কলঙ্কিত চাঁদ #পর্বসংখ্যা ৩ #ফাতেমা আক্তার মাইশা

0
34

#কলঙ্কিত চাঁদ
#পর্বসংখ্যা ৩
#ফাতেমা আক্তার মাইশা

প্রথম দেখায় কারো প্রতি মুগ্ধতা তৈরি হয়। মানুষটাকে না দেখলে চন্দ্র জানতই না। হুট করে মানুষটাকে দেখে তার প্রতি আলাদা মুগ্ধতা কাজ করতে লাগল। তাকে রোজ এক নজর দেখার জন্য মন আঁকুপাঁকু করত। চন্দ্র নানান বাহানায় এক নজর হলেও দেখে নিত। হয় কাছ থেকে নয়তো দূর থেকে, তবুও দেখত।
সময় গড়াতে চন্দ্র বুঝল মানুষটাকে ঘিরে শুধু তার মুগ্ধতা কাজ করে না। বরং সে তার প্রেমে পড়েছে, গভীর প্রেম যাকে বলে। তার কিশোরী মন প্রথম কোনো পুরুষ দেখে তার প্রেমে মজেছে, মনের মাঝে সেই পুরুষকে নিয়ে কালবৈশাখী তাণ্ডব বয়ে চলেছে। অদৃশ্য বাতাস এসে যেন তার কানে ফিসফিস করে বলে যেত, চন্দ্র তুই প্রেমে পড়েছিস রে!

প্রেমে তো পড়ল। তবে মানুষটাকে জানাতে হবে তো কেউ তার প্রেমে পড়েছে। কীভাবে জানাবে মানুষটাকে যে তার অগোচরে কেউ তার প্রেমের জোয়ারে ডুবে অতলে তলিয়ে যাচ্ছে। তবে চন্দ্রের অতলে ডুবে মরার আগেই মানুষটা তাকে বাঁচিয়ে নিল। তাকে তার গভীর প্রেমে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নেয়। হয়তো মানুষটা তার চাহনি দেখে বুঝে ছিল। তাই তো দেরি করেনি। গ্রহণ করল চন্দ্রকে, চন্দ্রের মায়াময় চাহনি, চন্দ্রের প্রেমকে, গোটা চন্দ্রটাকে। সময় গড়াতে দুজনের প্রেম গভীর থেকে গভীর হয়। যেন দুজনের মাঝে দুজনে মিলেমিশে একাকার।

কলেজ যাওয়ার পথে একটু আধটু চোখাচোখি, লুকিয়ে চুকিয়ে হাতে হাত ছুঁয়ে দেওয়া। ঐ চোখের শীতল দৃষ্টিতে চন্দ্রের মন জুড়িয়ে যেত। কী চক্ষু শীতল করা চাহনি! যেন ঐ শীতল চাহনি চন্দ্রকে খুন করার জন্য যথেষ্ট। চন্দ্রের মনে যে সেই চাহনিতে ঝড় বয়ে যায় তা কী সে জানে? জানে না তো। জানলে কী এমন চাহনি দিয়ে চন্দ্রের ভিতর বাহির কাঁপিয়ে তুলে, চন্দ্রকে মরণ যন্ত্রণা দেয়!

_

চন্দ্রের কাছে মনে হলো এ পৃথিবী সুন্দর, ভীষণ সুন্দর! তার থেকেও বেশি সুন্দর তার মানুষটা। এত সুন্দর হতে কে বলেছে তাকে। চন্দ্র যেমন তার প্রেমে পড়েছে এমন অনেক মানুষ আছে এ লোকের প্রেমে পড়ার মতো। তখন চন্দ্র কী করবে? যদি কেউ তাকে নিয়ে যায়? এ লোককে কোথায় লুকিয়ে রাখবে চন্দ্র? নিজের মন পিঞ্জিরায় লুকিয়ে রাখবে। তবেই তো সে ছাড়া আর কেউ তাকে দেখতে পারবে না, শুধু চন্দ্র দেখবে। দু চোখ দিয়ে মানুষটাকে দেখার তৃষ্ণা মেটাবে।
তবে তার চোখে চোখ রাখলে চন্দ্রের মনে হয় মানুষটাকে কোথাও লুকিয়ে রাখার দরকার নেই তার। ঐ চোখ দুটো বুঝি তাকে জানিয়ে দেয় এ মানুষটা তার, শুধু তার। তার ছাড়া অন্য কারো হবে না সে। ঐ চোখ যেন তাকে বলে দিত আমি তোমার। শুধু আমার চন্দ্রের। চন্দ্রের তখন অতি সুখে কান্না আসত। ইশ্! এত সুখ বুঝি তার কপালে ছিল। এত সুখ সুখ লাগত, চন্দ্রের!

চন্দ্র এতটাই প্রেমে মরিয়া হয়ে গেল যে হাতে গোনা কয়েক দিনের প্রেমিক পুরুষের কথায় নিজের সবটুকু উজাড় করে দিতে দু বার ভাবল না। ভাবেনি? ভেবেছিল তো, খুব করে ভেবেছিল। এ যে পাপ! জেনেশুনে এমন পাপ কাজে চন্দ্র কীভাবে সায় দিবে। আর বাবা, বাবা যে কত কষ্ট করছে তার জন্য। কত স্বপ্ন তাকে নিয়ে। এসব কী করে চন্দ্র নিজের হাতে শেষ করে দিবে? পারবে না সে। কিছুতেই বাবার কষ্টের কারণ হবে না। তবে প্রেমিক পুরুষকেও যে ফিরিয়ে দেওয়ার সাধ্যি নেই। মানুষটা যে তার সব। প্রিয় পুরুষকে কী করে চন্দ্র দুঃখ দিবে?

কী করবে না করবে ভেবে পায় না চন্দ্র। সবকিছু তার কাছে বিষাক্ত ঠেকছে। ইশ্, প্রেমে বুঝি এমন দুঃখও আছে! চন্দ্র যে আগে জানত না। তার কাছে যে সুখ সুখ লাগত। তবে এখন বিষাক্ত ঠেকছে কেন?
প্রেম যে বিষ, জানলে বুঝি জেনেশুনে বিষ পান করে!
অনুভূতিরা চন্দ্রের গলা চেপে ধরছে। সমাজ, পরিবার, ভয়, তার ভালোবাসা সবকিছুই তার গলায় কাঁটা হয়ে বিঁধছে।
চন্দ্র হাঁসফাঁস করতে লাগল। কী করবে সে, কাকে ছেড়ে কাকে আঁকড়ে ধরবে।

অবশেষে। অবশেষে সব ভয়, পিছুটান ফেলে চন্দ্র তার ভালোবাসাকে বেছে নিল, দিল না তাকে হারাতে। সে হারালে যে চন্দ্রের বেঁচে থাকা দায় হয়ে যাবে। কী করে বাঁচবে?

মানুষটা তো তাকে বলেছে সে তাকে ভালোবাসে, খুব করে ভালোবাসে। সে আছে, ভয় নেই। চন্দ্রকে সে ছাড়বে না।আজীবন চন্দ্রের হয়ে থাকবে। তাকে আরেকটু কাছ থেকে ভালোবাসতে চায়। শুধু একটুখানি, একটুখানি গভীরভাবে ছুঁইয়ে দিবে। তাতে চন্দ্র মূর্ছা যাবে না। সে তো ফুল। ফুলকে আদুরে ছোঁয়া ছুঁইয়ে দিবে তার প্রেমিক পুরুষ। চন্দ্র ফেরাতে পারে না। ঐ কাতর চাহনি কী করে ফিরিয়ে দিত? মানুষটার ভালোবাসা উপেক্ষা করার সাধ্যি নেই কেন চন্দ্রের?
চন্দ্র জানে না। জানতেও চায় না। শুধু জানে মানুষটাকে সে অতৃপ্ত রাখতে পারবে না।

চন্দ্র যেন অন্য জগৎ এ চলে গেল। তার দিন দুনিয়ার কোনো খেয়াল নেই। তার দুনিয়া জুড়ে শুধু একটা মানুষের অস্তিত্ব।
তার প্রেমিক পুরুষের। চন্দ্র এতটাই ঘোরে চলে গেল যে তার ভালোবাসার মানুষটার ডাকে সাড়া না দিয়ে থাকতে পারল না। বিলিয়ে দিল নিজেকে।
মানুষটা যে তার, শুধু তার। এই মানুষটার জন্য চন্দ্র সব করতে পারবে, সব। চন্দ্রকে পেয়ে মানুষটার চোখে তৃপ্তি দেখেছে। চন্দ্র তার তৃপ্তিতে নিজেও তৃপ্ত! সে পেরেছে ঐ মানুষটার তৃপ্তির কারণ হতে। আর কী চায় তার? কিছুই চায় না। তার যে মানুষটাকে পেলেই হবে।

ইশ্! চন্দ্র যদি বুঝত মানুষটার চাওয়া ঠিক কোথায় আটকে, সেটা তো চন্দ্রতে নয়। বরং…!

_

চন্দ্র বুঝল মানুষটার চাওয়া কোথায় আটকে। ততক্ষণে যে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। সব শেষ হওয়ার পর বুঝলে কী হবে। পারবে কী কিচ্ছুটি ঠিক করতে। পারবে না।
তবে চন্দ্রের বুঝা চন্দ্রতে আটকে। সে মানুষটার থেকে দূরে থাকতে পারল না। দূরে থাকার যে কোনো সুযোগ তাকে দেয় না। পারলে তো নিজের সাথে বেঁধে রাখে।

মানুষটা যখন বলল তাকে বিয়ে করবে। চন্দ্রের তখন আনন্দে পাগল হওয়ার জো। পারলে তো পুরো দুনিয়ায় চিল্লিয়ে জানান দেয়, শোনো পৃথিবী! তোমার থেকেও সুন্দর মানুষটা আমায় ভালোবাসে। সে আমায় তার করে নিবে।
শুনেছ সে কী বলেছে? সে বলেছে, সে আমাকে বিয়ে করবে। তার ঘরের ঘরনী করে তুলবে, অর্ধাঙ্গী করবে তার চন্দ্রকে। প্রেমিক পুরুষ থেকে বৈধ পুরুষ হবে। চন্দ্রের ব্যক্তিগত পুরুষ হবে সে। তোমরা মিছিমিছি আমায় ভয় দেখিয়েছিলে। বলেছিলে মানুষটা আমায় আপন করে নিবে না। এখন দেখলে তো?

তবে বিপত্তি বাঁধে অন্য জায়গায়। চন্দ্র একজনকে ভালোবাসে সে কথা বাবা মাকে কী করে জানাবে। আর তাছাড়া তারা যদি তাকে ভুল বুঝে, মেনে না নেয় এ সম্পর্ক।তখন চন্দ্র কী করবে?
কী করে থাকবে এ মানুষটাকে ছাড়া, সে যে পারবে না। পারবে না দেখেই তো নিজের অঙ্গে কলঙ্কের দাগ লাগাল!

– মাইশা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here