প্রিয়জন❤Part-35
Writer-Moon Hossain
আগুনের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে মোম কখন ঘুমিয়ে পড়লো তা নিজেও জানেনা। আসলাম এক বার নিচে যাচ্ছে আবার ছাদে এসে ওদের দেখছে
বেশ রাত হয়েছে যার কারণ ওদের ছায়া ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না।ইচ্ছে করছে এখনই আরমান সাহেব কে ডেকে এনে ওদের হাতে নাতে ধরিয়ে দিতে বাট আসলাম মোমের জন্য এটা করছে না। আসলাম যদি তার বাবা কে বলে দেয় আর মোম যদি জানতে পারে এটা আসলামের কাজ তাহলে মোম কে হাসিল করা সহজ হবেনা।
কিন্তু আগুনকে এর জন্য শাস্তি পেতে হবে।
কত বড় সাহস মোমের কোলে মাথা রেখে ঘুমুচ্ছে।
আসলাম সহ্য করতে না পেরে নিচে চলে এলো।
মোমের হালকা আওয়াজে চোখ খুলে গেলো।
আবছা আবছা খুব কাছ থেকে আগুনের মুখ দেখা যাচ্ছে।
কি শান্ত দেখাচ্ছে আগুন কে। চোখ বন্ধ করলে দেখায় শান্ত আর চোখ খুললে উনার থেকে দুষ্টু আর কেউ নেই।
মোমের ইচ্ছে করছে আগুনের কপালে একটা চুমু দিতে বাট সাহসে কুলুচ্ছেনা।
আগুন কি ভাববে যদি ওর চোখ খুলে যায়। তাহলে আর মোমের রক্ষে নেই আজ।
কিছুক্ষণ মাথায় হাত বুলিয়ে মোম আগুনের কপালে ঠোঁটের স্পর্শ দিলো।
-শুধু কপালে দিলে চলবে?
মোম চমকে গেলো।
-আপনি জেগে আছেন?
-আমি তোমার ভালোবাসার পরশে ঘুমিয়ে ছিলাম বাট আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রীয় জেগে ছিল।
আমি চোখ বন্ধ করে অনুভব করছিলাম তুমি আমার দিকে কেমন কেমন করে তাকাচ্ছিলে।
-কেমন কেমন করে তাকাচ্ছিলাম?
– তুমি একজন নিরীহ ঘুমন্ত ছেলের দিকে নজর দিয়েছো প্রিয়তমা!
-আসলো আমি, আমি…
-অসহায় ঘুমন্ত ছেলের কপালে চুমুও খেয়েছো প্রিয়তমা!
মোম চুপ করে আছে।
-প্রিয়তমা তুমি যদি আমাকে অসহায় নিরীহ ছেলে ভেবে থাক তাহলে ভুল ভাবছো। আমি এর শোধ তুলব।
মোম কাঁপা গলায় বলল- কিসের শোধ?
-তোমার থেকে প্রতিশোধ নেব।
– কি প্রতিশোধ?
– তুমি আমাকে যেভাবে দেখেছো আমিও তোমাকে সেভাবে দেখব। তুমি আমাকে একটা চুমু দিয়েছো আমি এর থেকে বেশি বেশি দেব।
-না না কাছে আসবেন না। আমার ভুল হয়েছে।
-কাছে এসো প্রিয়তমা! না বললে শুনব না। প্রতিশোধ নিয়ে ছাড়াব।
মোম উঠে দৌড়ে ছাদের অন্য পাশে চলে গেছে।
আগুন মোম কে তাড়া করেছে।
মোম বলছে – খবরদার আমার কাছে আসবেন না।
আগুন বলছে- তুমি এতো দৌড়ে কোথা থেকে শিখলে?
হাপিয়ে গেলাম। আমার কাছে এসো প্রিয়তমা।
-ধরতে পারলে ধরুন। আমি আসছিনা।
মোম দৌড়াচ্ছে তার সাথে আগুন ওকে ধরার চেষ্টা করছে।
মোমের লম্বা চুল গুলোর খোপা খুলেছে। বাতাসে চুল উড়ছে।
মোম হাসতে হাসতে শেষ কারণ আগুন তার সামনে পাচ্ছেনা দৌড়ে।
আগুন হাঁপিয়ে দাড়িয়ে পড়তেই বলল- মোম ঐ দেখ ওটা কি?
-মানে?
– মনে হচ্ছে জ্বীন জাতিয় কিছু।
-জ্বীন! মোম জ্বীনের নাম শুনে ভয়ে এক দৌড়ে আগুনের বুকে মুখ লুকালো।
আগুন বলল- ছাড় আমাকে। দুষ্টু মেয়ে ছাড় বলছি।
-না না। ছেড়ে দিলে জ্বীন আমাকে নিয়ে চলে যাবে।
-আরও দৌড়াবে?
-না
-আমার কাছ থেকে দূরে পালাবে?
– না
-তোমাকে দেখতে দেবে তাহলে?
-হ্যাঁ
-আচ্ছা দেখ ওদিকে! কি দেখা যাচ্ছে।
-না বাবা না, আমি দেখছিনা। আপনাকে ছাড়ছিনা। ভয় করছে আমার।
মোম শক্ত করে আগুন কে জরিয়ে ধরে আছে। আগুনও মোম কে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো।
ফোটা ফোটা বৃষ্টি পড়ছে ওদের গায়ে।
আগুন আর মোমের মনেও ভালোবাসার বৃষ্টি পড়ছে।
ওদের থেকে সুখী আর কেউ নেই এখন।
.
.
.
মোম ঘুমানোর আয়োজন করলো। শুতে শুতে ভাবলো আজ কি কি করেছে আগুন তার সামনে।
মোম – আমার দুষ্টু বর।
আগুন মসজিদের ভেতর চটের উপর শুয়ে আছে।
সে সব সময় এখানেই ঘুমায়৷ আগুন ভাবতে লাগল আজ যদি তার বাবা মোমের সাথে বিয়ে না দিতেন তাহলে আল্লাহর পথে আসতে পারত না সে। মসজিদে এতো শান্তিতে ঘুমুতে পারতো না সে।
মোম নামের আল্লাহর নেক বান্দীর কাছে তার মনটা এভাবে দিয়ে দিতে পারতো না সে।
ফজরের আজান দিয়ে আগুন চাপ কল থেকে পানি তোলা শুরু করেছে।
মুসুল্লিরা আসতে শুরু করেছে। সবাই আগুনের তোলা পানি দিয়ে অজু করছে। আগুন অজু করে বালতি বালতি পানি তুলছে চাপ কল থেকে মাথায় টুপি পড়ে।
এই মূহুর্তে তার থেকে সুখে আর কেউ নেই।
হঠাৎ আরমান সাহেব মসজিদের সামনে ঢুকে ইমাম সাহেব কে বলল – আসসালামু আলাইকুম!
-ওয়ালাইকুম আসসালাম!
-ইমাম সাহেব এতো সুন্দর করে কে আজান দিলো?
কত সুন্দর সেই আজানের ধ্বনি।
ইমাম সাহেব হেসে আগুন কে দেখিয়ে দিলো কল তলায়।
আরমান সাহেব আগুনকে দেখে কিছুটা চমকে গেলো।
ডিলে ডিলে পাজামা পাঞ্জাবি আর মাথায় টুপি পড়ে আগুন চাপ কল থেকে পানি তুলে দিচ্ছে আর অন্যরা অজু সেই পানি দিয়ে।
আগুনকে খুব সুদর্শন লাগছে হঠাৎ করে আরমান সাহেবের চোখে।
এমনিতেই আগুন দেখতে সুদর্শন আর এখন আরও বেশি সুদর্শন লাগছে তাকে।
আগুন বলল -আসসালামু আলাইকুম।
আরমান সাহেব বলল-ওয়ালাইকু আসসালাম।
আগুন সামনে পানি এগিয়ে দিলো।
– নামাজ শুরু হবে এখন। আপনি অজু করে নিন।
আরমান সাহেব নিজেকে সামলে নিয়ে অজু করলো।
আগুনের পাশের কাতারেই আরমান সাহেব নামাজ পড়লো।
.
.
মোম বোরখা পড়ে দরজার সামনে যেতেই আসলাম দরজা আটকে দাঁড়ালো।
-পথ ছাড়ুন।
-কোথায় যাবে?
– সেটা আপনাকে বলব?
– আমি তোমার হবু স্বামী কয়েকদিনের মধ্যে আমাদের বিয়ে।
-আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। আমার পথ ছাড়ুন বলছি।
-আজ তুমি যেতে পারবে না মোম।
আসলাম দরজা বন্ধ করে ফেলল বাহির থেকে।
মোম ভেতর থেকে অনেক বার চেষ্টা করলো দরজা খুলতে।
মোম বিছানায় বসে আছে। চোখ থেকে টলটল করে পানি পড়ছে।
আগুন তার জন্য অপেক্ষা করে আছে। না গেলে নিশ্চয়ই কষ্ট পাবে।
আগুন অনেক ক্ষণ ধরে অপেক্ষা করে আছে। মোম এখনো আসছে না। কখনো তো এমন লেট করেনা মোম। তাহলে কি আরমান সাহেব ওকে আটকে রেখেছে। না তা হবে না। আরমান সাহেব কখনো মেয়েকে এভাবে আটকে রাখবে না।
আজ মোমের সাথে দেখা হবেনা। আগুনের মন খারাপ হয়ে গেলো।
আগুন একটা ইটের টুকরো নিয়ে দূরে ডিল ছূরে মারলো।
আগুন মসজিদের কাছে যাওয়ার জন্য এগুলো।
আরমান সাহেব পাশের এলাকায় যাচ্ছিলেন হোঁচট খেয়ে সামনের নালায় পড়ে গেলেন। চোখ থেকে চশমা খুলে পড়ায় তিনি চোখে কিছু দেখতে পাচ্ছেন না।
নালা থেকে উঠতেও পাচ্ছেনা। এই জায়গা টা খুব নিরব। এখানে কেউ আসেনা। আরমান সাহেব হাল ছেড়ে দিয়ে দোয়া ইউনুস পড়তে লাগলেন। আজ তার মৃত্যু অবধারিত।
ঠিক তখনই তিনি কারও স্পর্শ পেলেন।
আগুন দূর থেকে লক্ষ্য করছিল কেউ একজন নালা থেকে উঠতে পাচ্ছে না। আগুন কাছে গিয়ে প্রথমে লোকটাকো চিনতে পারলো না।
আগুন নিজে নালায় নেমে আরমান সাহবকে তোলার চেষ্টা করলেন।
আগুন খুব কষ্টে নিজের কোমরে লতাপাতা বেধে সেটা গাছের সারির আটকিয়ে নালায় নেমে আরমান সাহেব কে তুলে আনলো।
এই নালা নির্ঘাত মৃত্যু ফাঁদ।
আগুন নালার পাশ থেকে চশমা নিয়ে মোমের বাবাকে পড়িয়ে দিলেন।
আগুন বলল- আসসালামু আলাইকুম!
আপনি কে চাচাজান? এখানে একা কেন এসেছেন? আপনার যদি কিছু হয়ে যেত তাহলে বাড়ির লোকেরা কতটা কষ্ট পেতেন জানেন?
আজকের পর থেকে কখনো এমন রাস্তা দিয়ে একা বের হবেন না।
আরমান সাহেব চশমা পড়েই আগুন কে চিনতে পারলো।
আরমান সাহেবের পুরো শরীরে কাঁদা লেগে আছে তাই আগুন তাকে চিনতে পারেন নি।
আগুন আরমান সাহেবের হাত ধরে মসজিদের কল তলায় নিয়ে গেলো।
আগুন পানি তোলে আরমান সাহেবের পা ধুয়ে দিলো নিজ হাতে।
শরীরেও পানি দিতে লাগলো। ঠিক তখন ছোট লুঙ্গি পড়া ছেলে বলল – আগুন ভাইজান আপনার মোবাইল বাজছে। ময়মনসিংহ থেকে কেউ ফোন করেছে মনে হয়।
আগুন ছেলেটা কে বলল – এই চাচাজানের শরীর পানি দিয়ে ধুয়ে দাও। আমি আসছি।
আগুন ফোনের কাছে প্রথমে না গিয়ে তার একটা পাজামা পাঞ্জাবি আর তোয়ালে আরমান সাহেব কে পড়ানোর জন্য দিয়ে গেলো।
আরমান সাহেব পরিষ্কার হয়ে আগুনের পাজামা পাঞ্জাবি পড়ে সোজা বাড়ি চলে গেলো।
আগুন তার বাবা মার সাথে কথা বলে এসে দেখে লোকটা নেই।
আরমান সাহেব বাড়ি এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিলেন।
মেমের এসে বলল – আপনি তো পাশের এলাকায় যাচ্ছিলেন। এখন আবার অন্য পাজামা পাঞ্জাবি পড়ে বাড়ি আসলেন।
কোন সমস্যা হয়েছে?
আরমান সাহেব বলল- আচ্ছা তোমার কি মনে হয় আমি আমার মা মোমের সিদ্ধান্ত ভুল নিয়েছি?
মোমের মা বলল- হঠাৎ কি হয়েছে আপনার? এমন কথা বলছেন কেন?
.
.
মোম আগুনের সাথে নৌকা করে তারপর সি এন জি নিয়ে ভার্সিটি গেলো।
আগুন বার বার করে জিজ্ঞেস করছিল ঐদিন কেন আসেনি।মোম সত্যি কথা বলল না।
আগুন বলল – যদি সত্যি কথা না বলো তাহলে আমি সোজা নদীতে লাফ দেব।
মোম হেসে বলল – দিন লাফ।
-সত্যি সত্যি লাফ দেব?
– আমি কি মিথ্যে মিথ্যে বলেছি ?
– তুমি আমাকে একটুও ভালোবাসো না প্রিয়তমা।
মোম আগুনের কাছে এসে গালে হাত দিয়ে বলল – আপনি তো সাতার জানেন।
– তাই বলে একটুও আটকাবে না।
মোম আগুনের চুল টেনে দিলো।
মোম ভার্সিটির ক্লাস করছো আর আগুন দাড়িয়ে ওয়েট করছে।
আগুনকে পাজামা পাঞ্জাবি তে রাজপুত্রের মতো লাগছে। আরুর সাথেও ভার্সিটিতে আগুন দেখা করলো।
মোমের ক্লাস শেষ হলে আগুন মোমকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে গেলো।
আগুন বলল- কতদিন পর আমার রেস্টুরেন্ট সংসারে এলাম।
-রেস্টুরেন্ট সংসার?
-হ্যাঁ কারণ তুমি আমি এক বাড়িতে, এক ঘরে থাকলে হতো ঘর-সংসার। বাট আমরা রেস্টুরেন্ট যে সময় কাটিয়েছি তাতো এরাই হলো রেস্টুরেন্ট সংসার।
আমরা কিন্তু কারেও অনেক সময় কাটিয়েছি তাই ওটা আমাদের – কার-সংসার।
আগুন মোম কে খাইয়ে দিয়ে মোমের ঠোঁটের পাশে লেগে থাকা ঝোলের দিকে তাকিয়ে রইলো।
মোম আগুনের মুখে চামিচ ধরতেই আগুন বাঁধা দিলো।
-সে কি খাবেন না?
-খাব?
-তাহলে খান।
খাচ্ছি বলেই আগুন সোজা মোমের ঠোঁটের পাশে জীব দিয়ে চেটে নিলো।
মোম হতভম্ব।
আগুন হেসে বলল – তুমি কিন্তু বলেছো খেতে তাই খেয়েছি।
মোম লজ্জা পেয়ে মুখ লাল করে মাথা নিচু হয়ে বসে থাকলো।
আগুন উঠে মোমের পাশে ঘেঁষে বসলো।
আগুন মোম কে খাওয়ানোর সময় ইচ্ছে করে ঝোল ঠোঁটের পাশে লাগিয়ে দিয়ে সেখানে ঠোঁটের ছোঁয়া দেয়।
আগুন মোম কে নৌকায় তুলে দিয়ে শহরে একটা কাজে যায়।
ঠিক তখনই দেখে রাস্তার একপাশে প্রচুর ভিড়।
আরমান সাহেব শহরে এসে হালকা কার এক্সিডেন করেছে।
আগুন তখনও জানতো না এটা মোমের বাবা।
আগুন নিজে সিন এন জি চালিয়ে হসপিটালে অন্য লোকেদের সাথে উনাকে নিয়ে যায়।
না জেনে নিজে রক্ত দেয় উনার শরীরে। আরমান সাহেবের তখন খেয়াল ছিল তাই সে আগুন কে দেখতে পায়।
আগুন মসজিদে শুয়ে শুয়ে ভাবছে আসলামকে কিভাবে শিক্ষা দেওয়া যায়। কত বড় সাহস তার প্রিয়তমাকে দরজা বন্ধ করে রেখে তার কাছে আসতে দেয়না।
আগুন এই কয়দিনে গ্রামের বেশ উন্নতি করে ফেললো। মোমের কাছ থেকে তার বাবার এক্সিডেন্টে খবর শুনে আগুন দুঃখ পেলো কিছুটা। মোমের চোখের পানি মুছে মোমকে শান্তনা দিয়ে বলল – তোমার বাবা ভালো মানুষ। ভালো মানুষকে আল্লাহ দেখে রাখে। এখন আরমান সাহেব সুস্থ।
একদিন মোম সন্ধ্যা বেলা ছাদে আসতেই পেছন থেকে আগুন একটানে মোম কে কাছে নিয়ে আসে। মোম আগুনের উপর সমস্ত ভর ছেড়ে দেওয়াতে আগুন হঠাৎ টাল সামলাতে না পেরে মোমকে নিয়ে নিচে পড়ে যায়। দু-জনেই হেসে দিলো।
আগুন মোমের লজ্জা রাঙা মুখ থেকে চুল সরিয়ে কানে গুজে দিলো।
মোম লজ্জা পেয়ে উঠতে নিলে আগুন মোমকে জড়িয়ে ধরে বলে – আমার বুকে কান পেতে শুনো কি বলছে? কি চাচ্ছে আমার মন!
.
.
চলবে………