প্রিয়জন❤Part-07

0
3665

Shabnaj Hossain
প্রিয়জন❤Part-07
Writer-Moon Hossain

মোম-রাতে ভয়াবহ একটা সপ্ন দেখলাম। সপ্নটা একদম সত্যি মনে হচ্ছিলো। সপ্নে আমি একটা লোক কে দেখলাম। আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে। আমার মাথার চুল মুছে চিরুনি করছে। আমার সাথে রান্না করছে। আমার সব কাজে হেল্প করছে।
সম্ভবত লোকটা আমার স্বামী ছিলো। আমার স্বামী আমাকে প্রতিদিন গোসলও করিয়ে দেয়।তখন আমার খুব লজ্জা লাগছিল। ভাঙা ভাঙা সপ্নগুলোকে দেখলাম। আমি লোকটার হাত ধরে পুকুরে সাঁতার কাটছি তো কাটছি।
কি আনন্দ লাগছিলো বলার বাহিরে। এতো সুখ কেন পৃথিবীতে?
হঠাৎ দেখি আমার স্বামীকে একটা প্রকান্ড কুমির আক্রমণ করেছে।
এতো বিশাল কুমির কখনো দেখিনি। আমার চারদিকে লাল টক টকে রক্ত আর রক্ত। কুমিরটার হাত থেকে সবাই আমাকে বাঁচালো কিন্তু আমার স্বামীকে কেউ বাঁচাতে পারিনি।
.
.
.
প্রকান্ড চিৎকারে ঘুম ভেঙে গেলো ভয়ে।
আর হেচকি উঠে গেছে ভয়ে। পানি তৃষ্ণায় গলা ফেটে যাচ্ছে। তবুও কিছু করতে পাচ্ছিনা।
অমনি বাবা মা ভাইয়া ভাবি সবাই রুমে দৌড়ে এলো।
বাবা – ভয়ের সপ্ন শয়তান দেখায়। ভয়ের কিছু নেই।
মা- দোয়া দুরুদ পড়ে ঘুমবি তাহলে সপ্ন দেখবিনা।
ভাইয়া আমার পাশে বসে হাত ধরে বলল…ভয় পেলে আয়েশা কে থাকতে বলবি। ও তোর সাথে আজ থাকবে।
আয়েশা -মোম শুয়ে পড়ো। লাইট কি জ্বালিয়ে রাখব।
ভাইয়া -হ্যাঁ লাইট জ্বালানো থাক। ওর ভয় এখনো কাটেনি।
.
.
.
সকালে ক্লাস করতে গিয়ে উনাকে দেখতে পেলাম না।
আজ দুই দিন ধরে উনাকে দেখিনা।
আচ্ছা উনি বিল কিভাবে পরিশোধ করেছেন? বাসায় কিভাবে গিয়েছেন?
ধূর ধূর কি ভাবছি। ভালো লাগছেনা।
উনার মতো চালাক লোক এই সমস্যা সমাধান করতে পারবে সহজেই।
.
.
মোম মনের ভুলে এদিক ওদিক তাকালো।
আগুন -উফ ভার্সিটির এই জারটা কি ডার্টি।
বিদেশে তো ফরেস্টও কত ক্লিন থাকে যেখানে মানুষ জনের যাতায়তও নেই।
নিজের বউকে শেষ পর্যন্ত চুরি করে দেখতে হচ্ছে। কি গুড লাক আমার।
মোমের পেছনে আজকাল অন্য একটা লোক ফলো করছে।
মোম বিষয়টি আন্দাজ করতে পেরেছে।
লোকটা পা পর্যন্ত ব্লেজার পড়েছে কালো।
মাথায় বেশ বড় গোল টুপি ফরেনারদের মতো।
আগুন-গরমে গেলাম মরে।
সামনা সামনি নজরে রাখতে পাচ্ছিনা তাই বেশ ধারণ করলাম। আমার এতোদিনের সাজানো বাগানে অন্যকেউ ঢুকে পরার ভয়াবহ সম্ভবনা থাকতে পারে।
গোয়েন্দা লাগাতে পারলাম না কারণ অমন সুন্দরী বউ আমার। গোয়েন্দারা শেষেে না প্রেমে পড়ে যায়। ওর ফেস দেখার দরকার নেই শুধু চোখ দেখেই প্রেমে পড়ে হাবু ডুবু খাবে মানুষ।
.
.
.
মোম রাতের বেলা জানালা দিয়ে বেশ ধারণ কারী আগুনকে দেখতে পেলো। কিছুটা আন্দাজ করতে পারলো।
আগুন -উড়ো উড়ো গন্ধ পাচ্ছি শশুর মশাই মেয়েকে আবার বিয়ে দিতে পারে। কত বড় সাহস!। তাছাড়া অনেক ছেলেকে মোমদের বাড়ির আশেপাশে ঘুর ঘুর করতে দেখি।
কত বড় সাহস আমার বউয়ের উপর নজর লাগায়।
মোমের রুমের লাইট অফ হয়ে গেলো। আগুন কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে চলে গেলো।
.
.
মোম ভার্সিটি থেকে হেটে যাচ্ছে। আজ সে লোকটা কে হাতে নাতে ধরবে।
মোম দাড়াতেই আগুন অন্যদিকে হাঁটা শুরু করে।
হঠাৎ মোমের সামনে একটা রিকশাওয়ালা এসে বলল… আম্মাজান গরম পড়েছে মেলা। রিকশায় উঠে পড়ুন। আপনাদের বাড়ির নাম্বার তো… ৪৭/২ কেওয়াটখালি।
মোম রিকশায় উঠতে গিয়ে উঠলো না। সন্দেহ হলো বাড়ির নাম্বার শুনে।
-আপনাকে কে পাঠিয়েছে?
-বলতে পারব না সত্যিটা। আমি মিথ্যা কথা বলিনা।
-সত্য গোপন করাও এক ধরনের মিথ্যা।
আচ্ছা যান আপনি।
কিছু দূর যেতেই ছোট একটা ছেলে মোমের হাতে পানির বোতল দিয়েই পালিয়ে গেলো।।
মোম এবার অবাক হলো না। বুঝতে পেরেছে সে এটা কারও কাজ। কেউ নজরদারি করছে তার উপর।
আগুন মোমের পেছনে হাটতে হাটতে হঠাৎ মোমকে হাড়িয়ে ফেললো।
আগুন -আমার বউ কোথায় হাড়িয়ে গেলো?
আগুন একটু সামনে যেতেই কাউকে পেছনে অনুভব করতে লাগলো। পেছনে তাকাতেই মোম একটানে মাথার টুপিটা খুলে ফেলল।
মোম বলল…আসসালামু আলাইকুম।

আগুন বলল-ওয়ালাইকুম আসসালাম। বলেই সাথে সাথে এক দৌড়।
মোম -হাসবো নাকি কাদঁবো বুঝতে পাচ্ছিনা। এই লোকের মতলব কি।
আমার পেছনে কেনো ঘোরে।
দুনিয়ায় কত মানুষ যে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন কে জানে।
মেয়েদের পেছনে ঘোরাঘুরি কি আগুন ভাইয়ার কাজ?? হতে পারে।
.
.
.
আরমান আরশাফের সাথে মোমের বিয়ে নিয়ে আলাপ আলোচনা করছে। হঠাৎ মোম এসে উপস্থিত।
মোম – আসসালামু আলাইকুম বাবা। ভাইয়া আসসালামু আলাইকুম।
সালামের জবাব দিয়ে একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করলো।
মোম-বাবা তোমরা কি কোন বিশেষ আলোচনা করছো?
আমাকে দেখে বন্ধ করে দিলে কেনো?
আরমান – হ্যাঁ মা। সময় হলে তোমাকেও জানাবো।
আরশাফ -মোম চল ছাদে যাই। অনেক দিন তোর সাথে গল্প করিনা। তোর ভাবি কে বল গরম গরম জিলিপী ভাজতে।
.
.
.
মোম সকালে না খেয়েই বের হয়েছে। এক্সাম দিয়ে মোমের শরীর দূর্বল হয়ে গেছে।
মোমের মাথা ঘুরছে।
হঠাৎ মোম রাস্তার মাঝখানে পড়ে গেলো। পায়ে চোট পেলো বেশ।
কেউ ওকে ধরে ফেললো।
আগুন -গাড়ি থেকে নামতেই দেখি মোম পড়ে গেছে রাস্তায়।
মোমকে ধরে সোজা ময়মনসিংহ মেডিকেল নিয়ে গেলাম।
মোম -চোখ খুলতে পাচ্ছিনা। মাথা ব্যথায় কথাও বলতে পাচ্ছিনা।
হাতে চোট লেগেছে।
উনি উনার রুমাল দিয়ে আমার হাতে বেঁধেছে।
মোম কিছুতেই ওয়ার্ড বয়ের কাছে ড্রেসিং করাবেনা। ইনজেকশনও দেবেনা জেদ ধরে বসে আছে।
আগুন- ওর ইতস্তততা বুঝতে পারছিনা তাই জিগ্যেস করলাম কি সমস্যা?
মোম -কি সমস্যা বুঝতে পাচ্ছেন না? বেগানা কোন ছেলে আমার গায়ে কেনো হাত দেবে।
-সেফটিক হয়ে যেতে পারে। ব্যাথা বাড়বে ড্রেসিং করাও।
ওয়ার্ড বয় তোমার দিকে তাকাবেন না। আমি গ্যারান্টি।
-আপনি তো কথায় বলবেন না। আমি আপনাদের ছেলেদের চিনি।
মোম মেডিক্যালের বাহিরে চলে এসেছে।
আগুন মোমের হাত ধরে টেনে একটা চেয়ারে বসালো।
আগুন-ওর এই অবস্থা যে যেকোনো কিছু হতে পারে।
এই অবস্থায় ড্রেসিং না করেই রাগে চলে যাচ্ছে । কত বড় সাহস। নিজের স্বামিকেও পর্যন্ত বলে বেগানা পুরুষ। আচ্ছা যখন জানবে আমি ওর স্বামী তখন কি আমাকে ওর চাঁদের মুখ খানা মন ভরে দেখতে দেবে?
ওকে স্পর্শ করতে দেবে?
.
.
.
আগুন নিজেই ড্রেসিং করে দিলো মোমের চোখ বন্ধ করে।মোম সর্বোচ্চ বাধা দিলো বাট আগুন বলল ড্রেসিং ছাড়া এখান থেকে যেতে দেব না।
আগুন নিজেই ইনজেকশন পুশ করলো মোমের হাতে।
ড্রেসিং করা জানতো আগুন বাট ইনজেকশন পুশ জানতো না। তাই আগুন নিজের হাতে নিজেই কয়েকবার ইনজেকশন পুশ করে প্রেকটিস করলো।
আগুনকের হাত দিয়ে সুচের আঘাতে রক্ত বের হতে লাগলো।
আশেপাশে সবাই তো অবাক।
মোম বেশি অবাক হয়েছে।
মোমের চোখ থেকে পানি পড়া শুরু করলো।
আগুন- তোমার ব্যাথা লাগছে তাই কাদঁছো?
এবার মোম আরও জোরে কাঁদতে লাগলো। বাসার পরে আগুন প্রথম কেউ যে ওর প্রতি কেয়ারিং।
আগুন জুস নিয়ে মোমকে খাইয়ে দিলো অন্যপাশে তাকিয়ে। আরকিছু ফলমূলও এনেছে।
মোম ইচ্ছে না থাকা সত্বেও খেলো।
আগুন এখন রেস্টুরেন্টের স্যুপের ব্যবস্থা করে গরম স্যুপে ফু দিচ্ছে।
মোম -কি হচ্ছে কিছু বুঝতে পাচ্ছিনা।
এই লোককে আমার চেনার এখনো বাকি আছে।
আগুন মোমের মুখে স্যুপের বাটি অন্যপাশে তাকিয়ে থাকলো । মোম নেকাব খুলে স্যুপ খেলো।
আগুন মোমকে আদেশ স্বরে বলল… ঠিক মতো খাবে। কোন অনিয়ম নয়। ঔষধ গুলিও ঠিক মতো খাবে।
আমি তোমাকে দূর থেকেই নজরে রাখব। অনিয়ম করলে তোমার কি হাল করব সেটা জানো তো? আগুন তার দুই আঙুল নিয়ে মোমের চোখে আর নিজে চোখে ইশারা করে বলল…Watching you পর্দাওয়ালী।
আগুন মোমের কিছু ফরমালিটি পেপারে ডক্টরের সাথে কথা বলতে যেতেই মোম সোজা বের হয়ে গেলো মেডিক্যাল থেকে।
মোম -উনাকে না বলেই চলে এলাম। এখন উনি এর জন্য কি রাগটাই না করছেন।
মেডিক্যাল থেকে বাসা বেশি দূরে নয় তাই মোম হেঁটেই চলে যাচ্ছে।
আজ মোমের মন দ্বীধাগ্রস্ত।
মোম বাসায় আসতেই কিছু মেহমান দেখতে পেলো।
আয়েশা মোমকে উপরে নিয়ে গেলো।
আয়েশা যেটা বলল সেটা শোনার জন্য মোম প্রস্তুত ছিলো না।
মেয়েদের বিয়ে নিয়ে কত সপ্ন।
একটা রাজপুত্র আসবে সাদা ঘোড়ায় চড়ে।

আরমান তার বিজনেস পাটনারের ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক করেছে মোমের। ছেলে সৌদিআরবে বিজনেস ম্যান।
কাল দুপুরে ঘরোয়া ভাবে আক্দ হবে হবে।
মোমকে ছেলের বাড়ির মহিলারা দেখে খুব প্রশংসা করলো।
মোম খুশি হতে পাচ্ছেনা। মনে হচ্ছে কিছু একটা ঠিক হচ্ছেনা।
কারও জন্য মোমের মন হাহাকার করছে।
.
.
দুপুর পর্যন্ত মোম ঘুমিয়ে ছিলো। আজ তার চোখে প্রচন্ড ঘুম।
দুপুরে মোমের মা গরম গরম লুচি মোমকে জোর করে খাইয়ে দিলো।
তারপর সুন্দর একটা শাড়ি পড়িয়ে দিলো মোমকে। শাড়ি পরে মোম আগুনের কথা ভাবতে লাগলো।
আগুনের মতো উগ্র ছেলেকে নিয়ে মোম ভাবছে বলে নিজের প্রতিই রাগ উঠলো।
মোম -না জানি বিদেশি মেয়েদের সাথে কি না কি করে বেড়িয়েছেন। নামাজ কালাম পড়েনা এমন ছেলের কথা ভাবাটা ভালো না অন্তত আজকের এই দিনে তো নয়।ব্যাহায়া ছেলে কোথাকার।
.
.
.
মোমকে নিচে মহিলা মহলে নিয়ে আসতেই কারও জুতোর আওয়াজ হলো।
ঐ তো আগুনকে দেখা যাচ্ছে।
মহিলারা সবাই আঁতকে উঠলো।
আরমান আগুনের সামনে দাড়িয়ে পড়লো।
আরমান -আর এক পা এগুলো ভালো হবেনা। চলে যাও এখনি।
আগুনের চোখ দিয়ে আগুন বের হচ্ছে।
আগুন রেগে বলল- থাকতে আসিনি।
আমার আমানাত আমাকে দিয়ে দিন। চলে যাব।
আরমান-আমার কাছে তোমার কোন আমানত নেই।
আগুন-রাগ দেখাচ্ছেন কেনো?? আমার আমানত অন্যত্র দিয়ে দিচ্ছেন এতে তো আমার রাগ দেখানোর কথা।
আরমান- তোমার মতো অধার্মিক ছেলেকে আমি দেখতে চাইনা আমার বাড়িতে।
তুমি মুসলিম হয়ে অন্য মুসলিম বাড়ির সম্মাম নষ্ট করে পাপ বাড়াতে যেওনা।
– স্বামী থাকতে স্ত্রীকে আবার বিয়ে দিচ্ছেন এটা পাপ হচ্ছেনা?
মোমের মাথা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।
বরের বাড়ির লোকেরা বলছে.. কি হচ্ছে এসব? কে কার স্ত্রী? এই বাড়িতে কার স্ত্রী আছে?
আগুন-আমার বউ আছে এই বাড়িতে। আল্লাহর কালাম পড়ে ছোট বেলায় যার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে।
মোম পর্দার আড়াল থেকে সব শুনে চমকে গেলো। তার মাথা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।
আরমানের হার্ট অ্যাটাকের উপক্রম।
আগুন -আমার স্ত্রী আমাকে না দিলে একটা রক্তারক্তি কান্ড ঘটে যাবে। আগুন একটা লাইসেন্স সহ রিভলবার বের করলো।
সবাই ভয় পেলো প্রচন্ড…
ছেলের বাবা বলল… কে তোমার স্ত্রী??
আগুন সোজা পর্দার পাশে গিয়ে মোমের হাত ধরে মোমের দিকে তাকিয়ে বলল… আরমান সাহেবের মেয়ে আনুশকা ইয়াসমিন মোম আমার ধর্ম মতে স্ত্রী।
মোম আগুনের ভয়ংকর চোখে দিকে তাকিয়ে জ্ঞান হারালো।
.
.
.
মোমের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আয়েশা বলল…ছোট বেলার ঘটনা।
আরশাফ বলল…তুই আমার অতি আদরের বোন। আমি তোর কোন ক্ষতি হতে দেবো না। তুই না চাইলে এই বিয়ে বিয়ের মর্যাদা পাবেনা।
মোম অবাক করে দিয়ে বলল…. আমার স্বামী যদি আমার কাছে এসে বলে মোম তোমাকে নিতে এসেছি। আমার সাথে চলো। আমি কিন্তু চলে যাব উনার সাথে বলে দিলাম।
মোম কাদঁতে শুরু করলো।
.
.
.
চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here