প্রিয়জন❤Part-19

0
2692

প্রিয়জন❤Part-19
Writer-Moon Hossain

আপনার প্রিয়তমা বলছি, আমার সাথে কথা বলুন।
মোম এইটুকু বলে হাসছে রুমঝুম করে।
আগুন বেডে শুয়ে ছিলো। মোমের কন্ঠ শুনে শোয়া থেকে উঠে এদিক ওদিক তাকালো। মোমের হাসির রুমঝুম আওয়াজটা এখনো কামরায় বাজছে। মোম এখানে কোথা থেকে আসলো। আগুন মাথায় হাত দিয়ে নিজের চুলে নিজে টেনে দিল। আগুন একদিন গতকাল মোমের কন্ঠ আর হাসি রেকর্ড করেছিলো ফোনে এবং টেপরেকর্ডারে। আগুন তার ফোনের রিংটোন এ মোমের রেকর্ড করা কথা ও হাসি সেভ করেছে। এগুলো রিংটোন থেকেই আসছে। ফোনের রিংটোন শুনে ফোন রিসিভ করলো আগুন।
.
.
.
আগুন-ও আমাকে কল করেছে নিজে থেকে দেখে আমার মনটা আনন্দে নেচে উঠল।
মোম-আমার অস্থিরতা বেড়ে গিয়েছে। ফোনে উনার কন্ঠকে মনে হয় আমার ভেতর হৃদয় থেকে আসছে।
ফোনে কথা বলার অভ্যাস নেই আমার। কখনো বলিনি কোন ছেলের সাথে কথা।
.
.
আগুন-শুভ সকাল প্রিয়তমা?
মোম- নিশ্চুপ
-কি হলো কি?
লজ্জা লাগছে কি?
মোম-নিশ্চুপ
-আচ্ছা যাও কথা বলতে হবে না। তোমার মুখশ্রী থেকে ওড়নাটা সরাও।
আর লজ্জা পেতে হবেনা।
মোম মুখ থেকে ওড়নাটা সরিয়ে ফেললো।
আগুনও মোম দুজনেই চুপ করে আছে।
তাদের দুজনের হৃদয়ের স্পন্দন কথা বলছে।
আগুন নিরবতা ভেঙে বলল -তোমার হৃদয়ের স্পন্দনে আমার নাম স্পন্দিত হচ্ছে। ক্লিয়ারলি শুনতে পাচ্ছি প্রিয়তমা।
এখন থেকে ফোন করে শুধু তোমার হৃদয়ের স্পন্দন শুনব। তোমাকে কথা বলতে হবেনা।
তুমি যেদিন কথা বলতে পারবে নিজ থেকে সেদিন বলবে।
.
.
.
মোম হাফ ছেড়ে বাঁচল। আগুন তার হেল্পলেস গুলো বুঝতে পারে। মোমের বাঁধাা গুলো বুঝতে পারে। একজন মেয়ে তার প্রিয়জনের কাছ থেকে এগুলোই আশা করে।
.
.
মোম ক্লাসে বসে আগুনের কথা ভাবছে। প্রফেসর কি পড়াচ্ছেন তা দিকে কোনরকম খেয়াল নেই।
হঠাৎ প্রফেসরের জায়গায় মোম আগুনকে দেখতে পেলো।
আগুন লেকচার দিচ্ছে।
সবাই মুগ্ধ হয়ে শুনছে।
শার্টের বোতাম কোনদিনও না লাগানো বল্টু ভাইও শান্ত হয়ে শুনছে এমনকি কখনো ক্লাস না করা বিল্টুও ভাইও মন্ত্র মুগ্ধ হয়ে আগুনের ক্লাস করছে।
মোম কি হচ্ছে বুঝতে পাচ্ছেনা।
মোম-উনি কখন থেকে প্রফেসর হয়ে গেলেন? মাথায় কিছু ঢুকছেনা।
এতো সুন্দর করে ইসলামিক বুক কিভাবে পড়াচ্ছেন?
আল্লাহ কোথায় তুমি? এগুলো কি হচ্ছে আমার সাথে?
হঠাৎ প্রফেসর আগুন মোমের দিকে আসতে লাগলো।
আগুন বলল- মনোযোগ কোথায় আপনার?
হাত বাড়ান?
মোম আগুনের দিকে তাকিয়ে হাত বাড়াতেই সাথে সাথেই প্রফেসর আগুন হাতে ডাস্টার দিয়ে কষে একটা বারি দিলো।
মোম বাস্তবে ফিরে এলো।
ইসরাত নুসরাত কলম দিয়ে মোমকে খোঁচাা দিচ্ছিল।
মোম আশেপাশে তাকিয়ে দেখল আগুন নেই। সবকিছু নরমাল।
মোম নিজেই হাসছে পাগলামি দেখে।
.
.
.
মোম ভার্সিটি থেকে বের হতেই আগুনকে দেখতে পেলো হাত নাড়াচ্ছে।
মোম ইসরাত নুসরাতের সাথে আগুনের পরিচয় করিয়ে দিলো।
আগুন- শ্যালিকাদের সাথে পরিচিত হয়ে ভালো লাগল।
ভেবেছি একটাও শ্যালিকা পাব না বউ ছাড়া। এখন দুটো পেলাম।
ইসরাত নুসরাত সালাম জানালো আগুনকে।
আগুন সবাইকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে গেলো।
ইসরাত নুসরাত যেতে চায়নি।
আগুন সবার পছন্দ মতো অর্ডার করলো। সমস্যা হলো ইসরাত নুসরাত আগুনের সামনে নেকাব খুলে খাবেনা।
আগুন ওদের দুজনকে রেখে অন্য এক টেবিলে মোমকে নিয়ে বসে পড়লো।
মোম-আপনি রাগ করেছেন?
আগুন চিকেন মুখে দিতে দিতে বলল- বরং খুশি হয়েছি। বিকোজ তোমাকে একা পেলাম।
মোম-আপনি কি আপনি?
-আমি তোমার প্রিয়তম
-আপনি সবকিছুর পজিটিভ দিক ভাবুন। এটা সবাই পারেনা।
-হ্যাঁ এটা তোমার স্বামী পারে।
.
.
.
মোমকে আগুন তার চিকেনের অংশটুকু মোমকে খাওয়াচ্ছে।
আগুন -শোন প্রিয়তমা,আমি যখন তোমার সাথে থাকব তখন তুমি নিজে হাতে খেতে পারবেনা। এবং কোন কাজও করতে পারবে না।
-হায়!!আল্লাহ কেন?
আগুন বুকের পাশে হাত রেখে বলল-আমার এখানে হার্ট হয় প্রচন্ড। আমি থাকতে তুমি এতোটুকুও কষ্ট করতে পারবেনা তাই।
.
.
.
মোম নিচে তাকিয়ে রইলো।
তার চোখ দুটো ছলছল করছে।
মোম আপ্রান চেষ্টা করছে যেন চোখ থেকে পানি না পড়ে। নইলে আগুন দেখলে তার চোখ থেকেও পানি পড়তে শুরু করবে।
.
.
মোম বলল-জানেন আমাদের মহানবী গোশত খাওয়ার সময় এক কামড় খেয়ে তার স্ত্রীদের খাওয়াতেন সেখান থেকে।
এতে নাকি ভালোবাসা গাঢ় হয়।
-বলো কি? এটা আজ জানলাম। উনারা আমাদের থেকে রোমান্টিক ছিলেন। ভাবা যায়?
-স্ত্রীকে স্বামীর পাঁজর থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে বলেই স্ত্রীর প্রতি এতো ভালোবাসা জন্মে আপনাদের বুকে।
আগুন মোমের দিকে একপলকে তাকিয়ে আছে।
-এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?
-তোমায় দেখছি। তুমি অনেক জ্ঞানী । তোমার বলা ইসলামের কথাগুলো মুগ্ধ করে দেয় আমাকে প্রতিনিয়ত। প্রতিনিয়ত তোমার প্রতি আমাকে আরও দূর্বল করে দিচ্ছে প্রিয়তমা।
-জ্ঞানী কিনা জানিনা তবে আমি হলাম বিশাল জ্ঞানের ভান্ডারের একটু ধূলিকণা মাত্র।
আগুন মোমের হাত ধরে বলল-তোমার প্রতিটা কথা মধুর থেকেও মিষ্টি। তার থেকেও মিষ্টি হলো তোমার চিন্তা ভাবনা গুলো।
আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করে ভুল করিনি।
হাজার হাজার বছর তোমার জন্য অপেক্ষা করে থাকতে পারব প্রিয়তমা।

.
.
.
মোম আগুনের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলো লজ্জা পেয়ে।
আগুন মোমকে খাইয়ে দিচ্ছে আর নিজেও খাচ্ছে।
মোমের পায়ে আগুন পা রেখেছে হালকা করে।
মোম একটু নড়ে বসাতে আগুন বলল- এনি প্রবলেম?
-না কিছুনা।
মোম-দুষ্টু লোকটা এমন কান্ড করে বলছে এনি প্রবলেম?
কি আজব!!!!
উনি উনার পায়ের আঙুল দিয়ে আমার পায়ের মোজা কিছুটা নিচে নামিয়ে আঙুল দিয়ে ঘষছেন। উনার স্পষ্ট পেয়ে আমি শিহরিত হয়ে যাচ্ছি। অজানা সুখে নিজেকে হাড়িয়ে ফেলেছি।
লজ্জায় উনার দিকে তাকাতেও পাচ্ছিনা।
কি মনোযোগ সহকারে আমাকে খাওয়াচ্ছেন । পা দিয়ে কি করছেন তা যেন জানেইনা।! ভাবা যায়!!!
আমি বললাম-মুখ দেখে অনেক কে মনে হয় ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানেনা।
উনি বললেন-কিন্তু আমি পুরো মাছটাই আস্তো খেয়ে ফেলতে পারি প্রিয়তমা।
আমি রাগী লুক নিয়ে একটা হাসি দিলাম।
.
.
.
উনি আমাকে খাইয়ে শেষ করে ইসরাত নুসরাতের কাছে যেতে বললেন জিজ্ঞেস করতে আরও কিছু অর্ডার করতে এবং কোন প্রবলেম হচ্ছে কিনা তা দেখতে।
.
.
.
ওদের বিধায় দিয়ে উনি আমাকে নিয়ে ড্রাইভ করছেন বাড়ির উদ্দেশ্যে।
হঠাৎ উনি আমার নেকাবটা লাগিয়ে দিলেন।
– এখন জ্যাম শুরু হবে। লোকজন থাকবে। নেকাব লাগানোই উত্তম।
আমার এটা মনে ছিলো না কিন্তু উনি মনে রেখেছেন। উনার সব দিকেই খেয়াল থাকে।
.
.
.
উনি পুরো ড্রাইভিংয়ে অনেক মজার মজার কথা বললেন লন্ডনে কি কি তুলকালাম কান্ড ঘটিয়েছেন আর আমি মুচকি হেসে উনার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে আছি।
উনি লক্ষ্য করলে করবে। তাতে কি? আমি আমার স্বামীকে দেখছি। উফফ আমি মনে হয় উনার মতোই পাগল হয়ে যাচ্ছি উনার প্রেমে।
.
.
.
বাসার সামনে আসতেই উনি নেমে দরজা খুলে দিলেন আর আমাকে নামালেন হাত ধরে যেন আমি কুইন।
উনি আমার নেকাব খুলে আমার গালে হাত দিয়ে বললেন -আবারও বিরহ সইতে হবে।
আমি বললাম-বিকেলেই তো কম্পিউটার ক্লাসে পর দেখা হচ্ছে।

-তবুও বিরহ সহ্য হয়না এতোটুকুও।
.
.
.
বাসায় গিয়ে বোরখা খুলে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। তারপর গোসল করে নামাজ পড়ে নিলাম।
উনি এতো খাইয়েছেন তবুও বাসায় সবার সামনে খেতে হলো।
ভাইয়া একবার ভাত তুলে দিচ্ছে মুখে। আরেকবার বাবা তুলে দিচ্ছে।
আরব কি যে খুশি হচ্ছে এটা দেখে।
আরব চমকে চমকে উঠছে। মনে হচ্ছে তার সামনে কোন আশ্চর্য জনক ঘটনা চলছে।
.
.
.
উনার ম্যাসেজের কথা অনুসারে খেয়ে ঘুম দিলাম।
তারপর ম্যাসেজের আওয়াজে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়লাম। আমি ঘুমিয়ে থাকলে আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রীয় সজাগ থাকে। একটু কিছু আওয়াজ পেলেই চোখ খুলে যায়।
নামাজ পড়ে তাড়াতাড়ি বোরখা পড়লাম। হাত মোজা পড়তে পড়তে বাহিরে গেলাম।
আজকাল গাড়ি নিয়ে যাইনা। আমি বড় হয়েছি একটু স্বাধীনতা দরকার এটা সবাই বুঝেছে।
একটু এগুতেই উনার গাড়ি দেখতে পেলাম।
আমি উনার পাশে বসে আছি। উনার মুখ ভার ভার।
উনি লন্ডনে যাবেন আজকালের মধ্যে।
আমাকে ছাড়া উনি যেতে চাচ্ছেন না।
আমারও খুব খারাপ লাগছে উনাকে ছাড়া থাকতে হবে এই কথা ভেবে।
উনি আমাকে ক্লাসে নামিয়ে দেওয়ার সময় আমার কানে কানে বলল-ইচ্ছে ছিলো হানিমুনে যাব নেক্সট টাইম লন্ডনে গেলে।
উনি মুচকি হেসে সানগ্লাস পড়ে ড্রাইভিং সিটে বসে রইলেন।
.
.
.
আমি ক্লাসে এক্সাম দিলাম উনার প্রিপ্রারেশন মতো। খুব ভাল হয়েছে।
এক্সাম শেষে উনার হাস্যোজ্জ্বল মুখ খানি দেখলাম।
আমি বললাম- হাসছেন কেন?
উনি বলল-কাঁদার আগে মানুষ হাসে।
আমি মন খারাপ করলাম উনার কথা শুনে।
উনি ড্রাইভিং করছেন।
হঠাৎ গাড়ি থামিয়ে বলল -চলো না আমরা দুজন লন্ডন চলে যাই।
আমি -আমারও যেতে ইচ্ছে করছে কিন্তু আমার পরিবার।
উনি বলল-আমি যতটুকু জানি বিয়ের পর স্বামী সেবা সব। মেয়েরা স্বামীর কথা মতো চলে এবং প্রতিটি কথা স্বামীর আদেশে বলে।
উনি আবারও বললেন, মেয়েদের প্রধান ধর্ম হল, স্বামীকে সব বিষয়ে অনুসরণ করা এবং তার প্রত্যেক কথায় ও কাজে সম্মতি দিয়ে সেই মতো করা।

-আপনি ঠিকই জানেন। তবে অর্ধেকটা। বাকি অর্ধেকটা হল, স্বামী যদি স্ত্রীকে আল্লাহ ও রাসূলের (দঃ) আইনের বাইরে কোনো কাজ করতে বলে, তা হলে সে স্বামীর আদেশ অমান্য করে আল্লাহ ও রাসূলের (দঃ) আদেশ মানবে। তাতে যদি বিচ্ছেদ ঘটে তবুও। সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার উপরও ঐ একই আদেশ। মোট কথা পিতা মাতা হোক আর স্বামী-স্ত্রী হোক, যে কেউ আল্লাহ ও রাসূলের (দঃ) হুকুমের বাইরে আদেশ করলে সেক্ষেত্রে আল্লাহ ও রাসূলের (দঃ) হুকুম অগ্রগণ্য। এমন কি জেহাদের ময়দানে ছেলে পিতা মাতার বিরুদ্ধে এবং স্ত্রী স্বামীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারে এবং আল্লাহর হুকুম মোতাবেক ছেলে পিতা মাতাকে এবং স্ত্রী স্বামীকে হত্যা করতে পারে। ইতিহাসে এর বহু প্রমাণ আছে।
স্বামী যদি ধর্মের পথে না চলে তবে তাকে ত্যাগ করা জায়েজ। এক্ষেত্রে স্ত্রী তার বাবা মায়ের শরণাপন্ন হতে পারে। [সকল পাঠক পাঠিকা ভুল ধারণা মিটিয়ে ফেলুন, স্বামী হলেই স্বামীর কথায় চলার নিয়ম নেই সেই স্বামী যদি ধর্ম অনুসরণ না করে। , স্বামীকে চেষ্টা করে ধর্মের পথে আনতে হবে প্রথমে। মোম এবং মোমের বাবা আগুনের কাছে মোমকে তাই দিচ্ছেন না। মোমের স্ত্রী হিসেবে কর্তব্য তার স্বামী এবং শশুর বাড়ির লোকেদের ধর্মের পথে আনা। যেটা মোম আগুনের মাধ্যমে শুরু করে দিয়েছে ]
.
.
আগুন মোমের কাছে এসে বলল-তুমি সত্যিই মহা জ্ঞানী। আমার শশুর সাহেব সঠিক শিক্ষা তোমাকে দিয়েছেন আল্লাহ তায়ালার পথে চলার জন্য।
.
.
.
আগুন মন খারাপ করলে মোম এই প্রথম আগুনের হাত ধরল নিজ থেকে। তাকে ভরসা দিলো তার পাশে মোম আছে।
আগুন মোমকে জড়িয়ে ধরলো। মোম বাঁধাা দিলো না।
আগুন শুধু বলল-আমাকে নিজের মতো গড়ে নাও। তুমি আমার সত্তায় মিশে গিয়েছো। তোমাকে ছাড়া একটি নিশ্বাসও নিতে পারবনা। আমি বাচঁবনা তোমাকে ছাড়া প্রিয়তমা।
.
.
.
চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here