প্রিয়জন Part-13

0
3200

প্রিয়জন Part-13
Writer-Moon Hossain

[আমি সবাইকে ইচ্ছে মতো মতামত জানাতে বলেছি কিন্তু মিথ্যে দোষারোপ না দিতে অনুরোধ করেছি। নিজেকে লেখিকা বলে মনে করিনা।
সে যোগ্যতা আমার নেই। যাদের আমাকে পছন্দ নয় তারা Leave me ]
আগুন- আমার প্রিয়তমার বেহেশতের নূরের মতো মুখশ্রী দেখলে আমি প্রথিবী থেকে কোথাও চলে যায়। প্রচন্ড ধরনের ভালো লাগা কাজ করে। আমার পাথরের হ্রদয়ে আমার প্রিয়তমা পারে এক ফোটা শান্তি দিতে। কোটি গুন দুঃখ ভুলিয়ে দেবার ক্ষমতা আছে আমার প্রিয়তমার কাছে।
বাবার আদেশে বিয়ের ফেস্টিভ্যালে এলাম। কিছুই ভালো লাগছেনা। হঠাৎ দেখি আমার ভালো লাগার ঔষধ।
মোমকে একা এদিকে আসতে দেখেই সুযোগটা কাজে লাগালাম। মুখ চেপে হাত ধরে একটানে আমার কাছে সবার আড়ালে নিয়ে এলাম।
.
.
মোম-আল্লাহ কোথায় তুমি।
রক্ষা করো।
উনার ছোঁয়ায় বুঝে ফেলেছি উনি কে। এটাকে কি বলে জানিনা।
উনি আমাকে দেয়ালের সাথে মিশিয়ে আমার খুব কাছে এলেন। বরাবরের মতো আমার নেকাবটা খুললেন।
আমার মধ্যে অস্থিরতা শুরু হয়ে গেলো।
আমার মুখ লজ্জায় লাল হয়েছে বুঝেছি। উনি কাছে এলেই লজ্জায় আর অস্থিরতায় মরে যেতে ইচ্ছে করে। আল্লাহ জানে এমন হওয়ার কারণ।
-তোর আটটার নিউজ আছে। সকাল থেকে খাওনি কিছু মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে। ঠিক মতো ঘুমাওনা চোখ দেখে বোঝা যাচ্ছে। শরীর দেখে বোঝা যাচ্ছে কিছু একটা টেনশনে আছো।
কাল বিকেলে কম্পিউটার ক্লাসেও গেলে না। বেলকুনিতে রাত বিরাতে কেনো উদাস হয়ে দাড়িয়ে থাক? এসব যেন আর না দেখি। তোমার আমাকে কষ্ট দিতে তোমার ভালো লাগে?
মোম অবাক হলো আগুন তার এতো খবর রাখে।
আগুন -তোমার প্রতিটা মিনিটের খবর আমার জানা আছে। এখন থেকে তোমার খেয়াল আমি রাখব। তোমাকে দিয়ে কিছু হবেনা।
মোম মনে মনে ভাবল উনি আমার এতো খেলাল কেনো রাখছেন।
হঠাৎ আগুন মোমের নেকাব আরেকটু খুলে দিলো আর মোমের হাত দুটো নিজের হাতোর মুঠোয় নিলো।
.
.

মোম – উনাকে নির্ঘাত কেউ চাকরি দিয়েছেন আমার নেকাব খুলতে আর হাত ধরতে।
আমাকে দেখলেই হলো। আশেপাশে কে আছে না আছে এসব না দেখেই আমার হাত ধরে টানাটানি। লোকে দেখলে কি মনে করবে। একটা পর্দাওয়ালী মেয়েকে নিয়ে টানাটানি। কি আজব দৃশ্য!
-আল্লাহ কোথায় তুমি?
-এই তো এখানে।
-আল্লাহ কে বলেছি আপনাকে নয়।
-তুমি সব সময় আল্লাহ কোথায় তুমি? আল্লাহ কোথায় তুমি করো কেন???
আল্লাহর কাছে কি চাও সব সময়?? আল্লাহর দানশীলতার সুযোগ নিয়ে তোমার লোভ দিন দিন বেড়ে চলেছে। সব সময় এটা চাও, ওটা চাও, সেটা চাও। আল্লাহ যতটুকু দিয়েছে ততটুকু নিয়ে সন্তুষ্ট থাক। এটা কিন্তু খুব খারাপ প্রিয়তমা।
তুমি ছাড়াও আল্লাহর অনেক বান্দা আছে। এতো ডিস্টার্ব করো কেন আল্লাহ কে???
লোভী মেয়ে কোথাকার!!!
.
.
.
আমি হাসব না কাঁদবো উনার কথা শুনে।
কাঁদো কাঁদো গলায় বল্লাম -আমি লোভী না। আল্লাহ কে ডাকা মানে সব সময় আল্লাহর কাছ থেকে চাইনা কিছু।
-তোমাকে চিনিনা আমি। তুমি সব সময় আল্লাহর কাছ থেকে চাওয়া চাওয়ির মাঝে থাক।
-আমি মোটেও লোভী নয়। আপনি একটা নিরীহ মেয়ের উপর এতো বড় অপবাদ দিতে পারেন না।
ধর্মে সইবে না।
-নিরীহ ? কে নিরীহ??
তুমি নিরীহ হলে আমি কি?? আমি নিরীহ বলেই বউের জায়গায় কোলবালিশ নিয়ে ঘুমুতে হয়।
মোম এবার সত্যি সত্যি কান্না করে দিলো।
-আমাকে কেউ এভাবে অপবাদ দেয়নি।
আপনি দিয়েছেন।
আল্লাহ কোথায়….
মোম পুরো কথা শোনার আগেই আগুন হেসে দিলো ।
মোম বলল- আল্লাহ আমাকে নিয়ে যাও। তুমি তো জান আমি লোভী না। এতো বড় অপবাদ!!
উনি আমাকে হঠাৎ টেনে ভেতরের রুমের দিকে নিয়ে যাচ্ছে কমিউনিটি সেন্টারের।
উনি বললেন -আমি এখানে দাড়ালাম। যাও নামাজ পড়ে এসো। এই নাও পানি অজু করে নাও।
নামাজের কথা ভুলে গিয়েছিলাম। উনি না থাকলে কি হতো।
নাম শেষ করে বাহিরে আসতেই উনি হেসে বলল- তুমি বড় হয়েছো বাট এখনো ছোটই আছো। তরুণী হলেও কিশোরী সূলভ ভিহেবিয়ার তোমার মধ্যে রয়েছে। আই লাইক ইট!
.
.
মোম বলল… আমার মতো লোভী মেয়ের সাথে আপনার কোন কাজ থাকতে পারে না।
আমি তো কিশোরী। তাহলে আমার কাছে এসেছেন কেন?? বিদেশি তরুণী মেয়েদের কাছে গেলেই হয়।
আগুন-ওর বাঁশির মতো নাকটা টেনে বললাম-আমার এই লোভী কিশোরী মেয়েটাকেই পছন্দ। কি আর করা পছন্দ যখন একবার হয়ে গিয়েছে।
-আপনি ইচ্ছে করে এমন করেন আমার সাথে তাইনা??
-আর তুমি ইচ্ছে করে আমার থেকে দূরে থাক তাইনা??
আমাকে কষ্ট দিতে তোমার ভালো লাগে??
মোম চুপ করে আছে। এই উত্তর তার কাছে নেই।
-কি হলো জবাব দাও?
-আমার কাছে এই উত্তর নেই।
-উওর নিজেই বলছে তার কাছে উওর নেই।
.
.
.
আগুনের ফোনে রিংটোন বাজতেই মোম চলে যেতে চাচ্ছিল।
আগুন ফোন এক হাতে রিসিভ করে অন্য হাতে মোমের হাত ধরলো।
মোম -হাত ছাড়ুন বলছি।
আগুন ঠোঁটে আঙুল দিয়ে ইশারা করলো চুপ থাকতে।
মোম হঠাৎ জোরে একটা কামড় বসিয়ে দিলো।
আগুনের হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেলো।
মোম এই ফাঁকে হাত ছাড়াতে চাইলো বাট পারলনা।
আগুন মোমকে একটানে আরও কাছে এনে ফিসফিস করে বলল…এই হাত ছেড়ে দেওয়ার জন্য আমি ধরিনি প্রিয়তমা। অনেক বছর অপেক্ষা করে সাত সমুদ্র পাড়ি দিয়ে তোমার জন্য এসেছি। যে পর্যন্ত হাত ধরে বাসর ঘরে না নিয়ে যাচ্ছি সে পর্যন্ত এই হাত ছাড়বনা প্রিয়তমা।
আগুন মোমের কামড় বসানো জায়গায় চুমু খেলো খুব ডীপলি চোখ বন্ধ করে যেখানে মোমের গোলাপি ঠোঁটের ছাপ রয়েছে।
.
.
মোম হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল…অনেক সহ্য করেছি আর না। আপনি নিজেকে কি ভেবেছেন??
আপনি অপেক্ষা করেছেন সেটা আপনার বিষয়। কেউ আপনাকে বলেনি অপেক্ষা করে থাকতে।
আপনার আর আমার মাবুদ এক। আমাদের ধর্ম এক। আমরা মুসলিম। মহান আল্লাহ তায়ালার বান্দা। মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ ) এর উম্মত। কিন্তু আপনি আর আমি সম্পূর্ণ আলাদা জগতের মানুষ। আপনি যে পরিবেশে বড় হয়েছেন সেই পরিবেশে আমি বড় হয়নি।
.
.
.
আপনার যত তাড়াতাড়ি রাগ উঠে যায় তত তাড়াতাড়ি মাথা গরম হয়ে যায়।
আপনি খুব সহজেই একটা ভুলের জন্য আমাকে ভেঙে গুড়িয়ে দেবেন। আপনার আর আমার সম্পর্ক খুব বেশি দিন টিকবেনা। আমরা কেউ সুখী হতে পারবনা। এটাই আমাদের ভবিষ্যৎ বাণী ।
আগুন -ওর কথা শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। কত সহজেই কথা গুলো বলছে।
আমি শান্ত স্বরে বললাম- আমার ফিলিংসের কি মূল্য দেবে? আমার তোমার প্রতি ফিলিংসের কি নাম দেবে?
আমার স্পষ্ট মনে আছে তোমার আমার বিয়ের কথা।
আমার অবুঝ ছোট মনে তুমি সেই ছোট থেকেই বাসা বেধে আছো। বিয়ে নামক বাধার কাছে প্রথিবীর সমস্ত কিছু হেরে যায় যেমনটা আমি হেরে গিয়েছি।
তোমাকে আমার মনে জমা করে লুকিয়ে রেখেছিলাম।
.
.
.
আগুন এক হাত পকেটে ভরে অন্য হাত দিয়ে পাশে থাকা টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি মোমের দিকে তুলে দিলো।
মোম -ধন্যবাদ।
আগুন চোখ বন্ধ করে আবার খুলল।
মোম বিরক্তি নিয়ে অর্ধেক পানি খেলো।
বাকি অর্ধেক আগুন খেলো।
মোম -না জানি বিদেশে কত ফুলের মুধুতে ঘুরেছে কে জানে। এখন দেশে এসে দেশের ফুলের মধুতে ঘুরতে চায়।
আমি বললাম- আপনার ফিলিং টা হলো ক্ষনিকের মোহ। মোহ কেটে যাবে কিছুদিন গেলেই।
লন্ডনে না জানি কত মেয়েদের সাথে মজা করেছেন। কত ফুলে ঘুরেছেন। আর এখন দেশে এসে হঠাৎ আমার প্রতি দরদ কোথা থেকে এলো।
আগুন বলল-দূর্বল শরীরে এতো কথা বলো না। তোমার শরীর খারাপ করবে।
মোম কথা উপেক্ষা করে বলল-
আমাকে একবার নিজের মায়াজালে ফাঁসিয়ে শখ মিটে গেলে ছূরে ফেলে দেবেন ডাস্টবিনে।
আমার আর আপনার সংসার দুই দিনের বেশি টিকবেনা। আপনার লাইফ স্টাইল আমার লাইফ স্টাইল এক নয়।
আমি প্রচন্ড লেভেলের বোরিং ওল্ড মডেল।আমি একজন প্রকৃত মুসলিম পরিবারের জন্ম গ্রহণ করা মুসলিম রীতিনীতি দ্বারা বড় হয়েছি। আমার সাথে আপনার যায়না।
ঠিক এই কারণেই বাবা আর ভাইয়া আমাকে আপনার হাতে তুলে দিতে একেবারেই ভরসা পাচ্ছেন না।
.
.
আগুন – কি বলব ভেবে পাচ্ছিনা। শুনেছি স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক আল্লাহর তৈরি করা সম্পর্ক। আমাদের ছোটবেলায় বিয়ের জায়েজ আছে। পুরোনো জামানায় বালিকা মেয়েদের বিয়ে হতো। তোমার বাবা মায়েরও ছোট বেলায় বিয়ে হয়েছিল। এখনো তারা সুখের সংসার করছেন। শুনেছি আমার নানা শশুর আমার শশুরকে পছন্দ করতেন না। এতো কিছুর পরেও আমার শশুর শাশুড়ী মায়ের সংসার কিভাবে টিকে আছে??? এগুলো তোমার মা আমাকে লন্ডনে যাওয়ার আগে বলেছেন।
.
.
.
– এতো সব উওর আমি দিতে পারবনা। শুধু বলব আপনার আর আমার বাবার অনেক তফাৎ। পরিস্থিতি ভিন্ন।
সবচেয়ে বড় কথা আমি জন্মদাতা পিতার কথা অমান্য করতে পারবনা। এটা ধর্মে সইবে না।
-আর নিজের স্বামীকে অমান্য করবে?? এটা তোমার ধর্মে সয়ে যাবে?
বাহ! আমার বেলায় ধর্মে সইবে আর তোমাদের বেলায় সইবে না। চমৎকার!!!
মোম তাকিয়ে আছে। আগুন বলল- বসে কথা বলো প্লিজ। তোমার শরীর খারাপ দেখাচ্ছে। কষ্ট হচ্ছে তোমার।
মোম কিছু বলবে অমনি তার বাবাকে দেখতে পেলো।
-সর্বনাশ! বাবা এদিকে আসছে।
-সো ওয়াট?
– বাবা আমাকে আপনার সাথে দেখলে কেয়ামত ঘটিয়ে ফেলবে।
হাত ছাড়ুন।
-বলেছি তো বাসর ঘরে না যাওয়া পর্যন্ত হাত ছাড়ছিনা। আসতে তাও, দেখতে দাও উনাকে। আজ এর শেষ দেখে ছাড়ব।

-আল্লাহর দোহায় যান এখান থেকে। আমাকে যেতে দিন।
-আমি কি করবো সেটা না বলা পর্যন্ত হাত ছাড়ছিনা।
-তালাক দিয়ে দিন আমাকে।
আবার বিয়ে করুন নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী।
আগুন – ওর কথা শুনে বুক ফেটে চিৎকার আসছে। রাগে এই বুকে আগুন জ্বলতে লাগল। আমি ওর গায়ে হাত তুলতে গিয়েও তুললাম না। গায়ের জোরে লাথি দিয়ে টেবিলটা ভেঙে ফেললাম।
.
.
.
চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here