প্রিয়জন❤Part-24

0
2315

প্রিয়জন❤Part-24
Writer-Moon Hossain

মোমের চিন্তা ভাবনা গুলো এলেমেলো হয়ে গেলো। তিন দিন ধরে আগুনের কোন খবর নেই। মোম আয়েশার ফোন থেকে একের পর এক কল করে যাচ্ছে আগুনের ফোনে। সেই সাথে দোয়া ইউনুস পড়ে যাচ্ছে বার বার। মোমের হাতে ব্যান্ডেজ করা হয়েছে। মোমের চোখে পানি দেখে সবাই ভাবছে হাতে ব্যথার জন্য কিন্তু কেউ জানেনা হাতে ব্যথার থেকেও মনের ব্যাথাটা বেশি লাগছে। বাড়িতে কাউকে মনের ব্যাথা গুলোর কথা বলতেও পাচ্ছেনা মোম।
আগুনের বাড়ি থেকে আরু ফোন করে মোম কে জানালো, তারাও কোন রকম খোঁজ খবর পাচ্ছে না আগুনের।
আগুনের মায়ের হার্টের সমস্যা হয়েছে বিকেলে। প্রচন্ড ধরনের ব্যাথায় কুঁকড়ে যাচ্ছেন তিনি তবুও আগুন আগুন বলে চিৎকার চেচামেচি করছেন।
মায়ের মন তাই হয়ত নিজের কষ্টকেও উপেক্ষা করে একজন মা তার সন্তানের জন্য বিলাপ করেছেন।
আগুনের বোন আরু মোমকে বলেছে একবার তাদের বাসায় আসতে। মোম কে দেখলে হয়ত মা ঠিক হয়ে যাবে এজন্যই আরু মোম কে বলেছে আসতে।
মোমেরও এদিকে সিচুয়েশন খুব খারাপ।
আগুনের চিন্তায় সে এতোটা মগ্ন যে তাকে মনে করিয়ে দিতে হয় খাওয়ার কথা। মোম সারাদিন ঘর বন্দি থাকে আর আল্লাহর ইবাদতেে মশগুল থাকে। ।
আয়েশা মোমকে অভজার্ভ করছে বেশ কিছু দিন যাবৎ।
আগুনের বাড়ি থেকে গাড়ি পাঠানো হয়েছে মোম কে নিতে।
মোমের বাবা আরমান পত্রিকা নিয়ে বসে আছেন বসার রুমে।
দারোয়ান খবর দিয়েছে আগুনের বাবার গাড়ি পাঠানোর কথা।
আগুনের বাবা ছেলে আর স্ত্রীর জন্য বেশ টেনশনে আছেন।
মনে মনে মনের অজান্তে তিনি সৃষ্টিকর্তার নাম নিতে শুরু করলেন।
তার এখন মনে হচ্ছে অলৌকিক কোন কিছু ঘটা দরকার যা মানুষের পক্ষে করা সম্ভব নয়। যেটা হবে প্রকৃতিগত। আর সেটা করবে মানুষের চেয়েও বড় শক্তিমান কেউ।
.
.
.
আগুনের বাবা চাদর গায়ে পড়ে ইজিচেয়ারে বসে বসে উপরওলার নাম নিতে শুরু করলেন।
মোম বোরখা পড়ে নিচে আসতেই আরমান সাহেবের সম্মুখীন হলো।
আরমান সাহেব পেপার উল্টিয়ে বললেন – কোথাও যাচ্ছো মা?
মোম ইতস্তত করে বলল-আসসালামু আলাইকুম বাবা।
-ওয়ালাইকুম আসসালাম।
-বাবা আমি একটু বাহিরে যাব।
আরমান চশমা খুলে বললেন – আগুনের খবর পাওয়া যাচ্ছেনা। এতে ওর মা তোমাকে দেখতে ইচ্ছে পোষণ করেছে। আগুনের বাবা তোমার জন্য গাড়ি পাঠিয়েছে। ড্রাইভার বলল তাই জানতে পারলাম।
তুমি সম্ভবত এই বিষয়ে অবগত।
-বাবা তুমি না বললে আমি যাব না। মোম মুখে না বললেও অন্তর ফেটে যাচ্ছে যাওয়ার জন্য।
আগুনের মা ওর মায়ের সমান।
তাছাড়া ওখানে গেলে আগুনের বাবার থেকে আগুনের কোন খবর জানা যেতে পারে।
.
.
আরমান সাহেব মোমের কাছে গিয়ে বললেন- যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে এসেছো তাহলে যাবেনা কেন?
সমস্যাটা আগুন আর তার বাবাকে নিয়ে , আগুনের মা কে নিয়ে নয়। একজন অসুস্থ
মহিলা তোমাকে দেখতে ইচ্ছে পোষণ করেছে, তোমার নিশ্চিয় দেখতে যাওয়া উচিৎ।
-বাবা তাহলে যাব?
-তুমি যেতে পারো।
মোম মেইন ডোরের দিকে এগুতেই আরমান মেয়েকে বলল- মা তোমাকে সঠিক ভাবে লালন করেছি ইসলামিক শিক্ষায়। কোনটা সঠিক রাস্তা আর কোনটা ভুল রাস্তা সেটা তুমি জানো।

ছেলেমেয়ে ভুল রাস্তায় গেলে অবশ্যই পিতামাতার কর্তব্য তাদেরকে সঠিক পথে নিয়ে আসা।
আশা করি তুমি আমার দেওয়া শিক্ষা ভুলে যাবেনা, যেন আমার আবারও তোমাকে সঠিক রাস্তায় নিয়ে আসতে না হয়।
.
.
মোম-বাবার কথা শুনে আমি খানিকটা হকচকিয়ে গেলাম। বাবা কি কিছু টের পেলো। বাবাকে কষ্ট দেওয়ার মতো অভিপ্রায় আমার নেই।
আমি বাবার দেওয়া শিক্ষা আর আমার আল্লাহর তায়ালার নির্দেশ মতো চলি।
এটাও ঠিক আমার সত্তায় উনাকে মিশিয়ে ফেলেছি। উনাকে ছাড়া বেচে থাকতে পারবনা।
উনাদের বাড়ি যেতেই আরু তার মায়ের কাছে নিয়ে গেলো।
উনার মা আমাকে দেখে কিছুটা শান্ত হলো। আমি উনার জন্য কিছু খাবার নিজ হাতে রান্না করে নিয়ে এলাম। যখন উনাদের রান্না ঘরে রান্না করছিলাম তখন উনার একটা কথা আমার মনে পড়লো।
উনি বলেছিলেন-প্রিয়তমা তুমি যখন রান্না করবে তখনই আমাকে ফোন করবে। আমি যেখানেই থাকি তোমার রান্নায় হেল্প করব। তোমাকে একা কিছুই করতে দেবোনা।
আমার চোখ গুলো তিন দিন ধরে ফুলে ফেঁপে একাকার হয়েছে বুঝতে পারলাম। এখন আর চোখ থেকে পানিও পড়ছে না। তিন দিন ধরে উনার কোন খোঁজ নেই।
এই তিন দিনে আল্লাহর ইবাদতে মশগুল ছিলাম।
আল্লাহ যেনো আমার সারাজীবনের ইবাদতের বিনিময়ে উনাকে উনার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেন, উনার বাবার কাছে ফিরিয়ে দেন,উনার আদরের বোনের কাছে ফিরিয়ে দেয় এবং উনার প্রাণপ্রিয় স্ত্রীর কাছে ফিরিয়ে দেয় সুস্থ সবল ভাবে।
.
.
আমি চোখ বন্ধ করে উনাকে অনুভব করার চেষ্টা করলাম। “কোথায় আপনি?
আপনি তো জানেন, আপনার এতোটুকুও কিছু আমি মেনে নিতে পারিনা। আপনার সব কথা শুনব। দয়া করে আমার কাছে ফিরে আসুন। এই দেখুন আপনার প্রিয়তমাা স্ত্রী একা একা রান্না করছে। আপনার প্রিয়তমা কতটা কেয়ারলেস সেটা তো জানেন।
এরপর আমার কিছু হলে এরজন্য আপনি দায়ী থাকবেন।
এই কয়দিনে বুঝতে পারলাম এই বাড়িতে রান্না বান্না কিছু হয়নি।
আমি হালকা কিছু রান্না করে মায়ের কাছে নিয়ে গেলাম।
ছেলের বিরহ সইতে না পারা মায়ের মুখে খাবার তুলে বললাম- মা হা করুন। খেয়ে নিন। আপনার ছেলে যখন ফোন করে জানবে আপবি খান নি তখন বলব,” মা আমি এখনোনি ষাট তলা ফ্লোর থেকে লাফিয়ে পড়ব। দিলাম লাফ।
কথা শুনে আরু হাসতে হাসতে কুটিকুটি। উনার চাচাজানও শুনলাম হাসছে বারান্দা থেকে।
মা বলল-তুমি আমাকে মা বললে?
– আমার স্বামীর মা কে আমি মা বলবো নাতো কে বলবে?
মাকে খাইয়ে আরুকেও খাইয়ে দিতে হলো। সেও বায়না ধরলো আমার হাতে খেতে।
চাচাজানের কাছে গিয়ে প্লেট নিয়ে বারন্দায় গেলাম।
চাচাজান চোখ বন্ধ অবস্থায় বলল- গর্দভ টা তোমাকে আসতে দিয়েছে কিভাবে?
-বাবার কথা বলছেন?
-তোমার বাবা গর্দভ হবে নাতো কে হবে?
আরমান একটা মহা গর্দভ।
গর্দভের ঘরে তুমি জন্ম নিলে কেন? আমার ঘরেই তোমার শোভা বেশি।
আমি শুধু মুচকি হাসলাম।

চাচাজান বলল- তোমার মা খেয়েছে?
-হ্যাঁ চাচাজান?
-আরু?
-ওকেও খাইয়েছি। এবার লক্ষ্যিি ছেলের মতো আপনিও খেয়ে নিন।
তা না হলে দূর্বল হয়ে যাবেন চাচাজান।
-তুমিও তো খাওনি।
আমি মাথা নিচু করলাম।
-আগুনের সৌভাগ্য তোমার মতো মেয়ে ও পেয়েছে জীবনসঙ্গী হিসেবে।
আগুন আমাকে পছন্দ না করলেও মনে মনে আমার প্রতি একটা গ্রেটফুল ফিল করে আর সেটা তোমার সাথে ওর বিয়ে দেওয়ার কারণে।
ভাগ্যিস অসুস্থ হয়ে শেষ ইচ্ছে পোষণ করেছিলাম তোমার বাবার কাছে। নইলে আগুনের জীবনে তুমি থাকতে না।
-চাচাজান এবার খেয়ে নিন।
– আগুনেের মা কে মা বললে আর আমাকে বাবা ডাক থেকে বঞ্চিত করলে। এটা কিন্তু ঠিক কাজ না।
আমি উনার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে খাবার মুখে ধরে বললাম-বাবা খেয়ে নিন লক্ষ্যি বালকের মতো।
উনি হেঁসে বলল- আমি বড় হয়েছি।
আমি হেসে বললাম-সব ছেলেরায় তার মায়ের কাছে ছোট।
বাবার চোখে পরিষ্কার দেখতে পেলাম পানি পড়ছে টপটপ করে।
-তুমি হা করো মা।
-আমি রোজা বাবা।
.
.
.
উনার রুমে গিয়ে চোখ বুলিয়ে দেখলাম।
উনার মতোই রুমটার মধ্যে আভিজাত্যের ছোঁয়া চারদিকে।
বিশাল রুম। রুমের সাইডে ওয়াশরুম। সেখান থেকে টপটপ পানি পড়ছে।
এক মূহুর্তের জন্য মনে হলো উনি ওয়াশরুমে আছেন।
আলমারিতে উনার কিছু শার্ট ভাঁজ করে রাখলাম যেগুলো সোফায় ছিলো

শার্টে হাত বুলাতেই মনে হলো উনার গায়ে হাত বুলাচ্ছি।
শার্টে এখনো উনার গায়ের গন্ধ পাচ্ছি। যেন বাস্তবেই উনার গায়ের ঘ্রাণ শুঁকতে পাচ্ছি।
শার্টা যখন আমার গায়প জড়ালাম তখন মনে হলো উনি আমাকে উনার সাথে জড়িয়ে ধরেছেন।
বোরখা খুলে সোজা উনার বেডে শুয়ে পড়ালা উপুড় হয়ে মাঝ বরাবর।
চোখ বন্ধ করে ফিল করছিলাম আগের কথা গুলো। যখন উনি আমাকে উনার বিছানাতেই জড়িয়ে ধরেছিলো। তখন কি ভয় না পেয়েছিলাম।
হঠাৎ যদি উনি আমাকে এই বিছানায় এখন জড়িয়ে ধরতো তাহলে আমিও উনাকে জড়িয়ে ধরতাম।
একটুও বাধা দিতাম না উনাকে আমার কাছে আসতে।
কোথায় আপনি ফিরে আসুন আমার কাছে।
কখন ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতে পারলাম না। হঠাৎ মনে হলো কারও গরম নিশ্বাস পড়ছে আমার মুখে। কেউ আবেশে আমাকে জড়িয়ে ধরেছে।
চোখ খুলল আরুকে দেখে।
-এই ভাবি এই, তোমাকে সেই কখন থেকে ডাকছি। মাগরিবের আজান দিয়েছে। এই নাও কিছু মুখে দাও। ইফতার সেড়ে নাও।
উনি খেয়েছে কিনা কে জানে। উনাকে লক্ষ্য করেছিলা একটু পর পর কিছু না কিছু খাবেন। একরু পর পর খাওয়া উনার অভ্যাস। ক্ষিদে একটুও সহ্য করতে পারেন না উনি।
নেহাত রোজা তাই ইফতার করলাম দুটো খেজুর আর পানি দিয়ে।
গা গুলাচ্ছে খুব খারাপ লাগছে।
মাগরিবের নামাজ টা পড়ে নিলাম।দুই হাত তুলে উনাকে চাইলাম ” সবার আগে আমার গল্প পড়তে চাইলে “নীল ক্যাফের ভালোবাসা” পেজে পাবেন।
.হে আল্লাহ ! আমি তোমার কাছে পানাহ চাই দুশ্চিন্তা থেকে, মনোকষ্ট থেকে, বার্ধক্য থেকে, আলস্য ও কাপুরুষতা থেকে এবং কৃপণতা ও ঋণের বোঝা থেকে। (সহীহ বুখারী)।
কিছু পরিমাণ দোয়া পড়লাম উনার রুমে বসে থেকেই।
প্রচন্ড খারাপ লাগছে। মা একধরণের অজানা আশংকায় বিলাপের মতো করে কাঁদছে আর চিৎকার করছে। সেটা দেখে ভয়ে আরুও কাঁদছে।
বাবা এই রাতে অফিসে গিয়েছেন। কাজের লোক গুলোও শুনলাম নিচে থেকে কান্না করছে।
কি ভয়াভহ পরিবেশ। খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে আমার মনে। হা হা করে করলো আমার বুক।
গা গুলাতে শুরু করলো।
প্রচুর ভমি করলাম ওয়াশরুমে। মাথা ঘুরছে। মনে হচ্ছে এখুনি ফ্লোরে পড়ে যাব। উনাকে ফিল করতে করতে মুখে পানি ছিটচ্ছি আর বলছি “আপনি কোথায়? আপনার প্রিয়তমা মরে যাচ্ছে আপনাকে ছাড়া।
.
.
চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here