প্রিয়জন❤Part-20
Writer-Moon Hossain
ফজরের আজানের সুরেলা
ধ্বনি ভেসে আসছে…..
আগুন সপ্ন দেখে দেখে বেড থেকে সোজা নিচে পড়ে গেলো। এটা নতুন কিছু না। এদিকে মোম ভোরে অজু করতে গিয়ে ওয়াশরুমে পা পিছলে পড়ে পায়ে প্রচন্ড আঘাত পেয়েছে। আগুনের কাছে এই নিউজ এখনো যায়নি। আগুনের মন ভোর থেকেই অস্থীর ছিল।
আগুন মোমকে এতো বার ম্যাসেজ করছে তবুও মোম ম্যাসেজ সিন করছেনা। আগুন ধরে নিয়েছে মোম লজ্জায় ম্যাসেজ সিন করছেনা। মাঝে মাঝে মোম এই কান্ড করে।
আগুন-এই মেয়েটা এতো লজ্জা পায় কোথা থেকে কে জানে। সংসার করব কিভাবে ওর সাথে সেটা ভেবে আমার হার্ট অ্যাটাক হয়ে যায়।
আগুন আবার ম্যাসেজ করলো “তোমার লজ্জার কারণে আমাকে তোমার কাছে আরও টেনে নিয়ে যায় প্রিয়তমা। সাথে সাথে মনে হয় তোমার লজ্জার কারণে কখনো বাবা হব কিনা সন্দেহ আছে। এই লাইফে সন্তানের মুখ আর দেখতে পাবনা।
আগুন ম্যাসেজ সেন্ড করে অফিসে চলে গেলো।
আগুনের মা রুমে গিয়ে খাবারের প্লেট দেখতে পায়।
যেমন ব্রেকফাস্ট রেখেছিল তা তেমনই আছে।
.
.
.
আগুন মোমকে না খাইয়ে কখনো খায়না। মোম আর আগুন দূরে থাকলেও তারা একই টাইমে টাইম ফিক্সড করে খাবার খায়।
কাছে থাকলে আগুন মোমকে খাইয়ে দেয় নিজ হাতে।
মোম মাঝে মাঝে দুষ্টুমি করে আঙুলে কামড় দেয় আগুনের তখন আগুন কিছু বলেনা।
আগুন মুচকি হেসে মনে মনে ভাবে -ছোট থেকে এখন বড় হওয়া পর্যন্ত যতগুলো কামড় আমাকে দিয়েছো প্রিয়তমা তত গুলো কামড় মুনাফা সহ উশুল করব তোমার থেকে।
দাও দাও আরও কামড়। এরপর তো আমার মুনাফা আর মুনাফা।
.
.
.
মোম পায়ে বেশ আঘাত পেয়েছে। বিছানায় শুয়ে শুয়ে ব্যথায় কাতরাচ্ছে তবুও হাসপাতালে যাবেনা জেদ ধরেছে।
.
.
.
মোম বার বার মনে মনে আগুনের নাম নিচ্ছে।
মোমের পায়ে তার ভাই আশরাফ প্রাথমিক চিকিৎসা করেছে। মোমের বাবা মা কেউ বাড়ি নেই। তারা একটা মাদ্রাসায় গিয়েছে। ওখানকার বাচ্চাদের সাথে রাতে ডিনার করে ফিরবে।
আয়েশা গরম পানি করছে মোমের জন্য।
আরব মোমের পাশে বসে বসে খেলছে।
আগুন ক্যাবিন থেকে বের হওয়ার সময় প্রচন্ড লেভেলের চোট পেলো মাথায়৷
আগুন মাথায় হাত দিয়ে ভাবল -আমার প্রিয়তমার কিছু হলো নাতো? ও এতোটা কেয়ারলেস নয়। জানে ওর সাথে কথা না হলে আমার দিন কাটেনা। কাজে মন বসেনা। এক ফোটা পানিও গলা দিয়ে যায়না।
.
.
.
আগুনের কিছু সুন্দরী স্টাফ আছে। তারা আগুনকে হেল্প করার জন্য এগিয়ে এলো।
সবাই আগুনের কাছাকাছি আসার জন্য পাগল। আগুন এতোটা সুদর্শন যে মনে হয়না বাংলাদেশের ছেলে। মনে হয় আরবীয় বা মিশরীয় ছেলে।
মেয়ে স্টাফরা সবাই আগুনকে সারাক্ষণ স্ক্যান করে। আগুনের ঠিক জোড়া লাল টকটকে। ইতোমধ্যে আগুন নিক দিয়ে হয়েছে লাল টকটকে স্যার।
.
.
.
আগুন -লক্ষ্য করছি আজকাল বাংলাদেশের মেয়েরা বিদেশি মেয়েদের চেয়ে কম না। সুন্দরী মেয়েরা আরও সুন্দরী হওয়ার জন্য এতো সাজগোছ করে যে আসল সৌন্দর্য হারিয়ে যায়।।
কেমন নকল নকল মনে হয়।
তবে সবার থেকে আমার প্রিয়তমা সবচেয়ে আলাদা।
এমন নিখুঁত সুন্দরী নেই বললেই চলে।
কোন রকম সাজগোছ ছাড়াই আমার প্রিয়তমা সবচেয়ে সুন্দরী। আর হবেই না কেন ওর সৌন্দর্য পর্দার আড়ালে আমানত হিসেবে সবার কাছ থেকে লুকিয়ে রেখেছে আমার জন্য। ওর মুখশ্রী থেকে নূরের ছটা বের হয় প্রতিনিয়ত। সুন্দরীদের সেরা সুন্দরী আমার প্রিয়তমা।
.
.
.
আগুনের চোখ মোম ছাড়া অন্য কিছুর দিকে তাকিয়ে দেখতে চায়না।কাউকে তার সহ্য হয়না ।
.
.
.
মোম ব্যাথায় কাতরাচ্ছে। আশরাফ গিয়েছে লেডি ডক্টর আনতে।
আগুন মাথায় চোট নিয়ে মিটিং শেষ করলো। মিটিং শেষ হতেই আগুন সেন্স হারালো। মাথায় চোট একটু বেশি পরিমাণ লেগেছিল। ব্লিডিং হয়নি বাট অনেকটা ফুলে গিয়েছে।
.
.
.
আগুনের সেন্স বিকেলে ফেরার পর পাশে বাবা মা আর বোন আরুকে দেখতে পেলো। আগুনের সেন্স ফিরতেই আরু বলল-দেখো তো দাদাভাই আমাকে কেমন লাগছে? তোমাকে অনেকে দেখতে এসেছিল তাই আমাকে সাজতে হয়েছে যেন তোমার প্রেস্টিজ রক্ষা হয়।
.
.
.
আগুন সহ সবাই হেসে ফেললো।
আগুন ক্লিনিকের বেডে শুয়ে মোমকে ফোন করল।
সারাদিন মোমের কোন খোঁজ নেই।
আগুনের হার্টবিট বাড়ছে প্রতিনিয়ত।
কেন যেন মনে হচ্ছে মোমের কিছু হয়েছে। বাসায় যাওয়া যাবেনা তাতে মোমের প্রবলেম হতে পারে।
তা না হলে আগুন ক্লিনিকে শুয়ে থাকতে পারত না। তার যত বড় এক্সিডেন্ট হোক না কেন মোমকে দেখার জন্য কাউকে পরোয়া করতো না।
.
.
.
আগুন মোমকে ফোন করছে। মোমের ফোনের রিংটোন বাজছে।
মোম হাত বাড়িয়েও ফোনটা রিসিভ করতে পাচ্ছেনা কারণ তার ফোন বেড থেকে দূরে সোফায়। আরব বেলকুনিতে খেলছে। মোমের গলা দিয়ে কথাও বের হচ্ছেনা।
মোম জানে আগুন কল করছে বার বার।
আগুন এতো বার কল করছে মোম রিসিভ করছেনা এটা দেখে আগুন প্রচন্ড রেগে গেলো।
কিছুক্ষণ ফোনটা সুইচ অফ করে রেখে আবার কল শুরু করলো। মোম ব্যাথা ভুলে গিয়ে ফোন রিসিভের জন্য বিছানা থেকে উঠার চেষ্টা করছে তবুও পেরে উঠতে পাচ্ছেনা সে।
মোমের চোখ থেকে পানি পড়ছে। আশেপাশে কেউ নেই যে বলবে ফোনটা দিয়ে যেতে। ভাবীকে বলা যাবেনা কেননা প্রিয়তম স্বামী দিয়ে নাম্বার সেভ করা। ভাবী যদি জানে আগুনের সাথে মোমের যোগাযোগ আছে তাহলে ভাইয়ার কাছে বলে স্ত্রীর কর্তব্য পালন করবে আর ভাইয়া সোজা মোমের বাবা আরমান কে বলে পুত্রের কর্তব্য পালন করবে।
মোমের বাবা জানতে পারলে কেয়ামত ঘটিয়ে ফেলবে।
মোমের নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে।
মোমের মনও ছটফট করছে আগুনের জন্য। মনে হচ্ছে কিছু একটা ঠিক হচ্ছেনা।
আগুন মোমের সাথে কথা না বলতে টেনশন হয় আগুনের সেটা মোম জানে।
আগুন এবার তার ফোনটা ফ্লোরে ছূরে মারলো।
তখনই মোম বেড থেকে নিচে পড়ে সেন্স হারালো।
আগুন মোমের উপর রাগ ভুলে গিয়ে ফ্লোর থেকে ফোনটা তুলে ঠিক করে আবার ফোন করলো।
ঠিক তখনই ফোন রিসিভ করলো আয়েশা।
আয়েশা আগুনকে সব খুলে বলল। আগুন ঝরের বেগে ড্রাইভ করছে। আগুন সামনে কি হবে তা না ভেবে সবকিছু ভুলে একজন লেডি ডক্টর নিয়ে এলো মোমের বাসায়। আশরাফ এখনো আসেনি ডক্টর নিয়ে। আগুনের কাছে সবার আগে মোমের ভালো থাকা।
মোমকে দেখে আগুন পাগল হয়ে গেলো।
মোমের হাত ধরে আগুন বলল-ফরগিভ মি প্রিয়তমা। আমি তোমার উপর রাগ করতে বসেছিলাম। তোমার এই সিচুয়েশন কতটা যন্ত্রণা দিচ্ছে আমায় তা যদি জানতে। লেডি ডক্টর মোমের পায়ে প্লাস্টার করে প্রেসক্রিপশন লিখে দিলো।
মোমের সেন্স এখনো ফেরেনি।
মোমকে দেখে মনে হচ্ছে একটা রাজকন্যা শুয়ে আছে ফুলের বিছানায়।
যেন রাজকন্যাকে কেউ বিছানায় বন্দী করে রেখেছে। মোমের ফর্সা শরীর লাল হয়ে গিয়েছে ব্যথায়। মনে হচ্ছে শরীর থেকে লাল টকটকে আভা বের হচ্ছে মোমের। এমনিতেই মোমের গা থেকে লাল টকটকে আভা বের হয় আর এখন একটু বেশি মনে হচ্ছে লাল আভা টুকু।
.
.
মোমের ভাবী আয়েশা কিছু বলছেনা। আড়াল থেকে চুপচাপ আগুনের কান্ড দেখছে। ছেলেমানুষ এভাবে কাঁদে তা যদি হয় আগুনের মতো বিদেশে পড়ুয়া কোন স্ট্রং ছেলে তাহলে তা দেখার মতো।
.
.
.
আগুনের মাথা ব্যাথা করছে প্রচন্ড তবুও তার এদিকে খেয়াল নেই।
মোম সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত সে কিছুতেই মোমের কাছ থেকে দূরে যাবেনা। মোমের দুই হাত আগুন তার বুকের সাথে মিশিয়ে রেখেছে।
আগুন-প্রিয়তমা আমার কন্ঠ তুমি শুনতে পাচ্ছো।
আমি কবর থেকেও তোমাকে কন্ঠ শুনতে পারব। তুমিও নিশ্চয়ই শুনতে পাচ্ছো আমাকে। দেখ আমি তোমার পাশে তোমার কাছে বসে আছি। চোখ খুলে আমাকে দেখ।
মোমের পুরো পা হাঁটু পর্যন্ত প্রচন্ড রকমের ফুলে ফেঁপে রয়েছে।
আগুনের মোমের পা দেখে কষ্ট মরে যাওয়ার উপক্রম।
.
.
মোমের জ্ঞান ফিরছে।
মোম-ইয়া আল্লাহ পা বড্ড ব্যথা করছে। মাথাটা ভার ভার করছে। আমি উনাকে ফিল করতে পাচ্ছি। এখুনি সপ্ন দেখেছি উনি আমার হাত ধরে বসে আছে।
আগুন-প্রিয়তমা কেমন লাগছে?
উনার কন্ঠ শুনে নিমিষেই সব ব্যাথা ভুলে গেলাম।
সপ্ন নয় সত্যি উনি আমার পাশে। আমার কাছে।
আমি উনাকে দেখে খুশিতে কেঁদে দিলাম।
উনি আমার চোখের পানি মুছে দিল। উনার আঙুলের ডগায় আমার চোখের পানি নিয়ে বলল-তোমার চোখের এক ফোটা পানি হলো মুক্তো দানার মতো। আমার কাছে খুব মূল্যবান।
আমার সহ্য হয়না তোমার চোখের পানি।
.
.
উনি আমার কপালে চুমু দিয়ে আমার হাত উনার বুকে রেখে বলল -এই বুকে হাত রেখে দেখ কতটা জোরে হ্রদ স্পন্দিত হচ্ছে তোমার জন্য।
আমার চোখের পানি এবার খুশিতে ঝরছে।
-এখনই তোমার ব্যথা ভালো হয়ে যাবে। একটা ম্যাজিক দেখাব আমি দাড়াও।
উনি আমার ব্যান্ডেজ করা পায়ে অনেক গুলো চুমু দিলো।
আল্লাহর রহমতে উনার ঠোঁটের স্পর্শে আমার পায়ের ব্যথা অনেকটা কমেছে।
উনার কপালে চোখ গেলো আমার।
আমি অস্থির হয়ে গেলাম উনার কপাল ফোলা দেখে।
আগুন-ওকে সেন্সলেস হয়ে হসপিটালে যাওয়ার কথাটা বলিনি কারণ ওর টেনশন হবে।এই অবস্থায় টেনশন ও নিতে পারবে বাট ওর শরীর নিতে পারবেনা।
আমি ওকে বললাম -ডোরে লেগে সামান্য ব্যথা পেয়েছি।
তবুও ও অস্থির হয়ে হেলো। পায়ে ব্যাথা নিয়ে মলম খোঁজে আনার জন্য উঠতে চাইলো এই শরীরে।
আমি ওর গালে হাত দিয়ে বললাম- আমি ঠিক আছি। নিজের দিকে চেয়ে দেখ কি অবস্থা তোমার। তোমার জায়গায় আমার পা ভেঙে গুড়ো হয়ে গেলেও আমি এতোটা আঘাত পেতাম না।
মোম আমার ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বলল- এমন কথা আর বলবেন না। আপনার সব বিপদ আমার উপর দিয়ে যাবে তবুও সুস্থ থাকবেন আপনি।
.
.
মোম এই সিচুয়েশনেও জোর করে মলম লাগিয়ে দিলো। আমাকে বাধ্য হয়ে ওর কাছে ওর ফাস্ট এইড বক্সটা খুঁজে দিতে হলো।
বিকেল হয়েছে ওর ক্ষিদে পেয়েছে, সকাল থেকে এই সিচুয়েশনে নিশ্চয়ই কিছু খাওয়া হয়নি ওর। আমি মোমকে ওর ভাবী আয়েশার বানানো স্যুপ খাইয়ে দিচ্ছি আর ও আমাকে না খাইয়ে খাবেনা জেদ ধরেছিল তাই আমাকেও খেতে হচ্ছে।
কি পাগল জেদি বউ আমার প্রিয়তমা!!!!
মোম-আমাকে অবাক করে দিয়ে উনি বললেন- রোগ মুক্তির অত্যান্ত কার্যকরী দোয়া-
أَذْهِبِ الْبَاسَ رَبَّ النَّاسِ، اشْفِ وَأَنْتَ الشَّافِي لاَ شِفَاءَ إِلاَّ شِفَاؤُكَ، شِفَاءً لاَ يُغَادِرُ سَقَمًا ”
উচ্চারনঃ ‘‘আযহিবিল বা’স, রববান্না-স, ইশফি আন্তাশ শা-ফী, লা শিফা-আ ইল্লা শিফা-উক, শিফা-আল লা য়ুগা-দিরু সাক্বামা।’’
অর্থঃ কষ্ট দূর করে দাও। হে মানুষের রব, আরোগ্য দান কর, তুমিই একমাত্র আরোগ্যদানকারী। তোমার আরোগ্য ছাড়া অন্য কোন আরোগ্য নেই। এমন আরোগ্য দান কর যা সামান্যতম রোগকেও অবশিষ্ট না রাখে। (বুখারি- ৫৬৭৫)
উনি এক দমে দোয়া অর্থ সহ দোয়া পড়ে বললেন- প্রিয়তমা দোয়া পড়েছি এখুনি তুমি ভালো হয়ে যাবে,সব ব্যথা দূর হবে ইনশাআল্লাহ।আমি উনার দিকে তাকিয়ে আছি। কিভাবে সম্ভব এটা? অবিশ্বাস্য!!!!
চলবে…….