প্রিয়জন❤Part-44

0
2861

প্রিয়জন❤Part-44
Writer-Moon Hossain

[#43 এর বাকিটুকু]
আসলাম আর ডেইজি আগুনকে খুব ভালো করে লক্ষ্য করে আসছে। তারা একটা প্ল্যান তৈরি করে ফেললো। আগুন ভাবতেও পারবেনা কি প্ল্যান করা হয়ে তাদের নিয়ে। আসলাম ডেইজির পাল্লায় পড়ে এখন নিয়ম করে রোজ ড্রিংক করে।
আগুনের কাছে সে কখনো হারবে না, এটা ডেইজি আসলামের মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছে যেটা আসলামের দ্বারা ভয়ংকর কিছু করার জন্য যথেষ্ট।
আগুন চোখ খুলে দেখলো মোম তার বুকেই ঘুমিয়ে আছে। আগুন মোমের মুখের উপর চুল গুলো সরিয়ে দিলো হালকা ফু দিয়ে। মোম এখনো ঘুমিয়ে আছে। আগুন মুচকি হেঁসে মোম কে খুব শক্ত করে নিজের সাথে মিশিয়ে মোমের পিঠে হাত বুলাতে শুরু করে নিজেও ঘুমিয়ে পড়ল।
ফজরের আজানের একটু লেট আছে এই ফাকে কিছু মিনিট ঘুমিয়ে নেওয়া ভালো। আগুনের দুচোখে রাজ্যের ঘুম।
মোমোর ঘুম ভাঙতেই সে স্বভাব মতো লজ্জায় গোলাপি হয়ে গেলো। আগুন ঘুমুচ্ছে তবুও ভয় করছে যদি জেগে যায়। মোম আগুনের চোখে চোখ রাখতে পারবে কিনা সন্দেহ আছে।
মোম ধীরে ধীরে আগুনের কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে আগুনের গালে হালকা হাত রেখে মনে মনে বলে- আমি তোমাকে ভালোবাসি, আমি তোমাকে ভালোবাসি, আমি তোমাকে ভালোবাসি।
মোম আগুনকে ভালোবাসার কথা কখনো মুখ ফুটে বলতে পারেনা। সব সময় এমন মনে মনে আগুন কে ভালোবাসার কথা বলে। কে জানে আগুন কিছু ফিল করতে পারে কিনা।
আগুনের মুচকি হাসিটা মোমের হ্রদয় তোলপাড় করতে যথেষ্ট।
.
.
আগুন চোখ মেলে মোম কে আর দেখতে পেলো না।
আগুন- মনে করেছি ওকে দেখে দিনটা শুরু করব বাট মনে হচ্ছে তা হবে না।
আমি ওয়াশরুমে গিয়ে ভাবলাম ওকে ডেকে বলব, পাঞ্জাবি দাও, টাওয়াল দাও, এই সুযোগে ওকে দেখব।
কোথায় কি প্রয়োজন মতো সবকিছু ও রেখে গিয়েছে।
গোসল করে দেখি টুপিও ও মাত্র রেখেছে। নিচে গিয়ে আমার চোখ কিছুক্ষণ খোঁজে বেড়ালো প্রিয়তমা কে কিন্তু কোথায় তার দেখা পেলাম না।
.
নামাজ পড়ে এসেও দেখি ও নেই। কাজের লোক কে জিজ্ঞেস করলে বলল ও মায়ের রুমে আছে।
আমি অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হতে গিয়ে দেখি বেডের উপর সবকিছু রাখা। ওর দেখা নেই। জানিনা ও এমন করছে কেন।
ও কি জানেনা আমার প্রতিটা কাজে ওর ছোঁয়াা লাগবেই লাগবে।
.
নাশতার টেবিলেও দেখলাম ও নাশতা বানিয়ে সবকিছু গুছিয়ে রেখেছে যখন আমি ড্রেস চেঞ্জ করছিলাম।
নাশতার টেবিলে বাবার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতো চেয়েও বললাম না। ইচ্ছে করছিল না খেয়ে ওকে আমার কাছ থেকে দূরো পালানোর শাস্তি দিই বাট দিলাম না। আমি না খেলে আমার বউটাও খাবে না। পরে ওর শাস্তি আমার গায়েই লাগবে।
অফিসে যাওয়ার সময় মাকে সালাম জানাতে মায়ের ঘরে গেলাম। ভেবেছি এই সুযোগে ওকে দেখব। আমি অনেক বার কাজের মহিলাদের ওর কাছে খবর দিয়েছি আমার কাছে আসতে তবুও এলো না।
মায়ের রুমে যেতেই মা আমাকে দরজা থেকেই বিধায় দিলো। আমি মায়ের রুমে চোখ বুলাতেই মা বলল- চোর চোর স্বভাবটা তোমার এখনো গেলো না বাবা।
ছোট থেকেই আমার কামরায় এভাবে চোখ বুলাতে কোথায় কি আছে। মায়ের কথা শুনে আমি হতভম্ব।
অফিসে একটানা কাজ করলাম। অভিমানে ওকে ফোন করলাম না। ও নিজেও তো করে আমার অভিমান ভাঙাতে পারত। টেবিলে নিজে নিজেই মাথায় একটা আঘাত করলাম অল্প। এমন রাগ লাগছে কি বলব! দুপুরে ড্রাইভার কে দিয়ে খাবার পাঠিয়েছে প্রিয়তমা।
আমি কঠিন হয়ে ওকে একটা ম্যাসেজ দিলাম ” তোমার খাবার তুমি খাও ”
ম্যাসেজ দেওয়ার পর মনে হলো ও খাবেনা আমি না খেলে। টিফিন বক্স ভরাট দেখলে দুঃখ পাবে। এমনিতেই ওর শরীর দূর্বল থাকে।
রাতে ফিরে এসেই দেখি রুম অন্ধকার আগের দিনের মতো। হঠাৎ বুঝতে পারলাম আমার বুকের বাম পাশ স্পন্দিত হচ্ছে।
ও আমাকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরেছে।
আমি এতোক্ষণ আমার প্রাণ ফিরে পেলাম। ওকে কোলে নিয়ে বেডে চলে গেলাম।
মোম – মাঝরাতে ঘুম ভেঙে খেয়াল করলাম উনার দুটি চোখ জ্বল জ্বল করছে চাঁদের আলোতে।
আমি শ্লেষ মাখা কন্ঠে বললাম – ঘুমান নি কেন?
উনি আমাকে আরও কাছে টেনে বলল- আজ সারাদিন তোমাকে দেখিনি তাই দেখছিলাম। কেন এমন করলে? আমি কোন উওর দিলাম না।
উনি বলল আর যেন এমন না করি। আমি মুচকি হাসলাম।
উনি আমার কানে কানে বলল- আমার তোমার মতো লিটিল একটা মোম চাই।
আমি চোখ বন্ধ করে উনার বুকে মাথা রেখে বললাম – আমার লিটিল একটা আপনি চাই। তখন উনি বলল-

ঐ স্ত্রী তার স্বামীর জন্য সব চেয়ে বেশী বরকত পূর্ন, যার বিবাহের দেনমোহর খুব কম, এবং প্রথম সন্তন কন্যা।(হযরত মোহাম্মদ (সঃ)
উনি আমার গলায় মুখ গুজে পেটে হাত দিয়ে বললেন – সো আমার মেয়ে চাই। আমিন।
.
.
#প্রিয়জন❤
Writer-Moon Hossain
Part-44

ভোরে উঠে দেখি উনি আমার গলায় মুখ গুজে ঘুমিয়ে আছে। মনে মনে চিৎকার করে অনেকবার বললাম – আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমি তোমাকে ভালোবাসি।
আমি আগের মতো চুপচাপ উনার কাছ থেকে সরে পড়লাম।
আগুন – কালকের মতো আজও একই ঘটনা। সবকিছু আমার সামনে গুছিয়ে রেখেছে যেগুলো আমার প্রয়োজন।
আমি ওকে খবর পাঠালেও ও আসেনা। আমার আসার একটু আগে আগেই ও আমার পরের প্রয়োজনীয় কাজ গুলো সেরে নেয়।
আমি ওকে একবারও ধরতে পারিনা। ওর এই কয়দিনে আমাদের বাসার সকল কিছু চেনা হয়েছে। গোপন দরজা গুলো আমার থেকে ও ভালো করে জানে।
আমি বুঝতে পাচ্ছিনা হচ্ছে টা কি? মায়ের রুমের সামনে গেলেই মা বলে আমি নাকি চুরির উদ্দেশ্যে গিয়েছি। আমি কয়েকটা ফ্যাক্টরি পরিচালনা করি আর আমি করব চুরি।
মা বলে তার বৌমা এখন তার সেবা করবে আমি যেন ডিস্টার্ব না করি।
আরু বলে – দাদাভাই তোমার কি লজ্জা বলতে কিছু নেই? দিন দুপুরে বউ বউ করে বেড়াও। মা বোনের সামনে বউ বউ করতে লজ্জা করে না? তোমার বউকে আমরা খেয়ে ফেলব না। আল্লাহর রহমতে আমার বাবার আর ভাইয়ের আমাকে কয়েক বেলা চাইনিজ খাওয়ানোর সামর্থ্য দিয়েছে।
মনে মনে বললাম – আর তোদের আমাদের স্বামী স্ত্রীর মাঝখানে ঢুকতে লজ্জা করেনা।
আমি অফিস থেকে এলাম গায়ে এক আকাশ রাগ নিয়ে। রুমে ঢুকতে গিয়ে একটা হোচট খেয়ে রাগটা এক সমুদ্র হয়ে গেলো। রাগে মনে হচ্ছে সবকিছু ভেঙে সাহারা মরুভূমি বানিয়ে দিই। আবারও আগের মতো রুম অন্ধকার পেলাম। ও আমাকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরলো।
আমি সবকিছু ভুলে ওকে কোলে তুলে নিলাম।
.
.
খুব ভোরে আজানের মিষ্টি সুর ভেসে আসছে। আমি একটু ভয় পেয়ে চোখ খুলে ওকে দেখে শান্তি পেলাম।
ঘুমালে চলবে না। ও ঠিক আগের দিন গুলোর মতো চলে যাবে। একবার গেলে আর দেখা পাব না। এবার আমি বুঝতে পারলাম কেন এমন করছে। ওকে আরও শক্ত করে বুকে নিলাম। প্রিয়তমা তুমি এতো লাজুক কেন?
মোম – আজান দিয়েছে কখন জানিনা। উনি ঘুমিয়ে আছে তাই উনার কাছ থেকে সরে যাওয়ার চেষ্টা করলাম।
একটু সরে যেতেই উনি আমাকে উনার কাছে একটানে নিয়ে আসলেন।
তার মানে উনি জেগে আছেন।
আমি ধরা পড়ে দুই হাত দিয়ে নিজের কান হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখলাম।
সত্যি বলতে দিনের বেলা আমি উনার সামনে আসতেই পারব না। আমার খুব লজ্জা লাগবে যখন উনি আমার দিকে তাকাবেন। উনার চোখের ভাষা কে আমি খুব লজ্জা পেয়ে থাকি প্রতি মুহূর্ত।
উনি আমার গালে চুমু দিয়ে বললেন- তুমি অত্যন্ত লাজুক একটা মেয়ে।
আমি লন্ডনে থাকা কালীন লাজুক মেয়ে কেমন হয় তা চিন্তা করতাম বাট কখনো সঠিক টা ভাবতে পারিনি।
ওখানকার মেয়েরা তো লাজুকতা কি সেটা জানেনা।
.
.
সত্যি বলতে প্রিয়তমাা অন্য কাউকে লজ্জা পায়না। সবার সামনে ও খুব সাহসি থাকে। কিন্তু আমার কাছেই লজ্জা অনুভব করে।
বলতে গেলে, মেয়েরা যতই সাহসী হোক না কেন অন্যদের কাছে কিন্তু প্রিয়জনের কাছে সে লজ্জা অনুভব করবে। মনে হবে সে মেয়েটা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ লাজুকলতা।
.
.
আমি ওর কানে কানে বললাম- তোমার লজ্জা হলো আমার ভালোবাসার পথের সবচেয়ে বড় কাঁটা।
.
.
আমি ওকে নিয়ে ওয়াশরুমে গোসল করার জন্য সাহস করলাম না । হয়ত লজ্জায় ফিড হয়ে যাবে। নামাজ পড়ে এসে দেখি ও মাথায় বড় ঘোমটা দিয়ে রেখেছে। আমি ওর ঘোমটা সরিয়ে ওকে আদর করে বললাম রেডি হও। ওকে নিয়ে জোর করে হাঁটতে গেলাম। আজ আগের থেকে বেশি ভালো লাগছে। সকালের মিষ্টি আভার রেশ অনুভব করছি।
ওর হাত মোজা খোলে ওর হাত মুঠোয় ভরে আমার হাতে রেখেছি আর ও ওর অন্য হাত আমার বুকে রেখে মাথা আমার কাঁধে রেখে হাঁটছে।
এতো টা সুখ পৃথিবীতে আছে তা জানতাম না। কত ডলার উড়িয়েছি রাত দিন পার্টি করেছি তবুও তখন কিছু একটা কমতি ছিল। বাবা মা বোন কাউকে সাথে পাইনি। বউ থেকেও ছিল বহু দূরে। এখন আমার কাছে সব আছো। কি নেই এখন।
আমাদের সন্তান হলে একবারে পুরোপুরি সম্পূর্ণ হব।
.
.
আসলাম কে নিয়ে ডেইজি ওদের ফলো করছে।
ডেইজি দ্রুত ড্রাইভ করছে। তার মনে আগুনের জন্য এক বুক ঘৃণা জন্ম নিয়েছে। আগুন কে ফোন করলে সে বলে আমার জন্য একজন পাঞ্জাবি পাজামা টুপি পড়া হুজুর বর খুঁজছে। আমাকে নাকি বিয়ে দেবে। নিজে তো আমাকে দেখলো না আর এখন হুজুরের সাথে বিয়ে দেবার চেষ্টা করছে। কগ বড় সাহস।
এখুনি গাড়িটা সোজা ওর উপর চালিয়ে দেব। আশেপাশে কেউ নেই। কেউ দেখবে না।
আগুনকে পেছন থেকে যেই আঘাত করতে যাবে অমনি আসলাম স্টেয়ারিং ঘুরিয়ে দিলো।
আসলাম রেগে ডেইজির দিকো তাকিয়ে রইল।
.
.
আগুন মোম কে ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতে পারেনা।
আগুন যতক্ষণ বাসায় থাকবে ততক্ষণ মোমের সাথেই থাকবে। মোম যেখানে সেখানে আগুন।
আরু সহ কেউ এখন আগুনকে ডাকে না। তারা ডাকে মোম কে। সবার যত প্রয়োজন আছে তা সব আগুন মেটালেও আগে মোম কে ডাকবে।
আরু আজ শপিংয়ে যাবে তাই সে রুমে এসে মোম কে ডাকা শুরু করলো।
মোম আসতেই মোম কে কিছু না বলে আগুনকে বলল- দাদাভাই তোমাকেই খুঁজছিলাম। এই নাও চ্যাকে সাইন করে দাও।
আগুন বলল- ডেকেছিস তোর ভাবি কে তাহলে আমাকে কেন খুঁজছিস? আমাকে ডাকলি না কেন?
আরু শান্ত স্বরে বলল- ভাবি কে ডাকলেই তোমাকে পাওয়া যাবে বিকোজ তোমাকে ডাকলে তোমাকে পাওয়া যায়না। তাই বুদ্ধি করে ভাবি কে ডেকে তোমাকে খুঁজে আনি। ভাবি যেখানে তুমিও সেখানে।
হঠাৎ আগুনের মা বলল- বৌমা শুনে যাও।
মোম – জি মা ডাকছিলেন?
– বাবা আগুন তোমাকেই খুঁজছিলাম। আমাকে আজ নামিয়ে দিতে পারবে তোমার খালার বাড়ি।
– আমাকে খুঁজছিলে তো আমাকে না ডেকে তোমার বৌমা কে কেন ডেকেছো?
– বাবা আগুন কান টানলে মাথা যেমন আসে তেমন বৌমা কে ডাকলে তুমি আসো। আগুন লক্ষ্য করেছে আজ কাল কেউ ওকে ডাকে না সবাই মোম কে ডেকে তারপর ওর সাথে কাজের কথা বলে। কাজের লোকেরাও এটাই করে।
আগুন হতভম্ব!!
আগুন আর মোমের সম্পর্ক এখন আরও মজবুত হয়েছে। আগুন তার প্রতিটা কাজে মোম কে জানিয়ে করে সেটা মোম বুঝতে পারুক কিংবা না পারুক।
আগুন রাতে অফিস থেকে ফিরে এসে মায়ের রুম থেকে মোম কে ঘুমন্ত অবস্থায় কোলে করে নিয়ে যায় তাদের রুমে। অফিসের এতো কাজ যে আগুন রাত করে ফেরে। বেচারা মোম অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে। কোন দিন মায়ের রুমে তো কোন দিন আরুর রুমে।
মোম প্রতিদিন ঘুম ভেঙে আগুনকে নিজের কাছে দেখতে পায়। আগুন তখন আষ্টেপৃষ্টে মোমকে জরিয়ে ঘুমিয়ে থাকে।
মোমকে প্রতিদিন আগুন ঘুমের মধ্যেই খাইয়ে দিয়ে নিজেও খেয়ে নেয়। আজ কাল মোম প্রচন্ড ঘুম কাতর হয়েছে। যেখানে সেখানে ঘুমিয়ে পড়ে। মোম সকালে আফসোস করে আগুনের সাথে জেগে খাওয়া নিয়ে।
আগুন তখন বলে তুমি আমার সাথে খাওনি বাট আমি তোমার সাথে ডিনার করি রোজ।
একদিন আগুনের এক খালা এসে মাঝ রাত পর্যন্ত গল্প জুড়ে বসেছে আগুনের মায়ের রুমে। মোম আর আরুও ছিল সেখানে। কাজের মহিলা গুলো গল্প শুনছিল সেখানে বসে। খালা খুব হাসির গল্প জানে। গল্প শুনে সবাই হেঁসে হেঁসে পেট ফুলিয়ে ফেলেছে। আগুন মোম কে অনেক ইশারা করেও মোম কে নিয়ে যেতে পারলো না। মোম আগুন কে ইশারা করে বলে আরেকটু, আরেকটু।
আগুন বিছানায় একাই অভিমানে শুয়ে পড়ল। এমন একদিনও যায়নি যেদিন আগুন মোম কে ছাড়া ঘুমিয়েছে। যত রাত হোক আগুন মোমকে নিজের রুমে এনে সাথে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়েছে।
আগুন বিছানায় ঘুমুনোর চেষ্টা করলো। আজকের কালো রাতটা সে এক নিশ্বাসে ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিতে চায় মোম কে ছাড়া।
ঘুম না এলে যে দোয়া পড়তে হয়। বিছানায় শুয়ে ঘুম না আসার ফলে এপাশ-ওপাশ করলে এই দোয়া পড়তে হবে– لا إِلَهَ إِلا اللَّهُ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ رَبُّ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا الْعَزِيزُ الْغَفَّارُ উচ্চারণঃ- লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হুল ওয়াহিদুল কাহহার, রাব্বুস্ সামা-ওয়া-তি অল আরযি অমা বায়নাহুমাল আযীযুল গাফফা-র। অর্থ: আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য উপাস্য নেই যিনি একক, প্রবল প্রতাপান্বিত। আকাশমন্ডলী, পৃথিবী এবং উভয়ের মধ্যবর্তী সকল বস্তুর প্রতিপালক। যিনি পরাক্রমশলী, ক্ষমাশীল। (সহীহ জামে ৪/২১৩)
আগুন ঘুমুতে যাওয়ার দোয়া পড়ে গভীর ঘুমে জড়িয়ে পড়লো।

.
ফজরের আজানের সময় ঘুম ভেঙে মোম কে দেখতে পেলো আগুন।
আগুন মোমের চুলে টান দিয়ে ঘুম ভাঙলো।
মোম ভয় পাওয়া গলায় বলল- কি হয়েছে?
– তুমি তোমার স্বামীকে কষ্ট দিয়েছো।
কাল রাতে তোমাকে ছাড়া কতটা ছটফট করেছি তা বলার বাহিরে।
– এখন কি করতে হবে?
– অভিমান করেছি অভিমান ভাঙাও।
আগুন অন্যপাশে মুখ ঘুরিয়ে নিলো।
মোম আগুনের মুখ ঘুরিয়ে বলল – আমি আদর করে দিলে অভিমান ভাঙবে?
– পুরো দৌড়াবে!!!
আগুন আজ অফিসে যেতে চাচ্ছিল না। তার নাকি মোম কে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না। আজ সে বিশ্রাম নেবে। এদিকে অফিসে একটা প্রবলেম হয়েছে যেটা আগুন কে সামালে হবে।
আগুন শুয়ে ছিল।
মোম আগুনের কাছে যেতেই আগুন মোমের হাত ধরে চুমু খেয়ে বলল- কিছু বলবে?
মোম আগুনের গাল ধরে বলল-
“জীবন হোক কর্মময়, নিরন্তর ছুটে চলা। চিরকাল বিশ্রাম নেয়ার জন্য তো কবর পড়েই আছে” – হযরত আলী (রা)
.
মোম বলল- কিছু বুঝতে পেরেছেন?
আমাদের জীবন বিশ্রামের জন্য না। কাজ করার জন্য। বিশ্রাম নেওয়ার জন্য।
আগুন মোমকে কাছে টেনে বলল- সত্যি তুমি অসাধারণ নারী। আমি ধন্য তোমাকে পেয়ে।
.
.
সকালে আগুন মোমকে নাশতা বানানোর জন্য সাহায্য করে। দুপুরে মোমের রান্না করা নিষেধ। বাড়ির একমাত্র বউয়ের এতো রান্নার দরকার কি? এটা আগুনের মা বলে। মোম কে মাঝে মাঝে রান্না করার আদেশ দিয়েছেন আগুনের বাবা।
মোম আগুন কে বলে – আপনি এর একটা বিহিত করুন। বাড়ির বৌ বাড়ির রান্না করবে এটাই স্বাভাবিক।
আগুন তখন মোমের গাল টেনে বলে – তোমার শশুর শাশুড়ী তাই তুমি বোঝাও। আমি এর মধ্যে নেই।
মোম এক দুপুরে রান্না করতে গেলো। আজ স্পেশাল আইটেম করে সবাই কে তাক লাগিয়ে দেবে মোম।
হঠাৎ মোম কোমরে আর ঘাড়ে স্পর্শ অনুভব করলো।
মোম – আপনি চলে এসেছেন?
আগুন – হ্যাঁ হঠাৎ তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করলো তাই সোজা তোমার সামনে চলে এলাম।
মোম – আমার স্বামী একটা পাগল। সব সময় আমাকে আদর করে, স্নেহের চোখে দেখে, ভালোবাসার চোখে দেখে। উনি আমাকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরে আছেন আর আমি কাজ করছি। একটু পর পর আমার কপালের ঘাম মুছেও দিচ্ছেন যদিও একটু ঘাম নেই। পাগল একটা! কে না চায় তার স্বামী তাকে আদর না করুক। আমিও চাই সারাজীবন মৃত্যু পর্যন্ত উনার ভালোবাসা পেতে, উনার আদর পেতে।
দুপুরে উনি আসাতে খুব মজা করে সবাই মিলে লাঞ্চ করলাম। আজকের রান্না নাকি সুস্বাদু থেকেও সুস্বাদু হয়েছে।
সকালে উনি আমার কপালে চুমু দিয়ে অফিসে গেলেন।
যাওয়ার আগে ফিরে এসে আবার আমার ঠোঁটে ঠোঁট রাখতেই আমি ইশারা দিয়ে বললাম – সোজা অফিস নো ফাঁকি।
উনি তাকিয়ে থেকে বললেন – আমাকে উপদেশ দেওয়া, দাড়াও তোমার হচ্ছে, এই বলে উনি আমাকে ধরার জন দৌড়াতে শুরু করলেন আর আমি কম কিসের আমিও আমাদের বিশাল রুমে দৌড়াতে লাগলাম।
উনি আমার সাথে কখনো পারেন না। আজ আমি ইচ্ছে করেই উনার কাছে ধরা দিলাম। উনি আমাকে নিয়ে বিছানায় পড়ে গেলেন। উনি আমার উপর থেকে বললেন – সুন্দরী এবার তোমার ১০টার নিউজ বানাব।
আগুন -মোম আমার সাথে বেডে পড়ে গিয়ে সে কি হাসি। ওর হাসি দেখে মনে হচ্ছে একেবারে সব হেঁসে নিচ্ছে।
.
.
তখনো জানতাম না মোম ১০টায় ক্লাসে যাওয়ার সময় কেউ ওকে কিডন্যাপ করবে।
আমি খবর পেলাম দুপুরে।
এর আগে অনেক বার কল করেও ওকে পাইনি। বাসায় কেউ ফোন ধরছেনা।
তারপর সোজা ভার্সিটি গিয়ে অনেক খুঁজে দেখলাম। সবাইকে বললাম, কেউ বোরখা পড়া পর্দাশীল কোন মেয়েকে দেখেছে কিনা।
আমি বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি মাঝ রোডে।
আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি।
.
.
চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here