প্রিয়জন❤Part-16

0
3041

প্রিয়জন❤Part-16
Writer-Moon Hossain

আশেপাশের পরিবেশটা যেন থমকে যায় প্রিয়জন পাশে থাকেলে।
সবকিছুই ভালো লাগে প্রিয়জন পাশে থাকলে! কুৎসিত কেও চমৎকার ভালো লাগে। এই ভালো লাগার উৎস কি প্রিয়জন?
আগুন ড্রাইভ করছে।
মোম তার সাথে বসে আছে।
আজ আগুন নেকাব খুলেনি মোমের।
অন্যদিন দেখা হলেই নেকাব নিয়ে টানাটানি শুরু করে দেয়।
আজ আগুন কথাও বলছেনা।
মাঝে মাঝে গম্ভীর হয়ে তাকাচ্ছে।
মোম আগুনের সাথে থাকলে নিরীহ হরিণ হয়ে যায়। জড়োসড়ো হয়ে বসে থাকে এক কোণে।
লজ্জায় মুখ হয়ে যায় লাল। আর মনে এক ধরনের অস্থিরতা শুরু হয়ে যায়।
.
.
.
আগুনের হার্ট বিট আজ মোমের হার্টবিট এর সাথে তাল মেলাচ্ছে।
আগুনের মুখ লাল দেখাচ্ছে। চোখ জোড়াও লাল দেখাচ্ছে।
ঠিক মতো ঘুমায়নি আগুন মনে হয়।
মোম সাহস করে আগুনের দিকে তাকিয়ে এগুলো লক্ষ্য করলো।
.
.
.
দোতলা জানালার পাশে শেষের অন্ধকার টেবিলে বসে আছে মোম আর আগুন।
আবাছা নীল আলোয় স্তব্ধ পরিবেশটা খুব মনোরোম।
মোম তার স্বভাব মতোই নিরীহ হরিণের মতো বসে আছে।
মোম -উনি আমার কোন বিষয়েে রাগ করেছেন তাই হয়ত আমার সাথে কথা বলছেনা। আমার মুখ দেখতে চাচ্ছেন না। কিন্তু আমি কি করেছি।
আগুন হঠাৎ মোমের নেকাব খোলার উদ্দেশ্য এগিয়ে এলো।
আগুন বলল- আমার সাথে থাকার সময় নেকাব খোলা রাখবে। এটা তোমাকে কতবার বলতে হয়?
আমাকে তোমার মুখশ্রী দেখাবে নাতো কাকে দেখাবে শুনি?
মাইন্ড ইট!!!
মোম মাথা নাড়ালো।
আগুন মোমের পছন্দ মতো অর্ডার দিলো।
আগুন -আরুর কাছ থেকে জেনেছি মোমের কি কি পছন্দ অপছন্দ। আজব ব্যাপার হলো মোমের সাথে আমার সবকিছুই কেমন যেন মিলে যাচ্ছে।
মোম খাচ্ছে। আগুন দেখছে মোমকে।
মোম দুপুরে কিছুই খায়নি।
এমনিতেই স্বাস্থ্য এইটুকু তার উপর না খেয়ে থাকে।
ভাবা যায়!
.
.
মোম হঠাৎ বলল-আপনি খাচ্ছেন না কেন??
আপনার পছন্দের খাবার অর্ডার করেন নি এইজন্য।
আগুন একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল- আমার প্রিয়তমার মুখশ্রী দেখলে আমি সবকিছু ভুলে যায়। ঘুম আসেনা, কাজে মন বসেনা, ক্ষিদেও লাগেনা।
তুমিই বলো ক্ষিদে না লাগলে কি কিছু খাওয়া যায়?
মোমের মুখ স্বভাব মতোই লাল হয়ে গেলো। আগুনের দিকে তাকানোর সাহস নেই।
মোমের মুখের খাবার আটকে গেলো কথা শুনে।
বেচারা না খেয়ে আছে আর সে গপ গপ খাচ্ছে। কি লজ্জার কথা!
.
.
.
আগুন মোমকে পানি খাইয়ে দিল।
-ধীরে খাও প্রিয়তমা।
এখানে তোমার ছোট ভাইবোন নেই যে তুমি ধীরে খেলে ভাইবোনেরা সব খেয়ে সাভার করে ফেলবে।
.
.
মোম -উনার কথা শুনে হেসে দিলাম।
আশ্চর্য হলাম যখন উনি হাসলেন না। আজ উনার কি হয়েছে খুব জানতে ইচ্ছে করছে।
কেন ফর্সা হাস্যোজ্জ্বল মুখটা ভার করে আছেন।
নিমিষেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো যখন উনি বললেন…
-আমি লন্ডনে চলে যাচ্ছি।
আমার হাত থেকে চামিচ পড়ে গেলো।
চামিচটা অনেক ক্ষণ যাবৎ ফ্লোরে ঘুরপাক খেলো।
ঝমঝম করে আওয়াজ হয়ে মুখরিত হয়ে উঠলো রেস্টুরেন্ট।
আগুন আর মোম দু-জনেই আওয়াজটা শুনছে।
.
.
.
ড্রাইভ চলছে।
মোম-কষ্ট কি তা জানা ছিল না। আজ বুঝতে পাচ্ছি।
উনি কেন চলে যাচ্ছেন?
কি হয়েছে?
উনি কি হার মেনে নিয়েছেন?
-স্যাটেল হয়ে যাব লন্ডনে।
আগুন আচমকা এই কথা বলল।
মোমের হ্রদয় হুহু করে কেঁদে উঠলো।
মোম সবকিছু ভুলে গিয়ে মনে মনে জোরে জোরে বলতে লাগল-দয়া করে যাবেন না আমাকে ছেড়ে।
যেদিন থেকে আপনাকে স্বামী বলে জেনেছি সেদিন থেকে আমিও আপনার মতোই সম্পর্কের মায়ায় আটকে গিয়েছি।
আগুন বলল- এনি প্রবলেম?
মোম মাথা নাড়ালো।
মোমের নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। গলা আটকে গিয়েছে। মোম গলায় হাত দিয়ে নিশ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করছে।
.
.
আগুন ড্রাইভ থামিয়ে এক বোতল পানি দিলো মোমকে।
-নেকাব খুলে পানি খাও। জানালা খুলে দিচ্ছি। হাওয়া লাগতে দাও শরীরে। তাহলে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হবেনা।
মোম জানালা দিয়ে অঝরে কাঁদতে লাগল।
আগুন চলে গেলে মোমের বাবা পরেরদিন বিয়ে দিয়ে দেবে মোমের। অন্য কাউকে কিভাবে স্বামী হিসেবে মেনে নেবে মোম?
মোম বুঝতে পেরেছে আগুন তার অবস্থার কথা বুঝতে পেরেছে।
কিন্তু এতটুকুও শান্তনা দিচ্ছে না মোম কে।
মোম গাড়ি থেকে নামার সময়ও আগুন কিছুই বলল না।
মোম গেইটের কাছে গিয়ে ঝড়ের বেগে ফিরে এসে বলল- আমাকে এক মূহুর্তে পর করে দিলেন?
বাবা আর আপনি আমার জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে পারলেন?
মেয়ে হয়ে জন্মেছি বলে আমাকে খেলার পাত্র হতে হবে আপনাদের?
আমার কোন চাওয়া পাওয়া নেই?
আমাকেই কাঁদতে হবে সবসময়??
আগুন মোমের চোখের পানি মুছে দিলো আর নেকাবটা লাগিয়ে দিয়ে বলল-ভেতরে যাও দিজ ইজ মাই অর্ডার।
.
.
মোম এক দৌড়ে রুমে এসে দরজা বন্ধ করে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো।
প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে তার।
চোখ মুখ ফুলে একাকার হয়ে গিয়েছে।
আজ বাসায় কেউ নেই। সবাই মাদ্রাসায় গিয়েছেন।
কাজের মেয়ে এসে দরজা ধাক্কা দিয়ে বলল-আপাজান দুপুরে কিছুই খেলেন না।
তেলাপিয়া মাছে মশলা লাগিয়ে রেখেছি। এখন ভাজবো। টেবিলে চলুন খেতে।
মোম খুব কষ্টে কথা বলল -খাব না। তুমি খেয়ে নাও।
আর শোন বাসায় কেউ এলে আমাকে ডাকবে না।
.
.
মোম বোরখা ছেড়ে ওয়াশরুমে গিয়ে কিছুক্ষণ কাঁদলো। তারপর আছরের নামাজটা পড়ে নিলো।
তছবি নিয়ে মোম তার প্রতিটা দোয়ায় আগুন আগুন করছে।
এই মূহুর্তে আগুন ছাড়া সে আর কিছুই ভাবছেনা।
সন্ধ্যা হয়ে গেলো। রাত হয়ে গেলো তবুও মোমের কান্না থামছেনা।
রাতে মোম কিছু খেলো না।
এদিকে আগুনের সব গোছগাছ হয়ে গিয়েছে।
আগুনও রাতে কিছু খেলো না। সেও মোমের মতো বিকেল থেকে ঘর বন্ধি হয়ে রয়েছে দরজা বন্ধ করে।
আগুন -আমার লন্ডনে যাওয়ার কথা শুনে পাগলিটা খুব কষ্ট পেয়েছে।
এখন মনে হয় ওর মুক্তোদানার মতো চোখের পানি ফেলছে বেডে শুয়ে শুয়ে।
কিছু খাওয়া হয়নি আমার প্রিয়তমার।
ওর কষ্ট আমার এতটুকুও সহ্য হয়না।
মনে হয় কেউ বুকে পাথর দিয়ে আঘাত করছে।
.
.
.
মোম -আমার কথা একবারও মনে পড়বে না উনার। বিদেশি মেয়ে দেখে দেখে সব ভুলে যাবে। আমার সাথে কাটানো দিন গুলোও ভুলে খেয়ে ফেলবে শয়তান ইবলিশটা।
মোম ফ্লোরে বসে চোখের পানি ফেলছে।
মোম -আল্লাহ ঠিক কাজ করেছে। আমার সাথে এটাই হওয়া উচিৎ।
আমি একটুও সুখ দিতে পারিনি উনাকে।
উনার এতোটুকুও খুশির কারণ হতে পারিনি।
তবে এখন এতো কষ্ট কেন হচ্ছে??
উনি কি আমার কষ্ট অনুভব করতে পাচ্ছেনা।

.
মোম দুই হাত তুলে দোয়া পড়তে লাগল-
.___________________________
– দুনিয়া আখিরাতের কল্যানের জন্য দোয়া-
رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
উচ্চারনঃ “রব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাহ ওয়া ফিল আখিরতি হাসানাহ ওয়া কিনা আজাবান্নার”
অর্থ-‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে ইহকালে কল্যাণ দান কর এবং পরকালেও কল্যাণ দান কর। আর আমাদেরকে আগুনের-যন্ত্রণা থেকে রক্ষা কর।’(সুরা বাকারা- আয়াত ২০১)
কাতাদা (রাঃ) আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেছিলেন কোন দোয়া রাসুল (সাঃ) বেশি পড়তেন তখন আনাস (রাঃ) উপরে দোয়াটির কথা বলেছিলেন (মুসলিম)
মোম সবার জন্য এই দোয়াটি পড়লো ইহকাল ও পরকালের আজাব থেকে রক্ষার জন্য।
.
.
হঠাৎ বাইরে থেকে হর্ণের আওয়াজ ভেসে আসলো।
মোম চোখের পানি মুছে মাথায় উড়না দিয়ে বেলকুনিতে দাঁড়াল।
আগুন থাকলে যেমন অনুভূতি হয় এখন তেমন অনুভূতি হচ্ছে।
আশেপাশে মোম তাকিয়ে আগুনকে না দেখতে পেয়ে এবার জোড়ে জোড়ে কেঁদে উঠলো।
.
.
.
মোম কামরায় ঢুকবে তখনই আবার পেছনে তাকিয়ে আগুনকে দেখতে পেলো।
চাঁদের আলোয় দেখা যাচ্ছে লম্বা মানুষটাকে। দুই হাত পকেটে রেখে দাড়িয়ে হাসছে মোমকে কাঁদিয়ে গর্দভ, ঢ্যাঁড়সটা।
মোম নিচে গিয়ে আগুনের সামনে দাঁড়াল।
মোম আরও জোরালো ভাবে কান্না শুরু করলো ।
আগুন মোমের কাছে এসে দুই চোখের পানি মুছে দিয়ে চোখ জোড়ায় চুমু খেলো।
মোম বরফের মতো জমে গেলো। হঠাৎ ঝির ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু হলো।
এই প্রথম তার প্রিয়জন তাকে ভালোবাসার স্পর্ষ দিলো।
মোম চোখ খুলে আগুনকে হাটু ঘেরে তার সামনে বসতে দেখলো।
আগুন -ওর হাত ধরে বললাম। আজকে মহান আল্লাহ তায়ালাকে শাক্ষ্যি রেখে বলছি, আমি তোমাকে ভালোবাসি।
তোমাকে ছাড়া এক মূহুর্ত থাকতে পারবনা। তুমি ছাড়া পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে থাকতে পারবনা । তোমাকে আমি আমার জীবনসাথি হিসেবে আমার পাশে দেখতে চাই। তুমি কি হবে আমার সন্তানদের জননী???
আমদের দুটো শরীর হলেও আজ থেকে একই মনের হবে। আমরা দু-জনেই একই সাথে নিশ্বাস নেব। পৃথিবীর কেউ আমাদের আলাদা করতে পারবেনা কারণ খোদা আমাদের সহায় হবেন।
একবার হ্যাঁ বলে দেখ। পৃথিবীর সমস্ত সুখ তোমার কাছে এনে দেব প্রিয়তমা।
মোম আজ কাউকে পরোয়া না করে, পৃথিবীর সমস্ত বাঁধা ব্যবধান ছিন্ন করে আগুনকে জড়িয়ে ধরলো। আগুনও মোমকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। দু-জনেই আজ এই বৃষ্টির চাঁদনী রাতে অঝরে চোখের পানি ফেলছে।
এর পর কি হবে তা কেউ জানেনা……
.
.
.
চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here