ভালোবাসি তোকে ❤পর্ব- ৩১
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
.
গাড়িতে মাথা নিচু করে বসে আছি আমি আর আদ্রিয়ান রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে, এমন মনে হচ্ছে যেন চোখ দিয়েই গিলে খেয়ে নেবেন আমাকে। পুরো নিরব পরিবেশ বিরাজ করছে চারপাশে। আমি অসহায় দৃষ্টিতে তাকালাম ওনার দিকে, বেশ বুঝতে পারছি আজ উনি আমার ভালোমতোই ক্লাস নেবেন। উনি স্টেয়ারিং এর ওপর দিয়ে আঙ্গুল নাড়াতে নাড়াতে ঠান্ডা গলায় বললেন,
— ” আজকাল মেডিকেল এর ক্লাসগুলো কী বুয়েটে হচ্ছে নাকি? বুয়েটে কী করতে গিয়েছিলে?”
এই ঠান্ডা গলায় বলা কথাগুলো আমাকে ভয় পাইয়ে দেওয়ার জন্যে যথেষ্ট ছিল। আমি মাথা নিচু করে কাঁপাকাঁপা গলায় বললাম,
— ” না আসলে ওরা সবাই বলল একটু ঘুরে দেখবে তাই..”
আদ্রিয়ান এবারও ঠান্ডা গলায় বললেন,
— ” আর আমি কী বলেছিলাম?”
আমি আবারও মাথা নিচু করে ফেললাম। আসলেই একটা ব্লান্ডার করে ফেলেছি সেটা বেশ বুঝতে পারছি । উনি এবার জোরে ধমক দিয়ে বললেন,
— ” কী বলেছিলাম?”
— ” ক্ কলেজ থেকে বেড়িয়ে স্ সোজা বাড়ি যেতে। আর যদি অন্য কোথাও যাই তাহলে ফ্ ফোন করে জানাতে।”
উনি রাগী কন্ঠে বললেন,
— ” তুমি কী করেছো?”
আমি নিচের দিকে তাকিয়ে হাত কচলে যাচ্ছি। কী বলবো? আসলে কাজের চাপের জন্যে উনি আমায় নিতে আসতে পারেননা, এতোদিন একদম ভদ্র হয়েই ছিলাম। আজই একটু এদিক ওদিক করলাম আর আজই যে উনি হুট করে চলে আসবেন কে জানতো? উনি এবার আমার হাতে চাপ দিয়ে ধরে নিজের একদম কাছে টেনে নিয়ে বললেন,
— ” তোমাকে এমনিতেই খুব ভালো লাগে হোয়াইট এপ্রোনে আরও ভালোলাগবে তাইনা? আর কী জেনো হ্যাঁ তোমার বর হিসেবে রূপ একজন রত্ন? আমি তোমার বড় ভাই? ভাই হই আমি তোমার?”
আমি হালকা কেঁপে উঠলাম ওনার ধমকে কোনরকম কাঁপাকাঁপা গলায় বললাম,
— ” এগুলো কী আমি বলেছিলাম নাকি?”
— ” ও বলার সাহস পেলো কেনো? কেনো কথা বলছিলে ওর সাথে? ও তোমার সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলার সুযোগ পেলো কেনো?”
আমি এখন আর কিছু না বলে মাথা নিচু করে বসে রইলাম। এখন ওনাকে আর রাগীয়ে দিয়ে লাভ নেই। উনি আমার হাতের বাহু দুটো চেপে ধরে বললেন,
— ” সবসময় আমাকে টেনশনে না রাখলে তোমার হয়না রাইট? আমি তোমাদের ক্লাস শেষ হওয়ার আধ ঘন্টা আগে থেকে সামনের গেইটটাতে ওয়েট করছি অথচ তোমার দেখা নেই। পরে যখন ভেতরে গিয়ে জানতে পারলাম যে ক্লাস বিশ মিনিট আগেই শেষ আর তুমিও ওখানে নেই? তখন আমার কী অবস্থা হয়েছিল জানো তুমি? কে জানতো যে তুমি ঐ সাইডের গেইট দিয়ে বেড়িয়ে বুয়েট চলে যাবে? মানে খুব ভালো লাগে না আমায় এভাবে টেনশনে দেখতে, ডেসপারেট দেখতে?”
— ” আ’ম সরি। আসলে আমি বুঝতে পারিনি?”
উনি আমাকে ঝাড়া দিয়ে ছেড়ে বললেন,
— ” তা কেনো বুঝবে? আমাকে বোঝার তো তুমি চেষ্টাই করোনা। এক্চুয়ালি আমার কী মনে হয় তুমি আমাকে নিজের হাজবেন্ড মনেই করোনা জাস্ট একটা গন্ডি মনে করো তাইনা? যে তোমাকে সবকিছুই করতে বাধ্য করে।”
আমি কাঁদোকাঁদো মুখ করে ওনার দিকে তাকালাম এবার আমার ভীষণ কান্না পাচ্ছে। এভাবে কেনো বলছেন উনি? আমিতো ওনাকেই নিজের সবচেয়ে কাছের অভিভাবক বলে মেনে নিয়েছি। ওনার বলা প্রতিটা কাজ খুব খুশি মনে করি। আমি কাঁদোকাঁদো মুখ করে বললাম,
— ” সরি বলছিতো। আর কখনও এমন হবেনা। প্রমিজ।”
কিন্তু উনি কিছু বলছেননা সিটে হেলান দিয়ে হাত ভাজ করে ভ্রু কুচকে আছেন। হয়তো বেশিই রাগ করেছেন। দূর সবসময় উল্টোপাল্টা কাজ করি। এবার চাইতেও ফুঁপিয়ে কেঁদে দিলাম আমি। আমার কান্নার আওয়াজ পেয়ে আদ্রিয়ান অবাক হয়ে তাকালেন। তারপর তাড়াতাড়ি আমার কাছে এসে আমাকে এক হাতে জরিয়ে ধরে বললেন,
— ” এই পাগলী এভাবে কাঁদছো কেন? আচ্ছা আ’ম সরি। আমি আর বকবোনা। প্লিজ ডোন্ট ক্রাই।”
আমি ওনার টিশার্ট খামচে ধরে এখনও কেঁদে যাচ্ছি। উনি আমায় শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললেন,
— “অনি প্লিজ ডোন্ট ক্রাই। প্লিজ। আমার কষ্ট হচ্ছে তো। আর এমন হবেনা কান্না থামাও।”
উনি ওভাবেই আমাকে বুকে জরিয়ে ধরে বসে রইলেন। বেশ অনেকক্ষণ পর আমি স্বাভাবিক হলাম। আদ্রিয়ান আমায় সোজা করে বসিয়ে আমার চোখ দুটো মুছে দিয়ে কপালে চুমু বললেন,
— ” তুমি আসলেই একটা বাচ্চা।”
বলে হেসে দিয়ে আমার চুলগুলো হাত দিয়ে সেট করে দিয়ে বললেন,
— ” কিছু খাবে?”
আমি খুশি হয়ে গিয়ে বললাম,
— ” আইসক্রিম।”
উনি আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে মাথা নেড়ে হেসে দিলেন। আমি বললাম,
— ” আচ্ছা আপনি জানলেন কীকরে আমি বুয়েটে আছি?”
— ” সেটা তুমি না জানলেও চলবে।”
বলে উনি গাড়ি স্টার্ট দিলেন। আমিও আর কিছু বললাম না। ওখান থেকে প্রথমে আইসক্রিম পার্লারে। ওখান থেকে আইসক্রিম খেয়ে তারপর দুজন মিলেই বাড়ি চলে এলাম।
_________________
আজ বাড়ি পুরো ফাঁকা। মানে আমি আর আদ্রিয়ান ছাড়া কেউ নেই। বাড়ির বড়রা সবাই দেশের বাড়ি গেছে ইনভেটেশনে চারদিনের জন্যে। আর আপি ইফাজ ভাইয়া একটু টাঙ্গাইল গেছে। ভাইয়ার কাজ ছিল। কাল চলে আসবেন। জাবিনও দেশের বাড়ি গেছেন। আদ্রিয়ান ওনার কাজের জন্য যেতে পারেনি তাই আমিও যাইনি। আমি টেবিলে বসে পড়ছি। রাত খুব বেশি না হলেও আমার খুব ঘুম পাচ্ছে। আদ্রিয়ানও ল্যাপটপে নিজের কাজ করছেন। কিছুক্ষণ পর আর ভালো লাগছেনা তাই টেবিলে মাথা এলিয়ে দিলাম।
হঠাৎ মাথায় কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে চমকে তাকালাম। চোখ লেগে গেছিলো। একটা হাই তুলে ভালোভাবে তাকিয়ে দেখি আদ্রিয়ান হাতে এক গ্লাস দুধ নিয়ে বসে আছেন। সাথে সাথেই আমার মুখটা কালো হয়ে গেলো। এই অত্যাচারটা উনি রোজ আমার ওপর করেন। আমি অসহায় কন্ঠে বললাম,
— ” আদ্রিয়ান। আজ থাকনা? আজ খেতে ইচ্ছে করছেনা আমার।”
উনি বরাবরেই মতই কঠোর হয়ে বললেন,
— ” নো এক্সকিউস। এক নিশ্বাসে শেষ করো।”
আমি করুন স্বরে বললাম,
— ” বমি পেয়ে যাবেতো আমার।”
আদ্রিয়ান আমার দিকে গ্লাসটা এগিয়ে দিয়ে বললেন,
— ” পেলে করবে। তারপর আবার খাওয়াবো। এখন শেষ করো এটা।”
— ” প্লিজ।”
— ” ফিনিস ইট।”
আমি আর কী করবো? এটা শিউর যে এইসব ক্ষেত্রে আমার ইমোশনাল ড্রামা ওনার ওপর এফেক্ট ফেলবে না। তাই বাধ্য মেয়ের মতো নাক মুখ কুচকে গ্লাসটা হাতে নিলাম। তারপর নাক চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে একঢোকে খেয়ে নিলাম। দুধটা খেয়ে গ্লাসটা ওনার দিকে এগিয়ে দিতেই উনি হেসে আমার নাকের নিচটা মুছে দিতে দিতে বলল,
— ” গুড গার্ল। এখন আর পড়তে হবেনা এসো শুয়ে পরো। কালকেতো অফ ডে।”
কিন্তু আমার এতোটা উইক লাগছে আর ঘুম পাচ্ছে যে আমি চোখ বন্ধ করে টেবিলে মাথা এলিয়ে দিলাম। হঠাৎ খেয়াল করলাম উনি আমায় কোলে তুলে নিলেন। কিন্তু ঘুম আর ক্লান্তির জন্যে তাকিয়ে আর দেখতে ইচ্ছে করছেনা। তাই চোখ বন্ধ করে আছি। উনি আমায় বেডে শুইয়ে দিয়ে কিছুক্ষণ পর শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। আমিও আর চোখ না ওনার বুকেই পুরোপুরি ঘুমে তলিয়ে গেলাম।
_________________
সকালে রোদের আলো চোখে এসে পড়তেই ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো। আস্তে আস্তে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে দেখলাম আদ্রিয়ান থাই গ্লাস খুলেছেন। আমি শুয়ে শুয়ে ওনাকে দেখতে। একটা ব্লু টু কোয়ার্টার প্যান্ট আর কালো চিকন স্লিভস এর গেঞ্জি পরে আছে। চুলগুলো এলোমেলো, মুখে হালকা খোঁচা দাঁড়ি সব মিলিয়ে অনন্য লাগছে। উনি আমার পাশে এসে আমার সাইড দিয়ে হাতের ভর দিয়ে ঝুকে কপালে ঠোঁট ছুইয়ে বললেন,
— ” গুড মর্নিং।”
আমি মুচকি হেসে ঘুম ঘুম কন্ঠেই বললাম,
— ” ভেরি গুড মর্নিং।”
উনি হেসে আমার নাকে নাক ঘষে বললেন,
— ” তোমার এই ঘুম ঘুম কন্ঠে কতোটা মাদকতা আছে তুমি জানো? সেই মাদকতা ক্রমশই গ্রাস করে যায় আমাকে। হারিয়ে ফেলি নিজেকে তোমার মধ্যে।”
আমি চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছি। এমন করে বলতে হয়? ওনার কথাগুলো এতো ভয়ংকর কেনো হয়? উনি আলতো গলায় বললেন,
— ” চলো এবার ওঠো। কফি বানিয়ে এনেছি ঠান্ডা হয়ে যাবে।”
বলে আমার হাত ধরে টেনে বসিয়ে দিলেন। আমিও আস্তে করে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। আমি রুমে আসতেই উনি বললেন,
— ” ব্যালকনিতে চলো।”
আমিও মাথা নেড়ে ওনার পেছন পেছন গেলাম। গিয়ে দেখি উনি ব্যালকনির ফ্লোরে বসেছেন আমিও ওনার পাশে গিয়ে বসলাম। বাইরে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছে। হালকা বাতাস, শীতল আবহওয়া। সব মিলিয়ে মনকারা পরিবেশ। উনি আমার দিকে কফি মগটা এগিয়ে দিলেন। আমি কফি মগটা হাতে নিয়ে ওনার দিকে তাকালাম। আমার কী হলো জানিনা ওনার কাধে আস্তে করে মাথা এলিয়ে দিলাম। উনিও কিছু বললেন না। দুজনেই চুপচাপ কফির মগে চুমুক দিচ্ছি। বেশ অনেকক্ষণ চুপ থাকার পর উনি বললেন,
— ” জানো অনি এটা আমার ইচ্ছে ছিলো যে বিয়ের পর তোমার সাথে ব্যালকনিতে বসে বৃষ্টি দেখতে দেখতে কফি খাবো। আর তোমার মাথাটা আমার কাধে থাকবে।”
আমি একটু অবাক হলেও কিছু বললাম না। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললাম,
— ” আজ ল্যাবে যাবেন না আপনি?”
— ” নাহ। কিন্তু আবার আপনি? অনি প্লিজ তিন মাস হয়ে গেছে বিয়ের এবার আপনি বলাটা বন্ধ করো?”
আমি একটু অবাক হয়ে ওনার কাধ থেকে মাথা সরিয়ে বললাম,
— ” তাহলে কী ডাকবো?”
উনি আমাকে একহাতে জরিয়ে নিয়ে বললেন,
— ” তুমি বলবে?”
আমি অবাক হয়ে বললাম,
— ” কীহ? আপনি আমার কতোটা বড়। তারওপর..”
— ” লিসেন। জেনারেলি হাজবেন্ডরা বড়ই হয়। তাই তুমি আমাকে ‘তুমি’ করেই বলবে। আর সেটা এখন থেকে। এন্ড আমি কোনো এক্সকিউস শুনতে চাইনা।”
আমি এবার একটু অসহায় কন্ঠে বললাম,
— ” আচ্ছা হুট করে কীকরে হবে বলুন। একটু সময় দিন।”
আদ্রিয়ান একটু ভেবে বললেন,
— ” আচ্ছা যাও আজকের দিনটা দিলাম। কাল থেকে আমাকে তুমি করেই বলবে। মনে থাকবে? আমি কিন্তু কোনো বাহানা শুনবোনা।”
আমি অসহায় ভাবে মাথা নাড়লাম ঠিকই কিন্তু কীকরে তুমি করে বলব ওনাকে সেটাই ভাবছি। উনি আমার মাথায় একটা চুমু দিয়ে বললেন,
— ” আচ্ছা আজনা রান্নার জন্যে কেউ নেই। মনির মেয়ে অসুস্থ আর কাকাও নেই। তাই আমাকেই রান্না করতে হবে। তুমি থাকো আমি যাচ্ছি।”
— ” আমিও যাবো। আমি তো এমনিতেও কিছু পারিনা তাই আপনাকে হেল্প করব আর আপনার কাছে শিখবো।”
উনি আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে টেডি স্মাইল দিয়ে বললেন,
— ” আচ্ছা চলো।”
দুজনে মিলেই কিচেনে গেলাম। প্লান হলো কাজ ভাগাভাগি করে নেবো। একটা উনি তো একটা আমি। আদ্রিয়ান বললেন,
— ” কী খাবে?”
আমি একটু ভেবে বললাম,
— ” পরোটা আর আলুর দম। খুব ভালো হবে।”
তো সেই অনুযায়ী সব নামানো হলো। আদ্রিয়ান কাজ শুরু করবেন তার আগেই আমি বললাম,
— ” আমিও কিছু করবো।”
— ” তুমি পারবেনা অনি অভ্যেস নেই।”
— ” নাহ আমি করবোই।”
আমার জেদ দেখে আদ্রিয়ান একটু ভেবে বললেন,
— ” সবজি কাটতে দিলে তুমি হাত কেটে ফেলবে এক কাজ করো তুমি আটা ছানাও।”
আমি খুশি হয়ে সম্মতি দিলাম। আদ্রিয়ান একমনে পেয়াজ কাটছেন। আর এদিকে আমি আটা আর পানি মিক্সট করে বোকা হয়ে গেলাম। কারণ পানি বেশি পরে গেছে। ল্যাদা ল্যাদা হয়ে গেছে। আবার আটা দিতে আটা বেশি হলো তাই আবার পানি ঢালতেই এবার আবার পানি বেশী হলো। আমি অসহায় ভাবে দাঁড়িয়ে রইলাম। আদ্রিয়ান আমায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে উঁকি দিয়ে আটা দেখে শব্দ হেসে দিলেন। হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা। আমি মুখ গোমড়া করে দাঁড়িয়ে আছি। উনি বললেন,
— ” মন খারাপ করার কিচ্ছু নেই। ফার্স্ট টাইম এমন হয়। দাও আমি শিখিয়ে দিচ্ছি।”
এরপর আদ্রিয়ান ওগুলো সরিয়ে নতুন বলে কতটুকু আটা, কতোটা পানি দিতে হবে সেটা শিখিয়ে দিলেন। এরপর আমার হাতের ওপর হাত রেখে আটা ছানানো দেখাচ্ছেন। কিন্তু এখন উনি শেখানোর চেয়ে দুষ্টুমি বেশি করছেন। আমার কাধে কানে আলতো করে মাঝে মাঝে ঠোঁট ছোয়াচ্ছেন, মাঝে মাঝে কানে ফু দিচ্ছেন, আর হাত ধরার নাম করে হালকা করে সুরসুরি দিচ্ছেন। আমি ওনার এসব দুষ্টুমিতে কেঁপে কেঁপে উঠছি। হঠাৎ আমার মাথাতেও দুষ্টুমি ভর করল। আমি একটু আটা নিয়ে ওনার নাকে লাগিয়ে দিলাম। উনি সাথে সাথেই চমকে উঠলেন অবাক হয়ে আমার দিকে একটু তাকিয়ে থেকে ঠোঁট কামড়ে হেসে দুহাতে আটা নিতেই আমি ওনাকে সরিয়ে ওনার থেকে দূরে সরে গেলাম। কিন্তু বেশিদূর যাওয়ার আগেই উনি অামার দুইগালেই আটা মাখিয়ে দিলেন। আমি মুখ ফুলিয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে হেসে দিলাম সাথে উনিও হেসে দিলেন। এরপর পরোটা বেলতে গিয়েও তিনটে নষ্ট হয়েছে। সবগুলোরই বাংলাদেশের ম্যাপ হচ্ছে। অবশেষে ওনাকেই বানাতে হলো। হাসি আর খুনশুটির মধ্য দিয়েই রান্নার কাজ শেষ হলো।
__________________
দুপুরে খাওয়াদাওয়া শেষে আদ্রিয়ান বেডে হেলান দিয়ে শুয়েছেন আর আমি ওনার বুকে মাথা দিয়ে শুয়ে আছি। উনি আমার চুল নাড়তে নাড়তে বললেন,
— ” মন খারাপ?”
— ” না তো?”
— ” তাহলে চুপ করে আছো কেনো?”
— ” জানেন অফ ডে গুলোতে আমরা সব ভাই বোনেরা মিলে অনেক মজা করতাম। খেলা, পিকনিক সব হতো। খুব বেশিই মিস করি এসব।”
আদ্রিয়ান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন,
— ” আচ্ছা ঘুমাও এবার।”
আমিও কিছু না বলে চোখ বন্ধ করলাম। কতোটা ভালোবাসে ছেলেটা আমায়। আচ্ছা উনি বললেন শুরু থেকেই ভালোবাসতেন। এতোটাই যখন ভালোবাসতেন তখন কেনো আমায় বিয়ে করতে চান নি? আর কেনই বা নিজের থেকে দূরে রাখতে চেয়েছিলেন। কী কারণ হতে পারে এর? এসব নানা কথা ভাবতে ভাবতেই আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে পরলাম।
ঘুম থেকে উঠে পিটপিট করে চোখ খুলে উঠে বসে একটা হাই তুলে সামনে তাকিয়ে চমকে উঠলাম আমি। এতোবড় ঝটকা খাবো ভাবিনি। অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি সামনে।
#চলবে…