প্রিয়জন❤Part-10

0
3372

প্রিয়জন❤Part-10
Writer-Moon Hossain

আগুন-আমার শরীরের সব ব্লাড বের হয়ে গেলেও আজ ব্যান্ডেজ করবনা।
কেনো ব্যান্ডেজ করব আমি বউ থাকতে।
আমার কি এইটুকু কপাল নেই যে আমার বউ আমার ক্ষতে মলম লাগিয়ে দেবে।
ওর দিকে তাকিয়ে দেখি মাথা নিচু করে আছে। আমার জন্য কষ্ট পাচ্ছেনা একটুও সেটা জানি।
একটু কড়া কথা বলেছি তাই হয়ত মন খারাপ করেছে। করুক মন খারাপ।
আমারও মন খারাপ হয়। তখন তো আমার অভিমান ভাঙায়না।
.
.

মোম-খুব খারাপ লাগছে উনার জন্য। হাত থেকে টপটপ রক্ত ঝরছে অথচ ব্যান্ডেজ করাচ্ছে না।
সব বুঝি আমি। আমার উপর রাগ করে উনি এমন করছে। আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্যই উনি এই কাজটা করেছেন।
আগুন আর মোম কেউ কথা বলছেনা।
আগুন রাগে জোরে জোরে ড্রাইভ করছে প্রচন্ড রকমের।
মোমের কিছুটা ভয় লাগছে। একবার বলতে চেয়েও বলল না।
মোম- একটু ধীরে চালান। আপনার হাতে ব্যাথা লাগছে। আরও বেশি রক্ত পড়বে।
আগুন রেগে তাকালো।
-তাতে তোমার কি?
-আপনার কষ্ট হচ্ছে।
আগুন ব্রেক করে শান্ত স্বরে বলল…রিয়েলি আনুশকা ইয়াসমিন মোম?
আমার কিসে কষ্ট হয় সেটা বুঝতে পার তুমি?
মোম নিচে তাকিয়ে আছে।
.
.
আগুন হঠাৎ স্প্রিরিট থামালো। মোম সাথে আছে তাই ধীরে ধীরে ড্রাইভ করা দরকার নয়ত ভয় পেতে পারে।
মোম কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা। কিভাবে আগুনের ক্ষতে মলম লাগাবে সেটার উপায় খুঁজছে।
হঠাৎ মোম বলল…একটু থামুন।
-কেনো?
-একটা কাজ আছে।
-রোডে তোমার কি কাজ?
আমাকে বলো আমি কাজটা করব।
-কাজটা আমি করব দয়া করে থামুন।
মোম গাড়ি থেকে নেমে পড়ল। রোডের পাশে একটা ঔষধি গুল্ম লতা তুলে এনে সেটা আগুনের হাতে লাগানোর উদ্দেশ্য আগুনের কাছে গেলো।
আগুন মনে মনে একটু খুশি হলো। হাজার হলেও ওর প্রতি একটু কেয়ার আছে মোমের।
মোম আগুনের হাত খুব লজ্জা মিশ্রিত হয়ে ধরল।
হাত মোজা খুলে মোম ঔষধ লাগাল।
তারপর ব্যাগ থেকে একটা রুমাল বের করে আগুনের হাতে বেধে দিলো।
মোমকে বাংলো বাড়িতে নিয়ে আসার পর আগুন আবার স্পটে গিয়ে মোমের গাড়িটা সাইডে পার্কিং করে মোমের ব্যাগ পত্র নিয়ে এসেছিলো।
সেই ব্যাগে মোমের প্রিয় রুমাল ছিল যেটা এখন আগুনের অধীনে।
.
.
.
পুরোটা সময় জুড়ে আগুন মোমের কাছাকাছি এসে তার দিকে তাকিয়ে ছিলো।
সাথে আবার মোমের স্পর্শ ফ্রী।
মোম বেশ লজ্জা পেয়েছে আগুনের হাত স্পর্শ করতে।
পুরোটা সময় মোমের শরীরে একটা কারেন্ট দৌড়চ্ছিল।
রুমাল বাঁধার পর মোম একটু সরে বসলো আগুনের কাছ থেকে।
আগুন বলল….আমার পছন্দের জিনিস গুলো আমার কাছে নিয়ে আসি সেটা যেভাবেই হোক না কেনো।
আগুন বুকে হাত দিয়ে বলল….প্রিয়তমা আমার গায়ের ক্ষতে মলম দিলে বাট আমার এই বুকের ক্ষতে মলম লাগিয়ে দিলে না ।
জানো এই বুকে কতটা ব্যাথা?
প্রতিনিয়ত আমার প্রিয়তমার ভালোবাসার জন্য সীমাহীন ক্ষত সৃষ্টি হচ্ছে এই বুকে।
.
.
.
মোম একবার তাকিয়ে আগুনের চোখে চোখ রেখেই আবার চোখ সরিয়ে ফেললো।
মোমের মুখ খানি লাল হয়ে গিয়েছে ।
আগুনের সাথে থাকলেই মোমের মুখ এমন লাল হয়ে যায় লজ্জায়।
.
.
.
মোমদের বাসার কিছুটা আগে আগুন গাড়ি থামালো কারণ তাকে দেখলে মোমের পরিবার মোমকে কিছু বলতে পারে।
আগুন দরজা খুলে দিলো মোমের সাইটের।
মোম চুপচাপ নেমে পড়লো।
আগুন মোমের কাছে এসে নেকাব লাগিয়ে দিলো।
-নেকাব লাগাতে ভুলে গিয়েছিলে। মোমের হাতে তার ব্যাগ দিলো।
-প্রিয়তমা এইখানে ঔষধ পত্র সব আছে। তুমি নিয়মিত খাবে।
না খেলে তোমার কি হাল করব আশা করি বুঝতে পেরেছোা।
-হুূ
-আচ্ছা বাসায় যাও প্রিয়তমা।
মোম পা বাড়াতেই আগুন বলল…প্রিয়তমা?
মোম ফিরতেই আগুন বলল… কখনো নিজেকে একা ভাববে না। দুনিয়ায় কোন মানুষ নেই যে তোমার ক্ষতি করবে সামান্য তম।
আমি আছি সব সময় ছায়ার মতোই তোমার পাশে।
এটা মাথায় রাখবে।
এই বিষয় নিয়ে কাউকে কিছু বলোনা। সবাই টেনশন করবে।
আর একদম কান্নাকাটি করবেনা। তুমি কাদঁলে আরেকজনও কাঁদবে এটা মনে রেখো। কথা গুলো মাথায় রাখবে।
যাও ভেতরে যাও।
.
.
.
মোম সোজা ভেতরে চলে গেলো একবার পেছন ফিরে তাকালো না।
আগুন মোমের যাওয়ার পথে তাকিয়ে থাকল একটিবার মোম পেছন ফিরে কিছু বলার অপেক্ষায়।
কিন্তু আগুন বৃথা আশা করে ছিল।
আগুন অনেক ক্ষণ দাড়িয়ে থেকে চলে গেলো। যাওয়ার সময় বার বার তাকাচ্ছিল রাস্তার মাথায়। তার মনে হচ্ছিল দেয়ালের আশেপাশে মোম দাড়িয়ে আছে।
মোমের ফিলিংটা সে পাচ্ছে।
.
.
আগুন যেতেই দেয়ালের ওপাশ থেকে মোম এগিয়ে এলো।
মোম-আপনি সাবধানে যাবেন। হাতের ব্যান্ডেজের যত্ন নেবেন।
আর সব সময় ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করবেন।
কথা গুলো মোম মনে মনে বলল।
আল্লাহ তুমি উনার রাগ কমিয়ে দাও। উনার রাগ আর জেদ আয়ত্তে এনে দাও।
.
.
.
মোম বাসায় প্রবেশ করার পর মাকে বলল গাড়ি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। কথাটা বলে সোজা রুমে গেলো। মোমের বাবা মোম কে জিজ্ঞেস করলো গাড়িটা কোথায় নষ্ট হয়েছে?
মোম জায়গাটার নাম বলল।
আগুন ইচ্ছে করে মোমের গাড়ির টায়ার হাওয়া বের করো মোমকে বলেছে গাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে। যেনো মোম সত্যি বলতে পারে বাসায় গাড়ি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। বাকিটা সবাই এমনিই বুঝতে পারবে। মোম অটো করে ভার্সিটি গিয়েছিলো।
মোমকে কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলোনা।
মোম কিছু বললনা কারণ সবাই টেনশন করবে আর আগুনের কথা জানতে পারলে বাবা রাগ করবে।
.
.
রাত হয়েছে। মোম হাতে পায়ে মলম লাগাচ্ছে। এখনো কেউ বুঝতে পারেনি মোমের হাত পায়ে চোট লেগেছে।
এখন মোম হাটতে পারে ।
মোম জোহরের নামাজ পড়েছে আগুনের এখানে।
আছরের আর মাগরিবের নামাজ পড়েছে তার বাসায়।
এখন এশারের নামাজ পড়ে মোনাজাত করছে মোম।
!হে আল্লাহ মহান পরম করুনাময়। সমগ্র সৃষ্টি কে রক্ষা কর। সবাইকে তৌফিক দাও যেনো তোমার রাস্তায় চলতে পারে।
আমাকে কঠোর হওয়ার তৌফিক দাও যেনো আমি সব সমস্যা মোকাবিলা করতে পারি।
তুমি আজ আমাকে রক্ষা করেছো চরম অসম্মানের হাত থেকে।
যার উছিলায় রক্ষা করেছো তার হেফাজত কর। তাকে ভালো রাস্তায় চলার তৌফিক দাও। আমার পিতামাতা এবং পরিবারকে তৌফিক দাও সঠিক বিষয় গুলো বোঝার। আমি দ্বিধায় ভুগছি। আমাকে রাস্তা দেখাও। আমি কোন দিকে যাব? বলে দাও?
.
.
.
মোমের এখন শান্তি লাগছে।
মোম-এখন ভালো লাগছে।
কিন্তু মনের মধ্যে অস্থিরতা কাজ করছে। আজ অনেক কিছু হয়ে যেতে পারত। ভাবতেই আমার শরীরের লোম সোজা হয়ে উঠেছে।
উনি যদি না আসতো তাহলে কি যে হতো। আল্লাহ রহম করেছে।
আচ্ছা উনি কি করছেন? উনি কি খেয়েছেন?
হাতে ব্যান্ডেজ করেছেন?

.
.
.
আগুন এক্সারসাইজ করছে।
বিকেল থেকেই এক্সারসাইজ করছে। এখন রাত হয়েছে তবুও এক মিনিটের জন্য থামছেনা সে।
মোমের মুখশ্রী চোখের সামনে ভাসতেই আগুন চোখ বন্ধ করে ফেলে প্রচন্ড ক্ষোভে মোমকে কাছে না পাওয়ায়।
আগুন আজ কয়েকদিন ধরে খাচ্ছেনা ঠিক মতো।
আজ কাল থেকে আজ সারাদিন না খেয়ে রয়েছে আগুন।
আগুনের মা অনেক বার বলেছে তবুও আগুন খাচ্ছেনা। আগুন গরম চোখে সবাইকে বলে দিয়েছে তার রুমে কেউ যেনো না আসে । কেউ আসলে সে সোজা বাড়ি ছাড়বে।
.
.
.
আগুনের মা বুঝতে পেরেছে মোমের কারণেই তার ছেলে এমন করছে।
আগুন ছোট বেলা থেকেই একটু জেদি।
যেটা একবার ওর হয়েছে সেটা ওর করেই ছাড়বে।
একবার একটা বল ওর কাজিন নিয়েছিল। আগুন রাগে ময়মনসিংহ থেকে একাই ঢাকা চলে গিয়েছিল ট্রেনে করে বলটা আনতে।
এতোটুকু ছেলে কিভাবে একা যেতে পারলো সেটা দেখে সবার চোখ কপালে।
আর মোম তো জ্বলজ্যান্ত একটা অসম্ভব বেহেশতের হুর। তারউপর আগুনের বউ। আগুন তার মায়ের কথা মাথায় রেখেছে সেই ছোট বেলা থেকে বিদেশে গিয়েও মোম যে তার বউ।
সেই ছেলেবেলা থেকে আগুনের মনে মোমের জন্য একটু একটু করে ভালোবাসা জন্মে সমুদ্র হয়েছে আর কিনা তার ছেলের তিলে তিলে ভালোবাসার সমুদ্রটা শুকিয়ে যাচ্ছে ।
সকাল হয়েছে।
মোম না খেয়ে ক্লাসে গেলো।
আজ আগুনকে দেখতে পেলো না।
মোমের অস্থিরতা বেড়েছে। আগুনকে না দেখা পর্যন্ত তার অস্থিরতা কমবে না।
.
.
মোমের কাছে ড্রাইভার একটা চিরকুট দিয়েছে।
“প্রিয়তমা তোমার অপেক্ষায় আছি। আমার পছন্দের জিনিস আমি কখনো দূরে রাখতে থাকতে দিইনা। মনে রেখো।
মোম আহত চোখে এদিক ওদিক তাকালো।
আগুন দূর থেকে গাড়িতে বসে দেখছে মোমকে।
.
.

বিকেলে সবার সাথে মোম নাশতা করতে বসেছে।
কিন্তু কিছু খেতে পারল না।
মোমের মা -কি ব্যাপার? তুমি খাচ্ছোনা কেন মা?
মোম-জানিনা কেন।
আরমান -কিছু হয়েছে মা?
মোম-না বাবা এমনিই খাচ্ছি না।
আশরাফ- আয়েশা কে নিয়ে ডক্টরের কাছে যা। তোর রুচির সমস্যা হয়েছে।
মোম-ভাইয়া আমি ঠিক আছি।
আরব সেমাই দেখিয়ে বলল…এটা কি?
মোম-সেমাই।
-সেমাই কি?
-সেমাই হলো খাবার। এদিকে এসো তোমাকে সেমাই খাইয়ে দিই।
-সেমাই কিভাবে হয়?
-চালের গুড়ো থেকে।
-চালের গুড়ো কিভাবে হয়?
-চাল থেকে।
-চাল কিভাবে হয়?
-ধান থেকে।
– ধান কিভাবে হয়?
-ক্ষেত থেকে।
-ক্ষেত কিভাবে হয়।
মোম আহত দৃষ্টিতে সবার দিকে তাকালো।
নাশতার টেবিলে সবাই আরবের কান্ড কারখানা দেখছে। আরব সেমাই প্রসঙ্গটা আরও অনেক বার বলেছে।
আশরাফ-ছেলেটা এতো প্রশ্ন করে। ডক্টর দেখাতে হবে নইলে সবাইকে প্রশ্ন করতে করতে পাগল খানায় পাঠাবে।
.
.
.
মোমের কাছে একটা ফোন এলো। মোমের অস্থিরতা আরও বাড়ছে।
মোম লজ্জার মাথা খেয়ে আগুনের বাসায় গেলো।
মোম দাদীর কাছ থেকে শুনে ছিলো স্ত্রীকে তার স্বামীর পাঁজর থেকে তৈরি করা হয়েছে।
সবাইকে সালাম জানানোর পর আরু মোমকে আগুনের রুমে যেতে বলল।
-তুমিও চলো
-না বাবা না। ভাইয়া আমাকে কবর দিয়ে দেবে।
তোমাকে কিছু করবেনা
-কেন?
-তোমাকে কে তো ভাইয়া…..
আরু পুরো কথা না বলে চলে গেলো।
রুমটা অন্ধকার।
মোম ভেতরে ঢুকতেই কেউ ওর হাত ধরে দেয়ালের সাথে মিশিয়ে ফেললো।
আবছা আলোয় আগুনের খালি গা আর রাগী মুখটা দেখা যাচ্ছে।
মোম লজ্জা আর ভয় নিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো।
আগুন মোমের নেকাব খুলে তাকিয়ে থাকলো।
মোম বলল…খাবেন না?
-হ্যাঁ খাব তোমাকে।
-মানে?
-আমার প্রচন্ড ক্ষিদে লেগেছে তোমাকে দেখে প্রিয়তমা…..❤❤❤
.
.
.
চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here