প্রিয়জন?Part-23

0
2382

প্রিয়জন?Part-23
Writer-Moon Hossain

আকাশ খুব মেঘলা যেন আকাশে ভালোবাসার মেঘ ঘুরে বেড়াচ্ছে।
রাত হয়েছে এখনো মোম জায়নামাজ থেকে উঠেনি। সেই দুপুর থেকে বসে আছে মোম জায়নামাজে।
তার একটু দুশ্চিন্তা হচ্ছে আগুনের জন্য। আগুন ঢাকা আসার মোম ফোন করে বসে।
আগুন ফোন সাথে সাথে রিসিভ করে – কি ব্যাপার গরীবের ফোনে ধনীর কল? আমি সপ্ন দেখছি নাতো?
মোমের নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আছে। মোম শান্তস্বরে বলল-এখন কোন মজা নয়। আমার কেমন কেমন যেনো লাগছে।
আগুন-কেমন, কেমন?
মোম থেমে থেমে বলল-এই কয়েকদিনে আপনি হঠাৎ করেই আমার মনে জায়গা করে নিয়েছেন অনেক টুকু জায়গা জুড়ে।
আপনি আমার প্রতিদিনের সকাল, দুপুর, বিকেল, সন্ধ্যা, রাত এমনকি মধ্যরাতেরও অংশীদার হয়ে গিয়েছেন।
এগুলো মূহুর্ত আমি আপনাকে ছাড়া এখন কিভাবে কাটাবো?
.
.
.
_ তুমি আমাকে তাহলে ভালোবাসো না?
-মানে?
-অনেক টুকু জায়গা জুড়ে তোমার মনে জায়গা করে নিয়েছি বাট পুরোটা নিতে পারিনি। তুমি আমাকে এখনো ভালোবাসতে পারোনি?
তুমি ভালোবাসার ক্ষেত্রে এতো কিপ্টে কেন প্রিয়তমা?
-শুনুন, কিপ্টে থাকলে লাভবান হওয়া যায়। আপনি তো কিপ্টে নন তাই…
-তাই কি বলো?
-আমাকে বেশি বেশি ভালোবাসবেন।
লাইন কেটে যাওয়ার শব্দ হলো। আগুনের প্রিয়তমা লজ্জা পেয়েছে তাই লাইন কেটে দিয়েছে। এটা ভেবে আগুন মুচকি হাসি দিলো বিরহের যাতনা চাপা দিয়ে।
.
.
.
আগুন ফ্লাইটে উঠার আগে মোমকে একটা কল করে বলে – কিছু বলবে?
মোম বলল- আপনি সারাজীবনের জন্য যাচ্ছেন মনে হচ্ছে?
মনে হচ্ছে আপনার সাথে এটাই আমার শেষ কথা?
– আমার কাছে এটাই মনে হচ্ছে প্রিয়তমা। মনে হচ্ছে আমি যেন যুগ যুগ ধরে তোমার থেকে দূরে চলে যাচ্ছি। যাবার আগে তোমার সুরেলা কন্ঠ শুনে সাথে নিয়ে যেতে চাই।
.
.
মোম শুধু বলতে পারলো – দূরে গেলে বোঝা যায় ভালোবাসার গভীরতা।
মোম আরকিছুই বলতে পারলো না তার আগেই মোম ফোন রেখে দিলো।
মোমের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। ঘন ঘন শ্বাস নেওয়ার জন্য হতে পারে আগুন চলে আসবে সবকিছু ছেড়ে মোমের কাছে।
মোম দূর্বল মনের স্ত্রীদের মতো না যারা স্বামীকে দূর্বলতা দেখিয়ে তার কাজে বাধা হয়ে দাড়ায়।

আগুন মনে মনে শুধু বলেছিল – মোম তুমি হলে সেই স্ত্রী যে স্বামীর পথে বাধা না হয়ে তাকে উৎসাহিত করে।
মোম সারাদিন কিছু খায়নি। কিভাবে খাবে সে তার স্বামী খেয়েছে কিনা কে জানে।
মোম তার ফোনটা ড্রয়ারে লুকিয়ে রেখেছে।
ফোন দেখলে মোমের আরও বেশি কষ্ট হয়। আগুন তার থেকে দূরে চলে যাচ্ছে যেটা খুব যন্ত্রণা দায়ক মোমের জন্য।
মোম অনেকটা স্তব্ধ হয়ে ছিল দুপুর থেকে।
আয়েশা এখনো আগুনের বিষয় নিয়ে মোমের সাথে কথা বলেনি সরাসরি।
মোমের বাবা রাতে খাবারের সময় বলে -আমার মায়ের কি হয়েছে? সকালে নাশতা খাওয়ার সময় দেখলাম না। দুপুরে দেখলামনা আর এখন রাতেও দেখছিনা।
.
.
মোমের মা বলল-আমি তো সব সময় আজ কাল ব্যাস্ত থাকি প্রতিবেশীদের সাথে পাশের বৃদ্ধাশ্রম নিয়ে। ওখানে কয়েকটা সুন্দর নামাজ ঘরের ব্যবস্থা করতে হবে। নামাজ পড়ার বড় অসুবিধা হচ্ছে ওখানে। মেয়েটার কোন খোঁজ রাখতে পাচ্ছিনা। ভাগ্যিস আয়েশা মা আছে। বৌমা আমাদের সংসারটাকে গুজিয়ে রেখেছে।
আয়েশা বলল- এখন একরকম বয়সে মেয়েরা অন্য মনস্ক হয়ে যায়। ওরা একা থাকতে ভালোবাসে।
মোমের বাবা বলল-মা আয়েশা আমার মা কে একটু দেখে রেখো। তোমাদের মেয়েলি বিষয় বস্তু আমি বুঝতে পারিনা।
.
.
মোম-কখন যে নিচেই ঘুমিয়ে পড়েছি কে জানে। হঠাৎ রিংটোন টা বেজে উঠলো।
তাড়াতাড়ি বললাম-হ্যালো আসসালামু আলাইকুম।
ওপাশে থেকে বলল- ওয়ালাইকুম আসসালাম প্রিয়তমা।
মোম-আমার নিজেকে হালকা মনে হচ্ছে। উনার কন্ঠ সোজা বুকে বিঁধে গেলো। আমি পরম শান্তিতে ফ্লোরে গা এলিয়ে দিলাম।
– প্রিয়তমা তোমার কন্ঠ শুনে আমি ঘায়েল হলাম আবারও।
এতোক্ষণে আমার প্রাণ ফিরে এলো।
আমি শান্তস্বরে বললাম – আপনি খুব বিজি ছিলেন?
আমাকে একটা ফোন দিলেন না কেনো?
উনি অভিমানী স্বরে উনি বললেন – তুমিও তো একটা কল করতে পারতে। আমি তো ছেলে মানুষ তাই বুঝে উঠতে পারিনি কি করতে হবে কখন কোথায়। একটু বিজিও ছিলাম।
-আমার হয়েছে ভুলটা। বোঝা উচিত ছিলো। আসলে আমার কেমন অস্বস্তি হচ্ছিল। এজন্যই আগে কল করতে সাহস হয়নি।
-টেনশন করোনা তোমার স্বামী এবং তার বিজনেসের কাজ একদম পারফ্যাক্ট আছে।
.
.
– আমার আপনাকে নিয়ে অজানা টেনশন কাজ করছিল।
-এসব কথা রাখ। তোমাকে বলেছিতো সব টেনশন তোমার স্বামীর। আমি অভিমান করেছি তাই আমার অভিমান ভাঙাও এখন। রাইট নাও।
-আচ্ছা বাবা সাহেবের অভিমান কিভাবে ভাঙাবে?
আগুন- ওর সাথে কথা বলে আমার সব ক্লান্তি দূর হয়ে গেলো। মনে হচ্ছে ও আমার সাথেই আছে। ও হচ্ছে আমার মনের মরুভূমিতে শীতল জলাশয়ের ন্যায়।
আমার পুরো পৃথিবী হলো আমার প্রিয়তমা।
আমি ওকে বললাম -তোমার কঠিন শাস্তি হওয়া দরকার।
ও একটু কাঁপা গলায় বলল- শাস্তি না দিলে চলেনা?
-নো নেভার।
-দিতেই হবে?
-অফকোর্স। এই আগুন অন্যায় মাফ করেনা কারও।
-আচ্ছা দিন তবে।
আমি ভয়ানক কন্ঠে বললাম -তোমার সকল শাস্তি শেষ হবে তোমার গোলাপী ঠোঁটের পরশে।
.
.
.
আগুন মোমের কথপোকথন সারা রাত চললো।
এর মাঝে আগুন আর মোম দূরে থেকেও একসাথে খেয়ে নিলো যার যার রুমে রাখা খাবার।
.
.
.
বেশ কয়েকদিন এভাবেই চলছে আগুন আর মোমের যোগাযোগ।
আগুন তার প্রতিটা পদক্ষেপের কথা মোমকে ফোনে অথবা ম্যাসেজ জানিয়ে দেয়।
মোম – সকালে ঘুম থেকে উঠলেই উনাকে দেখতে ইচ্ছে করে। বুকে একটা সূক্ষ্ম ব্যথা অনুভব হয়। ভাগ্যিস উনার একটা ফটো আমার ফোনে থাকে আর সেটা দেখে ব্যাথাটা সেরে যায়।
তাছাড়া সকালে উঠেই ফোনে এক গাদা ম্যাসেজ করে রাখেন আর একটা ভয়েস রেকর্ডও পাঠান।
আমি পুরো সকাল জুড়ে উনার দুষ্টুমি ভরা ম্যাসেজ গুলো পড়ি আর হাসি। আচ্ছা এতো দুষ্টু আর ছেলেমানুষী টাইপ কেন আমার স্বামী?
.
.
উনি একদিন ফোন করে বলল-ঘটনা ঘটেছে ভয়াবহ।
আমি তোমার বিশ্বাস ভেঙে গুড়ো করেছি।
আমি অপরাধী তোমার প্রিয়তমা।
আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম কি করেছেন?
-আমাকে আজ জরিয়ে ধরেছিল আমার অনেক গুলো ফ্রেন্ডসরা।
-এতে কি হয়েছে? ধরতেই পারে।
-এই ফ্রেন্ডস সেই ফ্রেন্ডস না।
-তাহলে
-মেয়ে, গার্ল, নারী, লারকি। আরোও বোঝাতে হবে?
আমি শান্ত কন্ঠে বললাম- অনেক দিনের অভ্যাস আপনাদের তাই জড়িয়ে ধরেছিল হয়ত আপনাকে।
-আমি অন্যায় করেছি।
গিল্টি ফিল হচ্ছে। আমাকে শাস্তি দাও।
-শুনুন…তাকে সঙ্গী করো না, যে তোমার
দোষ মনে রাখে গুন গুলো ভুলে
যায়।?

– হযরত আলী (রাঃ)❤
আপনার সব দোষ, ভুলের মাফ আছে আমার কাছে। তাছাড়া আপনি তো ইচ্ছে করে করেন নি।
-প্রিয়তমা কিছুটা ইচ্ছে করেও ছিল, অনেক দিনের হেভিট ছিল তাই ফার্স্ট আমি বাধা দিইনি বাট…
-বাট?
-আমার মনে হঠাৎ সূক্ষ্ম ব্যাথা ফিল হলো। তোমার কথা মনে পরতেই মনে হচ্ছে, আমি তোমাকে চিট করছি। আই এম সরি প্রিয়তমা।
-আমি শান্ত স্বরে বললাম -ঠিক আছে।
-কিছু ঠিক নেই। আমি এখন জানালার ধারে দাড়িয়ে আছি। সোজা লাফিয়ে পড়তে ইচ্ছে করছে।
আমি ভয় পেয়ে বললাম- খবরদা, জানালা থেকে সরে আসুন। আপনি এমন কিছু করেন নি যার জন্য জীবন দিতে হবে।
আর আমার তো এতে সমস্যা নেই। আমি তো জানি আপনি লন্ডনে বড় হয়েছেন। তাছাড়া আপনার ভালোবাসায় কোন খাদ নেই।
আপনি আমাকে চিট করার কথা সপ্নেও ভাবতে পারেন না।
-প্রিয়তমা তুমি এতো ভালো কেন?
-যতটা ভাবছেন ততটা ভালো নয়।
-মানে?
– অন্য মেয়েকে জড়িয়ে ধরা তাইনা? দেশে এসে নিন জাস্ট একবার, তখন..
-তখন?
-আমাকে জড়িয়ে ধরতে পারবেন না কখনো। মাইন্ড ইট।
-তাহলে তো আমার বান্ধবীদের জড়িয়ে ধরতে হবে।
-কি??
এভাবেই আরও কিছু দিন চলল আমাদের দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসা।
উনি যেমন সবকিছু বুঝতে পারে তেমনই ছেলেমানুষী ভাব কিছু আছে উনার মধ্যে। ছোট খাট ভুল গুলিও উনি খুব অনুতপ্তের সুরে আমাকে বলে।

.
ক্লাস শেষে ফোন হাতে নিয়ে গাড়ির দিকে যাচ্ছিলাম।
তখনই ফোনটা একটা ছিনতাইকারী নিয়ে গেলো।
হাত থেকে ফোন কেঁড়ে নেওয়ার সময় ব্যথা পেয়ে সোজা নিচে বসে পড়লাম।
মনের মধ্যে অজানা বিপদ ভয় কাজ করছে। উনার কিছু হলো নাতো। *কোনো বিপদে বা শোকে বা কোন কিছু হারিয়ে গেলে এই দোয়াটা পড়লে ভালো হয় * ➖➖➖➖➖ إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ، اللَّهُمَّ أْجُرْنِي فِي مُصِيبَتِي، وَأَخْلِفْ لِي خَيْرَاً مِنْهَا *আমরা তো আল্লাহ্‌রই। আর নিশ্চয় আমরা তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী। হে আল্লাহ! আমাকে আমার বিপদে সওয়াব দিন এবং আমার জন্য তার চেয়েও উত্তম কিছু স্থলাভিষিক্ত করে দিন।* ইন্না লিল্লা-হি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজি‘উন। আল্লা-হুম্মা আজুরনী ফী মুসীবাতী ওয়াখলুফ লী খাইরাম মিনহা মুসলিম ২/৬৩২, নং ৯১৮।
রাস্তায় বসেই আমি দোয়াটা বার বার পড়ছি আর বলছি-আল্লাহ আমার স্বামীকে রক্ষা করো।
উনি এখনো তোমাকে অনুভব করতে পারেন নি। এখনো ছেলেমানুষ। তোমার পথে আনার সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত করো না।
.
.
.
হাত ফুলে গিয়েছে না জানি কি দিয়ে আঘাত করেছে ঐ ছিনতাইকারী।
বাসায় ঝড় বয়ে যাচ্ছে। আমি ল্যান্ডলাইন থেকে উনাকে ফোন করলাম। আশ্চর্য উনি ফোন ধরছে না। আরুকে ফোন করে জানতে পারলাম ওদের সাথেও উনার যোগাযোগ হচ্ছেনা।
আমি টেনশনে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম।”হে আল্লাহ! কি হলো উনার?
.
.
চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here