প্রিয়জন❤Part_01
Writer_Moon Hossain
[Shabnaj Hossain Moon]
❤পরম করণাময়ীর নামে শুরু করলাম❤
“আগুন ভাইয়া আমার শাড়ির কুচি খুলে ফেলে বলে…”মোম তোর নাভি দেখতে খুব সুন্দর। কি সর্বনাশের কথা! আমি তো পুরোপুরি বরফের মতো বরফ হয়ে গেলাম কথা শুনে।এতেই থামলেন না তিনি।”মোম তোর তোর কোমর দেখতে বেশ ফর্সা হয়েছে। কি ভয়াবহ কথা!
আগুন ভাইয়া আবার বলল.. “বাংলার মেয়েরা এখন আর বাংলার মেয়ে নেই। বাংলার মেয়েরা আগে কি চমৎকার নাদুস নুদুস মোটা সোটা ছিল। আর এখন আমাদের মেয়েরা বিদেশিনীদের মতো দিনের পর দিন না খেয়ে ফিগার কন্ট্রোল করছে। শুধু এটাই না তারা এখন সিল্কের শাড়ি পড়ে ফিগার দেখিয়ে বেড়ায় ঠিক তোর মতো। না না কোন কান্না নয়। একদম চুপ কর।
মোম-আমার খুব কান্না পাচ্ছে এমন কথা শোনে। আমি সব সময় বোরখা পড়ে নিজেকে পর্দার মধ্যে রাখি। আজ এই পার্টিতে আমার কিছু ওভার মর্ডান ক্লাসমেটরা এসেছে আর তারাই আমাকে জোর করে শাড়ি পড়িয়ে দিয়েছে।
শাড়ি পড়ার পর নিজেকে দেখে ফিট হওয়ার মতো সিচুয়েশন হয় আমার। ততক্ষণে সবাই আমাকে টেনে পার্টির এখানে নিয়ে এসেছে। আজকাল নাকি এটাই ফ্যাশন। সিল্কের হালকা শাড়ি পড়ার পর। সবাই আমার কত কত প্রশংসা করলো কিন্তু আমার নিজেকে এভাবে ভালো লাগছেনা। আমাকে নাকি ইন্দ্রাণীর মতো লাগছে ক্লাসমেটরা বলেছে। মহান আল্লাহ তায়ালা জানেন আমার কোন দোষ নেই।
আর আগুন ভাইয়া এগুলো কি বলছে। আজকের দিনে এভাবে না কাঁদালেই নয়।
আগুন ভাইয়া বলল…. সবাইকে তোর ফর্সা নাভি দেখাতে, কোমর দেখাতে খুব ভালো লাগে?
নেকা কান্না কাঁদাবিনা খবরদার। সোজা সাপ্টা উওর দে?
মোম- আমি সত্যি খুব কাঁদছি আগুন ভাইয়ের কথা শুনে। আমি বোরখা পরিধান করি এটা উনি জানেন।
আগুন ভাইয়া কে বললাম… আপনি বাজে ঢ্যাঁড়স সেটা জানতাম কিন্তু এতোটা বাজে হবেন জানা ছিল না। আল্লাহ এর বিচার করবে।
অতঃপর আমি কাঁদতে কাঁদতে চলে এলাম।
দাড়িয়ে থাকলে আরও বাজে কথা শুনতে হতো।
নিজের সম্পর্কে কোন ছেলে বাজে কথা বলবে তা মনে হয় বাঙালি মেয়েরা দাড়িয়ে থেকে শুনবেনা। আর সে যদি মুসলিম হয় তাহলে তো কোনো কথায় নেই।
.
.
আগুন ভাইয়া আমার সাথে সব সময় এমন করে কেন কে জানে। কোন জন্মের শোধ নিচ্ছে আল্লাহয় জানেন।
আগুন ভাইয়া আমার বাবার বন্ধুর ছেলে। বিদেশ থেকে পড়াশোনা করে ফেরত এসেছে আমাকে জ্বালাতে।
দেখতে গ্রীক ফরেনারদের মতো। কিন্তু আচরণ সোজা আফ্রিকানদের মতো দলে।
বলে তো লন্ডন থেকে পড়াশোনা করেছে ছোট থেকে। আমার সন্দেহ লাগে। মনে হয় জন্ম থেকেই ছিলেন আফ্রিকা বা উগান্ডা।
উনাকে রিসিভ করতে এয়ারপোর্টে গিয়েছিলাম আমি।
বাবা, আংকেল আরও অন্যান্যদের দৌড়ে এসে জরিয়ে ধরেছিল এয়ার্পোটো।
আমি খুব লাজুক সবাই বলে আর আমিও বুঝি আমিও লাজুক।
হঠাৎ আমাকেও জরিয়ে ধরেছিল আগুন ভাইয়া সবার সামনে।
সবাই এই যে ছাড়ানোর চেষ্টা করল তবুও কিছুতেই ছাড়াতে পারলনা।
শেষমেশ কিছু কনস্টেবল এসে ছাড়ালো উনার কাছ থেকে আমাকে। লজ্জায় আমি কুুরে গেলাম। জীবনে প্রথম কোন ছেলে মানুষের ছোঁয়া পেলাম। আমার পুরো শরীর কাঁপতে শুরু করলো।
বিদেশে থেকে থেকে যে বডি বানিয়েছেন তাতে আমার মতো শুকনো মেয়ের পটল তোলার কথা যেভাবে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছিলেন।
কিন্তু অবাক কান্ড আমি বেচে আছি। আমার হাড়গোড় সব ভেঙে গিয়েছে এই আরকি।
প্রচন্ড ধরেনের ব্যথা অনুভব করেছিলাম। আল্লাহ এর বিচার করবে।
আঙকেল যখন বলল বাবা আগুন তুমি বিদেশে বড় হয়েছে। ওখানে যাকে তাকে জড়িয়ে ধরা যায় বাট এটা বাংলাদেশ। এখানে মেয়েদের এভাবে ধরতে নেই।
আগুন ভাইয়া সানগ্লাস খুলে বলল…সো ওয়াট। আমি তো একটা বৃদ্ধাা মহিলাকে হাগ করলাম। বোরখা পরার কারণে আমাকে বৃদ্ধার মতো দেখাচ্ছিল এটা কোন কথা । আমাদের বাসা থেকে বোরখা ছাড়া বাহিরে বের হওয়ার কথা ভাবা যায়না। লোকের আর দোষ কি।
আংকেল বলল… বাবা ও হচ্ছে তোমার আংকেলের মেয়ে। ও খুব পর্দাশীল মেয়ে। একবার বাবা তোমার বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখার উচিৎ ছিল আফটার অল দিস ইজ বাংলাদেশ। আগুন ভাইয়া আমার নেকাব খুলে কিছুক্ষণ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল যেনো মেয়ে দেখেনি কখনো। উনি অস্ফুট স্বরে বলল..মাশাআল্লাহ।
আগুন ভাইয়া বলল… Oh ড্যাড বিষয়টি আমি ক্ষতিয়ে দেখেছিলাম বলেই কিস করিনি। আমি কিভাবে জানবো বোরখার মধ্যে বৃদ্ধার জায়গায় ইয়াং মেয়ে থাকবে
। চিল বাবা চিল। এমন কিছু হয়নি৷
কথা শুনে আমার অজ্ঞান হওয়ার আগে বাবা আর আংকেল অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছিল।
আমি উনাদের ধরার জন্যই অজ্ঞান হয়নি।
সারা রাস্তা জুড়ে গাড়িতে বক বক করেই যাচ্ছিল আগুন ভাইয়া।
হঠাৎ আমাকে বলে…. Hi বেবিডল আপনার নাম কি??
_আমি আপনার বড় না। আপনি বলে ডাকবেন না।
_মাই মিস্টেক। Hi বেবিডল তোর নাম কি?
_আনুশকা ইয়াসমিন মোম।
_মোম নামটা খুব স্মার্ট নাম মেবি।
_আমার দাদাজান রেখেছিলেন। উনি খুব মর্ডান ছিলেন। বাবা আরজুমান খাতুন রাখতে চেয়েছিলেন। কথা শুনে উনি খুব হাসছেন। বার বার তুই করে বলছেন।
আপনি বলতে নিষেধ করেছি তাই বলে সরাসরি তুই বলতে হবে।
দুঃখে রাগে জানালার দিকে তাকালাম।
আমার সাথেই কেনো এমন হয়। ক্লাসের ম্যাম সবাইকে তুমি করে বলে আর আমাকে আদর করে বলে তুই। চাইনা আমার আদর করে তুই ডাকা।
.
.
বাবা বাসায় ঘোষণা দিলো আগুন ভাইয়াদের বাসায় ডিনার করার কথা।
মা আর বাবা আমাকেও সাথে নিয়ে গেলো।
আমি যেতেই আগুন ভাইয়ার বোন আরু আমাকে তার রুমে নিয়ে গেলো। আর আমার নেকাব খুলে আমার কপালো চুমু খেলো।
আরু আনন্দের সাথে তার গিফট গুলো দেখানো শুরু করলো আমাকে।
_মোম এই দেখো টপ টা কি নাইস। এই দেখ জিন্স টা। এই দেখো কত রকমের চকলেট।
তুমি নেবে কিছু??
আমার এগুলো দেখে লোভ হলো না তেমন।
_গিফট গুলো কোথা থেকে পেলে?
-ভাইয়া এনেছে বিদেশ থেকে। তুমি নিলে নিতে পারও কিছু।
নাম শুনে আমার ভয়ে নিতে ইচ্ছে করল না। আরু আর আমি অনেক গুলো চকলেট খেলাম।
আরু বলল…মোম একটা জিনিস দেখবে?
আমি হ্যাঁ বললাম। আরু আমাকে একটা রুমে নিয়ে গেলো। অনেক সুন্দর রুম। একটু অন্ধকার বলে হরর হরর লাগছে। কেমন একটা শরীর ঝমঝম সিচুয়েশন।
আরু একটা সুন্দর তাজমহল দেখালো আমাকে। সত্যি বলতে এতো সুন্দর তাজমহল আমি দেখিনি।
তাজমহল টা আমি হাতে নিতেই ওয়াশরুমের ডোর খুলে কেউ বেড়িয়ে এলো।
আরু ভাইয়া বলে এক দৌড় আমাকে ফেলে।
আগুন ভাইয়া শাওয়ার করে শুধু টাওয়াল পড়ে বের হয়েছে।আমার দিকে আসতেই আমার হাত থেকে তাজমহল টা নিচে পড়ে ভেঙে গুড়ো গুড়ো হলো।
_শয়তান মেয়ে এটা কি করলি?? আমার তাজমহলটা ভেঙে ফেললি।
এই ঘরে তুই এলি কেনো?? এতো বড় সাহস তোর?
আমি ভয়ে ভয়ে ঢোক গিলছি আর মনে মনে আল্লাহ কে ডাকছি। দুটো ফকির খাওয়াব এখান থেকে আর সামনে থাকা শয়তানের ত
হাত থেকে বের হতে পারলে।
.
.
আগুন ভাইয়া আমার খুব কাছে এসে পড়ল। তারপর… আমার প্লাস বাড়তে শুরু করেছে। ছুটে পালাতেও পাচ্ছিনা। আগুন ভাইয়া হঠাৎ করে আমার নেকাব খুলে ফেলল। লজ্জায় আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম।উনি আমার গাল টেনে দিলো খুব জোরে যেনো আমার গাল কেউ ছিড়ে ফেলেছে।
আগুন ভাইয়া আমার কানে কানে বলল…তোর গাল দুটো তো বেশ তুলতুলে। অবশ্য তুই পুরোটাই তুলতুলে।
আমার মুখ থেকে বেরিয়ে এলো… আর আপনি খুব শক্ত। একদম স্টিল। ঐদিন আমাকে এমন ভাবে জরিয়ে ধরেছিলেন যে আমার বডি খন্ড খন্ড হওয়ার উপক্রম।
-কি বললি তুই? আমি শক্ত স্টিল??
আমি এক দৌড়ে মায়ের আর আন্টির কাছে রান্না ঘরে গেলাম। মা আর আন্টি মিলে রান্না করছে….
মা বলল…মোম দেখ তোর আগুন ভাইয়ের জন্য শুধু লবণ দিয়ে আস্তো তেলাপিয়া মাছ ডুবন্ত তেলে ভেজেছি।
ছেলেটা বাঙালি খাবার খায়না কত বছর। ভাবছি পাঙ্গাশ মাছের ভরা করব।
আমি দেখলাম আস্তো এতো বড় তেলাপিয়া মাছ ডুবন্ত তেলে ভাজা হচ্ছে। ইশশ কি ভয়ংকর ব্যপার। মাছ গুলোর কি অবস্থা। কে জানতো নিরীহ মাছ গুলো এভাবে জ্বলসানো হবে শয়তান ফরেনার আগুনের জন্য।
.
.
খেতে বসেছি সবাই মিলে। আগুন ভাইয়া আমার সামনে বসেছে। আমার দিকে এমন ভাবে তাকাচ্ছেন যেনো আমি ভাজা তেলাপিয়া মাছ। আমাকে খাওয়ার জন্য জাস্ট সস লাগানোর বাকি। কি আজব! আগুন ভাইয়াকে দেখলাম গপাগপ খাচ্ছে। প্রায় ১২ রকমের আইটেম একাই সাভার করছেনে। মা আর আন্টি উনার মাথায় হাত বুলিয়ে বুলিয়ে সিনেমা স্টাইলে আদিক্ষেতা করে বলছেন…” আমাদের ছেলেটা না খেয়ে শুকিয়ে কি হাল করেছে। “খাও বাবা খাও এতো কম খেলে চলে? আর তিনটে মাছ ভাজা নাও। আমার খাওয়ার মোড নেই বললেই চলে। কি করে থাকবে সামনে যদি কেউ এভাবে স্টোন স্টোন করে খায়। যত্তসব আদিক্ষেতা চলছে।
আগুন ভাইয়ার সাথে একবার চোখাচোখি হওয়ায় আমি মিছেমিছি হাসি দিলাম। উনিও উনার মতো শয়তানের হাসি দিল। লক্ষ্য করছি কেউ আমার পায়ে পা দিয়ে পায়ের উপরের দিকে উঠেছে।
নির্ঘাত আরুর কাজ।
একি হলো আরু তো চলে গেলো তাহলে কে??
আগুন ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।
কি সর্বনাশ!
আমি তাড়াতাড়ি উঠে পড়লাম। আগুন ভাইয়া দেশে আসার পর থেকে আমাকে তার জ্বালায়, তার উত্তাপে জ্বলতে হয়েছে।
এক নম্বরের ফাজিলের নোবেল উনাকে দেওয়া যেনো উনার প্রাপ্য।
আমি ইসলামের ইতিহাসে অনার্স করছি। একটা বিষয়ে ইনকোর্সে একটু কম নম্বর পেয়েছি। বাবা মা খুব কষ্ট পাবে জানলে তাই প্রফেসরের দেওয়া খাতাটা লুকিয়ে রেখেছিলাম বেডের নিচে। আগুন ভাইয়া কিভাবে যেনো জেনে ফেলে। তিনি বলেন… আমাকে ঘুষ দে?? তাহলে কাউকে কিছু বলব না।
_আমি কি ঘুষ দেব?
আমার কি আছে?
_তোর কাছে যা আছে তা কারও কাছে নেই।
_কি সব বলছেন? আসল রাস্তায় আসুন কি চায়??
_ তোর নেকাব খুলে তোর ফেসটা আমাকে দেখাতে হবে এবং
তোর কাছে যতগুলো চকলেট আছে সবগুলো দে।
বাধ্য হয়ে নেকাব খুলে উনাকে মুখ দেখাতে হলো।
আমি আমার প্রিয় চকলেট গুলো সব দিয়ে দিলাম।
কি নির্দয়ের মতো আগুন ভাইয়া আমার চকলেট গুলো আমার সামনে বসে খেলো। একটুও দিলো না।
“ভাবা যায় কি নির্দয়।
আগুন ভাইয়া মীর জাফর গিরি করলেন আমার সাথে। তিনি সবাইকে আমার খাতা দেখিয়ে দিলেন। বাবার কাছেও ধরিয়ে দিলেন।
.
.
উল্টো আমাকে বললেন আমি নাকি আগুন ভাইয়াকে ঘুষ দিয়েছি।
আগুন ভাইয়া সবাইকে বললেন..হ্যাঁ এই মোম আমাকে ঘুষ দিতে চেয়েছিল। আমি ওর কুকীর্তি যেনো ওপেন না করি সেজন্য আমাকে অনেক গুলো চকলেট দিয়েছিল। আমার চকলেট গুলো দেখে জিহ্বায় পানি পড়ে কি যে অবস্থা আংকেল আন্টি কি বলব।
তারপর নিজেকেই নিজে বললাম না আগুন এতো বড় পাপ করোনা।
আমি জাস্ট অবাক।
একে চুরি তার উপর শিনাজুরি।
.
.
একদিন আমি ভার্সিটিতে আমার ছেলে ক্লাসমেটের সাথে
কথা বলে জাস্ট শেষ করলাম অমনি দেখি আগুন ভাইয়া আগুনের দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আমার সামনে দাড়িয়ে আছে।
যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধ্যা হয়।
আমাকে সবার সামনে থেকে টেনে বাসায় এনে উনার শক্ত হাত দিয়ে জোরে জোরে আমার হাতে কামর মারলেন অনেক গুলো।
কামরের ব্যাথায় আমার হাত দুটো ফুলে ব্যাঙের মতো হলো।
আমি সেদিন রাতে খুব কান্না করলাম দরজা বন্ধ করে।
এতো কষ্ট কেনো পৃথিবীতে???? আল্লাহ এর বিচার করবে। শয়তান কোথাকার।
.
.
.
চলবে….
#প্রিয়জন❤
[ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কেউ চুরি করবে না গল্প দয়া করে। ]❤❤❤❤❤