কলঙ্কিত চাঁদ #অন্তিম পর্ব #ফাতেমা আক্তার মাইশা

0
35

#কলঙ্কিত চাঁদ
#অন্তিম পর্ব
#ফাতেমা আক্তার মাইশা

চন্দ্র ভাবতে লাগল কী করলে এমন দমবন্ধকর পরিস্থিতি থেকে তার মুক্তি মিলবে। মুক্তির পথ যে বন্ধ। তাকে কী সারা জীবন এভাবে কাটাতে হবে?
এ বয়সেই এই অবস্থা। বাকি জীবন কি করে বেঁচে থাকবে। গায়ে কলঙ্ক লেপ্টে কী আদৌও বাঁচা যায়? তারা কী করে পারছে? চন্দ্র যে পারবে না। আচ্ছা তাদের কী দম বন্ধ হয়ে আসে না চন্দ্রের ন্যায়? চন্দ্রের দ্বারা যে সব ভুলে সংসার করা সম্ভব নয়। একটু সুখের সাগরে ভাসতে গেলে চন্দ্রের মনে হবে সে নোংরা। নোংরা শরীর নিয়ে বাঁচা দায়। দেড়টা বছর তো কাটিয়ে দিয়েছে। তখন এতটাও যন্ত্রণা হয়নি, দম বন্ধ হয়ে আসেনি। অতীত মাথা চাড়া দিয়ে ওঠেনি। ঘুমের মধ্যে তাকে তাড়া করে বেড়ায়নি।

চন্দ্র যে ভুলে গিয়েছিল সব। খুব করে ভুলে গিয়েছিল। তবে ইদানিং চন্দ্রকে তাড়া করে বেড়ায়। মাথায় কিলবিলিয়ে উঠে, তার শরীরে লেগে আছে কোনো নোংরা পুরুষের নোংরা স্পর্শ! যে পুরুষ শুধু ভোগের জন্য তাকে ছুঁয়েছে। নিজের শারীরিক তৃপ্তির জন্য কলঙ্কিত করেছে তার শরীর।

চন্দ্র চাইলেও এসব ভুলতে পারছে না। দেড়টা বছর কী মুখের কথা। এতদিন ভুলে থাকতে পারলে এখন কেন পারছে না। এ অতীত কী তাকে শান্তি দিবে না, জ্বালিয়ে পুড়িয়ে রাখ করে দিবে। যতদিন যাচ্ছে চন্দ্রের মনে হচ্ছে সে মানসিকভাবে বির্পযস্ত। তার মানসিক অবস্থা ঠিক নেই। সে সুস্থ মস্তিষ্কের অসুস্থ এক রোগী!

এসব থেকে কি করে বের হবে তা জানা নেই চন্দ্রের। তবে সে জানতে চায়। সে যে সুখের কাঙাল। তবে দুঃখ কেন তার পিছু ছাড়ছে না। এমন আষ্টেপৃষ্টে কেন তাকে জড়িয়ে রেখেছে। চন্দ্রের যে এ দুঃখ আর ভালো লাগে না। তার একটু সুখ চায়, একটুখানি। আচ্ছা সে কীভাবে সুখ পাবে?
সে কী বাবা মাকে সব বলে দিবে। ও যে আর ভালো থাকার অভিনয় করতে পারছে না। বড্ড ক্লান্ত! এসব থেকে তার মুক্তি চায়। চন্দ্র অনেক ভাবল। কোনোকালেই বাবা মাকে এমন কথা বলতে পারবে না, মরে গেলেও না। মানুষ দুটো যে এমনি চিন্তায় চিন্তায় শেষ। এমন কথা জানতে পারলে শেষ রক্ষা হবে না। মরে যাবে তারা। তাহলে চন্দ্রের কী করা উচিত। বাবা মায়ের কথা ভেবে বিয়ে করে নেওয়া উচিত। সব জেনে চন্দ্র কি করে নিজের জীবনে কাউকে জড়াবে। এমনটা সে করতে পারবে না। সে নিজের নিঃসঙ্গতা নিয়ে গোটা জীবন পার করে দিবে। তবুও তার সাথে কাউকে জড়াবে না। তার জন্য যা করতে হয় সব করবে।

মুহূর্তে চন্দ্রের মাথা আউলিয়ে গেল। অন্ধকার হাতড়ে ড্রয়ার থেকে এক পাতা ঔষধ বের করে। বেশ কয়টা পাতা খালি পড়ে আছে। সেগুলো ছুঁয়েও দেখল না। পরপর পাঁচটা ট্যাবলেট গিলে পানি দিয়ে কাঠ হয়ে থাকা গলাটা ভিজিয়ে নিল। এবার একটু শান্তি লাগছে। না, শান্তি লাগছে না! কী করে শান্তি লাগবে! চন্দ্রের অশান্তির একমাত্র কারণ কাল তাকে দেখতে আসবে। দেখতে আসবে বললে ভুল হবে। ছেলের বাড়ির লোকেরা ছবি দেখে চন্দ্রকে পছন্দ করেছে। কাল এলে একেবারে আকদ সেরে ফেলবে। চন্দ্রের বাড়ির প্রতিটা সদস্য আজ ব্যস্ত সময় পার করছে। আশেপাশের কয়েকজন হাতে হাতে কাজ করে দিয়েছে। আত্মীয় স্বজন যা আছে সব কাল আসবে।

মেয়ের আকদ হবে অথচ চন্দ্রের বাবা সেখানে উপস্থিত থাকতে পারবে না। একজন বাবার জন্য এর থেকে বেশি যন্ত্রণার আর কী হতে পারে।

চন্দ্র কতক্ষণ মায়ের পিছনে ঘুরঘুর করেছে। বারবার কিছু একটা বলতে গিয়েও মায়ের হাস্যোজ্জ্বল চেহারা দেখে তা আবার গিলে ফেলেছে। কতদিন মাকে এভাবে হাসতে দেখে না। এ হাসি সে কি করে কেড়ে নিবে।

চন্দ্র আলমারির কপাট খুলে কিছু একটা খোঁজার প্রয়াস চালাল, না পাচ্ছে না। বিরক্তিতে মাথা চেপে ধরে মেয়েটা। ভুলেও ঘরের লাইট দেওয়া যাবে না। চন্দ্রের মায়ের ঘুম খুব পাতলা। এই যে চন্দ্র সারা রাত না ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেয়, কি করে যেন তিনি বুঝে যান। সবার চোখ ফাঁকি দিতে পারলেও চন্দ্র কেন জানি মায়ের চোখ ফাঁকি দিতে পারে না।

আলো না জ্বালালে যে চন্দ্র কিছু দেখতে পারবে না। ড্রয়ার থেকে অনেক খুঁজে আধ ভাঙা একটা মোমবাতি পেল। আপাতত এটাতেই চলবে। কাঠির মাথায় জ্বলতে থাকা আগুন দিয়ে চন্দ্র অর্ধ ভাঙা মোমবাতিটা জ্বালিয়ে টেবিলের কোণায় ভালোভাবে বসিয়ে দেয়। মুহূর্তেই আঁধারে আচ্ছন্ন হয়ে থাকা ঘরটা আলোকিত হয়ে ওঠে। ঘরের আনাচে কানাচে হলদেটে আলো ছড়িয়ে। সেই আলোয় চন্দ্র দুর্বোধ্য হাসে। আলো আঁধারিতে কেমন ভয়ঙ্কর ঠেকল তা।

আলমারির একেবারে উপরের তাক এ রয়েছে চন্দ্রের কাঙ্ক্ষিত জিনিসটা। তবে সেটা ধরা ছোঁয়ার বাইরে। চন্দ্র হাত বাড়িয়ে তা নাগাল পাবে না। ঘরের এক কোণায় পড়ে থাকা মোড়া এনে, চন্দ্র তাতে উঠে দাঁড়ায়। হাত বাড়িয়ে মাঝের তাক এ থাকা সাদা শাড়িটা টেনে বের করল। এ
শাড়িটা একেবারে নতুন। এখনও ভাঁজ খোলা হয়নি। চন্দ্র শাড়িটার দিকে কয়েক পলক তাকিয়ে থাকল। তারপর একে একে ব্লাউজ, পেটিকোট পরে শাড়িটা গায়ে জড়িয়ে নেয়।
কুঁচি টুচির ঝামেলা পোহাতে হবে ভেবে আটপৌরে করে শাড়ি পরেছে, কিছুটা এলোমেলোভাবে।
চন্দ্র কখনো শাড়ি পরেনি। পরেনি বললে ভুল হবে। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়াকালীন বান্ধবীর দেখায় একবার পরেছিল। সেটা পরে দু বান্ধবী রাস্তায়ও ঘুরেছে। তবে মাঝ রাস্তায় গিয়ে চন্দ্রের শাড়ির কুঁচি খুলে যায়। ভাগ্যিস! ধারের কাছে পরিচিত একজনের বাড়ি ছিল। নয়তো মানসম্মান সব যেত। সেখানে গিয়ে কুঁচি ঠিক করে বাড়ির পথে দৌড় লাগিয়ে ছিল। তারপর আর কখনো চন্দ্রের শাড়ি পরা হয়নি। চন্দ্র ইচ্ছে করেই পরেনি।

চন্দ্র খুব একটা সাজগোজও করে না। সাজতে ওর ভালো লাগে না। বাইরে গেলে বোরকা আর ঘরে থাকলে সেলোয়ার কামিজ। এসব পরে যেন চন্দ্র স্বস্তি পায়। তবে আজ খুব করে শাড়ি পরে সাজতে ইচ্ছে করছে। চন্দ্র ইচ্ছে পূরণ করল নিজের।

এ শাড়ি চন্দ্র শখের বসে কিনেছে। শাড়ি পরতে ভালো না লাগলে কী হবে, শাড়ির প্রতি চন্দ্রের ভীষণ ঝোঁক। সে বার শাড়িটা দেখে চন্দ্রের চোখে লেগেছিল। চোখ সরানো দায়। খয়েরী পাড়ের সাদা শাড়িটার চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য।
পাড়ের কাছটাই খয়েরী রঙা সুতা দিয়ে অসম্ভব সুন্দর কারুকাজ করা। তাই এক দেখায় কিনে নিয়েছিল। চোখের শান্তি মেটাতে কেনা। তবে শাড়ির কাপড়টা ঠিক কিসের চন্দ্র বুঝে উঠতে পারছে না। কেন না কাপড়টা সুতিও না আবার জর্জেটও না। মনে হয় মসলিন টিস্যু কাপড়ের। কিনে যে রেখে দিয়েছে আর ধরাও হয়নি, পরা তো দূরের কথা।

মুখে কোনো প্রসাধনী ব্যবহার করল না। তবে সব থেকে অপছন্দের একটা কাজ করে বসল। চোখে গাঢ় করে কাজল দেয়। অথচ চন্দ্রের কাজল একদম অপছন্দের।
অপছন্দের মানে খুব বেশি অপছন্দের।

চন্দ্র আয়নায় নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পরখ করতে লাগল। আগের মতো চেহারায় উজ্জ্বলতা নেই। চন্দ্রের না ঘুমানোর কারণে চোখের নিচে কালি জমেছে। থুতনিতে দুটো ছোটো ছোটো ব্রণের দেখা মিলল। ব্রণগুলো যেন চন্দ্রের সৌন্দর্য কিছুটা বাড়িয়ে তুলেছে। চন্দ্রের নিচের ঠোঁটের ডান কোণে ছোটো একটা তিল আছে। তার চেহারার সব থেকে আকর্ষণীয় এ তিলটা। চন্দ্র ঘুরেফিরে নিজেকে দেখতে লাগল। কী হাল করেছে নিজের!

হুট করে চন্দ্র হেসে ওঠে। আওয়াজ যেন বাইরে না যায় তাই উচ্চস্বরে হাসল না। হাসতে হাসতে চোখের কোণায় জল জমেছে। চন্দ্র হাসি থামিয়ে নিজের দৃষ্টি আয়নায় নিবদ্ধ করে। মুহূর্তেই ডুকরে কেঁদে উঠল মেয়েটা। থেমে থাকল না। আর না প্রয়াস চালাল কান্না থামানোর। কতদিন পর সে কান্না করছে। এ কান্নায় তার শেষ কান্না। তারপর, তারপর আর কাঁদবে না। আজ কেন মায়ের ঘুম ভাঙছে না। ক্লান্ত হয়ে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। চন্দ্রের কান্নার আওয়াজ কী নিস্তব্ধতা ভেদ করে তার কান অবধি পৌঁছাতে ব্যর্থ!

চন্দ্র উঠে দাঁড়াল। শরীর টলছে, মাথা ভার হয়ে আসছে। মনে হয় লুটিয়ে পড়বে। আস্তে করে দরজা খুলে বাইরে পা রাখল। খোঁপা খুলে চুলগুলো যে কখন পিঠ দখল করে নিয়েছে সেদিকে খেয়াল নেই। হাড় কাঁপানো শীত পড়েছে এবার। ডিসেম্বরের শেষ আজ। রাত পোহালে একত্রিশ তারিখ। বছর ঘুরে নতুন বছরের আগমন ঘটবে। আর চন্দ্রের না হওয়া সে মানুষটার বিবাহের এক বছর পূর্তি হবে।

চন্দ্রের বুকে চিনচিনে ব্যথা অনুভব হলো। ইশ্! মানুষটা তার হলে কী খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যেত। যেত না তো। বরং চন্দ্র বেঁচে যেত। চন্দ্রের সাথে না হয় ভালোবেসার অভিনয় করে যেত। মিথ্যা ভালোবাসার অভিনয়। চন্দ্র সে অভিনয় বুঝেও না বুঝার ভান করে থাকত। তবুও মানুষটা থেকে যেত। তাহলেই তো চন্দ্রের এ কলঙ্ক নিয়ে বাঁচতে হতো না। এ কলঙ্ক যে চন্দ্রকে শান্তি দিচ্ছে না। অনেক দিন তো চন্দ্র এ কলঙ্কের দাগ বয়ে বেরিয়েছে। আর সম্ভব না।

সবকিছু চন্দ্রের কাছে অসহ্য ঠেকছে। এই যে এতকাল চন্দ্র যার অপেক্ষায় ছিল সে মানুষটা তার জীবনে আসতে চলেছে অথচ চন্দ্র তাকে গ্রহণ করতে নারাজ। চন্দ্র তো কল্পনার জগৎ এ ডুবে যেত এই ভেবে, তার জীবনে কেউ একজন এসেছে। যার পাঁজরের হাড় দিয়ে তাকে বানানো হয়েছে সেই মানুষটা। তার দুঃখের জীবনে সুখের হাতছানি দিতে এসেছে সে, তার কলঙ্কের জীবনে সে পবিত্র ছোঁয়া দিতে এসেছে। চন্দ্রকে দুনিয়ার সব সুখ দিবে। তবে পাষাণ পুরুষ বড্ড দেরি করে ফেলেছে। দেরি করার শাস্তি যে তাকে পেতেই হবে। ভয়ঙ্কর শাস্তি! না পাওয়ার শাস্তি! মৃত্যু যন্ত্রণার শাস্তি!

চন্দ্র এলোমেলো পা ফেলে বাড়ির পিছন দিকটায় চলে গেল। শীতল বাতাস বয়ছে। গা হিম করা ঠান্ডা। এই শীতে কেউ বের হলে নির্ঘাত শীতে মরত। অথচ চন্দ্রকে যেন শীত ছুঁতে পারছে না। গায়ে শুধু সাদা শাড়িটা‌। আর একটা সুতাও নেই শরীরে।

চন্দ্রদের বাড়ির এদিকটা দিনের আলোতেও ভয়ঙ্কর ঠেকে। এদিকে তেমন কেউ আসে না। পুকুরের পাড় জুড়ে বাঁশের ঝোপঝাড়। কোথা থেকে শেয়ালের ডাক ভেসে আসছে।
চন্দ্র পুকুরের পানিতে চাইল। কালো ঘুটঘুটে পানিতেও যেন চাঁদের স্পষ্ট প্রতিবিম্ব ভেসে উঠেছে। সাথে কলঙ্কিত চাঁদের প্রতিচ্ছবিও যেন দীপ্তিমান!

– মরে যা চন্দ্র, দেখবি তোর কলঙ্ক ঘুচে যাবে। তোর আর ভয়ে ভয়ে থাকতে হবে না। কেউ জানবে না তুই কলঙ্কিত। কেউ তোর দিকে আঙুল তুলে কিছু বলতে পারবে না। কাউকে কৈফিয়ত দিতে হবে না। কারো বাঁকা চাহনি সহ্য করতে হবে না। এ পানির সাথে তোর কলঙ্কও ধুয়ে যাবে।
যে শান্তির জন্য রোজ ছটফট করছিস, সে শান্তি তুই পেয়ে যাবি।

চন্দ্রের কানে একটা কথায় বাজতে লাগল। মরে যা চন্দ্র, তোর কলঙ্ক ঘুচে যাবে।

চন্দ্র বিড়বিড়ায়, ভুলের মাশুল বুঝি এমনভাবে দিতে হয়। এভাবে, নিজের জীবন দিয়ে। ইশ্! এ সুন্দর পৃথিবী তার আর দেখা হবে না। পাষাণ পুরুষটাকে দেখা হলো না। একবার যদি চোখের দেখা দেখতে পেত। কেমন হবে তার সেই পুরুষ, চন্দ্রের পুরুষ।

চন্দ্র এত আফসোস নিয়ে কী করে মরবে? তার যে সংসার করা হলো না। সংসার করার যে বড্ড শখ তার। শখটা অপূর্ণই রয়ে যাবে তবে? এত এত অপূর্ণতা। সব থেকে বড়ো অপূর্ণতা নির্দয় পুরুষটাকে এক পলক দেখার তৃষ্ণা। এত হাহাকার নিয়ে বুঝি প্রাণ খোয়াতে হবে। নির্দয় পুরুষ মানুষের জন্য এ শাস্তিটাই সয়। সে তাকে পাবে না। দেরি করে আসতে গেল কেন? চন্দ্র যে অভিমান করেছে। তাই তো দেখা দিবে না। হারিয়ে যাবে।

চন্দ্র আওড়াল,
সময় গড়াবে আমি নিঃস্ব হয়ে যাব। তুমি খুব করে চাইবে। অথচ পৃথিবীতে আমার চিহ্নটুকুও থাকবে না।

বোকা চন্দ্র বোকাটি রয়ে গেল। সে নাকি বুঝদার হয়েছে। বুঝদার হলে এমনটা করতে পারত। ওকে কে বুঝাবে মরে গেলেও যে কলঙ্ক ঘুচে না।

_

মেয়ের ঘরের দরজা এমন হাট করে খোলা পেয়ে চন্দ্রের মায়ের কপালে ভাঁজ পড়ে। দরজা তো বন্ধ করে শুয়ে ছিল। তাহলে এখন এমন হাট করে খোলা কেন? ঘরের কোথাও চন্দ্রের টিকিটি পর্যন্ত নেই। গেল কই মেয়েটা। নামাজের জন্য উঠেছে নাকি। তাই হবে বোধ হয়। মেয়ের সুবুদ্ধি হয়েছে তবে। এতকাল টেনে হিঁচড়ে মেয়েকে ঘুম থেকে তুলতে হয়েছে। আর আজ মেয়ে নিজেই উঠে গেল।

– এই চন্দ্র, কই রে তুই? এত ভোরে উঠতে গেলি কেন? আমি তো ডাকতাম। কী রে জবাব দিচ্ছিস না কেন?

হন্তদন্ত হয়ে গফুর মিয়াকে বাড়ির ভিতরে আসতে দেখে তিনি গলার আওয়াজ কমালেন। এত ভোরে ওনাকে দেখে চন্দ্রের মা কিছুটা হকচকায়ও। এ লোক এখানে কী করছে?
এ লোককে চোখের দেখাও দেখতে পারেন না তিনি। শুধু তিনি কেন, পাড়ার অধিকাংশ লোকই তাকে দেখতে পারে না। এই লোকের স্বভাব চরিত্রের ঠিক নেই। দু দুটো বিয়ে করেও বউ ধরে রাখতে পারেনি। একটা বউও টিকেনি। মাস যেতেই পোঁটলা পোটলি নিয়ে বাবার বাড়ি চলে যেত তারা। এমন লোকের সাথে কী সংসার করা যায়।

তবে গফুর মিয়ার অবস্থা দেখে তিনি কিছু বললেন না। এ শীতের সকালেও লোকটা দরদর করে ঘামছে। কোথা থেকে দৌড়ে এসেছে মনে হয়, কেমন হাঁপাচ্ছে। শরীর মৃদুমন্দ কাঁপছে। ওনার অবস্থা দেখে চন্দ্রের মা কিছুটা ভয় পেল।
কারো কিছু হলো না তো আবার।

– কী হলো গফুর ভাই, সব ঠিক আছে তো? তুমি এত ভোরে এখানে…

গফুর মিয়ার উত্তেজিত কণ্ঠ শোনা গেল।

– পুকুরে চন্দ্রের লাশ ভাইসা উঠছে!

•••সমাপ্ত•••

– মাইশা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here