কলঙ্কিত চাঁদ #পর্বসংখ্যা ৬ #ফাতেমা আক্তার মাইশা

0
163

#কলঙ্কিত চাঁদ
#পর্বসংখ্যা ৬
#ফাতেমা আক্তার মাইশা

তোমার সাথে আর সম্পর্ক রাখা সম্ভব না চন্দ্র। আমার পরিবারের কেউ তোমাকে মানবে না। যেখানে এসে তুমি শান্তি পাবে না সেখানে আসার কী দরকার। আমার সাথে আর যোগাযোগ করার চেষ্টা করো না, ভালো থেকো।

চন্দ্র এক দৃষ্টিতে মোবাইলের স্ক্রিনে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ করে এমন মেসেজ পাঠানোর কারণটা ঠিক বুঝে উঠতে পারল না। বেশ খানিকক্ষণ পর বুঝল। বারবার পড়ল মেসেজটা। কিছু শব্দ একজোট করে তিন, চার লাইনের লেখা সামান্য একটা বার্তা। সামান্য বার্তাটুকু চন্দ্র ঠিকভাবে হজম করতে পারছে না। হঠাৎ কেন, কী কারণে? সব তো ঠিক ছিল। তাকে না দেখতে আসার কথা ছিল। তবে?

চন্দ্র যোগাযোগ করার সুযোগ পর্যন্ত পেল না। পায়নি বললে ভুল হবে। সুযোগ দেওয়া হলো না তাকে। মেসেঞ্জার, নাম্বার সব জায়গা থেকে ব্লক করে দেওয়া হয়েছে। তাদের কথা বলার মাধ্যম ছিল মেসেঞ্জার আর ঐ ফোন কল। দিনের বেশিরভাগ সময় তাদের মেসেজে কথা হলেও ফোনে খুব একটা কথা হতো না। তবে মাঝেমধ্যে রাতের দিকটায় তারা ফোনে কথা বলেই কাটিয়ে দেয়। খুব বেশি হলে রাত দেড়টা, দুটো। তবে এর বেশি কথা হতো না তাদের। কারণ মানুষটার সকালে দোকান খোলার তাড়া থাকে। রাত জেগে কথা বললে সকালে তার দেরি হয়ে যেত। বাজারে বড়ো বড়ো দুটো কনফেকশনারি আছে তাদের। একটার দায়িত্ব তার আর আরেকটা তার ছোটো ভাইয়ের।

চন্দ্র মেসেজের মানে বুঝার চেষ্টা করল। খুব বেশি কঠিন শব্দ তো ব্যবহার করা হয়নি। একদম সহজ কথা লেখা আছে। না বুঝার তো কিছু নেই। তবে চন্দ্র বুঝতে পারছে না কেন? নাকি সে বুঝতে চাইছে না। আবার পড়ল মেসেজটা।

যেখানে এসে তুমি শান্তি পাবে না সেখানে আসার কী দরকার?
এ একটা লাইন যেন চন্দ্রকে ভীষণ পোড়াচ্ছে। চন্দ্রের দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার জোগাড়। মানুষটা কি জানে না সেখানে চন্দ্রের শান্তি কিসে। কেন সেখানে যাওয়ার জন্য চন্দ্র পাগলামি করছে। চন্দ্রের শান্তির জায়গা তো ঐ মানুষটা।
ঐ মানুষটাকে ঘিরেই তো চন্দ্রের যত শান্তি। তাই তো তার কাছে যাওয়ার এত তাড়া। সে কিনা অপকটে বলে দিল যেখানে এসে তুমি শান্তি পাবে না সেখানে আসার কী দরকার।

একটা মানুষ এত তাড়াতাড়ি কী করে এতটা পরিবর্তন হতে পারে? সব ভুলে গেল। চন্দ্র ভুলে যাবে? কী করে ভুলবে চন্দ্র? চন্দ্র যে মরে যাবে। মানুষটা তাকে ছাড়া বাঁচবে তবে?
বাঁচবেই তো। বাঁচার জন্যই তো চন্দ্রকে ছাড়তে চাইছে। তবে ভালোবাসা। সব মিথ্যে ছিল, সবটা।
চন্দ্র পাগলামি শুরু করল। বেহায়ার ন্যায় ভাবতে লাগল কি করে মানুষটাকে নিজের করে পাবে। কী করলে তার সাথে একটু কথা বলতে পারবে। ভীতু চন্দ্র অভাবনীয় এক কাজ করে বসে। ব্লেড দিয়ে হাত কেটে রক্তাক্ত করে দম নিল। ভাবল এবার যদি সে ফিরে আসে। চন্দ্রের ভাবনা সঠিক হলো। মানুষটা ফিরে এলো। তাকে আশ্বস্ত করল সে ছেড়ে যাবে না। তার পরিবারকে বুঝাবে। চন্দ্রকে পাওয়ার জন্য সব করবে। চন্দ্র যেন আর এমন পাগলামি না করে।
বোকা চন্দ্র আবার বিশ্বাস করে বসে। অবিশ্বাসের সু্যোগ যে মানুষটা তাকে দেয় না। মানুষটা তো বলেছে সে চেষ্টা করবে। চন্দ্রের উচিত তাকে বিশ্বাস করে তার সঙ্গ দেওয়া।

বাড়ি ছেড়ে দোকানে থাকছে। ঠিকমতো খায় না। সারাদিন ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে মরার মতো পড়ে থাকে।
কার জন্য করছে এসব? চন্দ্রের জন্যই তো। সব কথায় তো চন্দ্রের কানে আসে। অজানা নয় কোনোকিছু। তবে সে কেন মানুষটাকে অবিশ্বাস করবে।

তার ছোটো ভাই এসে চন্দ্রকে বলল, আপু আপনি ভাইয়ার জীবন থেকে চলে যান। ভাইয়া ভালো নেই। সারাদিন বাইরে থাকে, রাতেও ফিরে না। এমনভাবে চললে আমার ভাই মরে যাবে। এ সম্পর্ক ভুলে যান। এতে দুজনের জন্য ভালো হবে। ভাববেন এটা একটা দুঃস্বপ্ন!

দুঃস্বপ্ন! দুঃস্বপ্ন ভেবে ভুলে যাওয়া যাই, যাই হয়তো। নয়তো এতগুলো মানুষ এ কথা কেন বলতে যাবে। সকলে তো বলতে লাগল চন্দ্র যেন দূরে চলে যায়। তবেই সে ভালো থাকবে। কিন্তু চন্দ্র যে ভালো থাকবে না। তার কী হবে?
চন্দ্র ভাবল তার চেষ্টা করা উচিত। শুধু মানুষটাই কেন একা পরিবারের সকলকে মানানোর চেষ্টা করবে।
চন্দ্র মানুষটার বড়ো ভাইয়ের সাথে কথা বলল। তিনিও চন্দ্রকে আশ্বস্ত করলেন এ নিয়ে তিনি বাবার সাথে কথা বলবেন। বাবাকে বলবে ওরা দুজন দুজনকে ছাড়া বাঁচবে না। আবারও মিথ্যা সান্ত্বনা। এ মিথ্যাতেই যেন চন্দ্র আশা খুঁজে পায়। মানুষটাকে নিজের করে পাওয়ার আশা। তাকে নিয়ে আবার একটু একটু স্বপ্ন বুনে। তবে কোনো সমাধান এলো না। মানুষটা নাকি আবার নিজের বাড়ি ফিরে গিয়েছে। খাচ্ছে দাচ্ছে, ঘুমাচ্ছে, সব ঠিক। দুদিন, ঠিক দুদিন বাড়ির বাইরে কাটিয়েছিল। এটাই তার চেষ্টা। দুদিনেই তার চেষ্টা শেষ।

_

মেয়ের মা নাকি শয্যাশীল হয়ে বিছানায় পড়ে আছে। তার শেষ ইচ্ছে মেয়ের বিয়ে দেখে যাওয়া। মেয়ের একটা গতি না করতে পারলে নাকি মরেও শান্তি পাবে না। অসুস্থ ব্যক্তিকে কথা দিয়ে রেখেছেন। তার মেয়ের সাথে নিজের ছেলের বিয়ে দিবেন। এখন যদি ছেলে অমত করে তবে বাবার মুখ দেখানোর জো থাকবে? তাই বাবার সম্মান বাঁচাতে চন্দ্রের হাত ছেড়ে দিল। বাগদানও নাকি সম্পন্ন হয়ে গিয়েছে। কী সব নাটক, সিনেমার কাহিনী। বাস্তব জীবনে এসবও হয়? চন্দ্রের জানা ছিল না। তবে কী তাকে আর চন্দ্র পাবে না?
অথচ মাস ঘুরতে চন্দ্র জানতে পারল সব মিথ্যা।

যেখানে আত্মসম্মান আঘাত হানে সেই জায়গায় নাকি দ্বিতীয়বার ফেরা উচিত নয়। তবে এত কিছু হওয়ার পরও কেন নির্বোধ চন্দ্র বারবার নিজের আত্মসম্মান খুঁইয়ে ঐ একটা মানুষের পিছনে ছুটে চলেছে। কীসের দায়ে?

অনেকেই জেনে গেল মানুষটার সাথে চন্দ্রের সম্পর্কের গভীরতা। একে অপরের সাথে ঠিক কতটা মিশে গিয়েছিল। এসব জেনেও যখন কোনো লাভ হলো না। চন্দ্র তখন মানুষটার হাতে পায়ে ধরে অনুরোধ করেছিল শেষ চেষ্টাটা যেন তাকে করতে দেয়। এবারও করতে দিল। চন্দ্রকে বাধা দিল না। কোনো কাজেই বাধা দেয় না। এবার কেন দিবে। চন্দ্র উপায় না পেয়ে মানুষটার বাবার কাছে ফোন দেয়। ইতিহাসে এ যেন বিরল ঘটনা। যেখানে পরিবারের বড়োরা কথা বলে, সেখানে কিনা মেয়ে নিজে ভালোবাসা পাওয়ার লোভে লাজলজ্জা জলাঞ্জলি দিয়ে বাবার কাছে ছেলেকে ভিক্ষে চাইছে। তবে তিনি যা বললেন তাতে চন্দ্রের মনে হলো সে যদি ফোন না দিত। তবেই ভালো হতো।

_

চন্দ্র মানুষটার প্রথম ভালোবাসা নয়।
দ্বিতীয়? উম! না তৃতীয়, হ্যাঁ তৃতীয়।

যদি সংখ্যায় হিসেব করা হয় তবে চন্দ্র তার জীবনে তৃতীয় নারী। যাকে সে ভালোবেসে ছিল। তার আগেও মানুষটার জীবনে আরও দুজন মানুষের অস্তিত্ব ছিল। দ্বিতীয় জন থাকা অবস্থায় চন্দ্রের আগমন ঘটে। সেই সুবাদে দ্বিতীয় জনকে ছেড়ে চন্দ্রকে আপন করে নেয়।

চন্দ্র এ কথা জানত। সব জেনেশুনে চন্দ্র ঝাঁপ দিয়েছিল। তবে তার ভুলের মাশুল যে এত ভয়াবহ হবে তা যদি ঘুণাক্ষরেও টের পেত। তবে বোকা চন্দ্র এ ভুল করত না। ভুলেও না। চন্দ্রের বুঝা উচিত ছিল যে ছেলে অন্য একজনকে ছেড়ে চন্দ্রকে আপন করতে পারে। সে সময়ে চন্দ্রকেও ছাড়তে পারবে।

– মাইশা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here