিস না ।”

ছাড়ল না সে মোটেও। ক্রন্দনরত কণ্ঠে বলল,
“কোথায় ছিলেন ভাই আপনে? আপনে জানেন কত ভয় পাইয়া গেছিলাম আপনের রক্তমাখা ব্যাগ আর মোবাইল দেইখা। রাস্তায় কত রক্ত পইড়া আছিল জানেন? দেইখা বুঝার উপায় ছিল না,আপনি বাঁইচা আছেন। এরম কেউ করে? আপনে জানেন না আপনার কত শত্রু! একা রাস্তায় কেউ বাইর হয়? যদি কিছু হইতো আপনের, আমাগো কি হইতো ভাই? আমার কি হইতো? একটাবার ভাইবা দেখছেন?”

পলক সজলের পিঠে হাত বুলিয়ে নরম গলায় বলল,
“তোদের ছেড়ে, তোকে ছেড়ে আমি এখনই যেতে পারি? সেই সাধ্য আমার আছে? এখন ছাড় দেখি। মরা মানুষ ফিরে এসেছে। ভেলকি দেখাতে হবে না? ছেড়ে আমার যাওয়ার ব্যবস্থা কর। স্কুটিতে বসে কতক্ষণ থাকব!”

সজল চোখ মুছে মুচকি হেসে বলল,
“অবশ্যই ভাই। আজ তো ভেলকি লাগবই মাইনষের চোখে। আমি হুইলচেয়ারের ব্যবস্থা কইরা রাখছি। এহনি নিয়া আইতাছি।”

সামনে সমুদ্রসম মানুষ। প্রতিটি মানুষের চোখে উচ্ছ্বাস, আনন্দ। হারিয়ে ফেলেও ফিরে পাওয়ার সুখানুভূতিতে মেতেছে গোটা ক্যাম্পাস। কিছু সময় পূর্বের সেই মিছিল, মিটিং, অনশন সব মিলিয়ে গেছে একজনের উপস্থিতির আবেশে। উত্তাল স্রোতকে এক লোহমায় ঘুরিয়ে দিয়েছে গম্ভীর অথচ স্নিগ্ধ একটি মুখ।

হাজার মানুষের ভীড়ে হুইলচেয়ারে বসে দুর্বল গলায় বলল,
“আমি সুস্থ আছি আল্লাহর রহমতে, আপনাদের দোয়ায়, ভালবাসায়। আর একজন মানুষের সাহসিকতায়, দায়িত্বশীলতায়। আমি অপারগ তাকে সামনে আনতে। কিন্তু তার কাছে চিরকৃতজ্ঞ আমিসহ আমার গোটা পরিবার। আজন্মকাল থাকব।”

হঠাৎই জনস্রোতে গুঞ্জন উঠে ; কে সেই মানুষ? কে বাঁচাল এই মানুষটার প্রাণ? কে ফিরিয়ে দিল ঘরের ছেলেকে? কেন সে লোকচক্ষুর আড়ালে?

পরক্ষণেই পলক পুনরায় বলল,
“কাল সন্ধ্যায় আমি ব্যক্তিগত কাজে একা বের হই। দুর্বৃত্তরা সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে হামলা করে আমার উপর। প্রস্তুত না থাকায় আহত হই মারাত্মকভাবে। নিজেকে যখন ওদের হাতে পুরোপুরি ছেড়ে দেই ঠিক সেই মূহুর্তে এসে উদ্ধার করে নিয়ে যায় সে। নিজের প্রাণ বিপন্ন করে রক্ষা করে আমার প্রাণ। যদিও সে রাজনীতি, রাজনৈতিক কার্যকলাপ এবং আমার মত কিছু মানুষকে মনে প্রাণে ঘৃণা করে। তবুও সে সারারাতের সেবায় আমাকে সুস্থ করে তুলেছে। এমনকি আজ ভার্সিটি ক্যাম্পাসে এসে আমার মৃত্যু সংবাদ শুনে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে গিয়েছে আমারই কাছে। যার ফলস্বরূপ আমি এখানে, আপনাদের সামনে।”

ভীড় ছেড়ে কয়েকগজ দূরে দাঁড়িয়ে নিজের সম্পর্কে বলা এতগুলো কথা শুনে তপা খানিকটা অবাকই হলো। অকৃতজ্ঞ ভেবে বসে থাকা লোকটার মাঝে তবে কৃতজ্ঞতা বোধও আছে! মুচকি হাসে তপা। এতটাও খারাপ নয় তবে…

সরু চোখে তাকিয়ে পা থেকে মাথা অবধি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে পায়েল তাজওয়ার। নিজের দিকে মায়ের এহেন দৃষ্টি দেখে পলক ভ্রুকুটি করে বলল,
“ঘরে ঢুকতে দেবেন না আম্মাজান? বাইরেই দাঁড় করিয়ে রাখবেন?”

পায়েল তাজওয়ার কিছু বললেন না ; কেবল কড়া চোখে তাকালেন।
পলক ইনোসেন্ট দৃষ্টি মেলে বলল,
“আমার অপরাধ?”

এবারে ক্ষেপে গেলেন তিনি। বিক্ষিপ্ত গলায় বললেন,
“যখন তোর পার্টির লোকেরা তোরই মৃত্যুর খবর নিয়ে বাড়িতে আসে তখন আমার কেমন অনূভুতি হয় তুই বুঝিস? যখন একজন মাকে তার ছেলের ফোন, ওয়ালেট আইডেন্টিফাই করতে হয় ; তখন কতটা পাষাণ হতে হয় তুই বুঝিস?”

পলক মায়ের দিকে হাত বাড়ালো। পায়েল তাজওয়ার এগিয়ে এসে সামনে দাঁড়ালেন। একহাতে হাত স্পর্শ করে অন্য হাত মাথায় বুলিয়ে দিয়ে কপালে স্নেহের চুম্বন আঁকলেন। মাতৃস্নেহে বুকে জড়িয়ে নরম গলায় বললেন,
“আমি কতটা ভয় পেয়ে গেছিলাম জানিস?”

পলক মায়ের আদরে সিক্ত হয়ে মৃদু হেসে বলল,
“সত্যি করে বলো তো; সত্যি সত্যি ভেবেছিলে, মরে গেছি?”

পায়েল তাজওয়ার ছেলের পিঠে হাত বুলিয়ে মৃদুস্বরে বললেন,
“আল্লাহ যেন আমার আয়ু তোকে দিয়ে দেয় বাবা। আমার আগে তোর আয়ু শেষ না হোক। হাজার বছর বেঁচে থাক তুই।”

পলক কিঞ্চিৎ হেসে বলল,
“কি বলছো আম্মা! হাজার বছর বেঁচে থাকলে তো আমার ইচিং বিচিং সব বিছানাতেই সারতে হবে। তখন তো আর এমন হ্যান্ডসাম, ড্যাসিং থাকব না। হাঁটার বল শক্তিও থাকবে না। বিছানায় পটি করলে পরিষ্কার করবে কে আম্মা? শেষে কি-না আমার ইয়ের উপর শুয়ে থাকতে হবে। আশীর্বাদ করছো নাকি তোমাকে জ্বালানোর শোধ তুলতে চাইছো? কোনটা আম্মা?”

চলবে…

অনেক দিন না লেখায় তাল হারিয়ে ফেলেছি। লেখা আগাতে তো চায়ই না, উল্টো খাপছাড়া হয়ে যায়। কষ্ট করে পড়ে নিন প্লিজ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here