প্রিয়জন❤Part-37-38
Writer-Moon Hossain
আগুন বেলকুনিতে দাড়িয়ে আছে আকাশের দিকে তাকিয়ে। সামনে বক্ষপূত্র নদ বয়ে চলে নিজ গতিতে।
মিষ্টি বাতাস বইছে চারপাশে। অন্য সময় হলে আগুন এই বাতাস কে প্রেমের বাতাস বলতো মোমের কাছে কিন্তু আজ মনে হচ্ছে তা বিরহের বাতাস।
মোম কে ছাড়া আগুন কিভাবে বেঁচে থাকবে।
মোম কে ছাড়া নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হয় আগুনে৷
আগুন-আমি আজ আল্লাহর পথে এসেছি ওর জন্য। আল্লাহ কে চিনেছি ওর মাধ্যমে। আল্লাহর নূরে আলোকিত হচ্ছি ওর জন্য।
ও আমার জীবনে না থাকলে আমার জীবনের কি অর্থ থাকবে। আমি পথ ভ্রষ্ট হয়ে যাব প্রিয়তমা কে ছাড়া।
ও থাকলে আমাকে সঠিক পথ দেখাতে পারবে।
আমার জীবনকে নূরের আলো দিয়ে ভরিয়ে দেবে।
“আল্লাহ তুমি তো সবকিছু জানো? তবে কেন এমন করছো? আমি যে ওর থেকে আলাদা হওয়ার বিরহ সহ্য করতে পারব না।
.
.
মোম আগুনের বাবা মা আর আরুর সাথে দেখা করে নিজের ঘরে কিছুক্ষণ কাঁদলো। তারপর আগুনের কাছে গেলো।
মোম – উনার সামনে কিভাবে দাঁড়াব বুঝতে পাচ্ছিনা।
আমাকে দেখলেই নিশ্চয়ই বলবে এখুনি বেলকুনি থেকে নদে লাফিয়ে পড়বে। আমি যদি বলি আপনি তো সাঁতার জানেন তাহলে উনি বলবে – প্রিয়তমা আমি ইচ্ছে করে সাঁতার কাটব না। হাত পেছনে লুকিয়ে রাখব।
এমন দুষ্টু লোক আগে দেখিনি উনার মতো।
সিরিয়াস বিষয়ের মধ্যেও উনি হাসতে জানে।
উনাকে ছাড়া আমি কিছুতেই থাকতে পারব না। আমার বিরহে নির্ঘাত উনি পাগল হয়ে যাবে।
হাতে পায়েস নিয়ে উনার পেছনে দাঁড়ালাম।
-প্রিয়তমা তুমি এসেছো?
উনি পেছনে না তাকিয়েই বলে দিলেন আমি এসেছি এখন।
-আপনার জন্য পায়েস এনেছি। বেশি করে বাদাম দিয়েছি।
আপনি তো পেট পুড়ে পায়েস খেতে পারেন।
উনি হেঁসে বলল- তোমার হাতের পায়েস খেতে খুব ভালো লাগে।
তুমি ঠিক আমার মায়ের মতো পায়েস রাঁধতে পারো প্রিয়তমা।
আমি উনাকে পায়েস দিতেই চামিচ নিয়ে খাওয়া শুরু করলো।
আমার সাহস নেই উনার দিকে তাকানোর।
আমি দূরে চলে যাচ্ছি এটা শুনে উনার কি অবস্থা হয়েছে তা দেখার সাহস নেই।
.
.
উনি একের পর এক চামিচ দিয়ে পায়েস খেয়ে যাচ্ছে আর বলছে – আহ! কি যে ভালো হয়েছে পায়েস খানা তোমাকে বোঝাতে পারব না।
মনে আছে তোমার সাথে আমার ডিল হয়েছিল প্রতিদিন পায়েস রাঁধতে হবে যখন আমাদের সংসার শুরু হবে?
আমি কি উওর দেব ভেবে পেলাম না। চোখের পানি লুকিয়ে রেখেছি উনার কাছ থেকে। যখন একা থাকব তখন লুকিয়ে রাখা চোখের পানিতে এক সমুদ্র তৈরি হবে যার কোন শেষ নেই, যার কোন সীমানা নেই, যার কোন তল নেই, শুধু বিশাল একটি চোখের পানির সমুদ্র!
.
.
উনি এমন ভাবে পায়েস খাচ্ছেন যেন কিছুই হয়নি কিন্তু আমি বুঝতে পাচ্ছি উনার বুক ফেটে যাচ্ছে। আমার সামনে কিছু বলছেন না নইলে আমিও কষ্ট পাব বলে।
আমি পায়েসের বাটি নিয়ে চলে আসার সময় উনি আমার হাত ধরে দেয়ালের সাথে মিশিয়ে আমাকে উনার খুব কাছে আনলেন।
আমি চোখ বন্ধ করে আছি। হাত থেকে বাটি নিচে পড়ে ঝনঝন আওয়াজ হচ্ছে।
উনি বলল- আমার দিকে তাকাও প্রিয়তমা?
আমি আরও জোরে চোখ বন্ধ করলাম।
উনি আমার কানে ফিসফিস করে বললেন- আমি তোমাকে ছাড়া বেঁচে থাকতে পারবনা কিন্তু যদি বেঁচে থাকি তাহলে পাগল হয়ে যাব তোমাকে ছাড়া।
উনার কথা গুলো আমার হ্রদয় ভাঙার জন্য যথেষ্ট ছিল।
উনি আবারও বললেন- আমি প্রতিদিন তোমার হাতের পায়েস ছাড়া অন্যকিছু কখনো খেতে পারবনা। তোমার কপালে ভালোবাসার পরশ ছাড়া আমি অন্য কিছু ছুঁতে পারবনা।
উনি আমার গায়ের গন্ধ শুঁকে বললেন- তোমার গায়ের মিষ্টি গন্ধ ছাড়া আমার একদিনও কাটাবে না।
আমার গালে হাত দিয়ে বললেন – আমার জন্য যত্ন করে রাখা তোমার নূরের মুখশ্রী ছাড়া অন্য কিছু দেখবনা আমি।
.
.
আমি বিছানায় শুয় দুপুর থেকে কেঁদে চলেছি দাদির কাছে।
দাদি বার বার বলছে – কি হয়েছে কি? কাঁদিস কেন?
ও বৌমা মেয়ে কাঁদে কেন?
নাত বৌ মেয়ে কাঁদে কেন? দাদি জোরে জোরে ডাকছে আর বলছে – আশরাফ তোর বোন কাঁদে কেন?
বাবা আরমান তোর আদরের মেয়ে কাঁদে কেন?
কার সাথে ওর বিয়ে দিচ্ছিস? আমাকে কেউ কি মানুষ মনে করিস না?
আমার মোমের তো বিয়ে হয়ে গিয়েছে। আবার কেন বিয়ে দিচ্ছিস?
আমার বংশে কি ২য় বার কারও বিয়ে হয়েছে? মানুষ জানলে বংশে চুনকালি পড়বে। তখন তোর আভিজাত্য কোথায় যাবে?
আল্লাহ তায়ালা এই অনিষ্ট কিছুতেই সহ্য করবে না।
মায়ের চোখে আমাদের পরিবারের জন্য কখনো কাঁদতে দেখেনি তিনি সবসময় পরের জন্যই কাঁদেন। এমনিতে হাসি খুশি থেকে সবাইকে মাতিয়ে রাখেন। আজ মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে কাঁদছে। ভাবি বলছে – আমাদের মেয়েদের জীবন এমনই। বিয়ের আগে বাবার অধীনে থাকতে হয় আর বিয়ের পর স্বামীর অধীনে।
প্রকৃত ভাবে কেউ ইসলামের পথ অনুসরণ করেনা। সবাই নিজের ক্ষমতা জাহির করে।
জাহিলি যুগে মেয়েদের মানুষ মনে করতেন না কেউ। মেয়ের জন্ম হলে জীবন্ত কবর দিয়ে দিতো।
এখন আধুনিক যুগ তাই জীবন্ত কবর দেওয়ার জায়গায় জীবন্ত লাশ বানিয়ে দেওয়া হয়।
সবার কান্না দেখে আরব আমাকে জরিয়ে ধরে চিৎকার করে কাঁদছে ভয়ে।
বাবা হঠাৎ এসে সবাইকে একটু ধমক দিয়ে বলেছে – বাড়িতে আজ শুভ দিন। তোমাদের কান্না দেখে মনে হচ্ছে কেউ ইন্তিকাল করেছে।
.
.
আছরের নামাজ পড়ে আগুন মসজিদে বসে রইল।
মোনাজের সময় আগুন আজ কেঁদেছে।
আগুন আজ স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে।
আরমান সাহেব নামাজ পড়ে আগুনকে লক্ষ্য করে বললেন রাতে যেন সে আবার বাংলো তে যায়।
আগুনের বাবা মায়ের কাছে মোম বসে বসে চোখের পানি ফেলছে।
আরু শুধু নাক মুখ শক্ত করে বসে রইল।
আসলাম আগুন কে বলল- আল্লাহ জানেন তার নেক বান্দা কে! এখন সেটার প্রমাণ দেখিয়েও দিলেন।আগুন শুধু আসলামের হাসি মুখের দিকে তাকিয়ে একটু হাসলো।
আসলাম আগুনের হাসি দেখে হতভম্ব। পাগল হয়ে গেল নাকি শোকে?
মাগরিবের নামা পড়ে আগুন নদের কাছে গিয়ে হাটু গেড়ে বসে কয়েকটা চিৎকার দিলো।
আগুন- কোন পাপের শাস্তি দিচ্ছো আল্লাহ? আমি তো তওবা করেছি। তুমিই তো তওবার বিধান দিয়েছো । যে তওবা করবে তার আগের পাপ মাফ করে দেওয়ার কথা বলা আছে। আমি তো তওবা করার পর আমি কোন পাপ কাজ করেনি জ্ঞান থাকা কালীন। আমাকে মাফ করে দাও আল্লাহ তায়ালা। তবুও প্রিয়তমাকে আমার কাছ থেকে নিয়ে নিয়ো না তুমি।
ও আমার স্ত্রী। আমার বুকের পাঁজর থেকে ওর সৃষ্টি হয়েছে। এখন পাঁজর না থাকলে তোমার এই বান্দা বাঁচবে কি করে?
আমার স্ত্রীর সাথে আমার সংসার করার স্বাদ এই এক জীবনে পূরণ হবে না। আমার স্বাদ শুধু সপ্নই থেকে যাবে।
.
.
এশার নামাজ আরমান সাহেব আর আসলামের সামনে পড়ল আগুন।
আরমান আগুনের দিকে কেমন করে তাকিয়ে ইমাম সাহেব কে কি বলে যেন চলে গেলো।
আসলাম যাওয়ার সময় আগুনের গা ঘেঁষে গেলো।
আগুন কিছু না বলে মসজিদের ভেতরেই বসে রইল।
হঠাৎ আগুনের গায়ে কেউ স্পর্শ করলো।
আগুন ইমাম সাহেব কে দেখতে পেলো।
ইমাম সাহেব বললেন – আল্লাহর উপর ভরসা আছে?
আগুন দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে বলল হ্যাঁ আছে।
-বাবা তোমার কি হয়েছে তা আমার জানা নেই। তুমি আগে কেমন ছিলে তা আমার জানা নেই তবে আমি যতদূর দেখেছি তুমি এখন আল্লাহর একজন মুমিন বান্দা।
আল্লাহর উপর ভরসা, বিশ্বাস রাখ। দেখবে উনার রহমতে তোমার মনের আশা সব পূরণ হবে। তবে তোমাকে তার জন্য আল্লাহর ইবাদত করতে হবে।
আগুন মাথা নাড়িয়ে বলল- আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি। চেষ্টার কোন ত্রুটি রাখিনি।
ইমাম সাহেব কিছু আমলের ইরশাদ করে বললেন এগুলো তোমাকে সাহায্য করবে, তোমার বিপদ আপদ, দুঃখ, কষ্ট আর তোমার মনের আশা পূরণ করতে।
মনের আশা পূরন হওয়ার আমল_________________
যেকোনো সমস্যা, বিপদ-আপদ এবং দুঃখ-কষ্টে সহজ পাঁচটি আমল করুন। ইনশাআল্লাহ্ সহজেই সেই দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তি পাবেন।
১. রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর দরুদ পাঠ করা:
একজন সাহাবি নবীজিকে বলেছিলেন, তাঁর উপর প্রচুর দরুদ পাঠ করবেন। তখন নবীজি তাঁকে বলেন, “যদি তুমি তাই করো, তবে তোমার সকল চিন্তা ও উৎকণ্ঠা দূর করা হবে এবং তোমার পাপসমূহ ক্ষমা করা হবে। [তিরমিযি: ৪/৫৪৯, হাকিম: ২/৪৫৭, আত তারগিব: ২/৪৯৮; হাদিসটি সহিহ]
২. ইস্তিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) করা:
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার করবে, আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন; সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিযিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।” [আবূ দাউদ: ১৫২০, ইবনে মাজাহ: ৩৮১৯, তাবরানি: ৬২৯১]
৩. নফল সালাত আদায় করা (২ রাকাত):
মহান আল্লাহ্ বলেন, “হে ইমানদারগণ, তোমরা সবর (ধৈর্য) ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। আর নিশ্চয়ই একাজ বিনয়ী ও খোদা ভীরু ছাড়া অন্যদের জন্য খুবই কঠিন।” [সুরা বাকারা: ৪৫]
৪. সাদাকাহ (দান) করা:
আল্লাহ্ বিভিন্ন কারণে আমাদেরকে দুঃখ-কষ্টে নিপতিত করেন। কখনো পরীক্ষা করার জন্য, কখনো শাস্তিস্বরূপ। এমতাবস্থায় আল্লাহ্কে খুশি করার বিকল্প নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “অবশ্যই সাদাকা আল্লাহ তা‘আলার ক্রোধকে ঠান্ডা করে, আর খারাপ মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করে। [তিরমিযি: ১৯০৯]
৫. দু’আ করা:
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যমিনের বুকে যেকোন মুসলিম আল্লাহর কাছে কোন দু’আ করলে – যে দু’আর মধ্যে কোন পাপ অথবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার কোন দু’আ না থাকে – আল্লাহ্ তার দু’আ কবুল করবেনই। তাকে তার প্রার্থিত বস্তু দিবেন অথবা তদানুসারে তার কোন বিপদ কাটিয়ে দিবেন।” [তিরমিযি: ৫/৫৬৬, হাকিম: ১/৬৭০; হাদিসটি সহিহ]
অতএব, আমাদের জীবনে যে কোনো দুঃখ, কষ্ট, বিপদআপদ আসুক, আমরা মোটেও ঘাবড়াব না। এই আমলগুলো করব আর আল্লাহর নিকট দু’আ করবো। ইনশাআল্লাহ্ সকল সমস্যার সমাধান হবে।
.
আগুন মনে মনে বলল- ইমাম সাহেব আমি আর আমার সহধর্মিণী সব সময় এই আমল গুলো করে থাকি আমাদের দুজনের মনের আশা পূরণ করার জন্য।
এখন সবকিছু আমার আল্লাহর নিকট সঁপে দিয়েছি। তিনি আমার ভাগ্যে স্ত্রী সুখ দান করলে কেউ তা ঠেকাতে পারবে না সয়ং আজরাইল (আঃ)ও পারবেনা।
.
.
মোম নামাজ পড়ে ছাদে গেলো।
এই ছাদে আগুনের সাথে তার কত সৃতি।
হঠাৎ কেউ মোম কে পেছন থেকে জরিয়ে ধরলো।
মোম বুঝতে পারলো কে তাকে জড়িয়ে ধরেছে।
আগুন ফিসফিস করে বলল- তোমার ভয় করছে আমি যদি বলি আমার কাছে চলে আসতে বাবা কে ছেড়ে তাইনা?
মোম আসলেই এই ভয়টা পাচ্ছিল।
মোমের সামনে যদি তার বাবা আর স্বামীর মধ্যে কাউকে বেছে নেওয়ার সময় আসে তখন সে কার সাথে থাকবে?
এখন কি সেই সময় এসেছে তাহলে?
মোমের তো দু-জনকেই লাগবে।
আগুন যদি বলে তাকে বেছে নিতে তাহলে কি করবে ও?
আগুন মোমকে খুব কাছে টেনে বলে – ভয় নেই প্রিয়তমা।
আমি তোমার স্বামী। তোমার সকল কিছুর অংশীদার।
আমি তোমার হেল্প লেস না বুঝতে পারলে আর কে বুঝতে পারবে?
আমি তোমার সকল কিছুর দায়িত্ব নিয়েছি।
পিতামাতা জীবনে অমূল্য সম্পদ। তাই তোমার বাবা যা বলবে তাই মেনে নেবে।
উনি তোমাকে জন্ম দিয়েছেন। হাশরের ময়দানে তোমাকে তোমার পিতার মেয়ে নামে ডাকা হবে।
তোমার বাবা তেমাকে জন্ম না দিলে তুমি আমার স্ত্রী কিভাবে হতে?
আমি চাইলে তোমাকে আমার সাথে নিয়ে যেতে পারি আর সেটা কেউ আটকাতে পারবেনা বাট সেটা আমি করব না।
আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখ।
আমি তোমাকে দূর থেকেই পর্দা করা সিচুয়েশনেই দেখব যদি বেঁচে থাকি। কখনো তোমার সামনে আসব না।
আল্লাহর ইবাদত করব আর তোমাকে দূর থেকে দেখে মনে মনে তোমার মুখশ্রী কল্পনা করব। ভয় নেই কখনো তোমাকে আমি আমার বাসনায় ভাববো না।
.
.
তবে সবচেয়ে কষ্টের বিষয় হলো আমি তোমাকে তালাক না দিলে তোমার পরের বিয়ে বৈধ হবেনা। দুনিয়ার কোন শক্তি নেই আল্লাহ ছাড়া আমাকে দিয়ে তোমাকে তালাক দেওয়াবে।
মোম কেঁদে উঠলো হু হু করে।
আগুন ঢোক নিয়ে বলল- তোমাকে সুখী দেখতে চাই। তুমি সর্বদা সবার কাছে পবিত্র থাকবে। তাই আমার তোমাকে………..
আগুন তালাকের কথা না বলেই মোম কে জরিয়ে ধরে হুহু করে কেঁদে দিয়ে বলল- আমার পাঁজর কেউ ভেঙে দিয়েছে এমন লাগছে।
মোমও নিজের স্বামীকে জরিয়ে ধরে শুধু বলল –
আল্লাহ কোথায় তুমি?
.
.
চলবে……..
#প্রিয়জন❤
Writer-Moon Hossain
Part-38
সবাই মিলে বসার ঘরে বসে আছে।
মহিলারা পর্দার আড়ালে এবং পুরুষেরা সোফায় বসে আছে। আসলাম আগুনকে দেখে বিজয়ের হাসি হাসছে।
মোম কে পর্দার আড়ালে সবাই জরিয়ে ধরে আছে।
বসার ঘরে আগুনের বাবা আর আগুন কে শান্তনা দিচ্ছে।
আশরাফ তার বাবা কে বলছে – বাবা আমি চলে গেলাম। এই অবস্থায় এখানে থাকতে পারবনা। তুমি দয়া করে বিষয়টা আরেকবার ভাব।
আরমান সাহেব শান্ত স্বরে বললেন- অনেক ভেবেছি। সবাই এখানে উপস্থিত থেকে আমার মোম মায়ের বিয়ের তারিখ শুনবে।
আসলাম বলল – জি বাবা বলুন!
আরমান সাহেব বললেন- এখনো বাবা হয়নি বাবাজান!
আসলাম কিছু না বলে মুচকি হাসলো।
আরমান সাহেব বলল- আমি আমার মেয়েকে নিজের মা বলেই জানি। প্রায় রাতে আমি ওর কামরায় গিয়ে ওকে দেখে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে আসি গভীর রাতে। ওর জন্মের পর থেকে ও আমাকে ছাড়া কিছুই বুঝতে পারত না। আমাকে এক মূহুর্তের জন্য কাছ ছাড়া করত না। আমি ওর থেকে বেশিক্ষণ দূরে থাকলে ও তখন কেঁদে কেঁদে সবাইকে অস্থির করে ফেলতো।
ওকে সব সময় আমার বুকের মধ্যে নিয়ে ঘুমিয়েছি।
যেদিন ওকে আলদা কামরা দেওয়া হয়েছিল সেদিন রাতে আমি একটু পর পর ওর কামরায় উঁকি দিয়েছি। ওর কামরার বাহিরে দরজার ওপাশে লুকিয়ে থাকতাম যদি ভয় পায়। আমি আমাদের কামরার দরজা খোলা রাখতাম ও ভয় পেলে যেন আমার কাছে চলে আসতে পারে।
আরমান সাহেব একটু থেমে আবার বললেন – একজন মেয়ের বাবা হওয়া সহজ কথা নয়।
বাবাদের অনেক দায়িত্ব থাকে। আমি আমার সর্বোচ্চ ভাবে চেষ্টা করেছি আমার মেয়েকে ইসলাম শিক্ষায় দীক্ষিত করতে।
একজন মেয়ে জন্মের পর থেকে বাবার দায়িত্বে থাকে।
মেয়েকে সুপাত্রের হাতে তোলে দেওয়ায় একজন বাবার কর্তব্য।
আমি আমার মেয়েকে তাই একজন প্রকৃত মুমিনের হাতে তোলে দিতে চাই।
আসলাম হেসে উঠে দাঁড়াল।
আগুন মাথা নিচু করে আছে। মোমের চোখ থেকে পানি পড়ছে।
আরমান সাহেব আবার বললেন- একজনের দোষ আরেকজনের উপর চাপানো ঠিক না। হযরত আলী (রাঃ) একজন মুমিন ব্যাক্তি ছিলেন কিন্তু উনার বাবা এর উল্টো ছিলেন তাই বলে বাবার দোষ গুলো উনার উপর বার্তায়নি।
আমার মেয়ে জন্মের পর থেকে আদেশে চলেছে। কখনো আমার মুখের উপর কথা বলেনি। সব জায়গায় আমার মেয়ের জন্য আমার আমি গর্বিত হয়েছি।
আমার মেয়ে আমার খুশির জন্য সব সময় আমার জন্য আলাদা কিছু করে তাই আমিও আমার মেয়েকে খুশিতে দেখতে চায়।
আজ আমি আমার মেয়ের জন্য এমন পাত্র নির্বাচন করেছি যা প্রতিটা মেয়ের সপ্ন হয়ে থাকে।
আমার মেয়ে বাবা সোহাগী তাই তাকে আমি স্বামী সোহাগী হিসেবেও দেখতে চাই।
আসলাম একটু এগিয়ে এলো আগুনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে।
আরমান সাহেব হঠাৎ আগুনের কাছে গিয়ে বলল- ছোটবেলায় তোমাকে আমি বলেছিলাম তুমি আমার মেয়েকে কখনো কাঁদাবে না? তখন তুমি বলেছিলে,আংকেল আমি এই মাত্র আপনার মেয়েকে আমার সব চকলেট দিয়ে এসেছি। আমি ওকে আমার সব খেলনাও দিয়ে দিয়েছি। এখন ওর জন্য আইসক্রিম কিনতে যাব।আমি আমার সব খেলনা, চকলেট সবকিছু ওকে দিয়ে দেব। আপনি চিন্তা করবেন না ও কাঁদবেনা।
আগুন মাথা নাড়িয়ে একটু হাসলো। তখন আরমান সাহেব আবার বললেন- আমি আমার মেয়েকে আরও একবার তোমার হাতে তুলে দিতে চাই। বলো তুমি ওকে আরেকবার স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করে আমাকে নিশ্চিন্ত করবে?
আগুন নিজের কানকে বিশ্বাস করছে না। তবে কি আল্লাহ ওর প্রতি মুখ তুলে চেয়েছে?
পর্দার আড়ালে গুনজন শুরু হলো।
আরমান তার বন্ধুকে বলল- কাল শহরে ফিরে তোর ছেলের বিয়ের আয়োজন শুরু কর। আমি কিন্তু যৌতুক দিতে পারবনা। এসব ইসলাম বিরোধী। উল্টো তোর ছেলে আমার মেয়েকে নগত দেনমোহর দিয়ে নিয়ে যাবে।
আগুনের বাবা চশমা খুলে হেসে বলল- তোর মেয়ে আমার বাড়ির বৌমা হবে এটা আমার সৌভাগ্য।
আগুন তার বাবাকে বলল- বাবা আমাকে চিমটি দাও তো। আমি কি সপ্ন দেখছি? আমার বুক থেকে একটা বিশাল পাথর নেমে হালকা হয়ে গিয়েছে।
আরমান সাহেব তার মেয়ে কাছে গিয়ে বলল- মা এবার খুশি তো?
মোম বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো।
মোম কি বলবে ভেবে পেলো না। খুশিতে তার দম বন্ধ হয়ে রইলো।
মোম হঠাৎ তার বাবার কাছে এগিয়ে মাথা ঘুরে জ্ঞান হারালো।
মোমের জ্ঞান ফিরতেই তার বাবাকে দেখতে পেলো।
মোম উঠে বলল- দুঃখীত বাবা তোমাদের টেনশন দেওয়ার জন্য।
আমি আসলে খুশিতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম।
মোমের বাবা মোমের কপালে একটা চুমু দিলো।
মোম লজ্জা পেয়ে চোখ বন্ধ করে রইলো।
.
.
আসলাম নাক মুখ শক্ত করে আরমান সাহেবের সামনে দাড়ালো।
আসলাম বলল- এটা কি ধরনের মশকরা?
আমার হবু বউয়ের অন্য লোকের সাথে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন কেন?
আরমান সাহেব বলল – অন্য লোক নয়। আগুন আমার মোম মায়ের স্বামী। তুমি এটা জেনেই বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলে। আমি ভেবেছিলাম আগুন মুমিন ব্যাক্তি নয় তাই ওর হাতে মেয়েকে তুলে দিতে ভরসা পাচ্ছিলাম না।
-আর আমি বুঝি পাপী ব্যাক্তি?
আরমান সাহেব দীর্ঘ নিশ্বাস নিয়ে বলল- নিশ্চই যারা কুফরী করেছে ও আল্লাহর পথে বাধা দিয়েছে তারা চরম ভাবে পথভ্রষ্ট হয়েছে। (সূরা আন-নিসা ১৬৭)
বাবা তুমি কেমন তা তুমি জানো। তুমি একজন আল্লাহর পথে আসা ব্যাক্তি কে বাঁধা দিয়েছো। তাকে মসজিদ থেকে বের করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করেছো। তুমি ব্যাক্তি গত সমস্যার জন্য কখনো আল্লাহর পথে বাঁধা করতে পারো না।
বাবা আগুন কিন্তু চাইলে সবকিছু আমাকে বলে দিতে পারতো কিন্তু সে কিছুই আমাকে বলেনি বরং হাসি মুখে উওর দিয়েছে।
তোমার আর ওর মাঝে অনেক পার্থক্য।
তুমি ধর্মীয় শিক্ষায় দীক্ষিত হয়েও আল্লাহর সঠিক পথে আসতে পারোনি, দুঃখজনক।
আরমান সাহেবের চলে যাওয়া পথের দিকে আসলাম রাগচটা হয়ে তাকিয়ে রইলো। সে ভাবছে সত্যিই কি সে পথ ভ্রষ্ট হয়ে গেলো?
.
মোম আর আগুন সেই রাতে শোকরানার নামজ পড়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানালো।
রাত ভর আল্লাহর ইবাদত করলো তারা।
দুই পরিবার ময়মনসিংহে চলে এসেছে।
মোম আর আগুনের ভালোবাসা স্বরুপ জমকালো আয়োজন করা হয়েছে।
আরমান সাহেব অবশ্য বলেছিল বিয়ে সাদামাটা করে করতে। বিয়ের খরচের টাকা গরীবদের মাঝে বিলিয়ে দিতে। আগুনের বাবা বলল – বিয়ের যত খরচ হবে তার থেকে দ্বিগুন তিনি গরীব দুঃখীদের মাঝে বিলিয়ে দেবেন।
মোমেরও এটাই ইচ্ছে ছিল তাই আগুনও বলেছে বিয়ের সমতুল্য খরচের দ্বিগুন দিয়ে সে একটা মসজিদ নির্মাণ করবে। তার বাবা ছেলের বিয়েতে সবাইকে দাওয়াত দিয়ে আনন্দ করতে চান, এই আনন্দ টুকু ছেলে হিসেবে কেড়ে নেওয়া ঠিক হবে না।
মোম আর আগুনের গ্রামে থাকতেই শেষবার কথা হয়েছে। মোম বলেছে তারা একদম যোগাযোগ করবে না, এমনকি ফোনেও করবে না। একেবারে নতুন করে বিয়ের পর সরাসরি দুজন দুজন কে দেখবে এবং কথা বলবে।
দূরে থাকলে নাকি ভালোবাসা বাড়বে তাই মোম এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বেচার আগুনকে তো আমার সবাই চিনি। সে মোমের ওড়না গলায় দিয়ে বলল – সে নাকি বিরহেই মরে যাবে। তার এখুনি চোখে আজরাইল ভাসছে।
মোম ছাড়ার পাত্রী নয় তাই সে আগুন কে রাজি করিয়েই ছাড়ল।
বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ। ১০ দিন ব্যাপি তাদের বিয়ের অনুষ্ঠান চলছিল।
আগুন আর মোম মনে মনে তাদের ভালোবাসার মধুর অপেক্ষা করছিল।
মোম সবুজ জামদানী পড়ে মাথায় ঘোমটা দিয়ে গোলাপ ফুলে সাজানো খাটে বসে আছে। আগুন সবুজ শেরওয়ানি পড়ে তার প্রিয়তমা স্ত্রীর কাছে আসলো।
বাসর সজ্জায় নীরবতা চলছে।
মোম বহু কষ্টে লজ্জা মাখা কন্ঠে সালাম জানালো তার স্বামীকে।
আগুন তার স্ত্রীর সালামের জবাব দিয়ে হেসে বলল-এখুনি লজ্জা ভাঙছি না সো ভয়ের কিছু নেই প্রিয়তমা ।
আগুন প্রথমেই মোম কে বলল নামাজ পড়ে নিতে।
দুজন নামাজ পড়ে নিলো।
মোম খাটে বসে আছে। হঠাৎ আগুন লাইট অফ করে বলল – আমার ঘরে নূরের আলো আলোকিত হয়ে আছে যাকে চাঁদের আলোয় দেখব। লাইটের দরকার নেই প্রিয়তমা।
আগুন মোমের ঘোমটা খুলে তাকিয়ে রইলো বাকরুদ্ধ ভাবে। মোম লজ্জায় চোখ বন্ধ করে আছে। আজ যে তার স্বামীর হাতে ভালোবাসার অস্ত্র দিয়ে সুখের মৃত্যু হবে।
আগুন কাঁপা গলায় বলল- তোমাকে এখন পর্যন্ত ভালো ভাবে আমি দেখিনি প্রিয়তমা! আগুনের চোখ থেকে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো।
মোম মুচকি হাসছে লজ্জায়। আগুন মোমের গালে হাত দিয়ে কপালে একটা চুমু দিয়ে বলল – প্রিয়তমা আমি সপ্ন দেখছি নাতো। আমার মাথা কেমন যেন করছে। আগুন বলতে বলতে অজ্ঞান হয়ে বিছানায় পড়ে গেলো।মোম হতভম্ব!!!!
(#38 এর বাকি অংশ 39 পার্টে দেওয়া হবে)
.
চলবে…..