প্রিয়জন❤Part-06
Writer-Moon Hossain
আগুন-Oh God!!! save me this dangerous girl.
বলে কি আমার কানে গরম তেল ঢেলে দেবে। আমার চোখে মরিচের গুড়ো দেবে।
আমি বললাম… আমার থেকেও সাংঘাতিক তুমি।
মোম -কেনো? আমি কি আপনার মতো আপনার হাত ধরে টানাটানি করেছি নাকি আপনার সাথে সেটে থাকি পাটিসাপটার মতো?
আগুন-তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিল।
মোম -আমার নেই। যেতে দিন ভালোই ভালো। একটা চিৎকার দিলে লোক জড়ো হবে। আপনাকে এমন ঢলা দেবে যে আপনি নিজেকেই নিজে চিনতে পারবেন কিনা সন্দেহ। এটা বাংলাদেশ এখানে রাস্তায় মেয়েদের কিছু হলে দোষ যার থাক ছেলেরাই ধোলায় হয় সাথে গরম গরম ঢলা খায়। ফ্রীতে বিনোদন! (হিমু সবসময় ঢলা খাওয়া দেওয়ার কথা বলে তাই লোভ সামলাতে না পেরে আমিও বললাম)
আগুন-ঢলা?? হোয়াটস ইজ ঢলা??
মোম- ঢলা ওয়ার্ড বুঝতে পাচ্ছেন না?? ওহ ভুলে গিয়েছিলাম আপনি তো আবার বিদেশি ম্যান। দেশের ভাষা জলাঞ্জলি দিয়েছেন। এটা লোকাল ভাষা। ঢলা মানে হলো রাম ধোলাই। ইংরেজিতে Beating…
আগুন-I sec!!!..
আগুনের মোমের আরও কাছে গিয়ে বলল….তুমি নিজে একটু ঢলা দাওতো তোমার নরম হাতে।
মোম-বাংলাদেশে ঢলা মেয়েরা দেয়না। ছেলেরা দেয়।
আগুন-কেনো??
মোম-এটা বাংলার নিয়ম। মাছ ভাত খাওয়া যেমন বাংলার নিয়ম তেমন নিয়ম ঢলার ক্ষেত্রে।
আগুন- বিদেশে তো ছেলেমেয়ে উভয়ই ফাইটিং করে নিজেকে রক্ষা করে।
মোম একবার আগুনের দিকে আরেকবার নিজের দিকে তাকালো।
মোম-তাহলে আপনার সাথে ফাইট করে আমার নিজেকে রক্ষা করা উচিৎ।
আগুন -না মানে আমি তো দুষ্টু ছেলেদের মতো নয়।
মোম গাড়িতে উঠার জন্য পা বাড়াতেই আগুন মোমের হাত আবারও ধরলো।
মোম আচমকা আগুনকে জোরে ধাক্কা মেরে নিচে ফেলে দিলো।
মোম- কিছু বলছিনা বলে মাথায় উঠে গিয়েছেন। আমার হাত ধরবে আমার স্বামী। অন্যকেউ নয় আর আর আপনি তো নয়। আমার থেকে দূরে থাকুন।
আর কখনো আমাকে টাচ করবেন না। খবরদার। আপনাদের মতো বিদেশ ফেরত ছেলেদের চেনা আছে।
বিদেশে না জানি কি কি করে বেরিয়েছেন মেয়েদের সাথে।
দেশে আসতে না আসতেই শুরু করে দিয়েছেন। নিজের আসল রুপ দেখিয়ে দিয়েছেন। একটু তো লেহাজ করু আমি আপনার বাবার বন্ধুর মেয়ে।
আমার থেকে দূরে থাকবেন। আল্লাহ আপনার হেদায়েত করুক।
.
.
.
মোমের গাড়ি চলে গেলো।
আগুন- আমার মনটা ভেঙে গুড়ো গুড়ো করে দিলে প্রিয়তমা। আমার হ্রদয় ক্ষত বিক্ষত করে দিলে প্রিয়তমা।
আমি অন্য কেউ না। আমি তোমার স্বামী। এটাই বলতে চেয়েছিলাম।
আগুনকে ড্রাইভার উঠতে সাহায্য করলো। মোম এমন ধাক্কা মেরেছে যে আগুনের পোশাকে ধুলোবালি লেগেছে।
.
.
আগুনের মা অনেক গুলো গয়না ঘাটি নিয়ে আগুনের রুমে গেলো।
আগুনের মা -বাবা দেখো এগুলো তোমার বউয়ের জন্য। পছন্দ হয়েছে।
আগুন ল্যাপটপে কাজ করছিলো।
আগুন-অনেক সুন্দর জুয়েলারি।
-বৌমা যা রূপসী। সাক্ষাৎ হুর। ওর কাছে এগুলো তো ধূলোর কণার মতো।
বৌমার দিকে মন চায় সারাক্ষণ তাকিয়ে থাকতে।
আমি ওকে সুকেশে সাজিয়ে রাখব আমাদের বাড়িতে আসার পর।
আগুন-মাকে সত্যিটা জানানো ঠিক হবেনা।মা কষ্ট পাবেন। বৌমাকে নিয়ে যে সপ্ন তিনি দেখেছেন তা ভেঙে দেওয়ার কোন অধিকার নেই আমার। এটা পাপ হবে।
আমি বললাম… তোমার বৌমা তাই যা ইচ্ছে তাই করবে।
-মনে যেনো থাকে। সুন্দরী বউকে নিজের কাছে লুকিয়ে রাখবেনা। আমাদেরও দেখতে দেবে।
-ঠিক আছে মা তোমার যেমন আদেশ। মায়ের আদেশ সবার আগে ভুবনে।
.
.
আরমান মেয়ের রুমে ঢুকলো। মোম ঘুমুচ্ছে।
আরমানের মাঝে মাঝে সন্দেহ হয়। মোম কি তার নিজের মেয়ে নাকি। এতো সুন্দর মেয়ে তার জন্মেও দেখেনি। সাক্ষাৎ হুর তার ঘরে দিয়েছে মহান আল্লাহ তায়ালা।
আল্লাহ যখন খুশি হয় তখন ঘরে কন্যা সন্তানের জন্ম দেয়। আরমানের ধারণা নিশ্চয়ই সে এমন কোন ভালো কাজ করেছে তাই আল্লাহ তার প্রতি খুশি হয়ে এমন পাক পবিত্র নিষ্পাপ একটি মেয়ে দান করেছেন।
মেয়ের ঘুমন্ত কপালে একটা চুমু দিয়ে চলে গেলো কিছুক্ষণ মাথায় হাত বুলিয়ে।
আরমান যেতেই মোম উঠে বসলো।
বিকেলে আরমান অফিস থেকে এসে সবার আগে মেমের রুমে গিয়ে ঘুমন্ত মেয়েকে আদর করে যায়। মোম ছোট বেলা থেকে এটা লক্ষ্য করেছে।
তাইতো বাবার আদর পেতে ঘুম না এলেও চাদর নিয়ে চোখ বন্ধ করে থাকে।
আচ্ছা মোমের স্বামীও কি অফিস থেকে এসে এভাবে চুমু খেয়ে আদর করবে? ধ্যাত কিসব অপ্রত্যাশিত কথা ভাবছে মোম।
কথাটা ভাবতে ভাবতেই মোম লজ্জা পেয়ে শুয়ে কাথায় মুখ ঢেকে ফেলল।
.
.
আগুন সকালে অফিসে গিয়েছিলো। অফিসের সবার সাথে তার বাবা তাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে।
অফিসের স্টাফরা আগুনকে দেখে চমকে গেলো। এতো সুপুরুষ এর আগে কেউ দেখেনি।
কি হাটার স্টাইল।
আগুন কখনো মুখের হাসি চোখ দিয়ে প্রকাশ করেনা। ঠোঁট দিয়ে প্রকাশ করে। আগুনের ঠোঁট একদম লাল টকটকে যেটা তার হাসিকে অমায়িক করে তুলেছে।
অফিসের সবাই তো ওর উপর ফিদা।
.
.
আগুন মিটিংয়ের সময় ঘড়িতে তাকালো।
আগুন-সর্বনাশ মোমের ভার্সির ক্লাস প্রায় শেষ।
এই মেয়ে একমিনিটও লেট করেনা ক্লাস শেষে বাসায় যেতে। সিডর আয়লা নার্গিস বয়ে গেলেও এই মেয়ে ভার্সিটিতে ওয়েট করবেনা। ভুলে গিয়েছিলাম ও তো নিজেই একটা মোম ঘূর্ণিঝড়।
.
মোম-আজ ক্লাস গুলো ঠিক মতো করলাম। সামনে এক্সাম সবকিছু কভার করতে হবে। ধূর ধূর ভালো লাগেনা এক্সাম দিতে। আল্লাহ তুমি লেখাপড়া কেনো দিয়েছো? না না লেখাপড়া না দিলে তো তোমাকে ভালো করে জানতেই পারতাম না। তোমার হাদিস গুলো পড়তেই জানতামনা তখন।
গাড়িতে উঠে দেখি মহা ইবলিশ। সরি ইবলিশের শয়তান বসে আছে।
আগুন -আমাকে দেখেই আমার প্রিয়তমা নেমে যাচ্ছিলো।
আমি ওর হাতটা ধরে ফেললাম। মোম এমন ভাবে তাকালো যে আমি ওর হাত ছেড়ে দিলাম।
মনে মনে ভাবছি একদিন এমন ধরা ধরব যে একবছরেও কেউ তোমাকে আমার কাছ থেকে ছাড়াতে পারবেনা।
.
.
আগুন-রাগ করোনা প্লিজ।
তোমার সাথে কিছুক্ষণ থাকতে চাই।
এই সামনেই যাব। বাংলার ফুচকা সেই ছোটবেলায় খেয়েছিলাম। এর স্বাদ ভুলে গিয়েছি।
কোথায় ফুচকা পাওয়া যাবে ভুলে গিয়েছি। সো তুমি যদি আমাকে হেল্প করতে।
মোম -আপনি মশকরা করেন আমার সাথে?
আগুন-এতো সাহস আমার আছে বুঝি?
মোম- আপনার কত সাহস তা জানা আছে।
আগুন -ধন্যবাদ।
মোম-ফুচকা খাওয়ার জন্য আমাকে জ্বালাতে এসেছেন? আমাকেই পেলেন হেল্পের জন্য?
আমি ফুচকাওয়ালা?
আগুন-ওর পা থেকে মাথা পর্যন্ত তাকিয়ে বললাম… না তো। তুমি ফুচকাওয়ালী হতে পারো কিন্তু ফুচকাওয়ালা হতে পারবেনা। কাইন্ড ইউর ইনফরমেশন ফুচকা ওয়ালা মেইল আর তুমি ফিমেল।
মোম- গেট আউট ফর্ম হিয়ার নাউ।
আগুন-ফুচকা না খাওয়া পর্যন্ত আমাকে শয়ং আজরাইল এলে তোমার কাছ থেকে নিতে পারবেনা। আরে বাবা সকাল থেকে খাইনি কিছু। ক্ষুধার্ত লোক কে খাওয়াবেনা কিছু? তোমার তো দয়ার শরীর। কাউকে ক্ষুধার্ত রাখলে তোমার চরম পাপ হবে।
হাশরে আমি বলব… হ্যাঁ এই মেয়েই আমাকে না খাইয়ে রেখেছিলো। আল্লাহ এর বিচার চাই আমি। ওকে এখুনি সুলে চরাও। আমার সামনে।
মোম-স্টপ দিজ ননসেন্স। ড্রাইভার চাচা ভার্সিটির চত্বরে চলুন।
মোম – ফুচকা খেতে হলে একটা শর্ত আছে। একদম কর্ণারে বসবেন। আমার সাথে টাচ যেনো না হয়।
আগুনে কিছুক্ষণ ভেবে বলল…দেখা যাবে।
আগুন- মোম পাশে বসে আছে ঈদের মতো খুচি লাগছে তাই একটা গান ধরলাম….I am a disco dancer….. Te te te….
মোম -একদম চুপ। ধূরে সরে বসুন।
আগুন-লিপে তালা দিলাম।
ড্রাইভার গাড়ি ঘুরাচ্ছে।
গাড়ি থেকে নামতেই কিছু ছেলে ফুচকা খাচ্ছিল আর মোমকে দেখে বলল…এই পথে যখনই আমি যাই। মাঝে মাঝে একটা মেয়ে দেখতে পাই। আলতা রাঙা পায় আবার নূপুর পড়েছে। একটা বোরখা পরা মেয়ে পাগল করেছে।
মোম কিছু বলতে যাবে তখনই আগুন ওদের সামনে গিয়ে শার্টের হাতা ফোল্ড করলো। ঘড়ি আর সানগ্লাসটা মোমের হাতে দিলো।
.
.
-হ্যালো হ্যান্ডসাম ব্রাদার কিছু বলবেন?? গানটা পরিবেশের সাথে যাচ্ছে তাইনা।
আগুন ধপাস করে কয়েকটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো গালে।
মোম সহ ছেলেগুলো ও আশেপাশের সবাই হতভম্ব। আজ পর্যন্ত কেউ এই ছেলেগুলোকে একটা ওয়ার্ড পর্যন্ত বলেনি।
আগুন-তোমাদের সাথেও এই থাপ্পড় গুলো যাচ্ছে।
ছেলেগুলো আবার গান গাইতে শুরু করলো যেনো কিছুই হয়নি.. ..আমার একটাই বোন আছে প্রথিবীতে….যারে মায়া ডরে বেঁধেছি আখিপাতে। মোমের চোখ কপালে উঠলো। আগুনের একটা থাপ্পড় মোমের গালে পড়লে মোমের দাঁত সব বেরিয়ে আসবে।
গাছের সারির নিচে সারি সারি ফুচকাওয়ালার দোকান।
আগুন ফুচকা খাচ্ছে।
মোম একটা খেয়ে রেখে দিলো। ভীষণ ঝাল। আর আগুন খুব এনজয় করে খেয়ে যাচ্ছে। ছেলেরাও ঝাল খেতে পারে জানা ছিলো না। বাংলার মেয়েদের ঝাল সহ্য করতে হয় আর ছেলেদের জন্য তা নিষিদ্ধ।
আগুন -আহ!!! কি টেস্ট। কি মজা লাগছে।
তুমি বেহেশতে যাবে ডাইরেক্ট অ্যাকশনে। যাও তোমার বিষয়েে আল্লাহর সাথে মিটিং করব যখন আমি বেহেশতে যাব।
.
.
.
মোম -আমি খেতে পাচ্ছিনা। সামনে যদি কেউ দশ প্লেট সাভার করে ফেলে তাহলে কি খাওয়া যায়।
আচ্ছা উনি আমার সাথে লেগে থাকেন কেনো?? আমাকে বাচাঁলো কেনো ঐদিন। আমার জন্য নতুন বোরখা আনালেন কেনো?
আজ আবার আমার অপমানের প্রতিবাদ করলো কেনো? ছেলেগুলো কারও কারও দাঁত ভেঙে পড়েছে মাটিতে।
এসব কিছুর মানে কি? আমাকে কোনো ভাবে ইমপ্রেস করতে চাচ্ছেনা তো।
আগুন একমনে খাচ্ছে। যেনো গুরুত্বপূর্ণ মিটিং চলছে। মোম পাশে থাকলে আগুনের আর কিছুই খেয়াল থাকেনা মোম কে নিয়েই অনুভবে ডুবে থাকে।
মোম ধীরে ধীরে গাশ কাটিয়ে চলে এলো গাড়ির কাছে।
আগুনের সাথে কোন টাকা বা ক্রেডিট কার্ড নেই। ড্রাইভার আসেনি তার সাথে। ফোনটাও ড্রাইভারের কাছে। এবার মজা বুঝবে।
মোম হাসি মুখে গাড়িতে উঠলো।
ছেলেগুলো বললল…ভাইয়া পর্দাওয়ালী বোন তো চলে গেলো।
আগুন ফুচকা খাওয়া বাদ দিয়ে গাড়ির পেছনে ছুটতে ছুটতে বলল…আমার কাছে আমি ছাড়া কিছু নেই। ফুচকার বিল কে দেবে? আমি যাব কিভাবে?
.
.
.
চলবে……….