বাঁধন হারা তীরে #রাহনুমা রাহা #পর্বঃ২১

0
76

#বাঁধন হারা তীরে
#রাহনুমা রাহা
#পর্বঃ২১

সন্ধ্যা নামার কিছু মূহুর্ত আগে তপা উনুনে ভাতের হাঁড়ি বসিয়ে, ছুড়ির সাহায্যে আপনা মনে বশীভূত হয়ে শসা কাটছিল। থেকে থেকে আধোয়া শসার টুকরোগুলোই মুখে পুড়ছে। পলক দরজার সম্মুখে দাঁড়িয়ে তপার কার্যকলাপ লক্ষ্য করে এগিয়ে এসে পাশাপাশি দাঁড়াল। তপা কে অনুসরণ করে একটা টুকরো মুখে তুলে বিনীত ভঙ্গিতে বলল,
“কি ভাবছে আমার শ্যামাঙ্গিনী?”
তপা অবচেতনে অস্ফুটে বলল,
“হুহ্!”
পলক পুনরায় বলল,
“আমার মহারাণী কি ভাবছে?”
তপার ধ্যানমগ্ন মন এবার পুরোপুরি ধ্যানচ্যূত হলো। ভ্রু কুঁচকে বলল,
“নিজেকে রাজা মনে করেন? মহারাজ?”
পলক ঠোঁট বেঁকিয়ে হাসে। খানিকটা এগিয়ে এসে কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,
“মেনে নিচ্ছো আমার রাণী হিসেবে? সপে দিচ্ছো নিজেকে এই রাজ্য বিনা রাজার কাছে?”
তপা মাথা নিচু করে ফেলল। চোখ বন্ধ করে ছুড়ির একাংশ শক্ত করে চেপে ধরল। অপর হাত জায়গা করে নিল ওড়নার কোণে।
“স্বয়ং শাহজাহান কি-না জানিনা; তবে ওঠে এসেছি কিন্তু তাজমহল থেকেই। একবার কবুল বললে তোমার নিবাসও হবে ওই তাজমহল।”
তৎক্ষণাৎ চোখ খুলে তাকাল তপা। চোখের পর্দায় ভেসে উঠল প্রথম দিনের সেই কথাগুলো।
“তিয়াসা তপা পাবলিক প্রোপার্টির দিকে নজর দেয় না। এত খারাপ দিনও আসেনি, ওকে? তিয়াসাকে পেতে হলে তাজমহল থেকে স্বয়ং শাহজাহান কে উঠে আসতে হবে। এসব পাবলিক প্রোপার্টির কাজ নয় তিয়াসা কে পটানো। ব্যাপারটা ক্লিয়ার করে বুঝে নে, কেমন!”

আনমনেই হাসল তপা। শেষে কি-না পাবলিক প্রোপার্টিতেই মজে বসে আছে!

পলক হাত বাড়িয়ে তপা কে পেছন থেকে বেষ্টন করে ধরল। না স্পর্শ করে নি সে। কিঞ্চিৎ দুরত্ব বজায় রেখে হাতদুটো স্পর্শ করে আছে সামনের চিমনী। ঘাড়ের কাছেই পড়ে আছে কৃষ্ণ বরণ কেশরাশির অবলীলায় করে রাখা হাত খোঁপা। পলক নিজেদের মধ্যকার দুরত্ব ঘুচিয়ে পুরু ঠোঁট যুগল স্পর্শ করে লোভনীয় কেশরাশিতে। পরক্ষণেই তার নাসারন্ধ্র ভেদ করে এক শীতল বাতাস প্রবেশ করে হৃদয়ের গহীনে। যে বায়ু প্রবাহে মিশ্রিত আফিম থেকেও ভয়ংকর এক নেশাদ্রব্য। যা ক্রমশ গভীর থেকে গভীরে টেনে নিতে সক্ষম।

ঘর্মাক্ত গ্রীবাদেশে পুরুষালী পুরু ঠোঁটের স্পর্শ পেতেই তপার সদ্য যৌবনে পা দেওয়া নারী দেহ কেঁপে ওঠে। দু’হাত মুঠোয় পুরে শক্ত হয়ে দাঁড়ায়। পলক অদৃশ্য মায়াজালে আবদ্ধ হয়ে নিজেদের মধ্যকার দুরত্বটুকু ঘুচিয়ে দিতেই প্রশস্ত বুকে লেপ্টে যায় নরম কোমল নারী দেহ। তপা শিউরে ওঠে। নতুন অনূভুতিতে সিক্ত হয়ে কেঁপে ওঠে বারংবার।

সহসা প্রান্তর উচ্চস্বরে ডাক কর্ণকুহরে পৌঁছাতেই পলক ছিটকে দূরে সরে যায়। তপাও নিজেকে সামলাতে এদিক ওদিক তাকিয়ে জামা ঠিক করে। পলক যেতে যেতে বিরবির করে বলল,
“শালা।”
পলকের পশ্চাৎগমনের দিকে তাকিয়ে তপা বড় করে দম ফেলল। এতক্ষণ যেন নিশ্বাস বন্ধ করে দাঁড়িয়ে ছিল সে। পরমূহুর্তেই লাজে রাঙা হয়ে লজ্জালু হাসে। ঘাড়ে হাত রেখে চোখ বন্ধ করে কিছু সময় আগের অনূভুতিটুকু পুনরায় অনুভব করতে চেষ্টা করে। সুখ সুখ অনূভুতিতে ছেয়ে যায় গোটা কলেবর। মন প্রাণ উভয়ই যেন চিৎকার করে বলে- জীবন সুন্দর! মারাত্মক রকম সুন্দর!

পরের দিনের ঊষালগ্ন। তপা তৈরী হয়ে বের হওয়ার জন্য ড্রয়িং রুমে আসতেই ভেতরে প্রবেশ করে তটিনী। তপা কে বের হতে দেখে কিঞ্চিৎ মন খারাপ করে বলল,
“তুমি বের হচ্ছো আপু?”
তপা সকাল সকাল তটিনী কে দেখে খানিকটা অবাক হলো। এই সময়টা তো তার রান্নাঘরেই কাঁটার কথা। তবে আজ কি হলো! হাতে আবার বই! অবাকের পরিমাণ বাড়তে না দিয়ে তপা স্নেহার্দ্র গলায় বলল,
“তুই এই সময়?”
তটিনী মাথা নিচু করে বলল,
“ফিজিক্সের একটা টপিক্সে এসে আঁটকে গেছি আপু। বুঝে নিতে এসেছিলাম। কিন্তু তুমি তো বের হচ্ছো।”

“তোর মা তোকে ছাড়ল? রান্না নেই?”

“মা নিজেই তো পাঠাল আমাকে। জানো তো মায়ের তিন দিন ধরে কি যেন হয়েছে। অদ্ভুত ভাবে ভালো ব্যবহার করছে আমার সাথে। কাজ টাজ তেমন করতে দিচ্ছে না। নিজেই রান্নাটান্না করছে। আবার রেশমি আপুকেও রান্না শেখাচ্ছে। আমি পড়ছিলাম। হঠাৎ আপু এসে বলল সমস্যা হলে বলতে। আমি বলতেই মা’কে বলল। আর মা আমাকে তোমার কাছে পাঠাল। কি যে হচ্ছে কিছুই বুঝছি না।”

তপা খানিকটা ভাবলেও মনে মনে খুশিই হলো। অবশেষে খোদা মেয়েটার দিকে মুখ তুলে চেয়েছে। এভাবেই ভালো থাকুক পিচ্চিটা।

ঘড়ির দিকে তাকাতেই তপার চক্ষু চড়কগাছ। বেলা যে বেশি হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তটিনী কে এভাবে রেখে যেতেও ইচ্ছে করছে না। পলক থাকলে এই সমস্যায় পড়তে হতো না। সে-ই বুঝিয়ে দিতে পারতো। পরক্ষণেই প্রান্তর কথা মাথায় এলো। এক দৌড়ে ভেতরে গিয়ে ধাক্কাতে ধাক্কাতে বলল,
“ভাইয়া ওঠে দুই মিনিটে ফ্রেশ হয়ে নাও। ড্রয়িং রুমে একটা মেয়ে বসে আছে। ওর ফিজিক্সে কিছু সমস্যা হয়েছে। তুমি গিয়ে ঝটপট বুঝিয়ে দেবে।”
প্রান্ত ঘুম জড়ানো গলায় বলল,
“আমি কমার্সের স্টুডেন্ট বনু ”
তপা কোমরে হাত রেখে বলল,
“তুমি জীবনে স্কুলের বারান্দায় না গেলেও গিয়ে বুঝিয়ে দেবে, ব্যস। অতকিছু আমি জানি না। ওঠো তাড়াতাড়ি।”

প্রান্ত কোনো রকমে ওঠে বসল। চোখ কচলে তাকিয়ে বলল,
“কোন জন্মের শত্রুতা করছিস বলতো?”
তপা একগাল হেসে বলল,
“এত কষ্ট করে সাইন্স নিয়ে পড়লা। ফিজিক্সের উপর গ্রাজুয়েশন করলা এখন কাজে লাগাও। আলসেমি করলে চলবে?”
প্রান্ত বিরস মুখে তাকিয়ে রইল তপার দিকে। তপা যেতে যেতে বলল,
“মেয়েটা কিন্তু খুব মিষ্টি ভাইয়া। একেবারে রসগোল্লার মতো।”

চলবে…

নোটঃ আমার প্রথম ই-বুক #এই_রাত_তোমার_আমার আসছে আগামীকাল বিকেল ৩ঃ০৫ মিনিটে বইটই অ্যাপে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here