প্রিয়জন❤Part-42-43
Writer-Moon Hossain
(জ্বর নিয়ে গল্প দিলাম আজ তাই লেট)
মোম ভাবতেও পারেনি সে আগুন কে তার কাছে আসার জন্য এমন ভাবে আঘাত করবে। আগুন কে মোম একটু হলেও চেনে। আগুন সহজে কষ্ট পায়না বাট একবার কষ্ট পেলে সেটা সহ্য করতে পারেনা।
মোম সারা রাত আগুনের জন্য অপেক্ষা করলো। আগুন আসলো না রাতে। মোম বেলকুনিতে দাড়িয়ে গেইটের দিকে দৃষ্টি রাখে কখন আগুনের গাড়ির হর্ণ আসবে আর আগুন বাসায় আসবে।
মোমের শশুর শাশুড়ী মা, আরু সহ বাসার সব কাজের লোক ঘুমিয়ে পড়েছে তাই কেউ জানেনা মোম এবং আগুনের মধ্যে কি হয়েছে।
মোমের আগুনের জন্য চিন্তা হচ্ছে। আগুনের মাথা থেকে রক্ত পড়ছিল। ব্যান্ডেজ করার সুযোগও দিলো না আগুন মোম কে। মোম বেলকুনির সাইডে ফ্লোরে বসে আছে। ফোন নিয়ে প্রচুর কল করেও লাভ হলো না। তার আগেই আগুন ফোন অফ রেখেছিল।
মোম খুব অনুতপ্ত তার কাজে। কিন্তু সে তো ইচ্ছে করে করেনি। মোমের চোখ থেকে অঝরে পানি পড়ছে।
মোম – আল্লাহ এটা কি করলাম আমি। না জানি কোথায় গিয়েছেন উনি। মাথায় এতো আঘাত পেয়ে এভাবে বাহিরে কেন গেলেন উনি? আমাকে একটা সুযোগ দিলেন না কৈফিয়ত দেওয়ার। মহান আল্লাহ তায়ালা জানে আমি এটা ইচ্ছে করে করিনি। হালকা ধাক্কা এতো জোড়ালো হবে সেটা কল্পনার বাহিরে! মাথায় আঘাত নিয়ে কোথায় গেলেন উনি? উনার যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে আমি বেঁচে থাকতে পারবনা।
.
.
মোম বেলকুনিতেই সারা রাত অপেক্ষা করলো। একসময় দুচোখের পাতা বন্ধ হয়ে গেলো।
ফজরের আজানে ঘুম ভাঙলো তার।
মোম ভেবেছিল আগুন কে রুমে গিয়ে দেখবে বিছানায় শুয়ে আছে।
মোম কে দেখে সে বলবে- শুভ সকাল প্রিয়তমা। কাছে এসো একটু আদর করে দিই।
মোম বিছানা খালি দেখে খুব কষ্ট পেলো।
মোম নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে আগুনের সুস্থতা কামনা করলো। চোখের পানিতে আগুনের ফিরে আসার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করলো।
মোম আল্লাহর কাছে স্বীকার করলো সে ভুল করেছে।
একটা ছেলেকে এতো ঘনিষ্ঠ ভাবে থাকা কালীন সরিয়ে দেওয়ার থেকে অপমান আর কিছু হতে পারেনা। আগুন মনে মনে নিজের সত্তায় অপমান বোধ করেছে। কিন্তু বেচারি মোম ইচ্ছে করে করেনি। তার হঠাৎ ভয় কাজ করছিল। সামান্য একটা ঘটনা এতো বড় হয়ে যাবে মোম সেটা কল্পনাও করতে পারেনি।
.
.
মোম সকালে সবার জন্য নাশতা বানালো। আগুনের ফেবারিট পুডিং বানিয়ে সেটা দস্তরখানায় রাখতেই আগুনের বাবা আগুনের কথা জিজ্ঞেস করলো।
অমনি আগুনের মাও আগুনের কথা জিজ্ঞেস করলো।
– কি ব্যাপার বৌমা? আগুন কোথায়? সে তো তোমার সাথেই তিন বেলা খাবার তৈরি করে। ওকে সকাল থেকে দেখছিনা।
মোম সব সময় চেষ্টা করে মিথ্যে কথা না বলার। মোম মাথা নিচু করে আছে ঠিক কি বলবে ভেবে পেলো না।
.
.
হঠাৎ আরু এসে বলল- তোমার ছেলের এখন কত কাজ। এই কয়দিন তো ভাবির পেছনে দৌড়েছে। এখন হয়ত অফিসে কাজের চাপ আছে তাই মনে হয় অফিসে চলে গিয়েছে।
তোমাদের ঘুম ভাঙায়নি বলেই না বলে চলে গিয়েছে।
মোম কিছু বলল না। সবাই খাওয়া শুরু করেছে।
মোম জানে মিথ্যে কথা বলাও যেমন পাপ তেমনি সত্যিটা গোপন রাখাও পাপের সামিল। কিন্তু বাবা মা কষ্ট পাবে। হয়ত তারা নাশতায় খাবেন না। উনাদের ঔষধ খেতে হবে নাশতা খেয়ে। তাছাড়া উনারা এখন বেশ হাসি খুশি মুডে আছেন। শুধু শুধু উনাদের মুখ থেকে খুশি কেড়ে নেওয়ার কোন মানেই হয়না।
মোম কে খেতে বলাতে মোম বলল সে পরে খাবে আগুনের সাথে।
.
.
মোম আরও কয়েকবার ফোন করলো আগুন কে। এখন মোমের গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে ইচ্ছে করছে।
মোম সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত আগুনের জন্য ওয়েট করে রইলো।
মোম দুপুরে একাই রান্না করে সবাই কে খাইয়ে দিলো।
মোম তার শশুরের কাছ থেকে অফিসের নাম্বার নিতে চেয়েও নিলো না। বিষয়টা সবার সামনে ধরা পড়ে যেতে পারে। আরুর কাছ থেকে মোম আগুনের বন্ধুদের নাম্বারও নিতে চেয়েও নেইনি। বিষয়টা ভালো দেখাবেনা। আগুন মেয়ে বন্ধুদের সাথে এখন যোগাযোগ রাখেনা। ছেলে বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ রাখে বাট মোমের পক্ষে ছেলে বন্ধুদের ফোন নাম্বার নেওয়া অসম্ভব।
.
.
আগুনের জন্য টিফিন ক্যারিয়ারে খাবার নিয়ে মোম সোজা অফিসের উদ্দেশ্য রওনা হলো।
মোম আগুনের অফিসে কখনো যায়নি।
মোম আগুনের অফিসে ঢুকতেই কিছু মেয়ে স্টাফ এগিয়ে এলো। ড্রাইভার চাচা মোমের পরিচয় দেওয়ার আগেই সবার মোমকে চিনে ফেলল। সবাই মোমের সম্পর্কে জানে। একমাত্র মোম এমন পর্দাশীল ভাবে অফিসে আসতে পারে।
মোম আগুনের ক্যাবিনে ঢুকে জানতে পারলো আগুন আসেনি অফিসে।
মোমের আত্মা কেঁপে উঠলো। এভাবে সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ করে কোথায় গেল আগুন?
মোমের আগুনের কাছ থেকে দূরে থাকতে খুব কষ্ট আছে।
মোম আগুনের চেয়ারে না বসে কিছুক্ষণ চেয়ারের হাত বুলালো।
এই চেয়ারে আগুন বসতো।
ক্যাবিনের বাহিরে মেয়ে স্টাফরা সবাই ভিড় জমিয়ে রেখেছে। সবাই মোম কে বিয়ের অনুষ্ঠানে দেখেছিল মেয়েদের অন্ধর মহলে।
সবুজ জামদানী মোম কে বেহেশতের হূরের মতো লাগছিল তখন।
সবাই মিলে উৎসাহের সাথে মোম কে লক্ষ্য করছে যদিও মোমের সারা গা ঢাকা। চোখ পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না।
.
.
সবাই মোম কে আরেকটিবার দেখার জন্য আকুল হয়ে আছে কিন্তু সাহসে বলতে পাচ্ছেনা।
মোম গাড়িতে বসে কিছুক্ষণ কান্না করলো।
মোমের চোখ গুলো রাস্তার আশেপাশে শুধু তার স্বামী কে খুঁজছে।
মোম চোখ বন্ধ করে বলল- প্রিয়তমা স্বামী আমার কোথায় আপনি? আপনার প্রিয়তমাকে ছেড়ে থাকতে পাচ্ছেন কি করে? আপনি আপনার প্রিয়তমার উপর রাগ করতে পারলেন কি করে? আমি শুধু আপনার! আমার উপর সমস্ত অধিকার আছে আপনার। নিজের সাথে এভাবে কেউ রাগ করে?
আপনি ছাড়া এখন পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি আপন কে আছে আল্লাহ ছাড়া?
আমি আর কখনো আপনাকে নিজের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখব না। আদর সোহাগে আপনাকে ভরিয়ে দেব।
আপনিও আমাকে আদর সোহাগে ভরিয়ে দিন এখন!
চলে আসুন অভিমান ভুলে আমার কাছে।
.
.
মোম সারা রাস্তা কেঁদে কেঁদে আগুন কে প্রায় সমস্ত জায়গায় খুঁজে বেড়ালো।
ড্রাইভার বুঝতে পাচ্ছিল মোম কাঁদছে।
ড্রাইভার চাচা জিজ্ঞেস করলো – মা আপনার কিছু হয়েছে?
মোম চোখ মুছে বলল তার মাথা ব্যথা করছে বাসায় নিয়ে যান। আল্লাহর রহমতে কিছুই হয়নি।
বাসায় এসে বুঝতে পারলো সবাই সবকিছু কিছু আন্দাজ করতে পেড়েছে।
মোম শুধু বলল – উনি আমার উপর রাগ করে বাসা থেকে কোথায় যেন চলে গিয়েছেন।
আগুনের বাবা বলল- তোমাদের কি নিয়ে অভিমান হয়েছে তা আমরা জানতে চাইনা তবে চিন্তা করো না আগুন ফিরে আসবে।
ও তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবে না।
আগুনের মা কেঁদে কেঁদে মোম কে শান্তনা দিয়ে আরু কে বলল মোম কে রুমে নিয়ে কিছু খাইয়ে বিশ্রামে পাঠাতে।
আরু শত চেষ্টা করেও মোম কে খাওয়াতে পারলো না। মোম একটু মুখে দিতেই তার গলায় খাবার আটকে গেলো।
মোম – না জানি উনি খেয়েছেন কিনা? উনার তো একটু পর পর খাওয়ার অভ্যাস আছে। আমাকে না খাইয়ে কখনো খান না। নিশ্চয়ই আমার জন্য না খেয়ে আছে।
আল্লাহ উনাকে দেখে রেখো, আল্লাহ উনাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও, এই বলে মোম মোনাজাতে বসে কাঁদতে লাগল।
“মোনাজাতে ঝরা চোখের পানি কখনো বিফলে যায়না-(মহানবী( সাঃ) )
.
.
মোমের কাঁদতে কাদঁতে জ্বর উঠে পড়েছে। জ্বরের ঘোরেও মোম আগুনকে ডাকছে – আপনি কোথায়? আমার কাছে চলে আসুন? আপনি আর অভিমান করবেন না, আমাকে মাফ করে দিন। আর কখনো আপনাকে নিজের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখব না। আপনি যা বলবেন তাই করব।
আগুনের মা মোমের কপালে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আরু পানি ঢালছে মাথায়।
আগুনের বাবা সমস্ত ময়মনসিংহে খোঁজ লাগিয়ে ছে আগুনের। তবুও আগুনকে পাওয়া যাচ্ছে না।
মোমের এই অবস্থা দেখে তিনি আগুনকে গাল মন্দ করতে লাগলেন। – নতুন বউকে রেখে চলে যাওয়া এতো বড় সাহস? বৌমা এতো অসুস্থ শুধু তোমার জন্য আগুন। বৌমার কথা তোমার একটুও মনে পড়েনা?
আমাদের কথা না হয় বাদা দিলাম, বৌমার কিছু হলে ওদের বাড়িতে কি জবাব দেব? তুমিই বা কি জবাব দেবে ওর বাবার কাছে?
আগুনের বাবা এক মনে এসব বলতে বলতে একবার বেলকনিতে যাচ্ছেন আবার মোমের কাছে আসছেন।
.
.
মাঝরাতে মোম উঠে জায়নামাজে গিয়ে বসে তাহাজ্জুদ পড়ে দোয়া দুরুদ পাঠ করতে লাগল।
সবাই মোমদের রুমেই ঘুমিয়ে ছিল। আগুনের বাবা বেলকুনিতে ইজি চেয়ারে ঘুমুচ্ছে।
মোম তার দাদির কথা মনে করলো। দাদি মোম কে ছোট বেলায় বলেছিল দোয়া কবুলের কয়েকটি সময় আছে যার ফজিলত ভালো।
দোয়া কবুলের ১০ টি সময়ঃ
==========================
১. রাতের শেষ তৃতীয়াংশঃ
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “প্রত্যেকদিন রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আমাদের রব (আল্লাহ) সবচেয়ে নীচের আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, ‘কে আমাকে ডাকছো, আমি তোমার ডাকে সাড়া দেবো। কে আমার কাছে চাইছো, আমি তাকে তা দেবো। কে আছো আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনাকারী, যে আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেবো?” (সহীহ বুখারী)
২. আযান ও ইকামাতের মধ্যবর্তী সময়ঃ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “আযান ও ইকামাতের মধ্যবর্তি সময়ের দোয়া ফিরিয়ে দেয়া হয়না”। (আবু দাউদ-৫২১, তিরমিজি-২১২)
৩. জুম’আর দিন কোন একটি সময়ঃ
আবু হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমাদের একদিন শুক্রবার নিয়ে আলোচনা করলেন এবং বললেন, জুম’আর দিনে একটি সময় আছে যে সময়টা কোন মুসলিম সালাত আদায়রত অবস্থায় পায় এবং আল্লাহর কাছে কিছু চায়, আল্লাহ অবশ্যই তার সে চাহিদা মেটাবেন’, এবং তিনি (রাসুল সাঃ) তাঁর হাত দিয়ে ইশারা করে সে সময়টা সংক্ষিপ্ততার ইঙ্গিত দেন”। (সহীহ বুখারী)।
কোন কোন স্কলার সে সময়টার ব্যপারে বলেছেন, তা হলো-ইমাম যখন মসজিদে প্রবেশ করেন সে সময় থেকে সালাত শেষ হবার সময় পর্যন্ত, কেউ বলেছেন দুই খুতবার মাঝখানে, কেউ আবার জোর দিয়ে বলেছেন তা হলো আসর থেকে মাঘরিব পর্যন্ত সময়টা। (আল্লাহই ভাল জানেন)
৪. সিজদাহর সময়ঃ
আবু হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যে সমটাতে বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে নিকটতম অবস্থায় থাকে তা হলো সিজদাহর সময়। সুতরাং তোমরা সে সময় আল্লাহর কাছে বেশী বেশী চাও”। (মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাঈ)
৫. ফরজ সালাতের পরঃ
আবু উমামাহ (রাঃ) বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে জুজ্ঞেস করা হলো, “ইয়া রাসুলুল্লাহ, কোন সময়ের ডাক শোনা হয়?” তিনি বললেন, “রাতের শেষ সময়ে এবং ফরজ সালাতের পরে”। (তিরমিজি)।
অনেক স্কলারগন বলেছেন, এ সময়টা হলো সালাম ফেরানোর আগের সময় (আত্তাহিয়াতুর পর)।
৬. কদরের রাতেঃ
নিঃসন্দেহে লাইলাতুল কদর হলো একটি বছরে কোন মানব সন্তানের পাওয়া শ্রেষ্ঠ রাত। আল্লাহ বলেছেন, “আমরা এটিকে (আল-কুরআন) কদরের রাত্রিতে অবতীর্ণ করেছি। তুমি কি জানো কদরের রাত্রি কি? কদরের রাত্রি হাজার মাসের চেয়েও অধিক উত্তম”।
বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত একাধিক বিশুদ্ধ হাদীসে এ রাতের সকল ইবাদত ও আল্লাহর কাছে চাহিদা পূরণের কথা বলা হয়েছে।
৭. বৃষ্টি হবার সময়ঃ
সাহল ইবন সা’দ থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “দুই সময়ের দোয়া ফেরানো হয়না। আযানের সময়ের দোয়া আর বৃষ্টি পড়ার সময়কার দোয়া”। (আবু দাউদ ২৫৪০)
৮. আরাফাতের দিনঃ
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “দোয়ার ভেতর শ্রেষ্ঠ হলো আরাফাতের দিনের দোয়া”। (তিরমিজি, মুয়াত্তা মালিক)
৯. জিলহজ্জ্ব মাসের প্রথম দশ দিনঃ
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “জিলহজ্জ্ব মাসের প্রথম দশদিন ছাড়া আর এমন কোন দিন নেই, যে সময়ের সৎকাজ আল্লাহর কাছে তার চেয়ে বেশী প্রিয়”। (সহীহ বুখারী ৯৬৯)
১০. রোজদার ব্যক্তির ইফতারের সময়ঃ
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “তিন ব্যক্তির দোয়া কখনও আল্লাহর দ্বারা ফিরিয়ে দেয়া হয়না। যখন রোজাদার ব্যক্তি ইফতার করে (অন্য বর্ণনায় এসেছে, রোজাদার ব্যক্তি যতক্ষণ ইফতার না করে), ন্যায়পরায়ণ শাসক, নির্যাতিত ব্যক্তির দোয়া”। (আহমাদ, তিরমিজি)
.
.
মোমের দাদি বলেছিল তাকে মোমের দাদা খুব ভালোবাসতো। কখনো রাগ করেনি তার উপর।
মোম দাদিকে উদ্দেশ্য করে বলল – দাদি তুমি বলেছিল দাদার মতো আমার স্বামী হবে। তবে কেন উনি আমার উপর রাগ করে আমাকে কষ্ট দিচ্ছেন? নিজেকেও কষ্ট দিচ্ছেন উনি।
আমি তো অনুতপ্ত। নিজের ভুল বুঝতে পেরেছি। আমার কষ্ট কি উনি অনুভব করতে পাচ্ছেন না।
মোম আবার কান্না করতে করতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
মোমের নিশ্বাস স্বাভাবিক হয়েছে।
মোম কারও গরম নিশ্বাস অনুভব করলো।
মোম কে আষ্টেপৃষ্টে কেও জড়িয়ে ধরে রেখেছে।
মোমের গালে কারও চোখের পানি ঝরছে।
গায়ের গন্ধটা খুব চেনা।
মোম হালকা চোখ খুলে আগুন কে দেখতে পেলো।
মোমের মাথা প্রচন্ড ভারি হয়ে আছে যে চোখ মেলে তাকাতে পাচ্ছেনা। শরীর ভীষণ গরম জ্বরে।
তবুও সে আগুনকে দেখতে পেলো। লাল লাল চোখ দিয়ে পানি ঝরছে আগুনের। আগুন মোমকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে।
আগুনের মুখ ফ্যাকাসে হয়ে আছে।
মোম অস্ফুট স্বরে বলল-আপনি এসেছেন? মাফ করে দেবেন? আর কখনো আমি আপনাকে আঘাত করবো না। কখনো আপনার অবাধ্য হব না। আমাকে ছেড়ে আর যাবেন না কথা দিন?
আগুন হুহু করে কেঁদে উঠলো।
আগুন মোমের গরমে উত্তাপ হওয়া ঠোঁটে হালকা ঠোঁট লাগিয়ে বলল – আমাকে মাফ করে দাও প্রিয়তমা! আর কখনো এমন কাজ করবনা। কখনো তোমার উপর অভিমান করবো না। আমার ভুল হয়েছে। খুব বড় ভুল। আমার জন্য তোমার এই অবস্থা।
আমার হঠাৎ কি যে হয়েছিল আমি জানিনা। চারপাশে কিছু লক্ষ্য না করে তোমাকে ফেলে গাড়ি নিয়ে চলে গেলাম। সারা রাত ড্রাইভ করেছি পাগলের মতো।
তারপর ক্লান্ত হয়ে একটা মসজিদে ছিলাম।
সারা দিন মসজিদে ছিলাম। তারপর রাতে বের হয়ে একটা নিউজ চ্যানেলে বাবার ইন্টারভিউ দেখতে পেলাম। ছেলের বিরহে একজন বাবা চোখের পানি ফেলে ইন্টারভিউে বলছে ছেলের সন্ধান দিতে। তখন কতটা যে খারাপ লাগছিল। মায়ের জন্যও কষ্ট হচ্ছিল। মাকে আমি কি জবাব দেব? আরুকেও মিস করছিলাম। বাবা যখন বলল তার বৌমা অসুস্থ হয়ে পড়েছে তখন আমার কোন হুঁশ ছিলো না। আমি সোজা পাগলের মতো রাতেই রওনা হয়েছি তোমার জন্য।
নিজেকে কখনো মাফ করতে পারবনা প্রিয়তমা।
তোমাকে বুঝতে চেষ্টা করিনি প্রিয়তমা।
আগুন ছেলেমানুষীর মতো চোখের পানি ফেলল।
আগুন মোমের দূর্বল শরীরটা কে খুব জোরে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আগুন গরম হয়েছে জ্বরে মোমের শরীর।
তা কেবল আগুন পারে নিভিয়ে শীতল করতে।
আগুন পাগলের মতো মোমকে চুমু দিয়ে নিজের বুকের মধ্যে আষ্টেপৃষ্টে আগলে রাখে।
মোম পরম শান্তিতে ঘুমিয়ে পড়লো। এখন তার আর কোন কষ্ট নেই।
.
.
.
চলবে…..
#প্রিয়জন❤
Writer-Moon Hossain
Part-43
মোম কয়েকদিনে সুস্থ হয়ে উঠলো। মোম জ্বরের ঘোরেও আগুনকে ফিল করতে পাচ্ছিল।মিটিমিটি হাসছিল মোম প্রচন্ড ঘোরের মধ্যে থেকেও। আগুন নিজ হাতে মোমের সেবা করলো এই সময়টুকুতে।
স্বামী সেবা যেমন স্ত্রী করে তেমনই স্ত্রীর কিছু হলে স্বামীও সেবা করবে।
আগুন মোমের জন্য খুব কষ্ট পেতে থাকলো। মোমের এই সিচুয়েশনের জন্য একমাত্র সে দায়ী।
সামান্য বিষয় নিয়ে এতোটা বাড়াবাড়ি না করলেই হতো।
মোম ঘোরের মধ্যেই বার বার আগুনের কপালে হাত রাখছিল।
আগুন বুঝতে পাচ্ছিল ব্যাপারটা।
আগুন তখন মোমের হাত নিজের কপালে রেখে মোমের কানে ফিসফিস করে বলে – আমি সুস্থ আছি প্রিয়তমা। সামান্য কেঁটেছে। তেমন কিছু না। তুমি সুস্থ হয়ে আবার আমাকে আঘাত করবে। এবার জোড়ে আঘাত করবে যখন আমি তোমার সাথে আবার দুষ্টুমি করা শুরু করব। একবার সুস্থ হও তখন দেখবে আমার জ্বালা কাকে বলে। তোমাকে এর থেকেও বেশি জ্বালাব প্রিয়তমা।
তুমি খুব চালাক তাই সুস্থ হচ্ছো না আমার দুষ্টুমির জ্বালা সইতে হবে বলে।
.
মোম একটু সুস্থ হয়ে উঠলে আগুন বলল- তুমি পুরোপুরি সুস্থ হবে কবে?
– কেন?
– তোমার আমার সেবা করার কথা উল্টো আমি তোমার সেবা করছি।
আল্লাহর কাছে কি জবাব দেবে?
মোম হেসে বলে- আপনার সেবার জন্য আমি সারা জিবন অসুস্থ থাকতে চাই।
অসুস্থ থাকলে প্রতিটা মূহুর্ত আপনাকে কাছে পাওয়ার সৌভাগ্য হবে আমার।
আমি আপনার যত্ন পাব বেশি বেশি।
আমাকে সুখ দেবেন সব সময় তাই আমি এই সুখ থেকে বঞ্চিত হতে চাইনা।
.
.
আগুন তখন মোমের কপালে চুমু দিয়ে বলে – তুমি সুস্থ থাকলেও একই সুখ পাবে, একই যত্ন পাবে, এবং একই সময় তোমাকে দিয়প তোমার পাশে থাকব।
আগুন মোমের বুকে হাত দিয়ে বলল আমি তোমার এখানে সব সময় থাকি। তুমি সব সময় আমাকে এখানেই অনুভব করতে পারবে।
তুমিও আমার এই বুকের মধ্যে বাসা বেঁধে রেখেছো।
আমার প্রতিটা নিশ্বাসে তুমি। তোমাকে আমি সব সময় অনুভব করতে পারি।
-আচ্ছা আপনি আমাকে সব সময় একই ভালোবাসবেন? আমি যদি কুৎসিত হয়ে যায় তবুও?
– আমি কুৎসিত হলে তুমি আমাকে ঘৃণা করবে?
মোম উঠে আগুন কে জরিয়ে ধরে বলল- কখনো না। পৃথিবী ধ্বংস হলেও না। আমি আপনার মনের সাথে আমার মন বেঁধেছি। আপনার চেহেরার সাথে আমার মন বাঁধেনি।
-ঠিক আমিও একই মত পোষণ করছি। আমি তোমার সৌন্দর্য কে ভালোবাসিনি। তোমাকে আমি সেই ছোট থেকে আমার মন এবং আত্মার সাথে মিশিয়ে ফেলেছি। তুমি জঘন্য দেখতে হলেও এতোটুকুও ভালোবাসা কমবে না বরং ক্রমশ বাড়বে।
মোম জানে আগুন তাকে কতটা ভালোবাসে।
আজ পর্যন্ত আগুন মোমের ইচ্ছে ছাড়া মোমের সাথে ক্লোজ হতে চায়নি। কখনো এই নিয়ে এতোটুকুও অভিমান করেনি আগুন।
মোম জানে যেদিন সে আগুনের কাছে নিজেকে সমর্পণ করবে সেদিন আগুন তাকে গ্রহণ করবে।
.
..আগুন মোমের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে ভাবে – শরীরের সৌন্দর্য হলো ক্ষয়ের। যা একদিন থাকবে না কিন্তু ভালোবাসা হলো অমর। যা সব সময় থাকবে।
সৌন্দর্য কে ভালোবাসলে মানুষ সৌন্দর্য কে নিয়ে সুখী কেন হতে পারেনা? কারণ মানুষ সুখী হয় মন দিয়ে। মনের মতো মন পেলেই মানুষের সকল চাহিদা পূরণ হয়। প্রিয়জন পাশে থাকলে আর কি চায়? পুরো জাহান তখন আমাদের হাতের মুঠোয়। নতুন কিছু পাওয়ার উৎসাহ থাকে না তখন।
প্রিয়তমা তুমি যেদিন নিজ থেকে আমার কাছে ধরা দেবে তখন আমি তোমাকে গ্রহণ করব। আমার সন্তানদের মা বানাব ।
আমি সারা জীবন তোমার সাথে এভাবে থাকতে পারলেই খুশি। সুখী হওয়ার জন্য প্রিয়জন ছাড়া আর কি চায়?
.
.
মোম মোটামুটি সুস্থ হলে আগুন আর মোম নামাজ পড়ে হাটতে বের হয়।
মোম নামাজ পড়ে রেডি হয়ে থাকে আর আগুন মসজিদ থেকে এসেই মোম কে নিয়ে হাঁটতে বের হয়।
হাটার সময় আগুন তার জুতো আার মোমের জুতো হাতে নিয়ে রাখে।
আগুন বলে মহানবী বলেছেন খালি পায়ে হাটা ভালো।
হাঁটতে হাঁটতে মোম যখন ক্লান্ত হয়ে যায় তখন মোম কে আগুন কোলে করে নিয়ে হাঁটে।
মোম মানা করা সত্ত্বেও আগুন শোনেনা কিছু।আগুন বলে সে মোমের মতো দশ জন কে নিয়ে হাটতে পারবে মাইল মাইল।
মোম আগুনের কোলে উঠে অবশ্য খুব খুশি হয়।
আগুনের স্পর্শ পাওয়া হয় তখন মোমের। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখা যায় আগুন কে।
এমনিতে মোম আগুনকে দেখতে গেলে লজ্জায় মরে যায়।
আগুন মোম কে হাঁটার বিষয়ে মহানবী কি বলেছেন তা বলে-
খালি পায়ে হাঁটা বিষয় যা বলেছেন রাসুল (সা.)-
হাঁটাহাঁটি আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। তবে খালি পায়ে হাঁটার উপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেকের জানি না। প্রায় সাড়ে চৌদ্দ শ বছর আগে আমাদের প্রিয় রাসুল (সা.)-ও খালি পায়ে হাঁটার জন্য আদেশ দিয়েছেন।
গবেষণায় দেখা গেছে, খালি পায়ে হাঁটলে রক্তচাপ কমে। পায়ের নিচের স্নায়ুগুলো বেশ সক্রিয় হয়ে ওঠে। রক্ত ঘন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও কমে যায়। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়।
মানসিক প্রশান্তি আসে। এতে ঘুম অনেক ভালো হয়। মস্তিষ্কের ভেতরে থাকা নিউরণগুলো বেশ সক্রিয় হয়ে ওঠে। তখন একদিকে যেমন স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়, তেমনি বুদ্ধিও বাড়তে শুরু করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। ঘাসের ওপর খালি পায়ে হাঁটলে পায়ের নিচে একাধিক নার্ভগুলো সক্রিয় হয়ে শরীরের মধ্যে ইতিবাচক শক্তি তৈরি করে। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
খালি পায়ে হাঁটা উপকারীতা সম্পর্কে রাসুল (সা.) বিভিন্ন হাদিসে সে প্রসঙ্গে আলোচনা এসেছে। এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) মাঝেমধ্যে খালি পায়ে হাঁটার নির্দেশ দিয়েছেন। (সুনানে নাসাঈ, হাদিস নং : ৪১৬০; মুসনাদ আহমাদ, হাদিস নং : ২৩৯৬৯)
হাদিসের ব্যাখ্যা গ্রন্থে বলা হয়েছে, ‘মাঝে মাঝে খালি পায়ে হাঁটলে বিনয় আসে, অহমিকা দূর হয় এবং স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।’
কিন্তু এক পায়ে জুতা পরিধান করে অন্য পা খালি রেখে হাঁটতে নিষেধ করা হয়েছে হাদিসে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যেন এক পায়ে জুতা পরে না হাঁটে। হয়তো উভয় পায়ে জুতা পরে হাঁটবে নয়তো উভয় পায়ের জুতা খুলে হাঁটবে।’ (বোখারি, হাদিস নং : ৫৮৫৫, মুসলিম, হাদিস নং : ২০৯৭)
অতএব প্রিয়তমা আমাদের নিয়মিত খালি পায়ে হাটতে হবে। তুমি হাটও না বলেই সব সময় এতো দূর্বল থাক। সেজন্যই আমার ভার নিতে পারো না। ভয়ে আগেই কান্না শুরু করো।
মোম আগুনের মাথার চুল টেনে বলল- আপনি একটা পাগল!
-হ্যাঁ বউ পাগল!
.
.
একদিন রাতে আগুন অফিস থেকে এসে দেখে রুম অন্ধকার।
টেবিলে মোম জ্বলছে সেখানে একটা সবুজ পাঞ্জাবি রাখা এবং একটা চিরকুট।
চিরকুটে লেখা, পাঞ্জাবি পড়ে ফ্রেশ হয়ে নিন।
আগুন মোমকে খুঁজেও পেলো না। সে পাঞ্জাবি পড়ে এসে দেখে জানালার পর্দা দিয়ে চাঁদের আলোর ছটায় রুমটা বেশ আলোকিত হয়েছে। সব দেখা যাচ্ছে।
রুমে গোলাপের সুভাসের ছড়াছড়ি।
আগুন বলল – এ কোথায় আমি পৌঁছেছি। তখন বিছানায় ঘোমটা দেওয়া মোম কে দেখতে পেলো আগুন।
আগুন মোমের কাছে গিয়ে কিছুক্ষণ পরিস্থিতি বুঝতে পেরে মুচকি মুচকি হাসি দিলো।
তারপর মোমের ঘোমটা সরিয়ে দেখল একজন নূরের আলো তার সামনে বসে আছে।
মোম চোখ বন্ধ করে আছে।
লজ্জায় মোমের শরীর থেকে গোলাপি আভা বের হতে শুরু করেছে।
আগুন মোমের কপালে চুমু দিয়ে বলল- এখুনি এতো লজ্জা পেলে চলবে?
প্রিয়তমা আজ আমার মনে হচ্ছে সপ্ন দেখছি।
মোম অস্ফুট কন্ঠে বলল – সপ্ন না সত্যি আমার প্রাণ প্রিয় প্রিয়তম!
আগুন মোম কে কোলে তুলে বিছানার মাঝখানে নিয়ে শুইয়ে দিলো।
আগুন বলল- আজ তোমায় মন ভরে দেখব প্রিয়তমা?
মোম চোখ বন্ধ করে আগুনের গলায় হাত দিয়ে রাখল। মোমের দুচোখ বেয়ে বিন্দু বিন্দু পানি বের হচ্ছে!
আগুন গলার স্বর নরম করে বলল- ভয় লাগছে প্রিয়তমা? মোম মাথা নাড়ালো।
আগুন বলল- আমি আছি তো, ভয় নেই তোমার প্রিয়তমা। চোখ খোলে দেখ তোমার আগুন কে?
আগুন মোমের চোখের পানি ঠোঁট দিয়ে মুছে মোমের মাথায় কিছুক্ষণ হাত বুলিয়ে মোমের খুব কাছে গেলো।
মোমের ঠোঁটে চুমু খেয়ে মোম কে কাছে টেনে নিলো।
চাঁদের আলোর অদ্ভুত এক ছটা আগুনের কামরাকে আলোকিত করছে। এ যেন অদ্ভুত এক পবিত্র মিলনের সাক্ষী!!!!! ভালোবাসা অবিরাম!!!
.
.
চলবে….
(#43 এর বাকিটুকু #44 পার্টে দেওয়া হবে। সময় নেই তাই লিখেই পোস্ট দিলাম। বানান ভুল হতে পারে দুঃখীত)
.
.
চলবে……❤❤❤❤