প্রিয়জন❤Part-21

0
2692

প্রিয়জন❤Part-21
Writer-Moon Hossain

মোমের সব চিন্তা ভাবনা এলোমেলো হয়ে গেলো।
মোম অস্বাভাবিক ভাবে আগুনকে দেখছে।
আগুন- প্রিয়তমা আমাকে নতুন দেখছো নাকি?
মোম তবুও তাকিয়ে কিছু বোঝার চেষ্টা করছে।
আগুন- আমি যে এতো সুদর্শন জানতাম না। আমার সুন্দরী বউ এভাবে আমাকে দেখছে এটা আমার সৌভাগ্য।
মোম -আমি শান্তস্বরে বললাম… আপনার মাথা ব্যথা কমেছে?
উনি মাথায় কয়েকটা দিয়ে বলল- কি জানি, জানিনা।
-ব্যথা বিয়েও মজা করছেন?
-আমি বুঝতে পাচ্ছিনা আধ মাথা ব্যথা করছে নাকি করছেনা।

উনি আমার গালে হাত দিয়ে বলল- আমার প্রিয়তমার এই হালের সময় আমার মৃত্যু হলেও বুঝতে পারব না আমার কি আধ মৃত্যু হয়েছে নাকি বেঁচে আছি।
-এতো কেয়ার কেনো করেন ?
উনি কিছু না বলে মুচকি হাসছে।
.
.
-জানেন আমাদের ইসলাম ধর্মে মুচকি হাসি সুন্নত”
আপনার মুচকি হাসিটা আমার খুব ভালো লাগে সব সময় এমন করে হাসবেন।
“মহানবী( সাঃ) মুচকি হাসতেন। মুচকি হাসা সুন্নত (সহীহ্ বুখারী)
আগুন -হাসি নিয়েও কোন হাদিস আছে তা প্রিয়তমা জন্য জানতে পারলাম।
মোম আগুনকে জিজ্ঞেস করতে চেয়েছিল সে ঐ দোয়াটা কোথা থেকে শিখেছে বাট জিজ্ঞেস করলো না কারণ আগুন যদি কিছু মনে করে বসে।
আগুন মোমের জন্য দোয়া শিখে সেটা বলেছে এটাই মোমের জন্য বড় পাওয়া।
কিছু রহস্য থাকুক না তাদের মাঝে।
জিজ্ঞেস করে রহস্যটা নষ্ট করা ঠিক নয়।
.
.
.
আগুন -আজ অনেকটা সময় ওর সাথে কাটালাম।
ওর পায়ের সিচুয়েশন এখন কিছুটা ভালো তবে বেশ ফোলা রয়েছে।
ওকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছেনা। ওর খেয়াল রাখতে ইচ্ছে করছে ওর পাশে থেকে।
ও অনেকটা ভয়ে আছে মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে।
এসময় স্বামী হিসেবে ওর পাশে থাকা আমার কর্তব্য।
.
.
মোম- আচ্ছা ভাবি কি কিছু বলেছে আপনাকে?
আগুন- বলার মতো কিছু করেছি নাকি?
-না মানে আপনার এখানে আসা আর আমার পাশে থাকা।
মোম-উনি আমার ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বললেন -হুঁশশ, নো টক, নো টেনশন,অনলি রিলেক্স এন্ড স্লিপিং।
আমি কিভাবে এলাম, ভাবি কি ভাবলো এন্ড তোমার ফ্যামিলি আমাকে তোমার পাশে দেখলে কি ভাববে তা আমার উপর ছেড়ে দাও প্রিয়তমা।
তোমার এখন একটাই লক্ষ্য তা হলো পুরোপুরি ভাবে সুস্থ হওয়া, ডো ইউ গট ইট প্রিয়তমা?
আমি মাথা নাড়ালাম খানিকটা।
.
.
.
উনি একটা পেপারে নীল বল পয়েন্ট দিয়ে কখন কি কি ঔষধ খাওয়াতে হবে তা লিখে কাশি দিয়ে পর্দার পাশে দাঁড়ানো ভাবিকে উদ্দেশ্য করে বলল-সিস্টার -ইন-লো আমার লাইফকে আপনার হাতে সপে দিলাম।
আমি সব সময় টেনশনে থাকব এখন থেকে যতক্ষণ পর্যন্ত আমার লাইফ, আমার প্রিয়তমা সুস্থ না হয়ে উঠে।

উনি যাবার সময় আমাকে বলল- বড্ড পেইন হচ্ছে এখানে?
আমি বললাম কোথায়?
উনি আমার হাত উনার বুকে নিয়ে বললো -এখানে, বুকের বাম পাশে, যেখানে আমার প্রাণ থাকে।
আমি লজ্জায় স্বভাব মতো লাল গোলাপি হয়ে গেলাম।
উনি যাবার আগ মূহুর্তে হঠাৎ উনার হাত ধরেও ছেড়ে দিয়ে বললাম-আরেকটু থাকলে কি হয়?
উনি আমার ধরা হাত বুকে নিয়ে বললেন- আমার শশুর সাহেব এবং বড় শ্যালক সাহেব দেখলে কেয়ামত হতে পারে।
আমি অভিমানী করে বললাম -আপনিই তো বললেন এসব আপনি দেখবেন। বাবা, ভাইয়া দেখলে সামলে নেবেন।
উনি হাটু ঘেরে আমার হাত ধরে বললেন- আমি তোমার পাশে প্রতি সেকেন্ড থাকতে পারি তাতে কেউ আমাকে ঠেকাতে পারবে না তবে তোমার টেনশন হবে। তুমি এই কন্ডিশনে যা করব আমি তা সহ্য করতে পারবে না। এখন চলে যাচ্ছি বিকোজ ফুল লাইফ তোমার সাথে থাকার জন্য পড়ে আছে।
আমার কপালে একটা ভালোবাসার পরশ দিয়ে উনি দরজার কাছে গিয়ে বললেন- তুমি ঠিক না হওয়া পর্যন্ত আমি ঘুমুতে পারবনা। তোমার ব্যথা গুলো আওয়াজ সোজা এই বুকে বিধ্বস্ত হবে প্রিয়তমা।
.
.
.
আশরাফ ডক্টর আনতে গিয়ে ট্রাফিক নিয়ম ভেঙেছে যার কারণে তাকে থানাতে যেতে হয়েছে। বোনের জন্য তার মন ছটফট করছে।
বেচারি কি ভাববে, ভাইয়া তার আদরের বোনের জন্য একটা লেডি ডক্টর যথা সময়ে নিয়ে উপস্থিত হতে পারলো না।
আশরাফ থানাতে থাকা অবস্থায় আয়েশা ফোন করে বলেছে লেডি ডক্টর পাওয়া গিয়েছে এবং মোম বিপদ মুক্ত।
আশরাফ বাসায় এসে মোমকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখলো। বেচারি আজ কত কষ্টই না পেলো।
আশরাফ নিজে বোনের জন্য ডক্টর আনতে পারেনি তাই আর জিজ্ঞেস করলো না কে নিয়ে এসেছিল ডক্টর কে। আয়েশা ভয়ে ছিল স্বামীকে কি বলবে।
আয়েশা যখন দেখলো আশরাফ কিছু বলছেনা তখন নিশ্চিত হয়ে দুই রাকাআত নফল নামাজ পড়ে টেনশন ফ্রী হলো।
আয়েশা বিপদে পড়ার আগে বা পরে সবসময় এই কাজটাই করে।
.
.
.
আগুন- রাত হয়েছে। ও নিশ্চয়ই ঘুমিয়ে পড়েছে। ওর সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে।
ওর এখন কি সিচুয়েশন তা জানতে ইচ্ছে করছে।
জেগে থাকলে ও নিশ্চয়ই ব্যথা অনুভব করে। ফোন করে ঘুম ভাঙিয়ে ব্যথা দেওয়া ঠিক হবে কি?
মোম- আমি নিশ্চিত উনি ঘুমান নি। ফোন হাতে নিয়ে বসে আছে।
উনি যাওয়ায় পর থেকে এপর্যন্ত প্রায় ১০ মিনিট পর পর কল করে আমার খবর নিয়েছেন।
আমি কিছু বলিনি, উনিই গড় গড় করে কথা বলেছেন। উনি বলেছেন আমি যেন ঘুমিয়ে থাকি তাহলে ব্যথা কম পাব অথচ নিজেই একটু পর পর ফোন করে আমার ঘুম ভাঙিয়ে বলছেন-এখনো ঘুমাওনি কেনো? তুমি এমন বাঁকা মেয়ে কেন? একটা কথাও শুনো না। কি পাগল উনি!!
.
.

মোমের সাত দিনের ভেতর ঠিক হয়ে গেলো মোটামুটি। আগুন মোমের প্রতি মিনিটের খোঁজ রেখেছে যে ঠিক না হয়ে উপায় নেই। মোমের থেকে আগুনের টেনশন বেশি ছিল। আগুন ভয়াবহ একটা সপ্নও দেখে ফেলল। মোম পা লোলা হয়ে গেল আর মোম একেবারেই হাটতে পাচ্ছেনা। আগুন মোমকে নিয়ে কোথাও বের হতে পাচ্ছেনা। মোম বলে-শুনুন,ল্যাংড়া লোলা বউ কোলে নিয়ে ঘুরতে আপনার লজ্জা না লাগতে পারে কিন্তু আমার হ্যান্ডসাম স্বামী তার অমন লোলা বউকে নিয়ে ঘুরে বেড়াবে এটা আমি মেনে নিতে পারবনা।
আগুন মোমকে সপ্নের কথা বললে মোম হেঁসে কুটি কুটি হয়ে গেলো। । আগুন লন্ডনে যাওয়ার ডেট মোমের সুস্থ হওয়া পর্যন্ত পিছিয়েছে।
আগুন দূরে থেকেও মোমের খেয়াল রেখেছে। ঔষধ খাওয়ায় সময়ে ম্যাসেজ করেছে। খাবার খাওয়ার সময়ে ম্যাসেজ করেছে।
দশ মিনিট পর পর ম্যাসেজিং আর কল করে মোমকে জ্বালিয়ে মেরেছে আগুন।

মোমের পা ঠিক হয়েছে মোটামুটি।
-ফোলা কমেছে পুরোপুরি?
আগুন নিচে হাটু গেড়ে বসে মোমের পায়ের মোজা খুলে কথাটা বলল।
-বলতে পাচ্ছিনা।
-ঠিক ঠিক বলো প্রিয়তমা?
-আমি নিজেও বুঝতে পাচ্ছিনা ফোলা কমেছে না বেড়েছে।
আগুন বলল-আমার কথা আমাকেই ফেরত দিচ্ছো?
আগুন -ওর পা দেখে মনে হচ্ছে ফোলা কমেছে। পা যেমন লাল হয়েছিল সেরকম আর নেই।
ব্যথা আছে নাকি কে জানে। বলে তো ব্যাথা নেই। না জানি ওর কত কষ্ট হয়েছে যখন যখন পা ব্যথা করতো।
আমি খাবার অর্ডার দিয়ে তাকিয়ে আছি ওর দিকে। আজ সাতদিন হলো ওকে দেখিনি।
ওর হাত ধরে বললাম- তোমাকে জনম জনম ধরে দেখিনি। এখন স্বাদ মিটিয়ে দেখব।
মোম-উনি এমন ভাবে তাকিয়ে আছেন যেনো মনে হচ্ছে সত্যি সত্যি জনম জনম ধরে আমাকে দেখেনি। আমিও যদি উনার মতো উনার দিকে তাকিয়ে থাকতে পারতাম। আমিও এই সাতদিন উনাকে না দেখে কিভাবে ছিলাম আমার আল্লাহ জানেন।
উনি চোখ বন্ধ করে থাকলে অবশ্য তাকিয়ে স্বাদ মেটাতাম।
খাবার আসতেই আমি চামিচ হাতে নিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে আবার চামিচের স্থানে চামিচ রেখে দিলাম।
উনি বলেছিলেন- আমি তোমার সাথে থাকাকালীন আমার হাতে খাবে।
উনি আমাকে খাইয়ে দিচ্ছেন। স্যুপের মধ্যে প্রচুর সবজি ছিল।
উনি বললেন-তোমার শরীরের জন্য সবজি খাওয়া আবশ্যক।
তাছাড়া…
-তাছাড়া কি??
-না থাক
-থাকবে কেন?
-লজ্জা লাগবে
-আপনার?
উনি হাসি দিয়ে ফিসফিস করে বলল- তোমার স্বামীর লজ্জা বলতে কিছুই নেই। আমি যেখানে বড় হয়েছি সেখানে নামে সভ্যতার চেয়ে অসভ্যতা বেশি। এটা তোমার মাথায় ঢুকিয়ে নাও।
.
.
.
আমি মাথা নাড়িয়ে নিচে তাকিয়ে উনার হাতে খাওয়ার সুখ টুকু অনুভব করছি।
উনার হাতে খেতে দারুণ লাগে। মনে হয় অমৃত খাচ্ছি।

.
.
উনাকে আমার খাইয়ে দিতে গেলে লজ্জা লাগে তাই উনি খেয়েছে কিনা তা জিজ্ঞেস করে খাল কেটে ইবলিশ আনার মানে হয়না।
খাওয়া শেষে উনি আমার খুব কাছে এসে কানে কানে বলল- তোমার প্রচুর পরিমাণের সবজি খাওয়া মানে কিউট কিউট বেবিদের জন্ম দেওয়া।
উনার কথা শুনে আমি উনার কথা মতোই লজ্জা পেয়ে রেস্টুরেন্ট এর বাহিরে তাকালাম।
আগুন-রেস্টুরেন্টের নীলাভ মৃদু আলোয় ওর লজ্জা মিশ্রিত মুখশ্রী আমাকে পাগল করে দিলো।
আমি ফিসফিস করে বললাম- আমাদের মাধ্যমে যদি কিছু নব জন্ম হয় তাতে তোমার আপত্তি আছে?
.
.
.
মোমের হঠাৎ একদিন প্রচন্ড জ্বর হয়।
আগুন অস্থিরতা নিয়ে বার বার ফোন করে খোঁজ নিচ্ছে মোমের।
আগুন মোমের কপালে হাত দিয়ে বলে -জ্বর তোমার হতে হলো কেন?
মোম বলে – এটা এবার কেমন কথা। মানুষ মাত্রই জ্বর।
আগুন মোমকে রাস্তার সাইডে নিয়ে গিয়ে বলে – আমার প্রিয়তমার জ্বর হবে কেনো? হলে আমার হবে।
মোম হেসে বলল- জ্বর হওয়া ভালো।
আগুন রেগে বলল- জ্বর হওয়া নিয়েও নিশ্চয়ই হাদিস আছে। বলো বলো শুনছি। আগুকে অবাক করে দিয়ে মোম বলল-
“জ্বরকে গালি দিওনা! কারণ জ্বর গোনাহ দূর করে ” (মিশকাত ১৫৮৩)
-কি হলো তাকিয়ে আছেন কেন?
-বরাবরই তোমার কাছে হার মানতে হয় আমাকে।
তুমি সবকিছুর এতো সুন্দর সুন্দর ব্যাখ্যা দাও কিভাবে হাদিস দিয়ে।
-শুনুন ইসলাম হলো পূর্নাঙ্গ জীবন যাপনের ধর্ম। সবকিছুর ব্যখ্যা আছে ইসলামের হাদিসে।
-তোমাকে স্যালুট মোম।
আগুন সত্যি সত্যি রাস্তার সবার সামনে স্যালুট করলো। চারপাশের মানুষ গুলো হতভম্ব!!
-হয়েছে হয়েছে হাত নামান। পাগল স্বামী কপালে জুটেছে বুঝেছি।

.
.
আগুন লন্ডন যাওয়ার আগের দিন মোমকে বলল- আচ্ছা তোমাকে পাওয়ায় জন্য আমাকে আর কত ধৈর্য ধরতে হবে প্রিয়তমা?
মোম বলল- ,,,,রাসুল (সা:) বলেছেন,ধৈর্য এমন গাছ.যার সারা গায়ে কাঁটা কিন্তু ফল অত্যন্ত মজাদার।।হে আল্লাহ, আমাদের কে ধৈর্য ধরার তৌফিক দিন।।আমিন।।

আগুন মোমকে স্যালুট দিয়ে রোডের মাঝখানে হাঁটু গেড়ে বলল- প্রিয়তমা মহানবী (সাঃ) ঠিক বলেছেন। আমি তোমার জন্য মৃত্যুর আগে পর্যন্ত ধৈর্য ধারণ করে থাকব।
তোমাকে খুব ভালোবাসি প্রিয়তমা।
.
চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here